ফেসবুকে প্রেম
ঋতিকার সকাল হয় বেশ ভোরে৷ জিমে বেশ কিছুক্ষণ ঘাম না ঝরালে ওর দিন শুরু হয় না৷ এটা ওর রোজকার অভ্যাস৷ তারপর স্নান সেরে স্বচ্ছ পোষাক পরে আয়নার সামনে দাঁড়ানোটাও ওর নেশা৷ দিনের শুরুতে রাত থেকে ভিজিয়ে-রাখা পাঁচ পিস আমন্ড আর ডিটক্স ওয়াটারটা নিয়ে ব্যালকনিতে বসে খবরের কাগজে চোখ বোলানোটাও ওর ছোটোবেলার অভ্যেস৷ ইংরেজি কাগজ পড়ার নেশাটা ওর এসেছে বাবার কাছ থেকে৷ বাবাও রোজ সকালে চায়ের কাপ হাতে ইংরেজি কাগজ উলটে যেত৷ ইংরেজি, বাংলা মিলিয়ে তিনটে কাগজ পড়ত বাবা৷ যদিও বাবাকে ও পেয়েছে মাত্র ছয় বছর পর্যন্ত৷ তারপরেই ঠিক কী নিয়ে যে মায়ের সঙ্গে বাবার সমস্যা হল সেটা বুঝে উঠতে পারল না৷ আজও পারেনি অবশ্য৷ শুধু বুঝেছিল, বাবা এমন একটা অন্যায় কাজ করেছে, যেটা মেনে নেওয়া যায় না৷ হঠাৎই মা ওকে নিয়ে চলে এল মামাবাড়ি৷ দাদুও বলল, ‘আর ফেরার দরকার নেই৷ এত ব্রিলিয়ান্ট একটা ছেলে যে এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে, বুঝতে পারিনি সুবর্ণা৷ ক্ষমা করিস৷’ মায়ের বিয়েটা দাদুই দিয়েছিল নিজের পছন্দ করা ছাত্রের সঙ্গে৷ বাবার না ছিল বংশমর্যাদা, না ছিল আর্থিক অবস্থা৷ বাবাদের বংশে নাকি একমাত্র বাবাই ছিল শিক্ষিত ছেলে৷ ঋতিকার দাদু প্রফেসর৷ ইউনিভার্সিটির বেস্ট ছেলে ছিল ঋতিকার বাবা৷ সময়ে-অসময়ে নিজের বইপত্র নিয়ে দাদুর বাড়িতে হানা দিত বাবা৷ ইঞ্জিনিয়রিংয়ের ছেলে হয়েও সব বিষয়ে কত নলেজ ছেলেটার৷ সেই থেকেই নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসত দাদু বাপ-মা মরা ছেলেটাকে৷ বাবা নিজেও যখন গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রফেসরিটা পেল তখনই দাদু আচমকা ঠিক করে ফেলল, নিজের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবে সত্যজিৎ ব্যানার্জির৷ কিন্তু ঋতিকার মা সুবর্ণা ঠিক মন থেকে মেনে নিতে পারছিল না সত্যজিৎকে৷ ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট হিসাবে সত্যজিৎকে শ্রদ্ধা করলেও জীবনসঙ্গী হিসাবে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল সুবর্ণার৷ কারণ ছোটো থেকে হাই সোসাইটিতে মানুষ হওয়া সুবর্ণা অমন একটা ছাপোষা বাড়ির অনাথ ছেলেকে স্বামী হিসাবে মেনে নিতে নারাজ ছিল৷ সুবর্ণা গোস্বামী নিজেও কলকাতা ইউনিভার্সিটির ইকনমিক্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া মেয়ে৷ দুর্দান্ত ফোটোগ্রাফার৷ তার তোলা আলোকচিত্র পুরস্কৃতও হয়েছে৷ শুধু তা-ই নয়, দেখতেও বেশ সুন্দরী৷ এমন গুণের মেয়ে হঠাৎ এমন চালচুলোহীন ছেলেকে বিয়ে করতে যাবেই বা কেন? কিন্তু ঋতিকার দাদু বড়ো একগুঁয়ে ছিল৷ মেয়েকে চূড়ান্ত স্বাধীনতা দিয়ে মানুষ করলেও বিয়ের ব্যাপারে কিছুই শোনেননি৷ সরকারি ব্যাঙ্কে কর্মরতা মেয়ের অমতেই বিয়ে দিয়ে দিলেন সত্যজিতের সঙ্গে৷ বিয়ের পরে সত্যজিৎ চেয়েছিল, শ্বশুরের বিশাল বাড়িতে থেকে যাবে ঘরজামাই হয়ে৷ কিন্তু বাদ সাধল সুবর্ণা৷ পরিষ্কার বলেছিল, ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতে হবে৷ তারপর দুজনের ইনকামে ফ্ল্যাট বুক করে দিলেই হবে৷ ঋতিকার দাদুর কাছে মেয়ের এই সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত ছিল৷ অনাথ ছেলেটার সঙ্গে বিয়ে দেবার আরেকটা উদ্দেশ্য ছিল ওঁর, সেটা হল নিজের বাড়িতেই বসবে বিবাহিত মেয়ের সংসার৷ একমাত্র মেয়েকে কাছছাড়া করতে চায়নি দাদু৷ কিছুটা বোধহয় বাবার ওপরে অভিমান করেই সত্যজিতের হাত ধরে বাবার বাড়ি ছেড়েছিল সুবর্ণা৷ সতজিতের তখন নতুন চাকরি, তা ছাড়াও কিছু লোন ছিল নিজের নামে, তাই সংসারে সেভাবে টাকা দিতে পারত না৷ সুবর্ণার টাকাতেই চলছিল সংসার৷ তারপরে ঠিক কী ঘটেছিল, কেউই কোনোদিন বলেনি ঋতিকাকে, শুধু মা একদিন ওর হাত ধরে বেরিয়ে এসেছিল ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে৷ তখন অবশ্য বাবা নতুন ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছিল৷ বিয়ের বছর ঘুরতেই প্রেগন্যান্ট হয়েছিল সুবর্ণা৷ এত কম বয়সে মা হতে চায়নি সুবর্ণা৷ কিন্তু সত্যজিৎ কোনো কথা শুনতে চায়নি৷ ঋতিকার জন্মের পরে কিন্তু মেয়েকে সময় তেমন দিতে পারেনি সত্যজিৎ৷ কারণ কলেজ ছাড়াও সে তখন একটা নতুন কাজে জয়েন করেছিল৷ তাই বাবাকে কমই পেত ঋতিকা৷ কিন্তু বাবাকে ওর বেশ ভালো লাগত৷ নিরীহ নিরীহ মুখ, বিশেষ ঝগড়াঝাঁটি করত না৷ সব কথাতেই কেমন একটা না-বোঝা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত৷ সদ্য আঠারো পেরোনো ঋতিকার খুব ইচ্ছে করে বাবার সঙ্গে একবার দেখা করতে৷ কিন্তু মা সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করে দিয়েছিল৷ গোটা বাড়ি খুঁজেও ঋতিকা বাবার কোনো ছবি জোগাড় করতে পারেনি৷ মা বোধহয় চায়নি, বাবার সঙ্গে ঋতিকার দেখা হোক৷ দাদুর শাসন আর মায়ের স্নেহে বড়ো হয়ে উঠেছে ঋতিকা৷ জীবনে অভাব কী বুঝতেই পারেনি৷ নিজেদের বাড়ির গাড়ি করেই স্কুলে গেছে আজীবন৷ সিঙ্গল মা হয়েও আগলে রেখেছিল দশ হাত দিয়ে৷ একটু বড়ো হতেই ঋতিকা বলেছিল, মা-তুমি আরেকটা বিয়ে করো-না৷’ সুবর্ণা হেসে বলেছিল, আবার যদি মানুষ চিনতে ভুল হয়ে যায়!’ সুবর্ণা বেড়াতে যায়, গানের অনুষ্ঠানে যায়, ছবি তোলে, অবসর সময়টা খুব আনন্দেই যাপন করে৷ দাদুই বহুদিন ফিসফিস করে বলত, ‘সত্যজিৎকে এতটা ভুল চিনলাম?’ তারপর মা একদিন রুখে দাঁড়িয়ে বলেছিল, ‘বাবা, আমি ওই মানুষটার নাম এ বাড়িতে শুনতে চাই না৷ যদি তুমি রোজই ওই এক আপশোস করো তাহলে আমায় বাড়ি ছাড়তে হয়৷’ রিটায়ার্ড প্রফেসরের একমাত্র নেশা দাঁড়িয়েছিল বাগান করা আর নাতনিকে লেখাপড়া শেখানো৷ নিজের বই পড়ার নেশাটাকে হঠাৎই মেরে ফেলেছিল দাদু৷ বলেছিল, বই মানুষকে ধোঁকা দেয় অনেক সময়৷ পড়ায়া মানেই সে সৎ নয়৷
সুবর্ণা থাকত নিজের জগতে৷ সেখানে যেন কোনো দুঃখ প্রবেশ করতেই পারবে না৷ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগে মা ঋতিকাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘কী হতে চাস জীবনে?’ ঋতিকা না ভেবেই উত্তর দিয়েছিল, ‘মডেলিং করতে চাই৷’ মা একটু চুপ করে থেকে বলেছিল, জয়েন্টে হয়তো চান্স পাবি তুই, তারপরেও কি মডেলিংই করতে চাস? ঋতিকা একটু ভেবে বলেছিল, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে, চাকরি পেয়ে তারপর সেটা ছেড়ে দিয়ে মডেলিং করব৷’ সুবর্ণা হেসে বলেছিল, ‘যাতে ইন্টারভিউয়ে বলতে পারিস, আমি অমুক কোম্পানির জব ছেড়ে শখকে গুরুত্ব দিয়েছি? বেশ, যেটা তোর ইচ্ছে, সেটা করিস৷ কারো ইচ্ছেপূরণে বাধা আমি হব না কোনোদিনই৷’ দাদু মাথা নিচু করত এসব কথা শুনলে৷ কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করত না৷ দাদুর মতো মানুষ চিনতে ঋতিকারও ভুল হয়ে যাবে না তো? ভয় করে ঋতিকার৷
উৎপলের সঙ্গে পরিচয়টা ফেসবুকেই৷ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার৷ এ ছাড়াও ওর ট্রান্সপোর্টের বিজনেস আছে৷ ঋতিকার থেকে বছর পাঁচেকের বড়োই হবে৷ ওদের ফোনে কথা রেগুলার হলেও ওরা মাত্র দিন সাতেক মিট করেছে পার্কে বা সিনেমা হলে৷ কিন্তু উৎপলের সরলতায়, কেয়ারিং মানসিকতায় ঋতিকা মুগ্ধ৷ যদিও মা বা দাদু এখনও জানে না উৎপলের কথা৷ আরেকটু ম্যাচিয়োর হোক ওদের সম্পর্কটা, তারপর না হয় বলবে মা-কে৷ মায়ের আপত্তি থাকার কথা নয়৷ উৎপলের বাবা পেশায় ডাক্তার, উৎপল নিজে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার৷ ফ্যামিলি স্ট্যান্ডার্ড যথেষ্ট ভালো৷ উৎপলকে দেখতেও তো দারুণ৷ সব থেকে বড়ো কথা, ঋতিকাকে খুব ভালোবাসে উৎপল৷ বারবার মনে হয়, উৎপলকে ট্রাস্ট করা যায় নির্দ্বিধায়৷ কিন্তু মায়ের জীবনে এরকম একটা ঘটনা ঘটে গেছে বলেই হয়তো মা বার বার বলে, মানুষ চেনা সবচেয়ে কঠিন কাজ৷ আর এটা শুনে শুনেই কাউকে সম্পূর্ণ ট্রাস্ট করতে পারে না ঋতিকা৷ উৎপল ঋতিকার বাবার কথা সবটা শোনার পরে বলেছে, আমার বাবাকে বলে দেব, তোমায় যেন মেয়ের মতো আদর করে৷ ঋতিকার প্রতিটা কষ্ট যেন ওর কাছ থেকে মুহূর্তে সরিয়ে দিয়ে ওর মনের গহিনে আলোর রেখা প্রবেশ করানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে উৎপল৷ এসব কারণেই হয়তো উৎপলকে এতটা ভালোবাসে ঋতিকা৷ আর বসে থাকলে চলবে না৷ ওর ডান্স ক্লাস আছে৷ ছোটো থেকে কত্থক শেখে ও৷ এখন তো নাচটা ও রক্তে নিজের জায়গা করে নিয়েছে৷ লোপামুদ্রা ডান্স অ্যাকাডেমিতে জয়েন করেছে সেই ছোটোবেলায়৷ মায়ের হাত ধরে ভয়ে ভয়ে গিয়েছিল ঋতিকা৷ এখন লোপামুদ্রা ডান্স অ্যাকাডেমি ওর আরেকটা পরিবার৷ ব্রেকফাস্ট টেবিলে রোজকার মতো ডাক পড়ল ওর৷ মা আর দাদু ওয়েট করছে ওর জন্য৷ উনসত্তর বছরের দাদু এখনও বেশ ফিট৷ শুধু চোখগুলো একটু ভোগায় দাদুকে৷ মাঝে মাঝেই নাকি আবছা দেখে দাদু৷ ডক্টর বলেছে, এটা নার্ভের সমস্যা৷ ব্রেকফাস্ট টেবিলে ওদের রোজই নিজের নিজের কাজ নিয়ে গল্প হয়৷ মা বেশি হাসির কথা বলে৷ আর মেনকাপিসি তাতে ফোড়ন দেয়৷ আজও সেইভাবেই ব্রেকফাস্ট শেষ করে বেরোবে বলে রেডি হচ্ছিল ঋতিকা৷
তখনই ফোনটা এল৷ ‘পুলিশ অফিসার লগ্নজিতা ভট্টাচার্য কথা বলছি৷ আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই৷ এখন বাড়িতে গেলে কি কথা বলা যাবে? উৎপলের বিষয়ে কিছু কথা ছিল৷’
চমকে উঠল ঋতিকা৷ ভয়ে ভয়েই বলল, ‘ওর কিছু হয়েছে কি?’
লগ্নজিতা বলল, ‘সামনে বসে কথা বলতে চাই৷’
বাড়িতে এখনও উৎপলের বিষয়ে কিছু বলেনি৷ কাল থেকে উৎপলের ফোন সুইচড অফ বলছে৷ কোনো মেসেজ অবধি নেই৷ ভেবেছিল, হয়তো অফিসের মিটিংয়ে ব্যস্ত আছে৷ কিন্তু এমন কোনোদিনও হয়নি যেদিন ও একটাও মেসেজ করেনি৷ এখন আবার পুলিশ ফোন করছে৷ ঋতিকা বলল, ‘আমি আসছি৷ কোথায় আসতে হবে, বলুন৷’ লগ্নজিতা একটা ক্যাফের নাম বলল, যেটা ঋতিকার বাড়ির বেশ কাছেই৷
লগ্নজিতা আর সুশোভন বসে আছে দুটো কফি নিয়ে৷ পুলিশের ড্রেস পরে নেই৷ তাই লোকজন অদ্ভুতভাবে তাকাচ্ছে না৷ পুলিশের পোশাকে থাকলে সাধারণ মানুষ এমনভাবে তাকায় যেন মনে হয়, ডিউটি টাইমে এরা কফি খায় বলেই ধর্মতলার মোড়ে ওঁর সাইকেলটা সেদিন চুরি হয়ে গেল৷ আজ যেহেতু ক্যাজুয়াল পোশাকে আছে তাই ওই চাপটা নেই৷ সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম কী করে বুঝলেন মেয়েটাই ওর প্রেমিকা?
লগ্নজিতা বলল, তোমার অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ, আমি এখনও ডাক্তারবাবুর প্রেমে পড়ে আছি তাই বুঝতে পারলাম, এরাও প্রেম করছে৷ আরে রাঘব তো প্রথম দিনই এসে এর হিস্ট্রি-জিয়োগ্রাফি দিয়ে গিয়েছিল৷ তবে খোঁজ নিয়ে যা বুঝলাম, মেয়েটা উৎপলদের থেকে অনেক হাই স্ট্যান্ডার্ডে বিলং করে৷ এখন জানতে হবে, মামণিকে ফাঁসাল কী করে ওই দুবার ব্যাক-পাওয়া ছেলে৷ ছেলের এলেম আছে৷ ক্যালকাটা গার্লসের সেকেন্ড গার্লকে ফাঁসিয়ে ফেলল৷ সুশোভন, তুমি মাত্র পঁচিশ বছরে বিয়েটা কেন করলে? না মানে প্রেমিকার বাড়ি থেকে তো চাপ ছিল না৷ তোমার তো অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ তাহলে?
সুশোভন বলল, ম্যাডাম, আমার ঠাকুমার খুব শরীরটা খারাপ ছিল তখন৷ আমিও চাকরি পেয়ে গেছি৷ তাই সবাই বলল, নাতির বিয়েটা দেখে যাক৷’ লগ্নজিতা বলল, ‘কেন, স্বর্গে যাওয়ার পাসপোর্টে কি লিখতে হবে নাকি, নাতির বিয়ে দেখেছে কি না? এই রে, তাহলে তো আমার স্বর্গে যাওয়া হল না৷ কারণ আমার বয়েস এখন ত্রিশ৷ বিয়ে করব আরও বছর দুয়েক পরে৷ আমার ছেলে-মেয়ের বিয়েই দেখে যেতে পারব কি না সন্দেহ আছে, তারপর আবার নাতির৷ তবে যা-ই বলো সুশোভন, তোমার বউটি কিন্তু ভারী মিষ্টি৷ বেশ আপ্যায়ন করতে জানে৷ তোমাকেও স্বামী বলে বেশ মানে-টানে৷ দেখো একদিক দিয়ে অন্তত তুমি সফল৷ পুলিশ হিসাবে কেয়ারলেস হতেই পারো, কিন্তু স্বামী হিসেবে সফল৷ কম বয়সে বিয়ে করে স্বামী হয়েছ, এবারে বাবা হবে আর আমার সহকারী হিসেবে শুধু ছড়িয়ে যাবে৷ সুশোভন বুঝতে পারছিল না ম্যাডাম হঠাৎ ওর বিয়ের পিছনে কেন পড়ল৷ এবারে বুঝতে পারল, ম্যামের আসল উদ্দেশ্য হল সুশোভনকে এভাবে মনে করিয়ে দেওয়া, যে সাত তাড়াতাড়ি বিয়ে করলেই দায়িত্ববান হওয়া যায় না৷
সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, আমি খোঁজ নিয়েছি তো জলধরবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের৷ কিন্তু লোকটা হেভি চালাক ম্যাডাম৷ সব স্ত্রী-র নামে আছে মনে হয়৷ পাশাপাশি তিনটে ব্যাঙ্ক থেকে জানাল এই নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই৷ একটা ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট পেলাম, সেটা স্যালারি অ্যাকাউন্ট৷
লগ্নজিতা বলল, ‘তা ওঁর বউয়ের নামটা জানতে কি আমি বারণ করেছিলাম? নাকি পরস্ত্রীর নাম জানা নিষেধ?’
সদ্যবিবাহিত বলে সুশোভনকে থানার সকলেই মোটামুটি অল্পবিস্তর লেগপুলিং করে৷ কদিন আগে মেজোবাবু তো রীতিমতো সকলের সামনে বলল, ‘এরপরেও পাবলিক বলবে পুলিশ রেসপন্সিবল নয়, দেখুক এসে, একজন সদ্যবিবাহিত স্বামী কীভাবে সন্ধে ছ-টা পর্যন্ত থানায় থেকে এতক্ষণে বাড়ি যাচ্ছে! মানুষজন আর বুঝবে কবে?
সুশোভন ব্যাগটা কাঁধে নিয়েও চেয়ারে বসে পড়েছিল দেখে সবাই হাসাহাসি হল একদফা৷ সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, খোঁজ নিচ্ছি৷’
কথার মাঝেই লগ্নজিতার ফোনটা বেজে উঠল৷ একটা নেভি-ব্লু ড্রেস পরে বেশ সুন্দরী মেয়ে ক্যাফের সামনে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক চোখ বোলাচ্ছে৷ সুশোভন হাত নাড়তেই মেয়েটি এগিয়ে এসে বলল, ‘ঋতিকা গোস্বামী’৷
লগ্নজিতা হ্যান্ডশেক করে বলল, ‘আমি লগ্নজিতা ভট্টাচার্য তোমায় ফোন করেছিলাম৷ তুমি বেশ ছোটো তাই তোমায় তুমিই বলছি৷ প্লিজ বোসো৷’
ঋতিকা বসতেই সুশোভন কফি অর্ডার করতে যাচ্ছিল, ঋতিকা বলল, ‘আমি জাস্ট ব্রেকফাস্ট করে বেরোলাম৷ আমার ডান্স ক্লাস আছে৷ উৎপলের ঠিক কী হয়েছে, ম্যাডাম?’
লগ্নজিতা বলল, কতদিনের পরিচয় উৎপলের সঙ্গে?
ঋতিকা বলল, ‘ফেসবুকে আলাপ৷ হল বেশ কিছু মাস৷ কেন বলুন তো?’
লগ্নজিতা বলল, ‘উৎপল বেপাত্তা৷ তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ সেই কারণেই তোমার হেল্প চাইতে এলাম৷ বাড়ির কারো ফোন সে রিসিভ করছে না৷ ওর জেঠু থানায় মিসিং ডায়েরি করে এসেছে৷’
ঋতিকা ভয়ার্ত গলায় বলল, ‘সে কী? এসব কখন হল? পরশু রাতে তো অনেকক্ষণ গল্প হল আমার সঙ্গে৷ অফিস থেকে ফিরতে একটু দেরি হয়েছিল বলল৷
সুশোভন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘কীসের অফিস?’
ঋতিকা বলল, ‘ওর অফিস৷ ও তো মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার৷ টাটা মোটরস-এ আছে৷’
সুশোভন কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, আচমকা তোতলা হয়ে যাওয়ায় কথাটা বোধহয় আটকে গিয়েছিল৷ তখনই লগ্নজিতা ইশারায় ওকে চুপ করতে বলল৷
লগ্নজিতা ক্যাজুয়াল গলায় বলল, ‘ওর জেঠুর ধারণা তুমি হয়তো ওর খোঁজ দিতে পারবে৷’
ঋতিকা বলল, ‘উৎপল কিন্তু আমায় বলেছিল, ওর বাড়ির কাউকে এখনও জানায়নি আমাদের সম্পর্কের কথা৷ এখন শুনছি, ওর বাড়িতে জানে৷ দেখুন অফিসার, আমার তো এটাই মাথায় ঢুকছে না, ও মিসিং হবে কেন? আমিও কাল বিকেল থেকে ওকে ফোনে পাইনি৷ ওর ফোন সম্ভবত সুইচড অফ৷ গোটা একটা দিন আমার খোঁজ না নিয়ে ও থাকে না৷ তাই ও বেপাত্তা হয়েছে না ভেবে ভাবুন ওর কোনো বিপদ হল কি না৷ আমার তো মনে হচ্ছে, ওকে কেউ কিডন্যাপ করেছে৷
সুশোভন বলল, উৎপল তো চব্বিশ বছরের সুস্থ ছেলে, ওকে সেভাবে কেউ কিডন্যাপ করেছে বলে মনে হচ্ছে না৷ না মানে করতে পারে, কিন্তু কিডন্যাপারদের কোনো কল ওর বাড়িতে আসেনি৷
ভীত গলায় ঋতিকা বলল, ‘কিন্তু তাহলে ওর হল কী? ওর আরেকটা বিজনেস আছে৷ ট্রান্সপোর্টের বিজনেস৷ ওই কাজে কোথাও যায়নি তো?’
লগ্নজিতা বলল, ‘উৎপলের আর কোনো নম্বর আছে?’
ঋতিকা একটু ভেবে বলল, ‘ওর এক বন্ধুর নম্বর আছে আমার কাছে৷ উৎপলই আলাপ করিয়ে দিয়েছিল৷ বন্ধুটা হোটেল ম্যানেজমেন্ট করে নিজেই বিজনেস শুরু করেছে৷’ ফোনটা বের করতে করতেই ঋতিকা বলল, ‘এই যে রাঘব৷’
লগ্নজিতা বলল, এঁকে একবার ফোন করে দেখো তো৷ আমরা জানতে চাইছি, বোলো না৷ আসলে পুলিশ শুনলেই মানুষ গুটিয়ে যায়৷ ওই কারণে আমরা হেল্প করতে চেয়েও পারি না অনেক সময়৷ সকলে তোমার মতো কোঅপারেট করে না আসলে৷
ঋতিকা ফোনটা স্পিকারে করে বলল, ‘হ্যালো রাঘবদা, আমি ঋতিকা বলছি৷ উৎপলকে ফোনে পাচ্ছি না তাই তোমায় করলাম৷ ও কোথায় জানো কিছু?’
রাঘব খুব ক্যাজুয়াল গলায় বলল, ‘এদিকে একটা ছোটো সমস্যা হয়েছে তাই দু-দিনের জন্য মামাবাড়ি গেছে৷ ওর আরেকটা নম্বর দিচ্ছি, ওটাতে ট্রাই করো ঋতিকা৷ তারপর বলো, কেমন আছ? উৎপলের খোঁজ নেওয়া ছাড়াও তো মাঝে মাঝে ফোন করতে পারো৷ আমিও ভালো গল্প করতে পারি কিন্তু৷
ঋতিকা বলল, ‘হ্যাঁ করব৷ আপাতত ফোন নম্বরটা দাও উৎপলের৷’ রাঘব নম্বরটা বলল, সুশোভন নোট করে নিল৷
ঋতিকাকেই লগ্নজিতা বলল, ‘কল করে দেখো তো, ছেলেটা কোথায় গেল?’
ঋতিকা ভ্রূ কুঁচকে স্বগতোক্তি করে বলল, ‘এই নম্বরটা আমায় দেয়নি কেন উৎপল?’
লগ্নজিতা নরম গলায় বলল, ‘এখন অভিমান করার সময় নয়, ঋতিকা৷ প্লিজ কল হিম৷
ফোনটা করেই ঋতিকা বলল, ‘তুমি কোথায়? তোমায় কাল থেকে পাচ্ছি না কেন ফোনে?’
উৎপল যে একটু ঘাবড়েছে, সেটা ওর গলা শুনেই বোঝা গেল৷ তবুও সদ্য বহু কষ্টে পটানো প্রেমিকার সামনে অস্বস্তিকর পরিবেশ এড়াতেই বলল, ‘আরে বড়োমামার খুব শরীর খারাপ৷ তাই মামাবাড়ি এসেছি৷’
ঋতিকা বুদ্ধি করে বলল, ‘বাড়ির কেউ জানে?’
একটু সচেতন গলায় উৎপল বলল, মামার শরীর খারাপ বললে মা কাঁদতে শুরু করবে তাই বলিনি৷ ফোনটা সুইচড অফ করে দিয়েছি৷ আমি আসলে হসপিটালে রাত জাগছি তো তাই মেসেজ করা হয়নি৷ তুমি ঠিক আছ তো ঋতিকা?’
ঋতিকা বলল, ‘তার মানে তুমি এখন বেহালায়, তা-ই তো? তোমার বড়োমামা তো ওখানেই থাকেন তা-ই না?
উৎপল হেসে বলল, ‘সব মনে রেখেছ? আজ রাতে ভিডিয়ো কল করব৷ ঋতিকা বলল, ঠিক আছে৷ আমি নাচের ক্লাসে যাচ্ছি, এখন রাখলাম৷
লগ্নজিতা কিছু বলার আগেই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে উৎপলের প্রোফাইলে ঢুকে এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোকের ছবি দেখিয়ে বলল, ‘এটা ওর বড়োমামা৷ বাকি আপনারা কীভাবে কাজ করবেন, সেটা আপনারা ডিসিশন নিন৷ তবে ওর বাড়ির লোককে জানিয়ে দেবেন কিন্তু ওর মায়ের কাছ থেকে গোপন করতে বলবেন৷’
লগ্নজিতা বলল, ‘তুমি আমাদের অনেক হেল্প করলে৷ একটা কথা বলতে চাই, তুমি খুব ব্রাইট মেয়ে৷ পড়াশোনা করো মন দিয়ে৷ কাউকে বিশ্বাস করার আগে আরও কয়েকবার ভাববে৷ কারণ মানুষটা ভুল হয়ে গেলে সেখানে স্যাক্রিফাইস বা কম্প্রোমাইজ করেও লাভ হয় না৷ তাই পথ চলার সঙ্গীটি সঠিক হওয়া প্রয়োজন৷’
ঋতিকা থমকে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আপনি ঠিক আমার মায়ের মতো কথা বলেন৷ আমার মা নিজেকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করে না এ পৃথিবীতে৷ কিন্তু ম্যাডাম, কাউকে বিশ্বাস না করে করে মা আজ একলা, জানেন৷ মায়ের আনন্দ মানে একা একা জলে-জঙ্গলের ছবি তুলে বেড়ানো৷ আপনি যদি উৎপল সম্পর্কে এটা বলেন, তাহলে আমায় বলতে হয়, উৎপল ছেলেটার একটাই গুণ-ও মিথ্যে বলে না৷ আর ঠিক এই কারণেই আমি ওকে পছন্দ করি৷
লগ্নজিতা বলল, ‘তোমার বয়েস কম, তাই জীবনকে কম দেখেছ৷ এ নিয়ে পরে একদিন কথা হবে৷’
ঋতিকা একটু উদ্ধত গলায় বলল, ‘কেন, বয়েস কম হলেই জীবন সম্পর্কে ধারণা কম হবে-এটা কে বলল আপনাকে? এই হচ্ছে আপনাদের মুশকিল৷ সুযোগ পেলেই বয়সে ছোটোকে জ্ঞান দেওয়ার সুযোগ ছাড়তে নারাজ৷ তা ছাড়া আপনি আমায়—উৎপলকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাই হেল্প করার জন্য বলেছিলেন৷ সেটা আমি করে দিয়েছি৷ এরপর আর একটা শব্দও উৎপল সম্পর্কে শুনতে চাই না আমি৷ একটা মিসিং ডায়েরির ওপরে ভিত্তি করে আপনি একজনের ক্যারেক্টর সার্টিফিকেট দিতে বসবেন না অফিসার৷ নিজের কানেই তো শুনলেন, কেন ও বাড়িতে না জানিয়ে মামাবাড়িতে আছে৷ শুধু তা-ই নয়, ও মামার জন্য রাত জেগে হসপিটালে বসে আছে৷
সুশোভন আবার কিছু বলতে যাচ্ছিল৷ লগ্নজিতা বলল, সে তো অবশ্যই৷ ছেলেটা শুধু মাকে জানাবে না বলে এসব করেছে৷ ঠিক আছে ঋতিকা, তুমি ডান্স ক্লাসে যাও৷ আমাদের সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ৷
ঋতিকা ঘাড় নেড়ে ‘ওয়েলকাম’ বলে চলে গেল৷ সুশোভন উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘ম্যাডাম, এ তো মারাত্মক ফ্রডের পাল্লায় পড়েছে৷ উৎপল ব্যাক-পাওয়া ছেলে৷ কলেজ কমপ্লিট করেনি৷ সব ডিটেলস আমার ল্যাপটপে আছে৷ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, টাটা মোটরস-এসব কী তাপ্পি দিয়েছে ম্যাডাম মেয়েটাকে! ওর দুটো প্রাইভেট কার আছে আর একটা লরি৷ আগে একটাই গাড়ি ছিল, নিজেই চালাত৷ এখন দুটো ড্রাইভার রেখেছে৷ লরিটা বেশি দিন আগে কেনাও নয়৷ এসব মিথ্যে বলার কারণ কী?
লগ্নজিতা বিল মিটিয়ে বলল, ওসব মেয়ে পটানোর সময় বলতে হয়৷ তোমাদের ডাক্তারবাবু আমায় বলেছিল, তোমার অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে থাকতে চাই আজীবন৷ তারপর দেখো, এতবার বললাম, বাচ্চাটাকে দেখার ভান করে ওদের দেওয়া অ্যাড্রেসে পৌঁছে গিয়ে দেখতে, আদৌ ওখানে ওর বাড়ি কি না, সেটা আর করে উঠতে পারলেন না তিনি৷ তাই বলছি, মেয়ে পটানোর সময় ওরকম অনেক কিছুই মানুষ বলে৷ এনিওয়ে চলো সুমনের বাড়িতে একবার যেতে হবে৷
সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম রিম্পা কিন্তু কারণে-অকারণে জয়ন্তর সঙ্গে গল্প করত৷ এত গল্প করত, সেদিন আমরা যখন গেলাম বলল না তো৷ আরেকটা খুব রহস্যজনক ঘটনা দেখলাম৷ রিম্পা মণ্ডলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গত পাঁচ মাসে বেশ মোটা অ্যামাউন্ট ঢুকেছে৷ ওর স্যালারি বেশি নয়৷ সুমনের নির্দিষ্ট ইনকাম৷ তাহলে প্রায় লাখ পাঁচেক ঢুকল কী করে?’
লগ্নজিতা বলল, সুশোভন, আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে, এরা সবাই জয়ন্তকে সাহায্য করত৷ তারপর জানাজানি হয়ে যেতে এদের মধ্যেই কেউ জয়ন্তকে ঠুসে দিল৷’
সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, আমার তো তপন মহান্তি থেকে এই খবর দেওয়া রাঘবকে অবধি সন্দেহ হচ্ছে৷ কারণ এরা সবাই জানত জয়ন্তর এই রাতারাতি বড়োলোক হবার ব্যাপারটা৷ তাই জানতাম না বলে শান্তিগোপাল সেজে এখন লাভ নেই৷ আর এই জয়ন্তর কাজের মেয়েটা মাইরি হেভি ঢ্যাঁটা জিনিস৷ কথাও বলছে ইনস্টলমেন্টে, ম্যাডাম৷ আরে ঝেড়ে কাশতে বেজায় কষ্ট এর৷ দিতে হয় দুটো রুলের বাড়ি৷’
লগ্নজিতা বলল, ওদের যা ইউনিয়ন আছে তাতে এসব করতে গেলে তোমার নতুন বউকে হাত ঘষে বাসন মাজতে হবে৷ পরিচারিকা পাবে না এ তল্লাটে৷ তাই ওসব ভাবনা মাথা থেকে বের করো দেখি৷ অন্য স্টাইলে ঠিক বের করে নেব৷ এখন চলো, রিম্পাকে একবার দেখে আসি৷ তারপর সুমনের জামিনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ আসলে আমি সুমনের জামিনটা নিয়ে ঢুকতে চাইছি না৷ যেহেতু আমার ড্রাইভার তাই এমন কোনো অন্যায়ে যদি ও সত্যিই জড়িয়ে থাকে তো সেটাও বিচার করুক মিস্টার সান্যাল৷ পারিজাত অবশ্য বলল, জামিনের ব্যবস্থা করে কল করবে৷ চলো, সুমনের প্রতিবেশীদের সঙ্গে একটু কথা বলে আসি৷’