Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প1195 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৯. আজ তুমি কেমন আছ

    আজ তুমি কেমন আছ, ইরিনা?

    ভালো। মনের অস্থির ভাব কিছুটা কি কমেছে?

    হ্যাঁ।

    মানুষদের সঙ্গে রোবটদের একটা মিল আছে। এরা সব অবস্থায়, সব পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আমি কি ঠিক বলি নি?

    হয়তো ঠিক বলেছ।

    তবে মানুষদের মধ্যে হয়তো ব্যাপারটা খুব বেশি। নিশ্চিতভাবে এরা কোনো কিছুই করে না, ভাবে না। সব সময় তাদের মধ্যে সম্ভাবনার একটা ব্যাপার থাকে। কোনো একটি ঘটনায় এক জন মানুষ একই সঙ্গে সুখী এবং অসুখী হয়। বড়োই রহস্যজনক।

    এসব কথাবার্তা শুনতে আমার ভালো লাগছে না।

    তুমি যদি চাও আমি অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করব।

    রোবটদের সঙ্গে কথা বলতে আমার ভালো লাগে না।

    তুমি আমাকে রোবট ভাবিছ কেন? আমি একজন এনারোবিক রোবট। তুমি অনায়াসেই আমাকে মানুষ হিসেবে ধরে নিতে পার। মানুষের যেমন আবেগ থাকে, রাগ, ঘৃণা থাকে, আমাদেরও আছে।

    থাকুক। থাকলে তো ভালো।

    রোবটিকস্ বিদ্যার চূড়ান্ত উন্নতি হয়েছে। অধিকাংশ জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা নতুন পৃথিবীতে বন্ধ হয়ে গেলেও রোবটিকস-এর চর্চা বন্ধ হয় নি। কেন হয় নি জান?

    জানি না। জানতেও চাই না।

    আমার মনে হয় এটা জানলে তোমার ভালো লাগবে।

    তোমার মনে হলে তো হবে না, ভালো লাগাটা আমার নিজের ব্যাপার। আমার কী ভালো লাগবে কী লাগবে না তা আমি বুঝব।

    ঠিক বলেছ। তবে ব্যাপারটা বলতে পারলে আমার ভালো লাগবে। আমি বলতে চাই। আমি খুব খুশি হব। যদি তুমি শোন।

    বেশ বল।

    রোবটিকস-এর উন্নতির ধারা বন্ধ হল না, কারণ আমরা রোবটরাই নিজেদের দিকে মন দিলাম। কী করে রিবো-ত্রি সার্কিটকে আরো উন্নত করা যায় তা নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। মানবিক আবেগ কী, তার প্রকাশ কেমন, তা নিয়ে ভাবতে লাগলাম। এসব জটিল কাজ প্রধানত করতেন Q23, বা Q24 জাতীয় বিজ্ঞানী রোবটরা। কিন্তু আমাদের প্রধান সমস্যা হল মানবিক আবেগের বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের তেমন জ্ঞান নেই। শ্রেষ্ঠ রোবট বিজ্ঞানীরা থাকেন নিষিদ্ধ নগরীতে, যেখানে মানুষের দেখা পাওয়া যায় না।

    যাবে না কেন? অমর মানুষেরা তো এখানেই থাকেন।

    তাদের আবেগ-অনুভূতি ভিন্ন প্রকৃতির। তবু তাদের মতো করে দুজন তৈরি করা হয়েছিল। এরা ছয় মাসের মধ্যে সামান্য কারণে উত্তেজিত হয়ে নিজেদের ধ্বংস করে ফেলে। আমাদের দরকার সাধারণ মানুষ। যেমন তুমি কিংবা মীর।

    আমাদের যে অবস্থায় রাখা হয়েছে তাতে কি আমাদের আবেগ স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকবে?

    না থাকবে না। তবু আমরা অনেক তথ্য পাচ্ছি। এই কারণেই তোমার সঙ্গে আমার ক্রমাগত কথা বলা দরকার। কথাবার্তা থেকে নানান তথ্য বের হয়ে আসবে। কথা বলা দরকার, ভীষণ দরকার।

    আছে, তোমারও দরকার আছে। তুমি আমাদের সাহায্য করবে, আমরা তোমাদের সাহায্য করব।

    কী বললে?

    বললাম সাহায্যটা হবে দুতরফের। তুমি আমাদের সাহায্য করবে, আমরা তোমাদের সাহায্য করব।

    আবার বল।

    তুমি আমাদের সাহায্য করবে, আমি তোমাকে সাহায্য করব।

    এতক্ষণ বলছিলে আমরা তোমাকে সাহায্য করব। এখন বলছি আমি তোমাকে সাহায্য করব।

    আমাদের সাহায্য আসবে আমার মাধ্যমে। এই কারণেই বলছি আমি। অন্য কোনো কারণে নয়।

    ইরিনা চুপ করে গেল। সম্পূর্ণ নতুন ধরনের একটা কথা সে শুনল। এটা একটা ফাদও হতে পারে। সেই সম্ভাবনাই বেশি। কিংবা তার একঘেয়েমি কাটাবার জন্যে এরা ইচ্ছা করেই তার মধ্যে একটা আশার বীজ ড়ুকিয়ে দিল। খুবই সম্ভব।

    ইরিনা।

    বল।

    আমরা মানুষের তিনটি আবেগ সম্পর্কে জানতে চাই— ভয়, বিষাদ, ভালোবাসা।

    এই তিনটি ছাড়াও তো আরো অনেক আবেগ মানুষের আছে।

    তা আছে, তবে আমদের ধারণা এই তিনটিই হচ্ছে মূল আবেগ। অন্য আবেগ হচ্ছে এই তিনটিরই রকমফের। যেমন ধর, ঘৃণা হচ্ছে ভালোবাসার উল্টো। আনন্দ হচ্ছে বিষাদের অন্য পিঠ। আমি কি ঠিক বলছি না?

    জানি না। হয়তো ঠিক বলছি।

    তুমি আমাকে বল, ভয় ব্যাপারটা কী?

    ভয় কী আমি জানি, কিন্তু ব্যাখ্যা করতে পারব না। এই যে আমি এখানে আছি। সারাক্ষণ ভয়ের মধ্যে আছি। তীব্র ভয়। এই ভয় হচ্ছে অনিশ্চয়তার ভয়।

    অনিশ্চয়তার ভয়, চমৎকার! অনিশ্চয়তাকে তুমি ভয় পােচ্ছ, তোমার সঙ্গী পাচ্ছে না কেন? সে তো সুখেই আছে।

    আমরা একেক জন একেক রকম।

    তোমার কি ধারণা, সে কোনো পরিস্থিতিতেই ভয় পাবে না?

    আমি কী করে বলব? সেটা তার ব্যাপার। হয়তো নতুন কোনো পরিস্থিতিতে দেখব, সে ভয় পাচ্ছে, আমি পাচ্ছি না।

    তোমরা মানুষরা খুবই জটিল।

    উল্টোটাও হতে পারে, হয়তো আমরা খুবই সরল। সরল জিনিস বোঝার ক্ষমতা নেই বলে তুমি আমাদের জটিল ভাবছ। আমার আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।

    তোমার খাবার দিতে বলি?

    বল।

    কোনো বিশেষ খাবার কি তোমার খেতে ইচ্ছে করছে?

    না।

    ইরিনা নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করল। এনারোবিক রোবটটি চুপচাপ বসে রইল। তার কোলে একটি বই। বইটির দিকে চোখ পড়তেই ইরিনার বিরক্তি লাগছে। গত দশ দিন ধরে এই ব্যাপারটি শুরু হয়েছে। খাওয়া শেষ হতেই রোবটটি তার হাতে একটা বই ধরিয়ে দেয়— গল্প, কবিতার বই। একটি বিশেষ অংশ পড়তে বলে। এটা তাদের এক ধরনের পরীক্ষা। বই পড়ার সময় ইরিনার মানসিক অবস্থার কী পরিবর্তন হয় তা রেকর্ড করা হয়। হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন, রক্তচাপ, রক্তে বিভিন্ন ধরনের হরমোনের পরিমাণ, অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ, নিও ফ্রিকোয়েন্সি।

    গত দশ দিন ধরে ইরিনাকে একটি করে ভয়ের গল্প পড়তে হচ্ছে। ভয়ংকর সব গল্প। ভূত-প্রেতের গল্প, খুন-খারাবির গল্প। মানসিক রোগীর গল্প। পৃথিবী ংস হয়ে যাওয়ার গল্প। গল্পগুলো প্রাচীন পৃথিবীর মানুষদের লেখা। কেন তারা এসব ভয়াবহ গল্প লিখেছে কে জানে। ইরিনা খেতে খেতে বলল, আজ আমি কোনো গল্প পড়ব না। সহজ গলায় বললেও তার স্বরে ধাতব কাঠিন্য ছিল। এনারোকিক রোবট বলল, আজকের গল্পটি ভয়ের গল্প নয়। আজ তুমি পড়বে হাসির গল্প।

    হাসির গল্প?

    হ্যাঁ। পৃথিবীতে যে কয়টি সেরা হাসির গল্প আছে, এটি তার একটি। গল্প বললে ভুল হবে, হাসির উপন্যাসের একটি ক্ষুদ্র অংশ।

    হাসির গল্প পড়তে ইচ্ছা করছে না।

    তোমাকে এটি পড়তে একটি বিশেষ কারণে অনুরোধ করছি। কারণটি হচ্ছে, পৃথিবীর মানুষেরা এটাকে একটি হাসির গল্প মনে করে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই গল্প পড়ে প্রাণ খুলে হাসে, কিন্তু আমাদের ধারণা এটা একটা ভয়াবহ গল্প। গল্প পড়ে মানুষদের ভয় পাওয়া উচিত। তারা তা পায় না, তারা হাসে। কেন হাসে এটা আমরা বুঝতে পারি না। তাহলে কি ভয় এবং হাসি- এরা খুব কাছাকাছি। আমরা এই জিনিসটি বুঝতে চাই। তুমি কি খানিকটা কৌতূহল বোধ করছ না?

    না, করছি না।

    তুমি মিথ্যা কথা বললে। তুমি যথেষ্ট পরিমাণেই কৌতূহল বোধ করছি। মানুষ যখন কৌতূহল বোধ করে, তখন তার নিও ফ্রিকোয়েন্সি সত্ত্বরের মতো বেড়ে যায়। তোমার বেড়েছে। দয়া করে বইটি নাও এবং পড়।

    ইরিনা বইটি হাতে নিল। প্ৰায় সঙ্গে সঙ্গেই দাগ দেয়া অংশ পড়তে শুরু করল। গোলকধাঁধা নিয়ে গল্প। কয়েকটি মানুষ গোলকধাঁধায় হারিয়ে যায়। বেরুবার পথ খুঁজে পায় না। এটাই হচ্ছে বিষয়বস্তু। মজার গল্প। পড়তে পড়তে ইরিনা হেসে কুটিকুটি। বইটির নাম এক নৌকায় তিন জন।

    গল্প

    হ্যারিস জানতে চাইল আমি কখনো হ্যাম্পটন কোটের সেই বিখ্যাত গোলকধাঁধায় গিয়েছি। কিনা। সে বলল, অন্যদের পথ দেখিয়ে দেবার জন্যে এক বার সে গিয়েছিল। গোলকধাঁধার ম্যাপি পড়ে সে বুঝতে পারলা, পয়সা খরচ করে গোলকধাঁধা দেখতে যাওয়া নিতান্ত বোকামি। খুবই সাধারণ।কেন যে মানুষ পয়সা খরচ করে এটা দেখতে আসে, কে জানে। হ্যারিসের এক চাচাতো ভাইয়েরও তাই ধারণা। সে বলল, এসেছ যখন দেখে যাও। এমন কোনো ধাঁধা নয়। যে কোনো বোকা লোকও ভেতরে গিয়ে দশ মিনিটের মধ্যে বের হয়ে আসতে পারে। জিনিসটা এতই সোজা যে, একে গোলকধাঁধা বলাই অন্যায়। ভেতরে ঢোকার আগে শুধু খেয়াল রাখতে হবে, যখনই বাকি আসবে, তখনি যেতে হবে ডান দিকের রাস্তায়। চল যাই তোমাকে ব্যাপারটা দেখিয়েই আনি। সবার সঙ্গে গল্প করতে পারবে যে হ্যাম্পটন কোটের গোলক ধাঁধায় ঢুকছে।

    ভেতরে ঢোকার পরই কয়েকজন লোকের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। লোকগুলো ক্লান্ত ও খানিকটা ভীত। তারা বলল, গত এক ঘণ্টা ধরে আমরা শুধু ঘুরপাক খাচ্ছি। আমাদের যথেষ্ট হয়েছে। এখন বেরুতে পারলে বাঁচি। হ্যারিস বলল, আপনারা আমার পেছনে পেছনে আসতে পারেন। আমি খানিকক্ষণ দেখব, তারপর বেরিয়ে যাব।

    লোকগুলো অসম্ভব খুশি হল, বারবার ধন্যবাদ দিতে লাগল। তারা হ্যারিসের পেছনে পেছনে হাটতে লাগল। নানান ধরনের লোকজনের সঙ্গে তাদের দেখা হল, গোলকধাঁধার বিভিন্ন অংশে আটকা পড়েছে, বেরুবার পথ খুঁজে পাচ্ছে না। এদের কেউ বেরুবার আশা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছিল। তাদের ধারণা হয়েছিল, জীবনে আর লোকালয়ে ফিরে যাওয়া হবে না। হ্যারিসকে দেখে তারা সাহস ফিরে পেল। আনন্দের সীমা রইল না। প্রায় কুড়ি জনের মতো লোক তাকে অনুসরণ করছে। এদের মধ্যে আছেন কাঁদো কাঁদো মুখে বাচ্চা-কোলে এক মহিলা। তিনি বললেন যে – তিনি ভোর বেলায় ঢুকেছিলেন, আর বেরুতে পারছিলেন না। যে দিকেই যান আবার আগের জায়গায় ফিরে আসেন।

    হ্যারিস খুব নিয়মমাফিক প্রতিটি বাঁকে ডান দিকে যেতে লাগল। দশ মিনিটে বাঁক শেষ হবার কথা, কিন্তু ফুরোচ্ছে না। প্রায় দুমাইলের মতো হাঁটা হয়ে গেল।

    একটা জায়গায় এসে হ্যারিসের কেমন যেন অস্বস্তি বোধ হল। মনে হল এই জায়গায় কিছুক্ষণ আগেই একবার এসেছে। এর মানেটা কি? হ্যারিসের চাচাতো ভাই জোর গলায় বলল, সাত মিনিট আগেও একবার এই জায়গায় এসেছি। ঔ তো রুটির টুকরোটা দেখা যাচ্ছে। হারিস বলল, হতেই পারে। না। বাচ্চা কোলে মহিলাটি বললেন, আপনাদের সঙ্গে দেখা হবার আগে এই জায়গাতেই আমি বসেছিলাম। রুটির টুকরোটি আমিই ফেলেছি। ভদ্রমহিলা রাগী দৃষ্টিতে হ্যারিসের দিকে তাকালেন এবং বললেন, আপনি একটি চালাবাজ। গোলকধাঁধা থেকে বেরুবার কৌশল আপনার জানা নেই। হ্যারিস পকেট থেকে ম্যাপ বের করল, এবং বেরুবার পথ কি রকম, তা খুব সহজ ভাষায় সবাইকে বুঝিয়ে দিল। চলুন এক কাজ করা যাক। যেখান থেকে আমরা শুরু করেছিলাম, সেখানে যাওয়া যাক।

    হ্যারিসের কথায় তেমন কোনো উৎসাহ সৃষ্টি হল না। তবুও সবাই বিরক্ত মুখে হ্যারিসের পেছনে পেছনে উল্টোদিকে হাঁটতে শুরু করল। দশ মিনিট না যেতেই দেখা গেল তার ঠিক আগের জায়গাতেই আছে। ঐ তো রুটির টুকরোটি পড়ে আছে।

    হ্যারিস প্ৰথমে ভাবল যে সে এমন ভান করবে যাতে সবাই মনে করে এটাই সে চাচ্ছিল। দলের লোকদের দিকে তাকিয়ে সাহসে কুলালো না। সবাইকে অসম্ভব ক্ষিপ্ত মনে হচ্ছে। হ্যারিসের মনে হল দলপতি হিসেবে তার আগের জনপ্রিয়তা এখন আর নেই।

    যাই হোক, আবার ম্যাপ দেখা হল। গভীর আলোচনা হল। আবার শুরু করা গেল। লাভ হল না। সাত মিনিট যেতেই রুটির টুকরোর কাছে তারা ফিরে এল। এর পর থেকে এমন হল, এরা কোথাও যেতে পারে না। রাওয়ানা হওয়া মাত্র রুটির টুকরোর কাছে ফিরে আসে। ব্যাপারটা এতই স্বাভাবিকভাবে ঘটতে লাগল যে কেউ কেউ ক্লান্ত হয়ে রুটির টুকরোটির কাছে অপেক্ষা করে, কারণ তারা জানে সাবই এই জায়গাতেই ফিরে আসবে। আসছেও তাই। ভয়াবহ ব্যাপার…।

    গল্পের এ জায়গা পর্যন্ত এসেই ইরিনা হাসিতে ভেঙে পড়ল। আর যেন এগোতে পারছে না। একটু পড়ে, আবার হাসে। আবার পড়ে, আবার হাসে। যে জায়গায় গোলকধাঁধার পরিদর্শক এসেছেন তাদের উদ্ধার করতে এবং তিনিও সব গুলিয়ে ফেলেছেন, সেই অংশ পড়তে ইরিনার হিস্টিরিয়ার মতো হয়ে গেল। হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে গেছে। বিস্মিত হয়ে দেখছে এনারেবিক রোবট।

    ইরিনা।

    বল।

    আমরা হ্যাম্পটন কোর্টের গোলকধাঁধার মতো একটা গোলকধাঁধা। এখানে তৈরি করেছি।

    তাই নাকি?

    হ্যাঁ। তবে আমাদের এই গোলকধাঁধা তার চেয়ে কিছু জটিল।

    ভেতরে ঢুকলে হ্যারিসের মতো আটকে যাব? বেরুতে পারব না?

    মনে হচ্ছে তাই, তবে যদি বুদ্ধিমান হও, তাহালে নিশ্চয়ই বেরুতে পারবে।

    ভালো কথা, এখন তুমি চলে যাও। আমি এই বইটা পড়ব। এই জাতীয় বই তুমি আমাকে আরো জোগাড় করে দেবে।

    তোমার ধারণা এটা খুব একটা মজার বই?

    ধারণা নয়। আসলেই এটা একটা মজার বই।

    ইরিনা।

    বল।

    আমরা পরিকল্পনা করেছি। তোমাকে আমাদের তৈরি গোলকধাঁধায় ছেড়ে দেব।

    তার মানে?

    আমি দেখতে চাই তুমি কী করা। তোমার মানসিক অবস্থাটা আমরা পরীক্ষা করব। ঐ পরিস্থিতিতে তুমি কী কর আমরা দেখব। বেরুবার পথ খুঁজে না পেলে তোমার মানসিক অবস্থাটা কী হয়, তাই আমাদের দেখার ইচ্ছা।

    ইরিনা তাকিয়ে আছে। এনারোবিক রোবটটি বলল, এক দিকের প্রবেশপথ দিয়ে তোমাকে ড়ুকিয়ে দেব, অন্য দিকের প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকিয়ে দেব মীরকে।

    কেন?

    এই প্রশ্নের উত্তর তো একবার দিয়েছি। ক্ষুদ্র একটা পরীক্ষা আমরা করছি। আমরা মনে করি মানবিক আবেগ বোঝার জন্যে এই পরীক্ষাটি কাজে দেবে। আমরা অনেক নতুন নতুন তথ্য পাব।

    এই জাতীয় পরীক্ষা কি তোমরা আগেও করেছ?

    হ্যাঁ, করা হয়েছে। তুমি তো ইতোমধ্যেই জেনেছ, প্রথম শহরের কিছু নাগরিককে এখানে আনা হয়। অমর মানুষরা তাদের সঙ্গে কথা-টথা বলেন। তাদের দীর্ঘ জীবনের এক ঘেয়েমি কাটানোর এটা একটা উপায়। যখন তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়, তখন আমরা ওদের নিয়ে নিই। মানবিক আবেগের প্রকৃতি বোঝার জন্যে নানান পরীক্ষানিরীক্ষা করি। গোলকধাঁধার পরীক্ষা হচ্ছে তার একটি।

    কেউ কি সেই গোলকধাঁধা থেকে বেরুতে পেরেছে?

    না পারে নি। আমি তোমাকে আগেই বলেছি, আমাদের গোলকধাঁধাটি যথেষ্ট জটিল।

    ইরিনা রুদ্ধ। গলায় বলল, তুমি আমাকে বলেছিলে যদি আমি তোমাকে সাহায্য করি, তুমি আমাকে সাহায্য করবে। এই তোমার সাহায্যের নমুনা?

    তুমি বুঝতে পারছি না। আমি কিন্তু তোমাকে সাহায্যই করছি।

    আমি সত্যি বুঝতে পারছি না। কীভাবে সাহায্য করছ আমাকে?

    গোলকধাঁধার কথা আগেই তোমাকে বলে দিলাম, এতে তুমি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার একটা সুযোগ পাচ্ছ, যা তোমার সঙ্গী পাচ্ছে না।

    বাহ তোমার মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। কী বিশাল তোমার হৃদয়!

    তুমি মনে হচ্ছে আমার ওপর রাগ করলে?

    ইরিনা উঠে দাঁড়িয়ে কঠিন গলায় বলল, নিয়ে চল আমাকে গোলকধাঁধায়।

    তুমি ভয় পাচ্ছ না?

    না, পাচ্ছি না।

    তাহলে চল যাওয়া যাক।

    ইরিনা হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে বলল, যদি আমরা বেরুতে না পারি, তখন কী হবে?

    বেরুতে না পারলে যা হবার তাই হবে।

    তার মানে?

    তুমি একজন বুদ্ধিমতী মেয়ে, মানে বুঝতে না পারার কোনো কারণ দেখছি না।

    তুমি বলেছিলে, অমর মানুষদের জন্য আমাদের আনা হয়েছে। আমাদের কি তাদের এখন আর প্রয়োজন নেই?

    না। তাঁরা এখন এক জনকে নিয়ে ব্যস্ত। তাকে তুমি চেন। তার নাম অরচ লীওন।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীল অপরাজিতা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }