Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এক পাতা গল্প712 Mins Read0

    গজকেষ্টবাবুর হাসি

    গজকেষ্টবাবুর হাসি

    আমাদের পাড়ার গজকেষ্টবাবুকে নিয়ে ভারি মুশকিলেই পড়া গেছে।

    ব্যাপারটা আর কিছুই নয়–ভদ্রলোক হাসতে ভালোবাসেন। আর সে-হাসি সাংঘাতিক।

    কথাটা বোধ হয় বুঝতে পারছ না? ভাবছ, হাসতে ভালোবাসেন তাতে আর ক্ষতিটা কী!

    সাংঘাতিক হাসেন, তাতেই বা কী আসে যায়? বরং ভয়ঙ্কর গোমড়ামুখো লোকের চাইতে হো-হো-হা-হা, করে হাসিয়ে লোক তো ঢের ভালো।

    হুঁ-হুঁ, মোটেই তা নয়। গজকেষ্টবাবু তো শুধু হাসেনই না–একবার যদি তাঁর হাসি পায়, তা হলে তিনি মারাত্মক হয়ে ওঠেন। তখন আ-পাশের লোককে তিনি কাঁদিয়ে ছাড়েন। তাই যক্ষুনি তিনি সবার জন্য হাঁ করেন, তক্ষুনি আমরা বাপ-রে-মা-রে বলে যে যেদিকে পারি ছুটে পালাই।

    তা হলে আর-একটু খুলেই বলি।

    এই তো সেদিন আমাদের পটলডাঙার নকুড়বাবু কাঁধে একটা মস্ত চালকুমড়ো নিয়ে যাচ্ছেন। নকুড়বাবুর মাথা জোড়া চকচকে টাক–একটি চুল পর্যন্ত কোথাও নেই। তাই, দেখে হাবুল সেন আমাকে বলছিল, মজাটা দ্যাখছস প্যালা? নকুড়বাবুর মাথা আর চালকুমড়াটা দ্যাখতে ঠিক একইরকম! মনে হইতাছে, নকুড়বাবুর কান্ধের উপর দুইটা মাথা উঠছে।

    ব্যস আর যায় কোথায়!

    পাশ দিয়ে গজকেষ্টবাবু যাচ্ছিলেন। হাবলার কথা শুনেই তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন। আকাশ-জোড়া হাঁ করে ত্রিশটা দাঁত (মানে, দুটো পড়ে গেছে) বার করে হাউহাউ শব্দে হাসতে-হাসতে হঠাৎ জাপটে ধরলেন হাবুলকে। তারপরেই হাবুলের কাঁধের উপরে খ্যাঁক করে এক কামড়!

    –খাইছে–খাইয়া ফেলছে কম্মো সারছে বলে তো হাবুলের তারস্বরে চিৎকার।

    আমরা সকলে মিলে ছাড়াতে গেলুম কিন্তু ছাড়ানো কি সোজা! অনেক কষ্টে হাবুলকে বের করে আনা গেল, কিন্তু তার মধ্যেই গজকেষ্টবাবু ঘ্যাঁচ করে আমার বাঁ কানটা কামড়ে দিলেন আর ক্যাবলাকে দিলেন একটা ঘুষি বসিয়ে।

    মানে, হাসি পেলে ওঁর আর কাণ্ডজ্ঞান থাকে না। হাসির সঙ্গে সঙ্গে যাকে সামনে পান আঁচড়ে কামড়ে, কিল-ঘুষি মেরে অস্থির করে তোলেন।

    গত বছরের ব্যাপারটাই শোনো। সরস্বতীপুজোর সময় মাইকে বাজানোর জন্যে কতগুলো গ্রামোফোন রেকর্ড আনা হয়েছে। তাই থেকে সবে একটা হাসির গান বাজাতে শুরু করেছে আমাদের টেনিদা, আর তৎক্ষণাৎ

    বাজারের ভেতরে তাড়া খেয়ে গোরু যেমন করে দৌড়তে থাকে তেমনিভাবে ছুটতে-ছুটতে–একে ধাক্কা দিয়ে, তাকে মাড়িয়ে–গজকেষ্টবাবু এসে হাজির। তাই দেখে রেকর্ড-ফেকৰ্ড ফেলে টেনিদা তো এক লাফে উধাও। তখন গজকেষ্টবাবু করলেন কি হাসতে-হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলেন, তারপর উঠে একসঙ্গে খান বারো রেকর্ডই তুলে নিয়ে মারলেন এক আছাড়! আর দেখতে হল না বারোখানা রেকর্ডেরই বারোটা বেজে গেল! তা হলেই বোঝো, কী ভয়ঙ্কর ওঁর হাসি।

    এমনিতে কিন্তু খাসা মানুষ। পুজোর চাঁদা চাই? আচ্ছা, তক্ষুনি দিলেন পঞ্চাশটা টাকা। পাড়ার কারও আপদ-বিপদ হলে গজকেষ্টবাবুর অমনি সেখানে হাজির। কোনও বাড়ির রুগীকে রাত দুটোর সময় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে? গজকেষ্টবাবু নিজের মোটর-গাড়ি নিয়ে তক্ষুনি চলে আসবেন। এমন লোকের ওপর তো রাগও করা যায় না।

    ওঁর মোটর-গাড়ির কথাই ধরো না। বললেই তোমাকে গাড়িতে চাপাবেন, যেখানে যেতে চাও পৌঁছে দেবেন। কিন্তু গাড়ি চালাতে চালাতে যদি ওঁর হাসি পায় আর দেখতে হবে না। তখন তুমি পৈতৃক প্রাণটা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে কি না সন্দেহ। এই তো দুমাস আগে আমি আর আমার পিসতুতো ভাই ফুচুদা মেট্রো সিনেমা থেকে বায়োস্কোপ দেখে বেরিয়ে ট্রামের জন্য দাঁড়িয়ে আছি–গজকেষ্টবাবু এসে ঘস করে আমাদের দেখে গাড়ি থামালেন।

    বাড়ি ফিরবে বুঝি?

    আমরা বললুম, আজ্ঞে হ্যাঁ

    -তাহলে উঠে পড়ো গাড়িতে।

    আমরা দারুণ খুশি হয়ে উঠেছি ওঁর গাড়িতে। দিব্যি মজাসে যাচ্ছি, হঠাৎ ফুচুদাই গোলমাল করে ফেলল। সিনেমার-শোনা একটা হাসির গান বিচ্ছিরি বেসুরো গলায় গেয়ে উঠল–

    এক ছিল শৌখিন ব্যাং
    সরু-সরু মোজাপরা ঠ্যাং
    সাবান মাখত আর গাইত পুকুরঘাটে বসে
    ট্রালা-লা-লা-লা-লা-লা-গ্যাঁ

    আমি আঁতকে উঠে ফুচুদাকে বলতে গেছি–আরে করছ কী–সর্বনাশ হয়ে যাবে, কিন্তু তার আগেই যা হওয়ার হয়ে গেছে। বিকট আওয়াজ করে হেসে উঠেছেন গজকেষ্টবাবু। এক প্যাকেট মাখন আর দুটো পাউরুটি কিনেছিলেন, সেগুলো ছুঁড়ে দিয়েছেন রাস্তায়, একজন দাড়িওলা ভদ্রলোকের মুখে গিয়ে লেগেছে মাখনের প্যাকেট–দাড়িতে মাখন মাখামাখি, রুটির ঘা খেয়ে একজন ওড়িয়া চাকর বাপো-বাপ্পো বলে চেঁচিয়ে উঠছে আর

    আর মোটরগাড়ির স্টিয়ারিং ছেড়ে দিয়ে পা দুটো সামনের উইণ্ড-স্ক্রিনে তুলে দিয়ে দুহাত ছুঁড়ে গজকেষ্টবাবু হাসছেন হা-হা-হা-হা-হা-হাউ

    সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটা গিয়ে ধাক্কা মেরেছে সামনের ল্যাম্পপোস্টে। ভাগ্যিস আস্তে যাচ্ছিল গাড়ি, তাই মাথায়-পেটে বেদম ঝাঁকুনি খেয়েই আমরা এ যাত্রা পার পেয়ে গেলুম। স্পিডে চললে আর দেখতে হত নাব্যাস, ওইখানেই খেলা খতম। একদম হালুয়া হয়ে যেতুম আমরা।

    তারপর থেকে আমরা ওঁর মোটর-গাড়ির ত্রিসীমানাতে নেই সর্বনাশ! ওঁর গাড়িতে চড়া মানেই মহাযাত্রার রাস্তায় পা বাড়ানো। কখন কী বলে ফেলব, হাসতে হাসতে উনি স্টিয়ারিং ছেড়ে দেবেন–আর তারপরে! কী মুস্কিলের ব্যাপার দ্যাখো দেখি।

    ক্যাবলার খুড়তুতো ভাই মেন্টুর মুখে-ভাত। আমরা খেতে গেছি। জোর খাওয়া-দাওয়া চলছে। বেগুনভাজা, ঘাট, শাক-চচ্চড়ি, মুগের ডাল, ফ্রাই আর মাছের কালিয়া এসব খাওয়ার শেষে এসেছে মাংস-পোলাও। বেশ জমিয়ে খাচ্ছি–গজকেষ্টবাবু সবে খান বারো মাছ খেয়ে মাংসের দিকে মন দিয়েছেন এমন সময়–কে একজন আর-একজনকে বললে, এই, অত মাংস খাসনি। বেশি পাঁঠার মাংস খেয়ে শেষে পাঁঠা হয়ে যাবি, আর ব্যা ব্যা করে ডাকবি।

    এমনিতেই প্রাণ ভরে খেতে-খেতে গজকেষ্টবাবুর মেজাজ বেশ খোশ হয়ে ছিল, তার উপর কথাটা যেই শুনেছেন, ব্যাস।

    তড়াক করে পাতা ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন। কথাটা যে বলেছিল এক লাথি দিয়ে তার পাতাটা উলটে দিলেন, জলের গেলাস আর-এক ভদ্রলোকের কোলের উপর গিয়ে পড়ল। সে-ভদ্রলোক এঁ-এঁ-এঁ করে উঠতে গজকেষ্টবাবু তার হাঁটুটা খ্যাঁক করে কামড়ে দিলেন, তারপর

    হো-হো-হো-হিয়া-হিয়া করে হাসতে হাসতে গিয়ে গজকেষ্টবাবু চেপে ধরলেন আমাদের বল্টুদাকে। বল্টুদা মাংস পরিবেশন করছিল। গজকেষ্টবাবু করলেন কি, মাংসের বালতিটা কেড়ে নিয়ে সোজা ঢেলে দিলেন বল্টুদার মাথায়। বল্টুদা ইয়া ইয়া এঃ এঃ করে লাফাতে লাগল, গা আর গেঞ্জি বেয়ে পড়তে লাগল মাংসের ঝোল, আর সব মিলে বল্টুদাকে ঠিক একটা ঝোল-মাখানো গ্রেভি চপের মতো মনে হল। মানে একটা গ্রেভি চপ লাফাতে থাকলে যে-রকম দেখায় সেইরকম হল আর কি ব্যাপারটা।

    কী যে বিচ্ছিরি হল, বুঝতেই পারছ যাকে বলে দক্ষযজ্ঞ! এদিকটায় যারা বসেছিল তাদের তো খাওয়াই পণ্ড হয়ে গেল। নেহাত গজকেষ্টবাবু বলেই পার পেলেন আর-কোনও লোক হলে সবাই মিলে পিটিয়ে পোস্ত-চচ্চড়ি বানিয়ে দিত। তাই বলছিলাম, গজকেষ্টবাবু হাসলেই তোমার কান্নার পালা। কাছাকাছি যদি থাকো, একেবারে দফা নিকেশ করে ছেড়ে দেবেন।

    আমরা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি, গজকেষ্টবাবুকে দূরে আসতে দেখলেই সব্বাই একেবারে রামগরুড়ের ছানা সেজে বসে যাই–এমন মুখ করে থাকি যে, এক্ষুনি বুঝি কেঁদে ফেলব।

    সেদিন তো গজকেষ্টবাবু জিজ্ঞেসই করে বসলেন, কী হে, তোমরা যে সব হাঁড়ির মতো মুখ করে আছ? হয়েছে কী?

    হাবুল সেন পট করে বলে ফেলল, আমরা মনে বড় দুঃখ পাইছি।

    –কেন, দুঃখটা কিসের?

    –আহা মইরা গেলেন, আহা বড় ভালো লোক আছিলেন–

    –কে মারা গেলেন? গজকেষ্টবাবু জিজ্ঞাসু হয়ে উঠলেন : কে ভালো লোক ছিলেন? হাবুল তো দারুণ প্যাঁচে পড়ে গেল! কে মারা গেল সেটা ও একেবারেই ভাবেনি। হাবুলকে মাথা চুলকোতে দেখে ক্যাবলা বললে, ইয়ে মানে–গদাধরবাবু, খুরুটের গদাধরবাবু। তিনিই মারা গেছেন কালকে।

    আন্দাজী একটা যা-খুশি বলে দিয়েছিল ক্যাবলা, কিন্তু গজকেষ্টবাবর হাত থেকে নিস্তার পাওয়া শক্ত। গজকেষ্টবাবু চোখ কপালে তুলে বললেন, খুরুটের গদাধরবাবু? মানে গদাধর পাল? আরে সে মারা যাবে কেন? একটু আগেই সালকেতে তার সঙ্গে আমার দেখা দেখা হল।

    তখন আমি বললুম, না-না, গদাধর পাল নয়, গদাধর পাঁড়ে। খুরুটের নয়–খুর্দা রোডে থাকত। সে-ই মারা গেছে। তার জন্যেই আমরা শোকে কাতর হয়ে

    গজকেষ্টবাবু কী যেন বলতে যাচ্ছিলেন, তক্ষুনি একটা কাণ্ড হল।

    সামনেই রাস্তা দিয়ে প্রাণধনবাবু গুনগুন করে গান গাইতে-গাইতে আপন মনে চলছিলেন। আচমকা একটা কলার খোসায় তাঁর পা পিছলে গেল, সঙ্গে সঙ্গে ধড়াম করে এক আছাড়।

    দেখেই আকাশ কাঁপিয়ে, আমার পেটের পালাজ্বরের পিলেটাকে চমকে দিয়ে এক ভয়ঙ্কর অট্টহাসি হাসলেন গজকেষ্টবাবু, আর তীরের মতো ছুটে গেলেন প্রাণধনের দিকে।

    আমরাও গেল–গেল বলে ছুটলুম। প্রাণধনবাবু আছাড় খেয়েছেন বলে নয়–এইবার গজকেষ্টর হাতে তিনি পড়ে যাবেন।

    যা ভেবেছি, ঠিক তাই।

    প্রাণধনবাবু সামলে নিয়ে যেই উঠে দাঁড়িয়েছেন, অমনি গজকেষ্টবাবু গিয়ে ক্যাঁক করে ধরেছেন তাঁকে। হ্যাঃ হ্যাঃ করে হাসতে-হাসতে প্রথমেই প্রাণধনের নাকটা কামড়ে দিলেন।

    প্রাণধন ই-ই-ইরে বাঁপু-বলে বিকট গলায় চেঁচিয়ে উঠতেই গজকেষ্টবাবু দমাদম ঘুষি চালাতে লাগলেন তাঁর ওপর। প্রায় পঞ্চাশজন লোক জড়ো হয়ে যখন তাঁকে গজকেষ্টবাবুর খপ্পর থেকে বের করে আনল, তখন প্রাণধন প্রায় অজ্ঞান। নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে–গোঁ-গোঁ আওয়াজ বেরুচ্ছে গলা দিয়ে।

    সকলে গজকেষ্টবাবুকে যাচ্ছেতাই বলে বকতে লাগল।

    -ছি-ছি মশাই আপনি কি খুনে নাকি? এখুনি যে মেরে ফেলেছিলেন ভদ্রলোককে। লজ্জায় এতটুকু হয়ে গেলেন গজকেষ্টবাবু। নিজের মোটরে চাপিয়ে প্রাণধনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। ঘণ্টা খানেক পরে নাকে-মুখে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে প্রাণধন বেরুলেন হাসপাতাল থেকে। আর তাঁর ফ্যাটাবাঁধা সেই অদ্ভুত চেহারা দেখেই গজকেষ্টবাবুর মাথা খারাপ হয়ে গেল। খি-খি খিক খিক বলে একটা বিকুটে আওয়াজ তুলে ছুটলেন প্রাণধনের দিকে। একেবারে সোজা চার্জ।

    কিন্তু প্রাণধনও এবার হুঁশিয়ার হয়ে গেছেন। তিনি ওরে বাবা বলে একখানা পেল্লায় লাফ মারলেন, তার পরে সারলে রে- বলে রাম চিৎকার তুলে এমন দৌড় লাগালেন যে, তার কাছে অলিম্পিক রেকর্ড কোথায় লাগে।

    গজকেষ্টবাবু প্রাণধনকে ধরতে পারলেন না–তার বদলে একটা পাহারাওলাকে ধরতে গেলেন।

    আরে বাপ-ই ক্যা হৈ বলে পাহারাওলা পালাতে গিয়ে একটা ষাঁড়ের ঘাড়ে উলটে পড়ল। গজকেষ্টবাবু ষাঁড়টাকেই কামড়াতে যাচ্ছিলেন–সেই সময় আমরা সবাই মিলে ওঁকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে এসে গাড়িতে তুললম। তারই ভেতর গজকেষ্টবাবু খ্যাঁচ করে আমার ডান কানটা কামড়ে দিলেন।

    ভাগ্যিস আমাদের মধ্যে হাবুল মোটর চালাতে জানে। সেই তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে এল ওখান থেকে। নইলে গজকেষ্টবাবুকে ঠিক পুলিশে ধরে নিয়ে যেত।

    কিন্তু এই কদিন হল গজকেষ্টবাবুর হাসি একদম বন্ধ হয়ে গেছে। গজকেষ্টবাবু আর হাসেন না–হাসির কথা শুনলে আর তেড়ে গিয়ে কাউকে আক্রমণ করেন না। বরং কোনও হাসির কথা বললে ভয়ে মুখ শুকিয়ে যায়–যেন বাঘ দেখেছেন, এমনিভাবে ছুটে পালান সেখান থেকে।

    এই অঘটন ঘটিয়েছেন প্রাণধনবাবু।

    হাঁ–প্রাণধনই ঘটিয়েছেন। একেবারে নির্মম প্রতিশোধ নিয়েছেন যাকে বলে।

    প্রাণধনকে আমরা সবাই নিরীহ ভালোমানযু বলেই জানতুম। তাঁর মনে যে এত তেজ, প্রতিহিংসা আছে তা কে জানত।

    সেদিন দেখি, রাস্তার মাথায় প্রাণধনবাবু তাঁর ভাগনে কানাইকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কানাই দারুণ পালোয়ান–গোবরবাবুর আখড়ায় কুস্তি লড়ে। দুজনে মিলে ফিসফিস করে আলাপ চলছে। প্রাণধনের হাতে দেখলুম লেবেল-মারা একটা শিশি। তার গায়ে লেখা কুইনিন মিকশ্চার।

    জিজ্ঞেস করলুম, হাতে কুইনিন মিকশ্চার কেন প্রাণধনবাবু? কারও অসুখ নাকি?

    প্রাণধনবাবু ঠোঁটে আঙুল দিলেন। আমি দেখলুম দুলতে-দুলতে গজকেষ্টবাবু আসছেন।

    প্রাণধনবাবুর মতলবটা কী বোঝবার চেষ্টা করছি, ঠিক সেই সময় কানাই গলা ছেড়ে গর্দভ রাগিণীতে গান ধরল :

    এক যে ছিল গাধা
    পেন্টুলুন কিনবে বলে
    আদায় করত চাঁদা

    যেই গেয়েছে–মাঝপথে অমনি দাঁড়িয়ে পড়েছেন গজকেষ্টবাবু। কানাই আরও গলা চড়িয়ে গাইতে লাগল :

    বলত সেই গাধা :
    চার আনা করে সবাই আমায়
    দিয়ে যাবেন দাদা—

    –হৌ-হৌ–হৌ-হোয়া বলে গগনভেদী অট্টহাসি হাসলেন গজকেষ্টবাবু-তার পরই দমদম বুলেটের মতো তেড়ে এলেন কানাইয়ের দিকে।

    কানাইও তৈরিই ছিল। হা-রে-রে-রে বলে হাঁক ছেড়ে সে তক্ষুনি ধপাক করে গজকেষ্টবাবুকে ধরে ফেলল, তারপর পাক্কা কুস্তিগিরের মতো একখানা ধোপিয়া পাটের পাঁচ লাগিয়ে সোজা ফেলে দিলে রাস্তার ওপর। গজকেষ্টবাবুকে একেবারে চিত করে ফেলে কানাই তাঁর ওপর চেপে বসল।

    গজকেষ্টবাবু ভীষণ ভেবড়ে গেলেন। এতকাল হাসতে হাসতে তিনিই সকলকে আক্রমণ করেছেন, পালটা এমন বেয়াড়া কুস্তির প্যাঁচের জন্যে আদৌ তৈরি ছিলেন না। তাঁর হাসি বন্ধ হয়ে গেল।

    কিন্তু তাঁর হাসি বন্ধ হলে কী হয়-কানাই ছাড়বার পাত্র নয়। সে গজকেষ্টবাবুর ভূঁড়িতে আর পাঁজরায় বেদম সুড়সুড়ি দিতে লাগল। গজকেষ্টবাবু প্রাণের দায়ে খ্যাঁ-খাঁ করে হাসতে লাগলেন–চোখ দুটো তাঁর কপালে চড়ে গেল।

    আর তখন

    ঠিক সেই মুহূর্তেই

    কুইনিন মিকশ্চারের ছিপি খুলে তার সবটা গজকেষ্টবাবুর মুখের ঢেলে দিলেন প্রাণধন। গজকেষ্ট কেবল বলতে পারলেন : ওয়া ওয়াং।

    তারপরই প্রাণধন আর কানাই দেখতে না-দেখতে একদৌড়ে হাওয়া! গজকেষ্ট রাস্তার মধ্যে পড়ে রইলেন গজকচ্ছপের মতো। আমি ছুটে গিয়ে গজকেষ্টবাবুকে তুলে বসালুম। গজকেষ্ট বিকট স্বরে বললেন, ওয়াফ-ওয়াফ। বাপরে কী তেতো! প্যালা–সিরাপ এক বোতল–কুইক। ওয়াফ-ওয়াফ।

    .

    গজকেষ্টবাবু আর হাসেন না। তাঁর সেই মারাত্মক হাসি একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।

    এমন ভয়ঙ্কর দাওয়াইয়ের পর আর কি হাসি আসে কারও? তোমরাই বলো।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    Related Articles

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.