Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সহস্র এক আরব্য রজনী

    ক্ষিতিশ সরকার এক পাতা গল্প3728 Mins Read0

    ৪.২৪ অন্ধ ভিক্ষারীর কাহিনী

    এরপর উঠে দাঁড়ালো সেই অন্ধ ভিখিরি।

    যথাবিহিত কুর্নিশাদি জানিয়ে সে বলতে শুরু করলো।

    যৌবনে আমি এক তুখোড় উট চালক ছিলাম। আমার নিজের গুণেই আমি একটা থেকে পরপর আশীটা উটের মালিক হতে পেরেছিলাম। এই সব উটগুলো আমি ভাড়া খাটিয়ে রোজগার করতাম। লাভের পয়সা জমিয়ে জমিয়ে উট কিনতাম। এইভাবে অল্পকালের মধ্যেই আমার সমব্যবসায়ীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী বলে পরিচিত হলাম।

    একবার বাগদাদ থেকে এক ব্যবসায়ীর মাল নিয়ে বসরায় গিয়েছিলাম। যথাসময়ে মালপত্তর খালাস করে দিয়ে দেশে রওনা হলাম।

    চলতে চলতে বেলা বেড়ে গেলো। তখন গ্রীষ্মকাল। প্রচণ্ড খর তাপে দুনিয়া দগ্ধ হচ্ছে। মাঠের মধ্যেই এক গাছতলায় দুপুরের খানা-পিনা সারবো বলে উটগুলোকে শোয়ালাম।

    এই সময় এক দরবেশ এলো সেখানে। আলখাল্লা পরনে, আজানুলম্বিত শুভ্র দাড়ি, সৌম্যদর্শন এক বৃদ্ধ। প্রথম দৃষ্টিতে মনে হয় আল্লাহর পায়ে সর্বস্ব নিবেদন করে মুক্তপুরুষ হয়েছেন তিনি।

    সাদর অভ্যর্থনা করে বসালাম তাকে। এক সঙ্গে বসে খানা-পিনা করলাম। তিনি আমার কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন, আমিও করলাম।

    বেলা পড়ে এলো। রোদের ঝলক অনেকটা হালকা হয়ে আসছিলো। দরবেশ বললেন বাবা আবদাল্লাহ, তুমি সংসারী মানুষ আর আমি ফকির। তুমি শুধু অর্থের ধান্দাতেই দেশ বিদেশ চক্কর দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি দেশে দেশেই ঘুরে বেড়াই, তবে অর্থের নয়, পরমার্থের সন্ধানে।

    কথাটার মর্ম বুঝতে পারলাম না, আপনার হয়তো অপ্রতুল অর্থ সঞ্চিত আছে, তাই আর তার পিছনে ছুটতে হয় না। কিন্তু আমি তো এখন সে অর্থ সঞ্চয় করতে পারিনি, ফকির সাহেব। তাই

    আমাকে তারই জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়।

    দরবেশ বললেন, টাকা চাও তুমি? কত টাকা? কত টাকা পেলে তোমার আকাঙ্ক্ষা মিটবে, বাবা আবদাল্লাহ?

    আমি বললাম, ফকির সাহেব সংসারে বাঁচতে গেলে বেশ কিছু অর্থ চাই।

    —তার পরিমাণ কত?কত পেলে তুমি খুশি হবে? দুশো-পাঁচশো হাজার কোটি মোহর?

    আমি ঢোক গিলে বলি, অত টাকার কি দরকার? লাখপতি হলেই আমি, সন্তুষ্ট থাকবো।

    দরবেশ বললেন, তা হলে এখুনি আর তোমার বাগদাদ রওনা হওয়া হলো না বাবা আবদাল্লাহ, আমার সঙ্গে এসো তুমি। আমি তোমাকে এক গুপ্ত ধনাগারে নিয়ে যাবো। সেখান থেকে তোমার প্রয়োজন মত ধনরত্ন বোঝাই করে। নিও তোমার উটের পিঠে! তারপর তুমি চলে যেও তোমার দেশে, আমি চলে যাবো বসরাহয়।

    দরবেশের কথায় লুব্ধ হয়ে উঠলাম। আমার আশীটা উটকে তাড়িয়ে নিয়ে তার সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকলাম।

    অনেকটা পথ অতিক্রম করার পর এক পর্বত পথের সম্মুখে এসে দাঁড়ালাম আমরা। দরবেশ বললেন, এই পাহাড়ের ভিতর দিয়ে এই যে দেখছো, এই পথ দিয়ে তুমি আর আমি স্বচ্ছন্দে চলে যেতে পারবো, কিন্তু তোমার উটগুলো যেতে পারবে না। সুতরাং ওদের ওখানেই এই পাহাড়ের পাদদেশে শুইয়ে রেখে চলো।

    তার কথামতো একটা সাফ জায়গা দেখে উটগুলোকে শুইয়ে দিলাম। দরবেশ বললেন, শুধু হাতে গিয়ে কি ফয়দা হবে। ধনরত্ন আনবে কিসে, বস্তাটস্তা কিছু সঙ্গে নাও!

    আমি একখানা বস্তা হাতে করলাম। দরবেশ হাসলেন, ব্যস একখানাতেই সন্তুষ্ট হবে?

    আমি বললাম, এই একটা বস্তাতেই লাখ টাকার সোনাদানা আঁটতে পারে। আর বেশি কি দরকার, ফকির সাহেব?

    দরবেশ বললেন, পাগল ছেলে, বার বার তো আর এখানে আসা হবে না, আজই যতটা পার নিয়ে নিতে হবে। তুমি এক কাজ কর, তোমার প্রত্যেকটা উটের পিঠের জন্য একটা করে বস্তা নাও।

    আমি অবাক হলে বললাম, আশী বস্তা ধনদৌলত পাওয়া যাবে সেখানে?

    দরবেশ হাসলেন, যাবে। তারও বেশি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু অত নেবার অনেক অসুবিধে, তুমি আশীখানাই নাও। যা উদ্ধার করে আনা হবে তার অর্ধেক তুমি নেবে আর বাকী অর্ধেক আমি নেব, কী, রাজী?

    আমি বললাম, অত ধনে আমার কাজ কী? তবে আপনি যখন বলছেন, তাই হবে। পার্বত্য সরু পথ পেরিয়ে ওপারে চলে গেলাম আমরা।

    আর একটা পাহাড়। খাড়া আকাশের দিকে উঠে গেছে। কোথাও পা রাখার জায়গা নাই। উপরে ওঠার জোকী? সেই মুহূর্তে আমি ভেবে পেলাম না এই দুর্লঙ্ পাহাড়-পাদদেশে এসে কি লাভ হলো?

    দরবেশ তার ধূপদানীতে এক মুঠো সুগন্ধি দ্রব্য ছিটিয়ে দিতেই গল গল করে ধূম্রকুণ্ডলী ওপরের দিকে উঠতে থাকলো। একটুক্ষণের মধ্যেই ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে গেলো সামনেটা। পাহাড়টা আর নজর করতে পারলাম না তখন।

    একটু পরে ধোঁয়া কেটে গেলে দেখলাম, পাহাড়ের নিচে একটা গুহামুখ উন্মুক্ত হয়ে গেছে। দরবেশ আমাকে সঙ্গে নিয়ে গুহাভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন।

    আমার দু’চোখ ধাঁধিয়ে গেলো। বিশাল বিস্তৃত এক ময়দান ক্ষেত্র। যে দিকে তাকাই রাশি। রাশি মোহর, তাল তাল সোনা রূপা স্থূপাকার হয়ে আছে চারদিকে।

    আমি দিশাহারা হয়ে একটা বস্তায় সোনার মোহর ভরতে লেগে গেলাম। দরবেশ আমাকে বাধা দিলেন, ওসব তুচ্ছ সোনার মোহর ভরে বস্তাগুলো শেষ করে কী লাভ। এমন বস্তু ভরে নাও, যা ওজনে হালকা অথচ মূল্যে সহস্রগুণ হতে পারে। এদিকে দেখ, কত মূল্যবান মণিরত্ন। এর এক এক টুকরো লক্ষ লক্ষ মোহরের সমান। এগুলো না ভরে তুমি আহম্মকের মতো ঐ সোনার মোহরগুলো বস্তা বন্দী করতে লেগেছ।

    আমি লজ্জিত হলাম, তাইতো, যেখানে অফুরান নেবার মতো সেখানে বাছাই করে সেরাগুলো নেওয়াই সঙ্গত।

    এক এক করে আশীটা বস্তায় হীরে জহরত মণিমুক্তায় বোঝাই করে উটের পিঠে এনে চাপালাম। রত্ন গুহা ত্যাগ করার আগে লক্ষ্য করলাম দরবেশজী একটি সোনার জালার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে ছোট্ট একটি সোনার কৌটো বের করে বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেললেন। আমার কৌতূহল হলো, চারদিকে এতো রত্ন সম্ভার কিন্তু কোনও কিছু তিনি স্পর্শ করে দেখলেন না। শুধু এই ছোট্ট কৌটায় তার কি দরকার পড়লো? জিজ্ঞেস করলাম, কী আছে ওতে দরবেশজী।

    দরবেশ হাসলেন, ও কিছু না। খানিকটা মলম আছে ওতে।

    মনের খটকা গেলোনা।যাই হোক আর কোনও প্রশ্ন করতে সাহস হলো না। উটের দল নিয়ে আবার আমরা সেই মাঠের মাঝে গাছতলায় এসে দাঁড়ালাম। এখান থেকে পথটা একদিকে বসরাহ অপরদিকে বাগদাদ চলে গেছে। আমি যাবো বাগদাদে আর তিনি বসরাহর যাত্রী।

    এই সময় রাত্রি শেষ হয়ে এলো। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।

     

    আটশো পঁচাত্তরতম রজনী :

    আবার সে বলতে শুরু করে : ফকির সাহেব বললেন, এবার তাহলে, বাবা আবদাল্লাহ আমার ভাগেরটা আমাকে দিয়ে দাও, আমি বসরাহয় চলে যাই।

    আমার তখন মনের অবস্থা অন্যরূপ। বললাম, দেখুন দরবেশজী, আপনি ফকির মানুষ, এতো ধনরত্ন নিয়ে আপনার কি কাজে লাগবে।

    –তুমি সত্য কথাই বলেছ, তুমি সংসারী লোক, ধনরত্ন তোমার প্রয়োজন, সন্দেহ নাই। তুমি যা নিয়ে যাবে, তা তোমার এবং তোমার আত্মীয়-পরিজনদের ভোগে লাগবে। কিন্তু আমি ফকির, আমার নিজের জন্য কোনও অর্থের প্রয়োজন নাই। তবে যারা দুস্থ অসহায় তাদের মুখে আহার্য যোগানোই আমার ব্রত। তুমি যা দেবে তা আমি আল্লাহর দরিদ্র ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করবো। তুমি শুধু তোমার পরিবারের প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটার জন্য ধনরত্ন সংগ্রহ কর। আর আমি করি খোতালার বিরাট দুঃস্থ পরিবারের অন্ন যোগাবার জন্য।

    এতেও কিন্তু আমি ওঁকে ওয়াদা মতো ওঁর প্রাপ্য অংশ দিতে কুণ্ঠিত হলাম। তিনি আমার মনের অভিপ্রায় বুঝতে পেরে বললেন, ঠিক আছে, আধাআধি যদি দিতে প্রাণ না চায় তবে যতটা দিতে চাও তাই দাও।

    আমি বললাম, আপনি কুড়িটা বস্তা নিন। বাকি ষাটটা আমি নেব।

    দরবেশ হাসলেন, বেশ তাই হোক, তবে আমার তো বইবার উট নাই। কুড়িটা বস্তা দিলে কুড়িটা উটও দিতে হবে আমাকে।

    আমি প্রসন্ন চিত্তে না হলেও রাজী হলাম।

    দরবেশ কুড়িটা উট নিয়ে রওনা হয়ে গেলো, আমি তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, শুধু শুধু অত গুলো ধনরত্ন হাত ছাড়া হয়ে গেলো।

    ছুটে গেলাম দরবেশের সামনে। বললাম, দেখুন ফকির সাহেব, এই কুড়িটা উট বাগে আনা আপনার মতো পীরের কাজ নয়। এরা আমাকে না দেখে বেগড়বাই করে আপনাকে অনেক নাজেহাল করবে। আপনি বরং সংখ্যাটা কমিয়ে দশ করুন।

    দরবেশ হেসে বললেন, বুঝেছি, প্রাণে ধরে দিতে পারছে না এতটা। ঠিক আছে তাই কর, দশটা তুমি ফিরিয়ে নিয়ে যাও।

    দশটা উট আমাকে দিয়ে বাকী দশটা নিয়ে তিনি রওনা হলেন। কিন্তু তাতেও আমার চিত্ত প্রসন্ন হলো না। মনে হলো ঐ ফকির কোনও পরিশ্রমই করেনি। যা কিছু খাটুনি আমিই খেটেছি। তাছাড়া এই দুর্গম পথে উটের বাহন না থাকলে এ বোঝা কে বয়ে নিতে পারতো।

    আবার আমি ছুটে গিয়ে দরবেশকে ধরলাম।

    দরবেশজী আপনি তো ইচ্ছে করলেই তামাম দুনিয়ার ধনভাণ্ডার উজার করে আনতে পারবেন। কিন্তু আমি তো আর এ সুযোগ পাবো না কোনওদিন।

    -তুমি কি বলতে চাও?

    আপনি সবটাই আমাকে দিয়ে দিন। আপনার দরকার হলে আর একবার গিয়ে নিয়ে আসবেন সেখান থেকে।

    দরবেশ বললেন, তুমি যদি এতেই সন্তুষ্ট হও, তাই হোক। এই দশটাও নিয়ে যাও। কী, খুশি তো?

    আমি তখনও লোভীর মতো দরবেশের হাতের সোনার রেকাবীটার দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি বোধহয় আমার মনের অভিপ্রায় উপলব্ধি করলেন। থালাখানা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, নাও।

    আমি এতই হীনমনা যে একবারও বলতে পারলাম না, না থাক, ওটা আপনার খাবার থালা, ওটা রাখুন আপনি। নির্লজ্জের মতো হাত পেতে নিলাম।

    দরবেশের মুখে মিষ্টি মধুর হাসি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এবার তো সব পেয়েছ? তা হলে খুশি মনে ঘরে ফিরে যাও?

    আমার চোখ তখন দরবেশের বুকের ওপর নিবন্ধ হয়েছে। মুখ ফুটে বলেই ফেললাম, আপনার বুকের মধ্যে ঐ ছোট্ট কৌটোটা আমাকে দেবেন?

    তৎক্ষণাৎ তিনি কৌটোটা বের করে আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, আর তো কিছু নাই আমার কাছে, কী বলে?

    আমি বললাম, এই কৌটোয় এক প্রকার মলম আছে বলেছেন। নিশ্চয়ই সে বস্তু মহা মূল্যবান। কী কাজে লাগে এবং কীভাবে তা ব্যবহার করতে হয় একবার বলে দিন।

    এতক্ষণ আমি বিনয়ের মুখোশ এঁটে ওঁর সঙ্গে গদগদ হয়ে কথা বলছিলাম। কৌটোটা হাতে পাওয়ার পর কিন্তু বুঝতে পারলাম, আমার গলার স্বরটা ঈষৎ কঠিন হয়ে উঠলো।

    দরবেশ বললেন, অবশ্যই বলে দিচ্ছি। তা না হলে এই কৌটোটা নিয়ে তুমি করবে কী? এর ভেতরে কিছুটা মলম আছে। একটুখানি আঙ্গুলে নিয়ে বাঁ চোখে সুর্মা কাজলের মতো করে লাগাবে তাহলেই বিশ্বের যত গুপ্ত ধনের দেখা পেয়ে যাবে তুমি। তবে সাবধান ভুলেও কখনও ডান চোখে লাগাবে না-তা হলে দুচোখই অন্ধ হয়ে যাবে।

    আপনার কথা শুনে আমি আর কৌতূহল চেপে রাখতে পারছি না, মেহেরবানী করে। আমার চোখে লাগিয়ে দিন একটু।

    দরবেশ আমার হাত থেকে কৌটোটা নিয়ে ঢাকনা খুলে বাঁ হাতের কড়ে আঙ্গুলে করে খানিকটা মলম তুলে নিয়ে আমার বাঁ চোখে লাগিয়ে দিয়ে বললেন, ডান চোখটা বন্ধ কর।

    ডান চোখ বন্ধ করতেই আমি এক অভূতপূর্ব দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলাম। দুনিয়ার পাহাড় পর্বত সমুদ্রতল এবং মাটির তলায় যেখানে যত ধনরত্ন আছে এক এক করে সব ছবি ভেসে উঠতে লাগলো আমার চোখের সামনে। সে সব দেখে আমি আনন্দে দিশাহারা হয়ে পড়লাম। দুনিয়াতে এতো ধনদৌলত থাকতে পারে কল্পনাও করা যায় না।

    আমি ভাবলাম, একটা চোখে লাগাতেই যদি এই গুপ্তধনের হদিশ মেলে তবে দু চোখে লাগালে না জানি কি হবে।

    আমার মন সন্দিগ্ধ হয়ে উঠলো। নিশ্চয়ই এই দরবেশ আমাকে পুরো সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে। বেশ রুষ্ট ভাবেই বললাম, আপনি আমার সঙ্গে চালাকী করছেন। ডান চোখে লাগালে আমি দুনিয়ার তামাম ধনরত্নের মালিক হতে পারবো।

    দরবেশ শিউরে উঠলেন, সর্বনাশ অমন কাজটি করো না। তা হলে জন্মের মতো অন্ধ হয়ে যাবে তুমি।

    —মিথ্যে কথা। আপনি আমাকে ধোঁকা দিচ্ছেন। আমি আরও বেশি ধনদৌলতের মালিক হই তা আপনি চান না।

    দরবেশ আমাকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন, তুমি আমার কথা বিশ্বাস কর, তোমার ভালোর জন্যই আমি বলছি, এ মলমটা ভুলেও ডান চোখে লাগাবে না। তা হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

    সেই সর্বনাশই আমার হলো। দরবেশের সে কথা আমি না শুনে তাকেই বাধ্য করালাম আমার ডান চোখে মলমটা লাগিয়ে দিতে।

    আপনি আমার কথা যদি না শোনেন আপনার ভালো হবে না ফকির সাহেব। আপনি যত পুণ্যবান পীরই হোন, দেহ-বলে আমি আপনার চেয়ে অনেক বেশী বলবান। সোজা কথায় যদি কাজ না হয় আমি আপনার ওপর জুলুম করবো। এখনও বলছি ভালোয় ভালোয় লাগিয়ে দিন আমার ডান চোখে।

    দরবেশ আর একটি কথাও বললেন না, আমার কুম মতো আমার ডান চোখে ঐ মলমের কাজল পরিয়ে দিলেন।

    প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমার দু’চোখে ঝাপসা, এবং একটু পরে ঘন অন্ধকার নেমে এলো। আমি আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। কিন্তু দরবেশ আর কোনও সাড়া দিলেন না। অনেক ডাকাডাকি হাঁকাহাঁকি করলাম, কিন্তু কোনও ফল হলো না। শুধু বুঝতে পারলাম, আমার উটগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ে তিনি চলে গেলেন।

    আমি অসহায়ভাবে পড়ে রইলাম সেখানে। তারপর একদিন বাগদাদের এক সওদাগরের করুণায় দেশে ফিরে আসতে পারলাম। সেই থেকে আমি ভিক্ষে করে খাই। এ ছাড়া আমার আর অন্য কোনও গতি নাই। তাই রোজ সকালে গিয়ে বসি ঐ পুলের ওপর। হাত পেতে বসে থাকি, যদি কোনও মহান দাতা দু একটা দিরহাম দান করেন। যারা আমাকে কিছু দেন আমি তাদের সবাইকে অনুরোধ জানাই তারা যেন আমার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে যান। আসলে দয়ার বদলে থাপ্পড়টাই আমার একমাত্র পাওনা।

    অন্ধের কাহিনী শেষ হলে খলিফা বললেন, তোমার জীবনের দুঃখজনক ঘটনার জন্য তুমিই একমাত্র দায়ী। সীমাহীন লোভই তোমার এই দশা ঘটিয়েছে। যাক, আমি দপ্তরে নির্দেশ দিচ্ছি তোমার এবং খাজা মাদ্রাসা শিক্ষকের জন্য প্রতিদিন দশ দিরহাম করে খয়রাতি দেওয়া হবে।

    এবং এছাড়া খলিফা সাদা ঘোড়ার সওয়ার যুবক, ধর্মপ্রাণ বৃদ্ধ, হাসান এবং হিন্দুস্তান সুলতানের জামাতাকে তাদের পদমর্যাদা অনুসারে যথাযোগ্য ইনাম প্রদান করলেন।

    শাহরাজাদ বললো, জাঁহাপনা, এরপর আপনাকে আর এক কিসসা শোনাবো।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142 143 144 145 146 147 148 149 150 151 152 153 154 155 156 157 158 159 160
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকবীর – ১ – ক্ষিতিমোহন সেন
    Next Article প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা – ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.