ব্যাঙ্কে কান্নাকাটি
‘কী হয়েছে সুমন, কাঁদছ কেন? ব্যাঙ্কে আছ এখন? আরে কিছুই তো বুঝতে পারছি না, কোথায় আটকেছে তোমায়? আচ্ছা কোন ব্যাঙ্কে বলো, আমি আসছি৷’
লগ্নজিতা ফোনটা রেখেই সুশোভনকে বলল, ‘কী ব্যাপার বলতো? আমার ড্রাইভারকে ব্যাঙ্কের গেটে আটকে কেন রেখেছে, সেটা তো বুঝতে পারছি না৷ পুলিশের গাড়ি চালায় বলার পরেও ছাড়েনি৷ চলো একবার বিধাননগর যেতে হবে৷’
সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, আমি যাচ্ছি৷ আপনি কেন কষ্ট করবেন?’
লগ্নজিতা বলল, ‘যেতাম না যদি কেসটা সাধারণ হত৷ তাহলে তোমাকেই পাঠাতাম ওকে ছাড়িয়ে আনতে৷ কিন্তু হঠাৎ ব্যাঙ্কে ঢোকার গেটে সুমনকে সিকিউরিটি কেন আটকেছে, সেটাই তো রহস্য৷’
লগ্নজিতা যখন এস. বি. আই.-এর ব্রাঞ্চের সামনে পৌঁছাল তখনই খেয়াল করল সামনেই বিধাননগর থানার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে৷ ওই থানার বর্তমান ও.সি. মিস্টার সান্যাল লগ্নজিতার বিশেষ পছন্দের মানুষ৷ মধ্যবয়সি মানুষটা কাজপাগল৷ লগ্নজিতার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল একটা খুনের কেসের সমাধান করতে গিয়ে৷ তখনই দেখেছিল, ভদ্রলোক সাহিত্যচর্চায় আগ্রহী৷ নিজের প্রশাসনিক জীবনের অভিজ্ঞতা উনি আবার অবসর সময় মলাটবন্দিও করেন৷ থ্রিলার লেখক হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছেন৷ লগ্নজিতাকে এক কপি বই উপহার দিয়ে বলেছিলেন, পড়ে দেখবেন৷ লালমোহনবাবুর লেখার মতো অদ্ভুত নাম ছিল থ্রিলারটার, ‘দমদমে আলুর দম’৷ কিন্তু পড়তে গিয়ে লগ্নজিতা দেখেছিল, অরিজিনাল ঘটনা অবলম্বনেই ভদ্রলোক রহস্যগল্পটি লিখেছিলেন৷
লগ্নজিতা ব্যাঙ্কে ঢুকেই দেখল, ব্যাঙ্কের সাধারণ কাজকর্ম সব বন্ধ৷ কাউন্টারে এমপ্লয়িরা চুপ করে বসে আছেন৷ এদিকে মিস্টার অতীশ সান্যাল সুমনকে জেরা করছেন৷ লগ্নজিতা ঢুকতেই মিস্টার সান্যাল বললেন, ‘এই যে মিস ভট্টাচার্য, ইনি আপনার ড্রাইভার? অথচ এর ক্লাস সেভেনের বাচ্চা ড্রাগ পাচার করে৷ ব্যাঙ্কেঢোকার সময় সিকিউরিটিকে ড্রাগের পুরিয়া দিতে গিয়েই ধরা পড়েছে৷ ছেলে আর বাবা দুজনেই বলছে, তারা এ বিষয়ে জানে না৷ ছেলে বলে, রাস্তায় একজন তার হাতে এটা ধরিয়ে দিয়ে পালিয়েছে৷ আপনি বলুন মিস ভট্টাচার্য-এর একটা কথাও কি কনভিন্সিং লাগছে?
লগ্নজিতা বলল, ‘মিস্টার সান্যাল, আমি কি একবার সুমনের সঙ্গে কথা বলতে পারি? ভাববেন না আমি পোস্টের জোর দেখাচ্ছি৷ আমি জানি এটা আপনার থানার আন্ডারে৷ আমি সেখানে ইন্টারফেয়ার করছি না৷’
মিস্টার সান্যাল কাঁধ ঝাঁকিয়ে পজিটিভ ভঙ্গিমা করলেন৷ বললেন, ‘ম্যাডাম, আপনি চাইলে আমরাই আপনাকে সব তথ্য পাঠিয়ে পারি৷ কিন্তু আপনার মতো অফিসাররাই আমাদের নিজের মতো কাজ করার স্বাধীনতা দিয়েছেন৷
লগ্নজিতা জানে, মিস্টার সান্যাল নিজের কাজে অন্য কারো ইন্টারফেয়ারেন্স পছন্দ করেন না৷ লগ্নজিতা এগিয়ে গিয়ে বলল, সুমন বিষয়টা খুলে বলো৷ কান্নাকাটি পরে হবে৷
সুমন বোধহয় ম্যাডামকে দেখে একটু আশ্বস্ত হল৷ হাতের চেটো দিয়ে চোখটা মুছে নিয়ে বলল, ম্যাডাম, পিকুর স্কুল থেকে বলেছে, ব্যাঙ্কে একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে ওর ফার্স্ট নেম দিয়ে৷ যেহেতু মাইনর তাই জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট চাই৷’
লগ্নজিতা বলল, সে তো বুঝলাম কিন্তুতারপর কী হল?
সুমন ভাঙা গলায় বলল, পিকু একটা চকোলেটের প্যাকেট সিকিউরিটির হাতে দিয়ে বলেছে, টাকা দিন৷ এই চকোলেটের অনেক দাম৷ সেটাতে নাকি ড্রাগ ছিল, ম্যাম৷ চকোলেটটা হাতের তালুতে রাখতেই গুঁড়িয়ে গেছে৷ তখনই ওদের সন্দেহ হয়৷ নাকে শুঁকে বলছে ওটা নাকি ড্রাগ৷ পিকু এসব কোথা থেকে পেল আমি আদৌ জানি না, ম্যাডাম৷ কিন্তু এরা বিশ্বাস করতেও চাইছে না কিছু৷
মিস্টার সান্যাল বললেন, দেখুন মিস ভট্টাচার্য, ধরা পড়লে এরকম গল্প অনেকেই দেয়৷ এটা আপনাকে নতুন করে আমার শেখানোর নেই৷ আপাতত আমি এদের অ্যারেস্ট করব যেহেতু আমার থানার আন্ডারে কেস৷ পরে না হয় এ নিয়ে একদিন বসা যাবে, সঙ্গে গরম চা-ও থাকবে৷
সুমনকে চোখের সামনে দিয়ে তুলে নিয়ে গেল বিধাননগর থানার পুলিশ৷ লগ্নজিতা একজন ডি.সি.পি.৷ তাই ও চাইলে অনেক কিছুই করতে পারত৷ কিন্তু সেটা ও পছন্দ করে না৷ তা ছাড়া বিধাননগর ওর থানাগুলোর আন্ডারে পড়ছেও না৷ সি.সি.টি.ভি. ফুটেজে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, সুমনের ছেলে একটা চকোলেটের প্যাকেট নিয়ে সিকিউরিটির হাতে দিচ্ছে৷ সুমন পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে৷ এটার পর সুমনকে অ্যারেস্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে পারলে এই প্রফেশনের ওপরেই বিশ্বাস উঠে যেত৷ মিস্টার সান্যাল অবশ্যই সুমনকে অ্যারেস্ট করবে৷ পিকুকে রাখবে কোথায়? কোনো হোমে হয়তো৷ বিচারাধীন কেস যেহেতু তাই মিস্টার সান্যালকে তার ডিউটি পালন করতে দিতেই হবে৷
লগ্নজিতা বলল, ‘মিস্টার সান্যাল, আপনি আপনার ডিউটি করুন৷ আমি শুধু একটাই অনুরোধ করব, এই কেসটার ডিটেলস আমার চাই৷’
মিস্টার সান্যাল বললেন, ‘একবার বসব আপনার সঙ্গে, মিস ভট্টাচার্য৷ কথা আছে৷
সুমন আর পিকুকে বিধাননগর থানা নিয়ে চলে গেল৷’
লগ্নজিতা সিকিউরিটির জবানবন্দি নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল৷ সুশোভনকে বলল, ‘চলো, সুমনের বাড়ি যেতে হবে৷ বিধাননগরের পুলিশ পৌঁছানোর আগেই৷’
সুশোভন গাড়িতে উঠেই বলল, ‘ম্যাডাম, বিধাননগরের মেজোবাবু কেসটা ইনভেস্টিগেট করবেন এটা আমি শুনলাম৷ ওই ভদ্রলোকের বয়েস উনত্রিশ, ম্যাডাম৷ জিম করা পেটানো চেহারা৷ পঞ্চাশ ইঞ্চি ছাতি৷ পুরো সিনেমার হিরো, ম্যাম৷
লগ্নজিতা বলল, ‘তোমার স্ত্রী জানে তুমি বাইসেক্সুয়াল?’
সুশোভন লজ্জা পেয়ে বলল, ‘না না ম্যাডাম৷ সেরকম ব্যাপার নয়৷ আসলে ভদ্রলোককে একবার দেখলেই সবাই ফিদা হয়ে যাবে, এমনই ওঁর পার্সোনালিটি৷ আমার একটা ডগ শো-তে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল৷
লগ্নজিতা বলল, ‘কী নাম তোমার এই গরিবের টমক্রুজের?’
সুশোভন গদগদ হয়ে বলল, ‘পারিজাত বাল৷’
লগ্নজিতা জিভ কেটে বলল, ‘আহ সুশোভন, মানুষকে কথায় কথায় এমন গালাগাল দিতে নেই৷’
‘এই তোমাদের জন্য পুলিশরা বদনামের ভাগীদার হয়৷ লোকে বলে, পুলিশের মুখে গালাগালের ফোয়ারা ছোটে৷’
সুশোভন ঢোঁক গিলে বলল, ‘ম্যাডাম, আমি গাল দিইনি৷ ওঁর সারনেমই বাল৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘এমন ভয়ংকর সারনেম নিয়ে ভদ্রলোক তো দিনে কয়কশোবার গলায় বিষম খান৷ না মানে সবাই তো সারাদিন ওঁকে কমন নিয়েই কথা বলে, তাই বলছি৷ এনিওয়ে, সুশোভন, তুমি কি সুমনের মুখে অ্যারেস্ট হওয়ার ভয় ছাড়াও অন্য কোনো ভয়ের আনাগোনা দেখেছ?’
সুশোভন বলল, ‘সুমন নিজের থেকেও বেশি ওর ছেলের জন্য ভয় পাচ্ছিল৷ আসলে বাচ্চা ছেলের জীবনটা যদি শেষ হয়ে যায়, সেই কারণেই ভয়৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট হতে গেলে কিন্তু আরেকটু ডিটেলে ভাবতে হবে সুশোভন৷ সুমন যদি অপরাধ করত তাহলে ওর চোখে আতঙ্ক কাজ করত৷ তাহলে আমি ওকে বাঁচানোর চেষ্টাই করতাম না৷ ওর চোখে ভয় ছিল৷ এমন আকস্মিক বিপদে পড়লে যে ভয়টা আমাদের সকলের চোখে থাকে, সেটাই ছিল৷ কেন জানি না, আমার সিক্সথ সেন্স বলছে, সুমন ড্রাগসের ব্যাপারে কিছু জানত না৷
‘সুমনের বাড়িটা যেহেতু আমার থানাগুলোর আন্ডারেই পড়ে তাই এ কেসের কিছুটা দায়িত্ব আমি স্বেচ্ছায় নিতে পারি, বুঝলে সুশোভন?
সুশোভন ঘাড় নেড়ে বোঝাল সে বুঝেছে৷ তবে মনে মনে বলল, হ্যা ম্যাডাম আমি ডিপার্টমেন্টে শুনেছিলাম বটে, আপনাকে চব্বিশ ঘণ্টা ছারপোকা কামড়ায়, তাই আপনি চেয়ারে স্থির হয়ে বসতে পারেন না৷ জটিল কেসে নিজের নাকটাকে কোনোমতে এন্ট্রি করিয়ে তবেই শান্তি পান৷ নিজের পোস্ট নিয়ে মাথাব্যথা নেই আপনার৷ পারলে কনস্টেবলের কাজটাও নিজে করে নেন৷ যখন জেলায় ছিলেন তখনও সেখানের লোকদের জ্বালিয়েছেন৷ এখন কলকাতা এসে এখানে ডিপার্টমেন্টকে পাগলা করে রেখে দিয়েছেন৷ এইজন্যই আপনার আড়ালে আপনাকে সবাই চুলবুলে ভট্টাচার্য বলে৷ সুশোভন মাত্র আট মাস হল এই অঞ্চলে জয়েন করেছে৷ এসেই লগ্নজিতার পাল্লায় পড়েছে৷ ভুল করে বলে ফেলেছিল, আপনার কাজ আমার খুব ভালো লাগে৷ আপনি যদি জটিল কেসে আমায় অ্যাসিস্ট্যান্ট বানান তো খুব খুশি হব৷ মিস ভট্টাচার্য সেটাকে সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছেন৷ মিস লগ্নজিতা ভট্টাচার্যর যে দিনরাত, ভ্যাকেশন এসব কিছুই নেই, সেটা বুঝতে পারেনি সুশোভন৷
ওদের থানার নীলাভস্যার মানে মেজোবাবু হেসে বলেছিলেন, ‘সুশোভন, এবার থেকে ঘড়ির কাঁটাকে আরেকটু স্পিডে ছুটতে বলবে ভাই, কারণ মিস ভট্টাচার্য হাঁটেন না দৌড়ান৷’
লগ্নজিতা যে কোনো এক গভীর ভাবনায় মগ্ন, সেটা ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে৷ তারই মধ্যে বলল, ‘যতদূর মনে পড়ছে, সুমনের বাড়ি এই গলির মধ্যেই৷ চলো সুশোভন, নেমে পড়ি৷’ সুমনের দু-কুঠুরি ইটের ঘর৷
ওর বউ আশা কর্মী৷ ডিউটি থেকে সদ্য ফিরেছে বোধহয়৷ লগ্নজিতাকে সুমনের বউ চেনে৷ বার দুয়েক দেখেছে হয়তো৷ মহিলা এগিয়ে এসে বললেন, ‘ম্যাডাম, আপনি এখানে? সুমন তো ব্যাঙ্কে যাবে বলেছিল৷ আপনাকে জানায়নি?
লগ্নজিতা নরম গলায় বলল, ‘জানিয়েছে৷ আমি এসেছি একটা অন্য দরকারে৷ তোমার হেল্প লাগবে৷’
দুটো প্লাস্টিকের চেয়ার এগিয়ে দিয়ে রিম্পা বললেন, ‘হ্যাঁ ম্যাডাম, বলুন৷’
লগ্নজিতা বুঝল সুমন এবং পিকুর অ্যারেস্টের খবরটা এখনও পৌঁছায়নি রিম্পার কাছে৷ তাই খুব সাবধানে খবরটা দিতে হবে৷ রিম্পার চোখে কৌতূহল উঁকি দিচ্ছে৷ সেটাই স্বাভাবিক৷ হঠাৎ একজন সামান্য ড্রাইভারের বাড়িতে উঁচু মহলের পুলিশ অফিসার এসে হাজির হলে কৌতূহলের যথেষ্ট কারণ দেখা দেয় বইকি৷ রিম্পার দিকে না তাকিয়েই লগ্নজিতা বলল, ‘সুমনকে অ্যারেস্ট করেছে বিধাননগর থানার পুলিশ৷ সঙ্গে পিকুও আছে৷ কিন্তু তুমি চিন্তা কোরো না৷ বিষয়টা আমি নিজে দেখছি, খুব তাড়াতাড়ি ওদের বেল করাতে চেষ্টা করব৷ তবে আমায় একটু হেল্প করতে হবে৷’
রিম্পার মুখে-চোখে বিস্ময় থমকে আছে৷ অস্ফুটে বলল, ‘অ্যারেস্ট করেছে? কিন্তু কেন? কী করেছে সুমন?’
লগ্নজিতা বলল, ‘সেসব বলব ডিটেইলে৷ তার আগে আমায় একবার পিকুর ঘরে নিয়ে চলো৷ আর ও স্কুলের কোন দোকান থেকে চকোলেট কিনত সেটা কি তুমি জানো?’ পিকুর পড়ার সস্তার কাঠের টেবিলে ছড়িয়ে রয়েছে ওর স্কুলের ব্যাগ, বই, খাতা৷ রংপেনসিলের প্যাকেটও রয়েছে৷ লগ্নজিতার ইশারার অপেক্ষায় না থেকেই সুশোভন পিকুর স্কুল ব্যাগের ভিতরে হাত ভরে দিল৷ বই-খাতার সঙ্গে বেশ কিছু টাকা আর গোটা চারেক চকোলেটের প্যাকেট পেল৷ লগ্নজিতার ইশারায় সেগুলো পকেটস্থ করে নিল৷
রিম্পা সমস্ত ঘটনা শোনার পরে কাঁদতে কাঁদতেই বলল, ‘এসব কথা তো ঘুণাক্ষরেও জানতে পারিনি৷ ওর ব্যাগে টাকা এল কোথা থেকে?’
লগ্নজিতা বলল, ‘রিম্পা, তুমি ওকে স্কুলে নিয়ে গেছ কখনো? ও কোন দোকান থেকে চকোলেট কেনে, জানো?
রিম্পা বলল, ‘হ্যাঁ ম্যাডাম, জানি৷ ওদের স্কুলের পাশেই ‘জয়ন্ত ভ্যারাইটিজ’ বলে একটা দোকান আছে৷ ওই দোকানে পেনসিল, খাতা থেকে শুরু করে চকোলেট,কেক, বিস্কিট সব পাওয়া যায়৷ ওখান থেকেই সবাই কেনে৷ আমি নিজেও কিনে দিয়েছি ওকে ওই দোকান থেকে৷ কিন্তু এসব ব্যবসা ওই দোকানে করে বলে তো মনে হয় না, ম্যাডাম৷ বাচ্চাদের খুব ভালোবাসে৷ তা ছাড়া ওর দোকানটাও বেশ পুরোনো৷ আগে জয়ন্তর বাবার চায়ের দোকান ছিল ওটা৷ তারপর জয়ন্ত স্টেশনারি দোকান করে ফেলল ওটাকে৷
লগ্নজিতা বলল, আমাকে একবার নিয়ে চলো ওই দোকানে৷ আর আমি যেটুকু বলতে বলব, সেটুকুই বলবে ওই জয়ন্ত ভ্যারাইটিজের লোকটিকে৷
রিম্পা ভাঙা গলায় বলল, ‘ম্যাডাম পিকুকে কোথায় রেখেছে? একবার দেখা করা যায়?
সুশোভন বলল, ‘নিশ্চয়ই যাবে৷ আমরা ব্যবস্থা করে দেব৷ পিকুর স্কুলটা কি বাড়ি থেকে দূরে?’
রিম্পা ঘাড় নেড়ে বলল, ‘খুবই কাছে৷ ওই তো বাঁ হাতের গলিটা ধরে দশ পা এগোলেই স্কুল৷ আর স্কুলের গায়েই জয়ন্তর দোকান৷’ রিম্পাও এগোচ্ছিল ওদের সঙ্গেই৷
তখনই লগ্নজিতার ফোনে একটা কল এল৷ ফোনটা রিসিভ করেই লগ্নজিতা বলল, ‘হ্যাঁ কৌশিক বলো৷’ কৌশিকের গলার স্বরে বেশ বোঝা যাচ্ছে ও ভীষণ উত্তেজিত৷ শ্বাসপ্রশ্বাসের দ্রুত ওঠানামা ফোনের এ প্রান্তে থেকেও অনুভব করল লগ্নজিতা৷
কৌশিক বলল, ‘তোমার এলাকার এক স্কুল স্টুডেন্ট ভরতি হয়েছে আমার হসপিটালে৷ ড্রাগসের ওভারডোজ মনে হচ্ছে৷ বাঁচবে কি না বলতে পারছি না৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘ট্রিটমেন্ট শুরু করো, আমি সুশোভনকে পাঠাচ্ছি ফর্মলিটিজ পূরণ করতে৷’
সুশোভন কিছু বলার আগেই লগ্নজিতা বলল, ‘তুমি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাও৷ আমি ম্যানেজ করে নেব৷’ সুশোভন কিছু বলার আগেই লগ্নজিতা বলল, এ’টা আমার অর্ডার৷ অযথা টাইম ওয়েস্ট কোরো না৷ আর শোনো, তোমাদের থানায় আমি কদিন বসছি, নিজের অফিসে বসে থাকলে চলবে না৷’ সুশোভন জানে, লগ্নজিতা ম্যাডামের এটা বিশেষ স্টাইল, যখন যে চত্বরের কেস, সেই চত্বরের লোকাল থানার একটা ঘরে উনি ঘাঁটি গাড়েন৷ এস.আই. হিসেবে এই থানায় জয়েন করার পরেই এটা শুনেছিল ও৷