Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প539 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    একজন অনয়ের গল্প

    ০১.

    ঘুম থেকে উঠেই আমার মনে পড়ল, আজকের দিনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। সেটা স্বচক্ষে দেখার জন্য আমার সকাল সাড়ে এগারোটার সময় একটা জায়গায় পৌঁছাতে হবে। ঢাকা শহরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে কতটুকু সময় লাগবে তার কোনো বাধা-ধরা নিয়ম নেই। এ সম্পর্কে একজন একটা থিওরি দিয়েছে, সেটা এরকম- ঢাকা শহরে গাড়ি করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে সময় লাগে তিন ঘণ্টা। রিকশায় গেলে দুই ঘণ্টা আর হেঁটে গেলে সময়টাকে এক ঘণ্টায় নামিয়ে আনা যায়।

    আমি গাড়ি করে যাব, তাই আমার তিন ঘণ্টা হাতে নিয়ে বের হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু আমি আশাবাদী মানুষ, তাই দেড় ঘণ্টা সময় নিয়েই বের হয়ে গেলাম। আমার ভাগ্য ভালো, পথে নানারকম ছোট বড় মাঝারি সরল এবং জটিল ট্রাফিক জ্যাম অত্রিক্রম করে আমি ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম।

    আমার গন্তব্য ছিল সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ হাই স্কুল। আমি আগে কখনও আসিনি কিন্তু জায়গাটা খোঁজে পেতে সেরকম সমস্যা হলো না। পৌঁছে দেখি অন্যরা সবাই চলে এসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। যারা একটু দূর থেকে এসেছে তাদের কেউ কেউ ভোর সাতটায় রওনা দিয়েছে, তারা সবাই এই ঘটনাটি নিজের চোখে দেখতে চায়।

    আমি পৌঁছানো মাত্রই সেখানে একটা উত্তেজনা শুরু হলো। কারণ আমি জানতে পারলাম, আমি নাকি প্রধান অতিথি। (আমাদের দেশের এই প্রধান অতিথি এবং অ-প্রধান বা নগণ্য অতিথির কালচারটা আমি ভালো করে বুঝতে পারি না। আশা করছি, ধীরে ধীরে এটা উঠে যাবে। এক সময় সব অতিথিই সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরে নেওয়া হবে।) আমাকে ঢাউস একটা ফুলের তোড়া দেওয়া হলো এবং আট দশ বছরের অনেক ছেলেরা আমাকে ঘিরে ধরলো। তাদের হাতে ছোট বড় মাঝারি কাগজের টুকরো। কিছু কিছু কাগজের টুকরোর অবস্থা রীতিমত শোচনীয়- মনে হয়, রাস্তা থেকে তুলে এনেছে! সবারই অটোগ্রাফের দরকার, যাদের হাতে কাগজ নেই তারা তাদের হাতটাই বাড়িয়ে দিল। সরাসরি হাতের তালুতে অটোগ্রাফ দিতে হবে। (এটি নতুন পদ্ধতি এবং খুব দ্রুত জনপ্রিয় হতে শরু করেছে!) আমি বাচ্চাগুলোর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, আগে কাজটা করতে এসেছি সেটা সেরে ফেলি, তারপর সবাইকে অটোগ্রাফ দেওয়া যাবে। আমি তাদের কথা দিলাম, তাদের সবাইকে অটোগ্রাফ না দিয়ে আমি যাব না।

    ছোট বাচ্চারা মোটেও রাজনৈতিক নেতাদের মতো না। তারা আমার কথা বিশ্বাস করে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ছোটাছুটি শুরু করল। এই বয়সী বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি-হুটোপুটি থেকে সুন্দর দৃশ্য খুব বেশি নেই।

    আমি তখন যে কাজটি করতে এসেছি, সেই কাজটি করতে এগিয়ে গেলাম। আমার মনে হয়, আমি কী কাজ করতে এসেছি, এখন সেটি বলার সময় হয়েছে।

    এই স্কুলে অনয় নামে একটি ছোট ছেলে লেখাপড়া করে। অন্য বাচ্চাদের মতোই লেখাপড়ায় আগ্রহ কিন্তু হঠাৎ করে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তার কারণ এই ছেলেটি অন্য দশটি ছেলের মতো নিজের পায়ে ছোটাছুটি করতে পারে না, তাকে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত নিচের তলায় ক্লাশরুম থাকায় তার কোনো সমস্যা হয়নি। সিক্সে ওঠার পর ক্লাসরুম দোতলায়, হঠাৎ করে তার ক্লাশে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। যাদের এরকম ছেলেমেয়ে আছে এবং যারা তাদের সেই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে চান, তারা সবাই এই কাহিনীর সাথে পরিচিত। হঠাৎ করে আবিষ্কার করেন, শুধু ক্লাশরুম পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না বলে একদিন তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।

    যখন এই দেশের শিক্ষানীতি তৈরি করা হয়, তখন অনেকের সাথে আমিও সেই শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্য ছিলাম। আমরা সবাই মিলে খুব আগ্রহ এবং উৎসাহ নিয়ে এই শিক্ষানীতিতে একীভূত (Inclusive) শিক্ষা নামে একটা শব্দ ঢুকিয়েছিলাম। যার অর্থ এই দেশের সব ধরণের ছেলেমেয়ে একই সাথে পড়াশোনা করতে পারবে। শারীরিক প্রতিবন্ধী নামে একটা ভয়ঙ্কর শব্দ আবিষ্কার করে বিশেষ ধরণের ছেলেমেয়েদের শরীরে এই সিল মেরে দিয়ে আমরা তাদেরকে আলাদা স্কুলে পাঠিয়ে দিতাম। এই শিক্ষানীতি সেই প্রক্রিয়াটিকে বাতিল করে সবার জন্যই একই ধরণের শিক্ষার ব্যবস্থাটি চালু করে দিয়েছিল। আমি যতদূর জানি, এ ব্যাপারে একটা আইনও আছে। কিন্তু সেই আইনের অবস্থা ট্রাফিক আইনের মতো, কেউ সেটা মানে না। যদি কোনো অসহায় বাবা-মা হুইল চেয়ারে আটকে থাকা তার ছেলে কিংবা মেয়ের লেখাপড়ার জন্য এই আইনটির কথা মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, তখন কোনো লাভ হয় না। ‘উটকো একটা ঝামেলা’ ঘাড়ে যেন নিতে না হয় তার জন্য তারা নানারকম ফন্দি-ফিকির বের করেন। ভর্তি করার আগে তাদের টেস্ট নেওয়া হয়, সেই টেস্টে তাদের ফেল করিয়ে দেওয়া হয়। এই গল্পগুলো আমি হুইল চেয়ারে চলাফেরা করে সেরকম ছেলেমেয়ের বাবা-মায়ের মুখে শুনেছি।

    সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ হাই স্কুলের ছাত্র অনয়ের কপালেও এরকম একটা কিছু ঘটতে শুরু করল। এতোদিন একতলায় ক্লাশ হয়েছে কোনো সমস্যা হয়নি। দোতলায় ক্লাশটা চলে যাওয়ার পর অনয় আর তার বাবা-মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। ঠিক তখন একটা চমৎকার ঘটনা ঘটল। বি-স্ক্যান (B-SCAN: Bangladeshi System Change Advocacy Network) নামের একটা সংগঠন এই ব্যাপারটা জানতে পারল।

    আমার মনে হয়, বি-স্ক্যান সম্পর্কে দুই একটা কথা বলা দরকার। অনেকদিন আগে সাবরিনা সুলতানা নামে একটা মেয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল। সেই এই সংগঠনটি গড়ে তুলেছে। অনেক স্বেচ্ছাসেবক এই সংগঠনে কাজ করে। যারা শারীরিক প্রতিবন্ধী তাদের অধিকার সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করাই হচ্ছে এই সংগঠটার মূল কাজ। সাবরিনা খুব সুন্দর লিখতে পারে, ব্লগে সে অসাধারণ কিছু লেখা লিখে অনেক তরুণদের এই ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলেছে। আমার প্রথম যেদিন সাবরিনার সঙ্গে দেখা হলো, আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম। কারণ সে হুইল চেয়ারে আটকা পড়ে আছে। একটা হাতের এক দুইটা আঙুল ছাড়া আর কিছুই সে ব্যবহার করতে পারে না। আমি আমার সমস্ত শরীর হাত-পা ব্যবহার করে যেটুকু কাজ করতে পারি, সে শুধু এক দুটি আঙুল ব্যবহার করেই তার থেকে বেশি কাজ করতে পারে দেখে ‘প্রতিবন্ধী’ মানুষ সম্পর্কে আমার ধারণাই পাল্টে গিয়েছে। আমি এখন প্রতিবন্ধী বলে এই কুৎসিত শব্দটি ব্যবহার করি না। আমার কাছে তারা বিশেষ (Spacial) মানুষ।

    সাবরিনার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর আমি তাকে আমার ‘নেতা’ হিসেবে মেনে নিয়েছি। সে আমাকে কিছু একটা করতে বললে আমি সেটা করার চেষ্টা করি। সে আমাকে আজ সাড়ে এগারোটায় এই স্কুলে আসতে বলেছে। আমি তাই চলে এসেছি।

    সাবরিনা চট্টগ্রাম থাকে। তার জন্য ঢাকা আসা রীতিমত একটা বিশাল অ্যাডভেঞ্চার। তার সবকিছুর জন্য এই অ্যাডভেঞ্চার করতে হয় না। কারণ বি-স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব ঢাকা থাকে। সালমা-সাবরিনা একটা অসাধারণ জুটি, তাদের কাজের কোনো তুলনা নেই। এই স্কুলের ছেলেটাকে কীভাবে লেখাপড়া করার সুযোগ দেওয়া যায়, সেটা নিয়ে তারা চিন্তা ভাবনা করতে লাগল এবং তার যে সমাধান বের করল, তার কোনো তুলনা নেই। ঠিক করা হলো স্কুলের দোতলায় ওঠার জন্য একটা লিফট বসানো হবে।

    আমি জানি, সবাই চমকে উঠেছে। একটা স্কুলে লিফট বসানো নিশ্চয়ই সোজা কথা নয়, এটা তো লক্ষ লক্ষ টাকা খরচের ব্যাপার। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশের সাধারণ একটা স্কুলে একটা লিফট বসানোর সুযোগ কোথায়? কিন্তু এসব কিছুই সমস্যা নয়। কারণ যে লিফটটি বসানো হবে, সেটা ম্যানুয়েল লিফট। এটা চালাতে ইলেকট্রিসিটি লাগবে না, একজন হাত দিয়ে হ্যান্ডেলের মতো একটা জিনিষ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উপরে তুলে নিতে পারবে, নিচে নামিয়ে আনতে পারবে। যিনি সেই ম্যানুয়েল লিফট ডিজাইন করেছেন, তার নাম মহিউদ্দিন বাবুল। এটি তার প্রথম ডিজাইন নয়। সাভারের সিআরপি এর জন্য তিনি আগেও এটা তৈরি করেছেন। এই লিফটটি বসানোর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিয়েছেন, অনয়ের বাবা ছেলের লেখাপড়ার জন্য খরচটা বহন করেছেন। আজকে সেই ম্যানুয়েল লিফটটি উদ্বোধন করা হবে এবং আমি সেটা নিজের চোখে দেখার জন্য ছুটে এসেছি।

    মহিউদ্দিন বাবুল নামে যিনি এই লিফট তৈরি করেছেন তার সঙ্গে পরিচয় হলো। ঘটনাক্রমে তিনিও হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। শৈশবে গাছ থেকে পড়ে মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছিলেন। সাবরিনা-সালমা জুটি চলে এসেছে। কিছুক্ষণের মাঝে অনয় নামের যে শিশুটির জন্য দজ্ঞযজ্ঞ, সেও চলে এলো। এখন বাকি আছে এই ম্যানুয়েল লিফটটা উদ্বোধন করা।

    আমরা সবাই মিলে রওনা দিলাম। নিচতলায় স্কুলের বারান্দায় ওঠার জন্য এবং একটা বারান্দা থেকে অন্য বারান্দায় যাওয়ার জন্য দুটো র্যা ম্প (Ramp –ঢালু পথ) তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো তৈরি করে দিয়েছে কানাডার টরন্টো শহরের একটি সংগঠন। আমাদের সাথে এই স্কুলের ছোট ছোট ছেলেদের বিশাল একটা বাহিনী, তাদের উৎসাহের কোনো সীমা নেই।

    লিফটের সামনে হাজির হওয়ার পর আমি আবিষ্কার করলাম, আমার জন্য ছোট একটা বিষ্ময় অপেক্ষা করছে। ফিতা কেটে আমাকেই এই লিফটের উদ্বোধন করতে হবে। সালমা-সাবরিনার কিংবা লিফট ডিজাইনার মহিউদ্দিন বাবুলের এটি উদ্বোধন করে দেওয়ার অধিকার আমার থেকে একশত গুণ বেশি, কিন্তু কিছু করার নেই। ঘটনাটি সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে। আমি এক ধরণের আনন্দ মেশানো বিষ্ময় নিয়ে আবিষ্কার করলাম অনেক সাংবাদিক, টেলিভিশনের ক্রু চলে এসেছেন। এই অসাধারণ ঘটনাটি আমাদের সাথে সাথে দেশের অনেক মানুষ দেখতে পাবে!

    অনয় আর হেডমাস্টারকে নিয়ে আমি লিফটের ভেতর ঢুকে গেলাম, সামনে একটা ফিতা লাগানো হয়েছে। সেটা কেটে দেওয়ার পর একটা গগন বিদারী চিৎকার দেওয়া হলো। যে সকল অনুষ্ঠানে ছোট ছোট বাচ্চা থাকে, সেখানে অত্যন্ত চমকপ্রদ গগন বিদারী চিৎকার দেওয়া সম্ভব।

    উদ্বোধনের পর আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো, অনয়কে নিয়ে এই লিফটে করে দোতলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি জবুথবু ধরণের মানুষ, ভুল কিছু করে ফেলে মাঝ পথে আটকা পড়ে যাই কী না কিংবা উপর থেকে নিচে ফেলে দেই কী না, সেটা নিয়ে নিজের ভেতর দুর্ভাবনা ছিল। তাই আরেকজন সঙ্গে ওঠে গেলেন। তারপর হ্যান্ডেলটা ঘোরানো শুরু করতেই এই ম্যানুয়েল লিফটটা তরতর করে উপরে ওঠতে শুরু করল। দেখতে দেখতে আমরা দোতলায় ওঠে গেলাম। অন্য বাচ্চারা এর মাঝে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় ওঠে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সবাই মিলে একটা আনন্দোল্লাসের মাঝে অনয়ের হুইল চেয়ারটা ঠেলে তার ক্লাসরুমে নিয়ে যাওয়া হলো।

    আমার হিসেবে বাংলাদেশে একটা ইতিহাস রচিত হলো।

    ০২.

    আমি জানি অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন উশখুশ করছে, এই ম্যানুয়েল লিফটটা তৈরি করতে কত খরচ হয়েছে? আমি জানি শুনে অনেকেই অবাক হয়ে যাবে, একটা ভালো ল্যাপটপ কিনতে যত টাকা খরচ হয়, এই লিফটটা তৈরি করতে সেরকম খরচ পড়েছে- মাত্র নব্বই হাজার টাকা। যার অর্থ একটা স্কুলে এরকম একটা লিফট বসানোর জন্য কাউকে বিদেশি অনুদানের জন্য বসে থাকতে হবে না। বড় বড় করপোরেশনের কাছে হাত পাততে হবে । কয়েকজন মিলেই এটা তৈরি করে ফেলতে পারবে। আমার ধারণা মোটামুটি বড় একটা স্কুলের ছেলেমেয়েরা নিজেরাই চাঁদা তুলে তাদের স্কুলে এরকম ম্যানুয়েল লিফট বসিয়ে ফেলতে পারবে।

    সবাই নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছে, এই ঘটনাটি নিয়ে আমি খুবই উত্তেজিত। হওয়ার কারণও আছে। পৃথিবীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী যে কোনো দেশের শতকরা পনেরো ভাগ হচ্ছে কোনো না কোনো ধরণের ‘প্রতিবন্ধী’ (কুৎসিত শব্দটা আবার ব্যবহার করতে হলো!), তার মাঝে একটা অংশকে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। যারা হুইল চেয়ারে চলাফেরা করে, তারা যেন যে কোনো বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করতে পারে, বাথরুমে যেতে পারে,অর্থাৎ তাদের প্রবেশ গম্যতা থাকে, তার জন্য দেশে আইন আছে। অন্য অনেক আইনের মতো এই আইনটিও এখনও সেভাবে মানা শুরু হয়নি। আমরা আশা করছি, সেটা শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু এর মাঝে সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ হাই স্কুলের ঘটনাটি আমাদের নতুন একটা আশা দিয়েছে। হুইল চেয়ারে চলাফেরা করে এরকম অসংখ্য ছেলেমেয়েকে এই দেশের অনেক স্কুল ফিরিয়ে দিয়েছে। এখন তাদের আর ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এরকম একটা খবর পেলে বি-স্ক্যানের মতো সংগঠনের সাথে সাথে সবাই মিলে সেই স্কুলের ওপর চড়াও হতে পারবে, তাদেরকে বাধ্য করা যেতে পারে একটা ছোট শিশুর লেখাপড়া যেন তারা নিশ্চিত করে। এরকম একটা শিশুকে স্কুলে নেওয়া হলে কারো কারো একটু বাড়ি ‘ঝামেলা’ হতে পারে, কিন্তু আমি সবাইকে বলে দিতে পারি, এই ছোট একটুখানি ঝামেলা সহ্য করার পরিবর্তে সবাই যে আনন্দটুকু পাবে, সেই আনন্দের কোনো তুলনা নেই। যারা আমার কথা বিশ্বাস করে না, তারা চেষ্টা করে দেখতে পারে।

    ০৩.

    এই প্রসঙ্গে শেষ কথাটুকু বলে দেওয়া যাক। পৃথিবীতে যতোভাবে আনন্দ পাওয়া সম্ভব, তার মাঝে সবচেয়ে তীব্রভাবে সেটি পাওয়া যায় যখন অন্যের জন্য কিছু একটা করা হয়। সিদ্বেশ্বরী বয়েজ হাই স্কুলে গিয়ে আমি সেটা নিজের চোখে দেখেছি। বি-স্ক্যানের স্বেচ্ছাসেবকেরা সেখানে হাজির ছিল, তাদের আনন্দের কোনো সীমা-পরিসীমা ছিল না।

    আমি দেশের তরুণদের এই কথাটি মনে করিয়ে দিতে চাই, শুধু নিজের জন্য বেঁচে থেকে কোনো আনন্দ নেই, বেঁচে থাকার পরিপূর্ণ আনন্দ পেতে হলে অন্যের জন্য কিছু একটা করতে হয়। তাই যারা বেঁচে থাকার পরিপূর্ণ আনন্দটি কী, সেটা জানতে চায় তাদেরকে বি-স্ক্যান বা এরকম অন্য কোনো একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে কিছু একটা করার জন্য অনুরোধ করছি।

    আমি এটা নিশ্চিতভাবে জানি, আমি অনয়ের মুখের হাসিটি নিজের চোখে দেখেছি।

    ০৪.

    ফিরে আসার আগে আমি সব শিশুদের অটোগ্রাফ দিয়ে এসেছিলাম। তাদেরকে যে কথা দিয়েছিলাম, সেই কথাটি রেখে এসেছিলাম!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }