পার্লারে বোটক্স ট্রিটমেন্ট
সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, রাঘব এসে দাঁড়িয়ে আছে৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘ওকে ডাকো তো৷ আর সুশোভন, জলধরবাবুর খবর কী? গিয়েছিলে ওর বাড়ি?’
সুশোভন বলল, ম্যাডাম, পারিজাতস্যার আর ইন্দ্রনীল গিয়েছিল৷ ওর স্ত্রী নাকি কী বলতে এসেছিল৷ তাকে চুপ করিয়ে দিয়েছে জলধরবাবু৷ তারপর একটা প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বলেছে, গলায় ইনফেকশন, হাই প্রেশার তাই ডক্টর রেস্টে থাকতে বলেছেন৷ কথা বলতে পারবেন না৷’
লগ্নজিতা বিরক্তির গলায় বলল, ‘এটা শুনে তোমার ওই বডি বিল্ডাররা কি ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন?’
সুশোভন বলল, আর কী করবে বলুন? বয়েস আর মেডিক্যাল গ্রাউন্ড দেখাচ্ছেন৷ আর প্রত্যক্ষ কোনো প্রমাণও তো জোগাড় করতে পারিনি ওঁর বিরুদ্ধে৷ তাই উনি যদি কোঅপারেট না করেন কী করবে ওরা?’
লগ্নজিতা বলল, ‘তখনই তো বলতে হত ওঁর স্ত্রী-কে, চলুন ম্যাডাম, আপনার সঙ্গে একটু সাংসারিক গল্প করি৷ দেখতে, জলধরের জল শুকিয়ে যেত৷’
সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, আপনি যদি এখন আপনার টেকনিক ওদের মধ্যে আশা করেন, সেটা হবে চরম ভুল৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘বুঝেছি, এখন চলো তো৷ সুশোভন, তোমার কি একটাই ফোন?’
না ম্যাডাম, আরেকটা আছে৷ ওটা পার্সোনাল নম্বর৷ বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলি ওটাতে৷’
‘একটা কাজ করো, তোমার এই ফোনটা সুইচ অফ করে থানায় রেখে চলো৷’
সুশোভন বলল, ‘কেন ম্যাডাম?’
লগ্নজিতা বলল, ‘তোমার ফোনটা ট্যাপ হয়েছে৷ অত অবাক হবার কিছু নেই৷ কে করেছে, সেসব পরে বলব৷ এখন যেটা বললাম, সেটাই করো৷’
রাঘব কাঁচুমাচু মুখ করে ঢুকল৷ বলল, ‘বলুন ম্যাডাম, কী জানতে চান?’
লগ্নজিতা বলল, ‘তুমি আর উৎপল তো ভালো বন্ধু৷ তাহলে সেদিন ওর নামে নালিশ করতে এসেছিলে কেন?’
রাঘব বলল, ‘ম্যাডাম, উৎপল একটা বেইমান৷ সৌমিলীর সঙ্গে আমার প্রেমের কথা পাড়ার সবাই জানত৷ এমনকী দত্তকাকুও জানতেন৷ সৌমিলী ফোনে আমায় না পেলে উৎপলকে কল করে খবর অবধি দিত৷ তারপরেও উৎপল সৌমিলীকে প্রোপোজ করেছিল, ম্যাডাম৷ কই, আমি তো ওর দশটা গার্লফ্রেন্ডকে ভাঙাতে যাইনি৷ আমি আর ও দুজনেই জয়ন্তদার দোকানে যেতাম৷ আচমকাই জয়ন্তদা ওর খুব কাছের হয়ে গেল৷ আগে ওর জেঠু আমায় স্কুলের অনুষ্ঠানের ক্যাটারিংগুলো দিতো৷ সেটাও উৎপল কাঁচি করেছে৷ জেঠু আর আমায় ডাকে না৷ কীসের হিংসা ওর আমার প্রতি, আমি কি জানি না? আমার ব্যাবসার ঘরটা ও-ই কিনবে বলে স্থির করেছিল৷ তারপর আজ নয় কাল, কাল নয়, পরশু বলে দোকানদারকে ভোগাচ্ছিল৷ তখন আমি বিজ্ঞাপন দেখে টাকা অ্যাডভান্স করে আসি৷ এটা থেকেই ওর রাগ আমার ওপরে৷ সামনে কিছু বলবে না৷ কিন্তু আচরণে বুঝিয়ে দেয়৷ সামনে খুব বন্ধুত্ব দেখায়৷ সেই কারণেই আমি ওর নামে বলেছিলাম৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘জয়ন্তর দোকানে তো তোমরা বসতে৷ জয়ন্তর স্ত্রী-কেও নিশ্চয় দেখেছ?’
রাঘব বলল, ‘লাস্ট দেখেছিলাম প্রায় পাঁচ মাস আগে৷ তাও খুব ভোরে আমি ফিরছিলাম একটা বিয়েবাড়ির অর্ডার সেরে আর বউদি দেখলাম, টুক করে গাড়িতে উঠে পড়ল৷ জয়ন্তদা বলেছিল, নার্সিং হোম থেকেই একবার বাড়িটা ঘুরিয়ে নিয়ে গেলাম রে৷ আমার অবশ্য ওঁকে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘পরশু জলধরবাবু কেন ডেকেছিলেন?’
রাঘব বলল, ‘স্যারের শরীর খারাপ৷ একটা প্রেসক্রিপশন দিয়ে বললেন, এই ওষুধ দুটো এনে দিস বাবা৷ তাই ফোন পেয়ে এসেছিলাম৷’
‘লগ্নজিতা ফোটো গ্যালারি ওপেন করে বলল, ‘দেখো তো, জয়ন্তর স্ত্রী?’
রাঘব বলল, ‘হ্যাঁ এটাই৷ তবে চুলে নতুন কালার করেছে৷ আর ঠোঁটের কাছটাও প্লাস্টিক সার্জারি নাকি? কেমন অন্যরকম লাগছে যেন৷’ বিয়ের সময়ের থেকে অনেক বদলে গেছে৷ আমি বহুদিন সামনে থেকে দেখিনি তো৷ তাই বুঝতে পারিনি৷ তবে এটাই দিয়াশাবউদি৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘এই ব্যাবসায় শুনলাম, তুমিও ইনভেস্ট করেছিলে৷
রাঘব বলল, ‘না ম্যাডাম৷ যদি কেউ বলে থাকে, মিথ্যে বলেছে৷ আমার অত টাকা নেই৷ পঞ্চাশ টাকা পিস পানমশলা কিনে লাভ করব কী? তবে একটা কথা বলতে পারি, জয়ন্তদার কথা শুনে বুঝেছিলাম, শুধু লজেন্স বা পানমশলায় সীমাবদ্ধ নেই ব্যাপারটা৷ নাইট ক্লাবে পুরিয়া যেত৷ জয়ন্তদা বলত, একবার শুঁকলে বার বার শুঁকবে পাগলা৷ ম্যাডাম, এর নেশা ভয়ংকর৷ ইলেভেনের ছেলেরা পর্যন্ত জয়ন্তদার দোকানে বিশেষ সিগারেট কিনতে আসত বিকেলে মাঠে খেলার পরে৷ জয়ন্তদা প্রচুর ছোটো ছোটো দোকানে সাপ্লাইও দিত৷ এসব কথা আগে আমার সামনে বলত৷ তারপর ওই উৎপল কানে কী সব ঢালল, আমি গেলেই জয়ন্তদা চুপ করে যেত৷ সত্যি বলতে কী ম্যাডাম, তারপর আমার ব্যাবসাতেও একটু লোকসান যাচ্ছিল৷ তখন জয়ন্তদাকে বললাম, কী সব কিছুর পার্টনার করবে বলছিলে, তো বিষয়টা কী? উৎপল ওখানেই বসে ছিল৷ ও ফট করে বলল, এসব ব্যাবসা তোর মতো ভিখারির জন্য নয়৷ সেদিন হাতাহাতি লেগে গিয়েছিল৷ তারপর তো ওর সঙ্গেই জয়ন্তদার ঝগড়া লেগেছিল৷ যেদিন জয়ন্তদা মারা গেল, তার ঠিক একদিন আগেই৷ কী সব টাকা ইনভেস্ট নিয়ে৷ আমি বলছি ম্যাডাম উৎপলের ওই নায়কের মতো মুখ দেখে ভুলবেন না, ছেলেটা এক নম্বরের বজ্জাত৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘তপন কেমন লোক ছিল?’
রাঘব বলল, ‘ওটা আরেক জিনিস৷ মোবাইল নিয়ে ঘুরত৷ এমন ভাব করত যেন মোবাইল হ্যান্ডেল করতেই পারে না৷ অথচ ইস্কুলে কোথায় কী হচ্ছে, সব ভিডিয়ো করে রাখত৷ একবার স্কুলের অনুষ্ঠানে একটু ফ্রায়েড রাইস বেড়েছিল৷ তো আমার ক্যাটারারের ছেলেগুলো খাবে বলে ব্যাগে ভরেছিল৷ তপনকাকুই তখন স্কুলের গ্রুপে ওই ভিডিয়োটা দিয়ে দিয়েছিল৷ হঠাৎ মনে কী দুঃখ হল যে সুইসাইড করতে হল? রিম্পাবউদির সঙ্গে খুব তো হাসিগল্প চলত৷’
লগ্নজিতা বলল, অনীতার বাড়িতে আজকের পর কে কে আসছে, তার লিস্ট বানিয়ে আমায় পাঠাবে৷ এখন যাও৷’
রাঘব বেরিয়ে যেতেই সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, ফোর্স রেডি৷’
যেটা বললাম, করেছ? ‘হ্যাঁ ম্যাডাম, ফোন ড্রয়ারে চাবি দিয়ে রেখে দিয়েছি অফ করে৷’
‘ফার্স্ট পার্লারে চলো৷ তোমরা বাইরে থাকবে৷ আমার একজন পরিচিত যাবে ফেসিয়াল করাতে৷ নীহারিকাকে রাস্তা থেকেই তুলব৷’
সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, কী করে বুঝলেন, আমার ফোনটা ট্যাপ করা হয়েছে?
‘লগ্নজিতা বলল, ‘আমারটা হয়নি, চেক করেছি৷ তাই তোমারটা হয়েছে, কারণ আমাদের সব কথা পৌঁছে যাচ্ছে অন্য লোকের কাছে৷ অপরাধীকে পালাতে সুযোগ দিয়ে লাভ আছে?’
সুশোভন আর কিছু না বলে চুপ করে রইল৷ ইন্দ্রনীল বলল, ‘ম্যাডাম, আদৌ কি তাকে আমরা ধরতে পারব?
লগ্নজিতা বলল, ‘লাস্ট কতদিন আগে ভাতঘুম ছেড়ে মিশনে গিয়েছিলে এভাবে?’
ইন্দ্রনীল আমতা আমতা করছিল৷ সুশোভন বলল, ‘ম্যাম, আমরা কিন্তু পৌঁছে গেছি৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘নীহারিকা, রেডি তো? তুমি কিন্তু এই মুহূর্তে শুধুই কাস্টমার৷ মনে রেখো, রক্তিমা অবধি পৌঁছাতে হবে৷ তাই ওই মেডিসিন নেবার আগ্রহটা যেন বেশি থাকে৷’
নীহারিকা নামতেই সুশোভন বলল, ‘অ্যাট্রাকটিভ মেডিসিনটার টেস্ট রিপোর্ট এসেছে ম্যাম, ভালোরকম কোকেন আছে এতে৷ হাতে ধরে প্রেশার দিলে ক্যাপসুল ভেঙে যাচ্ছে৷ তারপর উত্তপ্ত করে নাকে শুঁকছে মেয়েগুলো৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘হ্যাঁ সোনাঝুরি, ঋতিকা আর অনুরূপা তো তা-ই বলল৷ এখন তিনজনেই স্বীকার করছে, এগুলো তিন-দিন খেয়েছিল, তারপর থেকে এরা শুঁকেই বেশি আরাম পাচ্ছিল৷ রক্তিমাম্যাডামও নাকি এরকমই নির্দেশ দিয়েছে৷ এর গন্ধটাই নাকি অ্যারোমা থেরাপি৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘কদিন জেলের ভাত খেলে অ্যারোমা থেরাপি শেখানো বেরিয়ে যাবে৷ নীহারিকা ভিতরে গিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত না মেসেজ দিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত চুপ করে ওয়েট করতে হবে বাইরে৷ সোনাঝুরির বয়ান অনুযায়ী শনি আর রবি ম্যাডাম নিজে থাকেন৷ আজ শনিবার৷ তাই থাকার সম্ভাবনা প্রবল৷’
নীহারিকা পুলিশে আছে প্রায় বছর চারেক৷ কিন্তু এখন এরকম মিশনে সেভাবে আসেনি কোনোদিন৷ তাই একটু নার্ভাস লাগছে ইউনিফর্ম ছাড়া এভাবে কাজ করতে৷ নীহারিকার স্কিনটা ভালো, চুলটা লম্বা বলেই ম্যাডাম ওকেই সিলেক্ট করল এই মিশনে৷ প্রতিমাসে একবার করে পার্লারে ও এমনিতেও আসে৷ কিন্তু আজ যেন অন্যরকম আসা৷ স্পা-টা বেশ বড়ো৷ ইন্টিরিয়র ডেকোরেটর দিয়ে দুর্দান্তভাবে সাজানো৷ চার-পাঁচজন মেয়ে কাজ করছে৷ মেয়েগুলো যথেষ্ট সুন্দরী৷ সেজেগুজে রয়েছে৷ ভিতরে চারজন অল্পবয়েসি কাস্টমারও রয়েছে৷’
নীহারিকা ঢুকেই বলল, ‘আমি বোটক্স ট্রিটমেন্ট করাব৷ আর আমার অ্যাট্রকটিভটা শেষ হয়ে গেছে, ওটা একটা লাগবে৷’
রাইন নামের মেয়েটা বলল, ‘আপনি কি এই মেডিসিন এর আগে খেয়েছেন, ম্যাম?’
নীহারিকা নিজের ব্যাগ থেকে ফাঁকা শিশিটা বের করে বলল, ‘অবশ্যই৷ আমি নিচ্ছিলাম ডার্ক সার্কলের জন্য৷ আমার খুব কাজ হয়েছে৷ ‘একটু ম্যামের সঙ্গে দেখা করা যাবে?’
দুটো মেয়ে নিজেদের মধ্যে ইশারা বিনিময় করে বলল, ‘হ্যাঁ যাবে৷ একটু ওয়েট করতে হবে৷ ভিতরে অন্য পেশেন্ট আছে৷’
নীহারিকা প্রায় আধ ঘণ্টা চুপচাপ বসে বসে হেয়ার কাটিং, ফেসিয়াল এগুলোও দেখছিল৷ একটি মেয়ে মিনিট পঁয়ত্রিশ পরে এসে বলল, ‘ভিতরে আসুন৷’ আলো-আঁধারি মতো একটা ঘর৷ নরম আলো, মৃদু ঠান্ডা এ ঘরের রং থেকে পরদা, সিলিং থেকে লাইটের কম্বিনেশন সবকিছু যেন মাপা৷ একটু বেশি বা কম হলেই যেন কোথায় একটা ঘাটতি থেকে যেত৷ এ ঘরের সবকিছুই বড়ো নিখুঁত৷ নীহারিকার দিকে মিষ্টি হেসে রক্তিমা বলল, বসুন৷ ‘কী প্রবলেম বলুন?’
‘সুশোভন, তোমার সুন্দরী রক্তিমা ঘোষ মনে হচ্ছে, আমাদের ডিনার খাইয়ে তবে ছাড়বে৷ আরে বিয়েবাড়িতে দু-হাজার লোক আমন্ত্রিত হলেও তো এতক্ষণ টেবিলের জন্য বসে থাকতে হয় না৷ বোটক্স ট্রিটমেন্টের নামে মেয়েটাকে ইঞ্জেকশনের মধ্যে কোনো হাই ডোজের ড্রাগ পুশ করে দিল না তো? এত দেরি কেন করছে নীহারিকা?’ ইন্দ্রনীল বলল, ‘ম্যাডাম, নীহারিকা ক্যামেরা অন করেছে৷’
লাফিয়ে উঠল লগ্নজিতা৷ ‘ঘরটা কেমন অন্ধকার করে রেখেছে দেখেছ? যাতে ওর মুখটা কাস্টমাররা সেভাবে না দেখতে পায়৷ মহিলা কিন্তু বেশ চালাক৷’
সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, শুধু চালাক নয়, অত্যন্ত সাহসীও৷ পুলিশের নাকের ডগায় বসে খুন করাচ্ছে, স্কুলের বাচ্চাদের ড্রাগস এজেন্ট বানিয়ে ছাড়ছে৷’
লগ্নজিতা বলল ‘চুপ, শুনতে দাও৷ রেকর্ডের অপশন চালু আছে তো?’ ইন্দ্রনীল ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলল৷
রক্তিমা হাত জোড় করে বলল, ‘আমি রক্তিমা দস্তিদার৷ স্কিন আর হেয়ারের ওপরে বিশেষ পড়াশোনা করার পরে আমার মনে হয়েছে বাহ্যিক সৌন্দর্যটাই বড়ো কথা নয়৷ ভিতর থেকে সুন্দর থাকলেই বাইরেটাও ঝকঝক করবে৷’
নীহারিকা বলল, ‘ম্যাডাম, আমার একটা ফোবিয়া আছে৷ চুল আঁচড়াতে গিয়ে দুটো চুল মাটিতে পড়লেই হাত-পা কাঁপতে শুরু করে দেয়৷’
রক্তিমা বলল, ‘এই ভয়ই টেনশনের জন্মদাত্রী৷ এরপরই ডার্ক সার্কল, তারপরেই পিম্পল, হেয়ারফল— এসবের সূত্রপাত হবে৷ তখন আমাদের মেনে নিতে হবে, আমরা এককালে দেখতে সুন্দর ছিলাম৷ ভয়ংকর মানসিক কষ্ট নিয়ে গ্যালারির ছবি দেখে যেতে হবে৷ আমি চাই না, যারা একবার আমার কাছে আসবে, তাদের এরকম কোনো সমস্যা হোক৷’
নীহারিকা বলল, ‘ম্যাডাম, প্লিজ এরকম বলবেন না৷ আমার হাত ঘামছে৷ বুকে কষ্ট হচ্ছে৷ প্লিজ ডু সামথিং৷’
রক্তিমা হেসে বলল, ‘আমি সব থেকে অপছন্দ করি ভিতু মানুষদের৷ ভয়কে জয় করার নাম জীবন৷ আনন্দকে ছিনিয়ে নেওয়ার জীবন৷ রঙিন জিনিসকে সাদা-কালো না-দেখার নামই তো লাইফ৷ অ্যাট্রাকটিভের একটা কন্টেইনার ধরিয়ে দিয়ে রক্তিমা বলল, ‘কুড়ি হাজার৷ উহুঁ, এত দাম কেন বলে চমকে উঠবেন না৷ সৌন্দর্য, মানসিক শান্তি, জনগণের মুগ্ধ দৃষ্টি, নিজের কনফিডেন্স ধরে রাখার জন্য এই দামটুকু নগণ্য৷’
নীহারিকা বলল, ‘ম্যাডাম, আগের বার আমি পনেরোতে কিনেছিলাম তো৷’
রক্তিমা স্মার্টলি বলল, ‘পনেরোই তো, বাকি পাঁচ আমার ফি৷ মানুষকে পজিটিভ এনার্জি প্রোভাইড করার ফি৷’
আচমকাই নিজের ঘরের সি.সি.টি.ভি.-র দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল রক্তিমা৷ কিছু বোঝার আগেই দুজন লেডি কনস্টেবল ওকে পিছন থেকে চেপে ধরে ফেলেছে৷ নীহারিকা ততক্ষণে সার্ভিস রিভলভার বের করে রক্তিমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে৷ ফিসফিস করে বলল, ‘সব পরদা ফাঁস হওয়ার নামও জীবন৷ জীবন একটা জংশন৷ সবাইকে একবার করে নামতেই হয় সেই স্টেশনে৷ শুধু উঠে গেলে হবে? নামতেও তো হবে৷’
রক্তিমা নিজের প্রাথমিক ভয়টাকে সামলে নিয়েই বলল, ‘কিন্তু কেন? আমার অপরাধ? এভাবে সাধারণ মানুষকে আপনারা তুলে নিয়ে যেতে পারেন না৷’ রক্তিমাকে নিয়ে এসে পুলিশ ভ্যানে তোলার পরেই ওই পার্লারটা সার্চ করা হল৷ রক্তিমার নিজস্ব কেবিনের পিছনের ওয়াশরুম লেখা ঘরটা আসলে ওয়াশরুম নয়, গোডাউন৷ ছোটো ছোটো পাউচের ওপরে ওয়েট আর প্রাইস লেখা ব্রাউন শুগার৷ এরকম পাউচ ভরতি বড়ো বড়ো বক্স অন্তত গোটা পাঁচেক ঠাসাই করে রাখা৷ লগ্নজিতা বলল, ‘পার্লার সিল করে দাও৷’