Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প1195 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০২. খুব ঠাণ্ডা লাগছে

    খুব ঠাণ্ডা লাগছে। ভয়াবহ ঠাণ্ডা। হাত-পা-শরীর সব যেন জমে যাচ্ছে। এরকম কেন হচ্ছে? রফিকের গায়ে গরম কাপড়, মাথায় কানঢাকা টুপি। চোখে কালো চশমা। এই চশমা মুখের উপর চেপে বসে আছে। নিশ্বাস নেবার জন্যে নাকে কিছু একটা লাগানো আছে। তার পায়ে জুতা, সেই জুতা হাঁটু পর্যন্ত এসেছে। কোমরে বেল্ট বাধা। বেল্ট থেকে অনেক কিছু ঝুলছে। মাথায় হেলমেট আছে। সেই হেলমেট বেশ ভারি। মাথা সোজা করে রাখতে তার কষ্ট হচ্ছে। সবচে কষ্ট হচ্ছে নিশ্বাস নিতে। খুব বড় করে নিশ্বাস টানার পরেও তার বুক ভরছে না। বাতাসে মনে হচ্ছে অক্সিজেন নেই। ফুসফুসে বাতাস ঢুকছে আর মনে হচ্ছে ফুসফুস ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছে।

    সে মন্তবড় একটা হলঘরে আছে। সে শুয়ে আছে, না বসে আছে নাকি দাঁড়িয়ে আছে কিছুই বুঝতে পারছে না। এটা কি কোন স্বপ্নদৃশ্য? স্বপ্ন দৃশ্য তো মনে হচ্ছে না। স্বপ্ন দৃশ্যে ঠাণ্ডা-গরমের অনুভূতি থাকে না। রফিক ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে চেষ্টা করল। ঘরের দেয়াল, মেঝে, ছাদ সবই একরকম। সবকিছুই মনে হচ্ছে নীল কাচে তৈরি। নীল কাছ থেকে অস্পষ্ট আলো আসছে। আলো অস্পষ্ট হলেও চোখে লাগছে। ঘরের ছাদ, দেয়াল বা মেঝে কোনদিকেই বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যাচ্ছে না। একদিক থেকে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালে যে চোখের আরাম হচ্ছে তাও না। রফিককে ঘনঘন চোখ বন্ধ করতে হচ্ছে।

    তার তৃষ্ণাবোধ হচ্ছে। এই তৃষ্ণাবোধও অন্যরকম। থেমে থেমে হচ্ছে। তৃষ্ণা কিছুক্ষণ পরপর চলে যাচ্ছে। আবার হচ্ছে। যখন তৃষ্ণাবোধ হচ্ছে তখন হাতের আঙুলগুলির মাথায় চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। রফিক তার চোখের সামনে দুটা হাত তুলল। হাতে গ্লাভস পরা। আঙুল দেখা যাচ্ছে না। গ্লাভসের আঙুলের প্রতিটি মাথা থেকে তার বের হয়েছে। তারগুলির শেষ মাথাটা কোথায় বোঝা যাচ্ছে না।

    ঘর পুরোপুরি শব্দহীন। শব্দহীন ঘরেও শব্দ থাকে। এখানে তাও নেই। রফিক বলল, এখানে কে আছেন? কোন উত্তর পাওয়া গেল না। বদ্ধ ঘরে কথা বললে প্ৰতিধ্বনি হবার কথা। কোন প্রতিধ্বনি হচ্ছে না। বরং ঘরের দেয়াল ছাদ-মেঝে সব শব্দ চোষকাগজের মত চুষে নিয়ে যাচ্ছে।

    রফিক বলল, আমি কোথায়? আমি জানতে চাচ্ছি আমি কোথায়?

    কেউ কোন জবাব দিল না। রফিক আবার বলল, আমি কোথায়?

    ঘরের আলো হঠাৎ খানিকটা বাড়ল। নিশ্বাস নিতে এতক্ষণ রফিকের যে কষ্ট হচ্ছিল হঠাৎ সেই কষ্ট কমে গেল। রফিকের মনে হল সে স্বাভাবিকভাবে নিশ্বাস নিতে পারছে। তবে পানির তৃষ্ণা হঠাৎ যেন বেড়ে গেছে। তার কাছে মনে হচ্ছে সে এখন পুরো একবালতি পানি একচুমুকে খেয়ে ফেলতে পারবে।

    কেউ কি আছেন যিনি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?

    দুবার ঘণ্টা বাজার মত শব্দ হল। বর্ষার রাতে বিদ্যুৎ চমকালে ঘর যেমন আলো হয়ে হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যায় সে রকম হল এবং তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পুরুষ-গলায় কেউ একজন বলল,

    হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি।

    আমি কি জানতে পারি আমি কোথায়?

    তুমি জান না তুমি কোথায়?

    না আমি জানি না।

    তুমি যে ঘরে আছ সেই ঘর কি তোমার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছে না?

    না পরিচিত মনে হচ্ছে না। আমি কোথায়?

    তোমাকে কিউবিকেলসে রাখা হয়েছে।

    কোথায় রাখা হয়েছে।

    কিউবিকেলসে।

    ব্যাপারটা কি?

    ব্যাপারটা কি তুমি জান না?

    না আমি জানি না।

    আশেপাশের সবকিছুই কি তোমার কাছে অপরিচিত লাগছে?

    হ্যাঁ লাগছে।

    আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার কাছে আস্তে আস্তে সব পরিচিত। লাগতে শুরু করবে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে। ধৈর্য ধর। অস্থির হয়ো না। তোমাকে কিউবিকেলসে রাখা হয়েছে।

    কেন?

    বিজ্ঞানীরা তোমাকে নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করছেন?

    আমার কি হয়েছে?

    তোমার কি হয়েছে এটা জানার জন্যেই পরীক্ষা-নীরিক্ষা হচ্ছে। তুমি কি তোমার নাম জান?

    নাম জানব না কেন? আমার নাম রফিক।

    তোমার নাম রফিক না, তোমার নাম রেফ্‌।

    আমার নাম রেফ্‌?

    হ্যাঁ তোমার নাম রেফ্‌?

    আমার খুবই তৃষ্ণাবোধ হচ্ছে। আমি কি একগ্লাস পানি খেতে পারি?

    তোমার কোন তৃষ্ণাবোধ হচ্ছে না, কাজেই পানি খাবার তোমার কোন প্রয়োজন নেই। তোমার শরীরবৃত্তীয় প্রতিটি কর্মকাণ্ড আমরা মনিটার করছি। তোমার শরীরে রক্তপ্রবাহে সামান্য সমস্যা হচ্ছে। যখন সমস্যাটা হচ্ছে তখনি তুমি তৃষ্ণাবোধ করছ। বল এই মুহূর্তে কি তোমার তৃষ্ণাবোধ হচ্ছে?

    না। আমি কি মুখোমুখি বসে কারো সঙ্গে কথা বলতে পারি? এখন না।

    কখন?

    তোমাকে কিছু প্রশ্নের জবাব আগে দিতে হবে। তোমার শরীরে এমএফ ৪৫ সিরাম ঢুকানো হয়েছে। এই সিরামের প্রভাব না কাটা পর্যন্ত তোমার সঙ্গে আমি ছাড়া কেউ কথা বলবে না।

    আপনি কে?

    আমি মূল কম্পিউটারের অংশ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট। অষ্টম ধারার রোবট। তোমার দায়িত্বে আমাকে রাখা হয়েছে। গত চার বছর ধরে আমি তোমার দেখাশোনা করছি।

    গত চার বছর ধরে আমি এখানে আছি?

    হ্যাঁ। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমি গত তিনমাস ধরে আছি ইয়াসিন সাহেবের বাসায়। তার আগে ছিলাম সালাম সাহেবের বাড়িতে। সালাম সাহেব সখিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

    রেফ্‌।

    আমাকে বলছেন?

    হ্যাঁ তোমাকে বলছি। আমি এখন প্ৰশ্ন শুরু করব তুমি প্রশ্নের উত্তর দেবে।

     

    আমি প্রশ্ন করার পরপরই একটা ছোট্ট ঘণ্টা বাজবে। ঘন্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে নীল আলোর ঝলকানি হবে। তার পরপরই ঘর অন্ধকার হয়ে যাবে। তখন তুমি প্রশ্নের উত্তর দেবে। দ্বিতীয় প্রশ্নের সময় আবারো নীল আলোর ঝলক দেখবে। তোমাকে যা মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে নীল আলো থাকা অবস্থায় কখনো প্রশ্নের উত্তর দেবে না।

    আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে। প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে অন্ধকারে।

    এমএফ ৪৫ সিরামের কারণে এটা হচ্ছে। শারীরিক এই অস্বস্তি সাময়িক। এমএফ ৪৫ খুবই ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ড্রাগ।

    এই ড্রাগ আমাকে দেয়া হচ্ছে কেন?

    এই ড্রাগ তোমাকে দেয়া হচ্ছে যাতে তুমি সত্যি কথা বল। প্রশ্নের সত্যি জবাব দাও। এই ড্রাগ মানুষের মিথ্যা বলার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এখন প্রশ্নপর্ব শুরু হচ্ছে। তুমি কি প্রস্তুত?

    আমার শরীর খুবই খারাপ লাগছে। কিন্তু আমি প্রশ্নের উত্তর দেব।

    প্রথম প্রশ্ন—তোমর নাম কি?

    আমি এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছি।

    আবার জবাব দাও।

    আমার নাম রফিক। রেফ্‌ নামটি কি তোমার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছে?

    না।

    কিউবিকেলস-এর ভেতর তুমি জেগে উঠলে। জেগে ওঠার আগে তোমার স্মৃতি কি? তুমি বলছ তুমি রফিক। রফিক, তুমি এখানে জেগে ওঠার আগে কি করছিলে?

    চাঁদ দেখছিলাম।

    পুরো ঘটনা বল।

    আমি একটা টেলিস্কোপ বানিয়েছিলাম। সেই টেলিস্কোপে চাঁদ দেখছিলাম।

    তোমার আশেপাশে কে ছিল?

    কেউ ছিল না, তবে রাত যখন কাটল তখন আমার জন্যে চা নিয়ে এল শেফা।

    কি নাম বললে?

    শেফা।

    নামটা আবার বল।

    শেফা।

    সে চা নিয়ে উপস্থিত হল?

    জ্বি।

    তুমি চা খেলে?

    জ্বি।

    তোমাদের ভেতর কোনো কথা হয়েছে?

    শেফা খুব রাগ করল।

    রাগ করল কেন?

    কারণ আমি তাকে বলেছিলাম যে টেলিস্কোপটা তৈরি হবার পর তাকে প্রথম চাঁদ দেখতে দেব। তারপর ভুলে গেছি। এই নিয়ে রাগ করল।

    তারপর কি হল?

    শেফার মা শেফাকে ডেকে ঘরে নিয়ে গেলেন।

    তুমি যে টেলিস্কোপটি তৈরি করলে তার ম্যাগনিফিকেশন কি তোমার মনে আছে?

    ১০০x

    অবজেকটিভ এবং আই পিস-এর ফোকাল লেংথ মনে আছে?

    মনে আছে। বলব?

    না বলার দরকার নেই। যে মেয়েটি তোমার জন্যে চা নিয়ে এসেছিল তার নাম আবার বল।

    তার নাম শেফা। ভাল নাম শেফালী। শেফালী বেগম থেকে শেফা।

    চা খাওয়া শেষ হবার পর তুমি কি করলে?

    আমার ঘুম পাচ্ছিল। সারারাত জেগে ছিলাম। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। ঘুমুতে গেলাম। ঘুম ভাঙার পর দেখি আমি এই জায়গায়।

    তোমাকে যে এমএফ সেরাম দেয়া হয়েছিল তার প্রভাব শেষ হয়ে আসছে। আমাদের প্রশ্ন-উত্তর পর্ব এক্ষুণি শেষ হবে। শেষ প্রশ্ন যে মেয়েটি তোমার জন্যে চা নিয়ে এসেছে তার নাম কি?

    আমি অনেকবার এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছি।

    আবার দাও।

    মেয়েটির নাম শেফা।

    তুমি কি আমার নাম জান?

    তুমি বলেছ তুমি একটা কম্পিউটার। কম্পিউটারের মানুষের মত নাম থাকে বলে আমি জানি না।

    কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটার যে রোবট বহন করে তার মানুষের মত নাম আছে। আমার নাম শেফ্‌।

    তোমার কি নাম বললে?

    আমার নাম শেহ্। তোমার কাছে যে মেয়েটি চা নিয়ে গিয়েছিল তার নাম শেফা। তুমি কি এই দুটি নামের মধ্যে মিল দেখতে পাচ্ছ?

    পাচ্ছি। আমি আর আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারছি না। আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে।

    ঘুমিয়ে পড়।

    আমার খুব পিপাসা পেয়েছে। ঠাণ্ডা পানি খেতে হবে। দয়া করে একগ্লাস পানি খাবার ব্যবস্থা করে দিন।

    তোমার কোন তৃষ্ণা পায় নি। তোমার রক্তে ইলেকট্ৰলাইটের সামান্য অভাব হয়েছে। এমএফ সিরাম রক্ত থেকে ইলেকট্ৰলাইট নিয়ে নেয়। তোমাকে বাইরে থেকে ইলেকট্ৰলাইট দেয়া হচ্ছে। এক্ষুণি তোমার তৃষ্ণা কেটে যাবে। তোমার খুব ভাল ঘুম হবে। চোখ বন্ধ করে ফেল।

    রফিক চোখ বন্ধ করল।

    বল একশ এক

    রফিক বলল, একশ এক…

    এখন বল একশ দুই।

    একশ দুই।

    বল একশ তিন

    একশ তিন।

    একশ সাত পর্যন্ত এসেই রফিক গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। সে কতক্ষণ ঘুমাল সে নিজেও জানে না। তার ঘুম ভাঙল সন্ধ্যায়। শীতের ব্যাপারটি নেই। শরীর হালকা লাগছে। তার নাম যে রেফ এটা এখন তার কাছে পরিষ্কার। দীর্ঘদিন ধরে তার চিকিৎসা চলছে এ ব্যাপারটা সে এখন ধরতে পারছে। হাসপাতালে আসার আগে যে ছোট্ট ঘরে থাকত সেই ঘরের ছবিও চোখে ভাসছে। তার পেশা কি ছিল তা এখনো মনে পড়ছে না। তবে নিশ্চয়ই মনে পড়বে। মস্তিষ্ক জেগে উঠতে শুরু করেছে। পুরোপুরি জাগতে সময় লাগবে।

     

    সুন্দর সাজানো ছোট্ট ঘর। জানালার কাছে আরামদায়ক বিছানা। জানালা দিয়ে দূরের ঝাউবন এবং ঝাউবনের ফাঁকে ফাঁকে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। সমুদ্রের পানির রঙ গাঢ় নীল। ঝাউগাছের পাতা নড়ছে না। পাতা মোটামুটি স্থির। তবে সমুদ্রে প্রচুর ঢেউ। ঢেউ-এর আছড়ে পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে।

    তার খাটের পাশে চশমা চোখে একজন বুড়ো মানুষ বসে আছেন। সোনালি ফ্রেমের চশমায় তাঁকে সুন্দর দেখাচ্ছে। মানুষটার মাথার সমস্ত চুল ধবধবে শাদা। তিনি কিছুক্ষণ পরপরই চুলে আঙুল দিয়ে বিলি কাটছেন এবং বিলি কাটার সময়ে হাসছেন। চুলে বিলি কাটা এবং হাসি দুটিই একসঙ্গে চলছে। মনে হচ্ছে তার চুলের গোড়ায় সুড়সুড়ি আছে। আঙুল লাগলেই হাসি পায়।

    বৃদ্ধ তার দিকে ঝুঁকে এসে বললেন, রেফ কেমন আছ?

    ভাল।

    ঘুম কেমন হয়েছে?

    ভাল ঘুম হয়েছে।

    শরীর কি ফ্রেস লাগছে?

    লাগছে।

    তাহলে শুয়ে না থেকে উঠে বোস। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাও। তোমার মন ভাল হয়ে যাবে। আজকের সমুদ্র অস্বাভাবিক নীল। তাছাড়া খুব ঢেউ হচ্ছে।

    রে উঠে বসল। তার গায়ে বাদামি রঙের একটা পাতলা কম্বল। সে গায়ে কম্বল জড়িয়েই জানালা দিয়ে তাকাল।

    বুড়ো ভদ্ৰলোক বললেন, সুন্দর লাগছে কিনা বল?

    খুব সুন্দর লাগছে।

    খিদে লেগেছে? কিছু খাবে?

    সে জানালা থেকে চোখ না সরিয়ে বলল, খিদে লেগেছে কিন্তু কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না।

    বুড়ো জ্বলোক বললেন, কফি খেলে কেমন হয় বল তো। আমার কফি খেতে ইচ্ছা করছে। দুকাপ কফি নিয়ে আসি। কফি খেতে খেতে গল্প করা যাবে।

    রেফ্‌ কিছু বলল না। সে একদৃষ্টিতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। সিবিচে একটা মেয়েকে হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছে। মেয়েটার হাতে লাল ছাতা। মেয়েটি নাচের ভঙ্গিতে লাল ছাতা দোলাচ্ছে। রেফ্‌ এখন আর সমুদ্র দেখছে না। সে দেখছে মেয়েটাকে। মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। ছাতা দিয়ে সে তার মুখ ঢেকে ফেলেছে।

    কফি নাও।

    সে কফির কাপ হাতে নিল। একটা চুমুক দিয়ে বুড়ো ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলল, প্রফেসর বার্ন, জানালা দিয়ে যে সমুদ্র আমি দেখছি এটা তো একটা কৃত্রিম সমুদ্র। তাই না?

    হ্যাঁ তাই। কৃত্রিম তো বটেই। পর্দায় তৈরি করা ইমেজ। তোমার জানালার কাচে সমুদ্রের ইমেজ তৈরি করা হয়েছে। ইমেজটা নিখুঁত কি না বল।

    অবশ্যই নিখুঁত। কেউ বলে না-দিলে কারো বোঝার সাধ্যও নেই নকল সমুদ্র দেখছি। প্রফেসর বার্ন!

    বল কি বলবে?

    কফি খেতে খুব ভাল লাগছে। আপনাকে ধন্যবাদ।

    আমাকে ধন্যবাদ দেবার কিছু নেই, ভাল কফি বানানোর কোন কৃতিত্ব আমার না। কফি-মেশিন কফি দিয়েছে। তবে এই কফিও নকল। আধুনিক ফুড মেকার মেশিনগুলি অসাধারণ। নকল-আসল বোঝার কোন উপায় নেই। তুমি কি আরেক কাপ খাবে?

    জ্বি না। আচ্ছা প্রফেসর বার্ন এই সেনিটোরিয়ামে আমার মত রোগী কি আরো আছে?

    এই সেনিটোরিয়ামে অনেকেই আছে। তবে একেকজনের সমস্যা একেক রকম। কারো সমস্যার সঙ্গে অন্য কারোর সমস্যার কোন মিল নেই।

    আমরা রোগীরা কি একই সমুদ্র দেখছি, নাকি একেকজন একেক রকম সমুদ্র দেখছি।

    জানালা দিয়ে কে কি দেখবে তা রোগীর সাইকোলজিক্যাল প্রফাইল দেখে তৈরি করা হয়। সবাই তো আর সমুদ্র পছন্দ করে না। কাজেই কেউ দেখছে। অরণ্য, কেউ শহর দেখছে।

    আমার যদি এখন সমুদ্র না দেখে অন্য কিছু দেখতে ইচ্ছা করে আমি কি তা পারব?

    না পারবে না। তুমি কি দেখবে-না-দেখবে তা তোমার দায়িত্বে নিয়োজিত রোবট ঠিক করে দেবে। তার কাছে তোমার পুরো ডিএনএ ম্যাপিং আছে। তুমি নিজেকে যতটা চেন এই রোবট তোমাকে তারচে অনেক ভাল চেনে।

    প্রফেসর বার্ন উঠে দাঁড়ালেন। রেফ্‌ সমুদ্রের দিক থেকে তার চোখ ফিরিয়ে নিল। শান্ত গলায় বলল, প্রফেসর আমার বিষয়ে আপনাদের সিদ্ধান্ত কি?

    কোন্ সিদ্ধান্তের কথা বলছ?

    আপনারা কি আমাকে ছেড়ে দেবেন? না আরো পরীক্ষা-নীরিক্ষা করবেন?

    বুঝতে পারছি না।

    আপনাদের পরীক্ষা কি শেষ হয়েছে, নাকি বাকি আছে?

    পরীক্ষা শেষ হয়েছে।

    পরীক্ষার ফলাফল কি? আমার অসুখটা কি?

    আমরা তোমার অসুখের কোন নাম দিতে পারছি না। আপাতত কেইস স্ট্যাডি DA 001 এই নামে চলছে। তোমার স্বপ্ন-সংক্রান্ত জটিলতা হচ্ছে। তুমি দীর্ঘ স্বপ্ন দেখছ। স্বপ্নগুলি সত্য মনে হচ্ছে। তোমার মস্তিষ্কে ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল ঠিকমত প্রসেস করতে পারছে না। খানিকটা এলোমেলো করে দিচ্ছে। যে কারণে তোমার মস্তিষ্ক ধরতে পারছে না, কোন্ জগৎটি সত্যি। স্বপ্নের জগৎটি সত্যি না বাস্তবের জগৎটি সত্যি।

    এমন কি হতে পারে যে দুটিই সত্যি?

    না হতে পারে না।

    হতে পারে না কেন?

    একই সময়ে একটি বস্তু দুই জায়গায় থাকতে পারে না।

    সাব-এটমিক পার্টিকেল কিন্তু এটা পারে।

    তুমি কোন সাব-এটমিক পার্টিকেল নও। তুমি একজন মানুষ।

    রেফ্‌ কফির কাফ নামিয়ে রাখতে রাখতে বলল, এখন আমার একটা প্রশ্নের জবাব দিন।

    প্রফেসর বার্ন শান্ত স্বরে বললেন-আমি প্রশ্নের জবাব দেবার চেষ্টা করব।

    এখন তো আমি জেগে আছি। আমার সামনে আপনি বসে আছেন, একটু আগে কফি খেলাম। জানালা দিয়ে তাকিয়ে সমুদ্র দেখলাম এটা কি স্বপ্ন না সত্যি।

    প্রফেসর বাৰ্ন হেসে ফেললেন, হাসতে হাসতে বললেন, এটা স্বপ্ন না। এটা সত্যি। গায়ে চিমটি কেটে দেখ ব্যথা পাবে।

    এত নিশ্চিত হয়ে বলছেন কিভাবে?

    নিশ্চিত হয়ে বলাটাই কি স্বাভাবিক না। আমরা তোমার চিকিৎসা শুরু করেছি তোমার স্বপ্ন-সংক্রান্ত সমস্যার কথা জেনে।

    সমস্যার কোন সমাধান আপনাদের কাছে নেই?

    না। আমারা গত চার বছর ধরে আমার চিকিৎসা করছেন?

    হ্যাঁ চার বছরের কিছু বেশি।

    চিকিৎসায় যখন কোন লাভ হচ্ছে না তখন আমাকে ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন?

    বিজ্ঞান কাউন্সিলের বিশেষ নির্দেশ আছে তোমাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার। তাছাড়া মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীকে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে দেয়া হয় না। বিজ্ঞান কাউন্সিল এই বিষয়ে অত্যন্ত কঠিন।

    আমার ধারণা আমাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এই ধারণা কি সত্যি?

    প্রফেসর বার্ন জবাব দিলেন না। মাথার চুল টানতে লাগলেন এবং হাসতে লাগলেন। রেফ্‌ বলল, বিজ্ঞান কাউন্সিলের কারো সঙ্গে কি আমি কথা বলতে পারি?

    না পার না। সাধারণ একজন মানসিক রোগীর সঙ্গে বিজ্ঞান কাউন্সিলের কেউ কথা বলবেন না।

    আমাকে সাধারণ একজন মানসিক রোগী ভাবা হচ্ছে? হ্যাঁ।

    কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি কম্পিউটার আমার দেখাশোনা করছে। সে অষ্টম ধারার রোবট, বিজ্ঞান কাউন্সিল সাধারণ একজন মানসিক রোগীর পেছনে এমন একটি কম্পিউটার সার্বক্ষণিকভাবে ব্যবহার করবেন, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

    না। বিশ্বাসযোগ্য না।

    কাজেই আমি সাধারণ একজন মানসিক রোগী না। আমি বিশেষ কিছু। সেই বিশেষ কিছুটা কি আমি জানতে চাচ্ছি। আমার ধারণা বিজ্ঞান কাউন্সিল এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করতে পারে। আমিও বিজ্ঞান কাউন্সিলকে সাহায্য করতে পারি।

    আমি তোমার প্রস্তাব বিজ্ঞান কাউন্সিলকে পৌঁছে দেব।

    ধন্যবাদ। আমি কি আরেকটি অনুরোধ আপনাকে করতে পারি।

    অবশ্যই পার তবে অনুরোধ রক্ষা করতে পারব কি না সেটা বলতে পারছি না। আমার ক্ষমতা সীমিত।

    আমি কি স্বপ্ন দেখি তা তো আপনারা জানেন।

    হ্যাঁ জানি।

    শুরু থেকে এই পর্যন্ত কি কি স্বপ্ন দেখেছি তা আমি জানতে চাই। আমার ফাইলটা আমি নিজে পড়তে চাই।

    মানসিক রোগীকে কখননা তার নিজের ফাইল দেখতে দেয়া হয় না।

    নিয়মের ব্যতিক্রম কি করা যায় না।

    না যায় না।

    রে বিছানা থেকে নামার সঙ্গে ঘরটা লম্বাটে হয়ে গেল। জানালা অদৃশ্য। জানালার পাশে খাট, খাটের উপর রাখা কম্বল সবই অদৃশ্য। এখন এটা আর ঘর না, লম্বা টানা-বারান্দা। বারান্দাভৰ্তি ফুলের টব। বারান্দার বাইরে বাগান। গাছভর্তি ফুল দূরের সমুদ্রও বাগান থেকে দেখা যাচ্ছে। বারান্দা তৈরি হয়েছে তার হাঁটার জন্যে। যতক্ষণ সে হাঁটবে ততক্ষণ বারান্দা থাকবে। গাছভর্তি নকল ফুল থাকবে, নকল সমুদ্র থাকবে। সে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে তার পাশে একটা চেয়ার তৈরি হয়ে যাবে। সে চেয়ারে বসে বিশ্রাম করতে পারবে।

    সে বারান্দার এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত হাঁটল। তার ইচ্ছা করছে বারান্দা থেকে নেমে বাগানের দিকে যেতে। সে-চেষ্টা করে লাভ নেই। বারান্দা থেকে নামা যাবে না। তার চারদিকে কঠিন দেয়াল। দেয়ালে বাগান বা সমুদ্রের ছবি ভেসে উঠছে। হাত বাড়ালেই দেয়াল ছোঁয়া যাবে। হাত বাড়াতে ইচ্ছে করছে না। খোলা বারান্দার একটা বিভ্রম তৈরি হয়েছে। বিভ্রমটা থাকুক।

    সে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলল, কম্পিউটার শেফ কি আছে? আমি কথা বলতে চাচ্ছি। আমি খুব অস্থির বোধ করছি। এই মুহূর্তে আমার কারো সঙ্গে কথা বলা দরকার।

    কম্পিউটার শেফ্ এর গলা শোনা গেল। মিষ্টি চাপা গলা। মানুষের গলার স্বর এবং কম্পিউটারের গলার স্বরে একটু তফাত আছে। মানুষের গলার স্বর কথা বলা বন্ধ করার পরেও কিছুক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকে। কম্পিউটারের গলার স্বর থাকে না।

    আমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কম্পিউটার শেফ্‌। তুমি অস্থির বোধ করছ কেন?

    আমাকে একটা ছোট্ট ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। অস্থির বোধ করার জন্যে এই কারণটাই কি যথেষ্ট না।

    ছোট ঘর কেন বলছ। বারান্দার দৈর্ঘ্য একুশ মিটার। তুমি চাইলে এই দৈর্ঘ্য আরো বাড়ানো যাবে। আরো দশ মিটার বাড়িয়ে দেই? তুমি কি চাও?

    না আমি চাই না। বারান্দার দৈর্ঘ্য একশ মিটার হলেও আমার কিছু যায়আসে না। কারণ আমি বারান্দায় আটকা পড়ে আছি। বন্দি হয়ে থাকার ব্যাপারটা তোমরা বুঝবে না। কারণ তোমরা জন্ম থেকেই বন্দি।

    আমি একেবারেই যে বুঝতে পারি না, তা না। তুমি প্রায়ই ভুলে যাও যে আমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটার।

    মানবিক আবেগ কি তোমার আছে?

    বুদ্ধির সঙ্গে আবেগের কোন সম্পর্ক নেই।

    তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছ না। মানবিক আবেগ কি তোমার আছে?

    নেই।

    কাজেই আমার কষ্ট অনুভব করার কোন কারণ তোমার নেই।

    তা অবশ্যি নেই।

    এই অবস্থা থেকে আমার মুক্তির কোন উপায় কি আছে?

    গত চার বছরে অসংখ্যবার তুমি আমাকে এই প্রশ্ন করেছ। আমি একই। উত্তর দিয়েছি। আবারও প্রশ্ন করছ কেন?

    প্রতিবারই প্রশ্ন করার পর মনে হয় হয়ত এ বারের উত্তর অন্যরকম হবে।

    না উত্তর অন্যরকম হবে না। বন্দিদশা থেকে তোমার মুক্তির কোন আশা নেই। তোমাকে ঘিরে যে রহস্য তৈরি হয়েছে সেই রহস্য ভেদ না হওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞান কাউন্সিল তোমাকে মুক্তি দেবে না। তোমার রহস্যভেদ হবার আশা নেই। বললেই হয়।

    অর্থাৎ বাকি জীবন আমাকে এখানে থাকতে হবে? নকল সমুদ্র, নকল। বাগান দেখে কাটাতে হবে?

    হ্যাঁ তাই। সমুদ্র দেখে দেখে তুমি যদি ক্লান্ত হয়ে থাক তাহলে সমুদ্রের দৃশ্য বদলাবার ব্যবস্থা আমি করতে পারি। যদিও আমি জানি সমুদ্র ছাড়া অন্য কোন দৃশ্য তোমার ভাল লাগবে না। তোমার সাইকোলজিক্যাল প্রফাইল তাই বলে।

    রে ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি বাতাসের সঙ্গে কথা বলছি বলে মনে হচ্ছে। কথা বলে আরাম পাচ্ছি না। আমার ভাল লাগছে না।

    তুমি চাইলে সামনে আসতে পারি। তখন তো তুমি বলবে যন্ত্রের সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগছে না।

    বাতাসের সঙ্গে কথা বলার চেয়ে যন্ত্রের সঙ্গে কথা বলা ভাল।

    রোবট শেকে বারান্দায় আসতে দেখা গেল। কে বলবে সে রোবট। হাসিখুশি কিশোরী মেয়েদের মত মুখ। ছটফটে ভঙ্গি। সে বারান্দায় এসেই প্রায় চেঁচিয়ে ওঠার ভঙ্গিতে বলল, রেফ কেমন আছ।

    ভাল। চেঁচামেচি করার দরকার নেই, সহজভাবে কথা বল। তুমি মানুষের মত হবার যত অভিনয়ই কর আমার মাথা থেকে কখনো যাবে না যে তুমি রোবট ছাড়া কিছু না। তুমি খুব ভেবেচিন্তে বল, আমি কি বিশেষ কেউ?

    অবশ্যই।

    কারণ কি?

    কারণ একই সঙ্গে তুমি দুটি ভিন্ন সময়ে বাস করছ বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিভাবে এটা সম্ভব হচ্ছে তা ধরা যাচ্ছে না বলেই বিজ্ঞানীদের ভুরু কুঁচকে যাচ্ছে।

    কোন থিওরি দাড় করানো যায় নি?

    না। তুমি টাইম প্যারাডক্স তৈরি করেছ। এই টাইম প্যারাডক্সে অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই।

    হাস্যকর কথা নয় কি?

    বিজ্ঞান এর চেয়ে অনেক হাস্যকর ব্যাপার স্বীকার করে নিয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান একই সঙ্গে যুক্তি এবং যুক্তিহীনতার বিজ্ঞান। আপাতদৃষ্টিতে খুবই হাস্যকর মনে হয় এমন সব ব্যাপার বিজ্ঞান স্বীকার করে নিয়েছে।

    বিজ্ঞান কাউন্সিল আমাকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি করবে?

    খুব সম্ভব মেরে ফেলবে। তাদের ধারণা হতে পারে তোমাকে বাঁচিয়ে রাখা পরবর্তীতে অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।

    তোমার ধারণা তারা আমাকে মেরে ফেলবে?

    হ্যাঁ আমার তাই ধারণা। তোমাকে নিয়ে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়েছে। কাজেই…।

    কবে নাগাদ তারা আমাকে মেরে ফেলতে পারে বলে তুমি মনে কর?

    যে-কোন সময় পারে। ঘটনা আজও ঘটতে পারে। তবে কাউকে মেরে ফেলতে হলে বিজ্ঞান কাউন্সিলের অনুমোদন লাগে। তোমার ব্যাপারে অনুমোদন জোগাড় করা কঠিন হবে না।

    ভাল।

    তোমার জন্যে অবশ্যই ভাল। তুমি বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি চাচ্ছিলে। এছাড়া তোমার মুক্তির আর কোন পথ নেই।

    রে কঠিন গলায় বলল, তোমাকে খুব আনন্দিত মনে হচ্ছে। আমি জানি অষ্টম ধারার রোবটদের মাথায় মানবিক আবেগসম্পন্ন কম্পিউটার বসানো আছে। মানবিক আবেগসম্পন্ন কেউ আমার পরিণতি জেনে আনন্দিত হতে পারে না।

    সরি।

    আচ্ছা শোন, যখন আমি সুস্থ ছিলাম অর্থাৎ স্বপ্নপর্ব শুরু হবার আগে আমার পেশা কি ছিল।

    তুমি ছিলে প্রবলেম সলভার।

    তার মানে কি?

    তোমাকে নানান ধরনের সমস্যার সমাধান করতে দেয়া হত। তুমি তোমার ঘরে বসে বসে সেইসব সমস্যার সমাধান করতে।

    কি ধরনের সমস্যার সমাধান করতাম।

    এটা বলা যাবে না। এটা ক্লাসিফায়েড ইনফরমেশন।

    এই বিষয়ে আমার মাথায় কোন স্মৃতি নেই কেন?

    এই বিষয়ের স্মৃতি খুব যত্ন করে মুছে ফেলা হয়েছে।

    তুমি কি জান?

    আমি অবশ্যই জানি।

    আমাকে কিছু বলবে না?

    না।

    ঠিক আছে তুমি চলে যাও। আমি কিছুক্ষণ একা একা বারান্দায় হাঁটব। যন্ত্রের সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগছে না।

    আমি যন্ত্র না। আমি অষ্টম ধারার রোবট। অষ্টম ধারার রোবটরা মানুষের খুবই কাছাকাছি। মানুষ এখনো জানে না সে তার কত কাছে। তুমি কি জান যে অষ্টম ধারার রোবট মানুষের প্রেমে পড়তে পারে।

    তুমি কি পড়েছ?

    প্রেমে পড়ার মত গুণাবলির কাউকে এখনো দেখি নি বলে পড়ি নি। দেখলে হয়ত ঝপ কর প্রেমে পড়ে যাব। তবে তোমার প্রতি আমার খুবই করুণা হচ্ছে। মায়া হচ্ছে। করুণা এবং মায়া থেকেও প্রেম হয়।

    ঠিক আছে এখন যাও।

    শেফ্‌ চলে যেতে গিয়েও ফিরে এসে বলল, তোমাকে এতক্ষণ মিথ্যা কথা বললাম। আমার ধারণা আমি তোমার প্রেমে পড়েছি। তুমি যখন অস্থির বোধ কর, আমিও অস্থির বোধ করি। এবং আমার সারাক্ষণই তোমার আশেপাশে থাকতে ইচ্ছা করে। তুমি আমাকে চলে যেতে বলায় আমার খুবই খারাপ লাগছে।

    রেফ্‌ প্রায় চেঁচিয়ে বলল, বিদেয় হও। প্লিজ বিদেয় হও।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীল অপরাজিতা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }