Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প539 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    সাদাসিধে কথা

    আজকাল নিজেকে কেমন জানি গাধা-গাধা মনে হয়। প্রতিদিন খুব মনোযোগ দিয়ে কয়েকটা পত্রিকা পড়ি, কিন্তু তবু কিছু বুঝি না। একে-ওকে জিজ্ঞেস করি দেখি, তারাও কিছু বোঝেন না, মাথা চুলকান। দু-একজন মাঝেমধ্যে নিচু গলায় ভেতরের খবর দেওয়ার চেষ্টা করেন, সেগুলো আসলেই ভেতরের খবর নাকি উর্বর মস্তিষ্কেকর তৈরি করা গুজব সেটাও বুঝি না। পত্রিকায় দেখি, হইচই করে বড় বড় রাঘব বোয়াল দুর্বৃত্ত ধরা হয়। কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়, কারও বিরুদ্ধে হয় না। কারও কারও বেলায় চার্জশিট হয়, কারও কারও হয় না। কারও আবার জামিন হয় না, আবার কারও বেলায় একসঙ্গে এক ডজন-হাফ ডজন মামলার জামিন হয়ে যায়। বিচার বিভাগকে আলাদা করা হয়েছে, কিন্তু দেখি সরকার যখন যা চায় বিচার বিভাগ ঠিক তখন তা করে দেয়। টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধার পিঠে লাথি মারলেও কিছু হয় না, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাসের পর মাস জেলে আটকে রাখা হয়। বামঘেঁষা চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের ঝটপট ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হয়, কিন্তু জঙ্গি মৌলবাদী চরমপন্থীদের কখনো ক্রসফায়ারে ফেলা হয় না। দেশের সব প্রতিষ্ঠানের কিছু না কিছু দুর্বৃত্তদের ধরা হয়েছে, কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জোট সরকারের দুর্বৃত্তরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঠিক যখন মাত্র তিন মাস বাকি তখন শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য উপদেষ্টারা সবাইকে ডাকাডাকি করছেন। অথচ গত দুটো বছর আমরা মাথা কুটেছি, কাগজে একটা স্বাক্ষর দিয়েই কত কিছু করে ফেলা যেত, কেউ আমাদের কথা শোনেনি!
    সবকিছু মিলিয়ে আমি কী হতাশ হব না আশান্বিত হব, দুঃখ পাব না রাগ হব তাও বুঝতে পারছি না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে সব সময়ই আশাবাদী মানুষ−আমার সব সময়ই কৌতুকের সেই বাচ্চা ছেলেটির কথা মনে হয়! এই ছেলেটি সব সময়ই সবকিছু নিয়ে এত খুশি হয়ে যেত যে তার বাবা-মা খানিকটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। ছেলেটি যখন বড় হবে, দেখবে জীবন বড় কঠিন, সেখানে পদে পদে বাধা, তখন আশাভঙ্গের কারণে হতাশায় ডুবে যাবে। বাবা-মা তাই ঠিক করল শৈশবেই ছেলেটিকে জীবনের রূঢ় বাস্তবতার কিছু শিক্ষা দিতে হবে। শুরু করল তার ঘরটিতে ঘোড়ার গোবর ফেলে রেখে। এই গোবর পরিষ্ককার করতে করতে ছেলেটির জীবনে নিশ্চয়ই কঠিন জীবনের খানিকটা অভিজ্ঞতা হবে। বাবা-মা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে ঘরের ভেতর গোবর দেখে ছেলেটা কী করে সেটা দেখার জন্য। স্কুল থেকে এসে নিজের ঘরে ঢুকে ঘোড়ার গোবর দেখেই ছেলেটার মুখ আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে যায়। সে আনন্দে চিৎকার করতে করতে সারা বাসায় ছোটাছুটি করতে থাকে। হতভম্ব বাবা-মা তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছে?’ ছেলেটা বলল, ‘আমার ঘরের ভেতর ঘোড়ার গোবর। তার মানে চমৎকার একটা টাট্টু ঘোড়া এই বাসার ভেতরে কোথাও লুকিয়ে আছে।’
    কাজেই আমিও দেশের এখানে-সেখানে ঘোড়ার গোবর দেখেও হতাশ হই না, চোখ খুলে ঘোড়াটাকে খুঁজতে থাকি। মাঝেমধ্যে যখন খুব বিভ্রান্ত হয়ে যাই তখন আমি ১/১১-এর রাতের কথাটি মনে করি, তখন সঙ্গে সঙ্গে আমার মন ভালো হয়ে যায়।
    সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা কি মনে আছে? জামায়াত-বিএনপির দুঃশাসনের পাঁচ বছর মাত্র পার হয়েছে, লুন্ঠন কত প্রকার ও কী কী এ দেশের মানুষ স্বচক্ষে সেটি মাত্র দেখে শেষ করেছে। একই সঙ্গে দেখছে হাওয়া ভবনকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান আর তাঁর বিশাল দুর্বৃত্ত বাহিনীর উত্থান। পাশাপাশি ধর্মকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন। স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্কালন মুক্তবুদ্ধির মানুষের ওপর অত্যাচার, ইতিহাস বিকৃতি। ধর্মোন্নত্ত মৌলবাদীদের হাতে ধরে গড়ে তোলা হচ্ছে, অস্ত্রের চালান, জঙ্গিদের বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শেষ করে দেওয়া, প্রশাসনের নির্বিচার দলীয়করণ। জিনিসপত্রের দাম−জামায়াত-বিএনপি সরকারের কিছুতেই কিছু আসে যায় না। কারণ, পরের নির্বাচনে জিতে আসার নীলনকশা তৈরি হয়ে আছে।
    একটা নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমরা যখন সেই ভয়ঙ্কর দুঃশাসন থেকে মুক্তি চাইছি, তখন আমরা সবিস্নয়ে আবিষ্ককার করেছি নির্বাচন কমিশনে কিছু ভাঁড় বসে আছে। শুধু কি নির্বাচন কমিশনে, অফিসের দারোয়ান থেকে দেশের রাষ্ট্রপতি সবই দলীয় মানুষ। সংবিধানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি নিজেই প্রধান উপদেষ্টা হয়ে গেলেন। সেই ভয়ঙ্কর সময়ের কথা মনে আছে? আমার মনে আছে, ছোট বাচ্চারা আমার কাছে ফোন করে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু করেছিল, তাদের একটাই প্রশ্ন, এখন কী হবে?
    পর্দার আড়ালে কী হয়েছে আমরা সেগুলো ভাসা-ভাসা জানি। স্পষ্টভাবে যেটা জানি সেটা হচ্ছে, সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব পালন করল, হঠাৎ রাষ্ট্রপতি টেলিভিশনে স্বীকার করে নিলেন, নির্বাচন নিয়ে ভয়ঙ্কর একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছিল, সেটা বন্ধ করা হয়েছে।
    আমরা সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। যখনই আমার মনমেজাজ একটু খারাপ থাকে, তখন আমি সেই সময়টার কথা চিন্তা করি। ২২ জানুয়ারির সেই প্রহসনের নির্বাচনটি যদি জামায়াত-বিএনপি সরকার করে ফেলতে পারত, তাহলে কী অবস্থা হতো কেউ কল্পনা করতে পারে? এখন আর যাই হোক তারা ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারবে না, রীতিমতো প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলে গোল দিতে হবে। আমরা সেই খেলা দেখার জন্য অপেক্ষা করে আছি।

    ২.
    তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকবে বলে জানি। দুই বছর দীর্ঘ সময়−দুই বছরে অনেক কিছু করা যায়। যেহেতু পুরো সময়টাতেই জরুরি অবস্থা, তাই অনেক কিছু তারা জোর করেও করে ফেলতে পারে। এই দুই বছর সময়টা তারা ঠিক করে ব্যবহার করেছে কি না ইতিহাস তার সাক্ষ্য দেবে। আমি শুধু তাদের একটি বিষয় নিয়ে কথা বলব।
    বিষয়টি হচ্ছে এ দেশের শিক্ষা। এ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। জোট সরকারের আমলে অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতিতে একেবারে আকন্ঠ নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত কমিটিকে পাঠানো হলো−তাঁরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও এসেছিলেন। তাঁরা ছিলেন জোট সরকারের নিয়োগ পাওয়া সদস্য, তাই তাঁরা সেই তদন্তে এসে নিজের দলের মানুষদের রক্ষা করে বিশাল প্রতিবেদন দাখিল করলেন! আমার খুব শখ ছিল সেই প্রতিবেদনটি দেখার, কিন্তু সেটা কোনো দিন প্রকাশ করা হয়নি। কেন প্রকাশ করা হবে না? আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কী দুর্নীতি হয়, আর তাদের অন্য দুর্নীতিবাজেরা কীভাবে রক্ষা করে সেটা দেশের মানুষ কেন জানতে পারবে না?
    দেশের অন্য সব প্রতিষ্ঠানে কিছু না কিছু পরিবর্তন হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন হয়নি। জোট সরকারের আমলের প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় চালিয়ে গেছে, তাদের দলীয় প্রভোস্ট, তাদের দলীয় প্রক্টর, হলে হলে তাদের দলীয় ছাত্র। শিক্ষক নিয়োগের বেলায় তাদের দলীয় শিক্ষক। দলীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সময় দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় মানুষেরা কীভাবে অবলীলায় মিথ্যা কথা লেখেন সে রকম কিছু কাগজপত্র আমার কাছে আছে, আমি সেগুলো মাঝেমধ্যে দেখি, কী করব বুঝতে পারি না। দলীয় বিবেচনায় প্রভোস্টরা কীভাবে ছাত্রদের হলে সিট দেন তার প্রমাণও আছে, কিন্তু সেই অভিযোগগুলো করার কোনো জায়গা নেই। জোট সরকার দেশকে শাসন করেছে পাঁচ বছর, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শাসন করেছে সাত বছর−এ জন্য ইতিহাস এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ক্ষমা করলেও আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের কখনো ক্ষমা করব না।
    আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার শিক্ষার ব্যাপারটা কখনোই বুঝতে পারেনি। ১০ জন উপদেষ্টার ভেতরে কোনো শিক্ষক নেই। কেন নেই আমরা সেটা অনুমান করতে পারি, এই উপদেষ্টা ‘সেনা সমর্থিত’ (যার অর্থ কাউকে পরিষ্ককার করে বুঝিয়ে দিতে হবে না!) তাঁদের শিক্ষকদের জন্য কোনো সম্মানবাধ নেই; যদি থাকত তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গত বছর জেলে ঢুকিয়ে হেনস্তা করার সাহস পেতেন না।
    তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে শিক্ষার ব্যাপারটা বোঝেনি তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল এবং সেখানে জিপিএ ফাইভের প্লাবন! সত্যি সত্যি যদি আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা এভাবে জিপিএ ফাইভ পেয়ে যেত, তাহলে আমার থেকে বেশি খুুশি কেউ হতো না। কিন্তু আমি খুব ভালোভাবে জানি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এমন কিছু ঘটেনি, যার জন্য এভাবে জিপিএ ফাইভের প্লাবন শুরু হয়ে যাবে। তাই সেই ফলাফল দেখে আমি খুশি না হয়ে খুব দুশ্চিন্তিত হয়েছিলাম। কারণ, এটা ঘটেছে সম্পুর্ণ অন্য কারণে, প্রশ্নপত্র সোজা করে করা হয়েছে, পরীক্ষকদের বলা হয়েছে উদারভাবে মার্কস দিতে। দুশ্চিন্তার কারণ সেটি নয়, কারণ হচ্ছে আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেটাকে শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের সাফল্য হিসেবে বড় গলায় প্রচার করেছে। এটি সাফল্য নয়, এটি হচ্ছে শিক্ষার মান এক ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া−এই সত্য কথাটি তো দেশের সব মানুষ জানে, তাহলে কেন এই প্রচারণা?
    এসএসসির রেজাল্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি বলেছিলাম, এটি মাত্র শুরু, এইচএসসির রেজাল্ট হওয়ার পর আমরা আসল মজা দেখতে পাব। আমি তার মাঝে খবর পেয়েছি, এইচএসসি পরীক্ষায় বেশি বেশি মার্কস দেওয়ার জন্য পরীক্ষকদের ওপর প্রবল চাপ দেওয়া শুরু হয়েছে। সত্যি সত্যি তাই হলো, এইচএসসি পরীক্ষাতে আবার সেই জিপিএ ফাইভের প্লাবন। এবার ব্যাপারটা একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেল। কারণ, দেখা গেল এই পরীক্ষায় ছেলেমেয়েরা বাংলার চেয়ে ইংরেজিতে বেশি ভালো করেছে! পরীক্ষার ফলাফল যদি সত্যি হয়, তাহলে এ দেশের ছেলেমেয়েরা যতটুকু বাংলা জানে, তার থেকে বেশি ইংরেজি জানে! কে এই কথা বিশ্বাস করবে? এ দেশের ছেলেমেয়েরা ১২ বছর ইংরেজি পড়ে, তার পরও শুদ্ধ ইংরেজিতে একটা এসএমএস পাঠাতে পারে একেবারে হাতে গোনা কয়েকজন। তাই তারা ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখার একটা বিচিত্র পদ্ধতি আবিষ্ককার করে বসে আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসব কোনো কিছু বিশ্লেষণ করল না, বুক ফুলিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের সাফল্যের কৃতিত্বটুকু নিয়ে নিল?
    যখন শিক্ষার মান কমিয়ে এনে সেটাকে ইতিবাচক একটা বিষয় বলে কৃতিত্ব দাবি করা হয়, তখন আমি খুব দুশ্চিন্তিত হয়ে যাই। শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ আর মাধ্যমিক স্কুল নিয়ে সমস্যা, তা নয়। প্রাইমারি স্কুলেও সমস্যা−হঠাৎ জানতে পেরেছি, পরীক্ষামূলকভাবে কয়েক হাজার স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব ব্র্যাকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকেরা আন্দোলন শুরু করলেন। তারপর কী হলো আমরা কিছুই জানতে পারলাম না। রাষ্ট্রীয়ভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অথচ দেশের সব মানুষকে এ ব্যাপারে অন্ধকারে রাখা হলে কেমন করে হবে?
    দেশের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে কোনো শর্টকাট নেই, এটা করতে হলে শুরু করতে হবে শিক্ষকদের দিয়ে। মানসম্মত শিক্ষকদের মানসম্মত বেতন আর সম্মান দিয়ে এর শুরু করা যায়, এটি না করে অন্য যে পরিকল্পনাই করা হোক তার কোনোটি কাজ করবে না। সারা পৃথিবীর সবচেয়ে পরীক্ষিত এই সত্যটি গ্রহণ করতে এত ভয় কেন? এত সংকোচ কেন? এত অনাগ্রহ কেন?
    তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেষ হয়ে আসছে, তাদের প্রগ্রেস রিপোর্টের অনেক বিষয়ে তারা হয়তো জিপিএ ফাইভ পাবে, অনেক ক্ষেত্রে পাবে না। আমি শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের অবদানের জন্য পাস মার্ক দিতে পারলাম না। তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয় না−দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবশ্যই দিতে হয় এবং খুব কম করে হলেও পাস করতে হয়।

    ৩.
    এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজনীতিতে একটা বিশাল ওলট-পালট শুরু হয়ে গেছে। রাজনীতিবিদদের গালাগাল করা একটা ফ্যাশনের মতো হয়ে যাওয়ায় আমি সেটা আর করতে চাই না। বিশেষ করে এই দেশ সামরিক বাহিনী আর রাজনীতিবিদ প্রায় সমান সমান সময় শাসন করেছে, দেশের এই অবস্থার জন্য গালাগাল শুধু রাজনীতিবিদদের শুনতে হবে কেন? সবচেয়ে বড় কথা, রাজনীতিতে যত না তৃণমূল রাজনৈতিক নেতা, তার থেকে অনেক বেশি ব্যবসায়ী, সাবেক আমলা আর সাবেক সেনা কর্মকর্তা। যেসব রাজনৈতিক নেতা সারা জীবন পথেঘাটে ঘুরে ঘুরে মানুষের সঙ্গে মিশে মিশে রাজনীতি করে এসেছেন, তাঁরা যখন দেখেন কোনো একজন মালদার ব্যবসায়ী কিংবা আমলা কিংবা সাবেক সেনা কর্মকর্তা হঠাৎ উড়ে এসে তাঁর এলাকায় জুড়ে বসেছেন তখন তাঁরা নিশ্চয়ই একধরনের হতাশা অনুভব করেন। আমার যদি সুযোগ থাকত, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোকে বলতাম, তারা যেন তৃণমূল পর্যায়ে থেকে উঠে আসা জননেতাদের নির্বাচনের সুযোগ দেয়। ব্যবসায়ী-আমলা আর সাবেক সেনা কর্মকর্তা গাছেরটাও খেয়েছেন, এখন নিচেরটা কুড়ানোর প্রয়োজন কী? তাঁরা অন্যভাবে দেশ সেবার সুযোগ পাবেন।
    তবে আমি একটা বিষয় নিয়ে সব সময়ই একধরনের বিভ্রান্তি অনুভব করে এসেছি। কোন রাজনৈতিক দলের ভেতরে কোন ধরনের কোন্দল, কে কাকে কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে সরিয়ে জায়গা করে নিচ্ছেন, কে কতটুকু চাটুকারিতা করে করে কাছে চলে আসছেন এ খবরগুলো প্রতি মুহুর্তে আমাকে খবরের কাগজে পড়তে হয়−যারা টেলিভিশন দেখে তাদের নিশ্চয়ই সেটা দেখতে হয়, শুনতে হয়। আমাদের সাধারণ নাগরিকদের কি রাজনৈতিক দলগুলোর পারিবারিক কলহ শোনার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন আছে? আমি যে জিনিসগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর মুখে শুনতে চাই, সেগুলো একটিবারও কেন শুনতে পাই না? দেশের মানুষকে তারা কী দেবে, সেটি কেন তারা বলে না?
    প্রথমেই আমি জানতে চাইব দ্রব্যমূল্য নিয়ে তারা কী ভাবছে। তারা কী জানে এ দেশের কত লাখ মানুষ হঠাৎ গরিব হয়ে গেছে? কত পরিবার খবরের কাগজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছে? এই ঈদে কত লাখ শিশু নতুন কাপড় কিনতে পারেনি? কত লাখ মা সন্তানের প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে নিজে অভুক্ত থেকেছেন? আমরা পরিষ্ককারভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে শুনতে চাই, তারা সংসদে গিয়ে নিজেদের জন্য বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেবে, নাকি এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করবে? যদি কিছু করার পরিকল্পনা থাকে, সেটি কীভাবে করবে? কত তাড়াতাড়ি করবে?
    আমি কঠিনভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই দুর্ভাগা দেশের ৯০ ভাগ সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব শুধু শিক্ষাব্যবস্থাটাকে ঠিক করে দিয়ে। আমরা পরিষ্ককারভাবে জানতে চাই, এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাটাকে ঠিক করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। তারা বাজেটের কত অংশ এখানে দেবে। বাংলা মাধ্যম, মাদ্রাসা আর ইংরেজি মাধ্যম নামে আমরা মধ্যবিত্ত, দরিদ্র আর বড়লোকের যে তিনটি ধারা তৈরি করেছি সেটাকে একত্র করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। মেধাবী ছাত্রদের আবার বিজ্ঞানমুখী করবে কি না। শিক্ষকদের সম্মানজনক বেতন দেবে কি না। গাইড বই নিষিদ্ধ করে দেবে কি না। ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট কোচিংয়ের পীড়ন থেকে মুক্তি দিয়ে আনন্দময় স্কুলে ফিরিয়ে আনবে কি না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি করবে কি না।
    আমাদের দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি তিন ধরনের মানুষ−চাষি, পোশাককর্মী আর প্রবাসী শ্রমিক। যাদের শ্রমে এ দেশ চলছে আমরা জানতে চাইব, সেই তিন শ্রেণীর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর আলাদা কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। সারের জন্য, সেচের জন্য চাষিরা মাথা কুটে মরবে কি না। তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ থাকবে কি না। পোশাক কারখানার মেয়েদের সম্মানজনক বেতন দেওয়া হচ্ছে কি না। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে কি না। ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার সুযোগ আছে কি না। প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশে নিরাপদ জীবন যাপনের সুযোগ আছে কিনা। দেশে এলে তাদের ভ্রমণের বিষয়গুলো সহজ করে দেওয়া হচ্ছে কি না। তাদের কষ্টের অর্জনে এ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় তাদের সেই প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া হচ্ছে কি না।
    আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জানতে চাইব, তারা আমাদের ইলেকট্রিসিটি দেবে কি না। দিলে কতটুকু দেবে! কবে দেবে? কীভাবে দেবে? আমরা জানতে চাইব, গ্যাস-তেল-কয়লা নিয়ে তাদের কী পরিকল্পনা? সব সময়ই আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়, এই বুঝি কোনো এক ষড়যন্ত্রে আমাদের সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এই উদ্বেগ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করা হবে কি না।
    পরিবেশ দুষণে বাংলাদেশের বড় অংশ ভবিষ্যতে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা শোনা যায়। আমরা শুনতে চাই, এ নিয়ে রাজনৈতিক দল কী ভাবছে? তারা কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করবে।
    আমরা জানতে চাই, এ দেশে সব ধর্মের সব জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ পাশাপাশি সমান অধিকার নিয়ে থাকতে পারবে কি না। আমরা জানতে চাইব, নির্বাচনে জেতার পর এ দেশে আবার নতুন করে হতভাগিনী পূর্ণিমাদের হাহাকারে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হবে কি না। আমরা জানতে চাইব, এ দেশটিকে ধর্মান্ধ মানুষের দেশে পাল্টে দেওয়া হবে কি না। দেশের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে ধর্মের নামে জলাঞ্জলি দেওয়া হবে কি না। আমরা জানতে চাইব, এ দেশকে আধুনিক সেক্যুলার দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে কি না।
    আমরা কী জানতে চাই তার তালিকা দীর্ঘ−আমি শুধু অল্প কয়েকটি কথা উল্লেখ করেছি−সব এখানে লিখতে পারব বলে মনে হয় না। তবে একটা বিষয় আমরা সব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে জানতে চাইব। সেটা হচ্ছে, তারা ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে কি না। যদি করে, তাহলে কেমন করে করবে? কত দিনের ভেতর করবে?
    যে রাজনৈতিক দল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার অঙ্গীকার দেবে না, সেই রাজনৈতিক দলের আর যাই থাকুক এ দেশের মাটিতে থাকার অধিকার নেই, এ দেশের বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার নেই।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }