Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সহস্র এক আরব্য রজনী

    ক্ষিতিশ সরকার এক পাতা গল্প3728 Mins Read0

    ১.১৭ মেজো বোন আমিনার কাহিনী

    মেজো বোন আমিনার কাহিনী

    আমিনা বলতে শুরু করে।—জাঁহাপনা পরম পুণ্যাত্মা, আল্লাহ। আপনার সহায়।

    আমার দিদি আপনাকে বলেছে, বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা কে কোথায় গেলাম। আমি আর এখানে তার পুনরাবৃত্তি করবো না।

    আমি আমার মার কাছে গিয়ে বাস করতে লগলাম। কিছুদিন পরে এক থুরথুরো বুড়ো সওদাগরের সঙ্গে আমার শাদী দিয়ে দিলো। লোকটার অনেক টাকা পয়সা ছিলো। কিন্তু শরীরে কোন সামর্থ্য ছিলো না। তবে লোভ ছিলো অনেক। বছর ঘুরলো না, দেহ রক্ষা করলো সে। তার বিশাল সম্পত্তির অনেকখানির মালিক হলাম আমি। নগদ পেলাম আশী হাজার সোনার মোহর। শাড়ী গহনা কেনার ধুম পড়ে গেলে আমার। হাজার মোহর দামের দশটা সেট দামি পোশাক বানালাম। হীরা চুনী পান্না বসানো জড়োয়া গহনা গড়ালাম। এবং আরও অনেক দামি দামি সামানপত্র কিনে সব পয়সা উড়িয়ে দিলাম দুদিনে।

    একদিন এক খুনখুনে বুড়ি এলো আমার কাছে। আগে কখনও দেখিনি তাকে। দেখতে কদাকার কুৎসিত। মুখটা একটা কুমড়োর মতো। চোখ দুটো হোদল কুৎকুৎ। নাকটা থ্যাবড়া। একান ওকান পর্যন্ত বিস্তৃত মুখের হা। দাঁতগুলো মিশমিশে কালো ভাঙাভাঙা। নাকের উপরে একটা মস্ত আব। গলাটা মুরগীর গলার মতো সরু আর লম্বা।

    আমাকে সালাম জানিয়ে বুড়িটা বললো, একটা অনাথ মেয়েকে লালন-পালন করেছি আমি। আজ রাতে তার শাদী দিচ্ছি। কিন্তু মা, বড় গরীব আমি। পয়সা কডি কিছু নাই। মাথার ওপর ভরসা করার মতো লোকজনও কেউ নাই আমার। তোমার গুণের কথা অনেক শুনেছি লোকের কাছে। পরের দুঃখে তোমার প্রাণ কঁদে, আমি জানি। আমার আর কিছু বলার নাই মা! তোমার যা প্ৰাণ চায় আমাকে দিও। আমি খুশি হয়ে তাই মাথা পেতে নেবো। কিন্তু একটা কথা, মা, তোমাকে নিজে একবার যেতে হবে আমার গরীবখানায়। তোমার পায়ের ধুলো পেলে আমার মেয়ের কল্যাণ হবে। তবে এখন তোমাকে যেতে বলছি না। যখন রাতের বেলায় শাদী হবে। আমি তোমাকে নিতে আসবো—সন্ধ্যাবেলা। নিয়ে যাবো, আবার পৌঁছে দিয়ে যাবো তোমার দৌলতখানায়।

    বুড়ির কথা মধুঢ়ালা। কী করে বুঝবো ভিতরে তার এতো বিষ! ঘাড় নেড়ে বললাম, ঠিক আছে আমি তৈরি হয়ে থাকবো। সন্ধ্যাবেলায় এসো তুমি, যাবো।

    বিকেলে হাতমুখ ধুয়ে সাজগোজ করলাম। আমার সবচেয়ে দামি সাজপোশাক পারলাম। জড়োয়ার গহনাগুলো পরে সুন্দর করে সাজালাম নিজেকে। গলায় পারলাম সাতনরী হার। হাতে বাজু, বাহুতে তাগা মাথায় টায়রা কোমরে বিছে নাকে নাকছবি কানে মাকড়ী পায়ে মল পরে বেহেস্তের পরীর মতো। নাও, আর দেরি করো না, চলো। পাত্রের লোকজন এসে ভরে গেছে বাড়ি। সবাই তোমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছে। তুমি না পৌঁছলে তো শাদীর কাজ শুরু হবে না।

    একটা নোকরকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমরা। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ভিস্তিওলা রাস্তায় জল দিয়ে গেছে। মৃদুমন্দ সন্ধ্যাসমীরণ বইছে। কিছুক্ষণ চলার পর একটা বাড়ির দরজায় এসে পৌঁছলাম আমরা। প্রকাণ্ড প্রাসাদতুল্য সে বাড়ি। বৃদ্ধ কড়া নাড়লো। দরজা খুলে যেতেই ভিতরে ঢুকলাম আমরা। শাহী কায়দায় সাজানো হয়েছে গোটা বাড়িটা। বড় বড় ঝাড় লণ্ঠন ঝুলছে কডিবর্গ থেকে। সবুজ রঙের বাতি জুলছে। চারদিকের দেওয়ালে সাজানো সব সমরাস্ত্ব। ঢাল তলোয়ার বর্শ| তীর ধনুক। মূল্যবান পর্দা ঝুলছে দরজায়। বারান্দা দিয়ে এগিয়ে গিয়ে ঢুকলাম বিশাল এক কক্ষে। সে ঘরের মনোহর রূপ আমি ভাষায় বর্ণনা করতে পারবো না। মন ভোলানো চোখ জুড়ানো অবাক হওয়ার মতো জিনিসপত্রে সুন্দর করে সাজানো সারা ঘরটা। পারস্য গালিচায় মোড়া মেজে। এক পাশে বহু কারুকার্যকরা এক পলতে মখমলের গদীর বিছানায় শুয়ে ছিলো এক যুবতী। কী অপরূপ তার রূপ লাবণ্য। যেন মনে হয় আসমানের চাঁদ নেমে এসেছে। দেখে উঠে বসলে সে।

    —এসো ভাই, এসো। কী আমাদের সৌভাগ্য, তোমার পায়ের ধুলো পড়লো। কী বলে যে কৃতজ্ঞতা জানাবো, ভেবে পাচ্ছি না।

    নেমে এসে আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসালো।

    –একটা কথা বলার জন্যে মন আমার ছটফট করছে বোন। আমার এক ভাই আছে। দেখতে সুপুরুষ। সুন্দর চেহারা। আমার চেয়ে ঢের ঢের বেশী সুন্দর সে। পয়সা কডিও যথেষ্ট আছে। একটা শাদীর আসরে তোমাকে দেখেছে সে। তোমার রূপে পাগল হয়ে উঠেছে সেই থেকে। সেই কিছু পয়সা দিয়ে বুড়িকে পাঠিয়েছিলো তোমার কাছে। বুড়িটা অন্য একটা ফন্দী করে তোমাকে নিয়ে এসেছে এখানে। অবশ্য, সেটা এমন আর কি দোষের? খারাপ কোন উদ্দেশ্য তো নাই এর পিছনে। সে তোমাকে সসম্মানে শাদী করে জীবন-সঙ্গিনী করতে চায়। এই তার অপরাধ। তা সে পাত্র হিসেবে আমার তো মনে হয় তোমার অযোগ্য হবে না। না হয়, একবার নিজের চোখে দেখেই পছন্দ অপছন্দ জানিয়ে দাও।

    আমি বললাম, ঠিক আছে আমার অমত নাই।

    সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে আনন্দে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো মেয়েটি। হাতে তুডি বাজাতেই সামনের একটা দরজা খুলে গেলো। এক সুদৰ্শন যুবক এসে দাঁড়ালো আমাদের সামনে। তার বোন কাছে টেনে নিয়ে বসালো একপাশে।

    আমি মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকি। এতে রূপ পুরুষ মানুষের হয় নাকি। যেটুকু দ্বিধাদ্বন্দ্র ছিলো মনোনিমেষে মুছে গেলো। একটু পরেই ঘরে ঢুকলো মৌলভী আর চারজন সাক্ষী। একটা কাগজে শাদীর কবুলনামা লেখা ছিলো। পড়ে শোনালো মৌলভী। আমার সম্মতি নিয়ে ঐ চারজন সাক্ষী সই করলো কবুল নামায়। এর পর সবাই চলে গেলো। শুধু রইলাম আমি আমার নতুন স্বামী আর তার বোন। ‘

    সামনের টেবিলে রাখা ছিলো একখানা পবিত্র কোরান। সেখানা তুলে আমার হাতে দিয়ে সে বললো, সুন্দরী এই পবিত্র কোরান ছুঁয়ে তুমি হলফ করো, আমাকে ছাড়া অন্য কোন পুরুষে আসক্ত হবে না। কখনও।

    কোরানখানা হাতে নিলাম। অকম্পিত কণ্ঠে উচ্চারণ করলাম। আজ থেকে তুমি আমার স্বামী, তোমাকে ছাড়া অন্য কোন পুরুষে আসক্ত হবো না কখনও।’

    আমাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলে সে। তার উষ্ণ আলিঙ্গনে নিজেকে নিঃশেষে সঁপে দিলাম তখুনি। বুকের স্পন্দন দ্রুততর হতে লাগলো। এক অনাস্বাদিত পুলকে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠলো আমার সারা দেহ-মন।

    বাবুর্চি খানা সাজালো। আমরা তিনজনে তৃপ্তি করে নানা ধরনের মুখোরোচক খানা খেলাম। দামি শ্যাম্পেন খেলাম একটু। গুলাবী নেশা ধরলো চোখে। রাত গম্ভীর হতে থাকে। আমার স্বামীর বোন আমাকে আদর করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।

    সেই রাত আমার পরম পাওয়ার প্রথম রাত। যদিও আগে আমার আর একবার শাদী হয়েছিলো, তবুও সেদিনের রাতটাই আমার কাছে এক উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে আছে। এর আগে যার সঙ্গে আমরা শাদী হয়েছিলো সে এক বিগত যৌবন বৃদ্ধমাত্র। আমার নারীত্বকে যেমন ভোগ করতে পারেনি তেমনি আমিও পাইনি। কোন পৌরুষ প্রসাদ। সেদিন রাতে আমার কুমারীত্বের বিসর্জন হলো। আর সেই বিসর্জন উৎসবের হলাহল মন্থন করে প্রাণভরে পান করলাম পরিপূর্ণ এক সুধাপাত্র। মুখে মুখ, বুকে বুক রেখে, হৃদয়ে হৃদয় মিলিয়ে, কখনও স্বর্গে কখনও পাতালে আরোহণ করে এক ছন্দময় সৃষ্টির আনন্দে উদ্দাম হয়ে কাটালাম সারাটা রাত। আমার নারী-জন্ম সার্থক হলো।

    একটা মাস কোথা দিয়ে কেটে গেলো, বুঝতে পারলাম না। সুখের দিনগুলো সব তাড়াতাডি ফুরিয়ে যায়। একদিন স্বামীকে বললাম, বাজারে যেতে হবে। কিছু জামাকাপড় কেনা দরকার।

    স্বামীর সম্মতি নিয়ে বুড়িকে সঙ্গে করে বাজার করতে বেরুলাম। একটা রেশমী কাপড়ের দোকানে এসে হরেক রকম বাহারী শাড়ি দেখে লোভ হলো। দোকানীকে বললাম, আপনার যা ভালো ভালো কাপড় আছে দেখান।

    দোকানী অনেক দামি দামি শাড়ি বের হলো। ইচ্ছে করে, সবগুলোই নেই। খানকতক পছন্দ করলাম। দোকানি বেঁধে ছেদে দিলো সেগুলো। আমি পয়সা বের করে দিলাম বুড়ির হাতে। কিন্তু দোকানি দাম নিতে চায় না। বললো, আজ প্রথম আপনি পায়ের ধুলো দিয়েছেন আমার দোকানো! আজ কোন দাম নেবো না। এগুলো আমার উপহার ধরে নিন।

    আমি রেগে গেলাম।-সে হয় না, আপনি যদি দাম না নেন। তবে ওগুলো রেখে চলে যাবো। দাম না দিয়ে নিতে পারবো না আমি।

    বুড়ি বলে, নাও না মা। উনি যখন ভালোবেসে দিতে চাইছেন, নিলে ক্ষতি কী? —ভালোবেসে? কিসের ভালোবাসা? না না, তুমি চলো এখান থেকে। দরকার নাই আমার শাড়ি।

    দোকানি হাত জোড় করে পথ রুখে দাঁড়ালো। সে কি? রাগ করে চলে যাবেন? এই সামান্য কটা শাড়ি, কতই বা এর দাম। এগুলো আপনাকে উপহার দিচ্ছি। মেহেরবানী করে নিয়ে আমাকে খুশি করুন। তার বদলে আপনার একটুখানি সঙ্গ দু’টো মিষ্টি কথা আর একটা ছোট্ট চুম্বন আমি প্রত্যাশা করছি আপনার কাছে।

    বুঝলাম, বদমাইশ বুড়িটার সঙ্গে দোকানির সাট আছে। শয়তানিটা ওর কাছ থেকে পয়সা খেয়ে আমাকে নিয়ে এসেছে এখানে। অতো সহজে নিস্তার পাওয়া যাবে না।

    বুড়িটা বললো, জানো মা, দোকানি মেলাই পয়সার মানুষ। তা না হলে সামান্য একটা চুমুর বদলে এতোগুলো দামি শাড়ি কাপড় দিয়ে দিতে চায়? আর তাছাড়া বয়সেও নওজোয়ান। দেখতে খুবসুরৎ। একটা সামান্য চুমু বইতো নয়। রাজি হয়ে যাও মা, রাজি হয়ে যাও। সবে তো আজ প্রথম দিন। যদি বরাতে থাকে, দেখো, সোনাদানা-হীরে জহরতে ভরে দেবে তোমাকে।

    –কিন্তু আমি যে আল্লাহর নামে হলফ করেছি আমার স্বামীর কাছে। অন্য কোন পুরুষে আসক্ত হবো না। আমার স্বামী জানতে পারলে আস্ত রাখবে না আমাকে।

    –কি করে জানবে বাছা, জানবো তো আমরা এই তিনজন। আর কোন কাকপক্ষীও টের পাবে না। নাও, রাজি হয়ে যাও। আর দেরি করো না।

    আমি দেখলাম নিরুপায়। বুড়ির কথাগুলো ক্রমশ অনুনয় বিনয়-এর ঢং ছাড়িয়ে অন্য সুরে বেজে উঠলো আমার কানে। এর পর না’ করা মানে জবরদস্তি ইজত খোয়ানো। অগত্যা রাজি হয়ে গেলাম। রাস্তার দিকে পিছন করে দাঁড়ালাম। যাতে আমার মুখ দেখতে না পায় কেউ। নাকাব দিয়ে মুখটা ঢেকে নিলাম। আমার বোেরখার তলা দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে দিলো লোকটা। আমার মুখের কাছে মাথাটা তুলে একটা গালে চুমু খেলো একবার। একটাই চুমু খাওয়ার কথা। তাই তার মাথাটা দু হাতে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তখন সে আমাকে জানোয়ারের থাবায় আঁকড়ে ধরেছে। গালটা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরেছে শক্ত করে। যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠি আমি। লোক জড়ো হয়ে যাবার ভয়ে কিংবা আমার প্রচণ্ড ধাক্কা সামলাতে না পেরে ছিটকে বেরিয়ে গেলো। সে কোরখা থেকে। আমিও অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়লাম।

    যখন জ্ঞান ফিরলো দেখি, দোকানের বাইরে রোয়াকে বুড়িটার কোলে শুয়ে আছি আমি। বঁ-গালটা কেটে রক্ত ঝরিছে। বুড়ির চোখে মুখে দারুণ ভয়ের ছাপ। দোকানি দোকান বন্ধ করে। পালিয়েছে। বুড়িটা বললো দুঃখ করো না মা। নসীবে যা লেখা ছিলো তাই ঘটেছে। এখন ঘরে ফিরে চলো। কিন্তু খুব সাবধান! বিমার-এর ভান করে বিছানায় পড়ে থাকবে। কাউকে দেখতে দেবে না বঁ-গালটা। আমি ভালো মলম এনে দেবো। দেখবে দুদিনেই দাগ মিলিয়ে যাবে।

    ক্ষিপ্র পায়ে হেঁটে চলে এলাম স্বামীর ঘরে। সটান গিয়ে শয্যা নিলাম। যে আসে বলি, তবিয়ৎ খারাপ। বুকের মধ্যে দুর দূর করতে লাগলো। সবাইকেই না হয় এড়ানো যাবে; কিন্তু স্বামী? তাকে এড়াবো কি করে। কি মিথ্যা দিয়ে ঢাকতে পারবো। এই কলঙ্ক?

    একটু পরে আমার স্বামী এলো। আমাকে শয্যাশায়ী দেখে উদ্বিগ্ন হলো খুব।

    —এই তো একটু আগেও বেশ বহাল তবিয়তে বাজারে বেরুলে। এর মধ্যে শরীর খারাপ হয়ে গেলো?

    আমি বলি, কই না তো, শরীর আমার ভালোই আছে।

    আমার মুখের কাছে মুখ নামিয়ে আনলো সে। হঠাৎ শিউড়ে উঠে প্রশ্ন করে, এ কী? তোমার গালটা কেটে ছড়ে গেলো কী করে? আহা, এতো নরম জায়গা-একেবারে সাংঘাতিক ঘায়েল হয়ে গেছে।

    আমি কোনরকমে বলতে পারলাম, যখন তোমার কাছ থেকে সম্মতি নিয়ে বাজারে যাচ্ছিলাম সেই সময় একটা উট পিঠে জ্বালানী কাঠ নিয়ে আসছিলো। কাঠের খোঁচাগুলো এপাশে ওপাশে বর্শার ফলার মতো বেরিয়েছিলো। আমি অতোটা লক্ষ্য করিনি। সেই কাঠের খোচায় গালটা কেটে গেছে।

    -বাগদাদের রাস্তাগুলো এমন গলির মতো যে, দু’টো গাডি পাশাপাশি চলতে পারে না। দাঁড়াও, মজা দেখাচ্ছি। কাল সকালেই আমি দরবারে নালিশ করবো। সব শালা উট-সোয়ারগুলোকে ধরে এনে কোতল করাবো।

    রাগে ফুঁসতে লাগলো আমার স্বামী। আমি শঙ্কিত হলাম।—না না, অমন কাজটি করো না। মহা পাপ হবে। তা ছাড়া ওদের কি দোষ, বলো! দোষ তো আমারই পথঘাট দেখেশুনে না চলতে পারলে খেসারৎ দিতেই হবে। আমি ছিলাম একটা গাধার পিঠে। গাধাটা তিড়িং বিড়িং করে। চলছিলো। আমি ঠিকভাবে চালাতে পারছিলাম না। তাই একটা গাডির ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে গিয়েছিলাম নিচে। একটা চেলা কাঠ পড়েছিলো মাটিতে। সেই কাঠের খোচায় গালটা আমার কেটে গেছে।

    আমার স্বামী আরও রেগে গেলো।–যত্তোসব বাপে খেদানো মায়ে তাড়ানো শয়তানের বাচ্চাগুলো রাস্তায় রাস্তায় ডাংগুলি খেলবে। কাল সকালেই আমি যাবো উজির জাফর-আল-বারম্যাকীর কাছে। বদরগুলোকে ধরে এনে কিরকম পিটনি দেওয়াই একবার দেখো।

    -আমার জন্যে কি দুনিয়াশুদ্ধ লোককে মারধোর করাবে নাকি? যা ঘটেছে নেহাতই দুর্ঘটনা মাত্র। এর জন্যে কাউকে কি দায়ী করা চলে? না দায়ী করা উচিত? আমার নসীবে যা লেখা আছে তা তো আমাকে ভোগ করতেই হবে।

    আমার এই অজুহাতে ভোবি কিন্তু ভুললে না। এবার সে উগ্র চণ্ডালের মূর্তি ধারণ করলো।—চুপ কর, হারামজাদী, বিশ্বাসঘাতিনী। মিথ্যে দিয়ে মিথ্যে ঢাকা যায় না। তুই না আমার কাছে কোরান ছুঁয়ে হলফ করেছিলি? দাঁড়া, মজা দেখাচ্ছি।

    এই বলে মেজের ওপর পদাঘাত করলো কয়েকবার। সঙ্গে সঙ্গে পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকলো দৈত্যের মতো দেখতে সাতটা হাবশী ক্রীতদাস। তারা এসেই এক ঝটিকায় নিচে নামিয়ে নিলো আমাকে। তারপর আমার স্বামীর হুকুম মতো আমাকে ঘরের মাঝখানে কর্পোেটর ওপর উপুড় করে শোয়ালো। একজন আমার মাথার উপর বসে দু হাতে দু কঁধ চেপে ধরে থাকলো। আর একজন হাবশী বসলো আমার হাঁটুর উপর। সে ধরে রইলো আমার পা দুটো। আর তৃতীয়জন উঠে দাঁড়ালো আমার পিঠে। হাতে তার শানিত তরবারী।

    এবার শুনলাম আমার স্বামীর সিংহগর্জন।—কাটু, কেটে আলাদা করে দে, ধড় আর গর্দান। নেকড়েকে দিয়ে খাওয়াবো তোমার শরীরের মাংস। শয়তানী, বিশ্বাসঘাতিনী, এই তোমার যোগ্য পুরস্কার।

    আগে যদি জানতাম আমি কলঙ্কিনী তুমি।
    কে জানাতো এতো প্ৰেম তোমার অধর চুমি।।
    ক্ষমা করো খোদাতালা দোষ নিও না প্রভু।
    মহব্বতের এই অপমান সইবোনাকে কভু।।

    –সাদ, চিৎকার করে আমার স্বামী, কেটে দু’খানা করে ফেল, হারামজাদীকে।

    মালিকের হুকুম তামিল করতে উদ্যত করেছে সে তরবারী। এমন সময় বোধ হয় ইশারায় নিরস্ত করলো তাকে। আমাকে লক্ষ্য করে বললো, মরার আগে তোর শেষইচ্ছা কী বল। আমার এখানে তোর সাজপোশাক সামান-পত্ব সোনাদনা টাকা পয়সা যা কিছু আছে যাকে যা দিতে চাস দিয়ে যা। তোর মতো কলঙ্কিনীর একটা কুটোও আমার ঘরে রাখবো না আমি।

    মুখটা একটু উঁচু করে তুলে বললাম, আমাকে তো তুমি মারবেই। তবু একটুখানি সবুর করো, আমার কয়েকটা কথা বলার আছে, বলে যাই :

    যদি জালিয়ে ছিলে প্রেমের শিখা
    (তবে) এমন কোরে নিভিয়ে দিলে কেনো?
    যদি এমনি করেই ঝরিয়ে দেবে ফুল
    (তবে) আদর করে ফুটিয়েছিলে কেনো?

    চিৎকার করে উঠলো আমার স্বামী।-থামাও, থামাও তোমার ন্যাকামী। প্ৰেম-ভালোবাসা অতো বড় বড় কথা তোমার পাপ মুখে মানায় না, বুঝলে?

    আমি আবার আবৃত্তি করলাম :

    ভালোবাসার প্রথম পাঠ
    তোমার কাছেই পেলাম।
    মরবো আমি দুঃখ নাই,
    রইলো আমার সেলাম।।

    —ঢং দেখাবার জায়গা পেলে না? আমার কাছে প্রেমের প্রথম পাঠ নিয়েছো? কেন, তোমার সে সব পীরিতের নগররা কি করেছে এতোদিন?

    তার একথা কানে শুনলাম না। প্রতিবাদও করলাম না। বিশ্বাস করবে না। কী লাভ? শুধু তাকে মনে করিয়ে দিলাম :

    সোহাগ করে বলেছিলে কপোলখনি চুমি।
    বিশ্ব যদি নিঃস্ব হয়-রইবো আমি তুমি।।

    –যা বলেছিলাম। অন্তর থেকেই বলেছিলাম। ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম তোমাকে। কিন্তু তার মর্যাদা বুঝলে না! আমি তোমার রূপে, তোমার মন ভোলানো মুখের কথায় ভুলেছিলাম। আজ আমার ভুল ভেঙে গেলো। তুমিই আমার মোহ কাটিয়ে দিলে।

    কবির ভাষাতেই বলি :

    ভালোবাসায় অন্ধ ছিলাম
    তুমিই আমার দিয়েছে খুলে চোখ।
    মৃত্যু হলো আমার প্রেমের,
    কেমন করে সইবো বলো, শোক।।
    কুসুম-পেলাব দেহ তোমার
    খাড়ার ঘায়ে দুভাগ করে দেবো।।
    মরবে তুমি-বাঁচবে তুমি;
    সকল দুঃখ পাঁজর পেতে সবো॥

    আমার চোখ জলে ভরে এলো। এতো অবিশ্বাস, এতো সন্দেহ! কিন্তু যে ঘটনা ঘটে গেছে তার জন্যে আমি কতটুকু দায়ী? সবই নিয়তি। আমি তো এ সর্বনাশ আমার চাইনি। ঐ শয়তানী বুড়িটাই তো আমাকে কলঙ্কের মুখে ঠেলে দিলো? তাই আমার আমন ভালোবাসার স্বামী আজ এতো নিষ্ঠুর নির্মম হয়ে উঠেছে। সে কি সব ভুলে গেছে? কত প্রেম কত ভালোবাসা?

    তোমার উদাম প্ৰেম, উচ্ছল যৌবন,
    আমার সুখের নীড়—স্বৰ্গ-উপবন,
    ভুলে গেছে। সব প্রিয়? কত ভালোবাসা
    কি করে বোঝাই বলো! মুখে নাই ভাষা।

    —থাক থাক, আর বুঝিয়ে কাজ নাই, অনেক বুঝেছি। এবার মৃত্যুর জন্যে মাথা পেতে দাও। মৃত্যুকে সামনে দেখেও মৃত্যুভয় আমাকে বিচলিত করেনি। শুধু ভাবতে লাগলাম, লঘু পাপে গুরুদণ্ড দিচ্ছে কেন সে? কী আমার অপরাধ খতিয়ে দেখলো না। এক কথায় কাজীর বিচারের মতো রায় হয়ে গেলো। মৃত্যুদণ্ড! একি তার ক্ৰোধ, নাছিল! পুরুষের কাছে একটা মেয়ের যৌবন আর কদিন ভালো লাগে?

    ভালোবাসার শাসটা খেয়ে
    ছোবড়াখানা ফেলবে ছুঁড়ে,
    কি আর এমন নতুন কথা!
    সবাই জানে বিশ্ব জুড়ে।
    তোমার প্রোমে গলদ ভরা
    আগাগোড়া সবটা জাল।
    রইলো আমার ভালোবাসা
    তারার মতো জুলবে চিরকাল।।

    কান্নায় রুদ্ধ হয়ে আসে কণ্ঠ। হায় আল্লাহ এই কি আমার ভালোবাসার পরিণাম! আমার অনিচ্ছায় যে পাপ আমি করেছি, তার কি ক্ষমা নাই! আমি নিতান্তই বোকা-সোক মেয়ে। অতোশতো বুঝিনি। হঠাৎ কোথা দিয়ে কি হয়ে গেলো, জানি না। আমার মতো বোকা মেয়েরা যেন প্রেমের ফাঁদে পা না দেয়। কাতর কণ্ঠে তাকে বললাম :

    এই অনুনয় ওগো প্রিয়, একটি কথা রাখো,
    মারার পরে গোরস্তানে এই কথাটি লিখো :
    ‘ভালোবাসা তারই সাজে হিসাব যো-জন জানে।
    বোকা মেয়ের বোকা প্রেম মৃত্যু ডেকে আনে।।’

    আমার স্বামী শান্ত হলো না। তুমি বোকা মেয়ে? তোমার মতো নাগর নাচানো ঘড়েল মেয়ে কটা আছে। এ পাপের ফল তোমাকে পেতে হবে।

    ওরে পাপীয়সী নারী, কেনো করেছিলি পাপ?
    দোজকে যখন যাবি-হবে নাকি অনুতাপ!

    এই বলে আবার হুঙ্কার দিয়ে ওঠে। সাদ, কাটো, কেটে ধড়-গর্দান আলাদা করে ফেলো। আমি আর ওর মুখদর্শন করতে চাই না।

    হাবশীটা তরবারি উচিয়ে ধরেছে এমন সময় সেই বুড়িটা ঢুকলো ঘরে।-দোহাই বাবা, ওকে মেরো না। ওর কোন দোষ নাই। আমি তোমার মায়ের সমান। ছোট থেকে বুকের দুধ খাইয়ে মানুষ করেছি। তোমাকে। আমার একটা কথা রাখো বাবা। ওকে আর যে শাস্তিই দাও, জানে মেরো না। এমন গোস্তাকি সে করেনি, যাতে ওকে জান খোয়াতে হবে।

    ছোটবেলায় আমার স্বামীর মা মারা যায়। তখন থেকে এই বুড়ি তাকে লালনপালন করেছে। সেই আব্দারে সে আমার প্রাণ-ভিক্ষা করছে।–কম বয়েসের নওজোয়ান লেড়কী। এ বয়সে একটু আধটু ভুলচুক হয়েই থাকে, বাছা। তা একটু ক্ষমা ঘেন্না করে দাও। এবারের মতো। ওকে মাফ করে দাও, বাবা। আমি কথা দিচ্ছি, আর কখনও খারাপ কাজ করবে না সে। আমি চোখে চোখে রাখবো।

    বুড়ির কথায় বোধ হয় কাজ হলো। গুম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো একটুক্ষণ। তারপর বললো, শুধু তোমার কথায় আজ ওকে জানে মারলাম না। কিন্তু এমন চিহ্ন এঁকে দেবো। ওর শরীরে যা চিরকাল মনে করিয়ে দেবে এই বিশ্বাসঘাতকতা।

    তার হুকুমে আমাকে বিবস্ত্র করা হলো। একখানা লিকলিকে বাঁশের কঞ্চি কেটে এনে সপাং সপাং করে নিজের হাতে মারতে থাকলো আমার পিঠে। কয়েক ঘা পরেই অচৈতন্য হয়ে লুটিয়ে পড়ে গেলাম। তার পায়ের উপর। আরও কত ঘা বসিয়েছিলো তা বলতে পারবো না।

    সারা রাত কিভাবে কেটেছে জানি না। সকাল বেলায় যখন জ্ঞান হলো দেখলাম, আমার নিজের বাড়ির একটা ঘরে পড়ে আছি আমি। সারা দেহ চাবুকের কষাঘাতে জর্জরিত। বেশ কয়দিন আমি উঠে দাঁড়াতে পারিনি। সারা অঙ্গে ক্ষত। অনেক মলম, অনেক দাওয়াই লাগিয়ে বেশ কিছুদিন পরে খানিকটা সুস্থ হতে পারলাম। ঘাগুলো শুকিয়ে গেলো। কিন্তু দাগগুলো মিলালো না। কাল রাতে আমার সারা শরীরে এই দাগগুলোই দেখেছেন আপনারা।

    মাস চারেক পরে ঘাগুলো সব শুকিয়ে গেলো! পুরো সুস্থ হয়ে উঠলাম। একদিন পায়ে পায়ে আমার স্বামীর বাড়ির পথে এগিয়ে চললাম। কিন্তু অবাক, কে বা কারা বাড়িটা গুডিয়ে চুরমার করে দিয়েছে। অতো বড় একটা প্রাসাদের মতোবাড়ি একটা বিরাট ধ্বংসস্তুপ হয়ে পড়ে আছে। অথচ তার আশেপাশের বাড়ির এতোটুকু ক্ষতি হয়নি। পাশের অনেক লোককে জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু কেউ আমার কথার জবাব দিলো না। কেউ বললো না, আমার স্বামী বেঁচে আছে কি নাই। কিংবা সে অন্য কোথাও চলে গেছে কিনা।

    এরপর আমি আমার ছোট বোন ফহিমার কাছে চলে যাই। পরে ফহিমাকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসি আমার এই দিদি জুবেদার বাড়িতে। আমার দুঃখের কাহিনী শুনে মর্মাহত হলো দিদি। তবু আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, দুখ করিস নে বোন। দুনিয়ায় একটা মানুষও দেখাতে পারবি না, যে সব দিক থেকে সুখী। সুখ দুঃখ মিলে জীবন। আমাদের বাসনা সুখটাই বেশী পাই, কিন্তু আল্লাহর বিধান তা নয়। দুঃখের ভাগটাই বেশী করে দেন তিনি। যাতে সুখের স্বাদটা আরও ভালো করে অনুভব করতে পারি।

    আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিদি বলে, মনে কোন ক্ষোভ রাখিস নে। দুঃখ যখন এতো পেয়েছিস, এবার সবুর কর, সুখও পাবি। আমার কাছে থাক তোরা। এক সঙ্গে তিন বোন থাকবো। খাবোদাবো বেড়াবো, হাসবো, গাইবো, নাচবো। কিন্তু শাদী করবো না কেউ। কোন পুরুষ কি ধাঁচের কে জানে! কী দরকার ফালতু ঝামেলায় জড়িয়ে।

    সেই থেকে আমরা আর বিয়ে শাদী করিনি। খাইদাই, মনের আনন্দে গান গাই। খাসা আছি। আমরা আমাদের কাজ কাম ভাগ বাঁটোয়ারা করে নিয়েছি। আমি বাজার হাট করি।–খানাপিনা বানাই। আর ছোট ঘরদের গুছিয়ে রাখে। আর দিদি জুবেদা সে গৃহকত্রী। তার কথাতেই সব 5ळ!

    কোন পুরুষের সঙ্গ ছাড়াই দিব্যি দিন কাটছিলো আমাদের। অনেক কাল বাদে ঐ কুলীছেলেটা এসেছিলো বাজারের মোট নিয়ে। তাকে নিয়ে বেশ হৈহল্লা করে কেটে গেলো। সারাটা দিন। তারপর আশ্রয়হীন এই তিন কালান্দার ফকির এলো আমাদের ঘরে। তার পরেই আপনাদের আগমন। এর পরের ঘটনা তো সবই আপনাদের জানা।

    এই হলো আমারে দুর্ভাগ্যের কাহিনী।

    আমিনার কাহিনী শুনে প্রীত হলেন খলিফা।

    এই সময়ে দেখা গেলো রজনী অতিক্রান্ত প্ৰায়। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে রইলো।

     

    অষ্টাদশ রজনীর মধ্যভাগে আবার গল্প বলতে আরম্ভ করে শাহরাজাদ।

    আর তিন কালান্দারকে খলিফার সামনে হাজির করা হলো।

    জুবেদা আর আমিনার কাহিনী লিপিবদ্ধ করে রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন খলিফা। অনুলেখকরা পাণ্ডুলিপি পেশ করলো খলিফার সামনে।

    জুবেদাকে লক্ষ্য করে বাদশাহ বললেন, যে জিনিয়াহ তোমার এই দুই বোনকে কুকুর বানিয়ে রেখেছে তার কোন পাত্তা জানো!

    জুবেদা বললো, আমি তার ঠিকানা বলতে পারবো না ঠিকই, কিন্তু দরকার হলেই সে এসে হাজির হবে আমাদের সামনে। ]

    মাথার দু’গাছি চুল ছিঁড়ে হাতে নিয়ে খলিফাকে বললো, এই চুল দু’গাছি পুডিয়ে দেওয়া মাত্র সে সামনে হাজির হবে জাঁহাপনা।

    খলিফার হুকুমে চুলের গাছিখানা জ্বলিয়ে দেওয়া হলো। আর সেই মুহুর্তে সারা দরবার মহল, সারা প্রাসাদ দুলতে লাগলো। কয়েক মুহূর্ত মাত্র। হঠাৎ দেখা গেলো এক রূপ যৌবনবতী হাবশী কিশোরী দাঁড়িয়ে আছে দরবারের এক প্রান্তে। জুবেদা তাকে কাছে ডাকলো। খলিফাকে বললো, এই সেই জিনিয়াহ হুজুর।

    জিনিয়াহ এগিয়ে গিয়ে সালাম জানালো খলিফাকে।–আল্লাহর পয়গম্বর আপনি, আমার সালাম জানাই আপনাকে।

    খলিফা আশীৰ্বাদ করলেন, তোমার কল্যাণ হোক।

    জিনিয়াহ বললো, এই যুবতী এক সময়ে আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিলো। তারই প্রতিদান স্বরূপ আমি তার কিছু উপকার করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেছি। এই কুকুরী দু’টো তার দুই বোন। এরা তার প্রাণনাশের চেষ্টা করেছিলো! তাই তাদের আমি কুকুরী বানিয়ে রেখেছি। আপনি যদি চান, আমি ওদের শাপমুক্ত করে আবার আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে পারি।

    খলিফা বললেন, আমার মনে হয় তাদের কৃতকর্মের যথেষ্ট ফলভোগ তারা করেছে। এবার এদের মুক্তি দাও। তারপর দেখছি আমিনার ব্যাপারটা। যদি তার কাহিনী সত্য হয় তবে যেমন করেই হোক, তার স্বামীকে খুঁজে বের করতে হবে আমার সারা সাল-তানিয়ৎ, টুড়ে। আমার দেশে এতো অত্যাচার কিছুতেই সহ্য করবো না আমি।

    জিনিয়াহ করজোড়ে বললো, আপনি যা চান এখুনি করে দিচ্ছি আমি। কুকুরী দুটোকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে দিচ্ছি। তার আগে বাদশাহর কাছে ছোট্ট একটা কথা বলতে চাই।

    খলিফা কৌতূহলী হলেন।—বলো।

    আমিনার সেই অত্যাচারী স্বামীকে পলকের মধ্যেই হাজির করতে পারেন। আপনি। সে আপনার খুব কাছেই থাকে।

    –কে সে?–সে আপনার পুত্র, অল-আমিন। সমস্ত দরবার ক্ষণকালের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো। কারো মুখে কোন কথা নাই। শুধু খলিফার একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা গেলো।

    একটা পাত্রে খানিকটা জল মন্ত্বপুত করে কুকুরী দু’টোর গায়ে ছিটিয়ে দিতে দিতে বিড় বিড় করে কি সব আওড়ালো জিনিয়াহ। তারপর দেখা গেলো, ধীরে ধীরে রূপলাবণ্যবতী যুবতীর আকার ধারণ করলে ঐ কুকুরী দুটি।

    এতক্ষণ দরবারের কেউ কোন শব্দ উচ্চারণ করেনি। খলিফাও না। বোধ হয়। জিনিয়াহর কথায় মর্মাহত হয়ে ভাবছিলেন, কথাটা কি বিশ্বাসযোগ্য? কোন মানুষের কথা হলে অবিশ্বাস করার কারণ অবশ্যই ছিলো। প্রমাণপত্রের প্রয়োজন হতো। কিন্তু এতো জিনিয়াহর কথা। ওরা তো সর্বজ্ঞ। ইচ্ছা করলেই সবকিছু জানতে পারে। পুত্রকে ডেকে পাঠালেন খলিফা। অল-আমিন এলে কৈফিয়ৎ তলব করলেন তিনি।

    নিজের কোলে ঝোল টেনে মোটামুটি কাহিনী বিবৃত করলে সে। সে কাহিনী থেকে তাকে খুব একটা দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। যাই হোক, খলিফা তলব করলেন মৌলভীকে। তৎক্ষণাৎ হাজির হলো মৌলভী। শাদীর কবুলনামা লেখা হলো। অল-আমিনের সঙ্গে দ্বিতীয়বার শাদী হলো আমিনার। জুবেদার সঙ্গে শাদী হলো প্রথম কালান্দার-এর। আর জুবেদার দুই সহোদর বোনের সঙ্গে শাদী দেওয়া হলো অন্য দুই কালান্দারের। আর খলিফা নিজে গ্রহণ করলেন ছোট বোন কুমারী ফহিমাহকে।

    খলিফা হারুন-অল-রাসিদ প্রত্যেক জুটির জন্যে একটা করে প্রাসাদ বানিয়ে দিলেন। সেই সঙ্গে উপটৌকন দিলেন প্রচুর ধনদৌলত। সুখে স্বচ্ছন্দে ঘর-সংসার করতে লাগলো তারা।

    —কিন্তু, শাহরাজাদ বলে, এ কাহিনী আপনার কেমন লাগলো জানি না, জাঁহাপনা। তবে এর পরের যে কাহিনী শোনাতে চাই তা আরও চমৎকার আরও মজাদার। কিন্তু শাহেনশাহর কি আর শোনার ধৈর্য হবে?

    শারিয়ার মুচকী হাসলো, মেয়েটা তো ভারি রসিক। এমন রসের গল্প ফাদবে; আবার ঠিকে কথা বলবে, ‘শোনার ধৈর্য হবে’ কিনা। শাহরাজাদের দিকে ফিরে বলে, বেশ তো হচ্ছে। বলো, শুনি।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142 143 144 145 146 147 148 149 150 151 152 153 154 155 156 157 158 159 160
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকবীর – ১ – ক্ষিতিমোহন সেন
    Next Article প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা – ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.