Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সমাজ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    উপন্যাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক পাতা গল্প504 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    হিন্দুদিগের জাতীয় চরিত্র ও স্বাধীনতা

    সেদিন মোহিনী এক Theory বাহির করিয়াছিলেন যে, যে জাতি সমতলভূমিতে থাকে তাহারা অপেক্ষাকৃত ন্যায়শাস্ত্রব্যবসায়ী হয়। কথাটা নিতান্তই কাল্পনিক বোধ হয় না। যাহারা সমতলক্ষেত্রে থাকে, কষ্টস্বীকার করিয়া অতিক্রম করিবার অভ্যাস তাহাদের চলিয়া যায়, স্বভাবতই অলস হইয়া যায়। এইজন্য কোনোপ্রকার মানসিক [চিন্তা] তাহাদের পক্ষে দুঃসহ, ঘর-পড়া ন্যায়শাস্ত্রের জাদুপ্রভাবে সমস্তই তাহারা পরিষ্কার সমভূমি করিয়া দিতে চায়, সমস্তই একটা System একটা তন্ত্রের মধ্যে আনিতে চায়। তাহারা স্বাধীন মানবমন হইতে প্রসূত সাহিত্য [রচনার] একটা কল বানাইয়া দিয়াছে– এমন একটা স্বভাববিরুদ্ধ অলংকারশাস্ত্র গড়িয়া দিয়াছে, যাহাতে আপন হইতে লিখিবার ল্যাঠা যথাসম্ভব ঘুচিয়া যায়। সংগীতকে তাহারা এমন রাগরাগিণীজালের মধ্যে বাঁধিয়া দিয়াছে [যাহাতে] গীতরচনা করিতে যান্ত্রিক শিক্ষা ছাড়া স্বাভাবিক ক্ষমতার বড়ো একটা আবশ্যক বোধ হয় না। সকল দুরূহ [প্রশ্নেরই] চট্‌পট্‌ একটা মীমাংসা বাহির করিয়া ফেলে। কিছুতেই যখন পাওয়া যায় না তখন একটা গল্প তৈরি করে। পঞ্চপাণ্ডব যে এক স্ত্রী বিবাহ করিল সেটা যেম্‌নি বুঝিতে একটু গোল বাধে অম্‌নি তাহার গল্প বাহির হয়। [ইহ]জন্মে যাহার নিকাশ পাওয়া যায় না পূর্বজন্ম হইতে তাহার কৈফিয়ত তলব হয়। কিছুই অমীমাংসিত থাকে না। যাহারা সকল বিষয়েরই চরম মীমাংসার জন্য অতিমাত্র ব্যগ্র, তাহারা কোনো বিষয়ের প্রকৃত মীমাংসায় [পৌঁছিতে পারে] না, অথবা যদিবা পৌঁছায় তো দৈবাৎ পৌঁছায়– কারণ তাহারা হাতের কাছে যাহা পায় তাহাকে [সত্য] মানিয়া নিষ্কৃতি পাইতে চাহে। Facts কাহারো মন জোগাইয়া চলে না, এইজন্য Facts-কে তাহারা [ভয় পায়]– এইজন্য চোখ বুজিয়া বহিঃপ্রকৃতির মুখ-চাপা দিয়া নিজের মন হইতে মনের মতো তন্ত্র বাহির করিতে [চায়, এই] জন্য সমস্তটাকে অত্যন্ত Elaborate করিতে হয়– আরম্ভের কথাগুলো অসত্য হৌক কিন্তু সেগুলিকে মানিয়া [লইলে] তাহার পরে তাহাদের মধ্যে একটা সুবিস্তৃত জটিল সামঞ্জস্য স্থাপন করা আবশ্যক হয়, নহিলে লোকে সেগুলিকে গ্রাহ্য করিবে না। এইজন্য প্রাণপণে Consistent হইতে হয়, যাহাতে গঠননৈপুণ্য দেখিয়াই লোকের [বিশ্বাস] জন্মে। পৃথিবীকে দেখা হয় নাই অথচ পৃথিবীর বিষয় লিখিতে হইবে এইজন্য পৃথিবীকে অবিকল একটি [বিকশিত] শতদলের ন্যায় কল্পনা করা হইল তাহার প্রত্যেক দলের স্বতন্ত্র নামকরণ হইল, সুমেরু-নামক কাল্পনিক পর্বতকে [তার] মধ্যস্থিত সুবর্ণ বীজকোষের মতো স্থাপন করা হইল, সমস্ত কল্পনার মধ্যে এমনি একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সুষমা প্রকাশ পাইল যে অজ্ঞ লোকের পক্ষে তাহাকে অবিশ্বাস করা দুরূহ– এবং লোকেরাও বিশ্বাস করিবার জন্য নিরতিশয় ব্যাকুল– অবিশ্বাসের পক্ষে যে অশান্তি ও পরিশ্রম আছে সেটুকু অলস লোকে বহন করিতে চায় না। সত্যের মধ্যে যে পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা ও সামঞ্জস্য আছে এ কথা সত্য– কিন্তু প্রথমত আংশিক সত্যগুলিকে খণ্ড খণ্ড বিশৃঙ্খলভাবে দেখিয়া ক্রমে যথানিয়মে সেই শৃঙ্খলাবদ্ধ সুন্দর সত্যের প্রতি ধাবমান হওয়া যায়। তাড়াতাড়ি করিতে গেলে আপনার মনের সংকীর্ণ কল্পনার ক্ষুদ্র পারিপাট্যটুকু লাভ করা যায় কিন্তু উদার প্রকৃতির বৃহৎ সামঞ্জস্য [দেখা] যায় না। টলেমির কাল্পনিক জ্যোতিষ্কমণ্ডল যতই সুবিহিত সুষম হউক-না-কেন সুষমা-সৌন্দর্যে প্রাকৃতিক জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর সহিত তাহার তুলনা হয় না। কাল্পনিক পারিপাট্যের চর্চা করিতে গেলে ক্রমে তাহা সূক্ষ্ম হইতে সূক্ষ্ম অবস্থা প্রাপ্ত হয়, কারণ বহির্জগৎ হইতে তাহার বাধা নাই এবং তাহার টীকাভাষ্যও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সূত্রে [মাকড়সাজালে] প্রকৃতি আত্মন্ন হইয়া যায়– তখনই এই কাল্পনিক জগৎই একপ্রকার সত্য হইয়া দাঁড়ায়।

    আমার বিশ্বাস অন্য কোনো দেশের ধর্মশাস্ত্র লোকের আহার বিহার শয়ন নিদ্রা প্রভৃতি দিনের প্রত্যেক [মুহূর্তের] কার্য নিয়মে বাঁধিয়া দেয় নাই। আমাদের দেশেই এইরূপ অনুশাসন স্বাভাবিক এবং হয়তো আবশ্যক। আমাদের স্বাধীনতা অপহৃত হইলে আমরা বাঁচিয়া যাই– নির্ভাবনা বাঁধা রাস্তায় চলিতে পারি। এমন-কি আমরা নিজের [স্বাতন্ত্র্য] রক্ষা করিতে পারি না– এমন স্থলে আমাদের হস্তে যে-কোনো বিষয়ে স্বাধীনতা দিবে তাহাই ক্রমে ক্রমে [নিতান্তই] শিথিল ও উচ্ছৃঙ্খল হইয়া যাইবে। এইজন্য আমাদের দেশে বাঁধা নিয়মের প্রাদুর্ভাব এবং নিয়মের দাসত্বকে সাধারণে দুঃখ জ্ঞান করে না। কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে বাঁধা নিয়ম করিতে গেলেই সকল অবস্থা ও সকল [সময়ের] প্রতি দৃষ্টি রাখা অসম্ভব– সকল অবস্থায় সকল সময়েই সকলকেই সকল বিষয়েই একটা মোটামুটি নিয়মের মধ্যে আপনাকে যো-সো করিয়া স্থাপিত করিতে হয়। এইরূপে আমরা হাড়গোড় ভাঙিয়া সকলেই সমান নির্বীর্য নির্জীব… শান্তিসুখ উপভোগ করিতেছি। আর যাহা হৌক বা না হৌক কোনো উপদ্রব নাই। ভাবনা-চিন্তা তর্ক [বিতর্কের বদলে] শাস্ত্র আছে এবং পঞ্জিকা আছে। একান্নবর্তী পরিবারের মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে জড়াইয়া ধরিয়া… মিলিয়া দুই হাতে শাস্ত্রখণ্ড অবলম্বন করিয়া ভবস্রোতে নির্বিঘ্নে ভাসিয়া যাইতেছি, সন্তরণ শিক্ষা করিবার আবশ্যক নাই, ব্যক্তিগত বল সঞ্চয় করিবার প্রয়োজন নাই। কেবল যে প্রয়োজন নাই তাহা নহে, তাহা অন্যায়; একজন নিজের বলে আর-একজনের চেয়ে বেশি মাথা তুলিতে চেষ্টা করিলে আমাদের শান্তিপূর্ণ নিয়মবদ্ধ সমাজের মধ্যে আগাগোড়া একটা গোল উপস্থিত হয়। এইজন্য যখন রাম-রাজত্ব শূদ্রক তপশ্চরণাদি দ্বারা আপনাকে… পদবীতে লইয়া যাইবার চেষ্টা করিতেছিলেন তখন দয়াময় রামচন্দ্র সমাজের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া তাঁহার শিরশ্ছেদন করিলেন। সীতার বনবাস আমাদের এই অতি-নিয়মবদ্ধ সমাজতন্ত্রের একটি দৃষ্টান্তস্থল বলিয়া বোধ হয়। ব্যক্তিগত ন্যায়পরতাও এই সমাজশাসনে পিষ্ট হইয়া যায়– অর্থাৎ ব্যক্তি একেবারেই কেহ নহে… পূর্বেই বলিয়াছি ইহা হইতে এই প্রমাণ হয় যে আমাদের জাতীয় অভিজ্ঞতা হইতে এই স্থির হইয়াছে যে, সামান্য এমন কোনো বিষয় নাই যাহাতে আমরা আপনাকে বিশ্বাস করিতে পারি। খাওয়া শোওয়া সে বিষয়েও হে শাস্ত্র তুমি বলিয়া দাও আমাদিগকে কী করিতে হইবে। কোথাও কিছু যদি ছিদ্র থাকে আমাদের আলস্যবশত ক্রমেই সেটা বাড়িয়া উঠিবে। সীতার প্রতি প্রমাণহীন সন্দেহ সেটা একটা ছিদ্র কিন্তু সেটা যদি রাখিতে দাও তবে আমাদের [জাতীয়] স্বভাবগুণে ক্রমে সেটা মস্ত হইয়া উঠিবে।

    [আজি]কার দিনে যে সমস্যা উঠিয়াছে তাহা এই যে এমন লোকদিগকে কী নিয়মে চালনা করা উচিত? ইহারা [বহুদিন] হইতে স্বাধীনতা পায় নাই এবং না পাইবার কারণও ছিল। ইহারা পরজাতীয়ের নিকট হইতে যে স্বাধীনতা প্রত্যাশা করিতেছে তাহা কি সংগত? স্বাধীনতা লাভের জন্য কঠোর সাধনা সকল জাতিরই [করিতে হয়]… কিন্তু যদি অতি বিশেষ সাধনা কাহারো আবশ্যক থাকে তবে তাহা ভারতবর্ষীয়ের। কিন্তু ইহারা [যদি] কেবলমাত্র আবদার করিয়াই পায় তবে কি তাহা তাহাদের জাতীয় জীবনের মধ্যে তাহাদের হাড়ে হাড়ে [প্রবেশ] করিতে পাইবে? তাহা কি তাহারা যথার্থ পাইবে, না বাহিরে দেখিতে হইবে যেন পাইল?

    দ্বিতীয় কথা। আমরা যে যথার্থই স্বাধীনতা চাহি তাহা জানিবার উপায় কী? যাহা আমাদের কখনো [আছে] কখনো নাই তাহা আমরা হৃদয়ের সহিত প্রার্থনা করিতে পারি না। কারণ আমরা জানি না [সেটা] কী? আমরা শুনিয়াছি তাহা ভালো জিনিস, বিশ্বাস হইয়াছে তাহা পাইলে ভালো হয়… কিন্তু তাহা আমাদের আবশ্যক ও উপযোগী কি না তাহা বলা শক্ত। ঘোড়া মূল্যবান পদার্থ এবং ঘোড়া চড়িলে আনন্দ [হয়] একজন ছেলে এ কথা শুনিয়া বাপের কাছে আবদার করিতে পারে যে “হে বাবা আমাকে একটা ঘোড়া দাও।’ বাবা বলিল, “কেন রে। তোর আবার এ বাতিক গেল কেন!’ সে বলিল, “কেন বাবা, [তুমি] তো বলো ঘোড়া খুব ভালো, ঘোড়ায় চড়তে ভালো লাগে।’ তখন বাবা মনে করে, এ ছেলেটা ঘোড়ার ব্যবহার জানে না তাই ঘোড়ায় চড়তে এত ব্যস্ত। কিন্তু যদি ঘোড়ার পিঠে একে চড়িয়ে দিই তা হলে ওঠবার জন্যে যত [আগ্রহ] প্রকাশ করেছিল নাব্‌বার জন্যে ততোধিক আগ্রহ প্রকাশ করবে।… স্বাধীনতা সম্বন্ধে আমাদের [এইরূপ] ঘটিতে পারে। স্বাধীনতা কী তাহার স্বাদ জানিয়া এবং তাহা ছনতরভ।ন করিয়া যদি স্বাধীনতা চাহিতাম [তাহা হইলে] লোকে নিদেন এইটে বুঝিত যে ঠিক জিনিসটা চাহিতেছে বটে। কিন্তু কানে-শোনা স্বাধীনতার নামে [আমরা] যে কী চাহিতেছি তাহা আমরা নিজেই জানি না। যথার্থ স্বাধীনতা পাইলে হয়তো আমরা চীৎকার [করিয়া] বলিয়া উঠি “দোহাই, তোমার কুত্তা বুলাইয়া লও।’ কিছু আশ্চর্য নাই। স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় স্বভাব। আমরা চিরদিন শাস্ত্রের অধীন, রাজার অধীন, গুরুর অধীন, গুরুজনের অধীন– সেটা তো একটা দৈব ঘটনামাত্র [নয় তাহার] মূল কারণ আমাদের মর্মের মধ্যে নিহিত।

    আমাদের দেশের এত অল্প পরিমাণ লোক শিক্ষিত এবং অল্পশিক্ষিত– যে আমরা সমস্ত জাতির দায় স্কন্ধে লইতে পারি না। আমরা ক’জনে মিলিয়া যাহা চাহিতেছি তাহা সমস্ত জাতির পক্ষে বাস্তবিক ভালো কি মন্দ [তাহা] আমরা কি জানি? অশিক্ষিত লোকদের ভালোমন্দ সুবিচার করিবার ক্ষমতা আমরা অনেকটা হারাইয়া [ফেলিয়াছি]। শিক্ষিত লোকে নিজের অবস্থা বিচার করিয়া স্থির করিতে পারে যে বাল্যবিবাহ মন্দ, কিন্তু যখনি… [হইতে] মনে করে বর্তমান অবস্থায় সমস্ত ভারতবর্ষের পক্ষে তাহা মন্দ তখনি ভ্রমে পতিত হয়। এবং [অশিক্ষিত] লোকদের মৌন অবসরের মধ্যে সে যদি বকিয়া বকিয়া বাল্যবিবাহের বিপক্ষে একটা সাধারণ আইন জারী [করিয়া] লয় তবে সে কি গুরুতর অন্যায় করে? আমাদের গুরুতর দায়িত্ব বিস্মৃত হইয়া আমরা সমস্ত জাতির নামে [যখন] আবদার করিতে থাকি তখন বোধ করি মুহূর্তের জন্য আমাদিগকে সচেতন করিয়া দেওয়া আবশ্যক। [এখন] আবশ্যক শিক্ষা বিস্তার করা– অনেক অবস্থার অনেক লোক অনেকদিন হইতে শিক্ষা লাভ করিয়া যে বিষয়ে [নিজের]… মত প্রকাশ করে তাহাকে দেশের মত বলিয়া ধরিয়া লওয়া যাইতে পারে। ইংরাজি শিক্ষা দ্বারা প্রথম প্রথম [আমাদের] জাতীয়স্বভাবের এক প্রকার বাহ্যিক বিপর্যয় দৃষ্ট হয়। তখন হঠাৎ মনে হয় ইহারা [বুঝি] সত্যই ভারতবর্ষীয় বিশেষ ভাব পরিহার করিয়াছে এবং ইংরাজি institution সকলের উপযোগী হইয়াছে। অনেক দিন ধরিয়া অনেক লোকের মধ্যে শিক্ষা বিস্তৃত হইলে তবে এ বিষয়ে একটা স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত [হইতে পারা] যাইবে। কেবল কতকগুলি লোকের মধ্যে ইংরাজি শিক্ষা প্রচলিত হইয়া কীরূপে যে দেশের… অবস্থার পরিবর্তন হইতে পারে, তাহা আমি জানি না।

    [অনেকে বলিতে] পারেন যে ইংলন্ডেই কি আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই শিক্ষিত? কিন্তু তবে [সেখানে কী করে] লোকেরা অশিক্ষিত লোকদের প্রতিনিধিস্বরূপ নিযুক্ত হইতে পারেন? কিন্তু আমার বিবেচনায় ইংলন্ডের শিক্ষিত অশিক্ষিত লোকের সহিত আমাদের দেশের শিক্ষিত অশিক্ষিত লোকের অনেক প্রভেদ আছে। তাহাদের শিক্ষা ও উন্নতির মূল কারণ তাহাদের সমাজ তাহাদের অবস্থার মধ্যেই নিহিত। সুতরাং তাহাদের শিক্ষিত অশিক্ষিতের মধ্যে জাতিগত ভেদ নাই, শিক্ষার ন্যূনাধিক্যের ভেদমাত্র। জাতীয় স্বাধীনতা সম্বন্ধে তাহাদের সকলেরই একটা স্বাভাবিক ধারণা আছে– তবে কাহারো মনে স্পষ্ট কাহারো মনে অস্পষ্ট। আমাদের দেশে শিক্ষিত অশিক্ষিতের মধ্যে সম্পূর্ণ আলো-অন্ধকারের ভেদ। একের কথা আরেকের পক্ষে বিদেশীয়। উভয়ের মধ্যে মানসিক সম্বন্ধ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। একজন ইংরাজের সহিত বাঙালি অশিক্ষিতের যে প্রভেদ, ইংরাজিওয়ালা বাঙালির সহিত সাধারণের তদপেক্ষা কিঞ্চিৎ কম প্রভেদমাত্র। আমাদের শিক্ষিত লোকদের আর-একটা গোল এই যে আমাদের এই নূতন শিক্ষা আমাদের মধ্যে কতটা খাপ খাইয়া বসিয়াছে তাহা আমরা অর্থাৎ কতক পরিমাণে আমরা নিজেকে নিজে জানি না। অর্থাৎ যে কথা [বলিতেছি] যে কাজ করিতেছি তাহা ঠিক বলিতেছি ঠিক করিতেছি কি না নিজেরই সন্দেহ বোধ হয়। তাহার [ফলে] আমাদের অশিক্ষিত সাধারণকে জানিবার উপায় হইতেও অনেক পরিমাণে বঞ্চিত হইতেছি। আমরা কী এবং উহারা কে ঠিক জানি না। অনেক সময়ে চোখ বুজিয়া মনে করি যে যাহা মনে করিতেছি তাহাই ঠিক।… তবে আমাদের একটা কথা বলিবার আছে। স্বাধীনতা এতই আমাদের পক্ষে বিদেশীয় যে তাহা আমাদের মধ্যে প্রবিষ্ট করাইতে বাহিরের সাহায্য অনেক পরিমাণে আবশ্যক। প্রথমে কতকটা ঔদাসীন্য বা অনিচ্ছা সত্ত্বেও… কতক পরিমাণে স্বাধীনতার স্বাদ আবশ্যক। অতএব এ অবস্থায় আমাদের ইচ্ছা ও… অভাব থাকিলেও আমরা অল্পে অল্পে স্বাধীনতা শিক্ষালাভের জন্য অন্য স্বাধীনতাপ্রিয় জাতির নিকটে আবেদন করিতে পারি। তাহা ব্যতীত আমাদের আর গতি নাই। তাহার পরে আমাদের চেষ্টা স্বভাব ও অবস্থার উপর সমস্ত নির্ভর করিবে। কিন্তু যেমন করিয়াই দেখি ইহা একটা পরীক্ষা মাত্র। সকল জাতিই যে স্বাধীনতার সমান অধিকারী তাহা নহে। হয়তো এমন দেখা যাইতে পারে আমরা স্বাধীনতার যোগ্যই নহি। হয়তো আমরা অনেকগুলি স্বাভাবিক কারণে [অধীন] অবস্থার উপযোগী হইয়া আছি। সে কারণগুলি কী এবং সে কারণগুলি দূর হইতে পারে কি না তাহা বিশেষ বিবেচনার সহিত আলোচনা করিয়া দেখা কর্তব্য। জলবায়ু ভৌগোলিক অবস্থা সমাজনীতি ধর্মনীতির মধ্যে ইহার মূল… কেবল দুই-একটা আকস্মিক অবস্থার উপর ইহার নির্ভর তাহা চিন্তা করিয়া দেখা আবশ্যক। তাহা হইলে আমরা [কামনা] করিতেছি তাহার একটা সীমা ও লক্ষ্য নিরূপিত হইতে পারে– নতুবা আমরা ইতিহাসে যাহাই পড়ি তাহাই হাত বাড়াইয়া চাহিয়া বসিব ইহা আমার ঠিক বোধ হয় না।

    ১৭। ১১। [১৮৮৮], শনিবার, পারিবারিক স্মৃতিলিপি পুস্তক

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসমবায়নীতি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    Next Article সমূহ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    Related Articles

    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    ফেলুদা এণ্ড কোং – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }