Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এক পাতা গল্প712 Mins Read0

    লঙ্কানাথম্ কট্টুসুন্দরম্

    লঙ্কানাথম্ কট্টুসুন্দরম্

    বল্টুদার মন-মেজাজ ভয়ানক খারাপ। ঠিক একটা বল্টুর মতো মুখ করে বসে আছে।

    যদ্দুর জানি, মন খারাপ করবার বান্দাই বল্টুদা নয়— অবশ্য ইস্টবেঙ্গল ক্লাব গোল খেলে আলাদা কথা। নইলে বল্টুদা সব সময়ই বেশ উৎসাহিত থাকে— কিচ্ছুটিতে দমে যায় না। একবার থিয়েটারে বল্টুদাকে দূতের পার্ট দেওয়া হয়েছিল, রাজসভায় গিয়ে বলতে হবে, ‘মহারাজ, অশ্ব কিছুতেই ঘাস খাচ্ছে না।’ বল্টুদা সোজা গিয়ে বলে ফেলল, ‘অশ্ব, মহারাজ কিছুতেই ঘাস খাচ্ছে না।’ লোকে হইহই করে উঠলে, বল্টুদা খেপে গেল। স্টেজের সামনে গিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল : “বলেছি, বেশ করেছি। আরও একশো বার বলব অশ্ব, মহারাজ কিছুতেই ঘাস খাচ্ছে না; অশ্ব, মহারাজ কিছুতেই—”

    বার পনেরো বলবার পরে সবাই মিলে বল্টুদাকে ভেতরে টেনে এনে ড্রপ ফেলতে হল।

    এ-হেন দুর্দম বল্টুদা হঠাৎ নাকমুখ অমন বিচ্ছিরি করে নিমগাছতলায় বসে আছে কেন, জানবার জন্য ভীষণ কৌতূহল হল আমার।

    টিপিটিপি এগোচ্ছি, হঠাৎ কোত্থেকে পাঁচুগোপালের ক্ষেমঙ্করী-পিসিমা এসে হাজির। এসে বেশ মিহি গলায় ডাকলেন, বাবা ঘোন্টু—

    ‘ঘোল্টু বলবার একটু ইতিহাস আছে। ক্ষেমঙ্করী-পিসিমার কোনও মাসশ্বশুরের মামাতো ভাইয়ের নামও নাকি বল্টু। তাই পিসিমা ও-নামে ডাকতে পারেন না— শ্বশুরের নাম ধরতে নেই কিনা! সেই জন্যে বরাবর ‘ঘোন্টু-ই বলে আসছেন। আজ কী যে হল, ডাক শোনামাত্র কোলা ব্যাংয়ের মতো চার পা তুলে লাফিয়ে উঠল বল্টুদা, দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বললে, ঘোল্টু! আমার নাম ঘোল্টু নাকি? আমি ঘোল খাই নাকি? আমার কি ন্যাড়া মাথা আছে যেখানে সবাই ঘোল ঢালে? নাম খারাপ করবেন না— এই বলে দিলুম, হুঁ!

    শুনে ক্ষেমঙ্করী-পিসিমা প্রথমে চোখ গোল করলেন, তার পরে গালে হাত দিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে কাকের মতো হাঁ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন, তারপরে বললেন, ও—ম্মা গো! তিন দিনের এঁড়ে, এল শিং নেড়ে! খুব যে ন্যাজ বেরিয়েছে দেখছি— খামকা হনুমানের মতো নাপাচ্ছিস! আঃ- খেলে কচুপোড়া— বলে ক্ষেমঙ্করী পিসিমা খুব কায়দা করে নাক বাঁকিয়ে চলে গেলেন।

    তারপর আমি এগিয়ে এলাম গুটিগুটি।

    —দেখলে বল্টুদা, কী-রকম গাল দিলে তোমাকে। প্রথমে বললে, শিংওয়ালা এঁড়ে, তারপর বললে, ল্যাজওয়ালা হনুমান; তারপর বললে, কচুপোড়া খা!

    বল্টুদা এবার হাঁড়োলের মতো মুখ করে বললে, বলুক। নিজেই কচুপোড়া খাক গে।

    —তোমায় কিন্তু বিকেলে আম-কাঁঠাল খাওয়ার নেমন্তন্ন করতে এসেছিল। আমাকেও বলেছে— আসল খবরটা আমি এইবারে ফাঁস করলুম।

    —অ্যাঃ, তাই নাকি? —বলুটদা ধপাৎ করে আবার নিমগাছের গোড়ায় বসে পড়ল; তা আগে বললিনি কেন? এতক্ষণ দাঁড়িয়ে মজা দেখছিলি না?

    —বলবার চান্স তুমি দিলে কোথায়? তার আগেই তো তেরিয়া-মেরিয়া হয়ে লাফিয়ে উঠলে।

    —হুঁ, তাও বটে!— বল্টুদা এমন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললে যে মনে হল, রীতিমতো সাইক্লোন বয়ে গেল; কী জানিস প্যালা, দারুণ পাঁচে পড়ে গেছি। সে-ও ওই নামেরই ব্যাপার। প্রায় ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দিলে। তাই তো ঘোল্টু শুনে ওই রকম খেপে গেলুম।

    —তুমিও কারওর নাম খারাপ করে দিয়েছ বুঝি?—আমি ঘন হয়ে বল্টুদার পাশে বসলুম!

    —আরে না—না!—বল্টুদা অন্যমনস্কভাবে একটা পাকা নিমফল মুখে দিয়েই থু-থু করে ফেলে দিলে : কী যাচ্ছেতাই ফল— রাম, রাম! দেখতে ঠিক পাকা আঙুরটির মতো, মুখে দিলে নাড়ি উল্টে আসে। মরুক গে— যে-কথা বলছিলুম। নাম খারাপ করলে অবিশ্যি গোলমাল এক-আধটু হয়। রাঙাদির বড় মেয়ে দিল্লিতে জন্মেছে, রাঙাদি আদর করে নাম রেখেছে কুমারী রাজধানী চক্রবর্তী। আমি ভুল করে রাজধানীকে যেই দাদখানি বলে ডেকেছি অমনি মেয়েটা ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কান্না জুড়ল আর রাঙাদির সে কী বকুনি! তা সে-সব তুচ্ছ কথা। সত্যি প্যালা, আমি দারুণ প্যাঁচে পড়ে গেছি এবার।

    —কী প্যাঁচ, শুনি?

    বল্টুদা আর-একটা নিমফল তুলে প্রায় মুখে দিতে যাচ্ছিল, আমি হাঁ হাঁ করে উঠতে ফেলে দিলে। বললে, ধুৎ! দেখতে পাকা আঙুরের মতো, আর খেলেই— মরুক্‌গে! হয়েছে কী জানিস প্যালা? আমার ছোটমামা থাকে মাদ্রাজে খুব বড় সরকারি চাকরি করে। পরশু সেই ছোটমামা কী-একটা কাজে সাতদিনের জন্যে সিমলাতে গেছে।

    —ছোটমামা সিমলাতে গেছে, তাতে তোমার প্যাঁচের কী হল?

    —থাম্ না বাপু— আগেই ক্যাঁচর-ম্যাচর করিস কেন?

    বল্টুদা উদাস হয়ে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।

    আমি ব্যস্ত হয়ে বললুম, ঘুড়ি কেটেছে নাকি বল্টুদা?

    বল্টুদা চটে গিয়ে বললে, ঘুড়ি—ঘুড়ি! দিনরাত ঘুড়ি ঘুড়ি করে গেলি। ইচ্ছে করে, তোর পিঠে সুতো বেঁধে তোকেই আকাশে উড়িয়ে দিই। হচ্ছিল একটা দরকারি কথা—

    —তা দরকারি কথাটা ঝাঁ করে বললেই তো হয়।

    বল্টুদা দাঁত খিঁচিয়ে বললে, বলতে দিচ্ছিস কোথায়? তুইও তো ছোটমামার বাঁদরটার মতো আমার হাড় জ্বালাচ্ছিস্।

    —ছোটমামার বাঁদর?

    —অ্যাঁরে, হ্যাঁ, সেই কথাই তো বলছি! ছোটমামার একটা শখের বাঁদর আছে। সেটা হাসে, কাঁদে, নাচে, আবার কিচির-মিচির করে গানও গায়। ছোটমামা সিমলা যাওয়ার সময় সেটাকে রেখে গেছে আমাদের বাড়িতে। বলেছে, আদর করে নাম ধরে ডাকলেই বাঁদর এসে পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়বে, তারপর যা বলবি তাই করবে। ঘুরে-ঘুরে হুলাহুলা নাচ নাচবে, ট্যাঙো ট্যাঙো বলে গান গাইবে

    আমি দারুণ আশ্চর্য হয়ে গেলুম।

    —বাঁদর তো কিচকিচ করে, ‘ট্যাঙো ট্যাঙো বলতে পারে নাকি? সত্যি বলছ?

    —সত্যি-মিথ্যে জানব কী করে? ছোটমামা তো এই কথা বলে তক্ষুনি দমদম থেকে প্লেনে চেপে হাওয়া। এদিকে বাঁদরটা সেই ছুঁচোর মতো মুখ করে বসে আছে তো বসেই আছে। খাচ্ছে না দাচ্ছে না, কথাটিও বলছে না, থেকে-থেকে গা চুলকোচ্ছে আর পটাপট্ উকুন মারছে কেবল।

    —তা নাম ধরে ডেকেই দ্যাখো না— কী বলে।

    আমি চেঁচিয়ে ওঠবার আগেই বল্টুদা একটা নিমফল মুখে পুরে দিলে। তারপর থু-থু করে সেটাকে ফেলে দিয়ে আরও জোরে চেঁচিয়ে উঠল!

    —ধুত্তোর নাম! ওই নাম নিয়েই তো যত ঝামেলা। ছোটমামা সব বলে গেল— কেবল নামটাই বলতে খেয়াল হয়নি। এখন বাঁদর ঠায় উপোস করে বসে আছে। কলা দিয়েছি, মুলো দিয়েছি, জিলিপি দিয়েছি— বললে বিশ্বাস করবিনে, আলুর চপ পর্যন্ত দিয়েছি। বল্টুদার জিভে জল এসে গেল : কী দারুণ মনের জোর দ্যাখ— আলুর চপ পর্যন্ত খেলে না! ওই ক’টা পুঁচকে উকুন খেয়ে ক’দিনই বা বাঁচবে বল্‌দিকি? স্রেফ উপোস করেই মারা যাবে।

    আমি নাক কুঁচকে বললুম, ছোঃ— বাঁদরের নামের জন্য আবার ভাবনা। ওর নাম আবার কী হতে পারে? রাম-শ্যাম-যদু-মধু কিংবা লম্বকর্ণ, কিংবা দধিমুখ, কিংবা জয়দ্রথ, কিংবা মলয়হিল্লোল—

    বল্টুদা বিচ্ছিরি দাঁত খিঁচিয়ে বললে, কিংবা পটলডাঙার প্যালারাম, কিংবা শিঙিমাছের ঝোল, কিংবা পালাজ্বরের পিলে! থাম, আর বকিনি। কোনও নাম ধরে ডাকতে বাকি রেখেছি? শেষকালে বাংলা ডিকশনারি খুলে ‘অজগর’ থেকে ‘বাঁশবন’—মানে ‘অ’’থেকে ‘চন্দ্ৰবিন্দু পর্যন্ত সায়নে আউড়ে গেছি। উঁহু— কিচ্ছুটিতে সাড়া দিলে না।

    —তা হলে হয়তো বাঁদরটার ইংরেজী নাম থাকতে পারে। জ্যাক কিংবা জিম নইলে ক্যাটাক্লিজম, নয় তো হাইপোডার্মিক সিরিঞ্জ— নয় তো কনস্টার্নেশন—

    বল্টুদা দু’হাতে কান চেপে ধরল : উঃএ যেন কানের কাছে কামান ছুঁড়ছে। তবু যদি ইংরেজীতে সাড়ে সতেরো না পেতিস। বাহাদুরি ফলাতে হয় তো চল বাঁদরের কাছে— দেখি কেমন ওস্তাদ তুই।

    আমি তক্ষুণি রাজি হয়ে গেলুম।

    গিয়ে দেখি, বাঁদরটার গলায় লম্বা শেকল বাঁধা। একটা জলচৌকির ওপর এমন কায়দা করে বসে আছে যে, মনে হয় জ্যামিতির একস্ট্রা ভাবছে! তারপরেই চিড়-বিড় করে সারা গা চুলকোতে লাগল আর মুখটাকে চামচিকের মতো করে (আমি অবিশ্যি চামচিকের মুখ কখনও দেখিনি) খ্যাঁকখ্যাঁক করে উঠল।

    আমি বলতে যাচ্ছিলুম, বানরটার বোধ হয় খুব চুলকোনো হয়েছে— ওকে কার্বলিক সাবান মাখানো দরকার। এমন সময় কোত্থেকে বল্টুদার বোন ঘুণ্টি এসে হাজির। এসেই বাঁদরের সামনে বসে পড়ে চিৎকার করে গান জুড়ে দিলে :

    ‘জলে হরি, স্থলে হরি, চন্দ্রে হরি, সূর্যে হরি—’

    কিন্তু গানের সুরে বাঁদরের মন খুশি হল না।

    ‘ইকলুস্ পিকলুস্ ইচাং ইচাং’ বলে সে এমন একটা লাফ মারল যে, শেকলে বাঁধা না থাকলে ঠিক ঘুণ্টির ঘাড়ে গিয়ে পড়ত। চ্যাঁ-ভ্যাঁ করতে-করতে ঘুণ্টি সোজা ঘরের ভেতর ছুটে পালালে।

    বল্টুদা হতাশ গলায় বললে, গ্রামোফোন এনে দেড়শো রেকর্ড শুনিয়েছি, খেয়াল থেকে কালী-কীর্তন কিচ্ছু বাদ দিইনি। তাতেও চিঁড়ে ভিজল না— আর ঘুণ্টি কাঁই মাঁই করে ওকে ভোলাবে! দিত নাকটা আঁচড়ে— ঠিক হত।

    আমি বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়লুম।

    —ওতে হবে না। ঠিক নাম ধরে ডাকা চাই— তবেই না?

    —ডাক না— সারাদিন ধরে ডাক। যে-নামে খুশি ডাক— হাম্বা হাম্বা করে ডাক, ভ্যাঁ-ভ্যাঁ করে ডাক! বলিস তো ডিকশনারি এনে দিই।

    আমি বীরের মতো বললুম, ডিকশনারিতে দরকার নেই—এমনিতেই ম্যানেজ করব।’ গোড়াতে বেশ মিষ্টি করেই ডাকা যাক। রামধন—

    বাঁদর একটা উকুন ধরল।

    —ব্রজবল্লভ—

    উকুনটা পট করে চলে গেল মুখের ভেতর।

    —যোগেন্দ্রকুমার—

    —দধিকর্ণ—হরিপ্রসন্ন—নন্দপুরচন্দ্র—বৃন্দাবন-অন্ধকার—

    বাঁদর ফ্যাচাং করে আমাকে একটা ভেংচি কেটে দিলে।

    বল্টুদা খিকখিক করে হাসল।

    —বললুম না, ডিকশনারির কোনও শব্দ বাকি রাখিনি? কিচ্ছু করতে পারবি না।

    আমি বিরক্ত হয়ে বললুম, থামো না বাপু— বলতে দাও আমাকে। রাক্ষস— খোক্কোস— কপিধ্বজ—বনহংসী— ইন্দুনিভাননী—

    বাঁদর ভীষণ জোরে খ্যাচাং করে গা চুলকোতে লাগল— যেন ছাল-চামড়া সব উপড়ে ফেলে দেবে! তখন আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এল। মাদ্রাজের বানর, একটা মাদ্রাজী নামই ওর থাকা উচিত। ঠিক। দি আইডিয়া! ডাকলুম! মাদ্রাজম্—

    বল্টুদা বললে, ও আবার কী! মাদ্রাজম্ মানে কী?

    —ওরা সব অনুস্বার দিয়ে বলে, আমি জানি। বলতে দাও না আমাকে— বিরক্ত কোরো না! মসলিপট্টম্—

    এবার বাঁদর যেন একটুখানি কান খাড়া করল।

    উৎসাহ পেয়ে বললুম, তাঞ্জোরম

    বাঁদর আমার মুখের দিকে প্যাট্‌প্যাট করে তাকাল। যেন বলতে চাইছে : বেশ হচ্ছে, চালিয়ে যাও।

    অমি চেঁচিয়ে বলতে লাগলুম, কাঞ্জীভরম্— শিবসমুদ্রম্—ওয়ালটেয়ারম— তারপরে আর মাদ্রাজের কোনও জায়গার নাম মনে হল না, আমি ধাঁধাঁ করে বলে চললুম : হিমাচল—গোবরডাঙাম্—(গোবরডাঙায় মেজকাকিমার বাপের বাড়ি) জামশেদপুরম – চিত্রকূটম—পটলডাঙা —

    —যেই বলেছি পটলডাঙাম—তক্ষুনি সেই ভয়ঙ্কর কাণ্ডটা ঘটল। তিনদিন ধরে কানের কাছে নানারকম নাম শুনতে-শুনতে বানরটা তিতবিরক্ত হয়ে গিয়েছিল— পটলডাঙাম্ বলবার সঙ্গে-সঙ্গে খেঁকী কুকুরের মতো মুখ করে আওয়াজ করল; কিঞ্চিৎ— কিঞ্চিৎ—উচ্চিংড়ে— ঘেচুং—

    আর একখানা ভয়ঙ্কর লাফ!

    সেই লাফে শেকল কটাং করে ছিড়ে গেল। আর বাঁদর তক্ষুনি “হিঞ্চে—হিঞ্চে—গুশকরা—বলে পাঁইপাই করে তেড়ে এল আমার দিকে। আমি ‘বাপরে মারে’ বলে পালাতে যাব, হঠাৎ বারান্দা মোছার ভিজে ন্যাকড়াটার পা পড়তেই ধপাস-ধাঁই করে উলটে পড়ে গেলুম।

    এবার আমি গেছি। বাঁদর আমার নাক-কান আর আস্ত রাখবে না। পটলডাঙার প্যালারামের পালাজ্বরের পালা এইখানেই শেষ!

    আর তক্ষুণি মোটা গলায় কে যেন ডাকল, ‘লঙ্কানাথম কট্টুসুন্দরম্ চিন্তারপাণ্ডুরম্

    বল্টুদার ছোটমামা। সাতদিনের কাজ তিনদিনে সেরেই ফিরে এসেছেন.।

    বাঁদরটা ঘাঁক করে পেছন ফিরে তাকালে।

    ছোটমামা আবার ডাকলেন, ‘লঙ্কানাথম্ কটুসুন্দরম্ চিন্তারপাণ্ডুরম্—

    মাটিতে চিত হয়ে পড়ে থেকেই আমি জুলজুল করে চেয়ে দেখলুম, বানরটা ট্যাঙো ট্যাঙো বলে মান ধরেছে আর দু’হাত আকাশে তুলে হুলাহুলা নাচ শুরু করে দিয়েছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    Related Articles

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.