রাঘব না রাঘব বোয়াল?
থানায় ঢুকেই দেখল একটা বছর পঁচিশের ছেলে একটু নার্ভাস হয়েই বসে আছে সুশোভনের রুমের বাইরে৷ লগ্নজিতা ঢুকতেই ছেলেটা কিছু একটা বলবে বলে এগিয়ে এসেছিল, লগ্নজিতা ইশারায় ওকে নিজের রুমে ডেকে নিল৷ এ থানায় এলে এই রুমেই ও সাধারণত বসে৷ সুশোভন ছাড়া পেয়েই বলল, ‘ম্যাডাম, আমি একটু বাইরে থেকে চা খেয়ে আসছি৷’
নিজের চেয়ারে বসে ছেলেটাকে সামনে বসার নির্দেশ দিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ বলুন, আমার জন্য ওয়েট করছিলেন কেন? এ থানায় আরও অনেকজন অফিসার আছেন, তাঁদের বলেননি কেন?’
ছেলেটা হাত জোড় করে বলল, ‘ম্যাডাম, আমি রাঘব রায়৷ আমার একটা ছোটো রেস্টুরেন্ট আছে৷ আমি ও.সি. সাহেবের কাছে শুনলাম, আপনি এ কেসের দায়িত্বে আছেন, তাই আমি আপনাকে একটা খবর দিতে এসেছি৷ আপনি আজ বসু ইনস্টিটিউশনে ঢুকেছিলেন তো? আমি ওই স্কুলের এক্স-স্টুডেন্ট৷ এখনও ওই স্কুলে কোনো অনুষ্ঠান হলে আমার ক্যাটারিং যায়, ম্যাডাম৷ সেইজন্যই আজ স্কুলে গিয়েছিলাম৷ তখন শুনলাম ড্রাগসের বিষয়টা৷ ওই বিষয়েই আমি কয়েকটা ইনফর্মেশন দিতে চাই, ম্যাডাম৷
লগ্নজিতা নড়েচড়ে বসল৷ সাধারণত এসব ব্যাপারে মানুষ জানলেও কোনোভাবেই মুখ খুলতে চায় না৷ আর এ ছেলেটা নিজে থানায় ছুটে এসেছে খবর দিতে? আজকাল সবাইকেই বড্ড সন্দেহ হয় লগ্নজিতার৷ এই খবর দেওয়ার পিছনে কোনো দুরভিসন্ধি নেই তো? হয়তো স্কুলের সঙ্গে ওর ব্যাবসার স্বার্থ জড়িয়ে আছে, তাই প্রধানশিক্ষক জলধরবাবুই পরিকল্পনা করে একে পাঠিয়েছে৷ লগ্নজিতা রাঘবের কথা শোনার আগেই বলল, ‘মিস্টার রাঘব, জলধরবাবু কেমন মানুষ?
রাঘব ভ্রূ কুঁচকে বলল, ‘মহা কিপটে, ম্যাম৷ কিছুতেই আমার বিল পাস করতে চান না৷ এমনিতে স্কুলের সুনাম নিয়ে খুব ভাবেন৷ সরস্বতীপুজো থেকে যেকোনো ফাংশনে বলেন, স্কুলের যেন বদনাম না হয়৷ অ্যারেঞ্জমেন্ট ভালো করার জন্য প্রেশার দেন৷ আর অনুষ্ঠান মিটে গেলে পেমেন্ট করতে অন্তত তিন মাস ডিলে করেন৷ বহুত হাত ভারী ম্যাডাম৷ আর মানুষটা একটু খুঁতখুতে টাইপ৷ স্টুডেন্টদের পড়াশোনার কথা বললেও, নিজের ভাইপোকে তো মানুষ করেতে পারেননি৷ ব্যাক পাওয়ার স্টুডেন্ট৷ গাড়ি আর লরি কিনে দিয়েছে উৎপলকে৷ সে এখন হাই প্রোফাইল মেয়ে পটিয়ে বেড়াচ্ছে৷ তাকেও তো মিথ্যে বলছে উৎপল৷ সবই জেঠু জানে৷ এই তো ওর গার্লফ্রেন্ডের ফোন নম্বর আর ছবিও আছে আমার কাছে৷ মহা মিথ্যাবাদী এরা৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘বুঝলাম৷ হ্যাঁ বলুন রাঘব আপনি ঠিক কী বলতে এসেছিলেন?
রাঘব একটু ইতস্তত করে বলল, ম্যাডাম ওই যে পিনাক মণ্ডল বলে বাচ্চাটি ধরা পড়েছে ওই বাচ্চাটিকে আমি প্রায়ই জয়ন্তদার দোকানে দেখতাম৷ সঙ্গে ওর মাও থাকতো৷ বাচ্চাটা বেরিয়ে গেলেও ওর মায়ের সঙ্গে জয়ন্তদা গল্প করতো৷ একদিন তাড়াতাড়ি একটা রাইটিং প্যাড আনতে গিয়েছিলাম৷ তখনই দেখেছিলাম খুব গল্প করছে জয়ন্তদা ওনার সঙ্গে৷ বিষয়টা একদিন না ম্যাডাম৷প্রায়ই দেখতাম স্কুল টাইমে ওদিক দিয়ে পাশ করার সময়, ওই পিনাকের মায়ের সঙ্গে জয়ন্তদা গল্প করছে৷ সুমনদা গাড়ি চালায় বলেই এ চত্বরের সবাই ওদের চেনে৷ রিম্পাবউদিও আশা কর্মী তাই সকলেই চেনে৷ আমার একটু চোখেই লেগেছিল ওদের গল্প করার ভঙ্গিমাটা৷
লগ্নজিতা বলল, ‘আর কিছু? জয়ন্ত ভ্যারাইটিজে এই বিশেষ চকোলেট কি আদৌ বিক্রি হত?
রাঘব বলল, ম্যাডাম, জয়ন্তদা আমার কাছেও ধার করেছিল বেশ কয়েক হাজার টাকা৷ ওর স্ত্রী-র চিকিৎসার জন্য৷ চেয়ে চেয়েও সে ধার শোধ করতে পারছিল না৷ হঠাৎই দু-মাস আগে দেখি প্রায় লাখখানেক টাকার বাইক নিয়ে আমার রেস্টুরেন্টের সামনে হাজির৷ আমার টাকাটা শোধ দিয়ে বলল, বিজনেস পার্টনার হবি?
লগ্নজিতা উত্তেজিত হয়ে বলল, কীসের বিজনেস?
রাঘব বলল, ‘সেটা তো তখন বুঝিনি, ম্যাডাম৷ এখন বুঝতে পারছি৷ বলেছিল, নতুন একটা বিজনেস শুরু করেছি, বুঝলি৷ আর ধারদেনা থাকবে না বাজারে৷ কিছুই না, এই যে বিয়েবাড়ি ক্যাটারিং-এ যাস, এই যে রেস্টুরেন্ট চালাস, একটা স্পেশাল পানমশলা দিবি খদ্দেরকে৷ দেখবি, খদ্দেরের লাইন লেগে গেছে৷ ওই মশলা খাবার জন্য৷ কথা একটু এগিয়েওছিল, ম্যাডাম৷ কিন্তু দামটা বড্ড বেশি পড়ছিল বলে আমি শেষ অবধি রাজি হইনি৷ তখনই জয়ন্তদা বলেছিল, তোর মাথায় কি গোবর আছে? এর থেকে সস্তায় এ মশলা হয় না৷ যেটা বললাম, শুনে দেখ, দু-দিনে বাড়ি-গাড়ি কিনবি৷ আমি ছোটো ব্যাবসাদার, ম্যাডাম৷ কোথা থেকে কী হয়ে যাবে ভেবেই আর কথা এগোয়নি৷ তারপর জয়ন্তদাও আর রিকোয়েস্ট করেনি৷ কিন্তু বউয়ের চিকিৎসা চালিয়েও যে তিন মাসে দোতলা বাড়ি হাঁকাতে পারে, সে যে লটারি পেয়েছিল, সেটা সবাই বুঝতে পারত৷ কিন্তু ম্যাডাম, ওই চকোলেট জয়ন্তদাই বিক্রি করত৷ এতদিনে পরিষ্কার হল ড্রাগসের ব্যাবসা করতে শুরু করেছিল জয়ন্তদা৷ তাও আবার বাচ্চাদের এজেন্ট বানিয়ে৷
লগ্নজিতা বলল, ‘জয়ন্তর দোকান রেইড করলে কি এই বিশেষ চকোলেট পাওয়া যাবে, রাঘব? কী মনে হয় আপনার?’
রাঘব একটু ভেবে বলল, জয়ন্তদার দোকানে রেগুলার কেক, বিস্কিটের গাড়ি দাঁড়াতে দেখেছি৷ রেগুলার আসে না দোকানে স্টক করে, সেটা জানি না, ম্যাডাম৷ রাঘব নিজের ফোন নম্বর দিয়ে ওর কথা গোপন রাখার অনুরোধ করে বেরিয়ে গেল৷
লগ্নজিতা চোখ বন্ধ করে ভাবার চেষ্টা করছিল, কেন ছেলেটা থানায় এসে উপযাচক হয়ে এসব খবর দিতে এসেছিল৷ তদন্তের মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া নাকি জয়ন্তর সঙ্গে কোন শত্রুতা? কিছু তো গল্প আছেই৷ পুলিশের উপকার করতে চাইলে পানমশলার ব্যাবসার অফার করার সময়েই থানায় আসত৷ পিনাক ধরা পড়ার পড়ে নয়৷ লগ্নজিতা নোটবুক খুলে আজকের ঘটনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নোট করছিল৷ এই নোটবুকটাকে কৌশিক বলে, চিত্রগুপ্তর স্মল কপি৷ কম জায়গায় বেশি জিনিস ঢোকানো আছে৷ ঠিক নাকি লগ্নজিতার মাথার মতো৷ ছোটো মাথায় বিশ্বের প্রেশার স্টোর করতে পারে লগ্নজিতা৷ হসপিটালের বাচ্চাটার খবর কী? জ্ঞান কি এখনও ফেরেনি নাকি? কৌশিক জানাল না তো এখনও৷ ভাবনার মধ্যেই ছেদ পড়ল৷ ইউসুফ কল করে বলল, ‘ম্যাডাম, এই জয়ন্ত ভ্যারাইটিজের সামনে চলে আসুন৷ মালটাকে মনে হচ্ছে, কেউ মেরে দিল৷’ লগ্নজিতা আর সুশোভন যখন পৌঁছাল তখন দোকানের সামনে বেশ ভিড় জমে গেছে৷ প্রত্যক্ষদর্শীর কথামতো, জয়ন্ত বাইকটা স্ট্যান্ড করাচ্ছিল দোকানের সামনে৷ তখনই আচমকা একটা লরি নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে নেমে আসে৷ এবং জয়ন্তকে ধাক্কা দেয়৷ লরিটার স্পিড বেশি ছিল৷ সবাই হই হই করতেই ফুল স্পিডে লরিটা বেরিয়ে যায়৷ বেরিয়ে যাবার সময়েই সম্ভবত লোকেরা দেখতে পেয়েছে৷ এলাকার লোকজন হতবাক হয়ে গেছে৷ পুলিশে ফোন করেওছিল দু-একজন৷ হসপিটালে নিয়ে যাবার আগেই পাড়ার এক ডাক্তার দেখে বলেন, মারা গেছে৷ লগ্নজিতা বলল, ‘ওঁর স্ত্রী, সন্তান কেউ নেই? পাশে দাঁড়িয়ে-থাকা এক ভদ্রলোক বলল, ‘সন্তান নেই৷ স্ত্রী বোধহয় কোনো একটা হসপিটালে ভরতি আছে দীর্ঘদিন ধরে৷ আমাদের তো তা-ই বলেছিল৷ আগে তো ওর স্ত্রী-কে দেখতাম পাড়ার কোনো অনুষ্ঠানে৷ বছরখানেক কি তার বেশিই হবে তাকে আর দেখি না৷
সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, থানায় কল করে দিলাম৷ বডিটা তো পোস্টমর্টেমে নিয়ে যেতে হবে৷’
লগ্নজিতা বলল, ওই লরির নম্বরটা কেউ নোট করেছেন? ঘটনাটা কতক্ষণ আগে ঘটল?
একজন ভদ্রলোক বলল, ‘ম্যাডাম, স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে এদিকটা বেশ নিঝুম থাকে৷ স্কুলের পিছনে আমার বাড়ি৷ আমি বাড়ি ফিরছিলাম৷ তখনই দেখলাম, জয়ন্ত বাইক থেকে জাস্ট নামল, আর চোখের পলক ফেলার আগেই লরিটা এসে ওকে ধাক্কা দিল৷ কিছু বোঝার আগেই ফুল স্পিডে চলে গেল৷ ফাঁকা লরি ছিল, ম্যাডাম৷ না হলে এত স্পিড থাকত না৷ আমি চিৎকার করতেই লোকজন জড়ো হয়েছে৷ ওই উলটোদিকের চায়ের দোকানটাও তখন বন্ধ করবার তোড়জোড় করছিল৷ জয়ন্তর দোকানটার সামনের আলোটা জ্বলে অন্যদিন৷ আজ বন্ধ রয়েছে৷ স্কুলের গেটের আলো জ্বললেও লম্বা লম্বা দেবদারু গাছগুলোর জন্য অন্ধকার হয়ে থাকে একটু৷ স্কুলের সিকিউরিটি গার্ড তপনকে একবার জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন, যদি কিছু দেখে থাকে৷
লগ্নজিতা জয়ন্তর বডির চারপাশে ঘুরে নিল একবার৷ লরির চাকার দাগ মাটিতে স্পষ্ট৷ বাইকটা স্ট্যান্ড করানো অবস্থাতে আছে৷ সিটের ওপরে একটা ব্যাগ৷ জয়ন্তর পকেট সার্চ করে দুটো মোবাইল পাওয়া গেল৷ সেগুলো নিজের হেপাজতে রেখে স্কুলের গেটে বারকয়েক ধাক্কা দিল৷ প্রায় দশ মিনিট চিৎকারের পরে একটা বেঁটেমতো মধ্যবয়স্ক লোক ঘুম-চোখে বেরিয়ে এসে বলল, ‘কী হয়েছে? এভাবে চেঁচামেচি কীসের?
সুশোভন বলল, ‘তপনবাবু, আপনি কি স্কুল বন্ধ হলেই ঘুমিয়ে পড়েন? নাকি রাতে জেগে পাহারা দেন?’
তপন হঠাৎ পুলিশের ড্রেস-পরা লোকজন দেখে একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলল, ‘আমি তো রাতেই পাহারা দিই, স্যার৷’ তবে স্কুলে আর কী সোনাদানা থাকে বলুন যে ঠায় জেগে বসে থাকতে হবে৷ তাই একটু চোখ লেগে গিয়েছিল৷
সুশোভন আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘এই জয়ন্ত ভ্যারাইটিজের জয়ন্ত প্রামাণিককে আপনি চেনেন? লোকটাকে লরি এসে ধাক্কা দিয়ে মেরে দিয়ে গেছে, জানেন কিছু?
তপনের ঘুম এতক্ষণে ভঙ্গ হল সেটা ওর চমকানো দেখে বোঝা গেল৷ চমকে উঠে বলল, ‘মেরে দিয়ে যাবে কেন? জয়ন্ত তো সন্ধে ছয়টা নাগাদ দোকান খুলল, দুটো বড়ো ব্যাগ নিয়ে দোকান বন্ধ করে বেরিয়ে গেল৷ আমি বললাম, করোনা তো কবেই চলে গেছে, এখনও মাস্ক কেন পরেছ জয়ন্ত? আমায় বলল, সাবধানের মার নেই৷ তারপর আবার কখন কোথায় মেরে দিয়ে গেল?’
সুশোভন তপনকে জয়ন্তর বডির সামনে নিয়ে আসতেই প্রায় চিৎকার করে তপন বলল, সর্বনাশ! ওরা তবে মেরেই দিল ছেলেটাকে?
লগ্নজিতা বলল, ‘চলুন থানায় যেতে হবে আপনাকে৷ কথা জানার আছে৷’
তপন বলল, কিন্তু ম্যাডাম, ‘স্কুল ছেড়ে গেলে হেডস্যার যে বকবে৷’
লগ্নজিতা হেসে বলল, ‘চলুন চলুন, থানায় আপনার হেডস্যারের সঙ্গেই চা খাবেন৷ জয়ন্তর বডি নিয়ে চলে গেল পোস্টমর্টেম করার জন্য৷ জয়ন্তর স্ত্রী-র ফোন নম্বর পেল না৷ জয়ন্তর সব সময়ের কাজের মেয়েটাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলেই থানায় ডেকে পাঠাল লগ্নজিতা৷ পাড়ারই একটা ছেলে সাইকেল নিয়ে মেয়েটার বাড়িতে খবর দিতে গেল৷ সুশোভন এগিয়ে এসে বলল, ‘ম্যাডাম, এই ড্রাগসের হদিশ পাওয়ার সুতোটাকেই তো কেটে দিল৷ এখন কী হবে? না মানে খুঁজে বের করবেন কী করে কারা বাচ্চাদের এজেন্ট বানাতে চাইছিল৷
লগ্নজিতা ভ্রূ কুঁচকে বলল, ‘বাচ্চাদের ইউজ করা সব থেকে সেফটি৷ কেউ সন্দেহ করবে না৷’
ম্যাডাম, দিনকয়েক আগেই (STF ( স্পেশাল টাস্ক ফোর্স) প্রায় ছয় কোটি টাকার ব্রাউন শুগার ধরেছে৷ তাও কোথায় জানেন? আমাদের এম.জি. রোডের পূরবী সিনেমার কাছে৷ দুটো ছেলে ছিল৷ অসমের ছেলে, ম্যাডাম৷ তাহলেই ভাবুন, এখন খোদ কলকাতায় সব থেকে পশ এলাকায় দিনের আলোয় ড্রাগস পাচার হচ্ছে৷ দিনে দিনে কী হল ম্যাডাম!
সুশোভন আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, লগ্নজিতা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, যে ছেলে দুটো করছিল, ওদের নাম, ঠিকুজিকুষ্ঠি, গার্লফ্রেন্ডের নাম চাইলে আমার ডায়েরিতে লেখা আছে, পড়ে নিয়ো৷ ইন ফ্যাক্ট, এস.টি.এফ.-এর একজনের সঙ্গে আমার আলাপও আছে৷ কীভাবে ওরা খবরটা পেয়েছিল, সেসবের ডিটেলস দিয়ে দেবে তোমায়৷ আপাতত জয়ন্ত প্রামাণিকের কাজের মেয়ে—কী যেন নাম বলল?’
সুশোভন বলল, ম্যাডাম, অনীতা৷’
হ্যাঁ, ওই অনীতাকে তুলে নিয়ে থানায় এসো৷ আমি ততক্ষণ তপন মহান্তির ঘুম ছাড়াই৷
লগ্নজিতা তপনকে নিয়ে থানায় চলে এল৷ তপনের চোখে তখনও বিস্ময়ের রেশ৷
রাঘব আবার ফোন করছে দেখে রিসিভ করল লগ্নজিতা৷ বেশ উত্তেজিত গলায় রাঘব বলল, ‘ম্যাডাম, জয়ন্তদা খুন হয়েছে৷ আমি জানি ওই লরিটা কার৷’
খুব ঠান্ডা গলায় লগ্নজিতা বলল, ‘কার?’
রাঘব তখনও বেশ উত্তেজিত৷ বলল, ‘কার আবার, হেডস্যারের ভাইপো উৎপলের৷ আপনাকে সেদিন বলছিলাম না, স্যার অনেক চেষ্টা করেছিলেন ভাইপোকে লেখাপড়া শেখাতে৷ কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে বার তিনেক ব্যাক পেয়ে পড়াশোনায় ইতি টেনেছে৷ ট্রান্সপোর্টের ব্যাবসায় তার খুব আগ্রহ ছিল বলে দুটো প্রাইভেট কারকে ভাড়া খাটাত এতদিন৷ এই তো মাস পাঁচেক আগে উৎপল একটা লরি কিনেছে৷ বিশ্বকর্মাপুজো করল ধুমধাম করে৷ বাড়িতে লোক খাওয়াল ম্যাডাম৷ আমায় অর্ডারটা দেয়নি৷ বন্ধুস্থানীয় হলেও নিমন্ত্রণ অবধি করেনি৷ চায়ের দোকানে বসে একদিন বলছিল, এবারে যার যার ওপরে শত্রুতা আছে, ছয় চাকার নীচে ফেলে দেব৷ ম্যাডাম এটা ওই উৎপলের কাজ৷ দেখুন, প্রায়ই তো জয়ন্তদার সঙ্গে আড্ডা দিত, হয়তো সে-ও ওই ব্যাবসায় হাত মিলিয়েছিল৷ এখন মনোমালিন্য হওয়ায় দিল ঠুকে৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘ঠিক আছে রাঘব, আর কোনো খবর পেলে দিয়ো৷ আর উৎপলের গার্লফ্রেন্ডের অ্যাড্রেস আর ছবি, ফোন নম্বর, এগুলো পাঠিয়ে দাও আমায়৷
রাঘব বলল, ‘ম্যাডাম, উৎপলকে তুলবেন না? ওদের বাড়ির অ্যাড্রেস দেব?’
লগ্নজিতার মাথায় ঘুরছে, রাঘবের স্বার্থ কী? কেন এত আগ্রহ? কেন নিজেকে জড়াতে চাইছে খুন, ড্রাগসের কেসে? রাঘবকে পরে কালটিভেট করতে হবে৷ আপাতত মটর পনির পে কনসেনট্রেট করতে হবে৷ থ্রি ইডিয়টস মুভির ডায়ালগটা মনে পড়ে যেতেই তপন মহান্তির দিকে তাকাল লগ্নজিতা৷ লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে চানা পনিরের মধ্যে থেকে পনির খুঁজতে ব্যস্ত৷ লগ্নজিতা বলল, ‘বলুন তপনবাবু, আপনি ওই বসু ইনস্টিটিউশনে কতদিন ধরে আছেন?’
তপন বেশ ঘাবড়ে গেছে৷ বেচারাকে কাঁচা ঘুম থেকে তুলে এনে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিয়েছে যেন লগ্নজিতা৷ ভয়ে ভয়ে বলল, ‘ম্যাডাম, আমি কিন্তু কিছু করিনি৷ আমি বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত৷ নিরামিষ খাই, জপতপ করি৷ বিয়ে করিনি৷ দোষের মধ্যে আমার একটু গানবাজনার শখ আছে৷ ভোরে উঠে আমি একটু কীর্তনের চর্চা করি৷ তা-ই এসব ব্যাপারে যা বলব সত্যি বলব৷ তপন মহান্তি কাউকে ভয় করে না৷ সেটা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি থেকে জলধরস্যারও জানেন৷ আমি আছি এই স্কুলে তা প্রায় বছর ছয়েক হল৷ আমি এর আগে একটা কারখানার সিকিউরিটি গার্ড ছিলাম৷ কারখানা উঠে যেতে একটা কমপ্লেক্সে ছিলাম কিছুদিন৷ তারপর এই স্কুলে৷ দেশে জমি-বাড়ি সব আছে৷ কিন্তু বাবা চোখ বোজার পরেই দাদারা আমায় ফাঁকি দিল৷ আমারও রক্তের সম্পর্কের ওপরে মন উঠে গেল৷ তাই আমি সেসব ছেড়ে চলে এলাম৷
লগ্নজিতা বুঝল, ভণিতা এ জীবনে শেষ হবে না৷ তাই কথার মাঝেই জিজ্ঞাসা করল, ‘জয়ন্তর দোকানটা কতদিনের? জানেন কিছু?’
তপন বলল, ‘দোকান একটা ছিল ওর বাপের৷ চায়ের দোকান৷ স্কুলের টিচাররা ছাড়া খদ্দের কেউ হত না৷ এটা আমি যখন প্রথম এসেছিলাম স্কুলে তখনকার কথা বলছি৷ জয়ন্ত তখন সাইকেল নিয়ে কেক, বিস্কুট, ‘পাউরুটি— এসব বেকারি থেকে নিয়ে লোকের দোকানে দোকানে সাপ্লাই করত৷ তিন দিন অন্তর বাপটার সঙ্গে ঝগড়া লাগত৷ ছেলে বলত, এসব চায়ের দোকান তুলে স্টেশনারি দোকান করবে৷ স্কুলের ছেলেরা কিনবে৷ বাপ ওই এক গোঁ নিয়ে বসে থাকত৷ বাপের বয়েস হয়েছিল৷ রোগও ছিল হার্টের৷ আমি আসার বছরখানেক পরেই হার্ট অ্যাটাকে জয়ন্তর বাপটা মরে গেল৷ রাস্তার ধারের দোকানটা ওর হল৷ তখন থেকেই দোকানে স্কুলের ছেলেদের পছন্দের জিনিসপত্র আনতে শুরু করল৷ দোকানটা ভালোই চলত৷ এমনিতে জয়ন্ত ছেলে ভালোই ছিল৷ বিয়ে করল৷ বিয়েতে আমায় নিমন্ত্রণও করেছিল৷ বিয়ের বছরখানেক অবধি বউটাকে দোকানে আসতে দেখা যেত মাঝে মাঝে৷ বাড়ি তো বেশি দূরে নয়৷ দোকানের পিছনের পাড়াটাতেই বাড়ি৷ তারপর একদিন বলল, কাকা, তোমার বউমার ক্যান্সার ধরা পড়েছে৷ ভরতি করতে হল৷ টাকার টানাটানি চলছিল বলত মাঝে মাঝেই৷ গত পাঁচ মাসে দেখলাম হঠাৎই চরম পরিবর্তন৷ বাড়িটা একতলা ছোটো বাড়ি ছিল৷ দোতলা করে ফেলল৷ দোকানটাও বাড়াল৷ বাইক কিনে ফেলল৷ জিজ্ঞাসা করলাম, লটারি জিতলে নাকি? বলল, সবই তোমাদের আশীর্বাদে, কাকা৷ বউমার খবর নিলে এড়িয়ে যেত৷ বলত বাঁচবে না হয়তো৷ লোকের কাছে প্রচুর ধার হয়েছিল৷ সেসব ধারও নাকি শোধ করে ফেলেছে, শুনছি৷ ইদানীং আচার-ব্যবহারে পরিবর্তন হয়েছিল৷
লগ্নজিতা বলল, ‘বাচ্চারা টিফিন টাইমে ওর দোকানে ভিড় করত নিশ্চয়ই৷’
তপন একটু ভেবে বলল, বাচ্চারা সবাই বাড়ি থেকে টিফিন আনে না৷ আবার সবাই মিডডে মিলও খায় না৷ আনলেও দোকানের লজেন্স, চিপসের প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ তো ছিলই৷ কিন্তু ম্যাডাম, আমি একটা জিনিস ইদানীং লক্ষ করছি, সব বাচ্চার হাতে একই লজেন্সের প্যাকেট৷ ওই বাদামি-খয়েরিমতো দেখতে প্যাকেটটা৷ স্কুলের সামনেটা যখন ঝাঁট দেয় কিরণ তখনও চোখে পড়ার মতো ওই লজেন্সের খোলা পড়ে ছিল৷ আমি ভাবলাম, বাচ্চাদের হুজুগ তো— সবাই যা কেনে, একই কিনতে মন হয় হয়তো৷ কিন্তু একটা ক্লাস নাইনের ছেলেকে বলতে শুনলাম, জয়ন্তকাকা একটা লজেন্সের দাম নিচ্ছে পঞ্চাশ টাকা৷ বাড়ি থেকে এত টাকা রোজ দিতেই চায় না৷ কিন্তু এটাই খেতে ইচ্ছে করে৷ আমিও একদিন গিয়ে ওই লজেন্স চাইতে জয়ন্ত বলল, তোমায় বরং একটা ভালো লজেন্স খাওয়াই৷ অন্য একটা দিয়েছিল৷ তখন আমি এত সন্দেহ করিনি৷ কিন্তু আজ সকালে স্কুলে শুনলাম, পিনাক মণ্ডলকে পুলিশ অ্যারেস্ট করেছে৷ কারণ তার কাছে চকোলেটের মধ্যে নাকি নেশার দ্রব্য পাওয়া গেছে৷ তখনই আমার সন্দেহটা সত্যি মনে হল ম্যাডাম৷
লগ্নজিতা বলল, ‘জয়ন্তর দোকান আজ কখন বন্ধ হয়েছে?’
তপন বলল, ‘ম্যাডাম, জয়ন্ত ঠিক সাড়ে দশটায় ভাত খেয়ে, টিফিন নিয়ে এসে দোকান খোলে৷ বন্ধ করে রাত আটটা নাগাদ৷ স্কুল খোলার সময়, টিফিন আর ছুটি হওয়া ওর মেইন লক্ষ্য থাকে৷ মোটামুটি পাঁচটা নাগাদ বন্ধ করলেই চলে যায়৷ কিন্তু ও সেটা করে না৷ কারণ ওই সময় পাড়ার লোকজনও আসে টুকিটাকি নিতে৷ তাই একেবারে আটটা নাগাদ বন্ধ করে৷ আজকে স্কুল খোলার সময়ে দেখলাম, দোকান খুলল৷ তার আধ ঘণ্টার মধ্যেই বন্ধ করে দিল৷ জিজ্ঞাসা করলাম, কী ব্যাপার, জয়ন্ত? বলল, বউয়ের শরীর খারাপ, হসপিটাল থেকে ফোন এসেছিল৷
‘আবার দেখি, স্কুল বন্ধ হওয়ার পরে, ওই সাড়ে পাঁচটা নাগাদ দোকানে ঢুকলো৷ আর আধ ঘণ্টা পরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞাসা করলাম, বউমা কেমন আছে, জয়ন্ত? মাস্ক পরে কেন? বলল, হসপিটালে কি রোগের অভাব আছে, যাতায়াত করছি, তাই পরে নিয়েছি৷ এরপর আমি আর জানি না৷ দোকান থেকে যখন বেরোল বেশ বড়ো একটা ব্যাগ ছিল ওর সঙ্গে৷ পরে আর কখন এসেছে, আমি দেখিনি, ম্যাডাম৷ আমি ভিতরে আমার ঘরে ছিলাম গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে৷ মোবাইলে গান শুনছিলাম তাই লরির আওয়াজ বা চেঁচামেচি শুনতে পাইনি৷
লগ্নজিতা বলল, ‘পিনাকের মায়ের সঙ্গে জয়ন্তর কি আলাদা বন্ধুত্ব ছিল? দেখেছেন কখনো?’
তপন একটু ভেবে বলল, বন্ধুত্ব কি না জানি না, তবে ছেলেকে স্কুলে ঢুকিয়ে দিয়ে দোকানে দাঁড়িয়ে জিনিস কিনত, হাসাহাসি গল্প করত৷
লগ্নজিতা বলল, ‘জয়ন্তর বউয়ের কোনো ছবি আছে আপনার কাছে?’
তপন একটু ভেবে বলল, ‘মনে হচ্ছে না৷ বিয়েতে যখন গিয়েছিলাম তুলেছিলাম একটা ছবি ওদের সঙ্গে৷ কিন্তু সে কি আর আছে!’
‘আচ্ছা তপনবাবু, এই আপনাদের স্কুলের হেডস্যার মানুষটা কেমন?
তপন একটু চুপ করে থেকে বলল, ‘আমার কি এসব কথা বলা ঠিক হচ্ছে, ম্যাডাম? আমি সামান্য মানুষ৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘দেখুন, এটা কোনো সামান্য কেস নয়৷ আপনাদের স্কুলের সামনে একটা দোকানে রমরমিয়ে ড্রাগের ব্যাবসা চলত৷ আপনারা সবাই ইনোসেন্ট, কিছুই বোঝেননি বললে পুলিশ শুনবে কেন? তারা তো ধরবেই৷ সন্দেহ হলে গোটা স্কুলের টিচার থেকে স্টাফ সকলকে তুলবে৷ স্কুলে চাবি ঝুলিয়ে দিয়ে আসবে৷ তখন কিন্তু আপনি সামান্য মানুষ বলে ছাড়া পাবেন না৷ আপনি বলছেন, ওই বাদামি প্যাকেট দেখে আপনার সন্দেহ হয়েছিল৷ এই সন্দেহের কথা আপনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন? জানাননি কেন? তার মানে জয়ন্ত আপনাকেও বখরা দিত৷ তাই আপনি সব জেনে, বুঝেও চুপ করে ছিলেন৷ আমরা তো এইভাবেই সাজাব৷’
তপন একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলল, ‘এ কী বলছেন ম্যাডাম? আমার না আছে সংসার, না আছে ভবিষ্যৎ৷ আমি এসব অসৎ পথের টাকা নিয়ে করব কী? দেখুন, জলধরস্যারের হাত ভারী৷ কাউকে কোনোদিন এক পয়সা বেশি দেন না৷ বেশি ছাড়ান, হকের টাকা আদায় করতেও বেশ বেগ পেতে হয়৷ নিজের ছেলেটা কিডনির রোগে মারা গেছে৷ ছেলেটার বয়েস ছিল তখন ষোলো৷ তারপর থেকেই দাদার ছেলেটাকে আঁকড়ে ধরেছেন৷ ওদিকে উৎপল বড়ো বেয়াদব ছেলে৷ যাকে বলে বেয়াড়া৷ স্কুলের বেয়াড়া ছেলেদের স্যার এত শাসন করেন অথচ নিজের ভাইপোকে প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলেছেন৷ স্কুলের ব্যাপারে স্যার খুব মনোযোগী৷ স্কুলের যেন কোনো বদনাম না হয়, সেটা নিয়ে সবসময় ভাবেন৷ কিন্তু কী ভাবেন, আমি জানি না৷ আমি নিজে গিয়ে জানিয়েছিলাম, জয়ন্তর দোকানে উঁচু ক্লাসের ছেলেরা গিয়ে সিগারেট কিনে খাচ্ছে, একই রকম চকোলেট কেনার ভিড় হয় রোজ৷ স্যার আমায় বললেন, নিজের কাজটা করো৷ সেদিন ছাগল ঢুকে স্কুলের বাগানের চন্দ্রমল্লিকা গাছগুলো খেয়ে নিল সেদিকে খেয়াল রাখো৷ আমার স্কুল, এখানের ছাত্ররা কোথায় কী করছে, সেটা আমায় অন্যদের কাছ থেকে জানতে হবে না৷ সব আমার নখদর্পণে৷ ভুল দেখলে, ঠিক ভাবব৷ এরপর আমি চলে এসেছিলাম৷ তবে ম্যাডাম, এই লজেন্স-সিগারেটের বাড়ন্ত কিন্তু আগে ছিল না৷ মাস চারেক লক্ষ করছি৷ জয়ন্তকে একদিন জিজ্ঞাসা করায় বলেছিল, আমার দোকানের দিকে একটু নজর কম দাও তপনকাকা, বাচ্চাদের যেটা পছন্দ হবে, খাবে৷ সে নিয়ে তাদের বাপ-মা ভাববে৷ তোমার কাজটা মন দিয়ে করো৷ তবে ম্যাডাম, স্যারের ভাইপো উৎপলকে আমি জয়ন্তর দোকানে সন্ধেবেলা আসর বসাতে দেখেছি৷ সামনে গোটা তিনেক বেঞ্চি পেতে গোটা পাঁচেক ছেলে প্রায়ই আড্ডা বসাত৷ আরেকটা ছেলের নামও জানি৷ ছেলেটা স্কুলের যেকোনো অনুষ্ঠানে ক্যাটারিং করে৷
লগ্নজিতা বলল, ‘ছেলেটার নাম রাঘব তা-ই তো?’
তপন বলল, ‘হ্যাঁ ম্যাডাম৷ ওই তো কেষ্টপুরের দিকে বাড়ি৷ স্যারের বাড়ির কাছেই৷ এই স্কুলের এক্স-স্টুডেন্ট৷ তাই স্যার সব অনুষ্ঠানে ওকেই ডাকে৷ আর দুজনের নাম আমি জানি না৷ মুখ চিনি মাত্র৷ এরা বসে আয়েশ করে সিগারেট টানত৷ আর ফিসফিস করে কিছু আলোচনা করত৷ আমি সেসব শুনতে পাইনি ম্যাডাম৷ আমি একবর্ণও মিথ্যে বলছি না৷ আমায় অ্যারেস্ট করবেন না প্লিজ৷’
সুশোভন ঢুকল জয়ন্তর কাজের মেয়ে অনীতাকে নিয়ে৷ লগ্নজিতা তপনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপাতত আপনি আসুন৷ ফোন নম্বরটা নিয়ে নাও সুশোভন৷’