Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সহস্র এক আরব্য রজনী

    ক্ষিতিশ সরকার এক পাতা গল্প3728 Mins Read0

    ২.৩৪ মুদ্যোফরাশ

    মক্কায় প্রতি বছর একটা সময়ে বহু তীর্থযাত্রীর সমাগম হয়। তারা দলে দলে কাবাহকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে আল্লাহর কাছে দোয়া চায়। একদিন এইভাবে একদল তীর্থযাত্রী কাবাহ প্রদক্ষিণ করছিলো। আর যে যার নিজের নিজের মনের কামনা বাসনা নিবেদন করছিলো। পুণ্যার্থীদের একজনের অদ্ভুত ধরণের মনস্কামনা শুনে সবাই ক্ষেপে আগুন হয়ে ওঠে। লোকটা কাবাহ প্রদক্ষিণ করতে করতে বারবার একটিমাত্র কথাই আওড়াচ্ছিল :

    ‘আল্লাহ, মেয়েটা যেন তার স্বামীকে ঘৃণা করতে শেখে। তাহলে আমার বরাত খুলে যাবে। আমার সারা জীবনের একমাত্র বাসনা তাকে নিয়ে আমি শোবো।’

    এই ধরনের অপবিত্র নোংরা কথা ধৰ্মস্থানে যদি কেউ উচ্চারণ করে তবে কি মুখ বুজে সহ্য করা সম্ভব? তাই ক্ষিপ্ত জনতা তার ওপর চড়াও হয়ে কিল চড় লাথি ঘুসি ইত্যাদি বেপরোয়াভাবে চালাতে থাকে। এতই তারা ক্রোধান্বিত হয় যে, বেধড়ক মার-ধোর দিয়েও তারা ক্ষান্ত হলো না। সবাই মিলে তাকে কাবাহ আমিরের কাছে টেনে নিয়ে গেলো। এই আমিরই মক্কার সর্বময় কর্তা। তার ওপর আর কারো কোনও কথা চলে না। সুলতানেরও না!

    সব শুনে সে রায় দিলো, লোকটাকে ফাঁসীতে ঝোলাও।

    এই সময় রাত্রির অন্ধকার কেটে আসছে দেখে শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

     

    তিনশো সাতাশিতম রজনীতে আবার সে বলতে থাকে :

    কিন্তু লোকটা আছাড় খেয়ে পড়লো আমিরের পায়ে, দোহাই ধর্মাবতার, আপনি আল্লাহর পয়গম্বর। আমার সব কথা না শুনে এই গুরুদণ্ড আমাকে দেবেন না।

    আমির বলল, ঠিক আছে, বলে তোমার কী বলার আছে।

    লোকটা তখন বলতে থাকে : আমি দুটি ব্যবসা করি। রাস্তার যতো নোংরা জঞ্জাল সাফ করা আমার প্রথম কাজ। এছাড়া কুমুই এর দোকান থেকে ভেড়ার নাডিতুডিডু কুড়িয়ে পরিষ্কার করে বিক্রি করি। এই আমার একদিন আমার গাধাটার পিঠে এইরকম সংগৃহীত নাডিভুডি চাপিয়ে আমি তার পিছনে পিছনে চলছিলাম। এমন সময় হঠাৎ দেখলাম একদল লোক ভীতচকিত সন্ত্রস্ত হয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে। আর তাদের পিছু পিছু ইয়া বড় বড় লাঠি সেটা নিয়ে তাড়া করে আসছে কতকগুলো সশস্ত্র নিগ্রো ক্রীতদাস। তাদের একজনকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার, কী হয়েছে?

    লোকটা বললো, হারেমের মেয়েরা এই পথ দিয়ে যাবে। তাই পথঘাট জনশূন্য করার হুকুম হয়েছে।

    তার কথা শুনে আমার হৃদকম্প শুরু হলো। এখন আমি কী করি, কোথায় লুকাই। দিশাহারা হয়ে গাধাটাকে একপাশে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আমি রাস্তার দিকে পিছন ফিরে একটা বাড়ির দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। প্ৰাণপণে চেষ্টা করতে থাকলাম কোনভাবেই যাতে আমার নজর না যায় খানদানী ঘরের মেয়ের ওপর।

    একটুক্ষণ পরে বুঝতে পারলাম বহু দাসী খোজা পরিবৃত হয়ে হারেমের মেয়েরা পার হয়ে যাচ্ছে। আমি প্রায় দেওয়ালে সেটে গেছি তখন। কিন্তু তাতেও নিস্কৃতি পাওয়া গেলো না। দুটো নিগ্রো এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার ওপর। দুদিক থেকে দুজনে ঝাপটে ধরলে আমাকে। আমি তখন ভয়ে থর থর করে কাঁপছি। মুখ ফিরে দেখলাম, আর একটা নিগ্রো আমার গাধাটাকে তাড়িয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে। আর দেখলাম গোটা তিরিশোক মেয়ে আমাকে ড্যাব ড্যাবি করে দেখছে। তাদের মধ্যে একটি মেয়ে ডানা কাটা হুরীর মতো অপূর্ব সুন্দরী। তার কাজল কালো টানাটানা চোখ, টিকলো নাক, আপেলের মতো টুকটুকে গাল, পাকা আঙুরের মতো অধর বেহেস্তের হুরীকেও হার মানায়।

    আমার হাত দু’খানা পিছমোড়া করে বেঁধে আমাকে টানতে টানতে নিয়ে চললো নিগ্রো দুটো! আমি যতই বলি, আমি দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কোনও কিছুই দেখিনি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। পথচারীরাও আমার হয়ে ওকালতী করলো অনেক। কিন্তু নিগ্রো দুটো কোনও কথাই কানে তোলে না। কয়েকজন রুখে এলো আমার হয়ে, একি অন্যায় কথা, এর কী দোষ? কেন একে পাকড়াও করেছ। পথঘাট সাফা রাখা এর কাজ। রাস্তা ছাড়া ও যাবে কোথায়? তা ছাড়া হারেমের কোনও জেনানার দিকে তো নজর দেয় নি। ওতো দেওয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়েছিলো। এইরকম একজন নিরীহ নিরপরাধ লোককে গ্রেপ্তার করলে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করবেন না।

    কিন্তু আমাকে যারা পাকড়াও করেছিলো তাদের কানে ঢুকলো না তার কথা। টানতে টানতে আমাকে নিয়েই চললো তারা।

    আমি শুধু ভাবতে লাগলাম। এমন কি অপরাধ আমি SSSR করলাম। যার জন্য এরা আমাকে এইভাবে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। একবার মনে হলো, আমার গাধার পিঠে-বোঝাই কাঁচা নাডিভূডির দুর্গন্ধে হয়তো কোন গর্ভবতী মেয়ের গা গুলিয়ে গিয়ে থাকবে। আর তারই রোষে পড়েছি আমি! অথবা আমার এই শতছিন্ন ময়লা সাজপোশাক দেখে তারা কুপিত হয়েছে! যা হোক, এ বিপদ থেকে এখন একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউই বাঁচাতে পারবে না আমাকে।

    সহৃদয় পথচারীদের অনুরোধ উপরোধ উপেক্ষা করে তারা আমাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকলো। আমাদের সামনে সামনে চলেছে হারেমের বিশাল বাহিনী।

    চলতে চলতে এক সময় তারা এক প্রকাণ্ড প্রাসাদের সদর ফটকে এসে ঢুকলো। ভিতরে ঢুকে আমাকে এক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো। প্রাসাদের আদালত যে এত চমৎকার সাজানো গোছানো জমকালো ভাবতে পারে না সে। কাজীর বিচার, নিৰ্ঘাৎ গর্দান যাবে আমার। এইভাবে বেঘোরে প্রাণটা যাবে। আমার পরিবারের কেউই তো জানতে পারবে না, জলজ্যান্ত মানুষটা কাজে গেলো, আর ফিরলো না। হাজার খুঁজেও কি তারা আমার লাশের হদিশ করতে পারবে?

    অঝোর নয়নে কাঁদতে থাকি আমি। একটু পরে একটি ক্ষুদে ছোকরা বান্দা এসে আমাকে সঙ্গে করে একটা হামামে নিয়ে গেলো। সেখানে দেখলাম, তিনটি মেয়েছেলে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। আমাকে দেখা মাত্র তারা বললো, তোমার ঐ-জগৰ্ব্বম্প সাজপোশাকগুলো খুলে ফেলো।

    আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাদের কথা মতো বিবস্ত্র হলাম। ওরা আমাকে গরম জলের ফোয়ারার পাশে নিয়ে গেলো। শ্বেত পাথরের মেঝেতে আমাকে শুইয়ে ফেলে সাবান খোসা আর গরম জল দিয়ে উল্টেপাল্টে আচ্ছা করে ডলাইমলাই করতে থাকলো। সাতজন্মে। আমি গায়ে সাবান মাখি নি। পানির অভাবে ভালো করে গোসল করতে পারি নি। এক পর্যত মলয়া জমে জমে দেহের আসল রঙ কবে যে চাপা পড়ে হারিয়ে গিয়েছিলো আমি নিজেই বুঝতে পারি নি। সাবান খোসা দিয়ে সাফা করার পর নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে নিজেই আমি অবাক হয়ে যাই। এমন কাঁচা সোনার মতো গায়ের রঙ কি আমার কখনও ছিলো? ওইরকম শঙ্কা ভয়ের মধ্যেও মুহূর্তের জন্য আমার মন খুশিতে ভরে ওঠে। ঘষা মাজ শেষ হয়ে গেলে ওরা আমাকে আতর সুবাসিত চৌবাচ্চার জলে চুবিয়ে দিলো। অনেকক্ষণ ধরে অবগাহণ করে গোসল করলাম। তারপর ওরা আমাকে শুকনো তোয়ালে দিয়ে ভালো করে গা হাত-পা মুছিয়ে দিলো। এর পর পাশের আর একটা কামরায় নিয়ে গিয়ে নতুন সাজপোশাক পর্যালো। এমন জমকালো বাদশাহী সাজে আমি শুধু আমির বাদশাহদের সাজতে দেখেছি। সাধারণ মানুষ এসব পরার স্বপ্নও দেখতে পারে না। আমি ভাবতে থাকলাম, এবার যদি ওরা আমাকে ফাঁসীর দডিতেও ঝোলায় তাতেও আমার দুঃখ নাই। জীবনটা তো রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে, জঞ্জাল সাফা করে আর ভেড়ার নাডিতুডি পরিষ্কার করেই কাটলো। লোকে আমাকে ধাঙড় বলে দশ হাত দূর দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আমি অস্পৃশ্য, অসূচী। কিন্তু আজ এই ইন্তেকালের সময় আমার সব সাধ পূরণ হয়ে গেলো। কয়েক দণ্ডের জন্য হলেও আমি তো শাহজাদার মতো সাজতে পেরেছি। আমার আর কোনও দুঃখ নাই।

    রাত্রি প্রভাত হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

     

    তিনশো অষ্টআশিতম রজনীতে আবার সে বলতে শুরু করে :

    পরিপাটি করে সাজিয়ে গুজিয়ে ওরা আমার গায়ে গোলাপজল। আর দামী আতরের খুসবু ছিটিয়ে দিলো। তারপর আমার হাত ধরে নিয়ে চললো। চলেছি-যেন এক শাদীর পাত্র। এক সুরম্য শয্যাকক্ষে নিয়ে গিয়ে আমাকে সোনার পালঙ্কে মখমলের বিছানায় বসতে বললো তারা। এমন সুন্দর সাজানো গোছানো ঘর আমি জীবনে কখনও দেখিনি। মুখে আমার এমন কোনও ভাষা নাই, সে ঘরের বাহারের বর্ণনা দিতে পারি। দামী দামী আসবাব আবরণে সারা ঘরটা চমৎকার করে সাজানো।

    রাস্তায় যে মেয়েটিকে দেখে মনে হয়েছিলো বেহেস্তের ডানা কাটা হুরী, তাকে দেখলাম পালঙ্কের মাঝখানে গা এলিয়ে শুয়ে আছে। পাতলা ফিনফিনে মাসুলের সূক্ষ্ম কাজ করা শুধুমাত্র একটা রেশমী-কামিজ তার গায়ে। আর কোনও পোশাক নাই। পালঙ্কের চারপাশ ঘিরে রয়েছে এক দঙ্গল বাঁদী। মেয়েটি ইশারায় বললো, তার কাছে ঘেঁষে বসতে। বাঁদীদের হুকুম করলো, খানাপিনী সাজাও।

    পলকের মধ্যে মেঝেয় কাপড় পাতা হলো। নানা রকম নাম-না-জোনা সুগন্ধী খানা-পিনা এনে সাজিয়ে দিলো তারা। এ-সব খানা আমি জীবনে কখনও, আস্বাদ করা দূরে থাক, চোখে দেখিনি। কত রকম মাংসেরই খাবার। আত্মাণেই পেট ভরে যায়।

    খিদেও পেয়েছিলো যথেষ্ট, খুব তৃপ্তি করে খেলামও। খানা শেষ করে হাত-মুখ ধুয়ে ফল খেলাম দু একটা। নানা রকম সরাবের পাত্র সাজানো হয়েছিলো। এবার সুন্দরী নিজ হাতে সোনার পেয়ালায় সরাব ঢেলে তুলে দিলে আমার হাতে। নিজেও নিলো এক পেয়ালা।

    এইভাবে অনেকক্ষণ ধরে পেয়ালা নিঃশেষ করলাম আমরা। মৌতাত বেশ জমে উঠলো। গুলাবী নেশায় ক্রমশ ছোট হয়ে আসতে থাকে আমার চোখ। সুন্দরীও তখন নেশায় বুদ হয়ে গেছে।

    এবার সে ইশারা করতেই দাসী বাঁদীরা সবাই ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো। মেয়েটি এক হাঁচকাটানে আমাকে তার বুকের ওপর নিয়ে গিয়ে ফেললো। আমি একেবারে তার দেহের সঙ্গে সেঁটে গেলাম। ওর বুকের ডাঁসা স্তন দুটি নিপীডিত হতে থাকলে আমার বুকের তলায়।

    তারপরের ব্যাপার। আর আপনার সামনে বলতে পারবো না, আমির সাহেব। তবে সহজেই অনুমান করতে পারছেন। আমার খেটে খাওয়া শক্ত সমর্থ দেহের উত্তপ্ত মাংস পেশীর নিষ্পেষণে তার কামজরজর কুসুম পেলাব দেহবল্লরী এক সময় অসাড় হয়ে নেতিয়ে পড়লো।

    আমি আর সে সারাটা রাত স্বপ্নাচ্ছন্নের মতো জড়োজডি করে কাটালাম। যখন ঘুম ভাঙ্গলো দেখি, ভোর হয়ে আসছে। সে বললো, আর না, এবার তোমার যাবার সময় হয়ে গেছে, উঠে পড়া। লক্ষ্য করলাম, মেয়েটির মুখে চোখে কামনার কোনও চিহ্ন নাই-এক অনাবিল প্রশাস্তির ছাপ নেমে এসেছে।

    আমি উঠে পোশাক পরে নিলাম। সে আমাকে একখানা কাজ করা রেশমী রুমাল উপহার দিয়ে বললো, এটা কাছে রেখ, আমার কথা মনে পড়বে।

    রুমালের এক কোণে কী যেন বাধা ছিলো। আর এক কোণে লেখা ছিলো ‘গান্ধটাকে খাবার কিনে দিও।’

    —তোমাকে আমার মাঝে মাঝে প্রয়োজন হবে। লোক পাঠাবো—তার সঙ্গে চলে আসবে, কেমন?

    আমি ঘাড় নেড়ে বলি, সে তো আসবেই—

    গাধাটাকে নিয়ে নাডির্ভুডির আড়তে গেলাম। মালগুলো বিক্রি করে দিলাম। রুমালখানা বের করে খুঁটে বাঁধা বস্তুটা নেড়ে চেড়ে পরীক্ষা করতে করতে ভাবলাম, হয়তো বা কিছু তামার পয়সা বাঁধা আছে। কিন্তু গিটটা খুলতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। পঞ্চাশটা সোনার পয়সা। এক সঙ্গে এতগুলো মুদ্রা দেখিনি কখনও। একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে মাটি খুঁড়ে গর্ত করে পয়সাগুলো পুঁতে রেখে আবার দোকানের সামনে এসে রোয়াকে বসলাম। নিজের মনেই গত রাতের অবিশ্বাস্য রোমাঞ্চকর অভিযানের স্মৃতিচারণ করতে থাকলাম। এইভাবে সারাটা দিন কেমন করে কেটে গেছে, বুঝতে পারিনি।

    সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আমি তখনও একভাবে ঠায় বসে আছি দোকানের রোয়াকে, এমন সময় একটা লোক এসে আমাকে বললো, চলো যেতে হবে।

    আমি জিজ্ঞেস করি, কোথায়?

    —চলো, গেলেই জানতে পারবে।

    আমি লোকটাকে অনুসরণ করে চলি।

    আবার সেই প্রাসাদের হারেমে এসে পড়লাম। সেই বিলাসবহুল সুরম্য শয্যা কক্ষে। সেই স্বল্পবসনা সুন্দরী ঠিক তেমনিভোব মখমলের শয্যায় গা ডুবিয়ে শায়িতা। পালঙ্কের চারপাশে বোবা বাঁদীরা দণ্ডায়মান।

    আমি আভুমি আনত হয়ে কুর্নিশ জানিয়ে দাঁড়ালাম তার সামনে। সে আমাকে ইশারায় বসতে বললো তার পাশে। তুডি বাজাতেই খানাপিনা সাজানো হলো মেজ-এ। তেমনি নানা জাতের মুখরোচক সব সুন্দর সুন্দর খাবার। তৃপ্তি করে খেলাম।

    তারপর সে নিজের হাতে ঢেলে দিলো আমাকে সরাব। নিজেও নিলো। ধীরে ধীরে নেশা জমতে থাকে। ইশারা করতেই বাঁদীরা বাইরে চলে যায়। আমাকে টেনে নেয়। সে বুকে। তারপর আমার কঠিন বাহুর বন্ধনে তার মোমের মতো দেহখানা গলে গলে নিঃশেষ হতে থাকে। সারাটা রাত এই ভাবে সে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে সুধাপাত্র পূর্ণ করে নেয়। বিনিময়ে সকালবেলা সে আমাকে একখান কাজ-করা রেশমী রুমালে বেঁধে পঞ্চাশটা সোনার দিনার ইনাম দেয়। আমি আবার ফিরে যাই সেই গর্তটার পাশে। আগের পয়সাগুলোর সঙ্গে এক করে রেখে দিই সেদিনের দিনারগুলো।

    এইভাবে এক এক করে আটটা রাত্রির রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, আর কিছু স্বর্ণমুদ্র সঞ্চয় ১৩৯ করি আমি। প্রতি রাত্রেই খানাপিনা অঢেল এলাহী বন্দোবস্ত করে সে।

    একদিন সন্ধ্যাবেলা যথারীতি সেই সুন্দরীর ঘরে খানাপিনা সেরে সবে আমার সাজ-পোশাক খুলতে আরম্ভ করেছি, এমন সময় একটি বাঁদী এসে ফিসফিস করে কি যেন বলে আবার তক্ষুণি দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো। আমি লক্ষ্য করলাম; একটা অজানা আতঙ্কের রেখা ফুটে উঠলো তার কপালে। তড়াক করে বিছানা ছেড়ে নেমে দাঁড়ালো সে। আমার হাত ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে গেলো ছাদের ওপরে চিলে কোঠায়। ছোট্ট খুপরীর মতো একটা ঘর। সেখানে পুরে শিকল তুলে দিয়ে সে চলে গেলো।

    অন্ধকারাচ্ছন্ন খুপরীর দু পাশে দুটো ছোট্ট ঘুলঘুলি। কানে এলো অশ্ব খুর ধ্বনি। একদল লোক ঘোড়া ছুটাতে ছুটাতে এসে থামলো প্রাসাদ প্রাঙ্গণে। বেশ পরিষ্কার দেখতে পেলাম। এক অপূর্ব সুন্দর সুঠামদেহী এক নওজোয়ান, আর তার জনাকয়েক নফর চাকর। ঘোড়া থেকে নেমেই প্রায় ছুটে এসে সে ঢুকে পড়লো সুন্দরীর শয্যা কক্ষে।

    আমি অন্য একটা ঘুলঘুলিতে চোখ রেখে সে-ঘরের খোলা জানালা দিয়ে সব কিছুই প্রত্যক্ষ করতে থাকলাম। ক্ষিপ্র হাতে সে তার সাজ-পোশাক খুলে ছুঁড়ে দিলো। যুবকের দেহ-সৌষ্ঠভ দেখার মতো। যেন এক দুর্ধর্ষ জাঁদরেল বীর সেনাপতি। ক্ষুধার্ত সিংহের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো সে মেয়েটির দেহের ওপর। তার কামোত্তেজিত নাকের শ্বাস প্রশ্বাসের ও আওয়াজ কানে আসতে লাগলো। মনে হয়, যেন কোনও কামার-শালার হাপর চলেছে। আর রিরংসায় জরজরা মেয়েটির চীৎকার শুনে বুঝতে কোনও কষ্ট হলো না, এই রকম আসুরিক পৌরুষের দাপট আর দংশন না হলে নারীর কামনার ক্ষুধা মেটানো যায় না। সারারাত ধরে আমি লক্ষ্য করতে থাকলাম ওদের নানা রকম শৃঙ্গার, রাগমোচন আর রতিরঙ্গ। নিজেকে বড় দীন ভিখারী অসহায় মনে হতে লাগলো। আমার দেহে তো তাগাদ নাই-ওই ভাবে কী আমি তুষ্ট করতে পারি?

    রাত্রির অন্ধকার কাটতে থাকে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।

     

    তিনশো উননকবইতিম রজনী :

    অ্যাবার সে বলতে থাকে। রাত্ৰি শেষ হতে এক এক করে অনেকবার তারা রতিরঙ্গে মাতিলো। তারপর ভোরের আলো ফোটার আগে ওর স্বামী আবার সাজ পোশাক পরে সশব্দে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। একটু পরে সুন্দরী এসে শিকল খুলে আমায় আবার ঘরে নিয়ে আসে।–আমার স্বামীকে দেখলে?

    আমি ঘাড় নেড়ে বললাম, হ্যাঁ। খুব সুন্দর সুপুরুষ দেখতে। তা এমন বীর সেনাপতির মতো তাগিদ তার, তোমার তো সব কামনা বাসনাই সে ভালো করে মেটাতে পারে, তাকে ফেলে আমার মতো একটা ধাঙড়-মেথরকে ঘরে নিলে কেন তুমি?

    মেয়েটি বললো, ঠিকই বলেছ, আমার স্বামীর যা ক্ষমতা, কম পুরুষেরই তা থাকে। কিন্তু সে-ই বুঝি হয়েছে আমার কাল। তুমি তো সারারাত ধরে দেখলে, আচ্ছা তুমিই বলো, একটা মরদের এত পৌরুষ কী কোনও মেয়ে সব সময় সহ্য করতে পারে। হয়তো কখনও সখনও তাকে পুরোপুরি খুশি করতে পারি না, তাতে সাহেবের গোঁসা হয়ে যায়। একদিন হয়েছে কি, শোনো : আমি আর আমার স্বামী সন্ধ্যাবেলা বাগিচার ভিতরে বসে আছি। হঠাৎ কী হলো, আমাকে বসিয়ে রেখে সে উঠে চলে গেলো। আমিও পায়ে পায়ে তার পিছনে পিছনে আসলাম। তারপর যা দেখলাম তা আর কী বলবো। আমাদের বাসন মাজার এক আধাবুড়ি ঝিকে নিয়ে সে রসুইখানার মেঝোয় একখানা মাদুর পেতে জড়োজডি করে শুয়ে আছে। সারা শরীর আমার রী রী করে জ্বলতে লাগলো। কি কুৎসিৎ তার রুচি প্রবৃত্তি। সেই দিনই আমি কসম খেলাম। এর উচিৎ জবাব একটা দিতেই হবে। মনে মনে ঠিক করলাম, ও শুয়েছে বাসন মাজা ঝিকে নিয়ে। আর আমি শোবো। রাস্তার সবচেয়ে নোংরা কুৎসিৎ কোনও ধাঙড় মেথরকে নিয়ে। সেই কারণে পরদিন থেকে রাস্তায় বেরুতে শুরু করলাম। কোথায় পাওয়া যায়। সবচেয়ে নোংরা কুৎসিৎ-সমাজের সবচেয়ে নিচুতলার একটা মানুষ, তারই সন্ধানে। পর পর পাঁচদিন খোঁজার পর সে-দিন তোমার দেখা পেলাম। এই কদিন তোমাকে নিয়ে শুয়ে আমি আমার গায়ের ঝাল মিটিয়েছি। যোগ্য প্রতিশোধ আমি নিতে পেরেছি। তার ওপর। ব্যাপারটা সে আঁচ করেছে। তাই কাল রাতে আমার ঘরে আবার এসেছিলো। যাক আপাতত একটা ফয়সালা হয়ে গেছে। আমাকে সে কথা দিয়েছে, আর কখনও ঐরকম নোংরা। কাজ সে করবে না। কিন্তু পুরুষ মানুষকে আমি বিশ্বাস করি না। তবে এও তোমাকে আমি বলে রাখছি, ফের যদি সে কথার খেলাপ করে আবার আমি তোমাকে ডাকবো। যাক, আপাতত তুমি বিদায় হও। পরে দরকার হলেই আবার ডাকবো।

    সে দিন যাবার আগে সে আমাকে এক থেকে আরো চারশো সোনার দিনার ইনাম দিয়েছে। আমি সেই থেকে পথ চেয়ে আর দিন গুণে বসে আছি। কবে তার স্বামী আবার কোনও একটা মেয়েমানুষের কাছে যাবে, কবে আমার আবার ডাক পড়বে। কিন্তু দিনে দিনে মাস যায় মাসে মাসে বছরও কাটে, আমার দায়িতা আমাকে ডাকে না। তাই আমার মনের মধ্যে ঝড় উঠেছে। আমি আর থাকতে না পেরে বহু পথ হেঁটে, অনেক কায়-ক্লেশে এই মক্কায় এসেছি খোদাতালার দরবারে আমার মনের দুঃখ জানাতে। যদি তিনি আমার কাতর প্রার্থনা শুনে প্রসন্ন হন—এই ভরসায় কাবাহ প্রদক্ষিণ করার সময় আমার একমাত্র বাসনাই তাকে জানাচ্ছিলাম। আপনিই বলুন, আমির সাহেব, কী আমি অপরাধ করেছি?

    লোকটাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। খুব একটা মারাত্মক কিছু দোষ ওর নাই।

    রাত্রি তখনও অনেক বাকী। শাহরাজাদ বললো, জাঁহাপনা, এবার দু একটা ছোট গল্প শুনুন। তারপর কাল থেকে আবার বড় গল্প আরম্ভ করবো।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142 143 144 145 146 147 148 149 150 151 152 153 154 155 156 157 158 159 160
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকবীর – ১ – ক্ষিতিমোহন সেন
    Next Article প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা – ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.