সেলিব্রেশন মুড
এম.এল.এ. অফিস থেকে বেরিয়েই সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম চলুন, আজ একটু সেলিব্রেট করি৷ এবারে তো আপনি আবার নিজের অফিসেই চলে যাবেন৷ আপনার সঙ্গে কেস সলভ করার আনন্দই আলাদা৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘কীসের কেস সলভ করলে সুশোভন?’
সুশোভন হেসে বলল, ‘কেন ম্যাডাম, এই যে একটা চক্রকে আমরা ধরলাম সমস্ত এভিডেন্সসহ, এটা সেলিব্রেট করব না? মিস্টার সান্যাল আর পারিজাতস্যারও আসবেন কাল সন্ধেতে৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘আর রুদ্রজ্যোতিস্যার? ওঁকে ইনভাইট করোনি? ভদ্রলোক আমাকে একটু আগেই কনগ্র্যাচুলেশন জানালেন তো৷ এনিওয়ে আমার কয়েকটা মিটিং আছে৷ সেটা সেরে তোমাদের সঙ্গে কালকে মিট করছি৷’
সুশোভন বলল, ‘রুদ্রস্যারকে তো করেছিই, আমি ডক্টর কৌশিককেও ইনভাইট করে নিয়েছি, ম্যাডাম৷
লগ্নজিতা বলল, ‘আমারও একজন গেস্ট থাকবেন৷ দেখি, তাঁকে ইনভাইট করলে তিনি আসেন কি না৷’
সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম এত হেঁয়ালি কেন করছেন? আপনার গেস্ট কে?’
লগ্নজিতা বলল, ‘আছে আছে৷ ইন ফ্যাক্ট, একজন নয়, দুজন আসবে৷ আর শোনো, আমি বিকেলে রিম্পাকে জেরা করব৷ সুমনও থাকবে তখন৷’
সুশোভন বলল, ‘হ্যাঁ, স্বীকারোক্তি নিতে হবে অবশ্য৷’
লগ্নজিতা বেরিয়েই ইউসুফকে বলল, ‘পাহারা ঠিক আছে তো ওই ফ্ল্যাটের সামনে? খেয়াল রাখবি, কোথাও যেন না পালায়৷’
ইউসুফ বলল, ‘ম্যাডাম, আজ রাতে কিন্তু পার্টি চাই৷’
লগ্নজিতা হেসে বলল, বেশ, তোদের পার্টি করার টাকা আমি দেব৷ আর যা যা ডকুমেন্ট জোগাড় করতে বলেছিলাম, পেয়েছিস?’
হ্যাঁ ম্যাডাম, ওটা মাসুদের ডেরা ছিল৷ মাসুদ আর সত্য একসঙ্গেই কাজ করত তখন৷ তারপর কলকাতার পুরো টিমের দায়িত্ব পেয়েছিল সত্য৷ তখনই মাসুদ নিজের টিম আলাদা করে নিয়েছিল৷ মাসুদ বনগাঁ বর্ডারে ধরা পড়েছিল৷ খবরটা পুলিশে দিয়েছিল সত্য৷ ঘটনাটা প্রায় বছর চারেক আগের, ম্যাডাম৷’
আর স্কুল, কলেজের সব ডকুমেন্ট বের করতে পেরেছিস?’
ইয়েস ম্যাডাম৷ আমি আসছি আপনাকে দিতে৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘উহুঁ আমি যে অ্যাড্রেস বলছি, ওখানে চলে আয়৷ আমি নিয়ে নিচ্ছি সব৷’
সুবর্ণা গোস্বামী কফির কাপটা নামিয়ে বললেন, ‘আপনি যখন সব জেনেই গেছেন তখন আর লুকিয়ে লাভ কী? আমি চেয়েছিলাম, ঋতিকা না জানুক৷’
লগ্নজিতা বলল, আমি পুরো বিষয়টা জানতে চাই প্রথম থেকে৷’
সুবর্ণা বলল, ‘ম্যাডাম, আমি দোষী৷ কিন্তু কেন দোষ করেছি, সেটুকু অন্তত আপনি বুঝবেন, আশা করি৷
লগ্নজিতা বলল, ‘আমি সবটাই জেনেছি৷ কিন্তু তথ্য নির্ভর করে লাইন টেনেছি৷ লাইনটা দু-এক জায়গায় ফাঁক রয়ে যাচ্ছে৷ আপনি ওইটুকু নিখুঁত করে টেনে দিন প্লিজ৷’
সুবর্ণা হেসে বলল, ‘নিখুঁত? অপরাধীর তো সবই খুঁত৷ আমি যা করেছি, সবটুকু ঋতির কথা ভেবে করেছি৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘কিন্তু ম্যাডাম, ঋতি এখন বড়ো হয়েছে৷ আপনি জানেন, ওই অ্যাট্রাকটিভ ক্যাপসুলে কি ছিল? তার টেস্ট রিপোর্ট আমি পাঠিয়েছি আপনাকে৷ নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, যার থেকে আপনি ঋতিকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন, ঋতিকা সেটার কবলেই পড়েছিল৷’
সুবর্ণা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘রেগুলার বিকেল পাঁচটা বাজলেই ঋতি কেমন অস্থির হয়ে যাচ্ছে ইদানীং৷ নিজেই ক্যারাটে ক্লাসে যাচ্ছে ওই সময়টা৷ বলেছে, মা, চিন্তা কোরো না, আমি আর কখনো ছুঁয়ে দেখব না৷ বিশ্বাস করুন অফিসার, আমার ওই একটা ভুলের মাশুল যে এভাবে দিতে হবে, ভাবিনি৷’
লগ্নজিতা বলল, উহুঁ ম্যাডাম, ওটা ভুল নয়৷ অপরাধ৷ আপনার মতো স্বাধীনচেতা, প্রতিবাদী মহিলার জেনেবুঝে এই কাজটাকে আমি অপরাধ বলব৷’
সুবর্ণা মাথা নিচু করে বলতে শুরু করল৷ লগ্নজিতা রেকর্ডার অন করল সুবর্ণার পারমিশন নিয়েই৷ কথা শেষ করে নিজের চুলটা খামচে ধরে বসে রইল সুবর্ণা৷ লগ্নজিতা বলল, ‘আশা করি, আমার ইনভিটেশন আপনি রক্ষা করবেন৷’
সুবর্ণা বলল, ‘প্লিজ অফিসার, আমায় রেহাই দিন৷’
লগ্নজিতা হেসে বলল, সত্যের থেকে মুখ লুকিয়ে পালাতে পারবেন আদৌ? ভাবুন ভাবুন, সন্ধে হতে অনেক দেরি৷’