Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প539 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    দশ হাজার কোটি নিউরন

    সপ্তাহ দুয়েক আগে একজন লিখে জানিয়েছে চারপাশের সবকিছু দেখে তার খুব মন খারাপ– আমি কি এমন কিছু লিখতে পারি যেটা পড়ে তার মন ভালো হয়ে যাবে। চিঠিটি পড়ে আমি একটু দুভার্বনায় পড়ে গেলাম; কারণ ঠিক তখন এই দেশের লেখাপড়া নিয়ে আমি খুব দুঃখের একটা ‘গল্প’ লিখেছি। সেটা লিখেছি রেগে-মেগে, লেখা শেষ করে পড়ে আমার নিজেরই মন খারাপ হয়ে গেছে। আমার নিজের জন্যেই এমন কিছু একটা লেখা দরকার যেটা আমাকে ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করবে।

    সেটা করার জন্যে আমি সব সময়েই এই দেশের ছেলেমেয়েদের কাছে ফিরে যাই। আমাদের দেশের লেখকরা ছেলেমেয়েদের জন্যে লিখতে চান না, আমি লিখি। আমার খুব সৌভাগ্য এই দেশের ছেলেমেয়েরা আমার ছোটখাট লেখালেখি অনেক বড়সড় ভালোবাসা দিয়ে গ্রহণ করেছে। আমার জন্যে এই ভালোবাসা প্রকাশ করতে তারা কার্পণ্য করে না।

    যখন বিজ্ঞান কংগ্রেস, গণিত বা পদার্থ বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে যাই, আমাকে যখন স্টেজে তুলে দেওয়া হয়, সেই স্টেজে বসে আমি যখন সামনে বসে থাকা শিশু-কিশোরদের বড় বড় উজ্জ্বল চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি, মুহূর্তে আমার মনের ভেতরকার সব দুর্ভাবনা দূর হয়ে যায়। আমাদের কী সৌভাগ্য আমাদের দেশে এত চমৎকার একটা নূতন প্রজন্ম বড় হচ্ছে।

    আমাদের দেশে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি– কিংবা কে জানে হয়তো আরও বেশি হতে পারে। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে ছেলে-বুড়ো সব মিলিয়েও তিন কোটি দূরে থাকুক, এক কোটি মানুষও নেই। আমাদের এই তিন কোটি ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ছে, তারা যদি শুধু ঠিক করে লেখাপড়া করে তাহলে এই দেশে কী সাংঘাতিক একটা ব্যাপার ঘটে যাবে কেউ কল্পনা করতে পারবে?

    এই সহস্রাব্দের শুরুতে পৃথিবীর জ্ঞানী-গুণী মানুষেরা সম্পদের একটা নূতন সংজ্ঞা তৈরি করেছেন, তারা বলেছেন জ্ঞান হল সম্পদ। তার অর্থ একটা বাচ্চা যখন ঘরের মাঝে হ্যারিকেনের আলো জ্বালিয়ে একটা অংক করে তখন আমার দেশের সম্পদ একটুখানি বেড়ে যায়। যখন একটি কিশোর বসে বসে এক পাতা ইংরেজি অনুবাদ করে, আমার দেশের সম্পদ বেড়ে যায়। যখন একজন কিশোরী রাতের আঁধারে আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদটা কেমন করে বড় হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করে তখন আমার দেশের সম্পদ বেড়ে যায়।

    মাটির নিচে খনিজ সম্পদ তৈরি হতে কোটি কোাটি বছর লাগে, কলকারখানায় শিল্প-সম্পদ তৈরি করতে যুগ যুগ লেগে যায়। কিন্তু লেখাপড়া করে জ্ঞানের সম্পদ তৈরি হয় মূহূর্তে মূহূর্তে।

    আমাদের দেশের লেখাপড়া নিয়ে আমার অভিযোগের শেষ নেই সেটা এখন সবাই জানে, কিন্তু আজকে আমি অভিযোগ করব না। আজকে আমি শুধু সবাইকে মনে করিয়ে দেব এই দেশের তিন কোটি বাচ্চা প্রতি বছর নূতন বই হাতে নিয়ে লেখাপড়া করতে শুরু করে– শুধুমাত্র এই বিষয়টি চিন্তা করেই আমাদের সবার মনের সব দুশ্চিন্তা, সব দুর্ভাবনা দূর হয়ে যাবার কথা।

    লেখাপড়া বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে কোনো একটি শিশু বই সামনে নিয়ে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে সুর করে পড়ছে। শুধু তাই নয়, ‘পড়া মুখস্ত’ করা বলে একটা কথা মোটামুটি সবাই গ্রহণ করেই নিয়েছে। কিন্তু মুখস্ত করাই যে লেখাপড়া নয়, বোঝা, ব্যবহার করা কিংবা নিজের মত বিশ্লেষণ করাও যে লেখাপড়া করার একটা অংশ, সেটা মাত্র অল্প কয়দিন হল আমরা সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। যে জিনিসটা এখনও আমরা কাউকে বোঝাতে শুরু করিনি কিংবা বোঝাতে পারিনি সেটা হচ্ছে, শুধুমাত্র জিপিএ ফাইভ পাওয়া মোটেই লেখাপড়া নয়।

    আমাদের অনেক ধরনের বুদ্ধিমত্তা আছে, আমরা শুধু এক ধরনের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে মাথা ঘামাই, সেটা হচ্ছে ক্লাসরুমের লেখাপড়া করে পরীক্ষার হলে সেটা উগড়ে দেওয়ার বুদ্ধিমত্তা! কিন্তু আমরা সবাই জানি, লেখাপড়ার বাইরে যে বুদ্ধিমত্তাগুলো আছে সেগুলো কিন্তু লেখাপড়ার মতোই, এমনকি অনেক সময় লেখাপড়ার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

    আমরা যারা শিক্ষকতা করি তারা সবাই দেখেছি আমাদের ক্লাসে যে ছেলেটি বা মেয়েটি সবচেয়ে তুখোড়, সবচেয়ে বুদ্ধিমান সে কিন্তু অনেক সময়েই পরীক্ষায় সে রকম ভালো করতে পারে না। দোষটি মোটেও তার নয়, দোষ আমাদের, আমরা ঠিক করে পরীক্ষা নিতে পারি না। সারা পৃথিবীতেই মনে হয় এই সমস্যাটা আছে, একজনের বুদ্ধিমত্তা যাচাই করার পদ্ধতি মনে হয় এখনও ঠিক করে আবিষ্কার করা যায়নি।

    যখন আমাদের ছাত্রছাত্রীরা বাইরের বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে চায় তখন আমাদের তাদের সম্পর্কে লিখতে হয়। আমি দেখেছি সেই ফর্মগুলোতে প্রায় সব সময়েই আমাদের একটা প্রশ্ন করা হয়, “এই ছেলেটির পরীক্ষার ফলাফল কি তার সঠিক সেবা যাচাই করতে পেরেছে?” আমাকে প্রায় সময়েই লিখতে হয়, ‘‘না, পারেনি। পরীক্ষার ফলাফল দেখলে মনে হবে সে বুঝি খুবই সাধারণ– কিন্তু বিশ্বাস কর, এই ছেলেছি বা মেয়েটি আসলে কিন্তু অসাধারণ!’’

    বুদ্ধিমত্তা অনেক পরের ব্যাপার, আমরা কিন্তু জিপিএ ফাইভ নামের একটা কানাগলি থেকেই বের হতে পারিনি! আমরা ধরেই নিয়েছি, যে কোনো মূল্যে আমাদের ছেলেমেয়েদের জিপিএ ফাইভ পেতে হবে– দরকার হলে প্রশ্ন ফাঁস করেও। কিন্তু যে ছেলেটি বা মেয়েটি প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাবার পরও সেই প্রশ্ন না দেখে পরীক্ষা দিয়ে ভালো করেছে সে কি অন্য সবার থেকে আলাদা নয়? তার বুদ্ধিমত্তাটা কি আমরা আলাদাভাবে ধরতে পেরেছি? পারিনি! কিংবা যে ছেলেটি বা মেয়েটি ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন দেখার সুযোগ পেয়েও দেখেনি– সে জন্যে পরীক্ষা তত ভালো হয়নি– তার ভেতরে যে এক ধরনের অন্যরকম শক্তি রয়েছে আমরা কি কখনও সেটা যাচাই করে দেখেছি? সেটাও দেখিনি।

    প্রতন্ত গ্রামের দরিদ্র একটা পরিবারের একটা মেয়ে যখন সারাদিন তার ছোট ভাইকে কোলে করে মানুষ করে, তার ফাঁকে ফাঁকে লেখাপড়া করে পরীক্ষায় টেনেটুনে পাশ করেছে, আমরা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব মেয়েটির বুদ্ধিমত্তা কম? শহরের স্বচ্ছল পরিবারের একটি মেয়ে যে গাড়ি করে স্কুলে যায়, ফেসবুক ইন্টারনেট করে সময় কাটায়, সুন্দর করে ইংরেজি বলে, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে– আমরা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব তার বুদ্ধিমত্তা গ্রামের মেয়েটির থেকে বেশি?

    আসলে সেটি পারব না। কাজেই আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে, শুধুমাত্র পরীক্ষার রেজাল্ট কিংবা জিপিএ ফাইভ দেখে একজন ছেলে বা মেয়ের বুদ্ধিমত্তা যাচাই করাটা নেহায়েতই বোকামি। আমাদের চোখ কান খোলা রেখে দেখতে হবে একটা শিশুর মাঝে আর কোন কোন দিকে তার বিচিত্র বুদ্ধিমত্তা আছে। আমাদের নিজেদের ভেতর যদি বিন্দুমাত্র বুদ্ধিমত্তা থাকে তাহলে আমরা কখনও-ই শুধুমাত্র পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে একটা ছেলে বা মেয়েকে যাচাই করে ফেলার চেষ্টা করব না!

    আমার সেই সব ছেলেমেয়েদের জন্যে খুব মায়া হয় যাদের বাবা মায়েরা শুধুমাত্র পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পাওয়ানোর প্রতিযোগিতায় নিজেদের সন্তানদের ঠেলে দিয়ে তাদের শৈশবের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছেন। তাদের থেকে বড় দুর্ভাগা মনে হয় আর কেউ নেই!

    ২.

    মাও সে তুংয়ের একটা খুব বিখ্যাত উক্তি আছে। উক্তিটি হচ্ছে এ রকম, প্রত্যেকটা মানুষ একটা মুখ নিয়ে জন্মায় কিন্তু সেই মুখে অন্ন জোগানোর জন্যে তার রয়েছে দুই দুইটি হাত! যার অর্থ, এই পৃথিবীতে কোনো মানুষই অসহায় নয়– খেটে খাওয়ার জন্যে সবারই দুটি হাত রয়েছে, কাস্তে কিংবা কুঠার ধরে সেই হাত তার মুখে অন্ন জোগাবে।

    আমি মাও সে তুং নই, তাই আমার উক্তিকে কেউ গুরুত্ব দেবে না, কিন্তু আমাকে সুযোগ দিলে আমি মাও সে তুংয়ের উক্তিটাকে অন্য রকম করে বলতাম। আমার উক্তিটি হত এ রকম– প্রত্যেকটা মানুষ একটি মুখ আর মাত্র দুটি হাত নিয়ে জন্মায়। কিন্তু ভয় পাবার কিছু নেই, কারণ সব মানুষের মাথার মাঝে রয়েছে দশ হাজার কোটি নিউরন!

    যতই দিন যাচ্ছে আমি আমাদের মস্তিকের দশ হাজার কোটি নিউরনকে তত বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে শুরু করেছি। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি তোমার শিক্ষকতা জীবনের কোন অভিজ্ঞতাটুকুকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে কর– আমি বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে বলব, সেটি হচ্ছে একজন মানুষের মাথার ভেতরকার সোয়া কেজি ওজনের মস্তিক নামের রহস্যময় জিনিসটির অসাধারণ ক্ষমতা!

    প্রায় সময়েই আমি অনেক ছেলেমেয়েকে হতাশ হয়ে বলতে শুনি, “আমি আসলে গাধা, আমার মেধা বলতে কিছু নেই”। তাদের অনেকের কথার সত্যতা আছে, পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাওয়ার চেষ্টা করতে করতে এবং পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেতে পেতে তাদের অনেকই আসলে খানিকটা ‘গাধা’ হয়ে গেছে। কিন্তু সত্য কথাটি হচ্ছে, কাউকেই কিন্তু সেটা মেনে নিতে হবে না। আমি এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে আবিষ্কার করেছি যে, কেউ যদি সত্যিকারের আগ্রহ নিয়ে চেষ্টা করে তাহলে কত দ্রুত সে নূতন মানুষ হয়ে যেতে পারে।

    আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিপরীক্ষা নামে একটা ভয়ংকর অমানবিক প্রক্রিয়া ঘটানো হয়, সেই প্রক্রিয়া দিয়ে আমরা ‘মেধাবী’ সিল দিয়ে কিছু ছেলেমেয়েকে ভর্তি করি। তার মাঝেও আবার জনপ্রিয় আর অজনপ্রিয় বিভাগ আছে। যারা জনপ্রিয় বিভাগে ঢুকতে পারে সবাই তাদের দিকে ঈর্ষার দৃষ্টিতে তাকায়। যারা ঢুকতে পারে না তারা গভীর দুঃখে লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাবা মায়ের গালাগাল শুনে।

    অথচ মজার বিষয় হল, আমি খুব পরিষ্কার এবং স্পষ্টভাবে জানি, এই পুরো বিভাজনটি আসলে অর্থহীন। বিজ্ঞানের জন্যে গভীর ভালোবাসা, কিন্তু বাবা মা জোর করে ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার বানানোর জন্যে তাদের সন্তানদের একটা কষ্টের জীবনে ঠেলে দেন। আবার উল্টোটাও সত্যি, যে ছেলেটি অসাধারণ একজন ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ডাক্তার হতে পারত, ভর্তিপরীক্ষায় টিকতে না পেরে সে হয়তো জোর করে অপছন্দের একটা বিভাগে ভর্তি হয়ে অপছন্দের কিছু বিষয় পড়ে সময়টা অকারণে নষ্ট করছে।

    এই মুহূর্তে কম্পিউটার সায়েন্স খুব জনপ্রিয় একটা বিষয়। চাকরি পাবার জন্যে এটা সবসময়েই একটা জনপ্রিয় বিষয় হিসেবে থাকবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগ থেকে পাশ করে ছেলেমেয়েরা অনেকেই নিজেদের সফটওয়ার ফার্ম খুলেছে। মজার বিষয় হচ্ছে, এই সফটওয়ার ফার্মে কিন্তু শুধু কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ছেলেমেয়েরা নয়, অন্যান্য অনেক বিভাগের ছেলেমেয়েরাও আছে সমানভাবে। তারা কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের পাশ করা ছেলেমেয়ে থেকে কোনো অংশে কম নয়– তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমান তালে কাজ করে যাচ্ছে। যার অর্থ পছন্দের বিভাগে ভর্তি হতে না পারলেই একজনের জীবন অর্থহীন হয়ে গেছে মনে করার কোনো কারণ নেই।

    ছেলেমেয়েদের আগ্রহ এবং দেশ কিংবা পৃথিবীর প্রয়োজনের কথা মনে রেখে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা অন্যান্য বিভাগের ছেলেমেয়েদের জন্যে দ্বিতীয় মেজর (Second Major) হিসেবে কম্পিউটার সায়েন্স পড়ার সুযোগ করে দিয়েছি। সত্যি কথা বলতে কী, সব বিভাগেই দ্বিতীয় মেজর নেওয়ার সুযোগ আছে। আমার ধারণা, সত্যিকারের আগ্রহ নিয়ে পড়ালেখা কেমন করে হয় এটি তার একটা চমৎকার উদাহরণ। ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের সব পড়ার পাশাপাশি শুধুমাত্র আগ্রহের জন্যে বাড়তি পড়াশোনা করছে– বিষয়টি দেখলেই এক ধরনের আনন্দ হয়।

    একটা সময় ছিল যখন আমি মেধাবী শব্দটা ব্যবহার করতাম। আমার চারপাশে অনেক ‘মেধাবী’ হয়ে জন্মায়, অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা সত্যিই বুঝি কিছু মানুষকে বেশি মেধা দিয়ে পাঠান। সেই ছাত্রজীবনেই আবিষ্কার করেছিলাম যে, আসলে বাড়তি মেধা বলে কিছু নেই, চারপাশের অনেক মেধাবী মানুষই জীবনযুদ্ধে ঝরে পড়েছে। আবার যাদেরকে নেহায়েতই সাধারণ একজন বলে ভেবেছিলাম, অবাক হয়ে আবিষ্কার করেছি, তারা উৎসাহ, আগ্রহ আর পরিশ্রম করে ‘মেধাবী’ দের পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে।

    সেগুলো দেখে দেখে আজকাল আমার নিজের ডিকশনারি থেকে ‘মেধাবী’ শব্দটা তুলে দিয়ে সেখানে ‘উৎসাহী’ শব্দটা ঢুকিয়েছি। আমি দেখেছি, উৎসাহ থাকলে সবই সম্ভব। সত্যি কথা বলতে কী, আমি আমার পরিচিত জগতের সব মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছি। এক ভাগ হচ্ছে যারা উৎসাহী; অন্য ভাগ হচ্ছে যাদের কিছুতেই উৎসাহ নেই, যাদেরকে ঠেলাঠেলি করে নিয়ে যেতে হয়। উৎসাহীরা পৃথিবীটাকে চালায়, বাকিরা তার সমালোচনা করে!

    আমার চারপাশে অসংখ্য উদাহরণ আছে যেখানে একজন ছেলে বা মেয়ে শুধুমাত্র নিজের উৎসাহটুকু দিয়ে এগিয়ে গেছে। এ রকম মানুষের সাথে কাজ করাতেও আনন্দ। উৎসাহ বিষয়টা ছোঁয়াচেও বটে– একজনের থেকে আরেকজনের মাঝেও সেটা সঞ্চারিত হয়ে যায়।

    আমি পৃথিবীর অনেক বড় বড় স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি দেখেছি। তাদের সুযোগ সুবিধে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি– আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের কিছুই দিতে পারি না, মাঝে মাঝে শুধু একটুখানি উৎসাহ দিই। সেই উৎসাহ ভরসা করেই তারা কত কী করে ফেলে দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই।

    তাই আজকাল সুযোগ পেলেই আমি ছেলেমেয়েদেরকে বলি, তোমরা যেটুকু প্রতিভা বা মেধা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছ সেটুকুতে সন্তুষ্ট থাকার কোনো কারণ নেই। তুমি ইচ্ছে করলেই সেটাকে শতগুণে বাড়িয়ে ফেলতে পারবে। কাজেই আমি মনে করি পৃথিবীতে আসলে প্রতিভাবান বা মেধাবী বলে আলাদা কিছু নেই, যাদের ভেতরে উৎসাহ বেশি আর যারা পরিশ্রম করতে রাজি আছে তারাই হচ্ছে প্রতিভাবান, তারাই হচ্ছে মেধাবী।

    সে জন্যে আমি মাও সে তুংয়ের উক্তিটিতে ‘হাত’ থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিই মস্তিস্কের দশ হাজার কোটি নিউরনকে। দুটি হাত দিয়ে খুব বেশি কিছু করার সুযোগ নেই, কিন্তু মস্তিস্কের দশ হাজার কোটি নিউরন দিয়ে অচিন্ত্যনীয় ম্যাজিক করে ফেলা সম্ভব। দুটি হাত দিয়ে খুব বেশি হলে এক দুইজন মানুষের মুখে অন্ন জোগানো সম্ভব। দশ হাজার কোটি নিউরন দিয়ে লক্ষ মানুষের মুখেও অন্ন জোগানো যেতে পারে!

    ৪.

    আমি জানি আমাদের সমস্যার শেষ নেই। আমি জানি সব সমস্যার সমাধানও চট করে হয়ে যাবে না– আমাদের দীর্ঘদিন এই সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। কিন্তু সেটি নিয়ে হতাশ হবার কিছু নেই, কারণ বাংলাদেশ এখন ধীরে ধীরে নিজের পায়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে।

    আমাদের দেশের খেটে খাওয়া মানুষ তাদের শক্ত দুটি হাত দিয়ে এই দেশকে ধরে রেখেছে। এই দেশের নূতন প্রজন্মকে তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে দশ হাজার কোটি নিউরন নিয়ে!

    জিপিএ ফাইভের অসুস্থ প্রতিযোগিতা, প্রশ্ন ফাঁস, কোচিং, গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য– কোনো কিছুই এই দশ হাজার কোটি নিউরনকে পরাজিত করতে পারবে না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }