Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : জয়ন্ত সিং)

    October 27, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    October 27, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সহস্র এক আরব্য রজনী

    ক্ষিতিশ সরকার এক পাতা গল্প3728 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১.৩৩ রাজহাঁস ও ময়ূর-ময়ূরী

    রাজহাঁস ও ময়ূর-ময়ূরী

    একশো ছেচল্লিশতম রজনীর মধ্য যামে সুন্দর সুন্দর পশু-পাখিদের গল্প বলতে শুরু করে শাহরাজাদ। প্রথমে শুনুন রাজহাঁস ময়ূর আর ময়ুরীর উপাখ্যান–

    সে অনেককাল আগের কথা। এক সমুদ্রের তীরে বাস করতো এক ময়ূর দম্পতি। মনের আনন্দে দুজনে পুচ্ছ নাচিয়ে ঘুরে বেড়াতো বনে বনে। ঝরনার সৌন্দর্য দেখে আর পাখির কাকলি শুনে দিন কাটাতে। দিনের বেলায় বেরুতে আহারের অন্বেষণে। আর রাত্রিবেলা এক গাছের কোটরে এসে বিশ্রাম করতো। এইভাবে দিন কাটছিলো। একদিন ময়ূর ময়ুরীকে বললো, চলো, একটু দূরে কোথাও বেড়িয়ে আসি। একই জায়গায় রোজই ঘোরাফেরা-বড় একঘেয়ে লাগছে। নতুন জায়গার গাছপালা ফুল পখি-প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বৈচিত্র্য ভালোই লাগবে।

    ময়ূরী বলে, খুব ভালো হবে। চলো যাই।

    সেই দিনই তারা উড়তে উড়তে চলে গেলো একটা সুন্দর দ্বীপে। যে দিকে তাকায় চোখ জুড়িয়ে যায়। গাছে গাছে বাহারী ফুল, থোকা থোকা নানা সুমিষ্ট ফল। আর নিরন্তর নির্ঝর ঝরনার সে কি মনোহারী শোভা? একটা কাঁকড়া গাছের ছায়ায় বসে নাম-না-জানা নানা জাতের মিষ্টি মিষ্টি ফল আর ঝরনার নির্মল জল খেয়ে খেয়ে খুশিতে নাচতে লাগলো তারা।

    সারাদিন বেশ আনন্দ করে কাটিয়ে পড়ন্ত বিকেলে যখন তারা স্বগৃহে ফেরার উদ্যোগ করছে, এমন সময় সেখানে এক রাজহাঁস এসে। হাজির হলো। চোখে মুখে আতঙ্ক। ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে এসে বললো, বাঁচাও বাঁচাও আমাকে।

    ভয়ে থর থর করে কাঁপছে। ময়ূর এগিয়ে এসে বললো, কোনও ভয় নাই। আমরা তো আছি। কী ব্যাপার, কেউ তাড়া করেছে বুঝি। যাই ঘটুক তোমার কোন চিন্তা নাই, বোন।এখন তুমি আমাদের মেহেমান-ঘরের লোক। তোমাকে রক্ষা করার সব দায়-দায়িত্ব আমাদের।

    রাজহাঁস কাঁপতে কাঁপতে বলে, আদমকিন!

    ময়ূর বলে, ভয় নাই, আল্লাহ রক্ষা করবেন। কিন্তু সমুদ্রের মধ্যে এই দ্বীপে আদমকিন এললা কি করে? চারদিকে জল, আদমকিন তো আর উড়তে পারে না। সাঁতার দিতেও জানে না। তুমি এখানে কতদিন আছো?

    রাজহাঁস বললো, খুব ছোটবেলা থেকে আমি এই দ্বীপে বাস করছি। এতদিনের মধ্যে ভয়ের কোনও ব্যাপার হয়নি। দিব্যি সুখে স্বচ্ছন্দে দিন কাটাচ্ছিলাম। গত রাতে আমি আমার ডেরায় শুয়ে ঘুমিয়ে আছি—একটা স্বপ্ন দেখলাম। একটা আদমকিন এসে আমাকে বলছে, ওহে রাজহংস, তোমার শরীরটা বেশ নাদুসনুদুস। আমার জিভে জল আসছে। আর খিদেও পেয়েছে বেজায়।

    দেখলাম তার চোখ দুটো ভাঁটার মতো জ্বলছে। লম্বা লম্বা দাঁতগুলো দেখে আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেলো। আদমকিনরা ভয়ঙ্কর বদমাইস। ওদের গায়ে ভীষণ জোর আর মগজে শয়তানী বুদ্ধি। বুনো হাতীর সঙ্গেও তারা পাঞ্জা লড়ে।

    আমি ধড়মড় করে লাফিয়ে উঠে পাখা ঝাপটাতে ঝাপটাতে চোঁ দৌড় দিলাম। আদমকিন আমার পিছনে পিছনে তাড়া করতে লাগলো। আমিও ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলেছি। ছুটতে ছুটতে অবশেষে এক পাহাড়ের গুহায় এসে লুকিয়ে পড়লাম। তখন আমার হাত পা অসাড় অবশ হয়ে গেছে। ভয়ে বুক ধড়াস ধড়াস করছে। সারাদিন না খেয়ে সেই গুহার মধ্যে পড়ে রইলাম। বাইরে বেরিয়ে যে খাবার-দাবারের সন্ধান করবো—সে সাহস নাই। তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ। কিন্তু গুহার ভিতরে জল কোথায় পাবো? হঠাৎ নজরে পড়লো, গুহার আর এক কোণে শুয়ে আছে এক পশুরাজ সিংহ। আমাকে সে অনেক আগেই দেখেছিলো—আমি তাকে এই প্রথম দেখলাম। শুয়ে শুয়ে আমাকে দেখে মৃদু মৃদু হাসছে। আমার বুকে ভরসা হয়। সে আমাকে মিষ্টি করে ডাকলো, কি বাছা, অমন ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে কেন? এদিকে এসো, কি হয়েছে, বলো দেখি শুনি।

    তার কথায় আমি খানিকটা আশ্বস্ত হই। গুটি গুটি তার দিকে এগিয়ে যাই। পশুরাজ জিজ্ঞেস করলো, তোমার নাম কি? কোন জাতের জানোয়ার তুমি?

    আমি বলি, আমার নাম রাজহংস, জাতে আমি পাখি।

    সিংহ মশায় বললো, দেখছি তুমি ভয়ে সিটকে গেলে। কী ব্যাপার?

    আমি তাকে আমার স্বপ্নের কাহিনী বললাম।

    সিংহ শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো আশ্চর্য ব্যাপার তো? দিন কয়েক আগে আমিও ঠিক এই রকম একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমার বাবাকে বলতেই তিনি হুশিয়ার করে দিয়ে বললেন, খুব সাবধান, এই আদমকিনগুলো ভীষণ শয়তান হয়। ওদের বদমাইশী বুদ্ধির কোনও তুলনা নাই। কিভাবে কখন যে পিছন দিক থেকে এসে ঘায়েল করবে কেউ জানে না।

    সিংহের কথা শুনে আবার আমি ভয়ে শিউড়ে উঠলাম। তাহলে উপায়? এই রকম একটা মারাত্মক জানোয়ার নিয়ে এই বনে বাস করবো কি করে? পশুরাজকে তোয়াজ করতে লাগলাম, তুমি এ বনের রাজা। এখানে এসে একটা সামান্য আদমকিন দাপট দেখাবে তা কি সহ্য করবে তুমি? এ কথা শুনলে লোকে যে ছি-ছি করবে। তোমার যা অসীম বিক্ৰম-তুমি যদি একটা হুঙ্কার ছাড়ো-আদমকিন তো কোন্ ছার ওর বাবা সুদ্ধ কাপড়ে-চোপড়ে হয়ে যাবে। ঐ শয়তান জানোয়ারটাকে যদি শায়েস্তা করতে পারো তা হলে আমাদের মতো চুনোপুটিরা দু’হাত তুলে তোমার জয়গান করবে। তুমি পশুরাজ-বনের অধিপতি, তোমার সাম্রাজ্যে এত বড় অনাচার তো চলতে দিতে পারে না। আমরা তোমার একান্ত অনুগত প্ৰজা। আমার ধন প্রাণ রক্ষা করার দায়িত্ব তোমার। তুমি এর একটা বিহিত কর সিংহরাজ। না হলে আমি তো যাবেই আমার মতো হাজার হাজার জন্তু জানোয়ার ওর শিকার হবে।

    সিংহ গর্জে ওঠে, তুমি ঠিক বলেছ, রাজহংস। আমার বনে অন্য কেউ এসে মস্তানি করে যাবে এ তো সহ্য করা যায় না। চলো, এখনি ব্যাটার সাধ মিটিয়ে দিয়ে আসি। এই বলে পশুরাজ সদৰ্পে গুহা থেকে বেরিয়ে বন বাদাড় ভেঙে চলতে থাকে। আমিও তার পিছনে পিছনে চলি। তার হুঙ্কার আর লেজের ঝাপটে সারা জঙ্গল কাঁপতে থাকে। তার পিছনে চলা আমার পক্ষে বেশ কষ্ট হয়ে উঠেছিলো। না জানি কখন ওর ওই লেজের চাবুকের বাড়ি এসে লাগে আমার গায়ে। তা হলে আর দেখতে হবে না। এক বাড়িতেই ছাতু ছাতু হয়ে যাবো।

    যাই হোক, অনেকটা জঙ্গল পেরুবার পর এক সময় নজরে এলো, সামনেটা ধুলোয় অন্ধকার হয়ে গেছে। ক্রমশই ধুলোর ঝড়টা আরও কাছে আসতে থাকলো। এবার মোটামুটি বোঝ গেলো, একটা গাধা ছুটে আসছে। মাঝে মাঝে সে উল্টে পড়ে গিয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আবার উঠে ছুটছে। আমাদের সামনে আসতে সিংহরাজ ধমক দিয়ে ওঠে, এ্যাইও রকম বাঁদরের মতো লম্ফ ঝম্ফ করছে কেন? কে তুমি? কোন্ জাতের জানোয়ার?

    গাধাটা কাঁপতে কাঁপতে বললো, হুজুর মহানুভব আমার নাম গাধা। আমরা জাতেও গাধা জানোয়ার। আদমকিনের ভয়ে আমি প্রাণরক্ষা করার জন্যে পালাচ্ছি।

    সিংহ হো হো করে হেসে ওঠে, তোমার মতো দশাসই চেহারার জানোয়ারসামান্য একটা আদমকিনের ভয়ে তুমি পালাচ্ছ? লজ্জা করে না।

    গাধাটা মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে, আপনি জানেন না পশুরাজ, আদমকিন কি মারাত্মক জানোয়ার। তার অসাধ্য কিছুই নাই। এমন ছলচাতুরী করে সে আপনাকে কঁদে ফেলবে, বাঁচবার আর কোন পথ থাকবে না। সে যে আমাকে মেরে ফেলবে—এবং সেই ভয়ে আমি পালাচ্ছি তা ঠিক না। কিন্তু সে আমাকে বিস্তর নাস্তানাবুদ করতে পারে। করেছেও। সে আমার কাছে এসে বললো, আমি তোর পিঠে চাপবো। আমি দেখলাম না বললে ঝামেলা করবে। বললাম, তা চাপতে চাও চাপে। সে এমন একটা বদখদ জিন লাগাম এনে জুড়লো যে, পিঠের ছাল চামড়া আমার উঠে গেছে, এই দেখুন।

    আমরা দেখলাম, সত্যিই পিঠের কয়েকটা জায়গা ঘষা লেগে ছড়ে গেছে। রক্ত ঝরে না পড়লেও বেশ টকটকে লাল হয়ে উঠেছে। গাধাটা মুখখানা হাঁ করে দেখিয়ে বললো, এমন একটা লাগাম লাগিয়েছিলো, এই দেখুন ধর্মাবতার, জং-ধরা লোহার আংটায় আমার জিভটা কেটে কি হয়েছে?

    সত্যিই—জিভটা দিয়ে তখনও রক্ত ঝরছে। গাধা বলতে থাকে, এমন চাবুক কষতে লাগলো যে, আমার দফা রফা। মারের চোটে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চললাম। কিন্তু কঁহাতক আর একটানা অত জোরে ছোটা যায়। যেই একটু ঢিলে দিয়েছি—আবার সপাসপ চাবুক পড়তে থাকে পিঠে। আর সে কি খিস্তি করে গালাগাল। আমার চৌদ্দ পুরুষের গুষ্টির তুষ্টি করে ছেড়েছে। আপনাকে আমি কসম খেয়ে বলছি, হুজুর আমি সাচ্চা গাধার বাচ্চা। আমার চৌদ্দ পুরুষের কেউ খারাপ ছিলো না। অথচ সে আমাকে কি গালাগালটাই দিলো, আমি নাকি খানকির ছেলে, আমার বাবা নাকি ছিলো জুয়াচোর, মেয়ে মানুষের দালাল। আরও অসভ্য সব কথা-যা মুখে আনা যায় না। রাগে আমার শরীর জ্বলতে লাগলো। তাকে তাকেই ছিলাম। একটা টিলার ওপরে উঠেছি—তাকিয়ে দেখলাম, নিচে একটা খাদ। এমন জোরে লাফিয়ে উঠে গা-ঝাড়া দিলাম, বাছাধন একেবারে ছিটকে গিয়ে পড়লো খাদের নিচে। আর সেই মওকায় দে ছুট-দে ছুট। ছুটতে ছুটতে হাফ ধরে গেলো। পা জড়িয়ে আসতে লাগলো। বুড়ো হয়েছি, আগের মতো গায়ে কি অত জোর আছে। তাই মাঝে মাঝে উল্টে পড়ে গেলাম।

    সিংহ মজা পায়, তা পালাবার কি আছে?

    —আপনি জানেন না, হুজুর, শয়তানটা আমাকে ভিস্তিওয়ালার কাছে বিক্রি করে দেবে বলে ধমকাচ্ছিল। তা যদি সত্যি সত্যিই ভিত্তিওয়ালার কাছে বেচে দেয়, এক্কেবারে মরে যাবো। এই বুড়ে হাড়ে ঐ রকম জলের জালা বইতে পারা কি সহজ ও নির্ঘা মরে যাবো। তখন আমার লাশটা ওরা জঙ্গলে ছুঁড়ে দেবে। আর শেয়াল শকুনে ফলার করে খাবে। এখন বলুন, ধর্মাবতার, আপনি এই বনের রাজা থাকতে আমাকে আদমকিনের হাতে এই রকম সাজা পেতে হবে? তার মতো সাংঘাতিক শয়তান জানোয়ার সারা দুনিয়ায় আর দু’টি নাই। আপনি এক একটা বিহিত করুন, এই আমার প্রার্থনা।

    আমি বললাম, গাধার কথা শুনে আপনি আরও ভালো করে বুঝতে পারলেন, হুজুর, জানোয়ারটা কত বড় পাজি। গাধাকে সে জানে মারতে পারবে না—তবু কি নাজেহালটা না করেছে। আর আমাকে তো সে গিলেই খেয়ে ফেলতে পারে।

    গাধাটা চলে যাবার উদ্যোগ করতেই সিংহ বললো, এত তাড়া কিসের? কোথায় যাবে? না–ভয়ে পালাচ্ছো? দাঁড়াও সবুর কর। আমার সঙ্গে একবার চলো, জায়গাটা দেখিয়ে দেবে, কোন্ দিকে গেলে আদমকিনের দেখা পাবো।

    -–ওরে বাবা, দোহাই হুজুর, ঐ কথাটি বলবেন না। আমি ওই মহাশয়তানটার ধারে কাছে যেতে চাই না আর। ওর ফন্দী ফিকির বড় খারাপ। আমার এখন একমাত্র কাজ, ওর থেকে মাইলদশেক দূরে চলে যাওয়া।ও যে দিকে যাবে আমি ঠিক তার উল্টো দিকে যাবো। এমন একটা গুপ্ত ঘাঁটি খুঁজে বের করতে হবে, যাতে বদমাইশটা আমার আর হদিশ করতে না পারে।

    এই সময়ে দেখা গেলো ধুলো উড়িয়ে আর একটা জানোয়ার আমাদের দিকেই ছুটে আসছে। তার খটখট খুরের শদে উচ্চকিত হয়ে উঠেছে চারপাশ। জানোয়ারটা কাছে এসে পরাজকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে অভিবাদন জানায়। সিংহরাজ জিজ্ঞেস করলো, কে তুমি?

    –হুজুর আমি অশ্ব। অশ্ব জানোয়ার বলেই আমি পরিচিত। আদমকিনের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে আমি পালাচ্ছি।

    সিংহ বলে, এমন কথা তোমার মুখে সাজে না। তোমার যা শক্তি এবং বিক্রম তাতে ঐ রকম একটা জানোয়ারকে গ্রাহ্য করা কি তোমার উচিত। ভেবে দেখো, ব্যাপারটা কি লজ্জার। তোমার একটা লাথির ঝাপটায় সে অক্কা পেতে পারে। আর তাকেই তোমার এতো ভয়। আমার দিকে তাকাও, আমি তো তোমার মতো চেহারায় অতো জাঁদরেল নই। তবু এই রাজহংসকে কথা দিয়েছি, শয়তানটাকে আজ আমি শেষ করবোই। ফলার করে ওর মাংস খাবো। ওর হাড় দিয়ে ডুগডুগি বাজাবো। বেচারা রাজহংস ওর ভয়ে কাল সারাটা রাত ঠকঠক করে কেঁপেছে। এখনও ওর আশঙ্কা, আদমকিন যদি মারা না পড়ে, তবে এ বনে সে বাস করবে কোন্ ভরসায়? ওকে আতঙ্ক থেকে মুক্ত করাই এখন আমার একমাত্র কর্তব্য। আমি বনের রাজা, আমি যদি প্রজাদের রক্ষা না করতে পারি তারা এ বনে থাকবে কেন?

    ঘোড়াটা করুণভাবে চাইলে, মহারাজ আপনার কাছে আমার বিনীত প্রার্থনা, অমন কাজটি করতে যাবেন না। ওই হাড়ে-হারামজাদা শঠশয়তানটার মারপ্যাঁচ আপনি জানেন না। ও আপনাকে নাকানি চোবানি খাইয়ে নাজেহাল করে ছাড়বে। বছর দুই আগে নানা রকম ছলছুতো করে এই আদমকিনটা আমার কাছে এসেছিলো। তারপর কখন যে টুক করে আমার গলায় দড়ির ফস পরিয়ে দিয়েছিলো, বুঝতেই পারিনি। যখন জানতে পারলাম দেখি ফঁসের দড়িটা মাথার উপরে গাছের ডালে বেঁধে সে ফিক ফিক করে আসছে। তখন আমার কি দশা একবার ভাবুন। না-পারি চলতে, না-পারি বসতে। একভাবে ঠায় দাঁড় করিয়ে রেখে দিলো শয়তানটা। তারপর আমার পিঠে জিন লাগাম চাপিয়ে উঠে বসে শঙ্করমাছের চাবুক দিয়ে সে বেধড়ক পেটাতে থাকে। সারা শরীর কেটে রক্ত ঝরতে লাগলো। কিন্তু মার আর কিছুতেই থামে না। রাতের বেলা ফাস পরিয়ে গাছের ডালে বেঁধে রাখে। আর, দিনের বেলায় সারা বন বাদাড়ে নিয়ে বেড়ায়। বয়স হয়েছে, অত দৌড়-ঝাপ এই বয়সে সইবে কেন? কিছুদিনের মধ্যেই অসুখে পড়লাম। সে আমাকে এক কলুর কাছে বিক্রি করে দিলো। কলু আমাকে দিয়ে ঘানি টানায়। জোয়াল কাধে নেওয়া আমাদের চৌদ্দপুরুষের কারো অভ্যাস নাই। দিন কয়েকের মধ্যে ঘাড়ে ঘা হয়ে গেলো। তখন সে আমাকে কম্বাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়। লোকটা আমাকে মেরে আমার চামড়া বিক্রি করবে—এই তার মলব। আমি দেখলাম, বাঁচবার আর পথ নাই। তখন মরিয়া হয়ে উঠেছি। এপার ওপার যা হয় হোক, একদিন তাক বুঝে কষাইটাকে বিরাশি সিক্কার একখানা লাথি ঝেড়ে দিলাম। ব্যাটা তো কুলোকাৎ। আর সেই ফাকে আমিও হাওয়া। এই হলো আমার অভিজ্ঞতা। সুতরাং ঐ হতচ্ছাড়া বদমাইশটার কাছ থেকে সব সময় শতহাত দূরে থাকবেন, হুজুর।

    ঘোড়ার উপদেশে বিরক্ত হয় সিংহ। বলে কোন্ রোগের কি ওষুধ, আমার বেশ ভালোভাবেই জানা আছে। সুতরাং ও নিয়ে মাথা ঘামাই না। কি করে তোমাদের আদমকিনকে খতম করতে হয় একবার দেখে নিও। এখন বলতো, শেষ তার সঙ্গে তোমার কখন দেখা হয়েছে?

    ঘোড়া বলে, আজ দুপুরে তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছে। দেখা মাত্র আমি ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসছি। সে আমার পিছনে পিছনে ধাওয়া করে আসছে।

    ঘোড়ার কথা শেষ হতে না হতেই দেখা গেলো ধুলো উড়িয়ে একটা উট ছুটে আসছে। চোখে মুখে তার দারুণ আতঙ্ক। পাগুলো ঠক ঠক করে কাঁপছে। উটের এই অবস্থা দেখে সিংহ ভাবে, ও নিশ্চয়ই সে শয়তান আদমকিনের বদমাইসির শিকার। সিংহ জিজ্ঞেস করে, তুমি এত কাঁপছো,

    কেন? কি হয়েছে?

    উটটা বলে, আমার নাকটার দিকে তাকিয়ে দেখুন, হুজুর। আদমকিন ফুটো করে দড়ি বেঁধে দিয়েছে। সে আমাকে যেখানে খুশি টেনে হিচড়ে নিয়ে বেড়িয়েছে। আমার পিঠের দিকে তাকান, ব্যাটা আমার ওপর পাথরের চাই চাপিয়ে দিয়েছিলো। কেটেছড়ে এক্সা হয়ে গেছে। আর দেখুন আমার পাগুলোর কি দুৰ্দশা। পাহাড় পর্বতের দুর্গম পথে পথে আমাকে হটিয়ে হাঁটিয়ে খেড়া করে ফেলেছে। আর এই শেষ না। সে আমাকে একটা কষাই-এর কাছে বেঁচে মোটা টাকা মুনাফা লুটেছে। লোকটাকে গঁতিয়ে মেরে আমি জান বাঁচিয়ে পালিয়ে এসেছি।

    সিংহ গর্জে ওঠে।-কোথায় আদমকিন, কোথায় আদমকিন, তাকে আমি জ্যান্ত গিলে ফেলবো।

    এই বলে সে কেশর ফুলিয়ে হুঙ্কার দিতে থাকে। উটকে জিজ্ঞেস করে, তার সঙ্গে সব শেষ তোমার কোথায় দেখা হয়েছে।

    উট বলে, সে একটু আগেই আমার পিছু ধাওয়া করেছে। মনে হয় এক্ষুণি এখানে এসে পড়বে। আপনি আমাকে অনুমতি করুন, হুজুর, আমি চলে যাই। ওই শয়তানটার খপ্পরে পড়লে এবার আর বাঁচবো না। এদেশ ছেড়ে আমি অন্য কোন দেশে পালিয়ে যেতে চাই।

    সিংহ বলে, একটুখানি দাঁড়াও উট, আমি তোমাকে। আমার ভেল্কী দেখাচ্ছি। কি করে ব্যাটাকে জব্দ করতে হয়। একবর নিজে চোখে দেখে যাও। ওকে আমি তুলে আছাড় দেব। ওর রক্ত চুষে খাবা। ওর হাড়-মাংস আলাদা করে ফেলবো, ব্যাটা ভেবেছে কি?

    সিংহের এই তর্জন গর্জন দেখে উট বেচারী তো ভয়ে কাঁপতে থাকে।

    –দোহাই হুজুর আমাকে ছেড়ে দিন।

    আভূমি আনত হয়ে উট সিংহকে কুর্নিশ জানিয়ে দ্রুতগতিতে অদৃশ্য হয়ে যায়।

    উট চলে যেতেই এক থুথুরে বুড়ো এসে হাজির হয়। তার মাথায় একটা বাক্স। হাতুড়ি, বাটালী, তুরপুণ প্রভৃতি নানা রকম ছুততারের যন্ত্রপাতি। লোকটার কাঁধে খানকয়েক কাঠের বর্গা।

    বুড়ো ছুতোর বলে, আপনি বনের অধিপতি, মহানুভব সম্ৰাট, আপনার গুণের সীমা নাই। আপনার মতো পুণ্যবান; মহৎ দানশীল পশুপতি তামামদুনিয়ার কোথাও নাই। আমি দীনহীন এক ছুতোর। দিন আনি দিন খাই। আমাকে ঐ শয়তানটার হাত থেকে রক্ষা করুন, হুজুর।

    সিংহ উত্তেজিত কণ্ঠে বলে, কে তোমার অনিষ্ট করেছে? কে তোমাকে উত্যক্ত করেছে, বলো। আমি তাকে সমুচিত শিক্ষা দেব। কি তোমার নাম আর পরিচয়?

    বুড়ো বলে, আমার নাম সূত্ৰধর। আমরা জাতেও সূত্রধর। বনে বনে কাঠ কাটি। তা দিয়ে। ঘরবাড়ি নানারকম আসবাবপত্র বানাই। এই আমার পেশা। আমি এই বনে এসে এক আদমকিনের খপ্পরে পড়েছি। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি সে আমাকে দিয়ে কাঠ কাটায়। তার বদলে না দেয় খানা, না দেয় ইনাম। দিনে দিনে অধৈর্য হয়ে উঠছিলাম। আজ আমি বিদ্রোহ করে বেরিয়ে এসেছি। ঠিক করে ফেলেছি, যে-বনে আমনি থাকবে সে বনের ধারে কাছে আমি থাকবো না।

    সিংহ শুনে দাঁত কড়মড় করতে থাকে। ওকে আমি ছিড়ে খাবো। কোথায় সে?

    –অপেক্ষা করুন, হুজুর, এক্ষুণি সে এখানে এসে পড়বে। সে আমার পিছনে পিছনেই। আসছে। আমাকে না হলে তার তো চলবে না। আমি ছাড়া কে ওর ঘরটা বানিয়ে দেবে? সুতরাং যে ভাবেই হোক, আমাকে আটকে রাখার চেষ্টা সে করবেই।

    সিংহ জিজ্ঞেস করে, তা এখন মশায়ের যাওয়া হচ্ছে কোথায়?

    ছুতোর বলে, আমি আপনার বাবার উজির চিতার কাছে যাবো। তিনি আমাকে খবর পাঠিয়েছেন, তার জন্যে একটা দারুণ মজবুত কাম বানিয়ে দিতে হবে। আদমকিনের অত্যাচারে নাকি তিনি রাতে ভালো করে ঘুমুতে পারছেন না। সেই জন্যেই আমি এই বর্গার কাঠগুলো আর যন্ত্রপাতি নিয়ে ওখানে যাচ্ছি।

    সিংহের মনে হিংসা হয়। বলে, আমার বাবার উজির চিতা আমাদের নোকর। রাজার ঘর বানাবার আগে তার ঘর বানাবে—এ হতে পারে না। তুমি তোমার কাঠ যন্ত্রপাতি সব নামাও। আগে সুন্দর করে আমার জন্যে একখানা ঘর বানাও, তারপর ওসব পরে হবে।

    –কিন্তু হুজুর, আপনি চিতাবাঘের দাপট তো জানেন, সে আমাকে আস্ত রাখবে না। আজ বরং আমি তার ঘরটা বানিয়ে দিয়ে আসি। তারপর কাল আপনাকে ঘর কেন, প্রাসাদ বানিয়ে দেব।

    এই বলে বুড়ো সামনে পা বাড়াতেই সিংহটা তার সামনের একটা পা তুলে বৃদ্ধের বুকের কাছে থাবা মেলে ধরে। থাবা মারার জন্যে থাবা সে তুলে ধরেনি। একটু ভয় দেখাবার জন্যেই এই ‘হালুম’ করা। কিন্তু বুড়ো ভয়ে পিছনে হটতে হটতে চিৎপাট হয়ে পড়ে গেলো। কাঠের বর্গা আর যন্ত্রপাতিগুলো ইত্যাকার হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। দু-হাত জোড় করে কাকুতি মিনতি করতে থাকে বুড়ো, দোহাই বাবা, সিংহরাজ, থাবা চালাবেন না। একেবারে মরে যাবো। দিচ্ছি-আপনার ঘরটাই আগে বানিয়ে দিচ্ছি। তারপর চিতার কাছে যা হবার তা হবে।

    —কি আবার হবে? কিছু হবে না। বলবে আমার হুকুমে তুমি আমার কামরা বানিয়ে দিয়েছ। তারপরও যদি সে তোমাকে কিছু মন্দ বলে আমাকে বলবে, ওর পিণ্ডি আমি চটকে শেষ করে দেব।

    বুড়োটা উঠে এসে সিংহের মাপ নিলো। কতটা লম্বা চওড়া উঁচু-সব যথাযথ মেপে নিয়ে কাঠগুলো দিয়ে একটা কামরা বানালো। ঢােকার মুখটা ছাড়া বাকী সব দিকই বেশ ভালো করে এঁটে দিয়ে বললো, নিন, হুজুর একবার ঢুকে দেখুন তো ঠিক হলো কিনা।

    সিংহ বললো, জী হুজুর। কাঠগুলো তো আপনার মাপে ছিলো না। চিতার কামরা বানাবো বলে নিয়ে যাচ্ছিলাম। আপনি শুনলেন না। যাই হোক, এখনকার মতো চালিয়ে নিন। দু-একদিন বাদে আপনার পছন্দসই একটা বিরাট মহল বানিয়ে দেব। নিন, এখন ঢুকে দেখুন, কেমন লাগে।

    মাথা পিঠ নিচু করে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে সিংহ সেই খাঁচার ভিতরে ঢুকলো। আর তৎক্ষণাৎ বুড়ো দরজাটা বন্ধ করে সারা খাঁচাটার চতুর্দিকে বড় বড় পেরেক ঠুকে দিলো। সিংহ আর নড়তে পারে না। চারপাশে পেরেকের আল গায়ে ফুটতে থাকে। সিংহ রাগে গর্জে ওঠে, এসবের মানে কি?

    বুড়ো বলে, কি করবোহুজুর, মালিকের হুকুম, তামিল না করলে আমাকে যে আস্ত রাখতে না।

    —কে তোমার মালিক?

    –আদমকিন।

    এমন সময় সিংহ দেখতে পেলো বুড়োর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেই ছোট্ট জানোয়ারটা—আদমকিন। দেখতে ভীষণ কুৎসিৎ, বেঢপ মোটা হোল কুৎকুৎ চোখ, থ্যাবড়া নাক, সারা গায়ে লোমে ভরা। কামড়ে কামড়ে একটা আপেল খাচ্ছে। আর সিংহের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।–কী, খুব গায়ে জোর—না? তা খাটাও দেখি কত আছে জোর? ঘটে নাই এক ফোঁটা বুদ্ধি–একেবারে হামবড়াই ফাট। এবার বাছাধন, আল্লাহর নাম কর। মোৎ তোমার সামনে হাজির।

    বুড়োকে কি যেন ফিসফিস করে বলতেই কতকগুলো, খড়বিচালি কুড়িয়ে এনে খাচাটার ওপরে ছড়িয়ে দিলো। চকমকিটা বের করতেই সিংহ চিৎকার করে ওঠে, আমাকে পুড়িয়ে মারবে নাকি?

    আদমকিন বিচিত্র অঙ্গভঙ্গী করে বলে, না না, তোমাকে ধূপ ধুনো দিয়ে পুজো করবো।

    –দোহাই তোমার, সিংহ কাকুতি মিনতি জানাতে থাকে, আমাকে পুড়িয়ে মেরো না। তোমার দুটি পায়ে পড়ি।

    কিন্তু কে কার কথা শোনে, বুড়ো ততক্ষণে নুড়ো জ্বেলে দিয়েছে। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো খড়বিচালি। আর তখন সিংহর কি অবস্থা—সে দৃশ্য আমি বর্ণনা করতে পারবো না।

    যাই হোক, আদমকিন তখন সিংহকে পােড়ানোর আনন্দে মশগুল। আমার দিকে কোন নজর ছিলো না। তাই টুক টুক করে ওখান থেকে কেটে পড়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসছি তোমাদের কাছে। তোমরা আমাকে বাঁচাও। নইলে আমাকে একবার সামনে পেলে আর আস্ত রাখবে না।

    ময়ূর বললো, কিচ্ছু ভয় নাই। কপালে যা লেখা আছে তা কেউই খণ্ডন করতে পারে না, বোন। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করে কোন লাভ নাই। দেখাই যাক না, কি হয়।

    এমন সময় সামনের ঝোপে খসখস শব্দে চকিত হয়ে ওঠে। রাজহাঁস। বলে, ওইওই তো আসছে। শুনতে পাচ্ছে না তার পায়ের শব্দ। ঝোপ জঙ্গল ভেঙে সে এই দিকেই এগিয়ে আসছে।

    রাজহাঁস আর অপেক্ষা করে না। ছুটে সমুদ্রের দিকে চলে যেতে থাকে। ময়ূর চিৎকার করে ডাকে, আরে শোনো, বহিন শোনো। ও কিছু নয়। একটা কাঠবিড়ালী ছুটে বেড়াচ্ছে। রাজহাঁসের ধড়ে প্রাণ আসে। গুটিগুটি করে আবার ওদের কাছে ফিরে এলো।

    এরপর ঐ দ্বীপে একটা জাহাজ এসে ভিড়লো। নাবিকরা শিকারে বেরিয়ে পড়লো। ময়ূর-ময়ূরী টুক করে গাছের ডালে গিয়ে বসলো। কিন্তু রাজহাঁস পাখি হলেও তেমন উড়তে পারে না। ভ্যাবাচাকা খেয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকে। নাবিকরা অতি সহজেই রাজহাঁসটাকে ধরে গলা কেটে ফেলে।

    ময়ূর-ময়ূরী গভীর দুঃখ পায়। কিন্তু কি করা-ভাগ্যের লেখা কে খণ্ডাতে পারে। এইভাবে নির্জন দ্বীপে মানুষের হাতে তার প্রাণ যাবে লেখা ছিলো—সেই নিয়তি সে এড়াবে কি করে?

    কি আর করা যাবে। ময়ূর ময়ূরী নিরানন্দ মনে দেশে ফিরে গেলো। একটুক্ষণের জন্য শাহরাজাদ থামে।

    সুলতান শারিয়ার বলে জানোয়ারটার বুদ্ধি তো বড় জব্বর। এরকম আর কোনও মজার কিস্সা কি তোমার জানা আছে, শাহরাজা?

    শাহরাজা বলে, এ আর এমন কি কাহিনী। এর চেয়ে আরও মজাদার কাহিনী আপনাকে শোনাতে পারি শাহজাদা।

    —তা হলে আর দেরি কেন, শুরু করো।

    শাহরাজা বলে, পশুপাখির গল্প বলার আগে আপনাকে ছোট্ট একটা অন্য কাহিনী শোনাই, জাঁহাপনা।

    বাদশাহ শারিয়ার বলে, কি কাহিনী, শাহরাজা?

    –এক মেষপালক রাখাল আর একটি মেয়ের কথা শুনুন।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142 143 144 145 146 147 148 149 150 151 152 153 154 155 156 157 158 159 160
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকবীর – ১ – ক্ষিতিমোহন সেন
    Next Article প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা – ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : জয়ন্ত সিং)

    October 27, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : জয়ন্ত সিং)

    October 27, 2025
    Our Picks

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : জয়ন্ত সিং)

    October 27, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    October 27, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }