Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এক পাতা গল্প712 Mins Read0

    শয়তানের সাঁকো

    শয়তানের সাঁকো

    একদিকে একটি ভারি সুন্দর শহর, আর একদিকে গ্রাম, মাঠ, বন-জঙ্গল। সব মিলে চমৎকার। কিন্তু মুস্কিল হচ্ছে এই যে, শহরের লোক গাঁয়ে আসতে পারে না–গাঁয়ের লোকের শহরে যাওয়ার জো নেই। মাঝখানে একটা দারুণ বাধা।

    কিসের বাধা? মাঝখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দুর্দান্ত এক পাহাড়ে নদী। এমন কিছু চওড়া তা নয়, কিন্তু যেমন সে গভীর, তেমনি প্রবল তার স্রোত। জায়গাটা হচ্ছে সুইটজারল্যান্ড। একদম পাহাড়ের দেশ–পাথরে-পাথরে ঘা দিয়ে ফেনিয়ে-ফেনিয়ে ঝড়ের বেগে বয়ে চলেছে নদী। তার গর্জন শুনলে কানে তালা ধরে যায়, কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে থাকলে মাথা ঘুরতে থাকে।

    সমস্যা হচ্ছে, এই নদীর ওপরে একটা পুল বাঁধা যায় কী করে।

    চেষ্টা যে হয়নি, তা নয়। অনেক পরিশ্রম, অনেক খরচ করে, ঢের মাথা খাটিয়ে একটা সাঁকো হয়তো তৈরি করা হল। একদিন রইল, দুদিন রইল, তারপরেই–ব্যস! কোত্থেকে নেমে এল ভয়ংকর পাহাড়ি ঢল-হুড়মুড় করে একঘায়ে ভেঙে ফেলল সাঁকো, তার ইট-পাথর লোহালক্কড় যে কোন চুলোয় ভাসিয়ে নিয়ে গেল, তার আর পাত্তাই মিলল না।

    শেষকালে দেশ-বিদেশের অনেক পণ্ডিত এসে, বিস্তর হিসেব-নিকেশ করে হাজার-হাজার মোহর খরচ করে এক জবর সাঁকো তৈরি করলেন। দিন কয়েক সেটা রইলও। তাপর আর কী? আবার পাহাড় থেকে নামল বরফ-গলা জলের ঘূর্ণি-হাজার-হাজার বুনো মোষের মতো ডাক ছাড়তে ছাড়তে ছুটে এল, আর অত পরিশ্রম আর খরচের সাঁকোটা, প্রায় চোখের পলকেই উধাও!

    দেশের লোক চটে লাল হয়ে গেল। তারা দল বেঁধে, পতাকা-টতাকা নিয়ে শহরের মেয়রের বাড়ির সামনে এসে দারুণ চ্যাঁচামেচি করতে লাগল; হয় সাঁকোটা বানিয়ে দাও, নইলে গদি ছেড়ে দাও। মেয়রের মন খুব খারাপ হয়ে গেল। গদি না-হয় ছেড়েই দেব, কিন্তু এ কী কাণ্ড! একটা নদীর ওপরে কিছুতেই পুল বাঁধতে পারা গেল না। এ-অপমান কখনও সহ্য হয়?

    অনেক রাত হয়ে গেছে, সারা শহর ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু মেয়রের চোখে আর ঘুম নেই। রাত জেগে ঠায় টেবিলের সামনে বসে আছেন। সামনে কাগজপত্র, তাতে নতুন পুল তৈরির হিসেব। ইস–এতগুলো টাকা। একেই বলে জলে যাওয়া, জলই নিয়ে গেল।

    নদীর আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল দূর থেকে, মেয়রের মনে হল নদীটা তাঁকে ঠাট্টা করছে। রাগে দাঁত কড়মড় করতে করতে মেয়র বললেন, এ-নদীকে জব্দ করতে পারে–না, ভগবানও নয়, একমাত্র শয়তান। আঃ–শয়তান এসে যদি সাঁকোটা বেঁধে দিত।

    বলবার অপেক্ষামাত্র। সঙ্গে সঙ্গে দরজা ঠেলে মেয়রের চাকর এসে ঢুকল।

    হুজুর, শ্রীশয়তান এসেছেন দেখা করতে।

    মেয়র ভয়ানক চমকে বললে, কে এসেছে?

    নাম বললেন–শ্রীশয়তান।

    শয়তান! মাঝরাত্তিরের এই থমথমে নির্জনতায় একবারের জন্যে মেয়রের হাত-পা ভয়ে হিম হয়ে গেল। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, আচ্ছা, পাঠিয়ে দাও ভেতরে।

    চাকর চলে গেল এবং শয়তান এসে ঢুকল ঘরে। চেহারা দেখে মনে হয়, পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশের মতো বয়েস হবে। উঁচু চোয়াল, থুতনিতে ছাগল-দাড়ি, লম্বা মুখ, বাজপাখির ঠোঁটের মতো নাক। কোটরের ভেতরে চোখ দুটো দুটুকরো আংরার মতো জ্বলছে। অনেকটা জার্মানদের মতো তার পোশাক, পরনে লাল টকটকে প্যান্টুলুন, গায়ে একটা লম্বা কালো কোট–আগুনরঙা তার উঁচু কলার। সাকাসের ক্লাউনরা যেমন পরে–তেমনি একটা চুড়োওলা কালো টুপি তার মাথায় তার ওপরে রক্তলাল একটা পাখির পালক থেকে-থেকে দুলে উঠছে। পায়ে তার দুটো গোল-গোল জুতো শয়তানের পায়ের পাতা ছাগলের মতো বলে সে অন্য জুতো পরতে পারে না।

    মেয়র কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলেন শয়তানের দিকে। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে, বেশ খাতির করে, শয়তানকে সামনের চেয়ারটাতে বসালেন।

    তারপর বন্ধু–একটু মিটমিট করে হেসে, মিঠে গলায় শয়তান বললে, শেষ পর্যন্ত বুঝি আমাকেই দরকার পড়ল তোমাদের।

    মেয়র খুব বিনীত হয়ে বললেন, আপনি না হলে আমাদের তো আর গতি দেখছি না।

    ওই হতচ্ছাড়া পুলটার জন্যে তাই না?

    আজ্ঞে, আপনি তো অন্তর্যামী, সবই জানেন।

    পুলটা বুঝি খুবই দরকার?

    আজ্ঞে, নইলে যে আমরা নদী পার হতে পারছি না কিছুতেই।

    শয়তান বললে, হুম।

    একটু চুপ করে থেকে, হাত কচলে মেয়র বললেন, তা দেখুন শয়তান মশাই, আপনি তো অতি মহৎ, দয়া করে ওই সাঁকোটা যদি আমাদের তৈরি করে দিতেন–

    মুচকি হেসে শয়তান বললে, আমিও ওই প্রস্তাব নিয়েই তোমার কাছে এসেছি।

    তাহলে কীভাবে কাজটা

    পারিশ্রমিক পেলেই করে দেব।–শয়তান তার জ্বলন্ত চোখ দুটো মেলে মেয়রের মুখের দিকে চেয়ে রইল। তার দৃষ্টিতে শয়তানী দুর্বুদ্ধি ঠিকরে পড়ছিল।

    মেয়র একটু কুঁকড়ে গিয়ে বললেন, সে তো বটেই–সে তো বটেই। পারিশ্রমিক তো দিতেই হবে।

    চেয়ারে নড়ে-চড়ে, পায়ের ওপর পা তুলে দিয়ে শয়তান বললে, আমি যেরকম পুল তৈরি করে দেব, তা হবে সবার সেরা। এমনটি আর কেই কখনও দেখেনি।

    তাতে আমারও কোনও সন্দেহ নেই মাথা নেড়ে জবাব দিলেন মেয়র। তারপর আস্তে-আস্তে বললেন, এর আগের সাঁকোটা তৈরি করতে আমাদের ছহাজার মোহর খরচ হয়েছিল। আমরা এবার তার দ্বিগুণ পর্যন্ত খরচা করতে পারি কিন্তু তার বেশি আপনাকে আমরা দিতে পারব না।

    মোহর-সোনা! শয়তান হেসে উঠল : তোমাদের সোনা দিয়ে আমি কী করব? আমি তো যত ইচ্ছে ওসব তৈরি করতে পারি। দেখবে?

    ঘরের ভেতরে ফায়ার-প্লেসে ঝাঁ ঝাঁ করে আগুন জ্বলছিল। টক করে উঠে পড়ল শয়তান, তারপর ফায়ার-প্লেসের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে গনগনে রাঙা একটা কয়লা তুলে নিলে। যেন রুটির দোকান থেকে একখানা কেক তুলে নিয়েছে–ভাবখানা এইরকম।

    সেইটে মুঠো করে এনে সে মেয়রকে বললে, হাত পাতো।

    মেয়র উসখুস করতে লাগলেন।

    শয়তান বললে, কিছু ভয় নেই,–হাত পাতোই না।

    অগত্যা মেয়র হাত পাতলেন।

    কিন্তু এ কী। শয়তান তাঁর হাতে যা দিলে–সে তো জ্বলন্ত কাঠকয়লা নয়। সেটা যে মস্ত একটা খাঁটি সোনা! আর কী কনকনে ঠাণ্ডা সেটা। যেন এই মুহূর্তে সেটাকে খনি থেকে তুলে এনেছে কেউ।

    খানিকক্ষণ অবাক হয়ে থেকে মেয়র সেটা নেড়ে-চেড়ে উলটে-পালটে দেখলেন। তারপর ফিরিয়ে দিরে গেলেন শয়তানকে।

    আরে না-না–পায়ের ওপর পা তুলে আবার জাঁকিয়ে বসে শয়তান বললে, ওটা আর তোমার ফেরত দিতে হবে না। ও আমি তোমাকে উপহার দিলুম।

    মেয়র সোনার তালটা নিজের ব্যাগে পুরে বললেন, তা হলে সোনা যখন আপনি নেবেন না, তখন অন্য কোনওভাবে আপনাকে পারিশ্রমিকটা দিতে হবে। কিন্তু সেটা যে কী, আমি তো তা বুঝতে পারছি না। আপনি অনুগ্রহ করে বাতলে দিন।

    একমুহূর্ত চিন্তা করল শয়তান। পরক্ষণেই কুটিলতায় ভরে উঠল তার জ্বলন্ত চোখ দুটো।

    শয়তান বললে, আমার পারিশ্রমিক আর কিছুই নয়। পুল তৈরি হওয়ার পর সর্বপ্রথম যে ওটা পার হবে, তার আত্মাটাকে আমি নেব।

    শোনবার সঙ্গে সঙ্গে মেয়র শিউরে উঠলেন। শয়তান আত্মা নিয়ে যাবে। তার অর্থ যে কী সাংঘাতিক, সে তো মেয়রের জানতে বাকি নেই। যে-আত্মাকে শয়তান একবার অধিকার করবে, তার আর কখনোই নিষ্কৃতি মিলবে না। অনন্তকাল ধরে তাকে নরকের অন্ধকারে ঘুরতে হবে, শয়তানের দাসত্ব করতে হবে, শয়তানের যত বীভৎস পাপের কাজ–তাতেও তার অংশ নিতে হবে। চিরকালের মতো অভিশপ্ত হয়ে যাবে সে।

    মেয়র চুপ করে রইলেন। অধৈর্য হয়ে শয়তান বললে, কী ভাবছ। উত্তর দিচ্ছ না যে। রাজি?

    একটু পরে মেয়র বললেন, রাজি।

    শয়তান বললে, তা হলে কাগজ কলম বের করো। ভদ্রলোকের মতো চুক্তিপত্র তৈরি করে ফেলা যাক একটা।

    কাগজ কলম নিয়ে মেয়র বললেন, চুক্তিপত্রে কী লিখতে হবে, আপনিই-বলুন।

    শয়তান বলে গেল, মেয়র লিখে নিলেন। চুক্তি হল এই : আজ রাত ভোর হওয়ার আগেই শয়তান ওই দুর্ধর্ষ দুরন্ত নদীটার ওপর দিয়ে একটা সাঁকো তৈরি করে দেবে। সে-সাঁকো যেমন সুন্দর হবে-তেমনি শক্তও হবে, আর পুরো পাঁচশো বছর সেটা অক্ষয়-অটল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। এই কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে, সর্বপ্রথমে এই সাঁকোটা যে পার হয়ে যাবে, তার আত্মার ওপর কায়েম হবে শয়তানের অধিকার। সে ভুল করেই যাক আর ইচ্ছে করেই পার হোক, শয়তানের কাছ থেকে তার আর পরিত্রাণ নেই।

    চুক্তিপত্র লেখা হল, দুটো নকলও করা হল তার। যেমন নিয়ম, মেয়র সমস্ত শহরের পক্ষ থেকে সেই দুটোতে সই করলেন, শয়তানও গোটা-গোটা করে নিজের নাম সই করে দিলে। তারপর একটা নকল নিলেন মেয়র, আর একটা নিয়ে শয়তান তার ঝোল্লা কালো কোটের পকেটে ভাঁজ করে পুরে ফেলল।

    উঠে দাঁড়িয়ে, এক গাল হেসে শয়তান বললেন, তা হলে কথা পাকা। কাল ভোরেই দেখবে তোমার সাঁকো তৈরি হয়ে গেছে।

    বলেই খুটখুট করে গোল-গোল জুতোর আওয়াজ তুলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে। রাতে মেয়রের আর ঘুম হল না। পরদিন খুব ভোরে, শহরের জনপ্রাণীটিও জেগে ওঠবার আগেই, কাঁধে একটা মুখ বন্ধ মস্ত ঝোলা নিয়ে তিনি নদীর ধারে গিয়ে হাজির হলেন।

    শয়তানের যে কথা সেই কাজ। মেয়র দেখলেন, অতি চমৎকার, দারুণ পাকাপোক্ত এক পুল নদীর ওপর দিয়ে তৈরি হয়ে রয়েছে। আর পুলের ওপারে, ভোরের ঝাপসা আলোয় একটা পাথরের ওপরে বাঘের মতো খাপ পেতে বসে রয়েছে শয়তান। যে-হতভাগা না জেনে সকলের আগে এই সাঁকোটা পার হবে–তার আত্মাটাকে অমনি সে খপাত করে কেড়ে নেবে। তার পারিশ্রমিক।

    মেয়রকে সাঁকোর মাথায় দাঁড়াতে দেখে শয়তান হাঁক দিয়ে বললে, দেখছ তো, আমি কী রকম কথার লোক।

    আমিও কথার লোক–মেয়র জবাব দিলেন।

    শুনে, শয়তানের ধোঁকা লাগল।

    সে কী! তুমি নিজেই প্রথম সাঁকো পেরিয়ে আমার খপ্পরে পড়তে চাও নাকি? এত বড় আত্মত্যাগ?

    আত্মত্যাগের নিকুচি করেছে। আমাকে কি তুমি এমন গর্দভ ভেবেছ?–বলেই মেয়র কাঁধের মস্ত ঝোলাটা নামিয়ে খুলতে আরম্ভ করলেন।

    শয়তান বললে, ওটা কী হচ্ছে?

    উত্তরে মেয়র বললেন, ভু-উ-উ-ভৌ-ঔ-ঔ

    শয়তান অবাক হয়ে বললে, তার মানে?

    মেয়র বললেন, তার মানে ভৌ-ঔ-ঔ—

    অ্যাঁ

    বলতে বলতেই মেয়র থলেটা খুলে ফেললেন। আর তার ভেতর থেকে ছিটকে বেরিয়ে এল একটা বদমেজাজি রাস্তার নেড়ী কুকুর–সেটার ল্যাজে আবার ভাঙা একটা সসপ্যান বাঁধা রয়েছে। থলে থেকে ছাড়ান পেতেই সেটা সাঁকো পেরিয়ে ভোঁ-দৌড়!

    মেয়র বললেন, নাও হে শয়তানদা-তোমার আত্মা নিয়ে যাও। এই কুকুরটাই তো প্রথম সাঁকো পার হয়েছে।

    শয়তান বললে, বা-রে, তা কী করে হয়। কুকুরের আত্মা দিয়ে কোন্ ঘোড়ার ডিম হবে? আমি তো মানুষের আত্মার কথা বলেছিলাম।

    মেয়র বললেন, বার করে চুক্তিপত্র। তাতে কেবল আত্মা লেখা আছে। মানুষ, কুকুর, গোরু, ছাগল–কিছুই আলাদা করে বলা নেই। অতএব, তোমার পারিশ্রমিক তুমি পেয়ে গেলে। এবার আনন্দে নাচতে নাচতে নরকে চলে যাও।

    রেগে আগুন হল শয়তান। তার হাত কামড়াতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা বোকা বানিয়েছে তো তাকে। সে হল মূর্তিমান শয়তান, তার মগজে যত কুবুদ্ধির কারখানা, আর লোকটা এমন করে তাকেই বেকুব করে দিলে!

    পুলটাই ভেঙে ফেলব–শয়তান ভাবল। কিন্তু প্রাণপণ চেষ্টা করে সে সাঁকোর একটুকরো নুড়িও নড়াতে পারল না। চুক্তি অনুসারে সেটা পাঁচশো বছরের মতো অটল হয়ে আছে–বজ্রের মতন তার গাঁথুনি। খেপে গিয়ে শয়তান একটা হাজার-মন পাথর ছুঁড়ে মারল সাঁকোর ওপর। সাঁকোয় টোলটি পর্যন্ত খেল না, তার বদলে পাথরটাই গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে ঝুরঝুর করে ঝরে গেল নদীর জলে।

    দাঁত কিড়মিড় করে শয়তান বললে, তা হলে ওই বজ্জাত মেয়রটাকেই মেরে ফেলি। আর বলেই যেই মেয়রের মাথা লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে যাচ্ছে, অমনি মেয়র বললেন, লে ভোলা-ছু-চ্ছু-চ্ছু–

    বস্তার মধ্যে আটকে থেকে নেড়ী কুকুর চটেই ছিল, আর বলতে হল না। তার ওপরে ল্যাজে ভাঙা সসপ্যান বাঁধা থাকায় তার মেজাজ আরও খারাপ। আর শয়তানের বিতিকিচ্ছিরি চেহারাও তার ভালো লাগেনি। সে ঘোঁ-ঘঁক–বলে শয়তানকে তাড়া করল।

    বাপ-রে–মা-রে বলে শয়তান দে-দৌড়!

    কিন্তু নেড়ী কুকুর কি তাকে ছাড়ে?–ঘোঁ-ঘঁক করে সমানে ছুটে চলল তার পেছনে।

    মেয়র আনন্দে নাচতে শুরু করে দিলেন, কিন্তু কোটের পকেট থেকে ধোঁয়া বেরুতে আর গায়ে গরম ছ্যাঁকা লাগতে নাচ বন্ধ হয়ে গেল। হুড়মুড় করে কোটটা ছুঁড়ে ফেললেন তিনি। বাপস্–একটুর জন্যে প্রাণ বেঁচে গেছে। পকেটে শয়তানের সেই সোনার তাল কখন আবার জ্বলন্ত কয়লা হয়ে গিয়ে জামায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তাঁর।

    ওদিকে শয়তান সেই যে ছুটে পালাল, আর কোনওদিন তার টিকিও দেখা গেল না। নেড়ী কুকুরটা আজও তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে কি না কে জানে! চুক্তিমতো কুকুরের আত্মা তো অনন্তকালের জন্যে তার সঙ্গী।

    আর সেই সাঁকোটা? দুরন্ত নদীটার বুকের ওপর সে পাঁচশো বছরের জন্যে অক্ষয় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    Related Articles

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.