Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প1195 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০২. রাত নিশুতি

    রাত নিশুতি। ভয়াবহ ঠাণ্ডা পড়েছে। রক্ত-মাংস ভেদ করে শীত হাড়ের মজ্জায় চলে যাচ্ছে। কুয়াশায় চারদিক ঢেকে গেছে। এক হাত দূরের জিনিসও দেখা যায় না। অথচ শুক্লপক্ষ, আকাশে চাঁদ আছে। মোবারক হোসেনের পকেটে দুই ব্যাটারির টর্চও আছে। টর্চ জ্বালাতে হলে চাদরের ভেতর থেকে হাত বের করতে হয়। তিনি তার প্রয়োজন বোধ করছেন না। গত দশ বছর তিনি এই রাস্তায় যাতায়াত করছেন। চোখ বেঁধে দিলেও চলে আসতে পারবেন।

    রেলস্টেশনের আলো দেখা যাচ্ছে। পয়েন্টসম্যান হেদায়েত স্টেশনেই ঘুমায়। সে মনে হয় আছে। আজ তার বোনের বাড়িতে যাবার কথা। মনে হয় যায় নি। যে শীত নেমেছে যাবে কোথায়? মোবারক হোসেন স্টেশনের বাতি দেখে খানিকটা স্বস্তি বোধ করলেন। হেদায়েত থাকলে তাকে দিয়ে চিড়-মুড়ি কিছু আনানো যাবে। খিদেয় তিনি অস্থির হয়েছেন। উপোস অবস্থায় রাত পার করা যাবে না। বিকেলেও কিছু খান নি। বিকেলে নাশতা হিসেবে মুড়ি এবং নারিকেলকোরা দিয়েছিল। এমন গাধা মেয়েছেলে! নারিকেলকোরা হল ভেজা ন্যান্যতা একটা জিনিস। মুড়িকে সেই জিনিস মিইয়ে দেবে এটা তো দুধের শিশুও জানে। দুই মুঠ মুখে দিয়ে তিনি আর খান নি। এখন অবিশ্যি মনে হচ্ছে ন্যাতন্যাতা মুড়িই তিনি এক গামলা খেয়ে ফেলতে পারবেন। তবে শীতের রাতের আসল খাওয়া হল আগুন গরম গরুর গোশত তার সঙ্গে চালের আটার রুটি। এই গরুর গোশত ভুনা হলে চলবে না। প্রচুর ঝোল থাকতে হবে। মনোয়ারাকে বললে সে ইচ্ছা করে করে ঝোল শুকিয়ে ভূনা করে ফেলবে। চালের আটার রুটি না করে আটার রুটি করবে এবং পরে বলবে…

    মোবারক হোসেনের চিন্তার সূত্র হঠাৎ জট পাকিয়ে গেল। কারণ তার চোখে ধক করে সবুজ আলো এসে পড়ল। তিনি হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে নিজেকে সামলালেন। আলোটা এসেছে স্টেশনঘর থেকে। কেউ মনে হয় টর্চ ফেলেছে। পাঁচ ব্যাটারির টর্চ বা এ রকম কিছু। হঠাৎ চোখে পড়েছে বলে সবুজ রং মনে হয়েছে। টর্চের আলো সবুজ হবার কোনো কারণ নেই।

    নান্দাইল রোড রেলস্টেশনটা এই অঞ্চলের মতোই দরিদ্র। একটি ঘর। সেই ঘরে জানা নেই। টিকিট দেয়ার জন্যে যে ফাকটা আছে তাকে জানালা বলার কোনো কারণ নেই। মোবারক হোসেন যখন এই ঘরে বসে টিকিট দেন তখন। তার মনে হয় তিনি কবরের ভেতর বসে আছেন। মানকের নেকের তাঁর সওয়াল জওয়াব করবে। সওয়াল জবাবের ফঁাকে ফঁাকে তিনি টিকিট দিচ্ছেন। সব স্টেশনে একটা টিউবওয়েল থাকে। যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে পানি খায়। ফ্লাস্ক ভরতি করে পানি নিয়ে ট্রেনে ওঠে। এই স্টেশনে কোনো টিউবওয়েল নেই। যাত্রীদের বসার জায়গা নেই। বছর তিনেক আগে দুটা প্ৰকাণ্ড রেইনট্রি গাছ ছিল। গাছ দুটার জন্য স্টেশনটা সুন্দর লাগত। আগের স্টেশনমাস্টার গাছ কাটিয়ে এগার হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এতে পরে তার সমস্যা হয়েছিল—তাকে বদলি করে দেয়া হয়, তার জায়গায় আসেন মোবারক হোসেন। তাঁর চাকরি এখন শেষের দিকে। এই সময় কপালে কোনো ভালো স্টেশন জুটল না। জুটল ধ্যাদ্দাড়া নান্দাইল রোড। স্টেশনের লাগোয়া কোনো চায়ের স্টল পর্যন্ত নেই। হঠাৎ চা খেতে ইচ্ছা হলে কেরামতকে পাঠাতে হয় বোয়াইল বাজার। চা আনতে আনতে ঠাণ্ডা পানি। মুখে দিয়েই থু করে ফেলে দিতে হয়। রেলস্টেশনের সঙ্গে চায়ের দোকান থাকবে না এটা ভাবাই যায় না। এর আগে তিনি যে স্টেশনে ছিলেন সেখানে দুটা চায়ের দোকান ছিল। হিন্দু টি স্টল, মুসলিম টি স্টল। দুটা চায়ের দোকানের মালিকই অবিশ্যি মুসলমান।

    মোবারক হোসেন স্টেশনঘরের মাথায় এসে দাঁড়ালেন। চারদিক ধু-ধু করছে। জনমানব নেই। স্টেশনঘরের সামনে থেকে তাঁর চোখে যে আলো ফেলেছিল তাকেও দেখা যাচ্ছে না। মনে হয় কুয়াশার কারণে দেখা যাচ্ছে না। মোবারক হোসেন ঠিক করলেন লোকটাকে দু-একটা কঠিন কথা বলবেন মানুষের চোখে টর্চ ফেলা অসম্ভব বেয়াদবি। মহারানী ভিক্টোরিয়াও যদি কারো চোখে টর্চ ফেলেন সেটাও বেয়াদবি।

    স্টেশনঘরে বাতি জ্বলছিল বলে তিনি দূর থেকে দেখেছেন। এটা সত্যি না। স্টেশনঘরে বাতি জ্বলছে না। হেদায়েত নিশ্চয়ই বোনের বাড়ি চলে গেছে। মোবারক হোসেন তালা খুলে স্টেশনঘরে ঢুকলেন। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। ঘরটা বাইরের মতো হিমশীতল না। উত্তরে বাতাস তাঁকে কাবু করে ফেলেছিল। বাতাসের হাত থেকে জীবন রক্ষা পেয়েছে। তিনি হারিকেন জ্বালালেন। তাঁর ভয় ছিল হারিকেনে তেল থাকবে না। দেখা গেল তেল আছে। সারা রাত জ্বলার মতোই আছে।

    স্টেশনঘরে তাঁর বিছানা আছে। তোশক লেপ, চাদর, বালিশ। খাওয়া এবং ঘুমানোর ব্যাপারে তার কিছু শৌখিনতা আছে বলে লেপ-তোশক ভালো। বিছানার চাদরটাও ভালো। যদিও মোরক হোসেনের ধারণা মাঝে মধ্যে হেদায়েত নিজের বিছানা রেখে তার বিছানায় শুয়ে থাকে। কারণ তিনি হঠাৎ হঠাৎ বিছানা চাদরে উৎকট বিড়ির গন্ধ পান। হেদায়েতকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, সে চোখ কপালে তুলে বলেছে—আমার কি বিছানার অভাব হইছে? ব্যাটাকে একদিন হাতেনাতে ধরতে হবে।

    মোবারক হোসেন বিছানা করতে শুরু করলেন। শীত যেভাবে পড়ছে অতি দ্রুত লেপের ভেতর ঢুকে যেতে হবে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় ঘুম আসবে নাকী আর করা! নিজের বোকামির উপর তাঁর এখন প্রচণ্ড রাগ লাগছে। রাগ করে ভাত না খাওয়াটা খুব অন্যায় হয়েছে। তারচেয়েও অন্যায় হয়েছে বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে আসা। তিনি কেন বাড়ি ছাড়বেন? এককাপ গরম চা পাওয়া গেলে এই ভয়ঙ্কর রাতটা পার করে দেয়া যেত। মোবারক হোসেন ঠিক করে ফেললেন এবারের বেতন পেয়েই একটা কেরোসিনের চূলা কিনবেন। একটা সসপেন, চাপাতা, চিনি। যখন ইচ্ছা হল নিজের চা বানিয়ে খেলেন। মুড়ির টিনে কিছু মুড়ি থাকল। মুড়ির সঙ্গে খেজুর গুড়। শীতের রাতে মুড়ি আর খেজুর গুড় হল বেহেশতি খানা। ডিম থাকলে সসপেনে পানি ফুটিয়ে একটা ডিম সেদ্ধ করে ফেলা। গরম ভাপ ওঠা ডিমসিদ্ধ লবণের ছিটা দিয়ে খাওয়া…উফ! মোবারক হোসেনের জিভে পানি এসে গেল।

    মোবারক হোসেনের খাদ্যসংক্রান্ত চিন্তার সূত্রটি আবারো জট পাকিয়ে গেল। আবারো তার চোখে সবুজ আলো ঝলসে উঠল। এমন কড়া আলো যে আলো নিভলে চারদিকে কিছুক্ষণের জন্য অন্ধকারে ডুবে যায়। হারিকেনের আলো সেই অন্ধকার দূর করতে পারে না। চিকাদের কিচমিচ জাতীয় কিছু শব্দ শুনলেন। শব্দটা আসছে দরজার কাছ থেকে। ছায়ামূর্তির মতো কিছু একটা দরজায় দাঁড়িয়ে। সবুজ আলোর ঝলক চোখ থেকে না গেলে ছায়ামূর্তির ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে না। ভূতপ্রেত না তো? আয়াতুল কুরসিটা পড়া দরকার। সমস্যা হচ্ছে এই সুরাটা তাঁর মুখস্থ নাই। মনোয়ারার আছে। সে কারণে অকারণে আয়াতুল কুরসি পড়ে। কে জানে এখনো হয়তো পড়ছে। খালি বাডি মেয়েছেলে একা আছে। ভয় পাবারই কথা। শীতকালে আবার ভূতপ্রেতের আনাগোনা একটু বেশি থাকে।

    মোবারক হোসেনের চোখে আলো সয়ে এসেছে। তিনি হাঁ করে দরজার দিকে তাকিয়ে আছেন। চিকার কিচকিচ শব্দটা সেখান থেকেই আসছে। দরজা ধরে একজন মেয়েমানুষ দাঁড়িয়ে আছে। কিচকিচ শব্দটা সেই করছে। যে দাঁড়িয়ে আছে সে আর যাই হোক ভূতপ্রেত না। ভূতপ্রেত হলে টৰ্চলাইট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে না। ভূতের পায়ে বুটজুতা থাকবে না। মাথায় হ্যাটজাতীয় জিনিসও থাকবে না। চোখে রোদচশমাও থাকবে না। মোবারক হোসেন বিড়বিড় করে বললেন, আপনার পরিচয়?

    বলেই মোবারক হোসেন মেয়েটির দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন। কারণ তাঁর ভয় হতে লাগল মেয়েটি বলে বসবে আমি মানুষ না, অন্য কিছু। এখন তার মনে হচ্ছে ভূতপ্রেতের হাতে টৰ্চলাইট থাকতেও পারে। এটা বিচিত্র কিছু না। একবার তিনি একটা গল্পে শুনেছেন, রাতে এক ভূত সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল। তবে সাইকেলের চাকা রাস্তায় ছিল না। রাস্তা থেকে আধা ফুটের মতো উপরে ছিল। ভূত যদি সাইকেল চালাতে পারে তা হলে টৰ্চলাইটও হাতে নিতে পারে। চোখে রোদচমশাও পরতে পারে। চিকার মতো কিচকিচও করতে পারে।

    আমার নাম এলা। আপনি কি আমার কথা এখন বুঝতে পারছেন?

    মোবারক হোসেন আবারো বিড়বিড় করে বললেন, জ্বি।

    পরিষ্কার বুঝতে পারছেন?

    জ্বি। বাংলা ভাষায় কথা বলছেন বুঝব না কেন?

    না, আমি বাংলা ভাষায় কথা বলছি না। আমি আসলে কোনো ভাষাতেই কথা বলছি না। আমার চিন্তাগুলো সরাসরি আপনার মাথায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি যে ভাষায় কথা বলছেন সেই ভাষাও আমি বুঝতে পারছি না, তবে আপনার মস্তিষ্কের চিন্তা বুঝতে পারছি।

    মোবারক হোসেন ক্ষীণ স্বরে বললেন, জ্বি আচ্ছা। ধন্যবাদ।

    আপনি এই ক্ষমতাকে দয়া করে কোনো টেলিপ্যাথিক বিদ্যা ভাববেন না। এই ক্ষমতা আমার নেই। আমি এই কাজটার জন্যে ছোট্ট একটি যন্ত্র ব্যবহার করছি। যন্ত্রটার নাম এল জি ৯০০০।

    মোবারক হোসেন আবারো যন্ত্রের মতো বললেন, জ্বি আচ্ছা, ধন্যবাদ।

    আপনি কি আমাকে ভয় পাচ্ছেন?

    জ্বি না।

    আয়াতুল কুরসি ব্যাপারটা কী? আপনি মনে মনে সারাক্ষণ আয়াতুল কুরসির কথা ভাবছেন। সে কে?

    এটা একটা দোয়া। আল্লাহপাকের পাক কালাম। এই দোয়া পাঠ করলে মন থেকে ভয় দূর হয়। জিনভূতের আশ্রয় থেকে আল্লাহপাক মানবজাতিকে রক্ষা করেন।

    তার মানে আপনি আমাকে ভয় পাচ্ছেন?

    মোবারক হোসেন শুকনো গলায় বললেন, জ্বি না।

    ভয় না পেলে ভয় কাটানোর দোয়া পড়ছেন কেন?

    মোবারক হোসেন কী বলবেন বুঝতে পারলেন না। তিনি ভয় পাচ্ছেন এবং বেশ ভালো ভয় পাচ্ছেন। মেয়েটা কথা বলছে, কিন্তু তার ঠোট নাড়ছে না। ভয় পাবার জন্যে এইটাই যথেষ্ট। তার উপর এমন রূপবতী মেয়েও তিনি তার জীবনে দেখেন নি। পরীস্থানের কোনো পরী না তো? নিৰ্জন রাতে পরীরা মাঝে মাঝে পুরুষদের ভুলিয়ে ভালিয়ে পরীস্থানে নিয়ে যায়। নানান কুকর্ম করে পুরুষদের ছিবড়া বানিয়ে ছেড়ে দেয়। এই জাতীয় গল্প তিনি অনেক শুনেছেন। তবে পরীরা যুবক এবং সুদর্শন অবিবাহিত ছেলেদেরই নিয়ে যায়। তার মতো আধবুড়োকে নেয় না। তাকে ছিবড়া বানাবার কিছু নেই। তিনি ছিবড়া হয়েই আছেন।

    মোবারক হোসেন।

    জ্বি।

    আমি আপনাকে আমাদের দেশে নিতে পারব না। ইচ্ছা থাকলেও পারব না। আমার সেই ক্ষমতা নেই। আমি এসেছি ভবিষ্যৎ পৃথিবী থেকে, পরীস্থান থেকে নয়। আপনাকে ছিবড়া বানানোরও কোন ইচ্ছা আমার নেই।

    সিস্টার আপনার কথা শুনে খুব ভালো লেগেছে। থ্যাংক য়্যু।

    আজকের তারিখ কত দয়া করে বলবেন?

    মাঘ মাসের ১২ তারিখ।

    ইংরেজিটা বলুন, কোন সন?

    জানুয়ারি ৩, ১৯৯৭।

    আমি আসছি ৩০০১ সন থেকে।

    আসার জন্য ধন্যবাদ। সিস্টার ভিতরে এসে বসুন। দরজা বন্ধ করে দেই। বাইরে অত্যধিক ঠাণ্ডা।

    মেয়েটি ভেতরে এসে দাঁড়াল। মোবারক হোসেন দরজা বন্ধ করলেন। তারপর মনে হল কাজটা ঠিক হয় নি। দরজা খোলা রাখা দরকার ছিল, যাতে প্রয়োজনে খোলা দরজা দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারেন। মনোয়ারার সঙ্গে রাগ করে বাড়ি থেকে বের হওয়াটাই ভুল হয়েছে।

    দরজা বন্ধ করার পর এলা টেবিলের দিকে এগিয়ে এল। মোবারক হোসেন চেয়ার এগিয়ে দিলেন। এলা বসতে বসতে বলল, মনোয়ারা কে? আপনি সারাক্ষণ এই নামটি মনে করছেন।

    জ্বি, আমার স্ত্রী।

    এলা বিস্মিত হয়ে বলল, স্ত্রী? আপনার স্ত্রী আছে! কী আশ্চর্য।

    মোবারক হোসেন তাকিয়ে আছেন। তার স্ত্রী থাকা এমন কী বিস্ময়কর ঘটনা যে মেয়েটা চোখ কপালে তুলল! রাস্তায় ভিক্ষা করে যে ফকির, তারও একটা ফকিরনী থাকে। তিনি রেলে কাজ করেন। ছোট চাকরি হলেও সরকারি চাকরি। কোয়ার্টার আছে।

    স্ত্রীর উপর কি কোনো কারণে আপনি বিরক্ত হয়ে আছেন?

    ইয়েস সিস্টার। তার উপর রাগ করেছি বলেই স্টেশনে এসে একা একা বসে আছি।

    খুবই ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট, এল জি ৯০০০ এই পয়েন্ট নোট করছে। বিজ্ঞান কাউন্সিলে আমরা আপনার কথা বলব। র‍্যানডম স্যাম্পলের আপনি সদস্য হচ্ছেন। আশা করি আপনার বা আপনার স্ত্রীর এই বিষয়ে কোনো আপত্তি হবে না।

    কোনো কিছু না বুঝেই মোবারক হোসেন খুবই বিনীত গলায় বললেন, জ্বি না ম্যাডাম।

    এতক্ষণ সিস্টার বলছিলেন এখন ম্যাডাম বলা শুরু করলেন।

    সিস্টার ডেকে ঠিক স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। সিস্টার ডাকের মধ্যে হাসপাতালের গন্ধ আছে। হাসপাতাল মানেই অসুখবিসুখ। সেই তুলনায় ম্যাডাম ডাকটা ভালো।

    স্ত্রীর উপর যখন রাগ করেন তখন আপনি স্টেশনে থাকার জন্যে চলে আসেন। আর যখন স্টেশনে আসেন না তখন স্ত্রীর প্রতি থাকে আপনার ভালবাসা?

    জ্বি না। রাগ করেও অনেক সময় বাসায় থাকি। গতকাল রাগ করেছিলাম, তারপরেও বাসায় ছিলাম।

    কী কারণে রাগ করেছেন বলতে কি কোনো বাধা আছে?

    জ্বি না ম্যাডাম। বলতে বাধা নেই।

    তা হলে বলুন।

    আজ রাগ করেছি—কারণ, আজ সে ফুলকপি আর সিম একসঙ্গে দিয়ে কৈ মাছের ঝোল রান্না করেছে।

    এটা কি বড় ধরনের কোনো অন্যায়?

    সিম এবং ফুলকপি একসঙ্গে রান্না করা যায়। অনেকে পছন্দ করে। আমি করি না। অনেককে দেখবেন সব তরকারির সঙ্গে ডাল নিচ্ছে। মাছ ভাজা নিয়েছে, তার সঙ্গেও ডাল। মাছ ভাজার এক রকম টেস্ট, ডালের আরেক রকম টেস্ট। দুটাকে কি মেশানো যায়? তা হলে দুধ দিয়ে আর মাগুর মাছের ঝোল দিয়ে মাখিয়ে খেলেই তো হত! আমার পয়েন্টটা কি সিস্টার ধরতে পারলেন?

    ধরার চেষ্টা করছি। আপনি আমাকে একেক সময় একেকটা ডাকছেন কখনো সিস্টার, কখনো ম্যাডাম। আপনি সরাসরি আমাকে এল ডাকতে পারেন।

    ধন্যবাদ।

    রাগের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। গতকাল কী নিয়ে রাগ করেছেন?

    চা দিতে বলেছি। চুমুক দিয়ে দেখি ঠাণ্ডা। ঠাণ্ডাই যদি খাই তা হলে চা খাবার দরকার কী? শরবত খেলেই হয়! শুধু ঠাণ্ডা হলেও কথা ছিল। দেখি এলাচের গন্ধ। চা কি পায়েস নাকি যে এলাচ দিতে হবে? ম্যাডাম ঠিক বলেছি না?

    আমি বলতে পারছি না। কারণ, চা নামক বস্তুটি সম্পর্কে আমার ধারণা নেই।

    শীতের সময় খুবই উপকারী। নেক্সট টাইম আসেন ইনশাল্লাহ আপনাকে চা খাওয়াব। চা-চিনি-দুধ-সব থাকবে।

    আর কখনো আসব বলে মনে হচ্ছে না। আপনার স্ত্রীর সঙ্গে আর যেসব কারণে রাগারাগি হয় সেটা কি বলবেন? আপনাদের সব রাগরাগির উৎস কি খাদ্যদ্রব্য?

    জ্বি না ম্যাডাম। ওর খাসিলত খারাপ। সবকিছুর মধ্যে উল্টা কথা বলবে। আমি যদি দক্ষিণ বলি—আমার বলাটা যদি তার অপছন্দও হয় দক্ষিণ না বলে তার বলা উচিত পূর্ব বা পশ্চিম—তা বলবে না। সে সোজা বলবে উত্তর।

    আপনি বলতে চাচ্ছেন বিপরীত?

    একশ দশ ভাগ বিপরীত।

    একশ দশ ভাগ বিপরীত মানে কী? একশ ভাগের বেশি তো কিছু হতে পারে না।

    আপা কথার কথা।

    আপা বলছেন কেন?

    আপনাকে বড় বোনের মতো লাগছে এই জন্যে আপা বলেছি। দোষ হয়ে থাকলে ক্ষমা প্রার্থী।

    দোষ-ত্রুটি না, আপনার কথাবার্তা সামান্য এলোমেলো লাগছে। যাই হোক পুরনো প্রসঙ্গে ফিরে যাই আপনার এবং আপনার স্ত্রীর সম্পর্ক তা হলে ভালো না।

    আপনিই বলুন ম্যাডাম ভালো হবার কোনো কারণ আছে?

    আপনারা কি একে অন্যকে কোনো গিফট দেন?

    একেবারে যে দেই না তা না-ঈদে চান্দে দেই। না দেওয়াই উচিত।

    তারপরেও দেই এবং তার জন্যে যেসব কথা শুনতে হয়-উফ্‌।

    একটা বলুন শুনি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীল অপরাজিতা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }