Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প1195 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    অন্য ভুবন – ৫

    ৫

    মিসির আলি সারাদিন ঘুমুলেন।

    দুপুরে একবার ঘুম ভেঙেছিল। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা। তিনি পরপর দু’গ্লাস ঠাণ্ডা পানি খেয়ে আবার বিছানায় গড়িয়ে পড়লেন। যখন জাগলেন, তখন বেশ রাত। বিছানার পাশে উদ্বিগ্ন মুখে বরকত সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। এক জন বেঁটেমতো লোক আছে, হাতে স্টেথিসকোপ। নিশ্চয়ই ডাক্তার। দরজার পাশে চোখ বড়ো বড়ো করে দাঁড়িয়ে আছে নিজাম। বোঝাই যাচ্ছে সে বেশ ভয় পেয়েছে।

    বরকত সাহেব বললেন, ‘এখন কেমন লাগছে?’

    ‘ভালো।’

    মিসির আলি উঠতে চেষ্টা করলেন। ডাক্তার সাহেব বললেন, ‘নড়াচড়া করবেন না। চুপ করে শুয়ে থাকুন। আপনার ব্লাড প্রেশার এবনরম্যালি হাই!

    তিনি কিছু বললেন না। নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে তাঁর সময় লাগছে। ঘুমঘুম ভাবটা ঠিক কাটছে না। ডাক্তার সাহেব বললেন, ‘হাই প্রেশারে কত দিন ধরে ভুগছেন?’

    ‘প্রেশার ছিল না। হঠাৎ করে হয়েছে। যে জিনিস হঠাৎ আসে তা হঠাৎই যায়। কি বলেন?’

    ‘না না, খুব সাবধান থাকবেন। আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। বরকত সাহেবকে বলছিলাম হাসপাতালে ট্রান্সফার করবার জন্যে। সত্যি করে বলুন, এখন কি বেটার লাগছে?’

    ‘লাগছে। আগের মতো খারাপ লাগছে না।’

    ডাক্তার গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, ‘হঠাৎ করে এ রকম হাই প্রেশার হবার তো কথা নয়। খুব আনইউজুয়েল।’

    তিনি একগাদা ওষুধপত্র দিলেন। যাবার সময় বারবার বললেন, ‘রেস্ট দরকার। কমপ্লিট রেস্ট। কিছু খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড় ন। একটা ঘুমের ওষুধ দিয়েছি। খেয়ে টানা ঘুম দিন। ভোরে এসে আমি আবার প্রেশার মাপব।’

    বরকত সাহেব বললেন, ‘আপনিতো সারা দিন কিছু খান নি।’

    ‘এখন খাব। গোসল সেরে খেতে বসব। প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। আপনি কি দয়া করে খাবারটা আমার ঘরে পাঠাবার ব্যবস্থা করবেন?’

    ‘নিশ্চয়ই করব। আপনার সঙ্গে আমি কিছু কথা বলতে চেয়েছিলাম।’

    মিসির আলি বললেন, ‘আজ না, আমি আগামী কাল কথা বলব।’

    ‘ঠিক আছে, আগামী কাল।’

    বরকত সাহেব ঘর থেকে বেরুতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালেন। নিচু গলায় বললেন, ‘আপনার কষ্ট হল খুব। আমি লজ্জিত।’

    ‘আপনার লজ্জিত হবার কিছুই নেই। আপনি এ নিয়ে ভাববেন না।’

    দীর্ঘ স্নানের পর মিসির সাহেবের বেশ ভালোই লাগল। ক্লান্তির ভাব নেই। মাথায় সূক্ষ্ম যন্ত্রণা আছে, তবে তা সহনীয়। এবং মনে হচ্ছে গরম এক কাপ চা খেলে সেরে যাবে।

    খাবার নিয়ে এল নিজাম। মিসির আলি লক্ষ করলেন, নিজাম তাঁকে বারবার আড়চোখে দেখছে। তার চোখে সীমাহীন কৌতূহল। সম্ভবত সে কিছু বলতে চায়, সাহস পাচ্ছে না। মিসির আলি ভারী গলায় ডাকলেন, ‘নিজাম।’

    ‘জ্বি স্যার?’

    ‘তুমি কেমন আছ?’

    ‘জ্বি স্যার, ভালো।’

    ‘তিন্নি তোমাকে কখনো মাথাব্যথা দেয় নি?’

    নিজাম চমকে উঠল। কিন্তু নিজেকে সামলে নিল। সহজভাবে ভাত- তরকারি এগিয়ে দিতে লাগল।

    ‘কথা বলছ না কেন নিজাম?’

    ‘কী বলব, স্যার?’

    ‘ঐ যে জিজ্ঞেস করলাম, তিন্নি তোমাকে মাথাব্যথা দেয় কি না। আমার ধারণা সবাইকেই মাঝে মাঝে দেয়। ঠিক বলছি না?’

    ‘জ্বি স্যার, ঠিক বলছেন।’

    ‘তোমাকেও দিয়েছে?’

    ‘জ্বি স্যার।’

    ‘ক’ বার দিয়েছে?’

    ‘অনেক বার।’

    ‘তবু তুমি এ বাড়িতে পড়ে আছ কেন? চলে যাচ্ছ না কেন?’

    নিজাম জবাব দিল না। মিসির আলি বললেন, ‘আমি ওর অসুখ ভালো করবার জন্যে এসেছি। কাজেই ওর সম্পর্কে সব কিছু আমার জানা দরকার। তোমরা যদি না বল, তাহলে আমি জানব কী করে?’

    ‘কী জানতে চান, স্যার?’

    ‘মানুষকে কষ্ট দেবার এই ব্যাপারটা ও কবে থেকে শুরু করেছে?’

    ‘তিন বছর ধরে হচ্ছে।’

    ‘প্রথম কীভাবে এটা শুরু হল তোমার মনে আছে?’

    ‘জ্বি, আছে। রহিমা তিন্নি আপার জন্যে দুধ নিয়ে গিয়েছিল। তিন্নি আপা খাচ্ছিল না। তখন রাগের মাথায় রহিমা তিন্নি আপাকে একটা চড় দেয়। তার পরই শুরু হয়। রহিমা চিৎকার করতে থাকে, গড়াগড়ি করতে থাকে। ভয়ঙ্কর কষ্ট পায়।’

    ‘রহিমা কি এখনো কাজ করে এ বাড়িতে?’

    ‘জ্বি।’

    ‘এ রকম কষ্ট কি সে আরো পেয়েছে?’

    ‘জ্বি স্যার।’

    ‘তবু সে এ বাড়িতে পড়ে আছে? চলে যায় না কেন?’

    নিজাম জবাব দিল না। মিসির আলি লক্ষ করলেন এই প্রশ্নটির জবাব নিজাম এড়িয়ে যাচ্ছে। এত কষ্টের পরও কাজের মানুষগুলি এখানেই আছে। তার কী কারণ হতে পারে? হয়তো অনেক বেশি বেতন দেয়া হচ্ছে, যে কারণে থাকছে। কিন্তু এটা বলতে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।

    ‘তুমি বেতন কত পাও, নিজাম?’

    ‘জ্বি, মাসে দেড়শ টাকা আর কাপড়চোপড়।’

    মিসির আলির মনে হল এটা এমন কোনো বেশি বেতন নয়। কাজেই এরা যে এখানে পড়ে আছে, নিশ্চয়ই তার কারণ অন্য।

    ‘নিজাম।’

    ‘জ্বি স্যার?’

    ‘তুমি কি আমাকে চা খাওয়াতে পার?’

    ‘নিয়ে আসছি স্যার।’

    ‘আর শোন, রহিমার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই। ওকে পেলে বলবে আমার কথা।’

    ‘জ্বি আচ্ছা।’

    নিজাম চট করে চা নিয়ে এল। লোকটি করিৎকর্মা। চা-টা হয়েছেও চমৎকার। চুমুক দিতে দিতেই মাথার যন্ত্রণা প্রায় সেরে গেল।

    ‘চিনি লাগবে, স্যার?’

    ‘না, লাগবে না। খুব ভালো চা হয়েছে নিজাম। বস তুমি। টুলটায় বস, কথা বলি।’

    নিজাম বসল না। জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মিসির আলি বললেন, ‘তিন্নির মধ্যে আর কি অস্বাভাবিক ব্যাপার তুমি লক্ষ করেছ?’

    নিজাম মাথা চুলকাতে লাগল। মিসির সাহেব বললেন, ‘ভালো করে চিন্তা করে বল। সে এমন কিছু কি করে, যা আমরা সাধারণত করি না?’

    ‘তিন্নি আপা রোদের মধ্যে বসে থাকতে ভালোবাসেন।’

    ‘তাই নাকি?’

    ‘জ্বি স্যার। জ্যৈষ্ঠ মাসের রোদেও তিন্নি আপা সারা দিন ছাদে বসে থাকেন।’

    ‘এ ছাড়া আর কী করে?’

    ‘আর কিছু না।’

    ‘মনে করতে চেষ্টা কর। হয়তো কোনো ছোট ব্যাপার। তোমার কাছে হয়তো এর কোনো মূল্যই নেই, কিন্তু আমার কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বুঝতে পারছ আমার কথা?’

    ‘জ্বি স্যার।’

    .

    রাত একটার দিকে মিসির আলি তিন্নির আঁকা ছবিগুলি নিয়ে বসলেন। সব মিলিয়ে পাঁচটি ছবি। প্রতিটি ছবিই গাছ বা গাছ জাতীয় কিছুর। বেশির ভাগ গাছ লতানো। গাছের রঙ হলুদ থেকে লালের মধ্যে। সবুজের কিছুমাত্র ছোঁয়া নেই। তিন্নি হলুদ এবং লাল রঙ দিয়ে ছবি আঁকল কেন? সম্ভবত তার কাছে সবুজ রঙ ছিল না। অবশ্যি শিশুরা অদ্ভুত রঙ ব্যবহার করতে ভালোবাসে। তাঁর এক ভাগনি মানুষ আঁকে আকাশি নীল রঙে। মানুষের চোখে দেয় গাঢ় লাল রঙ।

    অবশ্যি এই পাঁচটি ছবি শিশুর আঁকা ছবি বলে মনে হচ্ছে না। শিশুরা এত চমৎকার আঁকে না। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে ঝড় হচ্ছে। প্রচণ্ড ঝড়। কোনো শিশু, তা সে যত প্রতিভাবান শিশুই হোক, এ রকম নিখুঁত ঝড়ের ছবি আঁকতে পারবে না।

    ছবি দেখে মনে হয়, ঝড়ের সময়টায় এই ছবির শিল্পী উপস্থিত ছিল। হাওয়ার যে ঘূর্ণি উঠেছে, তাও সে লক্ষ করেছে। মিসির আলি সাহেব মনে মনে একটি থিওরি দাঁড় করাতে চেষ্টা করলেন। তিনি ভাবতে চেষ্টা করলেন, ছবিগুলি কোনো শিশুর মনগড়া ছবি নয়, কল্পনার ছবি নয়। এই গাছ, এই ঝড়, বাতাসের এই ঘূর্ণি ছবির শিল্পী দেখেছে।

    যদি তাই হয়, তাহলে এ গাছগুলি কি পৃথিবীর? পৃথিবীর গাছে সবুজ রঙ থাকবে। ছায়াতে জন্মানো কিছু কিছু হলুদ গাছ তিনি দেখেছেন, কিন্তু এ রকম কড়া সূর্যের আলোয় হলুদ গাছ তিনি দেখেছেন বলে মনে করতে পারলেন না।

    প্রতিটি ছবিতে দুটি সূর্য। গগনে সূর্য। এর মানে কি? পৃথিবীর কোনো ছবিতে দু’টি সূর্য থাকবে না। তাহলে কি এই থিওরি দাঁড় করানো যায় যে, ছবিতে যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তা অন্য কোনো গ্রহের? তা কেমন করে হয়?

    তিন্নি অন্য কোনো গ্রহের মেয়ে, এই যুক্তি হাস্যকর। তিন্নি পৃথিবীরই মেয়ে, এতে কোনো সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। এই গ্রহের মেয়ে হয়ে বাইরের একটি গ্রহের ছবি সে কেন আঁকছে? কী ভাবে আঁকছে?

    মিসির আলি গম্ভীর মুখে দ্বিতীয় সিগারেটটি ধরালেন। সব কেমন জট পাকিয়ে যাচ্ছে। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ছকে ফেলা যাচ্ছে না।

    তিনি সিগারেট টানতে টানতে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন এবং ভাবতে চেষ্টা করলেন—এইসব অল্পবয়সী একটি মেয়ের কল্পনার ছবি, এর বেশি কিছু নয়। মেয়েটির কল্পনাশক্তি খুব উচ্চ পর্যায়ের, যার জন্যে সে এত চমৎকার কিছু ছবি আঁকতে পারছে। ভোরবেলায় তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে।

    মিসির আলির ঠাণ্ডা লাগছে। হু হু করে বইয়ে উত্তুরে হাওয়া। কিন্তু এই ঠাণ্ডায় দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ লাগছে। চারদিক খুব চুপচাপ। আকাশে চাঁদ থাকায় চমৎকার জ্যোৎস্না হয়েছে। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে জ্যোৎস্না ভেঙে ভেঙে পড়ছে। কী অপূর্ব একটি দৃশ্য! মিসির আলি নিজের অজান্তেই হাঁটতে হাঁটতে একটা ঝাঁকড়া জাম গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ালেন। ঠিক তখন অদ্ভুত একটা ব্যাপার হল। তিনি স্পষ্ট শুনলেন, তিন্নি বলছে, ‘কি, আপনার ঘুম আসছে না?’ তিনি আশেপাশে কাউকেই দেখলেন না। দেখার কথাও নয়। এই নিশিরাত্রিতে তিন্নি নিশ্চয়ই নিচে নেমে আসে নি। তিনি বললেন, ‘কে কথা বলল?’

    মিসির আলি খিলখিল হাসির শব্দ শুনলেন। এর মানে কি? তিন্নির হাসি কোত্থেকে ভেসে আসছে? মিসির আলি বললেন, ‘তুমি তিন্নি?’

    ‘হ্যাঁ।’

    ‘কোত্থেকে কথা বলছ?’

    ‘আপনি এত বুদ্ধিমান, অথচ কোত্থেকে কথা বলছি, বুঝতে পারছেন না?’

    ‘না, বুঝতে পারছি না। তুমি কোথায়?’

    ‘আমি আমার ঘরেই আছি। কোথায় আবার থাকব?’

    মিসির আলি একটা বড় ধরনের চমক পেলেন। মেয়েটি তার ঘর থেকেই কথা বলছে। সেইসব কথা তিনি পরিষ্কার শুনছেন। টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ। অদ্ভুত তো!

    মেয়েটিও নিশ্চয়ই তাঁর কথা শুনতে পাচ্ছে। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলার জন্যে নিশ্চয়ই চেঁচাতে হবে না। মনে মনে ভাবলেই তিন্নি বুঝবে। মিসির আলি কথা বলা শুরু করলেন। এ রকম অদ্ভুত কথোপকথন তিনি আগে কখনো করেন নি।

    মিসির আলি : কেমন আছ তিন্নি?

    তিন্নি : ভালো।

    মিসির আলি : এখনো জেগে আছ?

    তিন্নি : হ্যাঁ আছি।

    মিসির আলি : কেন?

    তিন্নি : আমারও আপনার মতো ঘুম আসছে না।

    মিসির আলি : রোজই জেগে থাক?

    তিন্নি : মাঝে মাঝে থাকি।

    মিসির আলি : তোমার ছবিগুলি বসে বসে দেখলাম।

    তিন্নি : আমি জানি।

    মিসির আলি : খুব সুন্দর হয়েছে।

    তিন্নি : তাও জানি।

    মিসির আলি : এগুলি কোথাকার ছবি?

    তিন্নি : বলব না।

    মিসির আলি : কেন, বলতে অসুবিধা কি?

    তিন্নি : বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

    মিসির আলি : ছবিতে দেখলাম দুটি সূর্য।

    তিন্নি : হ্যাঁ দুটি।

    মিসির আলি : দুটি কেন?

    তিন্নি : দুটি থাকলে আমি কি করব? একটি আঁকব?

    কথাবার্তা এই পর্যন্তই। মিসির আলি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। কিন্তু আর কোনো যোগাযোগ হল না। তিনি বেশ কয়েক বার ডাকলেন, তিন্নি তিন্নি। কোনো জবাব নেই।

    মিসির আলি নিজের বিছানায় ফিরে এলেন। ঘুম চটে গিয়েছে। শুয়ে থাকার কোনো মানে হয় না। তিনি আবার ছবি নিয়ে বসলেন। যদি নতুন কিছু বের হয়ে আসে। যে মাটির উপর গাছগুলি দাঁড়িয়ে আছে, তার রঙ কী? আকাশের রঙ কী? গাছপালার ফাঁকে কোনো কীটপতঙ্গ আছে কি? যদি থাকে, তাদের রঙ কী?

    ‘আপনি এখনো জেগে আছেন?’

    তিনি চমকে উঠলেন। তিনি আবার কথা বলা শুরু করেছে। ‘হ্যাঁ, এখনো জেগে আছি। তোমার ছবি দেখছি।’

    ‘কেন দেখছেন? এক বার দেখাও যা এক শ’ বার দেখাও তা।’

    ‘উঁহু, তুমি ঠিক বললে না। প্রথম বার অনেক কিছু চোখে পড়ে না।’

    ‘আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।

    ‘ঘুম আসছে না।’

    ‘আমি কিন্তু আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারি।’

    ‘পার নাকি?’

    ‘হ্যাঁ পারি। দেব?’

    ‘না, তার দরকার নেই। তোমার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছে।’

    ‘তাহলে কথা বলুন।’

    ‘আমার সঙ্গে তুমি যেভাবে কথা বলছ, অন্যদের সঙ্গেও কি সেইভাবে কথা বল।’

    ‘না।’

    ‘কেন বল না।’

    ‘বলতে ইচ্ছা করে না।’

    মিসির আলি চেষ্টা করতে লাগলেন আজেবাজে প্রশ্নের ফাঁকে ফাঁকে দু’ একটি জরুরি প্রশ্ন করে খবরাখবর বের করে আনা। কিন্তু মেয়েটি খুব সাবধানী। সে অনায়াসে ফাঁদ কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে। তবু এর মধ্যে একটি হচ্ছে—তিন্নি শুধু মানুষ নয়, পশুদের সঙ্গেও (যেমন বেড়াল) যোগাযোগ করতে পারে। মিসির আলি জিজ্ঞেস করলেন, ‘বেড়াল তোমার কথা বুঝতে পারে?’

    ‘হুঁ পারে।’

    ‘তুমি ওর কথা বুঝতে পার?’

    ‘বেড়াল কোনো কথা বলে না। তবে সে যা ভাবে তা বুঝতে পারি। অবশ্যি সব সময় পারি না।’

    ‘কখন কখন পার?’

    ‘তা জেনে আপনি কী করবেন? আপনি কি বেড়াল?’

    তিন্নি খিলখিল করে হাসতে লাগল। মিসির আলি রোমাঞ্চ বোধ করলেন। মেয়েটি নিজের ঘরে বসে হাসছে, অথচ তিন্নি কী স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছেন।

    ‘তিন্নি।’

    ‘বলুন।’

    ‘এই যে তুমি কথা বলছ, আমি শুনছি। আচ্ছা, এ বাড়িতে অন্য যারা আছে তারা কি শুনছে?’

    ‘তারা শুনবে কীভাবে, আমি কি তাদের সঙ্গে কথা বলছি?’

    ‘তাও তো ঠিক।’

    ‘আচ্ছা ধর, কাল ভোরে আমি যদি অনেক দূর চলে যাই—তিন-চার মাইল দূরে কিংবা তার চেয়েও দূরে, তখনো কি তুমি আমার কথা শুনতে পারবে?’

    তিন্নি বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আপনার সঙ্গে আর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। আমি আর কথা বলব না।’

    মিসির আলি বললেন, ‘শুভ-রাত্রি তিন্নি।’ তার কোনো জবাব তিনি শুনতে পেলেন না। মাথার যন্ত্রণাটা আবার ফিরে এসেছে। শরীরটা হালকা লাগছে। মিসির আলি ডাক্তারের দিয়ে যাওয়া ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমুতে গেলেন। ভালো ঘুম হল না। আজেবাজে স্বপ্ন দেখলেন, বেশ কয়েক বার ঘুম ভেঙেও গেল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীল অপরাজিতা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }