Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সহস্র এক আরব্য রজনী

    ক্ষিতিশ সরকার এক পাতা গল্প3728 Mins Read0

    ১.২১ খ্ৰীষ্টান দালালের কাহিনী

    খ্ৰীষ্টান দালালের কাহিনী

    আপনি দীন-দুনিয়ার মালিক। আপনাকে আমার হাজারো সালাম।

    আমি এক বিদেশী। দেশ আমার কইরো। নানা দেশ ঘুরতে ঘুরতে শেষে একদিন আপনার দেশে এসে ব্যবসা শুরু করলাম। আমার বাবাও আমার সঙ্গে এসেছিলেন। তিনিও আমার এই ব্যবসাই করতেন। দালালীর ব্যবসা আমাদের বংশগত।

    আমার বাবার মৃত্যুর পর আমিই পুরো মালিক হলাম আমার ব্যবসার। আর এই দালালীর কাজে আমার মতো বিচক্ষণ ব্যক্তি আর ছিলো না। এ তল্লাটে।

    একদিন আমি আমার গদিতে বসে আছি দেখি একটি যুবক গাধার পিঠে চড়ে আমার দিকেই আসছে। দেখে মনে হলো, বেশ সুদৰ্শন সুপুরুষ। এবং খানদানী বংশের ছেলে। সামনে এসে সালাম জানালো আমাকে। আমি আলেকুম সালাম জানালাম। ছেলেটি একখানা রুমালে কিছু ক্ষীরার বীজ-এর নমুনা খুলে দেখালো আমাকে। জিজ্ঞেস করলো, কী রকম দাম যাচ্ছে এখন।

    আমি বললাম, একশো দিরহামি।

    সে বললো, দাড়ি বাটখারা সঙ্গে নিয়ে আপনি আসুন খান-আল-জয়ালী বিজয় দরওয়াজার কাছে। আমি আপনার জন্যে অপেক্ষা করবো সেখানে।

    রুমালে বাধা ক্ষীরার বীজগুলো রেখে সে চলে গেলো। তখুনি আমার মহাজনের ঘরে গিয়ে নমুনা বীজগুলো দেখিয়ে কেনার দাম জিজ্ঞেস করলাম। তারা বললো, তুমি কি দাম বলেছে।

    -একশো দিরহামি।

    —আমরা তোমাকে দশ দিরহাম লাভ দেবো। মোট একশো দশ পাবে তুমি।

    আমি মহা আনন্দে দাঁড়ি পাল্লা নিয়ে যথাস্থানে গিয়ে হাজির হলাম। ওজন করে মোট পঞ্চাশ মণ হলো। যুবকটি বললো, মণ প্রতি দশ দিরহাম দালালী পাবেন আপনি। মালগুলো নিয়ে যান। মোট পয়সা কডি মহাজনের কাছ থেকে নিয়ে রাখুন। আমি পরে গিয়ে নিয়ে আসবো। মোট দাম হচ্ছে পাঁচ হাজার। তার থেকে আপনার দালালী পাঁচশো কেটে রেখে আমার সাড়ে চার হাজার একটু সাবধানে রেখে দেবেন। আমার এদিকের কাজ কাম সেরে সুরে আপনার কাছে গিয়ে একদিন নিয়ে আসবো।

    আমি ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম ঠিক আছে।

    সেই দিন আমি হাজার দিরহাম রোজগার করেছিলাম। পাঁচশো মহাজনের কাছ থেকে, আর পাঁচশো ছেলেটার কাছ থেকে। মানে শতকরা কুড়ি।

    মাসখানেক বাদে ছেলেটি আমার কাছে এলো! আমি বললাম তোমার টাকাটা আমি একটা থলে করে বেঁধে রেখেছি। নিয়ে যাও।

    ছেলেটি বললো, আরও কিছুদিন আপনার কাছেই রেখে দিন। আমার একটু রাখার অসুবিধে আছে।

    মাসখানেক বাদে আবার একদিন সে এলো। তখনও তাকে বললাম, তোমার টাকাটা নিয়ে যাও।

    সে বললো, আরও কিছুদিন আপনার কাছেই রাখুন। পরে সুবিধে মতো নিয়ে যাবো।

    আমি বললাম, অনেক বেলা হয়ে গেছে। দুপুরের খানাটা আজ আমার বাড়িতেই সেরে যাও।

    কিন্তু সে বললো, আমার হাতে এখন অনেক কাজ। মরবার ফুরসৎ নাই। পরে একদিন এসে খেয়ে যাবো।

    এর মাসখানেক বাদে সে গাধার পিঠে চেপে আমার গদীর সামনে দিয়ে যেতে যেতে বললো, এখন আর নামবো না। সন্ধ্যেবেলা ফেরার পথে টাকাটা নিয়ে যাবো আজ।

    আমি ওর টাকার থলেটা এনে সারা সন্ধ্যা বসে রইলাম। অনেকটা রাত হয়ে গেলো। কিন্তু সে আর সেদিন ফিরলো না। এর মাসখানেক বাদে আবার একদিন এলো। আমি বললাম, তুমি কেমনধারা লোক বাপু! একটা অচেনা অজানা দালালকে এতো নিয়েই চলে গেলো।

    সব শেষে আবার একদিন সে এসে হাজির হলো। সেদিন বেশ জাঁকজমক করে সেজোগুজে এসেছে। দামী রেশমের কোর্তা, পাতলুন পরনে। মাথায় সোনার জরির টুপী। চোখের কোণে কাজল টেনেছে। অপূর্ব সুন্দর লাগছিলো দেখতে। আমি এগিয়ে গিয়ে ওর হাতে একটা চুমু খেয়ে আদর করে নামালাম। আজ মনে হয় তোমার সময় হবে বাছা। টাকাটা নিয়ে আমাকে একটু নিশ্চিন্ত করো। তোমার টাকাটার জন্যে রাতে ভালো করে ঘুমোতে পারি না। কি জানি, পরের টাকা। যদি কোনভাবে খোয়া যায়।

    –আর একটু ধৈর্য ধরে থাকুন। প্রায় মেরে এনেছি। আর কাঁটা দিনের মধ্যেই এখানকার কাজকারবার আমার শেষ হয়ে যাবে। তখন যাবার সময় আপনাকে ভারমুক্ত করে টাকাটা নিয়ে যাবো।

    এই বলে সেদিনও সে চলে গেলো।

    আমি ভাবলাম, আবার হয়তো সে অনেক দিন বাদে এই একই কথা বলে টাকাটা না নিয়েই চলে যাবে। আমি ওর টাকাটা সুদে খাটাতে লাগলাম। শতকরা কুড়ি টাকা সুদ প্রতি মাসে। এইটেই আমাদের দেশে প্রচলিত। ছেলেটা যদি বছরখানেক বাদে টাকাটা ফেরৎ নেয়, তবে তার মধ্যে অনেক টাকা বানিয়ে নিতে পারবো আমি।

    বছরখানেক বাদেই সে আবার একদিন এলো। বেশ সেজোগুজে। আমি তাকে সাদর অভ্যর্থনা করে নামালাম। এবং বললাম, আজ আর তোমাকে না খাইয়ে ছাড়বে না।

    সে খুব হাসলো, পরে রাজি হলো একটা শর্তে।–খেতে পারি। কিন্তু আজ যা খরচ হবে, সব আমার; আমার টাকা থেকে খরচ করতে হবে। আমি বললাম, ঠিক আছে, তাই হবে। তাকে বাড়িতে আদর যত্ন করে বসিয়ে বাজারে গেলাম আমি। ভালো দামী সরাব আর মাংস নিয়ে এলাম খানিকটা। সেই সঙ্গে কিছু ফল আর মিষ্টি। খানাপিনার ব্যবস্থা মোটামুটি ভালোই হলো। টেবিলে খানা সাজিয়ে তাকে ডাকলাম। বেশ আগ্রহ নিয়ে খেলোও সব। কিন্তু দেখে অবাক লাগলো, সমস্ত খাবারই সে বাঁ হাত দিয়ে খেলো। আমি ভাবলাম, হয়তো দুর্ঘটনায় ডান হাতটা জখম হয়ে থাকবে।

    খাওয়া শেষ হলে লক্ষ্য করাম, বা হাতখানা ধুলো সে ডান হাতখানার সাহায্য ছাড়াই। আমার কৌতূহল আর চেপে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করে ফেললাম, আচ্ছা মালিক, আপনার ডান হাতখানার কী হয়েছে। কোন দুর্ঘটনায়.

    গায়ের আলোয়ানখানা সরিয়ে আমাকে দেখালো। তার ডান হাতখানা কৰ্ত্তী থেকে কাটা। ছেলেটি বললো, আজ যে আমি আপনার বাড়িতে এসে বা হাত দিয়ে খেলাম। এতে আপনি অপমানিত হবেন না; আশা করি। তার কারণ, ডান হাত দিয়ে খাওয়ার কোন উপায় আমার নাই। আর এই হাতটা কাটার পিছনে এক অদ্ভুত কাহিনী আছে।

    তখন ছেলেটি তার কাহিনী বলতে লাগলো।

     

    বাগদাদ শহরে আমার জন্ম। আমার বাবা ছিলেন। ওখানকার এক লক্ষপতি সওদাগর। যখন আমার উঠতি বয়স, সেই সময় থেকেই বাবার ব্যবসা বাণিজ্য বেশ মোটামুটি বুঝতে শিখলাম। সারা বছরই আমাদের বাড়িতে তীর্থযাত্রী, মুসাফীর এবং বিদেশী সওদাগরদের আগমনে ভরে থাকতো। বাবা মারা যাবার পর আমি তার ব্যবসা বাণিজ্য সম্পত্তির ষোল আনা মালিক হলাম। যার কাছে যা পাওনা ছিলো আদায়পত্র করে সব টাকায় কাপড়ের ব্যবসা আরম্ভ করলাম। বাগদাদ আর মসুল ছিলো কাপড়ের জন্যে বিখ্যাত। নানারকম পোশাক আশাক কিনে উটের পিঠে চাপিয়ে একদিন কাইরে যাত্রা করলাম। খোদার মেহেরবানীতে কয়েকদিন বাদে নিরাপদেই এসে পৌঁছলাম কইরোয়।

    শহরের কাছে এক সরাইখানায় উঠলাম। কাপড়ের গাঁটগুলো রাখার জন্যে একটা ঘর ভাড়া করা হলো। সামানপত্র নামানোর পর নফরটাকে পয়সা দিয়ে বললাম, একটু কিছু খাবার নিয়ে আসতে। খানাপিনা সেরে একটু জিরিয়ে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে শহরের পথে বেরুলাম। বেন-আল-কাসিরেন ফুর্তি করার জায়গা। সন্ধ্যাবেলায় নাচ গানে জমে ওঠে। বেশ। মেয়েমানুষ আর মদের আখড়া। নতুন জায়গার নতুন স্বাদ। সন্ধ্যাটা কাটলো বেশ। পথের ক্লান্তি কেটে গিয়ে চাঙ্গা হলো শরীর। সরাইখানায় ফিরে এসে সুখ-নিদ্রা হলো সেদিন।

    সকালে উঠে নফরকে বললাম, চল বাজারে বেরুতে হবে। সবরকম কাপড় চোপড় কিছু কিছু করে নিয়ে একটা গাঢ়রী বঁধ। দেখি, কী বাণিজ্য করা যায়।

    শহরের প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র কাইজারিয়াৎ জিরজিস। এইখানেই সব বড় বড় দোকানপাট। দেশবিদেশের সওদাগররা আসে বাণিজ্য করতে। একটা দালালকে ধরে বললাম, আমি বাগদাদ আর মাসুলের বাহারী সাজপোশাক এনেছি। কী দাম পাওয়া যাবে, একটু দেখবে?

    দালালটা বললে, ঠিক আছে, চলুন আমার সঙ্গে। ভালো মহাজন ঠিক করে দিচ্ছি। মাল পছন্দসই আর দামে বনলে সওদা হয়ে যাবে।

    কিন্তু আমার নসীব খারাপ, অনেকগুলো বড় বড় মহাজনের গদি ঘুরেও একখানা জামা কাপড় বিক্রী করতে পারলাম না। তারা যে দামে কিনতে চায় সে দামে আমারই কেনা নাই। তার উপর রাহা খরচ, দালালী এবং আমার মুনাফা আছে।

    দালালটা বললো, মুনাফা বের করার একটাই উপায় আছে। এখানে এসে সব সওদাগররাই যা করে আপনাকেও তাই করতে হবে। আপনি এক কাজ করুন, মালগুলো ধারে বেচে দিন। ধারে দিলে একটু বেশী দামে নেবার অনেক দোকান পাবেন। তাতে আপনার মোটামুটি ভালোই মুনাফা থাকবে। মাল দেওয়ার সময় ওরা আপনাকে হুণ্ডি করে দেবে। এক মাস পরে প্রতি সোমবার আর বৃহস্পতিবার ওরা কিস্তি দেয়। সপ্তাহে এই দুদিন এসে কিস্তি আদায় করবেন, আর বাকী কটা দিন-আনন্দ ফুর্তি করে কাটাবেন। এখানকার শহর আর নীল নদের শোভা আপনার ভালোই লাগবে।

    আমি বললাম, বাঃ, খাসা হবে।

    দালালকে সঙ্গে করে আমার সরাইখানায় এলাম। আমার ভাড়া করা গুদামে যতো মাল ছিলো সব তাকে দেখলাম। সেইদিনই সব মাল বিক্রী হয়ে গেলো। বেচে নগদ কিছু পেলাম না বটে, কিন্তু তার বদলে হুণ্ডির কাগজ করে দিলো দোকানীরা।

    খুব খুশি মনে সরাইখানায় ফিরে এলাম। এখন একটা মাস শুধু খাওয়া দাওয়া, স্মৃর্তি করা, আর ঘুমানো ছাড়া আর কোন কাজ নাই। প্রতিদিন সকালে উঠে মাখন, রুটি আণ্ডা, আপেল, বেদনা, আঙুর, মিষ্টি দিয়ে নাস্ত করে নীলের ধারে বেড়াতে যাই। আবার দুপুরে এসে মাংস পরোটা সন্তজী দিয়ে খানা সারি। তারপর বিকাল থেকে শুরু হয় সরাব। সন্ধ্যাবেলায় বেন-আলি কাসবেন পাড়ায় মৌজ করে মেয়েমানুষের নাচগানে মেজাজটা শেরিফ হয়ে ওঠে। অনেক রাতে আবার সরাইখানায় ফিরে আসি।

    এইভাবে এক মাস কাটলো। এবার শুরু হলো আমার কিস্তি আদায়। প্রতি সোম আর বৃহস্পতিবার। বাজারে গিয়ে আমি এক এক দিন এক একটা দোকানে বসি। আমার দালালটা খুব চৌকস। দোকানে দোকানে ঘুরে সে আমার কিস্তির পাওনা টাকা পয়সা আদায় করে এনে দেয়া! একদিন কাইজারিয়াৎ জিরজিস–এর একটা বড় রেশম কাপড়ের দোকানে বসেছি। দোকানের মালিক, আমারই সমন্বয়েসী হবে, আমার সঙ্গে ইয়ার দেস্তের মতো ঠাট্ট মজাক করতো! আমার চেহারা নাকি মেয়েদের খুব পছন্দসই। তারা একবার পেলে আর আমাকে ছাড়বে না-এইরকম আদি রসাত্মক চুলবুলানী ধরিয়ে দিতো আমার দেহ মনে।

    একটা বোরখা ঢাকা মেয়ে এসে বসলে আমার পাশের একটা টুলে। কিছু কাপড় চোপড় কিনবে। তার পাতলা নাকাবের ভিতর দিয়ে মুখের আদলটা বেশ পরিষ্কার বোঝা যায়। টানা টানা চোখ, টিকলো নাক আর চাপার মতো গায়ের রং। দামী আতরের খুশবু ছড়িয়ে পড়ছিলো তার গা থেকে।

    স্বভাবতই আমি তার দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। সেও যে আমার প্রতি উদাসীন ছিলো না, একটু পরেই তা বুঝলাম। মুখের নাকাবটা সরিয়ে চোখের বান ছুঁড়লো আমার উপর। দেখলাম, তার গভীর কালো আয়ত চোখ। দোকানের মালিক বদর-আল-দীন বুস্বানীকে বললো, কয়েকটা ভালো শাড়ি দেখান তো।

    খুব মিষ্টি গলার স্বর। যেন মধু ঝরে পড়ে। আমার হৃদয়ে অনুরণন তোলে তার সেই মৃদু। কণ্ঠের কয়টি কথা-কয়েকটা ভালো শাড়ি দেখান তো।

    অনেকগুলো বাহারী শাড়ি দেখানো হলো। কিন্তু একটাও পছন্দ হলো না তার।–বললো, সোনার জডির কাজ করা কোন ভালো মসলিন আছে?

    বদর-অল-দীন দোকুনের অপর প্রান্ত থেকে একটা লম্বা কাঠের বাক্স টুর্ণ’ নিয়ে এলো। অনেক দামী দামী মসলিন বের করে দেখালো। এর মধ্যে একখানা কাপড় সে পছন্দ করলো। জিজ্ঞেস করলো, কত দাম?

    দাম শুনে মেয়েটি বলে, অতো টাকা তো সঙ্গে আনিনি। ঠিক আছে, কাপড়খানা দিন,বাড়ি গিয়ে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

    দোকানের মালিক বললো, আমাকে মাফ করবেন মালকিন, এ কাপড় আমি ধারে বেচিতে পারবো না। এই দেখুন আমার মহাজন বসে আছেন। তাকে আজ টাকা দিতে হবে।

    দোকানীর কথা শুনে মেয়েটা তো রেগে আগুন;-আমি আপনার দোকানের পুরোনো খদের। কত টাকার জিনিস কিনি। আর আজ আপনি আমার সঙ্গে এইরকম ব্যবহার করছেন? এই যে এতো দিন ধরে হাজার হাজার টাকার কাপড় চোপড় কিনেছি; আমার কি কোন বাকী বকেয়া আছে আপনার কাছে। ধারে নিয়ে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে কি টাকা পাঠিয়ে দিই নি?

    –নিশ্চয়ই দিয়েছেন। আপনার মতো ভালো খদের আমার অহঙ্কার। কিন্তু আজ। আপনাকে ধারে দিতে পারছি না, আমাকে ক্ষমা করুন। আজ আমার এই পাওনাদারদের দেনা মেটাতে হবে। আপনি নগদ দিয়ে নিন।

    এই কথা শুনে সে দোকানীর মুখের উপর ছুঁড়ে দিলো কাপড়খানা। —আপনারা-এই বাজারের সব দোকানীরা এইরকম। ভালোমন্দ খদের যাচাই করার ক্ষমতা আপনাদের কারুরই নাই।

    রাগের মাথায় শরীরটাকে একটু বেশী মাত্রায় ঝাকানী দিয়ে উঠে গট গট করে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলো সে।

    আমার খুব ভালো লাগলো না। মেয়েটার জন্যে মনের মধ্যে আকুলি বিকুলি করতে লাগলো। আহা, বেচারী খুব অপমানিত হয়েছে। দোকানী যখন আপত্তিকরলো, তখন আমি লক্ষ্য করছিলাম। সারা মুখটা লাল হয়ে উঠেছিলো তার। আমি আর থাকতে পারলাম না। দোকান থেকে বেরিয়ে হন হন করে হেঁটে গিয়ে ধরলাম তাকে — শুনছেন মালকিন, রাগ করে চলে যাবেন না। আসুন, একবার দোকানে ফিরে আসুন, কথা আছে।

    মেয়েটি ফিরে দাঁড়ালো। মিষ্টি করে হাসলো। ভুরু নাচিয়ে বললো, দোকানীর ব্যবহারে খুব আঘাত পেয়েছি। তবে হ্যাঁ, শুধু আপনার খাতিরে আমি যেতে পারি।

    মেয়েটি ফিরে এসে বসলে আবার সেই টুলে। বদর-আল-দীনকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, ঐ কাপড়খানার দাম কত?

    দোকানী বললো, এগারোশো দিরহাম।

    —ঠিক আছে, কাপড়খানা ওকে দিয়ে দাও। আমি তোমাকে ঐ টাকার একখানা রসিদ করে দিচ্ছি।

    তারপর মেয়েটিকে বললাম, আপনি নিয়ে যান। আপনার যখন খুশি হবে, আমাকে দিয়ে দেবেন। দামাটা। প্রতি সোম আর বৃহস্পতিবার আমি এই মহল্লায় আসি। এই কাপড় পট্টির কোন এক দোকানে বসি। আপনার ইচ্ছা হলে দেখা করবেন। আর যদি এই শাড়িখানা আমার সামান্য উপহার হিসাবে গ্রহণ করেন, তবে বিশেষ ধন্য হবো আমি।

    আমার কথা শুনে মেয়েটা গলে গেলো। আপনার মতো মহানুভব মানুষ আমি দেখিনি। আল্লাহর দয়ায় আপনার অনেক আছে। এ হয়তো আপনার কাছে কিছুই না। কিন্তু আমি আজ কৃতাৰ্থ হয়ে গেলাম। আপনি যদি মেহেরবানী করে আমার গরীবখানায় পায়ের ধুলো দেন, খুব খুশি হবো।

    —তা হলে কাপড়টা নিন, সুন্দরী। আর আপনি যখন আপনার বাড়িতে নিমন্ত্রণই করছেন, আপনার সঙ্গে তখন তো আমার আর পর্দার সম্পর্ক রইলো না। আপনার আমন সুন্দর মুখখানা নাকাবে ঢেকে রাখবেন? খুলুন না। দেখে নয়ন সার্থক করি।

    মেয়েটি নাকাব তুলে দিলো। এবার ভালো করে দেখলাম তার চোখ ঝলসানো রূপ। চোখ আর ফেরানো যায় না। আমাকে ঐভাবে হাঁ করে চেয়ে থাকতে দেখে শরমে মুখটা নামিয়ে নিলো একটু! কিন্তু বুঝলাম আড়াচোখে আমাকেও দেখছে সে। ঠোঁটের কোণে দুন্টু হাসি। আমার বুকের স্পন্দন দ্রুততর হতে থাকে। কপালে স্বেদবিন্দু জমে ওঠে।

    কাপড়খানা হাতে নিয়ে উঠে পড়লো সে–তাহলে মালিক, আজি চলি। আপনি আসছেন। তো আমাদের ধাডি? না, চোখের আড়াল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনের আড়াল হয়ে যাবো? আমার ঠিকানা এখানেই পাবেন।

    আমি আর কোন কথা বলতে পারলাম না। সে সুযোগও দিলো না মেয়েটি। দোকান ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।

    সারাটা বিকাল বসে রইলাম ঐ দোকানো! চুপচাপ! শুধু মেয়েটির কথাবার্তা, অঙ্গভঙ্গী, বাঁ চোখের চাহিনী, ভুরু নাচানো-সব, সব ছবির মতো ভেসে উঠতে লাগলো আমার চোখের সামনে! বদর-আল-দীন মাঝে মাঝে ঠাট্টা মজাক করে আমাকে সহজ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। কিন্তু তার আগেই মৃত্যু হয়ে গেছে, আমার।

    সেদিন আর কোসরেন পাড়ায় গেলাম না। সরাব ভালো লাগলো না। সকাল সকাল সরাইখানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। নফরটা এসে বলে, মালিক, খানাপিনা করবেন না।

    আমি বলি, নারে, তুই খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়।

    সে বললো, কেন, মালিক, তবিয়ৎ খারাপ হয়েছে নাকি?

    বিদেশ বিভূঁই জায়গা। আমার পুরাতন ভূত্য চিন্তিত হয়ে পড়লো। কিন্তু ওকে আমি তখন কি করে বোঝাই, আমার কী হয়েছে? মনের মধ্যে কিসের তুফান উঠেছে? তার প্রথম চোখের বাণ আমাকে বিদ্ধ করেছে। সেইখানেই আমার মৃত্যু হয়ে গেছে।

    সারা রাত ঘুম এলো না। ঘরের এ প্রান্ত ও প্রান্ত পায়চারি করে কাটালাম! সকাল না হতেই গোসল করলাম। জমকালো দামী পোশাক পারলাম। একটু সরাব আর নাস্তা খেয়ে বাজারের দিকে পা বাড়ালাম। বদর-আল-দীন তখন সবে দোকান খুলে বসেছে। আমাকে দেখেই হৈহৈ করে উঠলো, আরে ব্যাস, সুবা না হতেই সূর্য উঠেছে আজ।

    বদর-এর পাশে বসে আছি! অনগাল রঙ্গ রসিকতা করে চলেছে সে। তার সব কথা কানেও ঢুকছে না। আমার। ‘হু’ ‘না’ করে তার দু-একটা কথার জবাব দিই। আবার কখনও একেবারেই দিই। না। আমার তখন এক চিন্তা। এক ধ্যান-জ্ঞান। সেই মদালসা মোহিনী।

    একটু পরেই মেয়েটি এলো। আমার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো, ভালো আছেন?

    –হ্যাঁ। আপনি? ঘাড় নেড়ে জানালো, সেও ভালো আছে। তারপর ছোটখাটো আরও কিছু কথা হলো। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, আজ আর সে একবারও দোকানীর দিকে ফিরে চাইলো না, বা তার সঙ্গে কোনও বাক্যালাপ করলো না।

    তারপর এক সময়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললে, এবার চলি। আপনার কোন একজন লোক দিতে পারেন আমার সঙ্গে? টাকাটা দিয়ে দিতাম তার হাতে।

    –থাক না, এতো তাড়া কিসের?

    –আপনি বহুৎ দিল-দরিয়া মানুষ। তাই এমন কথা বলতে পারলেন?

    –টাকাটা দিয়ে দিতে পারলেই তো যোগাযোগের সুতোটাও ছিঁড়ে দিতে পারবেন! থাক না। ওই তুচ্ছ টাকাটার অছিলা করেও যদি আপনার দরবারে হাজিরা দিতে পারি, ধন্য হয়ে যাবো।

    মেয়েটি ঠোঁট দিয়ে দাঁত কামড়ে ধরলো। বটুয়া খুলে গুণে গুণে এগারোশো দিরহাম আমার হাতে গুজে দিয়ে বললো আমার মহল আপনার জন্যে সব সময়ই খোলা রইলো। যখন খুশি, যাবেন। কোন আছিল অজুহাতের দরকার হবে না। বুঝলেন সাহেব? এবার আমি চলি।

    দিরহামগুলো আমার হাতে দেবার সময় ওর চাপার কলির মতো আঙুলগুলো আমার হাতের তালুর ওপর দু-এক মুহূর্ত নিশ্চল নিথর হয়ে থেমেছিলো বোধহয়। আমার ধমনীতে রক্তপ্রবাহের গতিবেগ উদ্দাম হতে থাকলো। সাধারণ সৌজন্য-সূচক দু-একটা কথা বলে রাস্তায় নেমে পড়লে! সে! ও বুঝতে পেরেছে পাখী জালে পড়েছে। তাই সে আর তিলমাত্র অপেক্ষা করলো না।

    আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। দোকান থেকে বেরিয়ে একটু পা চালিয়ে এগিয়ে গেলাম। দেখা গেলো অদূরে হেঁটে চলেছে সে। বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখেই চলতে লাগলাম। হঠাৎ এক সময় লোকজনের ভীড়ের মধ্যে কোথায় হারিয়ে গেলো সে। এদিক ওদিক উকি বুকি মেরে তাকে খুঁজছি, এমন সময় বোেরখা পরা অচেনা একটি মেয়ে এসে দাঁড়ালে আমার সামনে।

    –মালিক, মেহেরবানী করে আমার মালকিনের বাড়িতে একবার যাবেন? আপনার সঙ্গে তার দু একটা কথা আছে।

    আমি ঠিক বুঝতে পারলাম। অচেনা অজানা জায়গা। মেয়েটিকে চিনি না। কে তার মালকিন, তাও জানি না। হঠাৎ তার কথায় যাবোই বা কেন? বললাম, আমি তো তোমাকে চিনি না মেয়ে। আর তোমার মালকিনই বা কে? আমার সঙ্গে তার কি দরকার? আমি যেতে পারবো না।

    -সে কি সাহেব, এর মধ্যে সব ভুলে গেলেন? একটু আগেও তার সঙ্গে দোকানে বসে কত গল্প করলেন? আমি তো তার সঙ্গেই ছিলাম। আমার মনিধি উনি।

    এবার বুঝলাম। বললাম, চলো। একটু এগোতেই দেখলাম, একটা দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেই মেয়েটি। আমাকে দেখে ইশারায় দেওয়ালের ওপাশে অপেক্ষাকৃত একটু নিরিবিলি জায়গায় দাঁড়াতে বলে নিজেও এগিয়ে গেলো। সেখানে।

    মেয়েটি মুখের নাকাব সরিয়ে সোজা আমার দিকে তাকালো। তার চোখে মিনতির ভাষা। বললো, তোমাকে দেখা অবধি আমার বুকের মধ্যে কেমন এক কাঁপুনি ধরেছে। সেই কাল থেকে। সারা রাত ঘুমুতে পারিনি। খানাপিনী ভালো লাগছে না। এরকম কেন হলো আমার? কী করেছে। তুমি, সোনা? তুমি কি যাদু জানো?

    -আমার তো সেই কথা। আমিও তো তোমাকে দেখা মাত্র ভালোবেসে ফেলেছি। কাল সারারাত শুধু ঘর-বার পায়চারী করে কাটিয়েছি। এক মুহূর্ত ঘুমুতে পারিনি? তুমি কি যাদু

    হাসলো সে। তার কথার প্রতিধ্বনি শুনলো আমার মুখে। সেই জন্যেই বুঝি হাসলো। বললো, এখন বলে মালিক, তুমি আমারবাড়ি যাবে, না। আমি তোমারবাড়ি যাবো। তুমি যা বলবে, তাই হবে।

    আমি বললাম, আমি এখানে বিদেশী। এখানে আমার কোনবাড়ি নাই। একটা সরাইখানায় উঠেছি। সেখানে তো আর তোমাকে নিয়ে যাওয়া যায় না। হরেক রকম লোকের আনাগোনা সেখানে। সেখানে প্ৰাণ খুলে মনের কথা বলা যায়? তার চেয়ে তোমার যদি অসুবিধে না থাকে, আমি যেতে পারি তোমার বাড়ি।

    —কিছু অসুবিধে নেই, সোনা। কিন্তু আজ না। কাল দুপুরের নামাজের পরে একটা খচ্চরে চড়ে আসবে আমার বাড়ি। হাব্বানিয়াহর মোড়ে এসে জিজ্ঞেস করবে। সিনডিক রবাক-এরবাড়ি কোনটা। আবু সামাহ বললেই বেশী লোকে চিনবে। ওটাই আমার গরীবখানা। যাবে কিন্তু। তোমার জন্যে না খেয়ে বসে থাকবো আমি। যদি না যাও, কিছু খাবো না, এই বলে রাখলাম।

    ওর ছেলে মানুষী কথাগুলো শুনতে ভারি ভালো লাগলো। ওর ভুরু নাচিয়ে নাচিয়ে কথা বলা, ওর আদর আব্দার আমাকে এক অন্য জগতে নিয়ে চলে গেলো। বললাম, যাবে-নিশ্চয়ই যাবো। না গেলে আমি যে মরে যাবো, সুন্দরী।

    খুশিতে প্রায় নাচতে নাচতেই ফিরে আসি সরাইখানায়। কিন্তু কেন জানি না, সে রাতেও ঘুম এলো না। সারা রাত তার কথা ভেবে, তার ছবি একে একে কেটে গেলো। সকলে গোসলখানায় ঢুকে আচ্ছা করে সাফা করলাম। সারা শরীর। দামী সিল্কের পোশাক পারলাম। একপোত্র সরাব নিয়ে নানারকম খাবার দিয়ে নাস্তা। সারলাম। সারা গায়ে দামী আন্তর ছড়ালাম।

    দুপুর হতে না হতেই রুমালের খুটে পঞ্চাশটা সোনার মোহর বেঁধে বেরিয়ে পড়লাম। কাছেই বোব জাবিলার মোড়। সেখানে গিয়ে একটা সুন্দর দেখে খচ্চর ভাড়া-করলাম। ছোকরাটাকে বললাম, হাব্বানিয়াহ-র মোড়ে চল।

    একটু পরেই পৌঁছে গেলাম। ছোকরাটাকে বললাম, দেখে আয় তো, আবু-সামার বাড়ি কোনটা।

    কয়েক মিনিট পরে ফিরে এলো সে। বললো, চলুন, ঐ যে বাড়িটা দেখছেন লাল রঙের—ওই বাড়িটা।

    বাড়ির সামনে এসে সোনার একটা সিকি মোহর হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছোকরাটাকে বললাম, কাল সকালে এসে আমাকে আবার নিয়ে যাবি।

    মোহরটা কপালে ঠেকিয়ে ছোকরাটা বলে, আপনি কিচ্ছু ভাববেন না, কত্তা। আমি ঠিক সময়ে এসে হাজির হবে।

    কড়া নাড়তেই দুটি অল্প বয়েসী খুবসুরৎ লেড়কী দরজা খুলে দাঁড়ালো। অপূর্ব সুন্দরী। ডানাকাটা পরীর মতো।

    –ভিতরে আসুন মালিক, আমাদের মালকিন আপনার জন্যে অস্থির হয়ে পড়েছেন। সারা রাত পায়চারী করে কাটিয়েছেন। আপনার সুরৎ চিন্তায় তার খানাপিনা বন্ধ হয়ে গেছে! আমরা অনেক বুঝিয়েছি, কিন্তু কোন ফল হয়নি। আপনিই তাকে খুশি করতে পারবেন।

    বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখি, বিশাল আঙ্গিনা। আর তার চার পাশে সাতখানা ঘর। সাতটা দরজা। আর চৌদ্দটা জানোলা। নানারঙের ফুলের গাছে আঙ্গিনাটা ভরা। মাঝখানে একটা নিরবধিনির্ঝর ফোয়ারা। তাকে ঘিরে একটা শান বাঁধানো বিরাট চৌবাচ্চা।

    গোটা বাড়িটাই শ্বেতপাথরের তৈরি। দেওয়ালে টাঙানো নামী শিল্পীর দামী দামী ছবি; পারস্য গালিচায় মোড়া মেঝে। মেহগনি কাঠের আসবাব পত্রে সুন্দর করে সাজানো গোছানো; সোফা কোচ টেবিল চেয়ার ইত্যাদি। আমি গিয়ে বসলাম একটা সোফায়।

    এই সময় রাত্রি শেষ হয়ে এলো। শাহরুজিদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।

     

    ছাব্বিশতম রজনী।

    শাহরাজাদ বলতে থাকে। তারপর, শাহজাদা শুনুন :

    সেই কইরোর খ্ৰীষ্টান দালাল তার কাহিনী বলে চলেছে, আর চীনের সুলতান সাগ্রহে তা শুনছে।

    আমি দেখলাম, সেই সুন্দরী আমার দিকে এগিয়ে আসছে। নানারকম মণিমুক্তার অলঙ্কারে সেজেছে সে। পরনে ঢাকাই মসলীন। সাত প্যাঁচে জড়িয়েছে। তবু মনে হয়, একেবারে নগ্ন। তার গ্রীবা, স্তন, কটি, নিতম্ব, জঙ্ঘা, উরু সব পরিষ্কার স্বচ্ছ। প্রসাধন পরিচ্ছন্ন মুখাবয়ব, কাজল আর সুর্মা টানা চোখে তাকে আজি এক অপরূপ লাস্যময়ী রমণী করে তুলেছে। আমার কাছে এসে গা ঘেঁসে দাঁড়ালো। আমার মুখটা চেপে ধরলে ওর কবোষঃ বুকে। তারপর মুখটা নামিয়ে আমার ঠোঁটে রাখলে ওর ঠোঁট। বললো, আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে আজকের এই দিনটা।

    আমি বললাম, আমারও। জীবনে আজ এই প্রথম তোমার ভালোবাসা পেলাম। ভালোবাসা যে কি বিষম বস্তু আগে বুঝিনি। নারীকে চেয়েছি দেহের প্রয়োজন। দাম দিয়ে কিনেছি। মজা লুটেছি। তারপর ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু আজ দুদিন থেকে আমার সব কেমন ওলোটপালোট হয়ে গেছে! তোমাকে দেখার পর থেকে আমার চোখে ঘুম নাই, আহারে রুচি নাই।

    সে বললো, আমারও সেই দশা। আমিও তো এর আগে কারো ভালোবাসা পাইনি। আমার শাদী হয়েছিলো সুলতানের প্রিয়পাত্র এক আমীর-এর সঙ্গে। পয়সাকড়ি প্রতিপত্তির কিছুই অভাব ছিলো না সেই বৃদ্ধের অভাব, ছিলো শুধু একটা জিনিসের। যা না থাকলে মেয়েদের কাছে সে একটা হতভাগা মাত্র। আমি ভালোবাসার স্বাদ বুঝিনি। আজ আমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবে তুমি। আমিও উজাড় করে দেবো সব।

    টেবিলে নতুন কাপড় বিছিযে খানা সাজানো হলো! মোরগামসাল্লাম, তন্দুরী রুটি, সব্জী। আর হালওয়া তামরা দু’জনে বসে খুব তৃপ্তি করে খেলাম, আমার ‘ভালোবাসা’ আদর করে দু-এক টুকরো মাংস আমার মুখে পুরে দিলো। আমিও দিলাম তাকে।

    একটা তামার গামলায় হাত মুখ ধুলাম আমরা। পরিচারিকা এসে গোলাপজল পিচকারী করে দিলো আমাদের মুখে; তুরস্কের তোয়ালে দিয়ে আমার মুখ মুছিয়ে দিলে আমার ভালোবাসা।

    এর পর আমরা নিভৃতে জানালার পাশে বসে সামনের ফুলবাগিচার মনোহর শোভা দেখতে দেখতে অনেক হৃদয়ের কথা বিনিময় করলাম। যে কথা কাউকে বলিনি, যে কথা কাউকে বলা যায় না। সেই সব অতি গোপন কথা বললাম, শুনলাম।

    তারপর আমরা আরো কাছাকাছি হয়ে দেহে দেহ মেলালাম। নতুন খেলায় মেতে উঠলাম দু’জনে। ক্রমে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। সন্ধ্যাও এক সময় গভীর রাত্রি হয়ে যায়। আমরা দুজনা দুজনের মধ্যে হারিয়ে গেছি। কোন দিকে ভ্বদক্ষেপ নাই। মোমের বাতি গলতে গলতে এক সময় ফুরিয়ে যায়। আবার নতুন বাতি জ্বলিয়ে দিয়ে যায়। আবার জ্বলে জ্বলে শেষ হয়। আবার জ্বলে ওঠে বাতি। দুজনে দু’জনের বাহু পাশে আবদ্ধ হয়ে পড়ে থাকি। যতক্ষণ না ভোর হয়। জীবনে এমন মধুযামিনী এর আগে কখনও আসেনি আমার।

    সকালে উঠে সরাইখানায় ফিরে আসি। আসার আগে সেই রুমালে বাধা পঞ্চাশটা সোনার মোহর তার বালিশের নিচে চাপা দিয়ে রেখে এলাম।

    বিদায় নিয়ে আসার সময় তার অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠের সেই কথাগুলো কিছুতেই ভুলতে পারি না।–আবার কবে দেখা হবে, আমার জান।

    —আজ রাতেই আবার আসবো।

    সরাইখানায় নেমে খচ্চরটার সহিস ছোকরাকে বলে দিয়েছিলাম সন্ধ্যাবেলায় সে যেন এসে আবার আমাকে নিয়ে যায়।

    সরাইখানায় এসে গোসল করে নাস্তা খেলাম। তারপর ভাবলাম তাগাদায় বেরুতে হবে। কিছু টাকা চাই। আজ রাতে যাবো। আবার আমার প্রিয়ার কাছে। সুতরাং নাস্তা সেরে বাজারের পথে বেরুলাম। আদায়পত্র করে সরাইখানায় ফিরে এসে দেখি আমার টেবিলে বিরাট জামবাটীতে ভর্তি ভেড়ার মাংসের কোর্মা এবং অনেকখানি ভালো ভালো মিঠাই-মণ্ডা রাখা আছে, বাজারে বেরুবার আগে বলে গিয়েছিলাম বাজারের সবচেয়ে সেরা দোকান থেকে সে যেনো এই খাবারগুলো নিয়ে এসে রাখে। আজ সন্ধ্যাবেলায় আমি সঙ্গে নিয়ে যাবো। আমার প্ৰেয়সীর বাড়ি। রুমালের খুঁটে আবার পঞ্চাশটি স্বর্ণমুদ্রা বেঁধে খাবারদাবার সঙ্গে নিয়ে সেই ছোকরার খচ্চরের পিঠে চেপে আবার গিয়ে নামলাম তার বাড়ির গেটে।

    সে দিন দেখলাম আগাগোড়া বাড়িটা ঝাড়পোছ করা হয়েছে। আরও সুন্দর করে সাজানো-গোছানো হয়েছে ঘর দোর। আমাকে আরও ভালো ভাবে আদর অভ্যর্থনা করার সব ব্যবস্থাই ভারি চমৎকার মনে হলো আমার।

    আমাকে দেখা মাত্র ছুটে এসে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে সে আদর করতে থাকলো, সোনা, সারাটা দিন কী ভাবে যে কাটিয়েছি, কী বলবো। তোমাকে না দেখতে পেলে আমি আর এক মুহূর্ত বাঁচবো না।

    টেবিলে খানা পিন্যা সাজানো হলো; আমার প্রিয়া আমার সাকী আমায় সরাবের পাত্র মুখে তুলে ধরলো। আমি একটা চুমুক দিলাম। এক টুকরো মাংস তুলে নিয়ে আমার মুখে পুরে দিলো। আমি গিলে ফেললাম।

    সুরার নেশায় যত না নেশা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি নেশা ধরায় প্রিয়ার বাহুডোর। মনে হয় ‘এ জগতে তুমি ছাড়া আর কিছু নাই কেহ নাই গো’।

    সারাটা রাত দুজনে দু’জনের বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে পড়ে রইলাম। সকাল হতেই উঠে পড়ি। আমার খচ্চর আসবে। সরাইখানায় যেতে হবে। তারপর আবার তাগাদায় বেরুতে হবে। আবার চাই টাকা। পঞ্চাশটি সোনার মোহর। সন্ধ্যাবেলা রুমালের খুটে বাঁধা মোহরগুলো বালিশের তলায় রেখে ফিরে এলাম সরাইখানায়।

    সারারাতের অনিদ্রা অত্যাচারের ফলে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে। সে দিন আর সকালে তাগাদায় বেরুতে পারলাম না। সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমুলাম। বিকালের দিকে স্নান টান সেরে তৈরি হলাম। নফরটাকে পাঠালাম দোকানে। মুরগীর বিরিয়ানী, চাপ, হালওয়া, আপেল, আঙ্গুর বেদানা নিয়ে এলো সে। সন্ধ্যার আগে খচ্চর নিয়ে এলো ছেলেটা। খাবার-দাবার সঙ্গে নিয়ে পৌঁছলাম প্ৰেয়সীর বাড়ি। সাদর অভ্যর্থনা করে পালঙ্কে বসালে সে। দু’জনে মিলে খানা পিনা সারলাম। তারপর সারা সন্ধ্যা অনেক আদর-সোহাগ-এর পর্ব চললো। রাত বাড়ে। দেহের উত্তেজনাও বাড়তে থাকে। একে অনের মধ্যে হারিয়ে গেলাম। মোমবাতি গলে গলে ফুরিয়ে যায় এক সময়। আবার নতুন মোম জ্বলে ওঠে। তাও এক সময় শেষ হয়। আবার। আবার। এইভাবে রাত্রি অবসান হয়। অনিদ্ৰা-অবসন্ন দেহটা টেনে নিয়ে ফিরে আসি সরাইখানায়। রুমালের খুঁটে বাধা পঞ্চাশটা সোনার মোহর রেখে আসি ওর বালিশের তলায়।

    এই ভাবে রাতের পর রাত তার বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে দিন কাটতে থাকে। অবশেষে একদিন সকালে উঠে বুঝতে পারলাম, আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি! আমার সম্বল বলতে আর কানা-কড়িও নাই।

    কি করবো, কোথায় যাবো, কোথায় টাকা পাবো।–সেই চিন্তা আমাকে পাগল করে তুললে। বাজারে গিয়ে লাভ নাই। সেখানে আমার কোনও কিছু পাওনা নাই। একটু এগুতেই দেখলাম, কতকগুলো ছেলে এক জায়গায় জড়ো হয়ে কি যেন দেখছে। কাছে গিয়ে দেখি, একটা তাগড়াই ঘোড়ার পিঠে এক সিপাই। লড়াই এর সাজে সজ্জিত। এমন দৃশ্য শহরের সাধারণ মানুষ সচরাচর দেখতে পায় না! তাই এতো ভীড়। আমিও ওদের সামিল হয়ে পড়লাম। ভীড়ের চাপে পড়ে সিপাই-এর গায়ে গিয়ে লেপটে পড়ি। সেপাই-এর জেরে আমার হাত ঠেকলো শক্ত মতো বটুয়া আছে বুঝতে পারলাম। জানি না কি হতে কি হয়ে গেলো, টুক করে তুলে নিলাম সেটা। হয়তো আমার হাতে পয়সা কডি ছিলো না বলেই লোভটা সামলাতে পারলাম না। কিন্তু বিপদ এড়াতে পারলাম না। পর মুহুর্তেই সিপাইটা চিৎকার করে উঠলো, আমার টাকা? আমার বটুয়া?

    আশে পাশের যারা ভীড় করে দাঁড়িয়ে ছিলো, সকলের মুখের ওপর একবার চোখ ঘুরিয়ে নিলো সে। আমি ভীড় ঠেলে বেরোবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তা আর হলো না। সিপাই-এর দস্তানা পরা হাতের প্রচণ্ড এক ঘুসিতে পড়ে গেলাম। মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো। মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে আছি আমি। বুঝতে পারলাম, সিপাইকে ছেকে ধরেছে। সবাই। —কেন মারলে ওকে। একটা অসহায় ছেলের গায়ে হাত তুললে কেন?

    সিপাই বললো, লোকটা চোর। আমার জেব থেকে টাকার থলে তুলে নিয়েছে।

    একজন রুখে এলো, মিছে কথা। খানদানী চেহারার ছেলে, দেখছেনা! ও তোমার জেবে হাত ঢোকাবে? তোমার ভুল হয়েছে।

    সিপাই তখনও বলছে, না, আমি ভুল করিনি। ও-ই নিয়েছে আমার বটুয়া।

    কিছু লোক আমার পক্ষে সিপাইকে ডাঁটছে। আবার কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করে চলে যাচ্ছে। এমন সুন্দর একটা ছেলে—চুরি করেছে!

    কেউ আবার মন্তব্য করে, কি যে দিন কাল হলো, মানুষের মুখ দেখ চেনার উপায় নাই—কে কেমন?

    জনতার আক্রেশ ক্রমশই বাড়তে থাকে। সিপাই প্ৰায় কোণ ঠাসা হয়ে পড়ে। এমন সময়, আমার নসীব খারাপ, সেই পথ দিয়ে দারোগা সাহেব যাচ্ছিলো। এমন একটা জমায়েৎ দেখে কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, কী ব্যাপার, এতো জটিল কিসের?

    জনতার একজন এগিয়ে এসে নালিশ জানালো, এই সিপাইটা এই ছেলেটাকে মেরে অজ্ঞান করে দিয়েছে।

    সিপাইটা বললো, আমীর সাহেব, লোকটা চোর। আমার জেব থেকে টাকার বটুয়া তুলে নিয়েছে।

    দারোগার প্রশ্ন, তুমি কি হাতে নাতে ধরেছো?

    –জী না।

    —আর কেউ দেখেছে তোমার জেবে হাত ঢোকাতে? জনতা নিরুত্তর। সিপাইটা বললো, না।

    —তবে? কী করে বুঝলে, ও তোমার জেব মেরেছে?

    –আমার জেবে একটা নীল রঙের বটুয়া ছিলো। আর তার মধ্যে কুড়িটা সোনার মোহর ছিলো, হুজুর।

    দারোগা বললো, ওকে তাল্লাসী করে দেখো।

    আমার পকেট থেকে সেই নীল রঙের বটুয়া পাওয়া গেলো। দারোগা সাহেব নিজে বটুয়া খুলে দেখলো। হ্যাঁ কুড়িটাই মোহর আছে।

    দারোগা সাহেব ক্রুদ্ধ। আমাকে জেরা করতে লাগলো, সত্যি করে বলো, চুরি করেছো?

    আমি আর কি বলবো। মাথা হেট করে দাঁড়িয়ে রইলাম। তখন আমি যাই বলি না কেন, কোন সুফল হতে পারে না; আমার অস্বীকারে দারোগার ক্ৰোধ বাড়বে বই কমবে না। তাই কোন জবাব না দিয়ে চুপ কবে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিন্তু তাতে আরও ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলো সে। —এখনোও বলো, তুমি চুরি করেছে কি না।

    আমি বললাম, জী হুজুর।

    দারোগা তখন তার লোকজনকে বললো, ওর হাত দু’খানা কেটে ফেলো। চুরি করার একমাত্র সাজা হাত কেটে ফেলা। আমার ডান হাতটা কাটা হয়েছে। এবার বা হাতটাও কাটা হবে। এমন সময় সেই সিপাইটা দারোগার কাছে আমার বা হাতটা না কাটার জন্যে আজি পেশ করলো। সিপাই-এর দৌলতেই এ হাতটা রক্ষা পেয়ে গেছে।

    দারোগারা চলে যাবার পর উপস্থিত জনতার কয়েক জন আমাকে, দয়াপরবশ হয়ে, হেকিমি দাওয়াখানায় নিয়ে গেলো। ওষুধপত্র লাগিয়ে বেঁধে দিলো হেকিম। অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে শরীরের। বেশ দুর্বল হয়ে পড়লাম। কে একজন এক পাত্র সরাব এনে দিলো আমাকে। এক চুমুকে টেনে নিলাম। একটু পরে চাঙ্গা হলো শরীরটা। ডান হাতের ওপর রুমালটা জড়িয়ে নিয়ে দাওয়াখানা থেকে পথে নামলাম।

    আমার ‘ভালোবাসার’ কাছে যাবো। কিন্তু এই হাত নিয়ে তার কাছে দাঁড়াবো কি করে? কী বলবো তাকে? ভেবে কিছু কুল কিনারা করতে পারলাম না। এক পা এক পা করে কখন যে তার বাড়ির সামনে এসে পড়েছি, বুঝতে পারিনি।

    আমাকে দেখে ছুটে এলো সে। সন্ধ্যা বেলায় আসার কথা, অথচ সকালেই এসে গেছি। অপ্রত্যাশিত পাওয়ার আনন্দে উচ্ছল হয়ে উঠলো আমার প্ৰেয়সী। আমি বিষণ্ণ বিবশ হয়ে ঘরে গিয়ে পালঙ্কে শুয়ে পড়লাম। সে আমার পাশে এসে বসে গায়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো—কি হয়েছে, সোনা, তোমাকে এমন শুকনো-শুকনো দেখাচ্ছে কেন? অন্যদিন কেমন সেজেগুজে আসো। কিন্তু আজ তোমার জামাকাপড়ও কেমন কুচকে গেছে, মাথার চুলগুলো এলো মেলো—কী হয়েছে বলতো?

    আমি বললাম, শরীরটা ভালো নেই, বডড় মাথা ধরেছে।

    —টিপে দেবো?

    আরো কাছে এগিয়ে আসে সে। আমার মাথাটা তুলে নেয় ওর কোলে।

    আমি বলি, না, থাক। তেমন কিছু না। ও এমনি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মেয়েমানুষের চোখে ফাকি দেওয়া যায় না। ও বললো, না সোনা, তুমি লুকিয়ে রাখছো। নিশ্চয়ই কিছু ঘটেছে। তোমাকে এমন মন-মরা হয়ে থাকতে কখনও দেখিনি। আমার কাছে খুলে বলো, সোনা। তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে, সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটেছে।

    —কিছু ঘটেনি। আমার শরীরটা ভালো নাই। তুমি এখন যাও, আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

    আমার বলার ঝাজে আহত হলো সে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। —বুঝেছি, আমাকে আর ভালো লাগছে না তোমার। এই ক’দিনেই আমি ফুরিয়ে গেছি তোমার কাছে।

    আমি মহা ফাঁপরে পড়লাম। কি বলে, কি করে ওর কান্না থামাই। কি করে বোঝাই, ওসব কিছু না, ভালোবাসাতে কোন চিড় খায়নি।

    —তোমার ওসব কথা মনে এলো কি করে? তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে ভালোবাসিনি সোনা।

    —না না না। ও কথা বলে আমাকে বোঝাতে পারবেনা। তোমার চোখ দেখে আমি বুঝেছি। আমার ওপর আর কোনো আসক্তি নাই তোমার। তোমাকে খুশি করার মতো আর কিছুই নাই আমার।

    আমার কোন কথাতেই কান দিলো না সে। সারাটা দুপুর, সারাটা বিকাল কেঁদে ভাসালো। সন্ধ্যার আগে অন্য দিনের মতো খাবার সাজানো হলো। আমার কাছে এসো।

    আমি বললাম, আমার খিদে নেই। তুমি খেয়ে নাও। আমি পরে খাবোখন।

    এই কথায় ভীষণ রেগে গেলে সে। —খাবে তো শিগ্‌গির উঠে এসো। না হলে সব উল্টে দেবো, বলছি।

    অগত্যা বাধ্য হয়ে খাবার টেবিলে যেতে হলো। বাঁ হাত দিয়ে খাবার তুলে মুখে দিতেই অবাক হয়ে সে প্রশ্ন করে, সেকি? তোমরা ডান হাতে কি হয়েছে? দেখি?

    আমার রুমালে বাধা হাতটা তুলে ধরলে সে। আমি বললাম, একটা ফোড়া উঠেছে, তাই বেঁধে রেখেছি।

    সে বলে, ঠিক আছে, আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি। খাওয়ার পর ছুরি দিয়ে মুখটা ছাড়িয়ে দেবো, দেখবে পুজ রক্ত বেরিয়ে গেলে, আরাম পাবে।

    আমি বলি, সবে উঠেছে, এখনও পাকেনি। আমার চোখে জল এসে গেলো। যার কাছে হলদায়ের কোন কথা গোপন রাখিনি, আজ তার কাছে অনগাল মিথ্যে বলে যাচ্ছি আমি। আমার চোখে জল দেখে সে মনে করলে ফোঁড়ার ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েছি। বললো, একটু সরাব খেয়ে নাও, ব্যথাটা কমে যাবে।

    একপাত্র সরাব তুলে ধরলে আমার মুখে। এক চুমুকে খেয়ে নিলাম। আরও এক পাত্ব ভরে দিলো—পরে আরও এক পাত্র। নেশা বেশ ধরে গেলো। ঘুমে ঢুলু ঢুলু হয়ে এলো চোখ। আমাকে ধরে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলো। মুহূর্তের মধ্যেই ঘুমে গলে গেলাম।

    সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই ডান হাতটা তুলে দেখলাম। আমরা ঘুমের সুযোগে সে হাতটা খুলে দেখে আবার বেঁধে রেখেছে। হেকিমের হাতের বাধা থেকে সে বাধা অন্য রকম। লজ্জায় দুঃখে। ওর মুখের দিকে আর তাকাতে পারি না। ও কিন্তু কিছু বললো না, কিছু প্রশ্ন করলো না। শুধু এক পেয়ালা সরাব আমার মুখের সামনে তুলে ধরলো। কোন কথা না বলে এক চুমুকে খেয়ে নিলাম সবটুকু! বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, এবারে চলি, অনেক বেলা হয়ে গেলো।

    সে এবার পথ রোধ করে দাঁড়ালো, না, যাওয়া হবে না। কোথায় যাবে তুমি?

    —যেদিকে দু-চোখ যায়! আমার দুর্ভাগ্যের সঙ্গে তোমাকে আর জড়াতে চাই না! ভাগ্যের অন্বেষণে বেরুবো। দেখি, কি হয়।

    সে বললো, এখন তোমার হাতের এই অবস্থা। ভালো করে সেবা শুশ্রুষা দরকার; অন্য কোথাও গেলে তা হবে না। এখানেই থাকতে হবে তোমাকে।

    আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। ওর বুকের মধ্যে মুখ গুজে ছোট ছেলের মতো কেঁদে উঠলাম, —আমি চোর। চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছি।

    ও আমার মুখে হাত চাপা দিলো, চুপ, কেউ শুনে ফেলবে। আমি কাল রাতেই তোমার হাত খুলে দেখেছি! চুরি করার একমাত্র সাজা হাত কেটে দেওয়া! কিন্তু আমি ভেবে পেলাম না, সোনা, তুমি কোন চুরি করতে গেলে?

    –আমার আর কিছুই নাই! সব শেষ করে দিয়েছি।

    মেয়েটি কোন কথা বলতে পারলো না। সব দোষটিই তার। প্রতি সন্ধ্যায়। সে এসেছে। সাল্লারাত স্মৃতি করেছে। মদ মাংসে অনেক পয়সা গেছে। তাছাড়া রোজ পঞ্চাশটা করে মোহর দিয়ে গেছে তাকে। এই ভাবে ব্যবসার সব টাকা পয়সা খুইয়ে সে পথের ভিখিরী।

    –তোমাকে কোথাও যেতে হবে না। এখানেই থাকো। আমার জন্য তোমার আজ এই অবস্থা।  ব্যবসা-বাণিজ্য ডকে তুলে আমাকে নিয়ে মত্ত হয়ে গিয়েছিলে! বোকার মতো দুহাতে পয়সা উড়িয়েছো, আমিও তোমাকে পেয়ে আনন্দে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। তোমার কিসে ভালো হবে, তা আমার দেখা উচিত ছিলো। তা না, আমি তোমাকে সব কাম কাজ ভুলিয়ে আমার কাছে ধরে রেখেছিলাম। আজ তুমি সর্বস্বান্ত, শুধু আমার জন্যে। আর আমার জন্যেই তোমার হাতটা গেছে। এই দুঃখ আমি কোথায় রাখবো, সোনা। কি দিয়ে এর প্রায়শ্চিত্ত করবো।

    আমি ওকে বুকে টেনে নিই। তোমার কি দোষ? আমি তো আর ছেলেমানুষ নই। আমার নিবুদ্ধিতার ফল আমাকে ভোগ করতে হবে।

    —না না না। সে হতে পারে না। তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারবে না। দুনিয়াতে এমন কোন শক্তি নেই, তোমার থেকে আমাকে আলাদা করে রাখবে। আমি আজই এখুনি সব ব্যবস্থা পাকা করে দিচ্ছি। তোমাকে আমি শাদী করবো। আমার যা আছে সব তোমাকে দেবো, তুমি আবার ব্যবসা-বাণিজ্য করবে। আমরা সুখে দুঃখে ঘর সংসার করবো।

    আমি হতবাক হয়ে রইলাম। সত্যিকারের ভালোবাসা না থাকলে এ কথা কেউ বলতে পারে না। অথচ ওকে আমি গোড়া থেকেই ভুল বুঝেছিলাম। টাকা দিয়ে কিনতে চেয়েছিলাম।

    মৌলভী আর সাক্ষী ডাকা হলো! সেই দিনই সন্ধ্যাবেলায় আমরা শাদী করলাম। ও তার সমস্ত বিষয়-সম্পত্তি টাকাকডি আমার নামে দান-পত্র করে দিলো।–তোমার মানেই আমার। এই বিশাল সম্পত্তির বোঝা আমি আর বইতে পারছি না। আজ থেকে তুমি আমার আইনসম্মত স্বামী। তোমার হাতেই সব তুলে দিলাম। আর আমার শাদীর দেন মোহর? সে তো তুমি সোনা, অনেক দিন ধরে জমা করে দিয়েছে আমার কাছে।

    রাতের খানা পিনা শেষ করে আমাকে নিয়ে গেলো। সে তার সিন্দুকের কাছে! এক এক করে সব দেখালো, তার টাকা পয়সা। হীরা জহরৎ, অলঙ্কার। আমার দেওয়া মোহরগুলো দেখলাম, তেমনি রুমালের খুঁটেই বাধা আছে। সে বললো, আজ থেকে এইসব তোমার। এই নাও চাবি।

    আবার আমি নতুন জীবন পেলাম। হাসি গানে ভরে উঠলো আমাদের জীবন। নতুন করে ব্যবসা বিবির মুখে অনেক হাসি হল্লার মধ্যেও, এক করুণ বেদনার ছাপ অনুভব করতাম আমি। অনেকরাতে ঘুমের ঘোরে। প্রলাপ, বকতো, আমার জন্যে—শুধুই আমারই জন্যে ডান হাতটা গেলো। আমার মতো। হতভাগীর মরণ হয় না-কেন…

    আমি তাকে জাগিয়ে তুলি, সোনা, কি সব ভুল বকছো। আমার একটা হাত গেছে, তার জন্যে তুমি দিন রাত অতো কষ্ট পাও কেন? আর একটা হাত তো আমার আছে? আর সব চেয়ে বড়ো।–তুমি তো আছো। আমার যদি এ হাতটাও কাটা যেতো, তোমাকে যখন সারা জীবনের মতো পেয়েছি, আমার কোন দুঃখ থাকতো না। আমি হয়তো প্ৰাণেই বাঁচতম না, যদি তুমি আমাকে না। এমনিভাবে কাছে টেনে নিতে। কোন মন খারাপ করো না, সোনা। যা গেছে তা গেছে। যা আছে, যা পেয়েছি তাই নিয়ে হেসে খেলে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেবো আমরা।

    কিন্তু সারাটা জীবন আর একসঙ্গে কাটাতে পারলাম না। কি কালব্যাধিতে ধরলো তাকে—কত বড় হেকিম দেখলাম, কত দামী দামী দাওয়াই পত্র খাওয়ালাম, কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। দিন দিন শুকিয়ে যেতে লাগলো সে। যতই তাকে হৈ চৈ করে মাতিয়ে রাখতে চেষ্টা করি, ততই যেন সে আরও মুষড়ে পড়ে। বুঝতে পারলাম, আমার হাতটা কাটা যাওয়ায় যে-আঘাত পেয়েছে সে, তা আর সামলাতে পারছে না।

    ঘুসঘুসে জ্বর হতে লাগলো। সারাদিন রাত ছাড়ে না। খুক খুক করে কাশে। বুকে ব্যথা! একদিন কাশতে কাশতে রক্ত উঠলো মুখ দিয়ে। হেকিম বললো, ক্ষয় রোগ। সারা বুকটা বাঝরা করে ফেলেছে। বাঁচানো শক্ত।

    বাঁচানো গেলোও না। এর মাসখানেক বাদে একদিন সকালে আমাকে শোকের সায়রে ভাসিয়ে দিয়ে বেহেস্তে চলে গেলো সে।

    তার মৃত্যুর পর তার সমস্ত ধন সম্পত্তি আমার হাতে এলো। এতো অর্থ নিয়ে আমি কী করবো? টাকা পয়সা বা হীরে জহরৎ ছাড়াও আর যে সব জিনিসপত্র ছিলো সেগুলো এক এক করে বিক্রী করে দিলাম। পঞ্চাশ মণ ক্ষীরার বীজ ছিলো ঘরে। আপনাকে দিয়ে বিক্রী করালাম। দিনের পর দিন কথা দিয়েও আপনার কাছে টাকাটা নিয়ে যেতে পারলাম না। তার কারণ আমি তখন অন্যান্য জিনিসপত্র, জমিজমা, বিষয়আশয় সব বেচে দেবার ধান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। এতোদিনে সব কাজ শেষ হয়ে গেলো। আজ আমার সময় হয়েছে তাই আপনার কাছে এসেছি। কিন্তু আমার একটা নিবেদন আছে। আমার এখন অনেক টাকা। এতো টাকা নিয়ে আমি কি করবো, ভেবে পাচ্ছি না। আপনার কাছে যে টাকাটা গচ্ছিত আছে সেটা আমি আর ফেরৎ নিতে চাই না, ওটা আপনাকে দিলাম। আপনি ব্যবসা বাণিজ্য করে ধনবান হোন, এই আমি চাই।

    যুবক বললো, এই হলো আমার জীবনের কাহিনী। এই জন্যে আজ আমি আপনার বাড়িতে বা হাত দিয়ে খানা খেলাম।

    তারপর, জাঁহাপনা আমি সেই যুবককে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললাম, তোমার এই অনুগ্রহ আমার চিরকাল মনে থাকবে।

    সে বললো, ওসব কিছু মনে রাখার দরকার নাই। আজ আমি এতো বিত্তবান, আপনার ঐ সাড়ে চার হাজার দিরহাম আমার কাছে কিছুই না। আপনি যদি আমার সঙ্গে ব্যবসায় আসেন, খুব খুশি হবো। আমি এখন বাগদাদে কারবার শুরু করেছি। আপনি তো শুনলেন বাগদাদ আমার জন্মভূমি। কাইরো এবং আলেকজান্দ্রা থেকে মাল নিয়ে গিয়ে বাগদাদে বিক্রী করছি। দারুণ মুনাফা। আপনি আমার সঙ্গে আসুন, তাহলে কারবারটা আরও বড় করে বাড়াবো।

    আমি তো হাতে স্বগ পেলাম। কাইরো আর আলেকজান্দ্রা থেকে মালপত্র নিয়ে গিয়ে বাগদাদে বিক্রী করে মোটা লাভ করতে লাগিলাম। সে আমাকে লাভের আধাআধি বাখরা দেয়। এইভাবে আমাদের কাজ-কারবার বেশ ভালোই চলছে। এখন আবার এসেছি মালপত্র কিনতে। কাল রাতে একটু মৌজ করে আস্তানায় ফিরছিলাম। পথের মধ্যে কুঁজের মরা লাশটা নিয়ে ফালতু ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ি, হুজুর।

    এই সময় শাহরাজাদ দেখলো, রাত শেষ হয়ে আসছে। গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো সে।

     

    সাতাশতম রজনী।

    শাহরাজাদ শুরু করে। শুনুন জাঁহাপনা : সেই খ্ৰীষ্টান দালাল তার কাহিনী শেষ করে বললো, আমার বিশ্বাস, হুজুর, কুঁজোর এই মৃত্যুর জন্যে কোন ব্যক্তি বিশেষের হাত নাই। নিয়তি লেখা ছিলো, তাই সে মারা গেছে।

    সুলতান মাথা নেড়ে বলে, না না, ওসব ছেদো কথায় আমাকে ভোলাতে পারবে না। আমি তোমাদের সবাইকে এক এক করে ফাঁসী। দেবো। আমার দরবারের এমন মজার বয়স্যকে তোমরা হত্যা করেছে, তোমাদের কাউকে ছাড়বো না।

    তখন সুলতানের বাবুর্চি এগিয়ে এসে কুর্নিশ জানিয়ে বললো, হুজুরের আজ্ঞা হলে আমার কাহিনী দরবারে পেশ করতে পারি।

    সুলতান বললো, বেশ, বলো।

    বাবুর্চি বললো, আমার কাহিনী ঐ খ্ৰীষ্টান দালালের কাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি চমৎকার। শুনে যদি জাঁহাপনার ভালো লাগে, এবং বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় তবে সকলের দোষ মাফ করে দেবার প্রার্থনা জানাচ্ছি।

    সুলতান বললো, আচ্ছা—কি রকম মজার কাহিনী—তা আগে শোনাও দেখি।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142 143 144 145 146 147 148 149 150 151 152 153 154 155 156 157 158 159 160
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকবীর – ১ – ক্ষিতিমোহন সেন
    Next Article প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা – ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.