Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সহস্র এক আরব্য রজনী

    ক্ষিতিশ সরকার এক পাতা গল্প3728 Mins Read0

    ২.১৩ জামালিকার কাহিনী

    জামালিকার কাহিনী

    শাহরাজাদ একটু ভেবে বললো—তাহলে শুনুন জাঁহাপনা।

    প্রাচীন কালে গ্ৰীস দেশে ড্যানিয়েল নামে একজন সাধুপ্রকৃতির পণ্ডিত মানুষ বাস করতেন। তাঁর শিষ্য ছিলো অনেক। শিষ্যেরা প্রতিদিন তীর কাছে অনেক কিছু শিখতে আসতেন। দুঃখের কথা, এই জ্ঞানী তাপসের কোন সন্তান ছিলো না। মৃত্যুর পরে তাঁর শিক্ষা বা পুঁথিপত্র তাঁর বংশের কেউ পাবে না। এইকথা ভেবে তিনি বেশ কষ্ট পাচ্ছিলেন, একটি সস্তানের জন্য তাই তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন। পরম করুণাময় আল্লাহর প্রাসাদে কোন দ্বাররক্ষী নেই। সেই জন্যেই হয়ত তাঁর প্রার্থনা অতি সহজেই আল্লাহর কানে গিয়ে পৌঁছল। আল্লা তাকে নিরাশ করলেন না। সন্তান সম্ভব হলেন।

    দিন যায়; মাস যায়। ড্যানিয়েলের পত্নী মাস গুণতে থাকেন।

    একদিন ড্যানিয়েল তাঁর পত্নীকে ডেকে বললেন, : অনেক বুড়ো হয়ে পড়েছি। যে কোন সময়েই আমার মৃত্যু হতে পারে। তোমার গর্ভের সন্তান শীঘ্রই ভূমিষ্ঠ হবে। মৃত্যুর পরে বইপত্র অথবা পাণ্ডুলিপি ঠিক জায়গায় থাকবে বলে মনে হচ্ছে না, আমার প্রয়োজনের সময় সে হয়তো সেগুলি ঠিক কাছে পাবে না।

    লিখতে বসলেন ড্যানিয়েল। জীবনে যা শিখেছেন সে-সবই তিনি ছোট করে লিখে রেখে যেতে চান। কয়েকটি পৃষ্ঠার মধ্যেই তার অগাধ জ্ঞান পাণ্ডিত্যের বিষয়ে লিখে যাবেন। স্বভাবতই সে সব ছোট্ট করে লিখতে হবে। তাঁর অগাধ পণ্ডিত্যের সারাংশটুকু আর পাঁচ হাজার পাণ্ডুলিপি—এসব জিনিস কয়েক পাতা কাগজের মধ্যে ধরানো কি সহজ কাজ; কিন্তু সেই অসাধ্য কাজ তিনি করলেন। লেখার শেষে বারবার কাগজগুলি পড়লেন। না, এতো আর কমানো যাবে না। এই পাঁচ পাতায় আনতে তাকে সারাটা বছর খাটিতে হয়েছে; সেই পাঁচ পাতাকে কমিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি এক পাতায় দাঁড় করালেন।

    মৃত্যু যে তাঁর ক্রমশই এগিয়ে আসছে সে কথাটা বুঝতে পারলেন ড্যানিয়েল। বুঝতে পেরে তাঁর সমস্ত পাণ্ডুলিপি তিনি সমুদ্রে নিক্ষেপ করলেন। কেউ যাতে সেগুলি আবিষ্কার করতে না পারে এই ছিলো তার উদ্দেশ্য। নিজের ছেলের জন্য কেবল রাখলেন সেই এক পৃষ্ঠা কাগজ। তারপরে পূর্ণ গৰ্ভবতী স্ত্রীকে ডেকে বললেন-শোনো, আমার সময় হয়ে এসেছে। বেহেস্ত আমাদের যে সন্তান দিয়েছেন তার মুখ দর্শন করার সময় আমার আর হলো না। ঈশ্বরীর বোধ হয়। সে অভিপ্রায় নয়। বংশধর হিসাবে আমি তার জন্যে কেবল এই কাগজটুকু রেখে গেলাম। বড় হয়ে ছেলে যখন তার বাবার সম্পত্তি দাবী করবে তখন তার হাতে তুমি এই কাগজটা তুলে দিয়ে। সে যদি এই কাগজটি পড়ে এর মর্ম উদ্ধার করতে পারে তাহলে সে তার সময়ে সবচেয়ে বিজ্ঞাবান বলে পরিচিত হবে। তার নাম রেখ হাসিব।

    বলতে-বলতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ড্যানিয়েল।

    শেষকৃতের সময় তীর সমস্ত শিষ্য। আর শহরের মানুষেরা এসেছিলেন। তার তিরোধানে

    ড্যানিয়েলের মহাপ্রয়াণের কিছুদিনের মধ্যেই তার স্ত্রী একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। নামকরণের সময় পিতার ইচ্ছামত নবজাতকের নাম হলো-হাসিব। জ্যোতিষীদের ডেকে আনা হলো নবজাতকের ভাগ্য গণনা করার জন্যে। অনেক আঁকজোক কষে জ্যোতিষী বললেন-পুত্রবতী, তোমার সন্তান দীর্ঘজীবী। তবে যৌবনে ওর একটা ফাড়া রয়েছে। সেই ফাঁড়াটা কেটে গেলে সে অনেক দিন বাঁচবে। বিদ্যাবুদ্ধি অর্জন করবে। অনেক, নামও হবে তার; অর্থের রোজগার করবেও অনেক-যদি অবশ্য ওই ফাড়াটা ওর কেটে যায়।

    এই বলে পাওনাগণ্ডা নিয়ে জ্যোতিষী বিদায় নিলেন।

    দিনে-দিন বাড়তে লাগলো শিশুটি। পাঁচ বছর বয়সে তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হলো। কিন্তু লেখাপড়া হলো না তার। বিদ্যালয় ছাড়িয়ে তাকে পেশাগত ব্যবসায় লাগিয়ে দিলেন। বিধবা মায়ের ভরণ পোষণ তো তাকেই করতে হবে। কথাটা ঠিকই; কিন্তু করবেটা কে? ছেলে তো। ওদিকে বাউণ্ডুলের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। কাজকর্মের ধার দিয়েই সে যাচ্ছে না। বয়স হলো পনের। না শিখলো লেখাপড়া, না শিখলো কাজকর্ম। বিধবা মা কেবল কেঁদে বেড়ান। প্রতিবেশীরা র্তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন-শাদী না দিলে তোমার ছেলের ওই বাউণ্ডেলেমী কাটবে না। ঘাড়ে বউ পড়লেই ও খাটবে। আর পাঁচজন যেভাবে রোজগার করছে। ও-ও সেইভাবেই করবে।

    পাড়াপাড়শীর কথা শুনে অনেক খুঁজে-পেতে একটি সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দিলেন। তিনি। সবাই ভেবেছিলো, অমন সুন্দর বউ পেয়েছে, কাজ এবার সে নিশ্চয় করবে, করবে: রোজগারপতি। ওমা! কার ঝাড় কে বাঁশ কাটো! যাদৃশী ভাবনা যস্য। সেই আগের মত খালি ঘুরে বেড়ায়—কাজকর্মের ধার দিয়েও যায় না।

    প্রতিবেশীদের মধ্যে কিছু মানুষ কাঠ কেটে সংসার চালায়। তারা একদিন হাসিবের মায়ের কাছে এসে বললো-এক কাজ কর। একটা গাধা, কিছু দডি, আর একটা কুড়োল কিনে দাও তোমার ছেলেকে। আমরা ওকে নিয়ে যাব পাহাড়ে; কাঠ কেটে আনবে। কাঠ বেচে যা লাভ হবে। ওকেই না হয় দিয়ে দেব! তোমার আর তোমার বউ-এর পেট চলে যাবে তাহলে।

    আনন্দে রাজি হয়ে গেলেন হাসিবের মা। সব কিছু কিনে এনে ছেলেকে উৎসাহ দিয়ে বললেন-ওদের সঙ্গে যাও! কোন ভয় নেই তোমার; তোমরাও ঘাবাড়িয়ে না, ওর বাবা। আর আমার পুণ্যে ছেলের কোন ক্ষতি হবে না। আমাদের আশীর্বাদ ওর মাথায় ছাতার মত বিছিয়ে থাকবে।

    কাঠুরেরা হাসিবকে নিয়ে কাঠ কাটতে চলে গেলো। পাহাড়ে কী করে কাঠ কাটতে হয়, কাটা কাঠ কেমন করে গাধার পিঠে চড়াতে হয় সব তারা শিখিয়ে দিলো তাকে। হাসিবেরও বেশ ভালো লাগলো কাজটা। খুব কম সময়ের মধ্যেই সব কাজ সে শিখে নিলো। পাহাড়ের সবুজ বনানী, খোলা আকাশ আর মিষ্টি বাতাস—সব কিছুই ভালো লেগে গেলো তার। কাঠ কেটে ভালোই রোজগার হতে লাগলো হাসিবের। মা আর বউ-এর অভাব মিটলো কিছুটা।

    একদিন কাঠুরেরা পাহাড়ের কোলে কাঠ কাটছে এমন সময় হঠাৎ ভীষণ জোরে বৃষ্টি নামলো। সঙ্গে-সঙ্গে দারুণ বজপাত। সকলে দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নিলো একটা গুহার ভেতরে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্যে আগুন জ্বালালো সেখানে। হাসিবের কাজ হলো চুল্লীতে শুকনো কাঠ যোগান দেওয়া। গুহার বাইরে থেকে কাঠ চেলা করে আনতে হচ্ছে হাসিবকে। কাঠ। চেরাই করতে-করতে কুড়োলটা হঠাৎ ঝোপের ভেতরে গিয়ে একটা শক্ত জিনিসের ওপরে আঘাত করলো-ঠাং করে শব্দ হলো একটা। মনে হলো সেই জায়গার মাটিটা ফাঁপা। সঙ্গে-সঙ্গে হাসিব মাটি খুঁড়তে শুরু করলো। মাটি কিছুটা সরে যাওয়ার পরেই একটা পাথরের চাই দেখতে পেলো। মাঝখানে তামার বড় একটা ঝুড়ি।

    ভোর হয়ে আসছে দেখে গল্প থামিয়ে দিলো শাহরাজাদ।

     

    তিনশো পঞ্চান্নতম রজনী :

    হাসিব গিয়ে কথাটা বলতেই সবাই হুড়মুড় করে দৌড়ে গেলো। ধরাধরি করে পাথরের চাইটা তুলে ফেললো সকলে। পাথরের নিচে বিরাট একটা গর্ত। উঁকি দিতেই মনে হলো ভেতরের দিকে একটা সুড়ঙ্গ চলে গিয়েছে। সেই সুড়ঙ্গের তলায় যেন সারি সারি জালা সাজানো। জালাগুলোর সব মুখ বন্ধ। মাটির ওপর থেকে নিচে নামার কোন সিডি নেই। জালাগুলির গলায় দড়ি বেঁধে ওপরে তুলে আনতে হবে। হাসিবই দডিতে ঝুলে নিচে নেমে পড়লো।

    নিচে নেমে হাসিব কুড়োল দিয়ে একটা জালা ফাটিয়ে ফেললো। কিছুটা খাঁটি হলদে মধু গড়িয়ে পড়লো বাইরে। নিচে থেকে চেঁচিয়ে ব্যাপারটা সে সবাইকে জানিয়ে দিলো। কাঠুরেরা এ কথাটা মোটেই ভাবে নি; ভেবেছিলো ওই জালাগুলির মধ্যে নিশ্চয় মোহর টোহর জাতীয় কিছু মূল্যবান সম্পত্তি রয়েছে। যাইহোক, যা পাওয়া যায়। তাই ভালো। ওপর থেকে দড়ি ঝুলিয়ে দিলো তারা। হাসিব সেই দডিগুলি জালার মুখে বেঁধে দিলো। তারপরে জালাগুলিকে একটা একটা করে ওপরে টেনে তোলা হলো। সেগুলিকে তারা গাধার পিঠে তুললো; কিন্তু হাসিবকে কেউ গর্ত থেকে আর তুললো না। জালাগুলি গাধার পিঠে ভালো করে বেঁধে তারা রওনা হলো বাজারের দিকে। যেতে-যেতে নিজেদের মধ্যে তারা বলাবলি করতে লাগলো : গর্ত থেকে ওকে তুললে এই মালের ভাগ দিতে হোত না? শুধু শুধু ওকে ভাগ দিতে যাব কোন দুঃখে? সংসারের কুলাঙার ওটা। ওর মরে যাওয়াই ভালো।

    বাজারে এসে একজনকে শিখিয়ে পড়িয়ে হাসিবের মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিলো তারা। সে তার মাকে বললো—আমরা পাহাড়ের গায়ে যখন কাঠ কাটছিলাম তখন তোমার ছেলের গাধাটা কোথায় যে চলে গেলো বুঝতে পারলাম না। গাধাটার পেছনে পেছনে তোমার ছেলেও গেলো চলে। কী বৃষ্টি! আমরা একটা গুহায় গিয়ে আশ্রয় নিলাম! হঠাৎ একটা বাঘ কোথা থেকে লাফ দিয়ে পড়ে তোমার ছেলে আর গাধাকে মেরে ফেললো।

    হাসিবের মা আর বউ শোকে-দুঃখে কান্নায় গড়াগডি দিতে লাগলো, লাগলো বুকে চাপড়াতে। এ কান্না কি আল্লার দরবারে পৌঁছবে না।

    কাঠুরেরা মধুর জালাগুলি বেচে প্রচুর লাভ করলো। লাভের পয়সা দিয়ে প্রত্যেকে দোকান সাজিয়ে বসলো। বেশ ভালোভাবেই দিন কাটে তাদের, -হাসে, খেলে, স্মৃর্তি করে। উৎসবে আয়োজন করে প্রচুর খানাপিনার।

    এদিকে হাসিবকে তো তারা ফেলে চলে গেলো। বেচারা গর্ত থেকে ওঠার অনেক চেষ্টা করলো; কিন্তু পারলো না। চেঁচিয়ে গলা ফাটাল। কেউ তার ডাকে সাড়া দিলো না। কেঁদে বুক ভাসালো; কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো না। কুড়োল দিয়ে দেওয়ালে গর্ত করার চেষ্টা করলো; কিন্তু গ্রানাইট পাথরের বুকে ঘা খেয়েছিটকে পড়লো কুড়োল। ভয় ধরে গেলো তার। কী করবে সে? ক্ষোভে দুঃখে আত্মহত্যাই করবে ঠিক করলো। মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে মাথা ঠুকতে লাগলো। হঠাৎ দেখে পাথরের ফোকর থেকে বিরাট একটা কাঁকড়া বিছে তার দিকে দৌড়ে আসছে তাকে কামড়ানোর জন্যে। আত্মহত্যার কথা উবে গেলো তার মন থেকে। কুড়োলটা তুলে নিয়ে এক কোপে দুটুকরো করে ফেললো কাঁকড়া বিছেটাকে। তারপরেই সে চোখ চিরে দেখতে লাগলো। কাঁকড়া বিছেটা এলো কোন দিক থেকে? যেখান থেকে বিছেটা এসেছে সেখান থেকে একটা ক্ষীণ আলোর রেখা বেরিয়ে আসছিলো। কুডুলের মাথা দিয়ে সে খুব জোরে ঘা মারলো। সেখানে। দরজার কিছুটা অংশ ফর্ক হয়ে গেলো। আরও জোরে চাড় দিতেই ও পাশটা ধ্বসে গেলে।

    হামাগুডি দিয়ে উঠে বসলো হাসিব। মাটির ওপরে বিরাট লম্বা একটা গ্যালারী। তার ওপাশে আলো জ্বলছিলো। অনেকক্ষণ ধরে ঘুরে ঘুরে দেখলে হাসিব। ঘুরতে-ঘুরতে একটা বড় কালো ইস্পাতের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজার গায়ে রূপোর তালা আর সোনার চাবি ঝুলছিলো। দরজা খুলেই সে অবাক হয়ে গেলো। সামনে একটা সরোবর। তার ওপরে খোলা, মুক্ত আকাশ। পায়ের তলায় পান্নার পাহাড়। সেই সোনার সিংহাসন, সোনা আর রূপের বসবার আসন, পান্নার পাহাড়—সবই কী সুন্দরই না প্রতিবিম্বিত হয়েছে ওই সরোবরের জলে। বসবার আসনগুলি গুণে দেখলে হাসিব-ঠিক বারো হাজার। কোন কিছু না ভেবে চিন্তেই হাসিব সিংহাসনের ওপরে বসে পড়লো। বসে-বসে চারপাশে তাকিয়ে দেখলে সে। এত বড় সুন্দর সরোবর, এত সুন্দর পাহাড়-ব্যাপারটা কী?

    সিংহাসনে বসে পা দুলাতে লাগলো হাসিব। তার কানে এলো করতালের মৃদু। তরঙ্গ। সিংহাসনের পেছনে তাকিয়ে দেখলো পান্না-পাহাড়ের ওপর দিয়ে বিরাট একটা মিছিল আসছে। সরোবরের দিকে। মিছিলটাি হেঁটে আসছিলো না, আসছিলো হাওয়ায় ভেসে। অনেক দূর থেকে আসছিলো বলেই বোধ হয়। হাসিব বুঝতে পারলো না তারা মানুষ না অন্য কিছু। আরও কাছে এগিয়ে এলো মিছিল। একদল মেয়ে লোক—খুব সুন্দরী দেখতে। কিন্তু কী অদ্ভুৎ ব্যাপার! তাদের নিম্নাংগে কোন পা নেই, অংশটা লম্বা সরীসৃপের মত। তাই তারা হাঁটতে পারে না, সরীসৃপের মত ঘসাড়ে-ঘসড়ে হাঁটে। তারা সুন্দর গলায় গান গাইছিলো। একজন গ্ৰীক ভাষায় রানীর প্রশস্তি গাইছিলো। এরা নিশ্চয় সর্প-কুমারী। রানীর অবশ্য তখনও দেখা নেই। মাত্র চারজন সর্প-কন্যা হাজির হয়েছে। তারা মাথার ওপরে বয়ে আনছে বিশাল একটা সোনার গামলা। ওই গামলায় বসে আছেন তাদের রানী। রানী হাসছেন। চারজন সিংহাসনের কাছে এসে দাঁড়াতেই হাসিব তড়াক করে লাফ দিয়ে নিচে নেমে এলো। রানীকে তারা সিংহাসনে বসালো। রানীর নাকাব ঠিক করে দেয়; তারপরে ঘিরে দাঁড়ালো তাকে। অন্যান্য সপ-কন্যারা বাকি আসনে বসে যায়।

    রানী উপস্থিত সকলের সামনে গ্ৰীক ভাষায় বক্তৃতা শুরু করলো। সুন্দর সুরেলা কণ্ঠ রানীর। বক্তৃতা শেষে করতালের আওয়াজ হলো, সঙ্গে-সঙ্গে সকলে রানীর স্তব করতে লাগলো। এই স্তুতি গ্ৰীক ভাষায় গাওয়া হলো। স্তবের পর যার যার আসনে বসে পড়লো।

    স্তব গানের পর রানী এবার হাসিবের দিকে মাথা ঘুরিয়ে দেখলো। রানী অবশ্য ওর উপস্থিতি টের পেয়েছিলো। ওকে ইশারায় কাছে ডাকলো। তা অবশ্য হাসিব একটু ভয়ও পেয়েছিলো, তবু দ্বিধাগ্রস্তভাব নিয়ে ও এগিয়ে গেলো রানীর দিকে। সোজাসুজি একখানা আসন দেখিয়ে রানী ওকে বসতে অনুরোধ করলো। আসনে বসার পর রানী বললো, —এ দুনিয়ার তলায় আমার সাম্রাজ্যে তোমাকে স্বাগতম জানাই। ভাগ্যবান লোকই কেবল এখানে আসতে পারে। সং আর ভয় ঝেড়ে ফেলো যুবক। তোমার নাম বলো। আমার নাম যমলিকা। এই যে দেখছ সব সৰ্প-কন্যা, এরা আমার প্রজা। এবার বলো, কে তুমি? কি করে তুমি এই সরোবরের পাড়ে এসে পড়লে? এই সরোবর আমার শীতাবাস। শীতকালে আমার গ্রীষ্মাবাস মাউন্ট কাফ ছেড়ে এখানে চলে আসি বছরের কয়েক মাসের জন্য।

    যুবক হাসিব নত হয়ে ভূমি চুম্বন করে রানীর ডানদিকের পান্না আসনে বসে বললো—আমার নাম হাসিব। ড্যানিয়েলের পুত্র। বাবা আমার জন্মের আগে মারা গেছেন। সারা দুনিয়ার লোক জ্ঞানী আর তাপস বলে তাকে জানত। মান্য করত। আমি আমার পিতার মত একজন ঋষি বা জ্ঞানী হতে পারতাম, নিদেনপক্ষে একজন ব্যবসায়ীও হতে পারতাম। আমার ওসব হতে ভালো লাগলো না। পড়াশুনা শিখলাম না, ব্যবসা করলাম না। খালি ঘুরে-ঘুরে বেড়ালাম। বনের পশুপাখী, পাহাড়ের খোলা আকাশ আমাকে ভীষণ টানত। আমি কাঠুরে হলাম। চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দী থেকে আমি মরতে চাই নি। আমার মৃত্যুর পর কেউ যেন আমার ওপরে সমাধি বেদী না করে। মৃত্যুর পরও আমি শান্তি পাব না। তাহলে।

    এরপর আনুপূর্বিক সব সে খুলে বললো। অন্যান্য কাঠুরেদের সঙ্গে কিভাবে এখানে এলো, আর মাটির তলায় এই সাম্রাজ্যে কেমন করে পৌঁছলো-সব বললো।

    হাসিবের কাহিনীতে রানী খুশী হয়ে বললে :

    —হাসিব, তুমি সেই গর্তে অনেকক্ষণ বন্দী ছিলে। তারপরে এখানে এসেছে, তাও অনেকক্ষণ হলো। তোমার নিশ্চয়ই খিদে তেষ্টা পেয়েছে।

    এই বলে রানী একজন সৰ্প-কন্যাকেইশারা করতেই, একটি সোনার থালা ভর্তি খাবার নিয়ে একেবেঁকে এগিয়ে এলো। থালায় কি নেই? —আছে আঙুর, আপেল, পেস্তা, মটকা, ডুমুর আর ভালো ভালো মৰ্তমান কলা। চেটেপুটে খেয়ে নিলো হাসিব, খুব খিদেও পেয়েছিলো। ঢেকুর তুললো। এরপর এক গেলাস সুগন্ধী সরবত ঢকচক করে খেয়ে নিলো। সরবতের গেলাসটা ভারি চমৎকার। একটা বড় চুনি কেটে গেলাসটা তৈরি। লাল টুকটুক করছে। যে মেয়েটি খাবার দিয়েছিলো সেই থালা নিয়ে চলে গেলো।

    রানী বললো—যুবক তুমি নিশ্চিন্ত হও। যতদিন খুশি তুমি আমার সাম্রাজ্যে থাকতে পোর। তোমার কেউ ক্ষতি করবে না। এই সরোবরের ধারে গাছের ছায়ায় বা পাহাড়ের ঢালে প্রকৃতির কোলে সপ্তাহ খানেক থেকে যাও। আমি তোমাকে আমন্ত্রণ করছি। তোমার সময় আমি ভরিয়ে দেব গল্প বলে! তুমি যখন আবার মানব দেশে ফিরে যাবে এই গল্প তোমার কাজে লাগবে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142 143 144 145 146 147 148 149 150 151 152 153 154 155 156 157 158 159 160
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকবীর – ১ – ক্ষিতিমোহন সেন
    Next Article প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা – ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.