Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প1195 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০১. সাইড এফেক্ট

    তিনি নরম গলায় বললেন, ভাই এর কোন সাইড এফেক্ট নেই তো?

    সেলসম্যান জবাব দিল না, বিরক্ত চোখে তাকাল। তিনি আবার বললেন, তাই এই যন্ত্রটার কোন সাইড এফেক্ট নেই তো? সেলসম্যানের বিরক্তি চোখ থেকে সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ল। ভ্রূ কুঁচকে গেল, নিচের ঠোঁট টানটান হয়ে গেল। সে শুকনো গলায় বলল, সাইড এফেক্ট বলতে আপনি কী বুঝাচ্ছেন?

    মানে নেশা ধরে যায় কি না। শুনেছি একবার ব্যবহার শুরু করলে নেশা ধরে যায়। রাতদিন যন্ত্র লাগিয়ে বসে থাকে…।

    আপনার যদি সন্দেহ থাকে তাহলে কিনবেন না। আপনাকে কিনতে হবে। এমন তো কোন কথা নেই।

    তিনি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন। এতগুলি টাকা দিয়ে যন্ত্রটা কিনবেন অথচ লোকটা তার প্রশ্নের জবাব পর্যন্ত দিতে চাচ্ছে না। এমনভাবে তার দিকে তাকাচ্ছে যেন তিনি..

    আপনি কি যন্ত্রটা কিনবেন না দাঁড়িয়ে থাকবেন?

    তিনি পকেট থেকে চেক বই বের করলেন। খসখস করে টাকার অংক বসালেন। হাতের লেখাটা ভাল হল না। কারণ এত বড় অংকের চেক তিনি এর আগে কাটেননি। মাত্র আটশ গ্রাম ওজনের কালো চৌকোণা একটা বক্স। অথচ কী অসম্ভব দাম! টাকার অংক লিখতে গিয়ে হাত কেঁপে যাচ্ছে।

    সেলসম্যান বলল, আপনার কোন ক্রেডিট কার্ড নেই?

    জ্বি না।

    আপনাকে তাহলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। আমরা আপনার ব্যাংক একাউন্ট চেক করব। কম্পিউটারটা ট্রাবল দিচ্ছে—একটু সময় লাগবে। আপনি ইচ্ছা করলে পাশের রুমে বসতে পারেন।

    আমি বরং এখানেই দাঁড়িয়ে থাকি। অবশ্য আপনার যদি কোন অসুবিধা না হয়।

    সেলসম্যান জবাব দিল না। তার কাছে মনে হল সেলসম্যানের মুখের বিরক্ত ভাব একটু যেন কমেছে। কমাই উচিত—তিনি তো শেষ পর্যন্ত যন্ত্রটা কিনেছেন। তার পঞ্চাশ বছরের জীবনের সঞ্চিত অর্থের সবটাই চলে গেছে। এর পরেও কি লোকটা তাঁর সঙ্গে সহজভাবে দু একটা কথা বলবে না? তিনি বেশ কিছুক্ষণ ইতস্তত করে শেষ পর্যন্ত আবার বললেন, ভাই এর কোন সাইড এফেক্ট নেই তো?

    এবার জবাব পাওয়া গেল। সেলসম্যান রোবটদের মত ধাতব গলায় বলল, না নেই।

    নেশা হয় না।

    না, হয় না। তবে আপনি ইচ্ছা করে যদি নেশা ধরান তাহলে তো করার কিছু নেই। যন্ত্রটির সঙ্গে ইনস্ট্রাকশান ম্যানুয়েল আছে। ম্যানুয়েল মেনে যদি ব্যবহার করেন তাহলে কোন অসুবিধা হবে না। প্রতিদিন এক ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করবেন না। সপ্তাহে অন্তত একদিন যন্ত্রটায় হাত দেবেন না।

    তিনি এবার আনন্দের একটা নিশ্বাস ফেললেন। লোকটি শেষ পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা বলছে। তিনি হাসিমুখে বললেন, যন্ত্রটা নিয়ে নানান কথাবার্তা হয় তো। তাই…

    আমাদের স্বভাবই হচ্ছে নতুন আবিষ্কার নিয়ে কথা বলা। পি থার্টি টু হচ্ছে এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। এই বিষয়ে কি আপনার কোন সন্দেহ আছে?

    জ্বি না।

    তাহলে ভয় পাচ্ছেন কেন?

    ভয় পাচ্ছি না তো।

    পাশের ঘরে গিয়ে বসুন। আরো আধ ঘণ্টার মতো লাগবে।

    জ্বি আচ্ছা।

    একটা জিনিস শুধু মনে রাখবেন, এই শতাব্দীর সবচে বড় আবিষ্কার পি থার্টি টু। বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার যেমন টেলিভিশন। আপনি কি আমার সঙ্গে একমত?

    জ্বি একমত।

    তিনি মোটেই একমত না। বিংশ শতাব্দীর টেলিভিশন ছাড়াও আরো অনেক বড় বড় আবিষ্কার হয়েছে। এই শতাব্দীতে দশটি বড় বড় আবিষ্কার হয়ে গেছে। এর মধ্যে সবচে বড় আবিষ্কার হচ্ছে ডেথ হরমোন। ডাক্তার পিটার স্লীম্যান প্রমাণ করেছেন, একটা নির্দিষ্ট বয়সে পিটুইটারি গ্র্যান্ড থেকে ডেথ হরমোন শরীরে চলে আসে। শরীর তখন মৃত্যুর জন্যে নিজেকে তৈরি করে। শুরু হয় বার্ধক্য প্রক্রিয়া। যে হারে জীবকোষ মরে যায় সেই হারে তৈরি হয় না। জরা শরীরকে গ্রাস করে। ডাক্তার পিটার শ্লীম্যান দেখালেন, সালফার এবং অক্সিজেন ঘটিত একটি আপাতদৃষ্টিতে সহজ যৌগ অণু এই কাজটি করে। তিনি যৌগটি শরীর থেকে বের করে দেবার প্রক্রিয়াও বের করলেন। এই অসম্ভব ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া ব্যবহার করে পৃথিবীর কিছু ভাগ্যবান মানুষ তাদের শরীর থেকে ডেথ হরমোন বের করে দিয়েছে। জরা আর তাদের স্পর্শ করতে পারছে। না।

    তিনি পাশের ঘরে চুপচাপ বসে আছেন। এই ঘরে একটি কফি ডিসপেনসিং রোবট আছে। সে তাকে এক পেয়ালা কফি দিয়ে হাসিমুখে বলেছে, আশা করি এক পেয়ালা উষ্ণ কফি আপনার হৃদয়ের শৈত্য দূর করে দেবে।

    তিনি রোবটের কথার কোন জবাব দিলেন না। এদের তৈরিই করা হয় বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলে মানুষকে চমকৃত করার জন্য। এদের সঙ্গে খানিকক্ষণ কথা বললেই মানুষ হিসাবে নিজেকে তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র মনে হয়। তিনি সামনের গোল টেবিলের উপর রাখা চকচকে কিছু ম্যাগাজিন থেকে একটি তুলে নিলেন। পাতা উল্টিয়ে তাঁর মুখ বিকৃত হল। ভুল ম্যাগাজিন বেছে নিয়েছেন—জেনো-কোড নিউজ। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে রগরগে সব খবরে ভর্তি। এইসব খবরের কোনটির প্রতিই তার কোন আগ্রহ নেই। প্রাণীর জিনের সঙ্গে উদ্ভিদের জিন লাগিয়ে কত সব অদ্ভুত জিনিস তৈরি হচ্ছে তার রগরগে বর্ণনা—পড়তে তার ভাল লাগে না। টমেটো জিনের সঙ্গে গোলাপ গাছের জিন লাগানো হচ্ছেসাফল্য দোরগোড়ায়। এর শেষ কোথায় কে জানে? মানুষ এবং উদ্ভিদের এক সংকর প্রজাতি তৈরি হবে? আগামী পৃথিবীতে কারা বাস করবে? মানব-উদ্ভিদ।

    বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে মানুষের সঙ্গে শিম্পাঞ্জির মিলনে তৈরি হল নতুন প্রজাতি। তারা মানুষ না, আবার শিম্পাঞ্জিও না। গাধা ও ঘোড়ার সংকর যেমন খচ্চর এ-ও তেমনি। তবে সেই পরীক্ষা হয়েছিল গোপনে। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। নতুন প্রজাতি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন নতুন প্রজাতি গ্রহণযোগ্য নয়। সেদিন এই পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বিজ্ঞানীর সাজা দেয়া হয়েছিল। আজ আর সেই দিন নেই। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়াররা আজকের পৃথিবীর সবচে সম্মানিত মানুষ। তাঁদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব রকম সুযোগ এবং অনুমতি দেয়া হয়েছে। কারণ এই পৃথিবীকে তাঁরা ক্ষুধামুক্ত করেছেন। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারদের কারণে আজকের পৃথিবীতে কোন খাদ্যাভাব নেই। সমুদ্রের শৈবালকে তাঁরা স্বাদু স্টার্চে রূপান্তরিত করেছেন। উদ্ভিদের সঙ্গে জীবের জিনের সংযোগে তৈরি করেছেন সুস্বাদু প্রোটিনসর্বস্ব উদ্ভিদ। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়াররা আজকের পৃথিবীর দেবতা।

    আপনার চেক ওকে হয়েছে। আপনি যন্ত্রটি নিতে পারেন।

    আপনাকে ধন্যবাদ।

    আশাকরি এই যন্ত্রের কল্যাণে আপনার সময় আনন্দময় হবে।

    শুভ কামনার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।

    তিনি কালো বাক্সটি বুকের কাছে নিয়ে রাস্তায় নামলেন। রাত বেশি হয়নি, তবু পথঘাট নির্জন। টাউন সার্ভিসের হলুদ বাসগুলি প্রায় ফাঁকা যাচ্ছে—তার যে কোন একটিতে উঠে গেলেই হয়। উঠতে ইচ্ছা করছে না। হাঁটতে ভাল লাগছে। আবহাওয়া চমৎকার, তবে একটু শীত ভাব আছে।

    বেশ কিছু সময় হাঁটার পর তিনি একটা ফাঁকা বাসে উঠে পড়লেন। বাসের ড্রাইভার মুখ ঘুরিয়ে বলল, আপনার নৈশভ্রমণ আনন্দময় হোক। তিনি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন। রোবট ড্রাইভার। পৃথিবী রোবটে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। এই সব রোবট চমৎকার কথা বলে। এদের প্রোগ্রামিং অসাধারণ।

    রোবট ডাইভার বলল, আপনি কত দূর যাবেন?

    তিনি শুকনো গলায় বললেন, কাছেই।

    আপনি মনে হচ্ছে আমার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী নন।

    না।

    কেন বলুন তো?

    তিনি চুপ করে রইলেন। কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। এই সব রোবটের সঙ্গে কথা বলা মানেই হচ্ছে নিজেকে ছোট করা। রোবট গাড়ির গতি বাড়াতে বাড়াতে বলল, আমি রোবট বলেই কি আপনি কথা বলতে চাচ্ছেন না?

    জানি না।

    আমি লক্ষ করেছি বেশিরভাগ মানুষ রোবটদের সঙ্গে কথা বলতে চায় না। সারাক্ষণ গম্ভীর হয়ে থাকে। সারাক্ষণ বিশ্ন হয়ে থাকে যেন তার সমস্যার অন্ত নেই। আমি কি ঠিক বলছি?

    হ্যাঁ।

    আপনারা কী নিয়ে এত চিন্তা করেন?

    তিনি জবাব দিলেন না। জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলেন। গাড়ি রেসিডেনশিয়াল এলাকায় ঢুকেছে। রাস্তার দুপাশে আকাশছোঁয়া বাড়ি। কত লক্ষ মানুষই না এইসব বাড়িতে বাস করে। তবু কেন জানি বাড়িগুলিকে প্ৰাণহীন মনে হয়।

    রোবট ড্রাইভার গাড়ির বেগ অনেকখানি কমিয়ে এনেছে। রেসিডেনশিয়াল এলাকায় গাড়ির গতি অনেক কম রাখতে হয়। ফাঁকা রাস্তা ইচ্ছা করলেই ঝড়ের গতিতে চালানো যায়। রোবট ড্রাইভার কখনো তা করবে না। লালবাতিতে গাড়ি থামল। রোবট বলল, এই শতকে আপনারা মানুষেরা এত অসুখী হয়ে গেলেন কীভাবে?

    জানি না।

    আপনাদের তো অসুখী হবার কোন কারণ নেই। মানুষ ক্ষুধা জয় করেছে, রোগ-ব্যাধি জয় করেছে। অমরত্ব তার হাতের মুঠোয়। তবু এত দুঃখ কেন?

    তিনি বললেন, সামনের ব্লকে আমি নাম।

    অবশ্যই। আপনি কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব দেননি। আপনারা মানুষরা এই শতকে সবই পেয়েছেন। হাইড্রোজেন ফুয়েল আসায় শক্তির সমস্যা। মিটেছে, বাসস্থানের সমস্যা মিটেছে। আপনার নিশ্চয়ই নিজস্ব একটি এ্যাপার্টমেন্ট আছে। আছে না?

    হুঁ।

    আপনি নিশ্চয়ই একা থাকেন না। আপনার স্ত্রী আছে।

    হুঁ।

    তারপরেও পি থার্টি টু কিনে এনেছেন। অনেক টাকা গেল তাই না?

    হুঁ।

    আপনি কি হুঁ ছাড়া আর কিছুই বলবেন না?

    আমি এইখানে নামব।

    স্টপেজের মাঝখানে গাড়ি থামানোর নিয়ম নেই। রোবট ড্রাইভার নিয়ম ভঙ্গ করে গাড়ি থামাল। জানালা দিয়ে মুখ বের করে উঁচু গলায় বলল, আপনার পি থার্টি টু আনন্দময় হোক।

    তিনি রোবটদের মতো গলায় বললেন, ধন্যবাদ।

    তাঁর স্ত্রী হাসপাতালে কাজ করেন। আজ তাঁর নাইট ডিউটি। কাজেই তিনি এ্যাপার্টমেন্টে নেই। টেলিফোনের কাছে ছোট চিরকুট লিখে রেখে গেছেন খাবার তৈরি করা আছে। খেয়ে নিও।

    তিনি খেয়ে নিলেন। অত্যন্ত স্বাদু খাবার। খাবারের সঙ্গে চমৎকার পানীয়। এই পানীয়টি এই শতকের মাঝামাঝি তৈরি করা হয়েছে ঝাঁঝালো টক ধরনের স্বাদ। কিছুক্ষণের জন্যে সমস্ত ইন্দ্রিয় অবশ করে দেয়—বড় ভাল লাগে। গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে তিনি ঘরের চারদিকে তাকালেন, আনন্দের কত উপকরণ চারদিকে ছড়ানো ত্রিমাত্রিক ছবি দেখার জন্যে একটি হলোরামা, যা চালু করামাত্র অনুষ্ঠানের পাত্র-পাত্রীরা মনে হয় সশরীরে ঘরের ঠিক মাঝখানে চলে এসেছে। যেন হাত বাড়ালেই তাদের ছোঁয়া যাবে।

    মস্তিষ্কের আনন্দকেন্দ্ৰ উত্তেজিত করবার জন্যে আছে নানান ব্যবস্থা। সুমধুর সংগীত শ্ৰবণের আনন্দ থেকে শুরু করে নারীসঙ্গের আনন্দের মত তীব্ৰ আনন্দ মস্তিষ্ক উত্তেজিত করেই পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মানুষ কেন আনন্দ পায়, কোত্থেকে আনন্দ পায় তা জেনেছেন। তারা জানেন বাগানের একটি ফুল দেখার আনন্দের সঙ্গে পিঠ চুলকানোর আনন্দের বেশ কিছু মিল আছে, আবার অমিলও আছে। ফুল না দেখেও এবং পিঠ না চুলকিয়েও অবিকল সেই আনন্দ মস্তিষ্কের বিশেষ বিশেষ অংশ উত্তেজিত করে পাওয়া যায়। ঘরে ঘরে সেই ব্যবস্থা আছে। কিন্তু মানুষ তা থেকে আর আনন্দ পাচ্ছে না। মানুষ ঝুঁকেছে পি থার্টি টু-এর দিকে। কে জানে এক সময় হয়ত এই যন্ত্রটিও তার ভাল লাগবে না।

    তিনি তাঁর স্ত্রীকে পি থার্টি টু কেনার খবর দেবার জন্যে ফোন করলেন। রোবটদের মতো ভাবলেশহীন গলায় বললেন, আমি আজ একটি পি থার্টি টু কিনেছি।

    সে কি! সত্যি?

    হ্যাঁ।

    বিরাট ভুল করেছ।

    কেন?

    আমাদের মত দম্পতিদের সরকার থেকে একটি করে এই যন্ত্র দেয়া হবে বলে কথা হচ্ছে। তুমি কি জানতে না?

    জানতাম।

    তাহলে?

    কবে না কবে দেয়—আগেভাগেই কিনে ফেললাম। তুমি কি রাগ করেছ?

    না। যন্ত্রটা কি ব্যবহার করেছ?

    এখনো করিনি। এখন করব।

    আচ্ছা। তোমার যন্ত্র তোমার জীবনকে আনন্দময় করে তুলুক। আমাদের মত দম্পতিদের যন্ত্রের আনন্দের প্রয়োজন আছে।

    তোমাকে ধন্যবাদ।

    তিনি টেলিফোন রেখে দিলেন। কাগজের মোড়ক খুলে কালো বক্সটি বের করে টেবিলে রাখতে রাখতে মনে মনে বললেন, আমাদের মত দম্পতি–এই বাক্যটি আমার ভাল লাগে না।

    ভাল না লাগলেও তাঁর স্ত্রী এই বাক্যটি তাঁকে দিনের মধ্যে কয়েকবার বলেন। হয়ত এই নিয়ে তাঁর মনে গোপন ক্ষোভ আছে। ক্ষোভ থাকার কোনই কারণ নেই। তাঁদের মত দম্পতি পৃথিবীতে অসংখ্য আছে যারা সন্তান জন্মাবার অধিকার পাননি। মানব জাতির স্বার্থেই তা করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে পৃথিবীর জনসংখ্যা কমিয়ে আনার একটি শর্তই হচ্ছে একদল সন্তানহীন দম্পতি।

    মানুষ মৃত্যুকে যদি সত্যি সত্যি জয় করে ফেলে তাহলে জনসংখ্যা আরো কমাতে হবে। তাঁদের মত দম্পতির সংখ্যা আরো বাড়বে।

    তিনি যন্ত্র হাতে নিয়ে সোফায় এসে বসলেন। ইনস্ট্রাকশন ম্যানুয়েল মন। দিয়ে পড়লেন। যন্ত্রটি ব্যবহার করা খুব সহজ-যন্ত্র থেকে বের হওয়া ঋণাত্মক ইলেকট্রোড ঘাড়ের ঠিক মাঝামাঝি লাগাতে হয়। ধনাত্মক ইলেকট্রোড থাকবে বা কপালে। স্ট্যান্ড বাই বোতাম টিপে কারেন্ট ফ্লো এ্যাডজাস্ট করতে হবে যাতে এক মাইক্রো এ্যাম্পায়ারেরও কম বিদ্যুৎপ্রবাহ স্নায়ুতন্ত্র দিয়ে প্রবাহিত হয়। কারেন্ট এ্যাডজাস্ট হবার সঙ্গে সঙ্গেই নীল আলো জ্বলে উঠবে। তখন চোখ বন্ধ করে স্টার্ট বাটন টিপতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে কিছুই হবে না। মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করতে হবে।

    পি থার্টি টু যন্ত্রটি বেশ কিছু শ্বাপদ জন্তুর মস্তিষ্কের স্মৃতি ধরে রেখেছে। এই স্মৃতি বায়ো কারেন্টের মাধ্যমে মানুষের মাথায় সঞ্চারিত করা হয়।

    তিনি যন্ত্র চালু করে বসে আছেন। মাথায় ভোঁতা ধরনের যন্ত্রণা হচ্ছে অল্প পিপাসাও বোধ হচ্ছে। হঠাৎ সেই পিপাসা হাজারো গুণে বেড়ে গেল। তৃষ্ণায় তাঁর বুক ফেটে যাচ্ছে—এই তৃষ্ণার কারণেই বোধ হয় তার ঘ্রাণশক্তি লক্ষগুণ বেড়ে গেল। তিনি এখন সব কিছুর ঘ্রাণ পাচ্ছেন। মাটির ঘ্ৰাণ, ফুলের ঘ্ৰাণ, গাছের শেকড়ের ঘ্রাণ। তাঁর জগতটি ঘ্রাণময় হয়ে গেছে। এবং তিনি বুঝতে পারছেন তিনি শহরের সাতানব্বই তলার সাজানোগোছাননা কোন এ্যাপার্টমেন্টে বাস করেন না। তিনি বাস করেন বনে। গহীন বনে। তিনি কে? তিনি কি…

    বোঝা যাচ্ছে, পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, তিনি একটি চিতাবাঘ। বাঘ নয় বাঘিনী। তাঁর তিনটি শিশু শাবক আছে। গত দুদিন এদের তিনি আগলে রেখেছেন। আজ প্রবল তৃষ্ণায় অস্থির হয়ে এদের ছেড়ে পানির সন্ধানে বের হয়েছেন। পানি কোথায় আছে তা তিনি জানেন পানিরও গন্ধ আছে। সেই গন্ধ মাটির গন্ধের মতই তীব্র। পানি আছে, কাছেই আছে। এক মুহূর্তের মধ্যেই তিনি পানির কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারেন কিন্তু যেতে পারছেন না। কাছেই কোথায় যেন পুরুষ বাঘটা ঘুরঘুর করছে। এর মতলব ভাল না। বাচ্চাদের হয়ত মেরে ফেলবে। এদের একা রেখে কোথাও যাওয়া যাবে না। অথচ তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে।

    আকাশে বিরাট চাঁদ। তার আলোয় বনভূমি ঝলমল করছে। কনকন করে বইছে শীতের বাতাস। বাতাসে কী অদ্ভুত শব্দেই না গাছের পাতা নড়ছে। যে সব পাতা নড়ছে তার থেকে এক ধরনের গন্ধ আসছে। আবার স্থির পাতা থেকে অন্য ধরনের গন্ধ। কী বিচিত্র, কী বিচিত্র চারপাশের জগত। কোন্ স্তরেই না পৌঁছে গেছে অনুভূতির তীব্রতা!

    তাঁর শরীর থরথর করে কাঁপছে। তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে—অথচ কী আনন্দই না তিনি রক্তের ভেতর অনুভব করছেন। তিনি জলের সন্ধানে এগুচ্ছেন অথচ তার সমস্ত ইন্দ্ৰিয় তাঁর শাবকদের দিকে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীল অপরাজিতা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }