Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সহস্র এক আরব্য রজনী

    ক্ষিতিশ সরকার এক পাতা গল্প3728 Mins Read0

    ৪.২২ বৃদ্ধ শেখের কাহিনী

    সেই বৃদ্ধ শেখ উঠে দাঁড়িয়ে কুর্ণিশ জানালো খলিফাকে।

    –জাঁহাপনা, ভয়ে বলবো না নির্ভয়ে বলবো।

    খলিফা হাত তুলে বললেন, নির্ভয়ে বলো।

    বৃদ্ধ বললেন, আপনার অভয় রুমাল একখানা চাইছি, জাঁহাপনা।

    খলিফা একখানা মোহরাঙ্কিত রেশমী রুমাল ছুঁড়ে দিলেন।

    বৃদ্ধ বলতে শুরু করলো :

    ধর্মাবতার, আমাদের জাত ব্যবসা দড়ির। আমার বাবা তার বাবা বংশপরম্পরায় দড়ি বানিয়ে বিক্রি করে এসেছে, আমিও তাই করি। সারাদিন খেটে যা রোজগার হয় তাতেই আমাদের বেশ ভালোভাবে চলে যায়। সংসারে আমি আর আমার বিবি এই দুটি মাত্র প্রাণী। প্রয়োজন সামান্যই। সেইটুকু রোজগার হলেই আমরা সন্তুষ্ট। তার বেশি আমাদের প্রয়োজন নাই। যদি বাড়তি কিছু পাই তা দানখয়রাত করে দুস্থজনের মধ্যে বিলিয়ে দিই। আল্লাহর এই নির্দেশ।

    একদিন আমি আমার দোকানে বসে আছি, দেখলাম দু’জন সম্ভ্রান্ত ধনী ব্যক্তি এসে আমার দোকানের বাইরে বারান্দায় এসে বসলেন। এ অবশ্য নতুন কিছু নয়। হামেশাই অনেক মানুষ এসে সেখানে বসে কিছু সময় কাটিয়ে যায়। খোলা মেলা জায়গা, মুক্ত বায়ু সেবনের জন্যেও অনেকে আসে।

    এই সময় রাত্রি প্রভাত হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

     

    আটশো উনসত্তরতম রজনী–

    আবার সে বলতে শুরু করে :

    ওরা খুব দু’জনে দু’জনের জিগরী দোস্ত। আমারও বিশেষ পরিচিত।

    কাছে এসে সালাম সাবুদ জানালেন। আমিও তাদের সাদরে বসতে বললাম। একজনের নাম সাদ আর এক জনের নাম সাদী। সাদ সাদীকে বললেন, দেখ দোস্ত, আমার বিশ্বাস মানুষের দুটো হাত আছে। এক ধনী আর এক গরীব। ধনীরা বুদ্ধিমান, তারা বুদ্ধি খাটিয়ে ধন রোজগার করে এবং সংরক্ষণ করতে পারে। কিন্তু গরীবরা মূখ। তারা যেমন রোজগারও করতে পারে না তেমনি রোজগার করলেই তা যত্ন করে সঞ্চয় করতে পারে না। সেই কারণে বংশগতভাবে তারা নিরন্ন দরিদ্র। এবং সেইটাই তাদের ভাগ্য।

    সাদী বলে, শোনও ভাই সাদ, তোমার কথার আমি প্রতিবাদ করতে চাই না, তা বলে তোমার অভিমত আমার অভিমত নয়। এ কথা সবাই জানে দারিদ্রের চেয়ে সচ্ছলতা ঢের ভালো। কিন্তু ধনীর অর্থগৃধনুতা খুবই জঘন্য। আমার অপর্যাপ্ত আছে। অথচ তার এককণা আমি আমার গরীব প্রতিবেশীদের দেব না, এ মহা অপরাধ। এই যে আমাদের এই দোস্ত হাসান এর কথাই ধর না? সারাদিন সৎপথে দড়ির কারবার করে পয়সা রোজগার করে। কিন্তু নিজের প্রয়োজন ছাড়া সে কিছুই যখের ধনের মতো জমিয়ে রাখে না। আমার মনে হয় আমাদের প্রত্যেকেরই এই শিক্ষা নেওয়া উচিত। মোটকথা, আল্লাহ যাকে দয়া করে দেন তা কখনও ফুরায় না। তা না হলে শত চেষ্টা করেও তিল মাত্র সঞ্চয় করা যায় না।

    এ প্রসঙ্গে আমার জীবনের অভিজ্ঞতার কথাই শোনাই জাঁহাপনা :

    আমি সামান্য দড়ির কারবার করে সংসার চালাই। এমন কিছু রোজগার হয় না যা দিয়ে আমি বড়লোক হতে পারি। সত্যি কথা বলতে কি, সে সাধও আমার ছিলো না কোনও কালে। স্বচ্ছলভাবে সংসার চলে যাবে এর চেয়ে বেশি কি আর দরকার হতে পারে মানুষের?তাই অর্থের প্রতি লোভ ছিলো না আমার, আজও নাই। যদিও আল্লাহর দোয়ায় আজ আমি শহরের সেরা ধনী। সামান্য ছোবড়ার দড়ির কারবার করি, তাতে কিই বা রোজগার হতে পারে, ভাবছেন, কেমন করে আমি শহরের সব চেয়ে বিত্তবান হলাম।

    তা হলে শুনুন জাঁহাপনা–

    জীবনে সভাবে থেকেছি চিরটাকাল, কাউকে কখনও ঠকাইনি জ্ঞাতসারে। জীবনে অনেক অভাব অনটনের মধ্যে অনেক দিন কাটিয়েছি। কিন্তু তা নিয়ে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করিনি কখনও। যা পেয়েছি তাই নিয়ে তুষ্ট থাকার চেষ্টা করেছি। তাই বুঝি খোদাতালা আমাকে পরীক্ষা করার জন্য অগাধ অর্থ ঢেলে দিলেন আমার ঘরে।

    একদিন সন্ধ্যায় দোকানপাট বন্ধ করে ঘরে ফিরছি, চলতে চলতে রাতের অন্ধকারে কি যেন শক্ত মতো একটা বস্তু পায়ে ঠেকলো। হাতে তুলে দেখলাম একটা সীসার তৈরি জালের কাঠি। যদি কোনও জেলের কাজে লাগে এই ভেবে কোমরে গুঁজে ঘরে এলাম।

    খানা-পিনা সেরে শুতে যাবার আগে সাজ-পোশাক ছাড়তে গিয়ে ঐ সীসার বস্তুটা ঠক করে মেঝেয় পড়ে গেলো। এতক্ষণ এই তুচ্ছ কাঠিটার কথা স্মরণেই ছিলো না। যাই হোক কুলুঙ্গীতে রেখে দিলাম ওটা।

    রাত তখনও বেশ বাকী। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে অবাক হলাম। এই রাতে কে আবার কড়া নাড়ে। বিরক্ত হয়ে সদরে গিয়ে দরজা খুলে দেখি আমার প্রতিবেশী এক জেলে।

    —কী ব্যাপার, এই রাত দুপুরে তুমি? জেলে বলে, শেখ সাহেব, বড় বিপদে পড়ে গিয়েছি। মাছ ধরতে যাওয়ার সময় হয়ে গেলো। জালখানা কাঁধে নিতে গিয়ে দেখি একটা কাঠি খোয়া গেছে। সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এক টুকরো সীসা পেলাম না। কিন্তু না পেলেও তো জাল ফেলতে পারবো না। ঘরে আমার অনেকগুলো বালবাচ্চা, আমি একমাত্র রোজগেরে মানুষ, একদিন জাল না ফেললে ওরা না খেয়ে থাকবে। তাই বাধ্য হয়েই এই নিশুতি রাতে ঘুম ভাঙ্গিয়ে আপনাকে বিরক্ত করতে এসেছি। যদি মেহেরবানী করে একটু খুঁজে পেতে দেখেন, যদি এক টুকরো সীসে বা লোহা একটা কিছু ভারি বস্তু পাওয়া যায় তবে জালখানা জলে ফেলতে পারি

    আমি বললাম, তুমি একটু দাঁড়াও। কুলুঙ্গী থেকে জালের কাঠিখানা এনে তার হাতে দিয়ে বললাম, দেখ তো চলবে?

    জেলে যেন হাতে চাঁদ পেলো; চলবে মানে? এই তো আসল জিনিস। আচ্ছা শেখ সাহেব, বহুত শুক্রিয়া, এখন আমি চলি আর দেরি করবো না। আল্লাহর কাছে আমার নামে দোয়া মাঙ্গুন, আজ যেন আমার জালে ঢাই ওঠে। তবে কথা দিয়ে যাচ্ছি শেখ সাহেব, যে মাছই উঠুক, তার মধ্যে যে মাছটা সব চেয়ে স্বাদের সেইটেই আপনাকে নিবেদন করে যাবো। আপনার এ উপকার কি আমি জীবনে ভুলবো কোনও দিন। ( আমি বললাম, আচ্ছা আচ্ছা সে সব পরে হবে। এখন ঘাটে যাও তো, মন দিয়ে মাছ ধর লোকটি বারবার কৃতজ্ঞতা জানাতে জানাতে বিদায় নিলো। আমি বিছানায় ফিরে এসে ভাবলাম, ওরা গরীব, কত সামান্য কারণে ওরা কি দারুণ খুশি হতে পারে। কত সহজে ওরা নিজেদের দরাজ দিল খুলে মেলে ধরতে পারে। একখণ্ড তুচ্ছ জালের কাঠি। সীসার তৈরি। এক আধলায় এক কুড়ি পাওয়া যায়। সেই বস্তু আমার কাছ থেকে পেয়ে সে কেমন কৃতার্থ হয়ে চলে গেলো।

    আবার বলে গেলো, জালের সেরা মাছটা আমার বাড়িতে দিয়ে যাবে। আহা, গরীব মানুষ মাছটা বাজারে বেচলে দুটো দিরহাম পেতে পারবে কিন্তু এক কথায় সে এতো বড় একটা খয়রাতির ওয়াদা করে গেলো! ওর তো কিছুই নাই, তবু সে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা রেখে যায়। কিন্তু আমরা মুঠি ভরে পেয়েও তো কাউকে প্রাণে ধরে কণামাত্র দিতে কুণ্ঠাবোধ করি। সেই নিদ্রা নিশুতি অন্ধকার রাতে দু’হাত কপালে ঠেকিয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে আকুতি জানালাম, খোদা ওকে কী ধাতুতে গড়েছ তুমি—কত সুন্দর ওর হৃদয়খানা। আমাকেও যদি ঐ রকম করে বানাতে

    পরদিন সকালে জেলেটা এসে একটা বেশ লাগসই মাছ দিয়ে গেলো। বলে গেলো, টাইগ্রীসের সেরামাছ শেখ সাহেব। শুধু ভাজা খেয়ে দেখবেন, কি সোয়াদ?

    আমি বলতে গেলাম, তা এতো দামের মাছ দিতে গেলে কেন জেলের পো?

    —কী যে বলেন, মালিক। আপনি দয়া না করলে আজ আমাদের উপবাসে থাকতে হতো। বিশ্বাস করেন, আজ যা মাছ উঠেছে, একদিনে এতো মাছ জীবনে আমি ধরতে পারিনি কোনও দিন।

    জেলে চলে গেলে, বিবিকে ডেকে বললাম, সামান্য একটা জালের কাঠির দৌলতে কত বড় মাছ জুটে গেলো, দেখ বিবিজান। কিন্তু সমস্যা হলো এতো বড় মাছটা রাঁধবে কি করে।

    বিবি বললো, টুকরা টুকরা করে না কাটলে তো কড়াই চাপানো যাবে না।

    আমি বললাম, দাঁড়াও আমার ভোজালীখানা দিয়ে কেটেকুটে বানিয়ে দিচ্ছি তোমাকে।

    মাছটাকে প্রথমে দুখণ্ড করতে গিয়েই দেখতে পেলাম, ওর পেটের মধ্যে একটা রঙিন পাথরের নুড়ি। বেশ ঝকমক করছিলো। ভাবলাম, সমুদ্রের মাছ এসে ঢুকেছে নদীতে। আর সামুদ্রিক মাছরা অনেক সময় নাকি খাদ্যভ্রমে পাথরের টুকরো গিলে ফেলে।

    যাই হোক, পাথরটা দেখতে সুন্দর, ঘর সাজানোর কাজে লাগতে পারে ভেবে ধুয়ে ঘরের টেবিলে এনে রেখে দিলাম।

    সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করে ঘরে ফিরে আসতেই বিবি উৎফুল্ল হয়ে ছুটে এসে আমাকে একটা আজব খবর শোনালো।

    হা গো, যে পাথরটা মাছের পেট থেকে পাওয়া গিয়েছে ওটা দিয়ে রোশনাই বেরুচ্ছে।

    —কী রকম?

    -তুমি তো টেবিলে রেখে গিয়েছিলে! দিনের আলো শেষ হতে আমি ঘরে ঢুকে দেখি আলোয় আলোয় ঘরখানা ভরে গেছে।

    আমি ছুটে গেলাম শোবার ঘরে। সত্যিই তাই। পাথরটা থেকে আলোর ছুরি ঠিকরে বেরুচ্ছে। আর সেই আলোয় আলোময় হয়ে গেছে সারা ঘর।

    আমার বিবির দৌলতে সারা পাড়ায় খবরটা ছড়িয়ে পড়তে দেরি হলো না। দলে দলে কৌতূহলী প্রতিবেশীরা এসে সেই আশ্চর্য প্রদীপ প্রত্যক্ষ করে গেলো।

    পরদিন সকালে ইহুদী জহুরীর বিবি এলো। শুনতে পেলাম আমার বিবির সঙ্গে সে ভাব জমাচ্ছে। একথা সে কথার পর সে আসল কথা পাড়লো, আমার বেটার বৌর ন’মাস চলছে। এই আমাদের ঘরে প্রথম নাতি আসবে। এক গণৎকার এসেছিলো আমাদের বাড়িতে। সে একটা পাথরের মাদুলী দিয়ে গেছে। বলেছে ঐ রকম আর একটা পাথর দরকার। দু’টো এক সঙ্গে কার-এ বেঁধে গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে, যতদিন না প্রসব হয়। তাহলে আর শয়তানের নজর লাগবে না। শুনলাম ভাই, তোমার বাড়িতে ঐ রকম একটা পাথর আছে। তা যদি কিছু দাম নিয়ে দাও তবে বৌটা ভূতের ভয় থেকে রক্ষা পায়। জিনিসটা কেমন একবার দেখাতে পার শেখের বিবি?

    আমার স্ত্রী ইহুদী ঘরণীকে সঙ্গে করে আমার শোবার ঘরে নিয়ে গেলো। একটু পরে বাইরে এসে বললো, হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক এই রকমই একটা রঙিন পাথর সে দিয়ে গেছে। আমার মনে হচ্ছে এটা তার জোড়া হতে পারবে। কী দাম নেবে বলো? আমি এখুনি নগদ কিনে নিয়ে যাবো।

    আমার বিবি বলে, কী করে বলবো বলল, কত দাম হবে। আমরা তো পয়সা দিয়ে কিনিনি। মাছের পেটে পেয়েছি। তুমিই বলো, কী দাম দেবে?

    আমি স্বকর্ণে শুনলাম, ইহুদী বৃদ্ধা বললো, দশ দিনার দেব।

    এক কথায় দশ দশটা সোনার মোহর? ইহুদীর মেয়ে একটা আধলা দিরহাম প্রাণে ধরে খরচ করে না। সে কিনা ছেলের বৌ-এর গলায় তক্তি ঝোলাবার জন্য দশটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করবে?

    তখুনি আমি বিবিকে ডেকে বললাম, তোমাদের সব কথাই আমি শুনেছি। যাক, আমি এখন দোকানে বেরুচ্ছি, ঐ বুড়ি তোমাকেই যতই লোভ দেখাক আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত কোনও দামের বদলে ওটাকে হাতছাড়া করো না। মনে হচ্ছে পাথরটা অনেক দামী।

    সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এসে দেখি ইহুদী বিবি আবার এসেছে। আমাকে দেখে সে বারবার সালাম সওগাত জানিয়ে বললো, শেখ সাহেব আপনার জন্যেই বসে আছি।

    আমি নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললাম, আমার জন্যে? কেন, কী দরকার।

    —ঐ পাথরটা যদি বিক্রি করেন, আমার বৌটার একটু উপকার হয়। বেচারী ভূতের ভয়ে রাতে ঘুমায় না।

    —তা কত দাম দেবেন।

    —একশো দিনার নিন, আমি সঙ্গে করে এনেছি।

    আমি বললাম, না। ওটা সামুদ্রিক রত্ন, ওর অনেক দাম।

    ইহুদী বিবি আমাকে বোঝাবার চেষ্টা করলো, না, ওটা একটা রঙচঙে খেলনা পাথর মাত্র। নেহাত আমার বেটার বৌর জন্য দরকার তাই আপনাকে এতো সাধাসাধি করতে এসেছি। আমার বৌটার মুখের দিকে চেয়ে মেহেরবানী করে ওটা আমাকে দিয়ে দিন, শেখ সাহেব।

    আমি গম্ভীর ভাবে বললাম, অবশ্যই দেব, তবে এক লাখ দিনারের কমে দেব না। আমি জানি ওর দাম দশলাখেরও বেশি।

    বৃদ্ধা কেমন মিইয়ে গেলো। আমি তো জহুরী নই, ওসব কারবার আমার স্বামী করে। তা হলে ওকেই পাঠিয়ে দেব আপনার কাছে, এখন আসি?

    -হ্যাঁ আসুন। আর আপনার স্বামীকে বলবেন যদি কিনতেই হয় তবে যেন তিনি লক্ষমুদ্রা সঙ্গে করে আনেন।

    বৃদ্ধা চলে যাওয়ার স্বল্পক্ষণ পরেই ইহুদী জহুরীর আবির্ভাব ঘটলো। লোকটা একেবারে বিনয়ের অবতার। কথায় কথায় আব্রাহাম জ্যাকবের নাম উচ্চারণ করে দু’হাত কপালে ঠেকায়।

    সেও আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করলো, আসল রত্ন আর নকল কাচের মধ্যে দৃশ্যত বিশেষ কোনও ফারাক বোঝা যায় না। আমরা বেশির ভাগ সময়ই নকল কঁচকে আসল রত্ন বলে ভ্রম করি। তা অত মূল্যবান বস্তু কি পথেঘাটে গড়াগড়ি যায়? ওটা ঝুটামাল ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না।

    লোকটার কথা শুনে আমার হাড়পিত্তি জ্বলে গেলো। ঘরে ছেড়ে বেড়িয়ে আমার শোবার ঘরে গিয়ে পাথরটা নিয়ে এলাম। দরজা জানলা সব বন্ধ করে দিয়ে পাথরটাকে ইহুদীর সামনে টেবিলের ওপর রাখতে লোকটার লোভাতুর চোখ দুটো ধক্ করে জ্বলে উঠলো। আলোর বিচ্ছুরণে সারা ঘর আলোকিত হয়ে গেছে ততক্ষণে। ইহুদীর মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো, ওরে বাবা, এ যে সাতরাজার ধন। এতো বড় বৈদুর্যমণি সারা দুনিয়ায় নাই!

    -কী বললেন? সারা দুনিয়ায় এর জুড়ি নাই।

    সঙ্গে সঙ্গে সামলে নিয়ে সে কথাটা ঘুরিয়ে নেবার চেষ্টা করে, না, মানে না—বৈদুর্যমণির মতোই দেখতে। আসলে ঝুটা মাল

    আমি আর রাগ সামলাতে পারলাম না। পাথরখানা কামিজের পকেটে পুরে উঠে দাঁড়ালাম, ঝুটা মাল বেচে আপনাকে ঠকাতে চাই না। আপনি আসুন—

    আমার আচরণে ইহুদীটা কঁচুমাচু মুখ করে বলতে থাকে, আহা রাগ করছেন কেন, শেখ সাহেব। আমি তো সে কথা বলিনি, বাজারে আজকাল ঝুটা মালের আমদানী বেশি; দাম কম বলে তার কদরও বেশি। আসল চীজ আর ক’জনে উচিত মূল্য দিয়ে কিনতে চায় বলুন? তাই বলছিলাম যদি একটু বিবেচনা করেন

    -বেশি বিবেচনা করে বললে তো দশ লাখ দিনার বলতে হয়। কিন্তু তা তো চাইনি। আমার দাবি এক লাখ। একবার যখন মুখ থেকে জবান বের করেছি তার নড়চড় হবে না। তবে এই মুহূর্তে এখুনি যদি আপনি সওদা শেষ না করে চলে যান, পরে ফিরে এলে কিন্তু এ দাম থাকবে না। তখন দশ কেন বিশ লাখও চাইতে পারি।

    ইহুদী নিরুপায় হয়ে বলে, না না, আমি এখুনি সওদা শেষ করে নিয়ে যেতে চাই। এই ঘরের ভিতরে নিয়ে আয় বস্তাটা।

    বাইরে ইহুদীর নফর গাধার পিঠে একটা বস্তা চাপিয়ে অপেক্ষা করছিলো। মনিবের সাড়া পেয়ে সে বস্তাটা ভিতরে এনে ঘরের মেঝেয় ঢেলে দিলো। সোনার মোহরে ভরে গেলো ঘর। উ এতো সোনা জীবনে দেখিনি কখনও।

    সেইদিনই রাতারাতি আমি বড় লোক হয়ে গেলাম। ওকে আপনি আল্লাহর দান ছাড়া আর কী বলতে পারেন, ধর্মাবতার। সারা জীবন ধরে সভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করে এতো অর্থ তো মানুষে রোজগার করতে পারে না। সেই কারণে আমার বিশ্বাস একমাত্র দেনেওলা তিনিই। এবং আমরা যারা তার করুণায় বিত্তবান হয়ে অহঙ্কারের অহমিকায় ধরাকে সরাজ্ঞান করি তারা সকলেই মূখ। একথা ভুলেও ভাবি না। আমার বাক্সে যে ধন-দৌলত ভরা আছে তার আসল মালিক তিনিই। আমি শুধু রক্ষক মাত্র।

    তাই প্রতিদিন নিয়ম করে আল্লার দান আমি তারই সৃষ্ট দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করি। এতে আমার নিজের কোনও গৌরব নাই। তার জিনিস তারই ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করি।

    খলিফা বললেন, এতক্ষণে বুঝলাম তোমার ঐ মুক্তহস্তে দানের আসল কারণ। খুব খুশি হলাম তোমার কথা শুনে। সব কাহিনী আমি মন দিয়ে শুনেছি। তোমার ধর্মমতি দেখে খুব আনন্দ হলো আজ। চিরকাল যেন এইভাবে আল্লাহর বান্দা মনে করতে পার, নিজেকে সেই প্রার্থনা জানাই।

    তারপর খলিফা বললেন, ঐ ইহুদী তোমার কাছ থেকে পাথরখানা লক্ষ মুদ্রায় কিনে সেই দিনই আমার কাছে দশলক্ষে বিক্রি করেছে। এখনও আমার কোষাগারে রাখা আছে ওটা।

    খলিফা এবার খঞ্জ মাদ্রাসা শিক্ষকের দিকে তাকিয়ে বললেন, আচ্ছা, মৌলভী সাহেব এবার তোমার পালা। শোনাও তোমার কাহিনী।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142 143 144 145 146 147 148 149 150 151 152 153 154 155 156 157 158 159 160
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকবীর – ১ – ক্ষিতিমোহন সেন
    Next Article প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা – ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.