পোস্টমর্টেম রিপোর্ট
লগ্নজিতা আর দেরি না করে বেরিয়ে এল৷
পারিজাত আর রুদ্রজ্যোতি অলরেডি তপন মহান্তি আর জয়ন্তর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট টেবিলে ছড়িয়ে বসে কিছু আলোচনা করছিল৷ লগ্নজিতা ঢুকতেই রুদ্রজ্যোতি বলল, ‘আসুন ম্যাডাম৷ রিপোর্টে তো দেখাচ্ছে হার্টফেলে মৃত্যু৷ আবার রক্তে নারকোটিকসের ওভারডোজ দেখাচ্ছে৷ ইন্টারেস্টিং হল, মৃত্যুর সময় দেখাচ্ছে সন্ধে সাতটা থেকে রাত দশটার মধ্যে৷ অথচ পাশের বাড়ির লোক এটা দেখেছে ভোরবেলা৷ সন্ধে সাতটায় তপনের ঘরে লাইট জ্বলছিল না? লোকটা তো সিকিউরিটি তাই না? অন্তত রাত বারোটা অবধি পাহারা দেওয়া অভ্যেস৷ তাহলে রাত দশটার মধ্যে আলো নিভিয়ে ঘুমিয়ে গেল কী করে? ভোরে জানালা দিয়ে পাশের বাড়ির লোক দেখেছে বডি ঝুলছে৷ তারপর সে চেঁচামেচি করেছে৷ লোকজন ডেকে থানায় খবর দিয়েছে৷ সেটা ঠিক আছে৷ কিন্তু পাড়ার কেউ ওই গলি দিয়ে যাওয়ার সময়ে ওই ঘরের দিকে তাকালো না? পারিজাত বলল, স্যার যে ভদ্রলোক দেখেছেন তিনি রেগুলার ভোরে উঠে ওয়াকে যান৷ তখনই নাকি বিষয়টা নজরে আসে৷
লগ্নজিতা বলল, ‘পারিজাত, ওই ভদ্রলোক অফিস থেকে ফেরেন ক-টায়?
ম্যাডাম, ‘রাত আটটা নাগাদ৷’ প্রাইভেট কোম্পানিতে সার্ভিস করেন৷
রুদ্রজ্যোতি বলল, আরে, ওই পাড়ায় তো ওই ভদ্রলোক ছাড়াও আরও লোক আছে তা-ই না? তারা কেউ দেখতে পেল না৷ তার মানে কি যখন মারা হয়েছে তখন টাঙানো হয়নি? তাই মৃত্যুর টাইম সাতটা থেকে দশটার মধ্যে দেখাচ্ছে৷ ধরো, তপন মারা গেল আটটা নাগাদ৷ আর ওকে টাঙানো হল রাত বারোটা নাগাদ, তাহলে?
লগ্নজিতা বলল, ‘কিন্তু স্যার, খুনি এতক্ষণ টাইম ওই ঘরে ওয়েট করবে কেন? তবে কি যে মেরেছে সে টাঙায়নি? রুদ্রজ্যোতি বলল, ‘হ্যাঁ এটাও একটা দিক৷ আমি কিন্তু শুনলাম, তপন দরজা-জানালা সব বন্ধ করে তারপর ঘুমাত৷ লোকটার সাপের ভয় ছিল৷ তাহলে ভোর চারটেতে জানালা খুলল কে? তপন রাত বারোটা থেকে একটায় রোজ একবার স্কুলে চক্কর দিয়ে, বার তিনেক বাঁশি বাজিয়ে তবেই নাকি ঘরে যেত৷ আবার ভোরের দিকে একবার উঠে চক্কর দিয়ে নিত৷ তাহলে কী এমন ঘটল যে সেদিন সন্ধে সাতটার মধ্যে লাইট নিভিয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল?
লগ্নজিতা বলল, ‘স্যার, আপনার কী মনে হচ্ছে?’
রুদ্রজ্যোতি বলল, ‘লোকটাকে কেউ ভয় দেখিয়েছিল৷ লোকটা সাতটায় ঘরে ঢুকে লাইট অফ করে শুয়ে পড়েছিল৷ তারপর আতঙ্ক থেকেই ড্রাগসের ইঞ্জেকশন নিতে শুরু করে৷ একসময় টালমাটাল অবস্থায় জ্ঞানশূন্য হয়ে গলায় দড়ি দিয়েছিল৷ মৃত্যুর কারণ হার্টফেল দেখানো হচ্ছে ঠিকই৷ কিন্তু রক্তে নারকোটিক অতিমাত্রায় পাওয়া গেছে৷ তাই লোকটা কোনটাতে মারা গেছে, সেটা তো ক্লিয়ার নয়৷ ড্রাগসের ওভারডোজ নাকি হ্যাং?
লগ্নজিতা বলল, ‘স্যার, এখানে আরেকটা গণ্ডগোল হচ্ছে কিন্তু, লোকটা এই পুরো ব্যাপারটা ঘটাল অন্ধকার ঘরে?’
রুদ্রজ্যোতি বলল, হ্যাঁ, এটা একটা পয়েন্ট ঠিকই৷ কিন্তু অঙ্ক কষলে মনে হচ্ছে, লোকটা আত্মহত্যা করেছে ড্রাগস-নেওয়া অবস্থায়৷ খুনি লোকটাকে ইঞ্জেকশন দিল আর লোকটা চেঁচাল না? জানালা খোলা ছিল, চিৎকার করলে কেউ না কেউ শুনতে পেত৷ শরীরের আর কোথাও কোনো আঘাত নেই৷ তাই কেউ মেরেধরে ইঞ্জেকশন দিয়েছে এটা নয়৷ তাই বেশ বোঝা যাচ্ছে এটা খুন নয়৷’
লগ্নজিতা একটু ভেবে বলল, ‘হয়তো তা-ই৷’ কিন্তু স্যার, ভয়টা কে দেখাল?
রুদ্রজ্যোতি বলল, ‘জয়ন্তর খুন সম্পর্কে এই লোকটা সম্ভবত কিছু জানত৷ তাই লোকটাকে ভয় দেখানো হয়েছিল বলে আমার ধারণা৷ ওই প্রধানশিক্ষক সম্পর্কে কী খোঁজ পাওয়া গেল?
লগ্নজিতা বলল, ‘স্যার, লোকটা ঘোরালো৷ ওর ভাইপোর লরিতেই খুনটা হয়েছে৷ তার ফুটেজ আমরা পেয়েছি৷ কিন্তু জেঠু আর ভাইপো এখন অন্য গল্প সাজিয়েছে৷’
রুদ্রজ্যোতি হেসে বলল, ‘সুশোভন তোমাদের নেটওয়ার্ক বড়ো খারাপ৷ এই নিয়ে কেস সলভ করা কিন্তু বেশ কষ্টসাধ্য৷’ কথাটা লগ্নজিতার গায়ে লাগল৷ বোধহয় ভ্রূটা সামান্য কুঁচকেই গিয়েছিল৷ রুদ্রজ্যোতি সেদিকে তাকিয়ে বলল, উহুঁ, শুধু আত্মসম্মান ধুলে কেসের কিনারা করা যাবে না, মিস ভট্টাচার্য৷ আপনি বরং আমার মূর্তি চুরির কেসটার দিকে ফোকাস করুন, যাতে আমি আপনার এই ড্রাগস পাচারকারীদের ধরতে পারি৷ কারণ দুটো কেস একসঙ্গে করতে গিয়ে সময় কম দিতে পারছি৷ এই কেসটা সলভ করতে না পারলে আপনাদের পান্ডে সাহেব খেপে যাবেন৷ লগ্নজিতা বলল, ‘স্যার, আপনি ওই যার বাড়ি থেকে মূর্তিটা চুরি হয়েছে, তার অ্যাড্রেস দিন৷ আমি নিজে গিয়ে দেখছি, স্যার৷’
রুদ্রজ্যোতি একটা পেনড্রাইভ দিয়ে বলল, ‘সব রেকর্ড পেয়ে যাবেন৷’
সুশোভন ফিসফিস করে বলল, ‘এরা মনে হচ্ছে, এই কেসটা থেকে আমাদের বের করে দিতে চাইছে, ম্যাডাম৷’
লগ্নজিতা ইশারায় বলল, ‘চুপ করে যাও৷’ ও পেনড্রাইভটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় রুদ্রজ্যোতি বলল, ‘এই মাদক পাচারকারীদের কোনো খবর পেলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না মিস ভট্টাচার্য৷ মনে রাখবেন এটা আপনার এলাকার কেস৷ আমি শুধু একটু হেল্প করতে এসেছি মাত্র৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘হ্যাঁ স্যার, নিশ্চয়ই৷ আপনি আমায় তুমি করেও বলতে পারেন৷’
বাইরে বেরিয়ে আসার সময়েই দেখল, এম.এল.এ. পান্ডের গাড়িটা পার্ক করাচ্ছে৷
সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, পান্ডে এসেছেন রুদ্রস্যারের সঙ্গে চা খেতে৷’
গাড়িতে উঠেই লগ্নজিতা বলল, ‘চলো, অরবিন্দ স্কুলটা ঘুরে আসি৷’
সুশোভন বলল, ‘কিন্তু ম্যাডাম মূর্তি?
লগ্নজিতা হেসে বলল, ‘যদি একান্ত না পাওয়া যায়, তোমাদের বিশ্বাসদাকে আগরওয়ালের ড্রয়িং রুমে মেকআপ করিয়ে বসিয়ে দেব৷ নড়বেও না, চড়বেও না৷ বিশ্বাসদার কানের কাছে কেউ যদি এসে বলে, থানায় আগুন লেগেছে ,স্যার৷ বিশ্বাসদা ঝিমুনি না কাটিয়েই বলবে, কোন দিকে আগুনটা লাগল? দমকলকে খবর দে৷’
সুশোভন হেসে বলল, ‘ম্যাডাম, তার মানে কেসটা থেকে আমরা সরছি না তা-ই তো? আমরা নিজেদের মতো ইনভেস্টিগেট করছি৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘সুশোভন, তোমার স্ত্রী গর্ব অনুভব করে না? বলে না এমন একজন আইনস্টাইনকে নিয়ে সে ঘর করছে— এটা তার সৌভাগ্য৷
সুশোভন হেসে বলল, ‘কী যে বলেন ম্যাডাম?’
অরবিন্দ স্কুলের প্রধানশিক্ষক আনন্দমোহনবাবু ভীষণ সজ্জন ব্যক্তি৷ ওঁর কথা শুনে লগ্নজিতা বেশ লজ্জিত বোধ করল৷ আনন্দমোহনবাবু সুশোভনদের থানায় অভিযোগ লিখে এসেছিলেন বলেও প্রমাণ দেখালেন৷
সুশোভন সামলাতে না পেরে বলল, ‘ম্যাডাম, আমাদের মেজোবাবুর কাছে জানিয়ে এসেছিল৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘দুঃখিত স্যার৷ আপনি যদি আমায় একবার বলেন ঠিক কী চলছিল এখানে?’
আনন্দমোহনবাবু যন্ত্রণাকাতর স্বরে বললেন, ছেলেরা ড্রাগস অ্যাডিক্টেড হয়ে পড়ছিল৷ স্কুলে ঢোকার সময় যেহেতু ব্যাগ চেক করা হবে বলে ভয় দেখানো হত তাই স্কুল ছুটির পরে ওরা দোকান থেকে ওই চকলেট কিনে নিয়ে যেত৷ আমার কাছে এও খবর ছিল, বাইরে খেলার মাঠে আমার স্টুডেন্টরা এসব বিক্রি করছে৷ এমনকী সিগারেটের মতো করেই বিক্রি করা হচ্ছে৷ আমি অভিভাবকদের লিখিত চিঠি দিয়েছিলাম, ম্যাডাম৷ ‘চিঠির কপিও বের করে দিলেন উনি৷’ ম্যানেজিং কমিটিকেও জানিয়েছিলাম৷ কারো কোনো হেলদোল ছিল না৷ শেষে সৃজিতকে স্কুল থেকে রাস্টিকেট করে দিতে বাধ্য হলাম৷ ওর মা-কে আমি নিজে অনুরোধ করেছিলাম, স্কুলের সামনে এমন নেশার বস্তু বিক্রি করবেন না৷ উনি তো স্বীকারই করেননি এগুলো নেশার জিনিস৷ উনি বলেন, চকোলেট৷ কী মুশকিল বলুন তো! তারপর আমি টেস্ট করব বলে এক স্টুডেন্টকে দিয়ে কিনিয়েও এনেছিলাম৷ তারপর পাঁচ কাজে আর হয়ে ওঠেনি৷ সৃজিত তো এই চকোলেট বেশি খেয়েই অসুস্থ হয়েছিল, ম্যাডাম৷ ওর মা যদিও বলেছে, ইঁদুর-মারা বিষ খেয়ে ফেলেছিল৷ আমার ম্যানেজিং কমিটির লোকজন তো একটা ভোট নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে কিছু বললই না ম্যাডাম৷ শেষে আমি কারো কথা না শুনে সৃজিতকে টি.সি. দিয়েছি বলেও আমার ওপরে হামলা চলছে, ম্যাডাম৷ স্কুলের সামনে বেশ কয়েকজন মিলে প্রতিবাদ মিছিলও বের করেছিল৷ যদিও সৃজিতের মা টি.সি. সার্টিফিকেটা নিতে আসেনি পর্যন্ত৷ দোকানে তালা ঝুলিয়ে কোথায় যেন চলে গেছে৷ প্লিজ হেল্প মি, ম্যাডাম৷ আমার স্কুলটা বাঁচাতে চাই আমি৷ ওই দোকানটা বন্ধ করে দিন৷ মিডডে মিল তো আছে এইট অবধি৷ তারপর ওরা টিফিন আনুক৷ এই ব্যবস্থা আমি করব৷ এমনিতেও টিফিনে গেট খোলা বন্ধ করে দিয়েছি৷ কিন্তু স্কুল ছুটির পরে তো আমার হাতে থাকে না, ম্যাডাম৷ ছোটো ছোটো বাচ্চারা কথায় কথায় ভায়োলেন্ট হয়ে যাচ্ছে৷ এদের অভিভাবকরা তেমন শিক্ষিত নয়৷ তাই হয়তো ভবিষ্যৎটা বুঝতে পারছে না৷ সৃজিতকে টি.সি. দেওয়া নিয়ে বিকাশ ভবনে আমার নামে কমপ্লেইন্ট জমা হয়েছে৷ লোকাল পার্টি নেতাদের প্রেশার তো আছেই৷ তারা এলাকায় গণ্ডগোল চায় না৷ ম্যাডাম, তারা তো শিক্ষাই চায় না৷ কী করা উচিত আমার, বলুন? বাড়ির লোকজন বারণ করছে এসব ঝামেলায় পড়তে৷ সবাই বলছে, এরা খুব ডেঞ্জারাস হয়৷ খুন অবধি করে দেয়৷ তা-ই বলে ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এই ভয়ংকর নেশা ধরিয়ে দেবে! বেশ কয়েকজন অভিভাবক এসে বলেছে, ওই চকোলেট খাবার টাকা না দিলে বাচ্চারা নাকি বাড়ির জিনিস ভাঙচুর অবধি করেছে৷ মাস পাঁচেক থেকে এই উৎপাত আমি জানতে পেরেছি, ম্যাডাম৷ তার আগে হত কি না আমার চোখে পড়েনি৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘একটা চক্র কাজ করছে স্যার৷ এরা সব স্কুলের সামনেই একটা করে ছোটো দোকানকে রাতারাতি বড়োলোক করিয়ে দেবার লোভ ধরিয়ে এই চকোলেট রাখছে৷ তারপর বাচ্চাদের মাদকাসক্ত করে দিতে চাইছে৷ আপনি চিন্তা করবেন না, স্কুলে ঢোকার সময়ে ব্যাগ চেক করুন, টিফিনে গেট বন্ধ রাখুন, বাকিটা আমি দেখছি৷’
লগ্নজিতা গাড়িতে ওঠার আগেই সৃজিতদের দোকান আর তালা-দেওয়া বাড়িটা ঘুরে দেখে নিল৷ ওদের প্রতিবেশীদের সঙ্গেও কথা বলে যা বুঝল, সৃজিতের মা বেশ ঘোরাল মহিলা৷ ওই কিছুই জানি না ভাবটা ওর একটা মুখোশ৷ সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, এই রুদ্রজ্যোতি লোকটা একটু বেশি অহংকারী তা-ই না? থাকে অমন ছাপোষা একটা মুখ করে৷ বাঙালি গৃহস্থ ঘরের বেকার ছেলের মতো ভাবভঙ্গি যেন৷ আসলে কিন্তু বেশ চালাক৷
লগ্নজিতা হেসে বলল, ‘উনি একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ, সুশোভন৷ বুদ্ধি তো থাকবেই৷ তবে আমার কিন্তু লোকটাকে মন্দ লাগেনি৷ কী সুন্দর অপমান না করেও আমাদের সাইডে রেখে দিলেন৷ এদিকে পুলিশের হেল্পেই সর্বত্র বিচরণ করেও বেড়াচ্ছেন৷ আবার আমরা কী তথ্য খুঁজে পাই, সেটাও জানার পথ খুলে রাখলেন৷ বলে রাখলেন, ক্রেডিট আপনারই থাকবে মিস ভট্টাচার্য, আমি শুধু একটু হেল্প করতে এলাম৷’
সুশোভন বলল, ‘আসলে দু-দুটো খুন হয়ে গেল ম্যাডাম, আমরা সত্যিই তো কোনো কিনারা করতে পারলাম না৷ উনি ওঁর মতো করে কেসটা হ্যান্ডেল করুন৷ খুনি ধরা পড়লে লাভ আমাদের৷ না হলে তো মিডিয়ার উৎপাত আছেই, সঙ্গে যোগ হবে লোকাল দাদারা৷’
লগ্নজিতা আচমকা বলল, ‘তপন মহান্তির ঘরে চলো তো সুশোভন৷ চাবির এক কপি আমার কাছে আছে৷ সিল করেই রাখা আছে৷’
সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, কোনো ক্লু পেলেন কি?’