Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প539 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা

    কয়েক বছর আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে একটা ছেলে গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল। আমি এই ঘটনার কথা কিছুতেই ভুলতে পারি না। শুধু মনে হয় কোনো দূর এক শহর থেকে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্যে এত দূরে তাকে টেনে আনার ফলেই হয়তো এত অল্প বয়সে মারা যেতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার নামে সবাই মিলে যে ভয়ঙ্কর একটি হৃদয়হীন পদ্ধতি দাঁড় করিয়ে রেখেছে, সেই পদ্ধতিটি কী কোনভাবে এর জন্যে দায়ী নয়? আবারও ভর্তি পরীক্ষা আসছে। আমি জানি, হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে তাদের অভিভাবকদের নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্যে এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাগলের মতো ঘুরে বেড়াবে। খাওয়া ঘুম বিশ্রাম দূরে থাকুক, অনেক জায়গায় তাদের একটা বাথরুমে যাওয়ার সুযোগ পর্যন্ত থাকবে না।

    অথচ এর কোন প্রয়োজন ছিল না। খুব সহজেই ছাত্রছাত্রীদের এই ভয়ঙ্কর অমানবিক ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার সুযোগ ছিল। বাংলাদেশের সব কয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যদি রাজি হত তাহলে খুব সহজেই সবাই মিলে একটি (হ্যাঁ মাত্র একটি) চমৎকার মানসম্মত ভর্তি পরীক্ষা নিয়েই এই দেশের সব ছাত্রছাত্রীকে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যে বিবেচনা করতে পারত।

    এই সরকার আসার পর শিক্ষা মন্ত্রনালয় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে ডেকে সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার একটি উদ্যোগ নিয়েছিল। সেখানে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন এবং আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিষয়টির সম্ভাব্যতা নিয়ে একটা বক্তব্য দিতে। আমি একটু গাধা প্রকৃতির মানুষ, তাই সরল বিশ্বাসে সকল তথ্য উপাত্ত নিয়ে হাজির হয়েছিলাম। বক্তব্য শুরু করার আগেই অবশ্য টের পেয়েছিলাম, আমার সেখানে হাজির হওয়া বড় ধরনের নির্বুদ্ধিতা হয়েছে! সেখানে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলররা আসেন দেরি করে এবং চলে যান সবার আগে। যাবার আগে বলে যান যে, তাদের বহুল পরীক্ষিত একটা ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু আছে সেটা নড়চড় করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। গুরুত্বপূর্ণ ভাইস চ্যান্সেলররা বলেন যে, তারা কঠিন নিরাপত্তার মাঝে ভর্তি পরীক্ষা নেন। সবাই মিলে পরীক্ষা নিলে তাকে কে সেই নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেবে? একজন ভাইস চ্যান্সেলর খোলাখুলি বলেই ফেললেন, তিনি যদি সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার মতো একটা প্রস্তাব নিয়ে তার বিশ্ববিদ্যলয়ে ফিরে যান, তাহলে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। বেশিরভাগ ভাইস চ্যান্সেলররা অবশ্য আমার বক্তব্যের মাথামুন্ড কিছু বুঝতে পারলেন না কিংবা বোঝার চেষ্টাও করলেন না। আমার ছেলেমানুষী বক্তব্য শুনে হতাশভাবে মাথা নাড়তে থাকলেন।

    শেষ পর্যন্ত কিছুই হলো না, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা নিতে থাকল। আমার ধারণা বিষয়টা আরো খারাপ হলো। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মনে হয় প্রায় রাগ করেই ছোট ছোট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যে নির্ধারিত পরীক্ষার দিনগুলোতে ইচ্ছেমতো তাদের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ফেলতে লাগল। এতে বাধ্য হয়েই ছোট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শেষ মুহুর্তে তাদের পরীক্ষার তারিখ পাল্টালো। আমি জানি আমাদের পরপর দুই বছর কুয়েট (খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) -এর সাথে একই দিন পরীক্ষা নিতে হয়েছে। যে সব ছেলেমেয়েদের এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েই পরীক্ষা দেয়ার আগ্রহ ছিল তারা মন খারাপ করে, ক্ষুদ্ধ হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশা ছেড়ে অন্য একটিতেই পরীক্ষা দিতে বাধ্য হলো।

    কিছু দিন আগে ইউ.সি.জি. থেকে আবার সকল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার সম্ভব্যতা আলোচনা করার জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ন্যাড়া দুইবার বেল তলায় যায় না। কিন্তু এটি আমার প্রিয় বেল, তাই ন্যাড়া হয়েও আবার বেলতলায় গিয়েছিলাম। আমি এবারে খানিকটা কৌতুক এবং অনেকখানি বিস্ময় নিয়ে আবিষ্কার করলাম সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিই সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে বক্তব্য দিলেন। শুধু তাই নয়, কখন কীভাবে এই পরীক্ষাটি নেয়া যায় সেই খুঁটিনাটি নিয়েও দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা হলো এবং আমি যেহেতু নির্বোধ প্রকৃতির, তাই আবার একটু আশা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম!

    দেখতে দেখতে আবার ভর্তি পরীক্ষার সময় এসেছে এবং দেখা গেল অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। সব বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের নিজেদের ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। কেউ কেউ বরং উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছেন। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সন্তুষ্ট না থেকে প্রত্যেকটা বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। এই দেশে হতভাগ্য ছাত্রছাত্রীদের নিপীড়ন করার জন্য এরচেয়ে নির্মম কিছু আবিষ্কার করা যায় কী না আমার সেটি জানা নেই।

    এই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি কোনোই পরির্তন হয়নি, সেটি অবশ্যি পুরোপুরি সত্যি নয়। খুব ছোট একটা পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তনটা এত ছোট যে, হয়তো কারো চোখেই পড়বে না। কিন্তু আমার ধারণা পরিবর্তনটা গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি খুলে বলা যাক, কিছুদিন আগে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে তাদের সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল (আমার জন্যে সেটি ছিল অনেক বড় একটা দায়িত্ব এবং অবশ্যই অনেক বড় সম্মান।)। সমাবর্তনের পুরো অনুষ্ঠান শেষ করে যখন ফিরে আসছি তখন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আমাকে বললেন, ‘আমরা তো অনেকদিন থেকেই সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটা ভর্তি পরীক্ষার জন্যে চেষ্টা করে আসছি, কথা-বার্তা হচ্ছে কিন্তু কোন কাজ তো হচ্ছে না। শুধু আমরা আর আপনারা মিলে একটা যৌথ ভর্তি পরীক্ষা করলে কেমন হয়? একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলে যে একটা ভর্তি পরীক্ষা নেয়া যায়, তার একটা উদাহরণ তৈরি হোক।’ আমি বললাম- ‘চমৎকার আইডিয়া। আপনার প্রস্তবটা আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাব, দেখি সবাইকে রাজি করানো যায় কী না।’

    নিজেদের প্রশংসা করা ঠিক না, তারপরও বলছি- আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ভবিষ্যৎ মুখী, অনেক আধুনিক। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবটা আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলে উপস্থাপন করা মাত্রই সবাই সেটি লুফে নিল। আমি সেটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়কে জানালাম এবং তখন তারা খুঁটিনাটি আলাপ-আলোচনা করার জন্য তাদের কয়েকজন ডিন, বিভাগীয় প্রধান, সিনিয়র শিক্ষক, তরুণ প্রযুক্তিবিদ নিয়ে সারারাত গাড়ি চালিয়ে যশোর থেকে সিলেটে হাজির হয়ে গেলেন।

    সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার জন্য আমরা যে পদ্ধতিটি গ্রহণ করতে যাচ্ছি সেটি এমনভাবে দাঁড় করানো হয়েছে, যেন এর কারণে কোন বিশ্ববিদ্যালয়কেই তাদের প্রচলিত কোনো নিয়মকেই পরিত্যাগ করতে হবে না। ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম পুরোপুরি রক্ষা করেই এই সুযোগটি নিতে পারবে। সেটি সম্ভব হয়েছে তার কারণ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগীয় বিষয় নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয় না। ঘুরে-ফিরে সবসময়েই ছাত্রছাত্রীর এইচ.এস.সি.‘র বিষয়গুলোর উপর পরীক্ষা নেওয়া হয়। অর্থাৎ যে ছাত্রটি কম্পিউটার সায়েন্স কিংবা ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্যে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে তাকে তার কম্পিউটার সায়েন্স বা ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে তার জ্ঞানের পরীক্ষা করা হয় না। পরীক্ষা করা হয় তার এইচ.এস.সি. ‘র পদার্থ বিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন, ইংরেজি ইত্যাদি বিষয়ের উপর দক্ষতা। যদি এইচ.এস.সি. পরীক্ষা সত্যি সত্যি ছাত্রছাত্রীর সত্যিকারের মেধা যাচাই করতে পারত এবং ফলাফল মাত্র কয়েকটা গ্রেডের মাঝে সীমাবদ্ধ করে ফেলা না হত তাহলে আলাদাভাবে আমাদের কোনো ভর্তি পরীক্ষা নেয়ারই প্রয়োজন ছিলো না। যেহেতু আমরা এইচ.এস.সি. পরীক্ষার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারি না । তাই সেই এইচ.এস.সি.‘র বিষয়গুলোই নতুন করে নিজেদের মতো করে পরীক্ষা নেই। কাজেই সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার মূল ধারনাটি হচ্ছে এইচ.এস.সি. পর্যায়ে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর পরীক্ষা নিয়ে নেয়া। তারপর যে বিশ্ববিদ্যালয় মার্কস যেভাবে ব্যবহার করতে চায়, তাদেরকে সেভাবে ব্যবহার করতে দিয়ে মেধা তালিকা তৈরি করে দেওয়া হবে। এক সময় এটা খুব কঠিন ব্যাপার ছিল, কম্পিউটারের কারণে এখন এটা পানির মতো সহজ। এটি যুগান্তকারী নতুন কোনো ধারণা নয়। SAT বা GRE -তে ঠিক এরকমভাবেই পরীক্ষা নেওয়া হয়। আমাদের একটা বাড়তি সুবিধা রয়েছে, টেলিটক মোবাইল ফোনের কারণে ছাত্রছাত্রীদের এস.এস.সি. বা এইচ.এস.সি. এর মার্কসগুলো সরাসরি পেয়ে যাই। যে বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে এই মার্কস ব্যবহার করতে চায়, তারা সেটি করতে পারবে। (আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম যখন শুধু একটি এস.এম.এস. দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করার পরিকল্পনা করেছিলাম, তখন বনেদী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের অনেকরকম ভয়ভীতি দেখিয়েছিল। এখন দেখি তারাও আনন্দের সাথে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে যাচ্ছে।)

    একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় এক সাথে পরীক্ষা নেওয়ার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করার সময় শুধু একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতা নিয়ে খুশি থাকতে হবে না, দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বসে প্রশ্ন তৈরি করতে পারবেন। সেজন্য হয়তো তাদের দুই একদিন এক সাথে বসতে হবে কিন্তু কোনো শিক্ষকরাই সেটা করতে আপত্তি করবেন না।

    এই পদ্ধতিটি গ্রহণ করা হলে সবচেয়ে বড় লাভ হবে ছাত্রছাত্রীদের। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সারাদেশ থেকে ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসে। যার অর্থ সারাদেশ থেকে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসতে হয়। এই বছর তাদের কষ্ট অনেক কমে যাবে। সেই উত্তর বঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের কষ্ট করে সিলেট আসতে হবে না। তারা কাছাকাছি যশোর ক্যাম্পাসেই পরীক্ষা দিতে পারবে। ঠিক সেরকম সিলেট এলাকার কোনো ছাত্রছাত্রী যদি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়, তাকে আর কষ্ট করে যশোর যেতে হবে না। তারা সিলেট বসেই ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে। একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো বিভাগের জন্য বিবেচিত হতে পারবে।

    আমাদের এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নভেম্বরের শেষে (৩০ নভেম্বর)। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আমাদের তরুণ শিক্ষকেরা সবকিছু গুছিয়ে রেখেছেন। আমরা ইচ্ছে করলেই নেটে দেখতে পারি- কত জন এখন পর্যন্ত এই দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরীক্ষা দিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হতে এখনো কয়েক সপ্তাহ বাকি। এর মাঝে আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রতি দশজনের মাঝে একজন ঠিক করছে তারা যশোর বসে সিলেটের জন্যে কিংবা সিলেটে বসে যশোরের জন্যে ভর্তি পরীক্ষা দেবে। যার অর্থ ভর্তি পরীক্ষার সময় বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী আর তাদের অভিভাবকদের দেশের এক মাথা থেকে অন্য মাথায়, না ঘুমিয়ে না খেয়ে না বিশ্রাম নিয়ে আসতে হবে না। ভবিষ্যতে যদি আমাদের এই উদ্যোগের সাথে আরও বিশ্ববিদ্যালয় যোগ দেয় তাহলে কী চমৎকার একটা ঘটনাই না ঘটবে।

    ২.

    আমাদের বিশ্বাস, আমরা যে উদ্যোগটি নিয়েছি সেটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলে যে একটি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভোগান্তি কমানো সম্ভব, সেটি হয়তো এবারে প্রমাণ করা যাবে। অবশ্য এটি নতুন করে প্রমাণ করার কিছু নেই, মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় বহুদিন থেকে এটি করা হচ্ছে। শুধু মেডিকেল কলেজের জন্য এটি করা হয় তা নয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিবছর সারা দেশের অসংখ্য কলেজে তিন চার লক্ষ ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি পরীক্ষা নেয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা একবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তখন আমি সরাসরি নিজের চোখে এই বিশাল কর্মযজ্ঞটি দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। দীর্ঘদিন থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষতার সাথে এই পরীক্ষাটি চালিয়ে আসছে। যার অর্থ বাংলাদেশের সব কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি ভর্তি পরীক্ষা নিতে হলে যে কাজগুলো করতে হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নীরবে প্রতিবছর সে কাজগুলো করে আসছে। অথচ মজার ব্যাপার হলো, আমাদের দেশের সংবাদ মাধ্যম কখনোই এই বিশাল প্রক্রিয়াটি দেশের মানুষের নজরে আনেনি। কোনো একটা অজ্ঞাত কারণে আমাদের দেশের সংবাদ মাধ্যম খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতিবাচক খবরগুলো বের করে সেটা ফলাও করে প্রচার করতে পছন্দ করে। তাদের সত্যিকারের ইতিবাচক সংবাদটিও কাউকে জানাতে আগ্রহী হয় না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, দেশের হাই-ফাই ইউনিভার্সিটির হাই-ফাই গ্র্যাজুয়েটদের প্রায় সবাই কিন্তু দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। দেশটি চালাচ্ছে কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু গ্র্যাজুয়েটরা। অথচ সংবাদ মাধ্যমের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কোনো সমবেদনা নেই, কোনো মমতা নেই। আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশাল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। দেশের সরকার যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটু গুরুত্ব দিয়ে তাদের সমস্যাগুলো মিটিয়ে দিতে আগ্রহী হত, তাহলে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর নয়, আমাদের নিজের দেশের অনেক বড় উপকার হত!

    ৩.

    বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়া মানেই সব সমস্যার সমাধান নয়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অল্প কিছু আসন, পরীক্ষার্থী অসংখ্য। তাই বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই আসলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না। জিপিএ ফাইভ বা গোল্ডেন ফাইভ পাওয়া অনেক ছাত্রছাত্রী যখন আবিস্কার করে ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় তাদের নাম নেই, তখন তারা একটা অনেক বড় ধাক্কা খায়। যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে তারা এতদিন লেখাপড়া করে এসেছে, ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে এসেছে, হঠাৎ করে তাদের আত্মবিশ্বাস ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়, স্বপ্ন খান খান হয়ে যায়। আমি এই ছাত্রছাত্রীদের বলতে চাই, সবসময়ই কিন্তু এই সমস্যার জন্য তারা নিজেরা দায়ী নয়। এই দেশের অনেক নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নই কিন্তু খুব নিম্নমানের। অনেক সময়ই মেধাতালিকায় ভালো করা আর লটারীতে নাম ওঠার মাঝে বড় কোনো পার্থক্য নেই। হাইকোর্ট থেকে একবার আমাকে খুব বড় কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে মতামত দেওয়ার জন্য ডেকেছিল। আমার তখন সেই ইউনিটের প্রশ্নগুলো দেখার সুযোগ হয়েছিল, আইনজীবীরা কোন প্রশ্নটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে সেটা খুঁজে খুঁজে বের করে দাখিল করেছিলেন এবং আমি এক ধরণের আতঙ্ক নিয়ে আবিস্কার করেছিলাম সেই ভর্তি পরীক্ষার প্রতিটি প্রশ্নই কোনো না কোনো গাইড বই থেকে নেয়া!

    কাজেই ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকায় ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের নাম খুঁজে না পেলে তারা যেন মন খারাপ না করে, নিজের উপর বিশ্বাস যেন না হারায়। সবসময়ই সেটি মেধার অভাব নয়, অনেক সময় সেটি সঠিক গাইড বই মুখস্ত করার ইচ্ছের অভাবও হতে পারে! এই দেশে যে ভর্তি কোচিংয়ের বিশাল একটা রমরমা ব্যবসা হতে থাকে, তার একমাত্র কারণ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মুখস্ত নির্ভর গাইড বইয়ের প্রশ্ন!

    ৪.

    আমি মনে করি, এখন আমাদের সময় হয়েছে অন্তত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের সত্যিকারের সম্মিলিত একটি ভর্তি পরীক্ষা উপহার দেওয়ার। নিঃসন্দেহে তার আগে অনেকগুলো বাধা পার হয়ে আসতে হবে। কিছু কিছু বাধা হয়তো বেশ জটিল, মনে হতে পারে প্রায় দুঃসাধ্য।

    কিন্তু এই দেশের নতুন প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আমরা যদি সিদ্ধান্তটি নিয়ে নিই, তাহলে এই দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক মিলে নিশ্চয়ই সব বাধা অতিক্রম করতে পারব। কিন্তু সিদ্ধান্তটি নিতে হবে প্রথম।

    যদি সেই সিদ্ধান্তটি নিতে না পারি, তাহলে নতুন প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। আর সংবাদ মাধ্যম যদি ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আমাদের ব্যাংক ব্যালেন্স কতটুকু বেড়ে যায়, সেই তথ্যটি প্রকাশ করে দেয় তাহলে আমরা দেশের মানুষের সামনে লজ্জায় মুখও দেখাতে পারব না!

    আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে আমরা কী চাই।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }