Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : জয়ন্ত সিং)

    October 27, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    October 27, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সহস্র এক আরব্য রজনী

    ক্ষিতিশ সরকার এক পাতা গল্প3728 Mins Read0
    ⤶

    ৪.৫৪ শাহজাদা জুঁই আর শাহজাদী বাদামের প্রেম উপাখ্যান

    এক সময়ে কোনও এক মুসলমান মুলুকে নুমানশাহ নামে এক বৃদ্ধ সুলতান প্রজা পালন করতেন। তার মতো দিলদরিয়া মেজাজের বাদশাহ বড় একটা দেখা যায় না। তিনি ছিলেন আফলাতুনের তুল্য বিজ্ঞ বিচক্ষণতার স্বভাব প্রকৃতি ছিলো সাধু-সন্তদের মতো। তার মহিমা গরিমা ফরিদুনের মহিমা গরিমাকেও ম্লান করে দিয়েছিলো। তার রাশিচক্র ছিল আলেকজাণ্ডারের অনুরূপ। তিনি ছিলেন পারস্যের অনসিরবানের চেয়েও সৌভাগ্যবান।

    সুলতানের সাত পুত্র। সাতজনই পরম রূপবান। এদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা নওজোয়ান ছিলো কনিষ্ঠ পুত্র জুই। তার রূপ-যৌবনের নিখুঁত বর্ণনা দেওয়ার ভাষা আমার নাই।

    সাত ভাই-এর মধ্যে সুলতান জুইকে নিযুক্ত করলেন তার বিশাল গো-মহিষবাথানের রাখাল হিসেবে।

    একদিন জুই পাহাড়ের পাদদেশের সবুজ ঘাসের মাঠে গরু মহিষগুলোকে ছেড়ে দিয়ে উপলখণ্ডের উপর বসে মনের আনন্দে বাঁশী বাজিয়ে চলছিলো, এমন সময় এক দরবেশ এসে দাঁড়ালেন ওর সামনে।

    —খোদা মেহেরবান, বেটা, আমি বড় ক্ষুধার্ত, আমাকে একটু দুধ খাওয়াও তুমি। শাহজাদা জুই বললো, আপনি আমাকে মুশকিলে ফেললেন পীরসাহেব। এই মাত্র এদের দোহন করে সমস্ত দুধ আমি প্রাসাদে পাঠিয়ে দিলাম। এখন আর দুধ পাওয়া যাবে না।

    দরবেশ বললো, কিন্তু আমি যে বড় আশা করে এসেছি, তোমার গরুর দুগ্ধ পান করে ক্ষুধার নিবৃত্তি করবো। তুমি আর একবার দুয়ে দেখ, হয়তো কিছু মিলতে পারে।

    জুই বললো, আপনি মুসাফীর, আপনি অতিথি, আপনাকে তুষ্ট করতে পারলে আমি ধন্য হবো। আপনি আদেশ করছেন অবশ্যই, আমি দোহন করে দুগ্ধ সংগ্রহের চেষ্টা করছি। জানি না কতটুকু কী পাব।

    একটা সুন্দর গাভীকে ডেকে তার দুধ দুইতে লাগলো শাহজাদা জুই। কী আশ্চর্য, বাঁট ধরে দু’চারটে টান দিতেই দুধে-ফেনায় পাত্র পূর্ণ হয়ে উঠলো।

    জুই অবাক হয়ে তাকালো ফকিরের দিকে। এ তো সাধারণ সাধু নন। নিশ্চয়ই কোনও পীর পয়গম্বর হবেন।

    দুধের ভাড়টি বাড়িয়ে ধরলো জুই। আর হাত পেতে নিয়ে এক চুমুকে নিঃশেষ করে দিলো সে। তারপর ঢেকুর তুলে বললো, তোমার এ আতিথেয়তা বিফলে যাবে না, বেটা। যে দুধ তুমি আমাকে খাওয়ালে তা অমৃত। এই অমৃত দানের সুফল পাবে তুমি।

    আজ আমি তোমার কাছে এক শুভ সন্দেশ বয়ে নিয়ে এসেছি। এক ভালোবাসার সংবাদ।

    শোনো বাবা, আমি দিব্যচক্ষুতে দেখতে পাচ্ছি, তার মতো তোমার হৃদয় ভালোবাসার জন্য কাঙাল হয়ে উঠেছে। মহব্বত জীবনকে মহৎকরে। তবে যোগ্য পাত্রের সঙ্গে যোগ্য পাত্রীর মিলন হওয়া দরকার। আমি সেই সন্ধানই দিতে এসেছি তোমাকে।

    এই মরুপ্রান্তরের ওপারে এক শস্য-শ্যামল দেশ আছে। সেখানকার সুলতান আকবরের কন্যা সুন্দরী বাদাম তার ফুলবাগিচায় বিহার করছিলো। আমি তাকে দেখে তার যোগ্য পাত্র অনুসন্ধানে বেরিয়েছি। তোমাকে দেখে, তোমার সঙ্গে কথা বলে আমি বিশেষ প্রীত এবং মুগ্ধ হয়েছি। একথা নিশ্চিত বুঝতে পেরেছি ঐ শাহজাদীই হাতে পারবে তোমার যোগ্য পত্নী। তার মতো রূপ-লাবণ্যবতী একালে বিরল। তোমার সঙ্গে যথার্থই মানাবে।

    এই সময় রাত্রি শেষ হয়ে আসছে দেখে শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

     

    নয়শো নিরানব্বইতম রজনী :

    আবার সে বলতে শুরু করে :

    আমি জানি, সে তোমারই পথ চেয়ে দিন গুনছে। আমি তোমার হৃদয়ে মহব্বতের বীজ অঙ্কুরিত করে গেলাম। এখন তুমি দেখ, কী করে তাকে লাভ করতে পার।

    এই বলে দরবেশ চলে গেলেন।

    শাহজাদা জুই সত্যি সত্যিই প্রিয়া-মিলন আশায় অধীর হয়ে উঠলো। মজুনু যেমন লাইলার জন্য আকুল হয়েছিলো একদিন, সেই রকম আকুল হলো তার দেহ মন প্রাণ।

    গো-মহিষ ফেলে রেখে সে মাতালের মতো ছুটে চলতে লাগলো।

    একদিন রাতে শাহজাদী প্রাসাদের ছাদে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ঘুমের ঘোরে সে স্বপ্ন দেখলো, একটি পরম রূপবান যুবক তার কাছে এসে অধরে চুম্বন এঁকে দিচ্ছে।

    হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যেতে সেই সুন্দর সুপুরুষ যুবক অদৃশ্য হয়ে গেলো। শাহজাদী আর্তনাদ করে কেঁদে উঠলো, কোথায় গেলো, কোথায় গেলো সে?

    সকাল না হওয়া পর্যন্ত সারা রাত ধরে সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলো। সুলতান এবং বেগম এ সংবাদ শুনে ছুটে এলেন কন্যার কাছে, আলুলায়িত চুলে শাহজাদী তখন অসংবৃত বেশ-বাসে শয্যায় বসে খাটের বাজুতে মাথা কুটছিলো।

    মা-বাবাকে দেখে সে ক্ষিপ্র হাতে নিজেকে সংবৃত করে নেয়। এক এক করে অনেকগুলো প্রশ্ন করলেন ওরা! সবগুলোর যথাযথ জবাব। দেয় সে। কখনও বা সোচ্চার হয়ে আবার কখনও বা ঘাড় নেড়ে।

    ওরা ভাবলেন, কন্যা দুঃস্বপ্ন দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তখুনি হকিম ডাকা হলো। কিন্তু তাতে উপকারের বদলে আরও খারাপ হয়ে পড়লো বাদামের অবস্থা। হকিম বললো, দেহে বদরক্ত জমা হয়েছে। ওটা বের করে দিতে হবে।

    হাতের শিরা কাটা হলো, কিন্তু কী আশ্চর্য, এক ফোঁটা রক্তও ঝরে পড়লো না হাত থেকে। হকিম হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে বললো, না, আশা নাই। এর দিনকয়েক পরে। হাসি গান হৈ-হল্লার মধ্যে ভুলিয়ে রাখার জন্য শাহজাদীর সখী, সহচরীরা সব সময় তাকে ঘিরে বসে থাকে।

    একদিন বিকালে ওরা শাহজাদী বাদামকে সঙ্গে করে বাগানের মধ্যে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলো। এমন সময় বাদামের দৃষ্টি পড়লো একটি যুবকের ওপর। হঠাৎ ওর বুকের মধ্যে ঘ্যাঁৎ করে উঠলো।

    যুবকটি কিন্তু একমনে সুমধুর তানে বাঁশী বাজাতে বাজাতে দৃষ্টির অগোচরে চলে গেলো।

    এরপর একদিন শাহজাদীর এক বশংবদ নফর এসে খবর দিলো, মালকিন, হাজারো থেকে এক পরম রূপবান রাখাল বালক এসেছে, এখানে। তার বাঁশী শুনে সবাই পাগল হয়ে উঠেছে। নফরের কথা শুনে শাহজাদীর মুখে হাসি ফোটে। জিজ্ঞেস করে কোথায় আছে রে সে?

    —আমাদের বাগানের এক পাশে ডেরা গেড়েছে।

    —তার নাম কী জানিস?

    —জানি মালকিন, শাহজাদা জুই!

    শাহজাদী একখানি প্রেমপত্র লিখে নফরের হাতে দিয়ে বললো, যা, ওকে দিয়ে জবাব নিয়ে আয়।

    শাহজাদা জুই প্রিয়ার পত্র পড়ে আনন্দে রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে। সেই রাতে যথানির্দিষ্ট সময়ে শাহজাদী বাদাম এসে দাঁড়ায় বাগানে। তার অনেক আগেই জুই বাগানে প্রবেশ করে এক গাছের ডালে আত্মগোপন করেছিলো।

    বাগানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বাদাম চকিত হরিণীর মতো এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে। এমন সময় জুই বৃক্ষশাখা থেকে নেমে পড়ে নিচে। ঠিক একেবারে শাহজাদীর সামনে।

    জুই ভাবলো, দরবেশ একটুও বাড়িয়ে বলেনি শাহজাদীর রূপের কথা।

    সেই রাত্রির অমল ধবল জ্যোৎস্নালোকে দু’জনে আরও কাছে সরে এলো। আরও কাছে। তারপর গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে হৃদয় দিয়ে হৃদয় অনুভব করতে থাকলো ওরা। চুম্বনে চুম্বনে সিক্ত হয়ে ওঠে অধর। দু’জনেরই অশান্ত অন্তরে দল মেলে বিকশিত হয়ে ওঠে দুটি রক্তগোলাপ।

    এই সময় রাত্রি প্রভাত হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

     

    এক সহস্রতম রজনী :

    আবার সে বলতে শুরু করে : পরদিনই শাহজাদী বাদাম বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি আর্জি পেশ করলো। বাবা কন্যাঅন্ত প্রাণ; তার কোনও বাসনাই অপূর্ণ রাখতে চান না তিনি।

    শাহজাদী বাদাম বললো, বাবা, প্রতিদিন বিকালে মাঠে বেড়াতে যাই আমি। সঙ্গে থাকে আমার সখী সহচরীরা। মুক্ত বাতাস আর তরুলতার শ্যাম শোভা দেখে আমার চিত্ত প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। এই কদিনে এরই মধ্যে দেখ বাবা, আমার শরীর কেমন বেশ তাজা হয়ে উঠেছে।

    একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি বাবা, মাঠে আমাদের যেসব গরু মহিষ চরে বেড়ায় সেগুলো বড়ই দুর্বল, রোগা পটকা। আমার মনে হয় রাখালরা একদম নজর দেয় না ওদের দিকে।

    খেতে পেয়ে ওদের ঐ দশা হয়েছে। আহা, অবোধ পশু ওরা, মুখে তো ভাষা নাই, তাই আপনার কাছে নালিশ জানাতে পারে না ওরা। মাঠে বেড়াতে বেড়াতে কাল একটি চমৎকার রাখাল ছেলেকে দেখেছি। ভেবেছি ওকে তোমার কাছে নিয়ে আসবো। তুমি তাকে সব ভার দিয়ে একবার পরখ করে দেখো, হয়তো সে আমাদের গরু মহিষগুলোকে আদর যত্ন করে পালন করতে পারবে।

    কন্যার এই অদ্ভুত প্রস্তাব শুনে সুলতান বিস্মিত হয়ে বলেন, এটা কী একটা আর্জি হলো তোমার! এই তুচ্ছ কথাটা বলতে তুমি সাত সকালে ছুটে এসেছ আমার কাছে। বেশ তো, তুমি যদি তাকে পছন্দ করে থাক, এক্ষুণি ধরে এনে রাখালের পদে বহাল করে দিচ্ছি।

    সেইদিনই সন্ধ্যাবেলায় শাহজাদী বাদাম জুইকে সঙ্গে করে বাবার কাছে এসে বললো, এই সেই রাখাল ছেলে বাবা। শুনেছি দারুণ চৌকস।

    সুলতান আকবর বিদ্যায় বুদ্ধিতে বিচক্ষণ ব্যক্তি। রাখাল বালকের অলোকসামান্য রূপ-লাবণ্য ও দেহ-সৌষ্ঠব দেখে তিনি বিস্মিত হলেন। এমন ছেলে রাখাল হলো কী করে?

    বাবাকে সন্দিহান হতে দেখে শাহজাদী বাদাম বললো, বুঝেছি বাবা, তোমার মনে সংশয় জেগেছে, এমন সুন্দর ছেলে সাধারণ রাখাল-পরিবারে জন্মালে কী করে? কিন্তু বাবা নিয়মের কী ব্যতিক্রম ঘটে না। সুলতান বাদশাহর ঘরে কী অসুন্দর সন্তানের জন্ম হয় না কখনও? তুমি ওর বাইরেটা দেখে বিচার করো না বাবা। ওকে কাজে বহাল করে দেখ, সে প্রমাণ করবে, রাখালের কাজে তার জুড়ি নাই।

    সুলতান আকবর কন্যাকে খুশী করার জন্যই এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্ন তুললেন না। হাত নেড়ে তিনি তার সম্মতি জানিয়ে দিলেন।

    এই সময় রাত্রি শেষ হলে এলো। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো। দুনিয়াজাদ উঠে এসে দিদির গলা জড়িয়ে ধরে বললো, কি সুন্দর তোমার গল্পগুলো দিদি, আর কি মিষ্টি করেই না বলো তুমি।

    এই তিন বছরে বালিকা দুনিয়াজাদের দেহে ভরা যৌবনের বান এসেছে। বোনকে আদর করে বুকে জড়িয়ে বলে, দুনিয়া, এখন তুই বড় হয়ে উঠেছিস। প্রাণে তোর বসন্ত জেগে উঠছে। এখন তো এই সব গল্পই তোর ভালো লাগবে। তবে এ আর এমন কী প্রেম-কাহিনী! কাল রাতে মহব্বতের এমন কিসসা শোনাবো, দেখবি বুকে তুফান উঠবে। অবশ্যই সবই নির্ভর করছে মেহেরবান জাঁহাপনার মর্জির ওপর। তিনি যদি সদয় থাকেন তবেই প্রাণে বাঁচবো, না হলে আজকের রাতই শেষ রাত হয়ে যাবে।

    শাহরাজাদের কথার প্রতিবাদ করে সুলতান শাহরিয়ার আর্তনাদ করে ওঠে, আঃ কী হচ্ছে, শাহরাজাদ। আমি কি এখনও আগের মত অশান্ত উন্মত্ত আছি নাকি? এই দীর্ঘ তিন বছর ধরে তোমার কাছে নানা ভিন্ন স্বাদের কাহিনী শুনে একদিকে যেমন অনাবিল আনন্দ পেয়েছি, অন্যদিকে তেমন আমার জ্ঞানভাণ্ডার পূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখন বেশ বুঝতে পারি শাহরাজাদ, ক্রোধ মানুষকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দেয়। ষড়রিপুর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক এই ক্রোধ। তোমার যাদুস্পর্শে আমি আজ ক্রোধ পরিহার করতে শিখেছি। আমার হৃদয়ে প্রশান্তির পদ্ম ফুটিয়েছ তুমি।

    তুমি যদি ইচ্ছা কর, আজই অথবা কালই তোমার কাহিনীর শেষ করতে পার, শাহরাজাদ। আমার চিত্তে আর কোনও ক্ষোভ জ্বালা নাই। তবে জুই আর বাদাম-এর কিসসার শেষটুকু অবশ্যই শুনতে সাধ হচ্ছে। আজ না হোক, কাল শুনিয়ে দিও, কী বলে?

    শাহরাজাদ বলে, জাঁহাপনার যা অভিরুচি।

    এরপর সুলতান শাহরিয়ার শাহরাজাদকে বুকের মধ্যে টেনে নেন। যুবতী দুনিয়াজাদ লজ্জায় মুখ ঢেকে পাশ ফিরে শোয়।

    পরদিন যথাসময়ে দরবারে আসেন সুলতান। প্রতিদিনের মতো সেদিনও উজির-কন্যার মৃতদেহ সৎকারের জন্য শবাচ্ছাদন সঙ্গে করে এনেছে। প্রতিদিনই সে শঙ্কিত হয়ে দরবারে প্রবেশ করে। আজ হয়তো তার কন্যার মুণ্ডচ্ছেদের সংবাদ ঘোষণা করবেন সুলতান। কিন্তু না, আজ তিন বছরের মধ্যে তার সে আশঙ্কা—আশঙ্কাই থেকে গেছে। কার্যতঃ কিছু ঘটেনি।

    সেদিনও উজিরের হাতে কফিনের কাপড় দেখে সুলতান শাহরিয়ার বললেন, কাল থেকে ওটা আর আনবেন না। আর দরকার হবে না।

    এরপর দরবারের অন্য কাজে মন দিলেন তিনি। দিন শেষে সন্ধ্যে হতে না হতে সুলতান হারেমে চলে আসেন। তারপর শাহরাজাদের সঙ্গে তাঁর প্রাত্যহিক খানাপিনা রতিরঙ্গ-আদি সমাধা করে শয্যার এক পাশে বসে বলেন, এবার শেষটুকু শুনিয়ে দাও শাহরাজাদ। আজ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বো আমরা।

     

    এক সহস্র একতম রজনী :

    আবার শাহরাজাদ বলতে শুরু করে :

    এরপর শাহজাদা বাইরের জীবনে সুবোধ রাখাল ছেলে এবং রাতের অন্ধকারে অতি সঙ্গোপনে শাহজাদী বাদামের বক্ষলগ্ন হয়ে এক দুর্দান্ত দামাল ছেলের মতো দিন কাটাতে থাকে।

    দিনের বেলায় গরু মহিষগুলোকে সে মাঠে মাঠে ছড়িয়ে তাড়িয়ে দেয়, কিন্তু সন্ধ্যের আগেই বাঁশী বাজিয়ে ডেকে এনে আবার তাদের খোয়াড়ে ভরে ফেলে। তারপর শুরু হয় তার অভিসার।

    বাগানে ঢুকে গাছের ডালে লুকিয়ে শাহজাদীর প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে। যথাসময়ে বাদাম এসে উপস্থিত হয়। তারপর সারারাত ধরে চলে ওদের মান অভিমান, রাগ অনুরাগ এবং পরিশেষে রতিরঙ্গের রমণীয় পালা। এইভাবে ওরা জীবনকেরূপেরসে প্রেমে আনন্দে পরিপূর্ণ করে তোলে।

    কিন্তু এই নিষিদ্ধ প্রেমপর্ব গোপনে গোপনে আর কতকাল চালানো সম্ভব? একদিন ওদের এই নৈশ মিলনের দৃশ্য দেখে ফেলেছিলো সুলতানের এক দূর সম্পর্কের ভাই। লোকটি তার নিজের ছেলের জন্য শাহজাদীর শাদী দেবার জন্য সারাক্ষণ সুলতানের পাশে পাশে ঘুরঘুর করতো। কিন্তু পাত্র হিসাবে তার ভ্রাতুস্পুত্রের কোন যোগ্যতাই ছিলো না। তাই সুলতান তাকে বড় একটা আমল দিতেন না।

    মওকা পেয়ে সুলতানের কাছে গিয়ে লোকটা শাহজাদী বাদামের নৈশ বিহারের কাহিনী বেশ ফলাও করে তুলে ধরলো। সুলতান ক্রোধে আরক্ত হয়ে উঠলেন। বাদামকে তিনি ডেকে পাঠালেন তখুনি। শাহজাদী অধোবদনে এসে পড়লো বাবার সামনে।

    ছিঃ ছিঃ ছিঃ, কী লজ্জার কথা! তুমি বাদশাহর ঘরে জন্মেছ, একি নোংরা আচরণ তোমার! আমি স্নেহে অন্ধ হয়ে তোমাকে অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা দিয়েছিলাম। এখন দেখছি মহা ভুল করেছি। পয়গম্বর মহম্মদ তার উপদেশ বাণীতে এক জায়গায় বলেছেন, আমার অনুরক্তরা শোনো, সংসারে বেগম, বাঁদী এবং কন্যারাই তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। তাদের কোনও বিবেক বা বিচারবুদ্ধি বলে কিছু থাকে না। ওরা জন্মগতভাবেই পঙ্গু। তোমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য, তাদের কড়াভাবে কয়েদ করে রাখা। দড়ি ছাড়া পেলেই তারা অপকর্ম করে বসবে। কঠিন হাতে শাসন করবে তাদের। অবাধ্য হলে প্রহার দিয়ে ঠাণ্ডা করবে।

    এখন তুমি আমাকে বলো বাদাম, এ অবস্থায় তোমাকে কী প্রহার করবো? তুমি একটা অচেনা অপরিচিত নাম-গোত্রহীন রাখাল ছেলের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছ। এমন জঘন্য কাজে নামতে তোমার একটু আত্মমর্যাদায় বাধলো না? ছিঃ ছিঃ ছিঃ! আমার ইচ্ছে হচ্ছে এই তলোয়ারের এক কোপে তোমার মুণ্ডুটা কেটে নামিয়ে দিই। অথবা তোমাদের দু’জনকে জ্বলন্ত চিতায় তুলে জীবন্ত দগ্ধ করে মারি।

    শাহজাদী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলো। কন্যাপ্রাণ সুলতান বললেন, থাক থাক, আর চোখের পানি ফেলে আমাকে কাবু করতে হবে না। ঢের হয়েছে, এবার হারেমে চলে যাও। আমার হুকুম ছাড়া আজ থেকে আর তুমি বাইরে বেরুতে পারবে না। তারপর ঐ রাখাল ছোঁড়াটাকে কী ভাবে বাঘ-ভালুক দিয়ে খাওয়াতে হয় তার ব্যবস্থা আমি করছি।

    সুলতান তার পুত্রদের ডেকে বললেন, ঐ রাখাল ছেলেটাকে পাহাড়ের ওধারের গভীর জঙ্গলে রেখে আসতে হবে। ওই বনে এমন হিংস্র জানোয়ার আছে যে, এক রাতেই ওকে সাবাড় করে দেবে।

    ঐ বনের ত্রিসীমানার কাছে যায় না কেউ। শোনা যায় মাঝে মাঝে ঐ জঙ্গল থেকে বাঘ-সিংহরা বাইরের মাঠ থেকে আস্ত আস্ত গরু মোষ ধরে নিয়ে যায়।

    শাহজাদা জুইকে সুলতানের সশস্ত্র প্রহরীরা ঐ গভীর অরণ্যের ঠিক মাঝখানে ছেড়ে দিয়ে চলে এলো।

    রাত বাড়ছিলো। চাদের আলোয় ঝলমল করছিলো সমগ্র বনাঞ্চল। একটা গাছের গুড়ির ওপর বসে আপন মনে বাঁশী বাজাতে থাকে জুই। এক এক করে বনের জন্তু জানোয়াররা জড়ো হতে লাগলো জুই-এর আশেপাশে। বাঁশীর সুরে ওরা সকলে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। জুই ওদের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর জানাতে থাকলো।

    এইভাবে রাত্রি শেষ হয়ে গেলো। একটি বাঘ-সিংহও তাকে আক্রমণ করলো না। বরং সকালে তখন সে তাদের বিদায় জানিয়ে বন থেকে বাইরে চলে এলো। দুটি সিংহশাবক তার সঙ্গ ছাড়লো না কিছুতেই।

    রাখাল ছেলেকে সশরীরে ফিরে আসতে দেখে সুলতান তো থ। এমন অসম্ভব কাণ্ড সে। ঘটালো কী করে!

    জুই সুলতানকে কুর্নিশ করে সিংহশাবক দুটি উপহার দিলো। এরপর সুলতান আর কী করেন, খুশী হয়ে তিনি তাঁর প্রাণদণ্ড মকুব করে দিলেন।

    সুলতানের পুত্ররা কিন্তু পিতার এই আচরণে আদৌ সন্তুষ্ট হতে পারলো না। তারা ঠিক করলো, সেইদিন সন্ধ্যাকালেই শাহজাদী বাদামের শাদী দিয়ে দেবে তারা। কিন্তু পাত্র কোথায়? এমন সময় সেই চাচাটা এসে বললো, কেন, আমার ছেলেই তো আছে। তার সঙ্গেই শাদী দিয়ে দাও।

    সেই রকমই ব্যবস্থা হতে লাগলো। সারা প্রাসাদে উৎসবের আনন্দের বন্যা বয়ে যেতে লাগলো।

    কিন্তু যথাসময়ে পাত্রীকে আর হারেমে খুঁজে পাওয়া গেলো না। পাওয়া গেলো না সেই রাখাল ছেলেকেও।

    সঙ্গে সঙ্গে সারা শহরে সারা দেশে গুপ্তচর সৈন্য পাঠানো হলো। তন্নতন্ন করে অনুসন্ধান করলো তারা সারা মুলুক। কিন্তু কোনই হদিশ করা গেলো না তাদের।

    তারপর কতকাল কেটে গেলো, শাহজাদী বাদাম আর ফিরে এলো না তার বাবার প্রাসাদে।

    ধরণীর এক কোণে কোথায় যে গিয়ে ওরা সুখের নীড় রচনা করেছিলো কেউ জানতে পারেনি কোনও দিন।

    শাহরাজাদ বললো, এই হচ্ছে শাহজাদা জুই আর শাহজাদী বাদামের অবিস্মরণীয় প্রেম-উপাখ্যান। যেমনটি আমি শুনেছিলাম ঠিক তেমনি ভাবেই শোনালাম আপনাকে। জুই আর বাদাম নিরুদ্দেশ হয়ে কোথায় চলে গিয়েছিলো কেউ তা বলতে পারেনি। তারা যেখানেই যাক আল্লাহ তাদের সুখে সম্ভোগে রেখেছিলেন এটাই আমরা আশা করবো।

    এরপর শাহরাজাদ থামলো।

    সুলতান শাহরিয়ার উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, গল্পটা কিন্তু বড়ই চমৎকার! এমন প্রেমের প্রতিমূর্তি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মৃতির পটে চিরদিনই ভাস্বর হয়ে থাকবে।

    শাহরাজাদ, তুমি আমাকে শুধু গল্পই শোনাওনি এতদিন ধরে। তোমার কাছ থেকে অনেক শিক্ষাই আমি লাভ করেছি। তুমি আমাকে অনেক অজানা তথ্যের সন্ধান দিয়েছ। আমার কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনে জ্ঞানের চিরাগ বাতি জ্বেলে দিয়েছ।

    এক এক করে এক সহস্র একটি রজনী অতিক্রান্ত হয়ে গেছে তোমার পবিত্র সাহচর্য্যে। আমার সন্দিগ্ধ কলুষিত চিত্ত পূত-পবিত্র করে তুলেছ তুমি। দু’চার কথায় তোমার মহিমা প্রকাশ করবো কী করে?

    আজ আমি সকল কলুষমুক্ত আনন্দের ঝর্নাধারা হয়ে উঠেছি। এজন্য একমাত্র তুমিই দায়ী।

    দুনিয়াজাদ উঠে এসে বড় বোনকে জড়িয়ে ধরে বলে, সত্যিই দিদি, তুমি অসাধ্য সাধন করেছ। তোমার বিদ্যা বুদ্ধি বিচক্ষণতার তুলনা মেলে না। কী সুন্দর সুন্দর সব কিসসা তুমি আমাদের শুনিয়েছ। আর সেগুলো তোমার মুখে মধু হয়ে ঝরেছে। আমরা অমৃত সুধা পান করেছি তোমার গল্পকথা শুনে।

    শাহরাজাদ অনুজার কানে কানে কি যেন ফিস ফিস করে বললো। দুনিয়া উঠে পাশের ঘরে চলে গেলো। এবং প্রায় তক্ষুণি ধাই দুটি যমজ শিশু পুত্রকে কোলে কাখে নিয়ে প্রবেশ করলো! তার পিছনে পিছনে আর একটি ফুটফুটে ছেলেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে হাঁটতে হাঁটাতে নিয়ে এলো দুনিয়াজাদ।

    শাহরাজাদ তার তিন পুত্রকে আদর চুম্বন করে সুলতান শাহরিয়ারের দিকে এগিয়ে দিলো। শাহরাজাদ সানয়নে সুলতানকে সম্বোধন করে বলতে থাকলো, জাঁহাপনা এদের একটু আদর সোহাগ করুন। এরা আপনার ঔরসের সন্তান। এই বড়টিকে দেখছেন, এর বয়স দু’বছর। আর এই জমজ দুটির শিল্পিরই এক সাল পূর্ণ হবে। আল্লাহর দোয়ায় ওরা সুস্থ সবলই আছে এখনও। আপনার স্মরণ থাকতে পারে জাঁহাপনা, ছয়শো ঊনআশীতম রজনী থেকে সাতশোতম রজনী পর্যন্ত আমি আপনাকে কোনও গল্প শোনাতে পারনি। ঐ সময় আমি এই জমজ শ্রীমানদের জন্মদানের জন্য সুতিকাগারে ছিলাম। বড় ছেলের চেয়ে এরাই আমাকে বেশি পীড়া দিয়েছিলো। বড়টির সময় আমি মাত্র কয়েকটি রজনী গল্প শোনাতে পারিনি। কিন্তু এই যমজ প্রসবের ধকল সহ্য করতে আমার বেশ কিছুটা সময় লেগেছিলো। এছাড়া ছোট খাটো অসুখে বিসুখে আরও কিছু রজনী আপনার কাছে উপস্থিত থাকতে পারিনি আমি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটা ঠিক, প্রায় একটানা তিনটি বছর আপনাকে গল্প শোনাতে পেরেছি। জানি না, সে সব গল্পের কতটা আপনার মনে দাগ কাটতে পেরেছে। যদি কোনও কাহিনী ভালো না লেগে থাকে তবে সে দোষ গল্পের নয়, আমার। হয়তো বলার অক্ষমতাতেই ভালো লাগাতে পারিনি। আর যদি কোনও গল্প আপনার হৃদয়ে কিছুমাত্র দাগ কেটে থাকে তার পুরস্কার আমার প্রাপ্য নয়। সে সব কাহিনী যাঁরা রচনা করে গেছেন, সে ইনাম ভোলা থাক তাদের জন্য।

    শাহরাজাদ থামলো।

    দুনিয়াজাদ শিশু তিনটিকে চুম্বনে চুম্বনে ভরে দিতে থাকলো। আড়চোখে সুলতান শাহরিয়ারের দিকে তাকিয়ে বাক্যবাণ ছুঁড়লো, তা হলে জাঁহাপনা, এবার তো আমার দিদির মুণ্ডুচ্ছেদ করবেন আপনি? এই যে ফুলের মতো আপনার তিনটি শিশু, এদের মাকে তো হত্যা করবেন আজ? এই অবোধ শিশু শাহজাদাদের মাতৃহারা করবেন না জাঁহাপনা?

    সুলতান শাহরিয়ার দুনিয়াজাদের বিদ্রুপ-বাণে জর্জরিত হয়ে আর্তনাদ করে ওঠেন, ঢের হয়েছে দুনিয়া, এবার ক্ষান্তি দেবে? আমি তো আমার ভুল স্বীকার করেছি, তবুও কেন এতো যাতনা দিচ্ছ?

    তারপর শাহরাজাদের দিকে তাকিয়ে বললো, এরা তোমার কোলে আসার অনেক আগে থেকেই তুমি আমার হৃদয়ে পাকাপাকিভাবে আসন পেতে নিতে পেরেছ শাহরাজাদ। ভেব না, এই শিশুপুত্রদের মুখ চেয়ে আমার মন কোমল হয়েছে।

    ওরা আমার পরম আদরের সন্দেহ নাই, কিন্তু তুমি ওদের অধিক।

    তোমাকে পেয়ে আজ আমি পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছি, শাহরাজাদ।

    তোমার অদর্শন আমি আর সইতে পারবো না। আমি যতদিন বাঁচবো, তুমি আমার জীবনে ধ্রুবতারার মতো জ্বলবে চিরদিন। আমি তোমাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছি, তার কারণ তোমার মত নম্র বিনয়ী বিদুষী বিচক্ষণ সত্যাশ্রয়ী পবিত্র মধুরভাষিণী সচ্চিদানন্দা জ্ঞানী রসবতী নারী আমি এর আগে কখনও পাইনি আমার জীবনে। আল্লাহ তোমার মঙ্গল করবেন প্রিয়তমা। তোমার মাতা পিতা ভগ্নী এবং তোমাদের পরিবারের সকলকে তিনি সুখে শান্তিতে রক্ষা করুন, এই প্রার্থনা জানাই। শাহরাজাদ এক সহস্র একটি বিনিদ্র রজনী আমরা অতিবাহিত করেছি। কিন্তু সে রাত্রিগুলো প্রকাশ্য দিবালোকের চেয়ে আর আলোময় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে আমাসের জীবনে।

    সুলতান শাহরিয়ার আসন ত্যাগ করে উঠে দাঁড়িয়ে সস্নেহে শাহরাজাদের মাথাটা টেনে নিলেন বুকের মধ্যে। শাহরাজাদ সুলতানের একখানো হাত অধরে ঠেকিয়ে মিনতি জানিয়ে বললো, জাঁহাপনা আজকের এই আনন্দের মুহূর্তে আপনার দুঃখকাতর বৃদ্ধ উজিরকে এ খবর শুনালে তিনি আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবেন।

    সুলতানের ইশারায় প্রহরী তক্ষুণি উজিরকে সঙ্গে করে নিয়ে এলো সেখানে। তখনও তার হাতে ধরা একখানা কফিন। সারা দিনরাত সে ঐ কফিনখানা বয়ে বেড়াতো।

    সুলতান উজিরকে আলিঙ্গন করে বললেন, আপনার কন্যাকে আমি আমার হারেমে শুধু নয় হৃদয়-আসনে বসিয়েছি চিরদিনের মতো। আপনি আর মনে কোনও সংশয় দ্বিধা রাখবেন না, আপনার কন্যা আমার কাছে সুখেই থাকবে চিরকাল।

    বৃদ্ধ উজির আনন্দে অধীর হয়ে চৈতন্য হারিয়ে ফেললো। দুনিয়াজাদ গোলাপজল এনে বাবার চোখে মুখে ঝাপটা দিতে থাকলো।

    একটু পরে জ্ঞান ফিরে পেলো উজির। ক্ষীণ কণ্ঠে বলতে পারলো, আজ তিনটি বছর ধরে আমি চোখের দু’পাতা এক করতে পারিনি, মা। প্রতিটি রাত্রি আমার সামনে দারুণ এক বিভীষিকার রূপ ধরে এসে দাঁড়িয়েছে।

    সুলতান শাহরিয়ার কনিষ্ঠ ভ্রাতা শাহজামানকে সংবাদ পাঠালেন। সে সমরখন্দের অল আজমের সুলতান। কয়েকদিনের মধ্যেই সে এসে উপস্থিত হলো বড় ভাই-এর কাছে।

    সারা শহর আনন্দে মুখর হয়ে উঠলো। আতর ধুপের গন্ধে মেতে উঠলো আকাশ বাতাস।

    খানাপিনার মহোৎসবে সুলতান শাহরিয়ার শাহজামানকে শাহরাজাদের অসাধারণ গুণকীর্তন করতে লাগলেন। প্রায় তিন বছর গল্প শুনিয়ে কীভাবে সে তার চণ্ডভাব বিতাড়িত করে আদর্শ মানুষ করে তুলতে পেরেছে সে সব কথা বলতে বলতে সুলতান গদগদ হয়ে উঠলেন।

    —সে এখন আমার নিত্যসঙ্গী, আমার বেগম, আমার সন্তানের জননী।

    এরপর সুলতান শাহরিয়ারের অনুরোধে শাহজামান দুনিয়াজাদকে শাদী করে বেগমের মর্যাদা দিলো।

    শাহরাজাদ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলতে থাকলো, জন্মাবধি দুনিয়া আমার কাছ ছাড়া হয়নি কখনও! আজ ও অন্য দেশে চলে যাবে, এ বিরহ আমার পক্ষে সহ্য করা শক্ত হবে জাঁহাপনা।

    শাহজামান বললো, আমি বড় ভাই-এর কাছেই বাকী জীবনটা কাটাতে ইচ্ছা করি, কিন্তু কি করবো, সমরখন্দের মসনদ রক্ষা করতে হবে তো? যাই হোক, কথা দিচ্ছি, দুনিয়া বেশির ভাগ সময় এখানে থাকবে। আমিও থাকবো এখানে এসে।

    সুলতান শাহরিয়ার কলমচীদের ডেকে শাহরাজাদের কাহিনীগুলো সোনার জলে লিপিবদ্ধ করতে নির্দেশ দিলেন।

    এরপর তিরিশটি খণ্ডে লেখা হয়েছিলো সে গ্রন্থ। তার নাম দেওয়া হয়েছিলো আলিফ লায়লা। [আমরা বাংলায় একেই সহস্র এক আরব্য রজনী নাম দিয়েছি।] আজও সে গ্রন্থ পৃথিবীর এক মহান্ সাহিত্য-সম্পদ হয়ে আছে।

    ⤶
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142 143 144 145 146 147 148 149 150 151 152 153 154 155 156 157 158 159 160
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকবীর – ১ – ক্ষিতিমোহন সেন
    Next Article প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা – ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : জয়ন্ত সিং)

    October 27, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : জয়ন্ত সিং)

    October 27, 2025
    Our Picks

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : জয়ন্ত সিং)

    October 27, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    October 27, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }