Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সামনে সমুদ্র নীল – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প115 Mins Read0

    সামনে সমুদ্র নীল – পরিচ্ছেদ ১

    ০১.

    সরিৎশেখর কল্পনাও করতে পারে নি, পুরীতে এসে হঠাৎ ঐ অবস্থায় তার আবার অনুরাধার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।

    অবিশ্যি আবার অনুরাধার সঙ্গে দেখা হবার একটা প্রত্যাশা সরিশেখরের অবচেতন মনের মধ্যে কোথাও যেন ছিল। এবং দেখা যে হবেই সে বিশ্বাসও ছিল সরিশেখরের। পথে চলতে চলতে কতদিন অন্যমনস্কভাবে এদিক ওদিক তাকিয়েছে সরিৎশেখর নিজের অজ্ঞাতেই। তার মনটা যেন কার প্রত্যাশায় সর্বক্ষণই প্রতীক্ষা করেছে। তাই বুঝি আজ পুরীতে এসে অনুরাধাকে দেখে ও থমকে দাঁড়িয়েছিল। সত্যি, এমনি আকস্মিকভাবে দীর্ঘ দুই বৎসর পরে যে আবার অনুরাধার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে সরিৎশেখর ভাবতেও পারেনি।

    জীবনের দু-দুটো বৎসর তো নেহাৎই একটা কিছু কম সময় নয়। অকস্মাৎ একদিন অনুরাধা সরিশেখরের জীবন থেকে সরে গিয়েছিল। এবং যাবার আগে বলে গিয়েছিল—আজও সরিশেখরের অনুরাধার সে কথাগুলো মনে আছে—ভোলেনি ভুলতে পারেনি সরিৎশেখর।

    ভেবে দেখলাম সরিৎ–

    তখনও জানে না, কল্পনাও করতে পারেনি সরিৎশেখর কি বলতে চায় অনুরাধা তাকে!

    সকাল থেকেই শরীরটা ভাল ছিল না বলে সরিৎশেখর কলেজে পড়াতে যায়নি। ডিকেন্সের একটা উপন্যাস নিয়ে শয্যায় শুয়ে শুয়ে পড়ছিল। বাইরে সেদিন যেন বাতাসে একটা অগ্নির জ্বালা। একটি মাত্র জানালা খোেলা ঘরের, হঠাৎ অনুরাধা ঘরে ঢুকল।

    সরিৎ!

    এ কি, তুমি এই প্রচণ্ড গরমে দুপুরে?

    শ্যা, কলেজেই গিয়েছিলাম তোমার, গিয়ে শুনলাম তুমি কলেজে যাওনি, তাই সোজা অফিস থেকে এখানেই চলে এলাম।

    মনে হচ্ছে খুব জরুরী প্রয়োজন। তা দাঁড়িয়ে রইলে কেন, বোস রাধা।

    ঐ নামেই ডাকত সরিৎ অনুরাধাকে পরিচয় হবার কিছুদিন পর থেকে।

    ভেবে দেখলাম—মানে—অনুরাধা যেন কেমন একটু ইতস্তত করতে থাকে।

    যে তাগিদে কথাটা বলবার জন্য সরিতের কলেজ পর্যন্ত ছুটে গিয়ে সেখানে তাকে না পেয়ে এখানে এসেছে—সে তাগিদটা যেন আর অনুভব করছে না অনুরাধা।

    মনের মধ্যে কি কোন দ্বন্দ্ব ছিল তার তখনও!

    হয়ত ছিল। অনেকবার কথাটা মনে হয়েছে গত এই দুই বৎসরে সরিশেখরের—মনে হয়েছে সেদিন যে কথাগুলো বলেছিল তাকে অনুরাধা, তার জন্য কোন স্থির পূর্ব-সংকল্প ছিল না।

    যা বলেছিল সে সেদিন, সেটাই তার সেদিনকার হয়ত শেষ কথা ছিল না।

    অনুরাধা কিন্তু বসল না। একটু থেকে আবার বললে, ভেবে দেখলাম সরিৎ–

    কি ব্যাপার কি আবার ভেবে দেখলে? মৃদু হাসি সরিতের ওষ্ঠপ্রান্তে।

    তোমার আমার সম্পর্কের এইখানেই শেষ হয়ে যাওয়া ভাল।

    কথাটা শুনেই সরিৎশেখর শয্যার উপর উঠে বসে, কয়েকটা মুহূর্ত অনুরাধার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুরাধা তখনও বসেনি, দাঁড়িয়েই আছে।

    আজও মনে আছে স্পষ্ট সেদিনের অনুরাধার চেহারাটা, পরনে তার সবুজ-পাড় একটা দামী তাঁতের শাড়ি, শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করা গায়ের ব্লাউজ, মাথার চুলগুলো আলগা ভাবে একটা

    খোঁপা করা। খোঁপাটা কাঁধের ওপর ভেঙে পড়েছে, ডান হাতটা খালি, বাঁ হাতে ছোট একটা রিস্টওয়াচ—চোখে সরু সোনালী দামী ফ্রেমের চশমা, পায়ে চপ্পল।

    সরিৎশেখর চুপ করেই ছিল, অনুরাধা আবার বলল, ভেবেছিলাম একবার একটা চিঠি লিখে তোমাকে কথাটা জানিয়ে দেব, কিন্তু পরে মনে হল আমার, যা বলবার সামনাসামনিই তোমাকে জানিয়ে দেওয়া ভাল। আমি চললাম

    এটুকু বলবার জন্যই কি এতটা পথ এই দুপুর রোদে ছুটে এসেছ?

    তাই।

    আর কিছুই তোমার বলবার নেই রাধা?

    না।

    কেন এভাবে এতদিনকার সম্পর্কটা শেষ করে দিয়ে যাচ্ছ, তাও বলবে না?

    কোন প্রয়োজন নেই।

    প্রয়োজন নেই?

    না। কারণ তুমি তো সবই জান। জানা কথাটা নতুন করে আবার আমারই বা বলবার কি আছে, আর তোমারই বা শোনবার কি আছে বল।

    কিন্তু বিশ্বাস কর—

    থাক, মিথ্যা কতকগুলো কথা আর নাই বা বললে বানিয়ে বানিয়ে–

    ঐ শেষ কথা অনুরাধার। আর সে দাঁড়ায়নি। ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তারপর দীর্ঘ দুই বৎসর পরে আজ অকস্মাৎ পুরীর সমুদ্রতটে অনুরাধার মুখমুখি সে।

    সকাল আটটা কি সাড়ে আটটা হবে তখন।

    হোটল থেকে বের হয়ে সরিৎশেখর সমুদ্রের দিকেই যাচ্ছিল। হঠাৎ কানে এল তার একটা হাসির উচ্ছ্বাস, অনেক দিনের অনেক পরিচিত সেই হাসি, যে হাসি আজও ভোলেনি। তার কানের পর্দায় এসে ঝঙ্কার তুলতেই সে থমকে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল সামনের দিকে তাকিয়েছিল।

    পরনে সুইমিং কস্টিউম, একটা বিরাট টাওয়েল গায়ে জড়ানস্নান সেরে বালুর ঢালু পাড় ধরে অনুরাধা ও বছর পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ বা তারও হয়ত কিছু বেশীই বয়সের এক ব্যক্তি উপরের দিকে উঠে আসছিল সমুদ্রের জল থেকে। একেবারে মুখখামুখি—মাত্র কয়েক হাত ব্যবধান। অনুরাধার দৃষ্টি কিন্তু সামনের দিকে নয়, অন্য দিকে প্রসারিত।

    সরিশেখরের অজ্ঞাতেই তার কণ্ঠ হতে বের হয়ে এসেছিল নামটা, অনুরাধা।

    অনুরাধাও সঙ্গে সঙ্গে থমকে দাঁড়িয়েছিল, উচ্চারিত ডাকটা তার কানে যেতেই বোধ হয় সরিতের দিকে তাকিয়েছিল।

    অনুরাধা! সরিতের অস্ফুট কণ্ঠস্বর। সরিৎ! অনুরাধার কণ্ঠেও বিস্ময়।

    অনুরাধার সঙ্গী লোকটি সেই সময় সামনের দিকে তাকায়। সেই মুহূর্তে সরিশেখরের মনে হয়, অনুরাধার সঙ্গীর সঙ্গে তার পরিচয় না থাকলেও, ভদ্রলোককে সে যেন ইতিপূর্বে দেখেছে। কোথায় দেখেছে অবিশ্যি সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে না সরিশেখরের, তবে তাকে পূর্বে দেখেছে।

    অনুরাধা কিন্তু অতঃপর সরিশেখরের দিকে এগিয়েও আসে না বা তার সঙ্গে আর কোন কথাও বলে না।

    সরিৎশেখরও সে চেষ্টা করে না। সরিৎশেখর অন্য পথ ধরে ধীরে ধীরে বালুবেলায় নেমে যায়। সমুদ্রে তখন অনেক জ্ঞানার্থীর ভিড়। নানা বয়েসী নারী পুরুষ সমুদ্রের জল তোলপাড় করছে। সমুদ্রের বড় বড় ঢেউগুলো এসে বালুবেলায় একটার পর একটা অবিশ্রান্ত আছড়ে পড়ছে একটানা গর্জন তুলে।

    সরিৎশেখর পাড়ের দিকে তাকাল—একটু আগে যেখান দিয়ে অনুরাধা ও সেই ভদ্রলোক হাত ধরাধরি করে চলে গেল তার দৃষ্টির সামনে দিয়েই।

    সরিৎশেখর দেখল যে হোটেলে সে উঠেছে, ওরা সেই হোটেলেই গিয়ে ঢুকল। তাহলে অনুরাধা সে যে হোটেলে উঠেছে সেই হোটেলেই উঠেছে।

    আজই সকালে পুরী এক্সপ্রেসে সরিৎশেখর পুরী এসে পৌঁছেছে। হোটেলে পৌঁছেই বের হয়ে পড়েছিল। সমুদ্রের জলে স্নান করার চাইতে ধীরে ধীরে ভেজা বালুর উপর দিয়ে হাঁটতে তার অনেক ভাল লাগে।

    দীর্ঘ দুই বৎসর পরে আবার অনুরাধাকে দেখল সরিৎশেখর। হ্যাঁ, মনে মনে হিসাব করে সরিৎশেখর ঠিক দুই বৎসর পরই, সময়টা, না ভোলার কথা নয়, জীবনের একটা পরিচ্ছেদে অকস্মাৎ যেখানে দাঁড়ি পড়েছিল—সে সময়টা কি কেউ ভুলতে পারে!

    সরিৎশেখরও পারে নি। সরিৎ ভেবেছিল, অনুরাধা নিশ্চয়ই কলকাতায় নেই। নচেৎ পথে কখনও না কখনও নিশ্চয়ই দেখা হত, বিশেষ করে কলেজে যাতায়াতের পথে। ঠিক ভেবেছিল নয়, মনে হয়েছিল বুঝি তার, অনুরাধা হয়ত কলকাতায় নেই। কলকাতা ছেড়ে অন্য কোথাও হয়ত সে চলে গিয়েছে। কাউকে বিবাহ করে হয়ত সংসারও পেতেছে। অনুরাধা এখন অন্যের। তাছাড়া কলকাতায় থাকলে কখনও না কখনও নিশ্চয়ই তাদের একের সঙ্গে অন্যের দেখা হতই বিশেষ করে কলেজে যাতায়াতের পথে। কারণ ঐ পথ দিয়েই অনুরাধাও কলেজে যেত এবং প্রথম আলাপ তাদের ঐ পথ ধরে যেতে যেতেই এক হঠাৎ আসা দুর্যোগের মধ্যে।

    তার আগেও অবিশ্যি সরিৎ দেখেছে অনুরাধাকে ঐ পথ ধরে যাতায়াত করতে। প্রথম আলাপের সেই দিনটাসময়টা জুলাইয়ের শেষাশেষি, কলকাতা শহরে বর্ষা নেমে গিয়েছে। যখন তখন ঝমঝম করে বৃষ্টি নামে আকাশ কালো করে। কখনও বা কম সময়, কখনও বা বেশি। সময় ধরে চলে সে বৃষ্টি। ছাতা নিয়ে সরিৎ কখনও বড় একটা বের হত না, কারণ বেরুবার সময় ছাতার কথাটা তার মনেই পড়ত না। কিন্তু সেদিন ছাতা নিয়েই সরিৎ বের হয়েছিল। আকাশে মেঘ ছিল, বৃষ্টির সম্ভাবনাও ছিল, বোধ করি সেই আশঙ্কাতেই। মাত্র দুটো ক্লাস ছিল সরিতের সেদিন। বেলা তিনটের মধ্যে কলেজ থেকে সে বের হয়ে পড়েছিল। গড়িয়াহাটার মোড়ে বাস থেকে নেমে ও লেকের দিকে হাঁটছিল রজনী সেন স্ট্রীটে তার বাড়ি। প্রচণ্ড গরম সেদিন। আকাশে, কেমন যেন একটা থমথমে মেঘলা-মেঘলা ভাব। বৃষ্টি যে কোন মুহূর্তেই নামতে পারে। রাস্তায় বড় একটা তেমন লোকজন নেই। দোকানপাট অবিশ্যি খোলা, মধ্যে মধ্যে বাস-প্রাইভেটকারগুলো এদিক ওদিক চলে যাচ্ছে।

    হঠাৎ প্রবল ধারায় বৃষ্টি নামল। হাতে ছাতা থাকা সত্ত্বেও সরিৎ ছাতাটা খুলবার সময় পায় না, ভিজেই যায়। তাড়াতাড়ি একটা দোকানের মধ্যে উঠে পড়ে। কারণ ও বুঝেছিল, ছাতা দিয়ে ঐ বৃষ্টির হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবে না। তার পিছনে পিছনে অনুরাধাও উঠে পড়েছিল। ছাতা সঙ্গে ছিল না তার। একটা মোটা বই ও একটা মলাট দেওয়া খাতা হাতে। চোখে সরু সৌখীন সোনালী ফ্রেমের চশমা। চশমার কাচে জলের ছিটে লেগে আছে।

    দুজনের চোখাচোখি হতেই অনুরাধা মৃদু সলজ্জ হাসি হাসল। সরিৎশেখরের ওষ্ঠপ্রান্তেও হাসি জাগে। অনুরাধা চশমাটা চোখ থেকে খুলে শাড়ির আঁচলে কাচটা মুছতে থাকে।– আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে তখন। সরিৎশেখর ও অনুরাধা সেদিন তখন কেউ কারও নাম জানে না। জলের প্রবল ছাটে দুজনেই ভিজে যাচ্ছিল। আর একটু দোকানের ভিতরে ঢুকে গেল তারা। বৃষ্টি ধরবার নামগন্ধ নেই।

    আপনাকে প্রায়ই দেখি এই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে সরিৎশেখরই প্রথমে কথা বললে।

    অনুরাধা বললে, আপনাকেও দেখি আমি। আপনি বুঝি কাছেই থাকেন?

    সরিৎশেখর বললে, রজনী সেন স্ট্রীটে–

    ও মা, তাই নাকি! আমিও তো ঐ রাস্তাতেই থাকি। অনুরাধা বললে, আপনার বাড়ির কত নম্বর বলুন তো?

    সরিৎ যে বাড়ির নম্বরটা বললে, তার পাঁচটা নম্বর পরের বাড়িতেই থাকত অনুরাধা। তার বাড়ি পাঁচটা নম্বর পরে হলেও, মাঝপথে একটা ছোট গলির বাঁক আছে। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িটা দেখা যায় না অবিশ্যি।

    অনুরাধা আবার বললে, এ পথে যাতায়াতের সময় ছাড়াও আপনাকে আমি আর একটা বাড়িতে দেখেছি

    কোথায় বলুন তো? সরিৎ শুধাল।

    কেতকীদের বাড়িতে, ডোভার লেনে।

    বুঝেছি—আমার পিসিমার বাড়ি। কেতকী আমার পিসতুতো বোন।

    সেদিন কেতকীর জন্মদিন ছিল, অনুরাধা বললে, আমিও গেছিলাম। আপনার হাতে ছিল একটা বইয়ের প্যাকেট ও একগোছা রজনীগন্ধা।

    রজনীগন্ধা কেতকীর ছিল খুব প্রিয় ফুল।

    জানেন আমিও সেদিন রজনীগন্ধা নিয়ে গিয়েছিলাম। অনুরাধা বলল।

    দুজনেই দুজনের দিকে চেয়ে হাসল।

    বৃষ্টি থামার কিন্তু কোন লক্ষণই নেই। পথে বেশ জল জমেছে। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। অনুরাধাই প্রথম উৎকণ্ঠার সঙ্গে বললে, তাই তো বাড়ি যাব কি করে বুঝতে পারছি না রাস্তায় তো দেখছি এক হাঁটু জল জমে গেল।

    জল ভেঙে যাবেন কি করে, এখান থেকে বেশ কিছুটা পথ–সরিৎশেখর বললে।

    বুঝতে পারছি না ঠিক কি করব। চিন্তিতভাবে অনুরাধা বললে।

    সেদিন শেষ পর্যন্ত একটা রিকশা ডেকেই দুজনে উঠে বসেছিল। সরিৎ প্রথমে রিকশায় উঠতে চায়নি, কিন্তু অনুরাধা তার কোন কথা শোনেনি। সেই আলাপ এবং সেই দিনই ওরা জানতে পারে পরস্পরের নাম।

    ডঃ সরিৎশেখর সেন। কলেজের প্রফেসার। ইকনমিক্সের। আর অনুরাধা সোম ডিগ্রী কোর্সের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। অনুরাধার সাবজেক্টও ছিল ইকনমিক্স।

    তারপর থেকে দুজনার দেখা হলেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পথের মধ্যে বা পথ চলতে চলতেই কথা চলত। কলেজে যাতায়াতের পথেই বেশীর ভাগ।

    সেই আলাপই ক্রমশ উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা এনে দিয়েছিল।

    তারপর অনুরাধা বি. এ. পাস করে একটা অফিসে চাকরি পেয়ে গেল যেন হঠাৎই।

    অনুরাধার চাকরির প্রয়োজন ছিল সত্যিই একটা। বিধবা মা, ছোট একটি বোন ও সে নিজে, তিনজনের সংসার। রজনী সেন স্ট্রীটের বাড়িটা ছিল দোতলা, উপরে নীচে খানচারেক মাত্র ঘর, অবিশ্যি রান্নাঘর ও বাথরুম আলাদা। অনুরাধার বাবা দ্বিজেন সোম চাকরি করতে করতে হঠাৎ পঙ্গু হয়ে পড়েন একটা অ্যাক্সিডেন্টে। কমপেনসেশান ও প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে যা পেয়েছিলেন রজনী সেন স্ট্রীটের ঐ বাড়িটি তাই দিয়ে তৈরি করেছিলেন। অনুরাধার বয়স তখন সতেরো। সবে কলেজে ঢুকছে। দ্বিজেন সোম মারা গেলেন।

    অনুরাধার মা বাড়ির দোতলাটা ভাড়া দিতে কতকটা বাধ্য হলেন। হাতে সামান্য যা অবশিষ্ট ছিল তাই দিয়েই সংসার চলতে লাগল, আর অনুরাধার কলেজের পড়া ও ছোট বোন মধুছন্দার স্কুলে পড়া। কিন্তু সঞ্চিত অর্থ তখন প্রায় শেষ। কাজেই পাস করার পর অনুরাধার একটা চাকরির প্রয়োজন ছিল।

    পাস করার পরই চাকরি পাওয়া এত সহজ নয় আর পাবেও না হয়ত জেনেও, অনুরাধা একটার পর একটা চাকরির অ্যাপ্লিকেশন করে যাচ্ছিল। হঠাৎ এক বিরাট ফার্মের অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার মিঃ সলিল দত্ত মজুমদারের কাছে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েই চাকরি হয়ে গেল তার। অনুরাধার খুশির অন্ত ছিল না সেদিন।

    সংবাদটা এসে সেইদিনই সন্ধ্যার পর সরিৎশেখরকে সে দিয়েছিল।

    সরিৎ, একটা surprise দেব তোমাকে।

    সারপ্রাইজ?

    হ্যাঁ–বল তো কি হতে পারে?

    কেমন করে বলব—আমি তো আর গণৎকার নই!

    তবু গেস্ কর—

    তার চাইতে তুমিই বল রাধা।

    পারলে না তো?

    না।

    জান আমার একটা চাকরি হয়ে গেছে আজ—

    চাকরি! কোথায় চাকরি পেলে? কি চাকরি রাধা?

    একটা মস্ত অফিসেজান, মাইনে আড়াইশো টাকা, আর মিঃ দত্ত মজুমদার বলেছেন, শর্টহ্যান্ড ও টাইপরাইটিংটা শিখে নিতে পারলে আরও বেশী মাইনে পাব—পারব না শিখে নিতে শর্টহ্যান্ড টাইপরাইটিংটা?

    কেন পারবে না!

    জান সরিৎ, ইন্টারভিউতে আমাকে কিছুই তেমন জিজ্ঞাসা করেননি মিঃ দত্ত মজুমদার। কেবল আমার বাড়িতে কে কে আছে-বাবা বারা গেছেন এবং আর্নিং মেম্বার আর ফ্যামিলিতে কেউ নেই শুনে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়ে দিলেন। সত্যি ভদ্রলোক ভারি ভাল।

    সরিৎশেখর চুপ করে ছিল।

    ঐ চাকরিটা পাবারই মাস চারেক বাদে, হঠাৎ দ্বিপ্রহরে সরিতের বাড়িতে এসে পরস্পরের মধ্যে সমস্ত সম্পর্কের ছেদ করে দিয়ে গিয়েছিল অনুরাধা।

    ভিজে বালির ওপর দিয়ে সাগরের তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে ঐসব কথাই মনে পড়ছিল আজ সরিশেখরের। গত দুই বৎসরের মধ্যে আর তার অনুরাধার সঙ্গে দেখা হয়নি কখনও। দুই। বৎসর পরে আজ আবার সাক্ষাৎ হল।

    অনুরাধার সঙ্গের ভদ্রলোকটি কেকথাটা সরিতের মনের মধ্যে তখন আনাগোনা করছে। ***** বেশ মোটাসোটা ভারিক্কী চেহারা। ভদ্রলোকটির পরনেও ছিল সুইমিং কস্টিউম, গায়ে জড়ানো ছিল একটা বড় টাওয়েল। স্বর্গদ্বার ছাড়িয়ে অনেকটা হাঁটতে হাঁটতে অন্যমনস্ক ভাবে চলে গিয়েছিল সরিৎশেখর। ***** হঠাৎ যেন তার মনে হল, মাথার উপরে রোদটা বড় চড়া। পায়ের নীচে বালিও গরম হয়ে। উঠছে। সরিৎশেখর ফিরল আবার হোটেলের দিকে।

    দোতলায় একেবারে সমুদ্রের মুখখামুখি একটা ঘর নিয়েছে সরিৎশেখর। ১৮নং ঘর। ঘরটি একেবারে শেষপ্রান্তে। দোতলা সর্বসমেত চারটি ঘর ১৫, ১৬, ১৭, ও ১৮ নম্বর।

    ঘরের চাবি খুলে ঢুকতে যাবে, ১৬নং ঘর থেকে বের হয়ে এল অনুরাধা। আবার দুজনে। চোখাচোখি। সরিৎশেখর থমকে দাঁড়ায় নিজের অজ্ঞাতেই বোধ হয়।

    একবার সরিৎ ভাবল ডাকে অনুরাধাকে, কি ভেবে ডাকল না, ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। দরজাটা কিন্তু খোলাই রইল।

    জানালার সামনে এসে দাঁড়াল সরিৎশেখর।

    হু হু করে খোলা জানালাপথে হাওয়া আসছে।

    সরিৎ!

    ফিরে তাকাল সে ডাকে সরিৎশেখর। দরজার উপরে দাঁড়িয়ে অনুরাধা। পরনে একটা হালকা সবুজ রঙের মুর্শিদাবাদী সিল্কের শাড়ি।

    কি, আমাকে চিনতে পারছ না? অনুরাধা বললে।

    চিনব না কেন—

    তাহলে ভিতরে আসতে তোকই একবারও বললে না!

    বলা ঠিক হবে কিনা ভাবছিলাম। সরিৎশেখর বললে।

    কেন? বললে অনুরাধা।

    সেটাই কি স্বাভাবিক নয় অনুরাধা?

    অনুরাধা অন্য কথা বললে, এভাবে এই হোটেলে তোমার সঙ্গে দেখা হবে—আমি প্রায়ই তো পুরীতে আসি, আর এই হোটেলের এই ঘরটিতেই উঠি

    তাই নাকি! যাক সে কথা, তা তুমি পুরীতে বেড়াতে এসেছ বুঝি?

    হ্যাঁ!

    তারপরই অনুরাধা হঠাৎ প্রশ্ন করল, আজ জুলাই মাসের কত তারিখ জান?

    জানি-২৯শে জুলাই।

    সেদিন কলকাতায় সেই বৃষ্টির সন্ধ্যায়—সেই তারিখটাও ছিল ২৯শে জুলাই।

    সেদিন বুঝি ২৯শে জুলাই ছিল? সরিৎশেখর প্রশ্ন করল।

    অনুরাধা রললে, হ্যাঁ। আচ্ছা, আজও যদি সেদিনকারও মত বৃষ্টি নামে।

    তাতে কি হবে?

    না, তাই বলছিলাম, যদি বৃষ্টি নামে—

    তা দাঁড়িয়ে কেন অনুরাধাবসো না। সরিৎশেখর বললে।

    ঐ সময় দরজার বাইরে থেকে একটি মোটা গম্ভীর পুরুষের গলা শোনা গেল, অনুরাধা।

    তোমাকে ডাকছে যেন কে–সরিৎশেখর বললে।

    অনুরাধা কোন জবাব দিল না। আবার ডাক শোনা গেল, অনুরাধা।

    কি?

    শুনে যাও। গলার স্বর রুক্ষ। সামান্য অসন্তোষও বুঝি প্রকাশ পায় সে কণ্ঠস্বরে।

    আমি ঘরের মধ্যে আছি, ঘরে এস। অনুরাধা বললে।

    সকালের সেই সমুদ্রের ধারে দেখা ভদ্রলোকটি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলেন। সরিৎশেখরের দিকে না তাকিয়েই বললেন, বেড়াতে যাবে না?

    না, তুমি যাও—অনুরাধা বললে।

    সরিৎশেখর আড়চোখে দেখল, ভদ্রলোকের পরনে টেরিটের প্যান্ট, দামী টেরিলিনের হাওয়াই শার্ট গায়ে।

    তুমি যাবে না?

    না, বললাম তো তুমি যাও—

    অকস্মাৎ যেন ভদ্রলোকের চোখের মণি দুটো ধক্ করে জ্বলে ওঠে। মুহূর্তকাল অনুরাধার দিকে তাকিয়ে ভদ্রলোক সরিশেখরের দিকে তাকালেন এবং বললেন, এঁকে তো চিনলাম না।

    চিনবে না তুমি, ওঁর নামটা তোমার জানা থাকলেও, কখনও ওঁকে তুমি দেখনি। জবাব দিল অনুরাধা।

    তা আগে পরিচয় ছিল বুঝি?

    অনেক দিনের পরিচিত—

    তা তো বুঝতেই পারছি।

    তবে ওঁকে না দেখলেও ইতিপূর্বে ওঁর নামটা তোমার ভাল করেই জানা—

    তাই বুঝি!

    হ্যাঁ, যার কথা তুমি দিনের পর দিন বলতে—যাঁর সম্পর্কে তোমার কৌতূহলের অন্ত ছিল। না–যাক, পরিচয় করিয়ে দিই, উনিই ডঃ সরিৎশেখর সেন—

    অ—

    আর সরিৎ, ইনিই—

    বুঝতে পারছি মিঃ সলিল দত্ত মজুমদার।

    সত্যিই তুমি বেড়াতে যাবে না?

    না, বললাম তো—

    যাবে না?

    না, যাব না। অনুরাধার কণ্ঠস্বর দৃঢ়।

    সরিৎ কেমন যেন বিব্রত বোধ করে। বলে, যাও অনুরাধা—

    কি, দাঁড়িয়ে রইলে কেন, তুমি যাও—অনুরাধা আবার বললে ভদ্রলোককে।

    তাহলে তুমি যাবে না অনুরাধা-সলিল দত্তর কণ্ঠস্বর যেন একটা চাপা আক্রোশে ফেটে পড়ল।

    বললাম তো যাব না।

    অনুরাধা যাও না–সরিৎ বললে। সরিৎ সত্যিই যেন কেমন বিব্রত বোধ করছিল। আশ্চর্য, কেন অনুরাধা যেতে চাইছে না?

    না, যাব না-অনুরাধা আবার বললে, তার গলার স্বরে দৃঢ়তা ফুটে ওঠে।

    ঠিক আছে, আমিও জানি তোমার মত বেহায়া বজ্জাত মেয়েছেলেকে কি করে শায়েস্তা করতে হয়। কথাগুলো বলে সলিল দত্ত মজুমদার আর দাঁড়ালেন না, ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। অকস্মাৎ ঘরের আবহাওয়াটাই যেন কেমন ভারী হয়ে গেল। সরিৎশেখর আরও বেশী বিব্রত বোধ করে। কি বলবে যেন বুঝে উঠতে পারে না। বিব্রত স্বরে বলে, তুমি গেলেই পারতে অনুরাধা।

    না। কিন্তু তুমি এখনও ওই লোকটার কথা ভাবছ? যেতে দাও—ব্যাপারটাকে যেন উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করে অনুরাধা। সমস্ত পরিস্থিতিটাকে সহজ করে তুলবার চেষ্টা করে। অনুরাধার হাবেভাবে মনে হয় যেন কিছুই হয়নি।

    ভদ্রলোক মনে হল, অত্যন্ত চটে গিয়েছেন অনুরাধা।

    কাকে ভদ্রলোক বলছ সরিৎ। ঐ অভদ্র আনকালচার্ড একটা ব্রুটকে! ভদ্রভাবে কথা পর্যন্ত বলতে জানে না!

    কিন্তু উনিই—

    আমাদের অফিসের জি. এম.—

    উনিই একদিন ইন্টারভিউ নিয়ে তোমাকে চাকরি দিয়েছিলেন না? সরিৎ বললে।

    হ্যাঁ  তাই, তবে তার জন্য আমাকে পরবর্তীকালে যে মূল্য দিতে হয়েছিল—

    মূল্য—

    যাক সে কথা। চল, সমুদ্রের ধারে যাব—

    এই দুপুরে-রৌদ্রে—

    তাহলে আমি একাই যাই—অনুরাধা দরজার দিকে এগিয়ে গেল।

    আরে শোন শোন, কোথায় যাচ্ছ এই প্রচণ্ড রৌদ্রে, বসো–

    বসব না, আমি যাচ্ছি—অনুরাধা ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

    সরিৎশেখর অতঃপর কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। একটা কথা কিন্তু স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তখন তার কাছে, ওদের পরস্পরের সম্পর্কটা যতই একসময় ঘনিষ্ঠ থাকুক, এখন তাতে চিড় ধরেছে।

    সলিল দত্ত মজুমদার অনুরাধার অফিসের বস। এবং হয়তো ঐ ভদ্রলোকের ইচ্ছাতেই একসময় তার অফিসে অনুরাধার চাকরি হয়েছিল—সেও বৎসর দুইয়ের কিছু আগেই হবে। এবং চাকরি পাওয়ার পরই কয়েক মাসের মধ্যে যে কোন কারণেই হোক অনুরাধার মনটা তার প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেছিল। যে কারণে অকস্মাৎ একদিন অনুরাধা এসে তাদের সমস্ত সম্পর্কের ওপর একটা ইতি টেনে দিয়ে গিয়েছিল।

    তারপর এই দুই বৎসর অনুরাধা তার কাছে আর আসেনি, সেও যায়নি অনুরাধার কাছে। বস্তুত সরিৎ অনুরাধার সঙ্গে দেখা করবার চেষ্টাও করেনি।

    সে ভুলতেই চেয়েছিল অনুরাধাকে। কিন্তু আজ বুঝতে পারছে ভুলতে সে পারেনি অনুরাধাকে। কিন্তু কেন? কেন ভুলতে পারল না অনুরাধাকে?

    জানালাপথে বাইরে দৃষ্টিপাত করল সরিৎশেখর। সমুদ্রের জল যেন প্রখর সূর্যের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। ঢেউয়ের মাথায় মাথায় শুভ্র ফেনার মালা। একটার পর একটা ঢেউ বালুবেলার উপরে আছড়ে আছড়ে পড়ছে। সমুদ্রে মানার্থীর ভিড় আর এখন তেমন নেই।

    অনেক দূরে দেখা গেল, মাথায় ঘোমটা তুলে তীর ধরে হেঁটে চলেছে অনুরাধা, স্বর্গদ্বারের দিকে।

    অনুরাধা।

    কত কত দিন পরে সে আজ আবার অনুরাধাকে দেখল।

    এ সেই অনুরাধা যে একসময় তার জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়েছিল।

    তার মনের রেখাগুলো হতে হাসিটি পর্যন্ত তার একান্ত পরিচিত।

    একদিন যার সম্পর্কে তার মনে হত—তার জীবন থেকে অনুরাধাকে বাদ দিয়ে একটা দিনও চলতে পারে না।

    একটা দিন যার সঙ্গে দেখা না হলে তার মনে হতকতকাল যেন অনুরাধাকে সে দেখে নি।

    সরিৎশেখর জানালা পথে চেয়ে থাকে—অনুরাধা হেঁটে চলেছে স্বর্গদ্বারের দিকে।

    একবার মনে হয় সরিৎশেখরের অনুরাধা এখনও বেশীদূর যায় নি—ওর পিছনে পিছনে গিয়ে ডেকে ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।

    সরিৎশেখর দুপা এগিয়েও যায় দরজাটার দিকে, কিন্তু আবার থেমে যায়।

    মনে পড়ল একটু আগে সলিল দত্ত মজুমদারের কথাগুলো। এবং সলিল দত্ত মজুমদারের কথা ভেবেই ইচ্ছাটাকে দমন করল। অনুরাধার সঙ্গে তাকে দেখলে সলিলের মেজাজটা হয়ত আবার বিগড়ে যাবে। কি প্রয়োজন তার ওদের দুজনের সম্পর্কের মধ্যে মাথা গলানোর। ও আজ সম্পূর্ণ তৃতীয় ব্যক্তি, একান্ত ভাবেই অনভিপ্রেত। কিন্তু যতই ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাব না মনে করুক সরিৎশেখর, অনুরাধার চিন্তাটা যেন মন থেকে কিছুতেই দূর করতে পারে না। ঘুরে-ফিরে কেবলই যেন অনুরাধা তার সামনে এসে দাঁড়ায়।

    ঐ সলিল দত্ত মজুমদারের সঙ্গে সম্পর্কটা কি অনুরাধার? যেভাবে সলিল দত্ত মজুমদার কথা বলছিল, তার মধ্যে একটা অধিকার প্রতিষ্ঠার সুর স্পষ্ট ছিল। কি সে অধিকার? আর সেই অধিকার সলিল দত্ত মজুমদার কেমন করে অর্জন করল? একটার পর একটা সিগ্রেট পুড়তে থাকে।

    দরজার ওদিকে পদশব্দ শোনা গেল আবার একসময়।

    ভিতরে আসতে পারি?

    গলার স্বর থেকে মানুষটাকে চিনতে সরিতের অসুবিধা হয় না, সলিল দত্ত মজুমদার। সরিৎ বললে, আসুন।

    সলিল দত্ত মজুমদার এসে ঘরে ঢুকলেন। একবার ভাল করে তাকাল সরিৎ। ভদ্রলোকের দিকে—আটত্রিশ-উনচল্লিশ বৎসর বয়স মনে হয় ভদ্রলোকের। সামনের দিকে মাথায় বিস্তৃত টাক, পাশ থেকে চুল টেনে এনে সযত্নে ঢাকা দেওয়া হয়েছে। চোখে চশমা, দামী ফ্রেমের চশমা। সকালবেলার সেই পোশাকই পরিধানে।

    বসুন মিঃ দত্ত, সরিৎ বললে। আপনাকে কয়েকটা কথা বলতে এলাম ডঃ সেন আমাকে! কি কথা?

    আমার সঙ্গে আলাপ হওয়ার আগে আপনার সঙ্গে আলাপ ছিল অনুরাধার জানতাম। এবং আপনাদের পরস্পরের মধ্যে যে রীতিমত একটা ঘনিষ্ঠতা একসময় হয়েছিল তাও আমার জানা।

    কতটুকু আপনি জানেন বা শুনেছেন আমি জানি না সলিলবাবু, তবে এমন কিছু ছিল না যা মনে রাখার মত।

    কিন্তু আমি যেন শুনেছিলাম, বেশ একটু—

    সেসব অনেক দিন চুকেবুকে গিয়েছে, আপনি যা বলতে এসেছেন তাই বলুন—

    জানেন কি, ও একটা জঘন্য চরিত্রের মেয়েমানুষ—

    এই কথাটাই কি বলতে এসেছেন?

    হ্যাঁ। আমি ঠকেছি বলেই আপনাকে সাবধান করে দিতে এলাম।

    ধন্যবাদ।

    আমার আর একটা কথা আপনার জানা বোধ হয় দরকার ডঃ সেন। ওকে আমি বিয়ে করেছি—She is my wife!

    বিয়ে করলে তো উনি স্ত্রীই হবেন, তার মধ্যে নতুনত্বের কি আছে?

    মনে হচ্ছে আপনি যেন আমার কথাটা বিশ্বাস করলেন না ডঃ সেন!

    কেন–বিশ্বাস করব না কেন?

    তাই বলছিলাম একদিন ওর সঙ্গে আপনার যে সম্পর্কই থাক, ও আজ পরস্ত্রী।

    কথাটা কেন বলছেন বুঝতে পারলাম না–

    পারবেন, একটু ভাবলেই বুঝতে পারবেন। আচ্ছা চলিসলিল দত্ত মজুমদার যেমন হঠাৎ ঘরে এসে ঢুকেছিলেন তেমনিই হঠাৎ ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানসী তুমি – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article যুগলবন্দী – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৫ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৭ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    যুগলবন্দী – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.