Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সহস্র এক আরব্য রজনী

    ক্ষিতিশ সরকার এক পাতা গল্প3728 Mins Read0

    ১.১১ শাহজাদা আর রঙিন মাছ

    শাহজাদা আর রঙিন মাছ

    পরদিন রাত্রে আবার কাহিনী শুরু হয় : তারপর সেই ধীবর দৈত্যকে বললো, এক সময় তোমার কব্জায় পড়েছিলাম। আমি, এবার তুমি আমার কব্জায়। তুমি আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলে। এখন তোমাকে আমি এক তামার জালার মধ্যে পুরেছি, এবার তোমাকে ঐ দরিয়ার জলে ডুবিয়ে রাখবো।

    -আল্লাহর দোহাই, আমনটি করো না, ভাই, মরে যাবো। তুমি কত মহৎ, কত উদার। আমাকে ছেড়ে দাও, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি যা করতে চেয়েছিলাম তার জন্যে আমি অনুতপ্ত। আর কক্‌খোনো ওসব কাজ করবো না, কথা দিচ্ছি। তুমি জানো ভাই, আমাদের দেশে প্রবাদ আছে, যে লোক তার দুষ্কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত, তাকে ক্ষমা করতে হয়। তা সে যত বড় অপরাধীই হোক না। উমান আর আতিকাহ্রর কাহিনী-জানো তো?

    ধীবর উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে, কী সেই কাহিনী? বলো, শুনি।

    দৈত্য বলে, নিশ্চয়ই বলবো। কিন্তু ভাই, এই জালার মধ্যে বন্দী হয়ে থেকে সে কাহিনী বলতে আমার ভালো লাগবে না। জালার মুখটা একবার খুলে দাও, আমি বেরিয়ে আসি, তারপর কত গল্প শুনতে চাও?? সব শোনাবো।

    ধীবর কিন্তু ভোলবার পাত্র নয়।—না, না, গল্প শোনার দরকার নাই আমার। তোমাকে আমি জলের তলায় ফেলবো এখুনি। তোমাকে ছেড়ে দিলে তুমি আমায় আস্ত রাখবে নাকি?

    দৈত্য এবার মরিয়া হয়ে চিৎকার করে ওঠে। আমাকে ছেড়ে দাও, তোমাকে আমি গল্প শোনাবো। ধনদৌলতে তোমার ঘর ভরে দেবো; আমাকে খালাস করে দাও। আল্লাহর নামে হলফ করছি। তোমাকে আমি মারবো না, বরং বাদশাহ বানিয়ে দেবো।

    কী জানি কী মনে হলো ধীবরের, সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করে ফেললো দৈত্যের কথা। জালার মুখটা খুলে দিলো। ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে লাগলো আকাশের দিকে। তারপর ধীরে ধীরে এক বিশালকায় বিকট দৈত্যের আকার ধারণ করলে সেই ধোঁয়ার কুণ্ডলী। প্রচণ্ড একটা লাথি মেরে পিতলের জালোটা ছুঁড়ে দিলো দরিয়ার মাঝখানে। এই না দেখে ভয়ে ধীবরের বুক শুকিয়ে কাঠ। না জানি দৈত্যটা কী করে! বললো, এটা কী করলো? এ তোমার অন্যায়। তুমি আল্লাহর নামে হলফ করেছে। দানব। তুমি তোমার সেই দু’টো শর্তই মানবে, আমি আশা করি। সেই বাদশাহ যুনানের কাহিনী মনে করো। সে তার উপকারীকে হত্যা করতে চেয়েছিলো বলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলো না। তুমি যদি তোমার উপকারীর ক্ষতি করার চেষ্টা করো, তোমারও সেই দশা হবে।

    এই কথা শুনে দৈত্য অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো, ঠিক আছে। আমার সঙ্গে এসো। এই বলে সে লম্বা লম্বা পা ফেলে চলতে লাগলো। ধীবরের মনে শঙ্কা।না জানি ব্যাটা কোথায় নিয়ে যেতে চায়! আবার কী নতুন ফন্দী গজিয়েছে তার মাথায়। কিন্তু উপায় বা কী? তার পিছনে পিছনে চলতে থাকে জেলে। ক্বমে শহর ছাডিয়ে পাহাড়ের দিকে এগুতে থাকে সে। এক সময় পাহাড়ের চুড়ায় উঠে দাঁড়ালো তারা। ওপারে তাকাতেই চোখে পড়লো নিচে সুন্দর এক নীল নির্জন উপত্যক। আর ঠিক তার মাঝখানে এক সরোবর। তার পাশে এসে দৈত্যটা থামালো। ধীবরকে হুকুম করলো, জাল ফেলো।

    ধীবর দেখতে পেলো, সরোবরের স্বচ্ছ জলে কী সুন্দর সব লাল, নীল, সবুজ-নানা রঙের মাছ—খেলা করে বেড়াচ্ছে। দেখে চোখ জুডিয়ে যায়। জাল ফেললো সে। চারটেচার রঙের মাছ উঠলো। আনন্দে বুকটা নেচে উঠলো তার। দৈত্য বললো, এই মাছ চারটে নিয়ে এখানকার সুলতানের কাছে যাও। সে তোমাকে অনেক ইনাম দেবে। সেই টাকায় তুমি বড়লোক হয়ে যাবে।

    এই দ্যাখো অনেক দিনের বন্দী দশায় সব আদব-কায়দা আমি একেবারে ভুলে গেছি। তুমি ভাই আমার গোস্তাকি মাফ করে দিও। আমি চলে যাচ্ছি। তুমি রোজ একবার করে এই সরোবরে জাল ফেলবে। আর সেই মাছ বিক্রী করে তোমার সংসার চলে যাবে। কিন্তু দিনে একবারের বেশী জাল ফেলো না।

    এই বলে দৈত্য এক লাফ দিয়ে শূন্যে উঠে ধীরে ধীরে আকাশের নীলিমায় অদৃশ্য হয়ে গেলো।

    বাড়িতে ফিরে এসে একটা মাটির হাঁডিতে করে মাছগুলো নিয়ে শহরের পথে পা বাড়ালো ধীবর। হাঁডির জলের মধ্যে খলবল করে নেচে বেড়াতে লাগলো মাছগুলো! এক সময় সুলতানের প্রাসাদে পৌঁছে গেলো সে। সুলতানের সামনে এসে কুর্নিশ করে মাছগুলো তার কাছে তুলে ধরলো; হরেক রকম রঙের মাছগুলো দেখে সুলতান তো মহাখুশি। এমন আজব মাছ সে জীবনে কখনো দেখেনি। রুমের বাদশাহ দিন তিনেক আগে একটা নিগ্রো পাচিক উপহার পাঠিয়েছে। তার হাতের রান্না এখনও আস্বাদ করেনি। সুলতান। উজিরকে বললো, আজ এই মাছ তাকে দাও। সে পাকিয়ে আনুক।

    উজির তৎক্ষণাৎ মাছগুলো নিয়ে গিয়ে সেই নিগ্রো পাচিকর হাতে তুলে দিয়ে বললো, এখুনি আচ্ছা করে পাকাও। সুলতান খাবেন। খেয়ে যাতে তিনি বাহবা দেন তেমনি করে তৈরি করো। রান্নায় তোমার কতটা কেরামতি-আজ প্রথম দিনে দেখবো। আমি। আজকের এই খানা যদি সুলতানের ভালো লাগে তা হলে তোমার পোয়া বারো।

    উজির সুলতানের কাছে ফিরে এলো। সুলতান বললো, এই জেলেকে চারশো দিনার ইনাম দিয়ে দাও।

    দিনারগুলো কাপড়ের খুঁটে বেঁধে মহাখুশি হয়ে ঘরে ফিরে এলো ধীবর। বৌকে বললো, দ্যাখো, ছেলেমেয়েগুলোকে একটু ভালোমন্দ খাওয়াতে হবে। ওদের জন্যে জামাকাপড় কিনে দিতে হবে।

    এদিকে সেই নিগ্রো পাচিকা মাছগুলো কুটে ধুয়ে উনুনে চাপিয়ে দিলো। এক পিঠ যখন ভাজা হয়ে এসেছে, তখন মাছগুলো উলটিয়ে দিতে গেছে এমন সময় এক আশ্চর্যাকাণ্ড ঘটে গেলো। রসুই ঘরের একটা দেওয়াল দু’টো ভাগ হয়ে খানিকটা ফাক হয়ে গেলো। আর সেই ফাঁক দিয়ে ঢুকলো একটি পরমা সুন্দরী যুবতী। সুরমা টানা আয়ত চোখ, উন্নত উদ্ধত বুক। সুঠাম দেহবল্লরী। সমুদ্র নীল রঙের একখানা রেশমী রুমাল মাথার ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে এনে চিবুকের নিচে বাঁধা। হাতের কাজীতে সোনার ব্রেসলেট, আর আঙ্গুলো নানা রঙের হীরা-চুনী-পান্না বসানো গোটা কয়েক আংটী। তার রূপের জৌলুসে চোখে ধাঁধা লেগে যায়। উনুনের কাছে এগিয়ে এলো সে। তার হাতে ছিলো বাঁশের একখানা লাঠি। ভেতরটা ফাঁপা। কড়াইয়ের ওপর লাঠিটা ধরে অন্যপ্রান্তে মুখ লাগিয়ে বললো, মাছ ভাই, মাছ ভাই শুনছো?

    এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখে পাচিকা তো ভয়ে অজ্ঞান। মেয়েটি বার বার মাছগুলোকে ঐভাবে ডাকতে লাগলো। একটু পরেই মাছগুলো কড়াইয়ের মধ্যে থেকে মাথা তুললো। বললো, হ্যাঁ হাঁ বলো শুনি।

    মেয়েটি হঠাৎ কড়াইটা ধরে উনুনের মধ্যে উপুড় করে ঢেলে দিলো মাছগুলোকে। তারপর যে পথে এসেছিলো সেই পথ দিয়ে বেরিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আর সঙ্গে সঙ্গে ফাক হয়ে যাওয়া দেওয়ালটা আবার যেমন ছিলো তেমনি জোড়া লেগে গেলো। পাচিকর হ্রশ ফিরে এলো যখন, মাছগুলো উনুনের আগুনে পুড়ে ছাই। কপাল চাপড়ে তারস্বরে কঁদিতে লাগলো সে।—এ কী সর্বনাশ আমার হলো গো। আমার যে গর্দান যাবে।

    তার কান্নার আওয়াজে উজির ছুটে এসে দেখে, সব মাটি হয়ে গেছে। বললো, ঐ পোড়া মাছগুলো নিয়ে চলো সুলতানের কাছে। দ্যাখো, তোমার কী দশা হয়!

    একথা শুনে পাচিক কান্নায় ভেঙে পড়লো।উজিরকে আদ্যোপােন্ত যা ঘটেছে, খুলে বললো। উজির শুনে অবিশ্বাসের হাসি হাসলো। যত্ত সব গাঁজাখুরি গল্প! আবার সে ধীবরকে বলে পাঠালো, আরও চারটে ঐ মাছ যেন সে দিয়ে যায়। উজিরের হুকুমে ঐ সরোবর থেকে আরও চারটে মাছ ধরে তাকে দিয়ে এলো। এবার উজির পাচিকাকে বললো, আমার সামনে খানা পাকাও, আমি নিজের চোখে দেখতে চাই, কী ঘটে! যথা হুকুম-পাচিকা মাছগুলো কুটে ধুয়ে আবার কড়াইতে করে ভাজতে থাকে। এক পিঠ যখন ভাজা হয়ে এসেছে ঠিক সেই সময় সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে গেলো। উজির থ’!

    এমন সময় শাহরাজাদ দেখলো, রাত্রি বিদায় নিচ্ছে। গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো সে।

     

    পরদিন সপ্তম রাত্রি। আবার সে বলতে শুরু করে। তারপর সেই মেয়েটা যখন মাছের কড়াইটা উনুনের উপর উপুড় করে মাছগুলোকে আগুনে ফেলে দিলো, তখন অবশ্য উজির বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো। আর উপায়ন্তর না দেখে সুলতানের কাছে গিয়ে আগাগোড়া সব বৃত্তান্ত খুলে বললো সে। সুলতান হেসে উডিয়ে দিলো, যত্ত সব আজগুবি কিসসা! কে আছো, এখনি সেই জেলেকে ডাকো।

    ধীবরকে ডাকা হলো। তাকে হুকুম করলো সুলতান, আরও চারটি ঐ মাছ নিয়ে এসো। আমি নিজের চোখে দেখতে চাই, এই সব ভুতুড়ে কাণ্ড!

    ধীবর তো মহানন্দে আবার সেই সরোবরে গিয়ে চারটে মাছ ধরে নিয়ে এলো। এবং ইনাম হিসেবে চারশো দিনার খুঁটে বেঁধেবাড়ি ফিরে গেলো। সুলতানের হুকুমে তার চোখের সামনে সেই মাছ পাকানোর ব্যবস্থা করা হলো। নিজে রসুইখানায় গিয়ে বসলো। তার সামনে মাছগুলো কুটে ধুয়ে আবার কড়াইতে ভাজতে লাগলো পাচিকা। এক পিঠ ভাজা ভাজা হয়ে এসেছে। ওলটাতে যাবে, এমন সময় আবার সেই কাণ্ড। এবার কিন্তু রূপবতী সেই যুবতী না, এবার দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে ঢুকলো এক আবলুস কালো নিগ্রো। বিশাল একটা বুনো মোষের মতো চেহারা। তার হাতে সদ্য ভেঙে আনা একটা গাছের ডাল। বিশ্ৰী একটা আওয়াজ তুলে সে ডাকতে লাগলো, মাছ ভাই, মাছ ভাই, শুনছো?

    মাথা তুলে মাছগুলো বলে উঠলো, হ্যাঁ, হ্যাঁ শুনছি, বলো ভাই।

    আবার সেই একই কাণ্ড। কড়াইটা উনুনের উপর উপুড় করে ধরে মাছগুলোকে আগুনের মধ্যে ফেলে দিলো। নিমেষে পুড়ে ছাই। নিগ্রোটাও দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো।

    সুলতান ভাবতে লাগলো, এ তো কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র নয়। এর পিছনে অন্য কোনও গভীর রহস্য আছে। কী সেই রহস্য, জানতে হবে। কিন্তু কী করে জানা যায়? ডাকো সেই জেলেকে। কোথা থেকে আনে। সে এ মাছ? সেখানে যেতে হবে। সেখান থেকেই পাওয়া যাবে। এ রহস্যের হদিশ। ধীবরকে ডেকে পাঠানো হলো। সে এসে বললো, শহরের কাছেই যে পাহাড়টা-তার ওপরে একটা সায়র আছে, সেই সায়র থেকে এই মাছ সে ধরে আনে।

    সুলতান তখন সৈন্যসামন্ত সমভিব্যাহারে সেই পাহাড়ের পথে রওনা হয়ে গেলো। তার মনে এক দারুণ সংশয়। সৈন্য দল পাহাড় ডিঙিয়ে ওপরে গিয়ে পৌঁছলো। এক মনোরম ঘন সবুজ উপত্যক। কোথাও কোনও জনপ্রাণী নাই। এমন সুন্দর জায়গা তারা আগে কখনও দেখেনি। সবাই দেখলো, সরোবরের স্বচ্ছ জলে খেলা করছে অসংখ্য রঙিন মাছ।

    সুলতান তার লোকজনদের জিজ্ঞেস করলো, এর আগে তাদের কেউ এ জায়গায় এসেছে কিনা। তারা সবাই ঘাড় নেড়ে জানালো না। তখন আল্লাহর নামে হলফ করে সে বললো, যদি আল্লাহ বলে কোনও কেউ থাকেন, তবে তার দিবি করে বলছি, আসল ব্যাপার কী, না জেনে আমি এখান থেকে নড়ছি না।

    তারপর তার লোকজনকে পাঠালো পাহাড়ের চারপােশ ঘুরে দেখে আসতে। সুলতান তার জ্ঞানবৃদ্ধ উজিরকে ডেকে বললো, শোনো উজির, আজ রাত্রে আমি একা এই পাহাড়ে, এই সরোবরে ঘুরে দেখতে চাই। আমার তীবুর চারপাশে কড়া পাহারা বসাবে। কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে এলে বলে দেবে, সুলতান কারো সঙ্গে দেখা করবেন না। আজ রাত্রে। আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে, এই সরোবর আর তার আজব মাছের রহস্য। আমার এই মতলবের কথা যেন কোনক্রমেই ফাঁস না হয়, উজির।

    উজির হলফ করে জানালো, কেউ জানতে পারবে না।

    সুলতান ছদ্মবেশে একাকী বেরিয়ে পড়লো। সারা রাত ধরে ঘুরে বেড়াতে লাগলো পাহাড়ের কন্দরে কন্দরে। এইভাবে রাত্রি যখন প্রায় শেষ হতে চলেছে তখন সে দেখতে পেলো, ভীষণ কালো একটা কী বস্তু! বেশ খানিকটা দূরে। তার মন নেচে উঠলো। হয়তো এবার সে জানতে পারবে এ রহস্যের হদিশ। কিন্তু হা হতোহস্মি! কাছে আসতেই দেখলো, একটা প্রাসাদ; আগাগোড়া কালো পাথরে তৈরি। প্রাসাদের সামনে এক বিশাল সিংহদরজা। তার একটা পাল্লা খোলা। আস্তে আস্তে কড়া নাড়লো সুলতান, এক দুই তিন বার। কিন্তু কোনও জবাব নাই। মনে হলো, জনমানব বর্জিত। এখানে কেউ বাস করে না। পায়ে পায়ে ভিতরে ঢুকে পড়লো সে। একটু চড়া গলায় ডাকতে লাগলো, কে আছো, মালিক! আমি এক ক্লান্ত পথিক, বড় তেষ্টা পেয়েছে, আমাকে একটু পানি দাও। বার বার উচ্চারিত হতে থাকলো কথাগুলো। কিন্তু কেউ সাড়া দিলো না। আরও ভিতরে ঢুকে পড়লো সুলতান। একেবারে প্রাসাদের মাঝখানে। কিন্তু কোথাও কেউ নাই। সুরম্য অট্টালিকা। সাজানো গোছানো। ঝকঝকে তকতকে। এক জলের ফোয়ারা দেখতে পেলো। তার চার পাশে চারটে সোনার সিংহ।

    ফোয়ারার জলের ফিনকির সঙ্গে ছিটকে বেরিয়ে ছডিয়ে পড়ছে হীরা-পান্না-চুণী। আর সেগুলো জমে জমে চতুর্দিকে স্তুপাকার।

    চারপাশের দেওয়ালে নানা জাতের রঙবেরঙের অসংখ্য পাখী। কিন্তু সবাই বন্দী। উড়ে পালাবার পথ নাই। ওপরটা সোনার জাল দিয়ে ঘেরা।

    সুলতান বিস্ময় বিমূঢ়! কিন্তু চারদিক তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোন জন-মানবের সন্ধান পাওয়া গেলো না! ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে এক সময় বসে পড়লো এক জায়গায়।

    হয়তো বা রাত্রি জাগরণের ক্লান্তিতে একটু তন্দ্রভাব জড়িয়ে ধরেছিলো। এই সময় মৃদুকণ্ঠের এক করুণা-সঙ্গীত ভেসে এলো তার কানে।

    হারিয়ে গেলো প্রেমের স্বপন, কেন আমার ভাঙিয়ে দিলে ঘুম? তুষের আগুন জ্বালিয়ে দিলে দিল-এ, এমন করে করলে কেন খুন? মনে হলো বেশি দূরে না, কাছেই কেউ গাইছে। একটু এগোতেই সুলতানের চোখে পড়ে, একখানা বাদশাহী পর্দা ফেলা এক দরজা।

    পর্দাখানা তুলতেই চোখে পড়লো, এক পালঙ্কে অর্ধশায়িত এক যুবক। কী তার রূপ! টানা টানা চোখ। উন্নত নাসিকা। আপেল সদৃশ চিবুক। মাথায় একরাশ ঘন কালো চুল।

    তার ঐ উজ্জ্বল চোখের মণি
    হার মানে আসমানের রুদ্ধবাক তারা
    এমন রূপের ঐশ্বর্য দেখে কে না মুগ্ধ হবে, বলো।
    আমি তো হবোই। হতবাক আমি।
    এমন চাঁদের রূপ পেলো সে কোথায়?
    কে দিয়েছে তাকে?

    সুলতানের মনে আর আনন্দ ধরে না। ঘরের মধ্যে পা রেখে বললো, আমার কী সৌভাগ্য, তোমার দেখা পেলাম।

    কিন্তু পালঙ্কে অর্ধশায়িত যুবকটি, যেমনটি শুয়েছিলো তেমনি শুয়ে রইলো। তার সর্বাঙ্গ এক মূল্যবান শাল-এ ঢাকা। শুধু বললো, আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি উঠতে পারছি না। আমার দেহ অসাড়।

    সুলতান দুঃখিত হলো। একটু পরে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা এখানকার ঐ সরোবরে নানা রঙের মাছের কাহিনী কি তুমি জানো? যদি জানো, আমাকে বলে। আর এই কান্নার গানই বা তুমি গাইছো কেন, আমাকে জানাবে? কী তোমার দুঃখ, কী তোমার ব্যথা?

    এই কথা শুনে যুবকের চোখে অশ্রুধারা নেমে আসে। কান্না চেপে বললো, ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে আজ আমার এই দশা।

    এই বলে শালটা দেহ থেকে সরিয়ে দিলো। সুলতান বিস্ময়ে বিমূঢ়! তার দেহের নিচের অংশ মারবেল পাথরের, আর কোমর থেকে ওপরের অংশ রুক্তমাংসের।

    যুবক বলতে থাকে, তাহলে শুনুন জাঁহাপনা, সেই অদ্ভুত ধরনের রঙিন মাছের আর আমার দুর্ভাগ্যের কাহিনী আপনাকে বলি :

    —আমার বাবা এক দেশের সুলতান ছিলেন, সে দেশ আপনি হয়তো চিনবেন না। খোদার দোয়ায় তিনি সত্তর বছর প্রজা পালন করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর আমি সুলতান হলাম। আমার চাচার মেয়েকে শাদী করে বেগম করলাম। সে আমাকে প্ৰাণ দিয়ে ভালোবাসতো। কোনও কাজে তাকে ছেড়ে কখনও যদি কোথাও যেতাম নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিতো সে। এমনি ভালোবাসা। এমনিভাবে পাঁচটা বছর কেটে গেছে। একদিন গোসলের জন্যে সে হামাম-এ ঢুকেছে। বাবুর্চিকে হুকুম করে গেছে, নানা-স্বাদের মুখরোচক খানা সাজাতে। আমি তখন আমার পালঙ্কে শুয়ে। আমার মাথা আর পায়ের কাছে দুই ক্রীতদাসী পাখায় হাওয়া করছে। হালকা ঘুমের আমেজ লেগেছে আমার চোখে। এমন সময় কানে এলো, ঐ দুই ক্রীতদাসী ফিসফিস করে বলাবলি করছে। আমাদের মালিকের কী দুর্ভাগ্য ভাই, ঐ রকম একটা খারাপ মেয়েমানুষ আজ তার বেগম। রোজ একটা করে নতুন মরদ না হলে যার ঘুম হয় না, সে কিনা আমাদের মালকিন, ছিঃ ছিঃ! আমাদের মালিক কিন্তু ভাই একেবারে মাটির মানুষ। অতোশত ঘোরপাঁচ বুঝতে পারে না। কেউ যে তাকে ঠকাতে পারে সে কথা সে ভাবতেই পারে না।

    সঙ্গে কী একটা মিশিয়ে দেয়। আর তাই খেয়ে মালিক বেঙ্কুশ হয়ে পড়ে থাকে। সেই মওকায় সে পরপুরুষকে নিয়ে মজা লোটে। সারা রাত ধরে ফুর্তি করে ভোরবেলায় হুজুরের ঘরে এসে নাকের কাছে কী একটা ধরে। আর তখুনি মালিকের ঘুম ভেঙে যায়, নেশা কেটে যায়।

    ওদের কথা শুনে সারাটা দুনিয়া আঁধার হয়ে যায় আমার চোখের সামনে। মাথাটা ঝিমঝিম করতে থাকে।

    একটু পরে হামাম থেকে ফিরে এসে আমাকে আদর করে জাগিয়ে দিলো বেগম। এও নিত্যকার ঘটনা। এর পর আমরা খানা খেতে বসলাম। নানা স্বাদের সুন্দর সুন্দর খাবার। দুস্তপ্রাপ্য সরাব। অনেকক্ষণ ধরে বেশ তৃপ্তি করে খেলাম দুজনে।

    রোজ রাত্রে শোবার আগে একপাত্র সরাব পান করা আমার চিরকালের অভ্যোস। আর পাত্রটি নিজের হাতে তুলে দেয় আমার বেগম। সেদিনও সে যথারীতি তুলে দিলো আমার হাতে। একটু কায়দা করে, তার অলক্ষ্যে পিকদানীতে ঢেলে দিলাম সরাবটুকু। তারপর শয্যায় এলিয়ে পড়লাম ঘুমের ভাণ করে। আমার কপালে হাত বুলাতে লাগলো সে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নাক ডাকতে লাগলাম আমি। শুনতে পেলাম ও বলছে, ঘুমোরে হারামজাদা, ঘুমো। আমি চললাম। তোর সুরৎ দেখলে সারা শরীর জুলে যায় আমার।

    এবার সে সাজগোজ করতে লাগলো। দামি জমকালো শাড়ি পরলো। সুর্ম টানলো চোখে। খোঁপা বঁধলো সুন্দর করে। খোঁপায় গুজলো একটা লাল গোলাপ। একেবারে মনমোহিনী রূপ। আঁতর ছিটালো গায়ে। সারা ঘর সুগন্ধি খুশবুতে ভরে গেলো। কোমরে বাঁধলো আমাব তলোয়ারখানা। তারপর কালো একটা বোরখা দিয়ে ঢেকে নিলো সারা অঙ্গ। এবার সে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লো।

    আমিও উঠে পড়লাম। তার পিছনে পিছনে ধাওয়া করে চললাম। প্রাসাদের চত্বর ছাডিয়ে সিংহদরজা পেরিয়ে চলতে লাগলো। সে শহর সীমান্তের দিকে। ওদিকটায় কোন সন্ত্রান্ত লোক বাস করে না। নিম্নস্তরের চাকর বাকররা থাকে সব। মাটির দেওয়াল গাথা, খড়ের ছাউনি ঢাকা ছোট ছোট ঘর। আমার বেগম গিয়ে ঢুকলো ঐরকম একটা বাড়িতে।

    ঘরের পিছনে, দাঁড়িয়ে একটা ঘুলঘুলির ফুটোয় চোখ রেখে দেখতে থাকলাম তার কাণ্ডকারখানা। ঘরের ভেতর বসেছিলো মোষের মতো বিকটাকৃতি মিসমিসে কালো এক নিগ্রো। পুরু ঠোঁট দুটো ঝুলে পড়েছে। দাঁতগুলো বরফের টুকরোর মতো। হাতে আধখানা আখ। তার চারপাশে ইত্যাকার ছড়ানো আখের ছোবড়া। সামনে মাটির হাড়িতে হাড়িয়া।

    ঘরের ভেতর ঢুকেই আমার বেগম সেই নিগ্রোটার সামনে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে সালাম জানালো। নিগ্রোটা দাঁত মুখ খিচিয়ে বিশ্ৰী ভাষায় খেউড় করলো। এতো দেরি হলো কেন র‍্যা, মাগী? সব ব্যাটা মদ-ফদ টেনে যে যার মেয়েমানুষ লিয়ে লটকে পড়েছে। আর আমি শালা, এখানে বসে বসে ছোবড়া চুষছি।

    আমার বেগম তখন ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে থাকে, তুমি তো জানো, মালিক; আমার চাচার ছেলের সাথে শাদী হয়ে গেছে আমার। সে এখন সুলতান। তাকে ছুপিয়ে তো আসতে হবে। আগে, আমার যখন শাদী হয়নি, তখন কী আমার দেবী হতো? এখন যদি সুলতান কোনও রকমে জানতে পারে, আমার গর্দান যাবে। লোকটাকে কুত্তার মতো ঘেন্না করি আমি। ওর কাছে গেলে, ওর মুখ দেখলে গারিরি করে ওঠে আমার।

    কিন্তু তবু সে সুলতান, আমার স্বামী। তার কথা না শুনলে আমাকে জ্যান্ত রাখবে না। সে। শোনো, প্ৰাণনাথ, তোমাকে আমার মনের আসল কথা বলি, আমার যদি তেমন কোন ক্ষমতা থাকতো তাহলে ওর ওই প্রাসাদ-নগর ভেঙে চুরমার করে দিতাম। ভিটিতে ঘুঘুচরাতাম। আমি সহ্য করতে পারি না তার নবাবি চাল। ধন-দৌলত আর আভিজাত্য আমি পায়ে দলে তোমার কাছে চলে আসতে চাই, কিন্তু…

    —থাম, নিগ্রোটা চিৎকার করে উঠলো, অনেক ঢং তোর দেখেছি। সত্যি করে বল, হারামজাদী, কোন নাগরের গলায় বুলিছিলি এতক্ষণ? এই শেষবারের মতো তোকে সাবধান করে দিচ্ছি, এরপর আর একদিনও যদি দেরি করে আসিস তবে তুলে আছাড় দেবো। আর আমি যদি সাচ্চা নিগ্রোর বাচ্চা হই তবে তোর শরীলের ওপর আমি শালা আর ঝাম্পেশ করবো না। তুই হচ্ছিস একটা বিশ্বাসঘাতিনী, বাজারের বারোভাতারী মেয়েমানুষ।

    -শুনুন জাঁহাপনা, শাহজাদা বলতে থাকে, আমার দুর্ভাগ্যের কথা শুনুন। সেই নিগ্রো আর আমার বেগমের এই ধরনের কথাবার্তায় আমার রক্ত গরম হয়ে উঠলো। মনে হতে লাগলো, তামোম দুনিয়াটা মিথ্যা, একটা মস্ত বড় ধাপ্পা। মানুষ কিসের জন্যে বেঁচে থাকে? ধনদৌলত, বৈভব, স্নেহ, মায়া, মমতা, প্ৰেম, ভালোবাসা সব-সব তখন আমার কাছে মিথ্যে হ’য়ে যেতে লাগলো।

    নিগ্রোর কথা শুনে আমার বেগম ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো, তুমি ছাড়া দুনিয়ায় কেউ আমার নাই। বিশ্বাস করো প্ৰাণনাথ, আমাকে দূরে ঠেলে দিও না, সোনামানিক!! আমি চিরটা কাল তোমারই হয়ে থাকবো।

    ওর কান্না দেখে বোধ হয় নিগ্রোটা নরম হলো। বললো, ঠিক আছে, নাও, এসো। আমার বেগমের মুখে তখন হাসি ফুটেছে। ক্ষিপ্র বেগে শাড়ী জামা পেটিকেট, কচুলি সব খুলে ফেলে দিলো পাশে। কোমরের তলোয়ারখানা একপাশে একটা বাক্সের ওপর রেখে সম্পূর্ণ বিবস্ত্রা হয়ে দাঁড়ালো সে নিগ্রোটার চোখের সামনে।

    -প্ৰাণেশ্বর, আমাকে কিছু খেতে দেবে না?

    —দাখো, ওখানে ইদুরের ঝোল আর ঝারিতে খানিকটা হাড়িয়া আছে।

    আমার বেগম তখন ঐ কুখাদ্য মাংস আর সেই হাড়িয়া বেশ তৃপ্তি করে খেলো। হাত মুখ ধুয়ে এসে বাঁশের খাটিয়ায়, নিগ্রোটার পাশে ওর শতছিন্ন তেল চিটচিটে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ঐ নোংরা ঘিনঘিনে টু বিছানাটার উপর, ওর ফুলের মতো পেলাব দেহটা, নিগ্রোটার বুকের নিচে দলাই-মলাই হতে &&Z লাগলো। আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। ক্ষিপ্রবেগে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে বাক্সটার ওপরে রাখা আমার তলোয়ারখানা খুলেই প্রচণ্ড এক কোপ বসিয়ে দিলাম, নিগ্রোতার গর্দানে। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটলো। ভালুকের মতো এক বিকট চিৎকার করে বেগমের বুকের ওপর থেকে ছিটকে গড়িয়ে পড়ে গেলো নিচে। আর সেই মুহুর্তে বেগমকে কোন রকমে জামা কাপড় পরিয়ে টেনে বের করে নিয়ে এলাম আমার প্রাসাদে।

    এমন সময় নিশাবসান হচ্ছে দেখে শাহরাজাদ তার কাহিনী থামালো।

     

    সারাদিন দরবারের কাজকর্ম সেরে শারিয়ার যখন আবার অন্দর মহলে ফিরে এলো রাত্রি তখন দ্বিতীয় প্রহর।

    শাহরাজাদ বলতে শুরু করে, শুনুন জাঁহাপনা, তারপর কী করে ঐ শাহজাদা শাপগ্বস্ত হলো, সেই কাহিনী আজ বলবো।

    শাহজাদা বলতে থাকে, আমি যখন নিগ্রোটার গর্দানে কোপ বসিয়ে দিয়েছি, তখন, আমার ইচ্ছে ছিলো, দু’জনকেই এক কোপে সাবাডি করে দেবো। কিন্তু তা হলো না। ঐ দৈত্যের মতো নিগ্রোটার গর্দানের অর্ধেক মাত্র কাটা গেলো। সেই কোপে। নিগ্রোটা নিচে পড়ে গেলো। মনে হ’লো, ব্যাটা মারা গেলো। কিন্তু না, সে মরলো না। কিন্তু আমি তখন ভেবেছিলাম মরেই গেলো। যাইহোক, আমার বেগমকে প্রাসাদে নিয়ে এসে আমার ঘরেই আটকে রাখলাম। সে রাতে। পরদিন দেখি, সে মাথার চুল ছেটে ফেলেছে। পরণে পরেছে কালো শোকের পোষাক। জিজ্ঞেস করতে বললো, কাল তার মা মারা গেছে, তাই। কিছুদিন আগে যুদ্ধে মারা গেছে তার বাবা আর এক ভাই। সে বললো, আমি এক বছর ধরে শোক পালন করবো। আমার জন্যে একটা শোক-মঞ্জিল বানিয়ে দাও। সেখানে থেকে আমি তাদের আত্মার শান্তি প্রার্থনা করবো।

    তার কথা মতো প্রাসাদের বাইরে একটু নির্জন জায়গায় একখানা শোক-মঞ্জিল বানিয়ে দিলাম। সকাল সন্ধ্যায় সে যেতো সেখানে। করুণ সুরে কেঁদে কেঁদে শোক জানাতো। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য ছিলো তার অন্য।

    ওই মঞ্জিলের গম্বুজের মধ্যে এনে রেখেছিলো সে তার প্রেমিক নিগ্রোটাকে। তখনও তার ক্ষত সারেনি, কথা বলতে কষ্ট হয়। নড়াচড়াও খুব বেশী একটা করতে পারে না। বেগম প্রতিদিন তাকে সুন্দর সুন্দর খাবার দিয়ে আসতো। মুরগীরঝোল, দামি সরাব। ভালো ভালো ফলমূল সব, দিয়ে আসতো তাকে। আমার কেমন সন্দেহ হলো। একদিন ও মঞ্জিলের দিকে বেরিয়ে যাবার পর পায়ে পায়ে ওর পিছনে পিছনে আমিও গেলাম। শুনতে পেলাম, ইনিয়ে বিনিয়ে সুর করে কাঁদছে বেগম। কিন্তু না, কাছে আসতেই আমার ভুল ভাঙলো, এতো করুণ সুরে কান্নার গান না। এতো গানের ছলে দয়িতের কাছে প্ৰেম নিবেদন।

    যখন তুমি সমুখ দিয়ে যাও,
    বিশ্ব আমার আঁধার হয়ে আসে।
    ভাবি মনে, ভুলবো তোমায়,
    সকল ছেড়ে যাবো বনবাসে।
    যখন তুমি ফিরে আসো,
    অঙ্গ আমার নেচে ওঠে যেন।
    এমন কেন হয় গো, বলো,
    বুকের মধ্যে আমন করে কেন?
    যখন তোমার বাঁশির আওয়াজ শুনি,
    তোমার সুরে শুনি আমার নাম,
    পাগল করে, মাতাল করে হিয়া,
    লুটিয়ে পড়ে জানাই আমার হাজারো এক সালাম।

    এই প্ৰেম সঙ্গীতে যখন সে বিভোর তখন তরবারি উন্মুক্ত করে আমি তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি। গান থামতেই চিৎকার করে উঠি, ওরে শয়তানি এই তোর শোকগাথা। মহব্বতের গীত গাইতে গাইতে আত্মহারা হয়ে গেছে! এই বলে প্রচণ্ড শক্তিতে তলোয়ারের এক কোপ বসালাম। কিন্তু তড়াৎ করে এক লাফে কয়েক হাত দূরে সরে যেতে পারলে সে। এমন সময় এক কৰ্কশ কণ্ঠের অভিশাপ শুনতে পেলাম!—আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি, আমার অলৌকিক ক্ষমতা বলে তোর দেহের নিম্নাঙ্গ পাথর হয়ে যাবে।

    সেই থেকে আমি এই রকম হয়ে আছি। নিজের দেহটাকে এদিক ওদিক নড়াতে চড়াতে পারি। না। আমার দুশ্চরিত্রা বেগমটা রোজ চাবুক হাতে আসে। আর সপাসিপি কয়েক ঘা বসিয়ে দিয়ে চলে যায়।

    এই বলে সেই যুবক কান্নায় ফেটে পড়লো। কান্নার মধ্যেই গাইতে লাগলো :

    খোদার কাছে নালিশ আমার,
    বিচার কর, বিচার চাই।
    বিচার আশায় বসে আছি
    দিন-রজনী, চক্ষে আমার নিদ্রা নাই।

    সুলতান বললো, আমিও বড় দুঃখী, কিন্তু তোমার দুঃখে আরও দুঃখ পেলাম। সেই মেয়েটা কোথায় থাকে বলতে পারো?

    —ওই যে গম্বুজওয়ালা ছোট্ট বাডিটা-সেখানে সে ওই নিগ্রোটাকে নিয়ে পড়ে আছে। প্রত্যেক দিন একবার করে আসে। আর আমার পিঠে ঘা কতক চাবুক মেরে চলে যায়। আমি তো নড়তে চড়তে পারি না। তাই নীরবে সহ্য করে যেতে হয়। সে তার ভালোবাসাকে রোজ মুরগীর ঝোল, মদ আর ভালো ভালো খাবার খাইয়ে তাজা করছে।

    —যদি মাথার ওপরে আল্লাহ থাকেন, তবে তার নামে হলফ করে বলছি, সুলতান উত্তেজিতভাবে বলতে থাকে, এমন শিক্ষা তাকে আমি দেবো, জীবনে ভুলতে পারবে না।

    শাহজাদার সঙ্গে বাকী রাতটুকু কথাবার্তা বলে কাটিয়ে সুলতান ভোরবেলা সেই শোক-মঞ্জিলের দিকে পা বাড়ালো। খাপ থেকে তলোয়ারখানা খুলে গুটিগুটি ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লো। একপাশে একটা টুলের ওপর মোমবাতি জুলছে। সারা ঘরাময় আতরের সুবাস। ওপাশে একটা পালঙ্কে ঘুমুচ্ছে সেই নিগ্রোটা! তিলমাত্র দেরি না করে প্রচণ্ড এক কোপে দু’খানা করে ফেললো তাকে। তারপর ওর দেহটা নিয়ে গিয়ে ফেলে দিলো একটা কুয়োর মধ্যে। তলোয়ারখানা বাগিয়ে ধরে আবার সে ফিরে এলো সেই মঞ্জিলের পিছনে। শাহজাদার বেগমটার প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলো।

    এই ঘটনার ঘণ্টাখানেক বাদে শাহজাদার ঘরে ঢুকলো সেই শয়তানী বেগমটা। হাতে তার শঙ্কর মাছের চাবুক। নিষ্ঠুরভাবে মারতে লাগলো শাহজাদার ঞ্জি–পিঠে। আর্তনাদ করে ওঠে শাহজাদা। না, না, আর মেরো না আমাকে, তোমার পায়ে পড়ি। একটুখানি দয়া করো।

    —দয়া? তোমাকে দয়া করবো? কেন? তুমি আমাকে দয়া করেছিলে! আমার ভালোবাসাকে তুমি জখম করেছো। তোমাকে আমি দয়া করবো?

    শাহজাদার গায়ে চাঁদরখানা চাপা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো সে।

    খানিকটা দামি সরাব আর মুরগীর ঝোল নিয়ে মঞ্জিলের ঘরে এলো শয়তানী। নিগ্রোটাকে না দেখে সে কেঁদে উঠলো, কোথায় গেলে গো! একবার সাড়া দাও, মালিক। চেয়ে দ্যাখো, তোমার জন্যে আমি সরাব এনেছি, খাবার এনেছি, তুমি খাবে না? হায়, খোদা, সে কোথায় গেলো, তাকে ফিরিয়ে দাও।

    এমন সময় দূরাগত এক বাণী শুনতে পেলে সে। তুমি আমার হুকুম তামিল করোনি কেন?

    অদৃশ্য আল্লাহর বাণী বলে মনে করলো মেয়েটা। আপনার কী হুকুম তামিল করিনি, খোদা?

    –তুমি প্রতিদিন তোমার স্বামীকে চাবুকের ঘা মারো। তার আর্তনাদে আমার বুক চিরে যায়। আমি যন্ত্রণায় ছটফট করি। আমার চোখে ঘুম আসে না। তোমাকে আমি বারণ করেছিলাম, এমনি করো না, স্বামীকে আঘাত করা মহাপাপ। কিন্তু আমার কথা তুমি শোনো নি। অমন নিষ্ঠুর ভাবে তোমার স্বামীর ওপর অত্যাচার যদি না করতে, তাহলে, অনেক আগেই তোমার ‘ভালোবাসা’ সেরে উঠতো।

    -আমার গুণাহ মাফ করুন, খোদা। এখন আমাকে হুকুম করুন, কী করতে হবে?

    —তোমার স্বামীকে শাপমুক্ত করো।

    —তাই করছি, খোদা।

    আর ক্ষণমাত্র দেরি না করে শাহজাদার শোবার ঘরে এলো বেগম। একটা বাটিতে খানিকটা জল নিয়ে বিড় বিড় করে কী যেন সব মন্ত্র পড়লো। তারপর সেই জল হাতে নিয়ে শাহজাদার গায়ে ছিটিয়ে দিতে দিতে কী সব মন্ত্র আওড়াতে থাকলো। কী আশ্চর্য, একটু পরে শাহজাদা পালঙ্কের উপর দিব্যি সুস্থ মানুষের মতো উঠে বসলো। গায়ের চাঁদরটা সরিয়ে রাখলো। ওর দেহের নিচের অংশটা আর মারবেল পাথরের নয়, একেবারে রক্ত-মাংসে গড়া মানুষের দেহের আকার ধারণ করেছে। বিছানা থেকে নেমে মেঝোয় পা রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আনন্দে উল্লাসে সে আত্মহারা। খোদা, তোমার দয়ায় আজ আমি আবার আমার জীবন ফিরে পেলাম। তোমাকে আমার হাজার সালাম। তারপর তার বেগমের দিকে ঘৃণার চোখে তাকালো, ওরে হারামজাদী, যদি জানে বাঁচতে চাস তবে আমার সামনে থেকে দূর হ। নইলে তোকে খুন করে ফেলবো।

    শয়তানীটা ফিরে এলো মঞ্জিলে।

    —তোমার হুকুম মতো আমার স্বামীকে শাপমুক্ত করে দিয়েছি, খোদা। এবার হুকুম করো,

    সেই দূরাগত বাণী আবার শোনা গেলো। এখনও তোমার অনেক কাজ বাকী। ঐ যে সায়রের মধ্যে রঙিন মাছগুলোকে বন্দী করে রেখেছে, ওরা রোজ রাতে জল থেকে মাথা তুলে আমার কাছে মুক্তির প্রার্থনা করে। ওরা মুক্ত না হ’লে আমিও শান্তি পাচ্ছি না।

    শয়তানী বললো, এই কথা, এখুনি আমি ওদের শাপ মুক্ত করে দিচ্ছি।

    দ্রুত পায়ে সে সায়রের দিকে হেঁটে চললো। এমন সময় ভোর হয়ে এলো, শাহরাজাদ। তার গল্প থামালো।

     

    কাহিনী আবার শুরু হলো নবম রাত্রির দ্বিতীয় যামে। সায়রের পাড়ে এসে শয়তানী খানিকটা জল হাতে নিয়ে মন্ত্র পড়ে ফেলে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে সারা সায়রটা উথালি পাথাল হতে লাগলো। তারপর দেখা গেলো, সব মাছগুলো মানুষ হয়ে গেছে। এগুলো সবই শাহজাদার সৈন্য সামন্ত, দাস-দাসী, লোকজন। এরাই ছিলো শহরের বাসিন্দা। তারপর মানুষগুলো নিজের নিজের ঘরে ফিরে গেলো। হাট, বাজার কেনা বেচায় সরগরম হয়ে উঠলো। ঐ পাহাড়টা আবার এক সমতলভূমি শস্যক্ষেত্রে পরিণত হয়ে গেলো। সেখানে চাষবাস করে সোনার ফসল ফলাতে লাগলো মানুষ।

    শয়তান মেয়ে এবার ফিরে এলো মঞ্জিলে। খোদা মেহেরবান, আপনার সব হুকুমই তো আমি তামিল করলাম। এবার বলুন, কী করবো?

    হাঁটুগেড়ে গোড়ালীর ওপর বসে, দু’হাত জোড় করে মুখের সামনে তুলে ধরে চোখ দুটো বুজে। সে প্রার্থনা জানাচ্ছিলো।

    —আর তোকে কিছু করতে হবে না রে শয়তানী। এই নে তোর পুরস্কার। তলোয়ারখানা সোজা বসিয়ে দিলো সুলতান, সেই শয়তানীর পিঠে। একেবারে এফোড় ওফোড়। পিঠের ভিতর দিয়ে বুকের ওপারে বেরিয়ে গেলো। নিজের স্বামীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিস, আল্লাহর হুকুমে তোকে আজ খতম করলাম। এবার তার নাম জপ কর।

    সুলতান এবার শাহজাদার ঘরে এলো। দেখলো, শাপমুক্ত হয়ে সে তার প্রতীক্ষায় বসে আছে। আদ্যোপান্ত সব কাহিনী-বললো তাকে। আনন্দে অধীর শাহজাদা। কোন কথা বলতে পারলো না। সুলতানকে জড়িয়ে ধরলো। সুলতান বললো, এবার আমার ছুটি, সুখে সচ্ছন্দে প্রজা পালন করো। আমি আমার দেশে ফিরে যাই।

    শাহজাদা বললো, আমিও আপনার সঙ্গে যাবো। আপনার দেশে বেড়াতে যাবো। শাহজাদাকে সঙ্গে নিয়ে স্বদেশে ফিরে এসে সুলতান সবিস্তারে সব কাহিনী বললো উজিরকে। উজির বিস্ময়ে হতবাক। সুলতান যে আবার ফিরে আসতে পারবেন সে আশা ছিলো না তার। আনন্দে সারা শহর মেতে উঠলো। প্রজারা আল্লাহর কাছে গভীর কৃতজ্ঞতা জানাতে লাগলো। সেই ধীবরকে ডেকে মূল্যবান ধনরত্ন এবং নানা উপটৌকন দিলো সুলতান। এতোসবের একমাত্র সূত্র তো সেই ধীবর। ধীবরের সংসারের নানা খুঁটিনাটি খোঁজখবর জেনে নিলো সে। একটি ছেলে, দুটি মেয়ে আর বৌ। এই নিয়ে তার সংসার। সুলতান নিজে একটিকে শাদী করলো। আর একটি মেয়ের সঙ্গে শাদী দিলো শাহজাদার। এইভাবে সেই ধীবর দেশের মধ্যে সেরা ধনী হয়ে উঠলো। তার দুই মেয়ে বাদশাহর বেগম হয়ে সারাজীবন সুখে-সচ্ছন্দে দিন কাটাতে লাগলো।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142 143 144 145 146 147 148 149 150 151 152 153 154 155 156 157 158 159 160
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকবীর – ১ – ক্ষিতিমোহন সেন
    Next Article প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা – ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.