Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প1195 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১১. ইরিনার ভয় লাগছে না

    ইরিনার ভয় লাগছে না।

    সে বেশ সহজ ভঙ্গিতেই হাঁটছে। জায়গাটাকে প্ৰকাণ্ড গুহার মতো মনে হচ্ছে, যে গুহার ভেতর মাকড়সার জালের মতো অসংখ্য টানেল। কোনো একটি টানেল ধরে কিছুদূর যাবার পরই টানেলটি দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। কোনো কোনো জায়গায় তিন ভাগ হয়। কিছু টানেল অন্ধ গলির মতো। কোথাও যাবার উপায় নেই। গ্রানাইট পাথরের নিরেট দেয়াল।

    প্রথমে ঢোকবার পর খুবই অন্ধকার বলে মনে হচ্ছিল, এখন মনে হচ্ছে না। চাপা আলোয় চারপাশ ভালোই চোখে পড়ে। টানেলগুলো ছোট ছোট, দুজন মানুষ পাশাপাশি হাঁটতে পারে না। তবে সোজা হয়ে হাঁটতে অসুবিধা হয় না। ইরিনা হাঁটছে ঠিকই, কোনো কিছুই গভীরভাবে লক্ষ করছে না। লক্ষ করার প্রয়োজনও বোধ করছে না। কী হবে লক্ষ করে? এই জটিল গোলকধাঁধা থেকে নিজের চেষ্টায় সে বেরুতে পারবে না। কাজেই সেই অর্থহীন চেষ্টার প্রয়োজন কি?

    সে ঘণ্টাখানেক হাঁটল। একবার কে আছ? বলে চিৎকার করল দেখার জন্যে যে প্রতিধ্বনি হয়। কিনা। সুন্দর প্রতিধ্বনি হল। অসংখ্যবার শোনা গেল, কে আছ? কে আছ? কে আছ? শব্দটা আস্তে আস্তে কমে গিয়ে বিচিত্র কারণে আবার বাড়ে। নদীর ঢেউয়ের মতো শব্দ ওঠানামা করতে থাকে। চমৎকার একটা খেলা তো! সে মৃদুস্বরে বলল, আমি ইরিনা! আমি ইরিনা!! আবার সেই আগের মত হল। ফিসফিস করে চারদিক থেকে বলছে, আমি ইরিনা!! ঢেউয়ের মতো শব্দ বাড়ছে কমছে এবং এক সময় মিলিয়ে যাচ্ছে! তাও পুরোপুরি মিলাচ্ছে না। শব্দের একটি অংশ যেন থেকে যাচ্ছে। যেন এই অদ্ভুত গুহায় বন্দী হয়ে যাচ্ছে। এই জীবনে তাদের মুক্তি নেই। আজ থেকে হাজার বছর পরে কেউ এলে সে-ও হয়ত শুনবে তার কানের কাছে কেউ ফিসফিস কর বলছে, আমি ইরিনা, আমি ইরিনা। যাকে বলা হবে, সে চমকে চারদিকে তাকাবে। কাউকে দেখবে। না। মানুষ থাকবে না, তার শব্দ থাকবে। এ-ও তো এক ধরনের অমরতা। এই— বা মন্দা কি? ইরিনা খিলখিল করে হেসে গম্ভীর হয়ে গেল। তার ধারণা হল, সে পাগল হয়ে যাচ্ছে।

    মানুষ কী করে পাগল হয় তা সে জানে না। যদিও চোখের সামনে এক জনকে পাগল হতে দেখেছে। তার নাম কুনু। চমৎকার ছেলে হাসিখুশি। অদ্ভুত অদ্ভুত সব রসিকতা করে। বেশির ভাগ রসিকতাই মেয়েদের নিয়ে। রসিকতা শুরু করার আগে ছোট্ট একটা বক্তৃতা দিয়ে নেয়, সন্মানিত মহিলাবৃন্দ, এইবার আপনাদের লইয়া একটা রসিকতা করা হইবে। যাহারা এই জাতীয় রসিকতা সহ্য করতে অক্ষম, তাহদের নিকট অধীনের বিনীত নিবেদন, আঙুলের সাহায্যে দুই কান বন্ধ করুন। যথাবিহিত বিজ্ঞপ্তি দেয়া হইল। ইহার পরে কেহ আমাকে দোষ দিবেন না। ইতি। আপনাদের সেবক কুনু।

    বেচারা কীভাবে জানি একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে গেল। সারাক্ষণ তার চেষ্টা কী করে মেয়েটির আশেপাশে থাকবে। মেয়েটির সঙ্গে দুটি কথা বলবে। বাড়ি ফেরার সময় একসঙ্গে ফিরবে। মেয়েটি খুব বুদ্ধিমতী ছিল। কুনুকে বলল, তুমি সব সময় আমার সঙ্গে থাকতে চাও কেন? কুনু লাজুক গলায় বলল আমার ভালো লাগে, এই জন্যে থাকতে চাই।

    তোমার কথা শুনে আমার ভালো লাগল। আমি কেন, যে কোনো মেয়েরই ভালো লাগবে। কিন্তু পরের অবস্থা চিন্তা করে দেখেছি?

    পরের কি অবস্থা?

    আমি এই বছরই বিয়ের অনুমতি পাব, কাউকে বিয়ে করতে হবে। তুমি অনুমতি পাবে আরো তিন বছর পর। তখন তোমার কষ্ট হবে।

    কষ্ট হলে হবে।

    মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেল। প্রথম শহরের বিবাহ-দপ্তরের ঠিক করে দেয়া একটি ছেলের সঙ্গে। তবু কুনু সব সময় চেষ্টা করে মেয়েটির আশেপাশে থাকতে। মেয়েটি যখন তার স্বামীর সঙ্গে কাজের শেষে বাড়ি ফেরে, কুনু দূর থেকে তাদের অনুসরণ করে। ছুটির সময় মেয়েটির বাড়ির সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। মেয়েটি এবং তার স্বামী, দুজনই খুব অস্বস্তি বোধ করে। কুনুর পাগল হবার শুরুটা এখান থেকে- শেষ হয় খাদ্য দপ্তরে। খাবারের টিকেটের জন্য সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ কুনু হাসতে শুরু করল। প্ৰথমে মিটিমিটি হাসি- তারপরই উচ্ছসিত হাসি। সে হাসি আর থামেই না। দুজন রোবট কমী ছুটে এল। কুনুকে সরিয়ে নেয়া হল। সংবাদ বুলেটিন বলা হল মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে কুনুকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। যেন সে একটি ভঙ্গুর আসবাব, কাচের কোনো পাত্ৰ। নষ্ট করে ফেলা যায়। নষ্ট করতে কোনো দোষ নেই। কোনো অপরাধ নেই।

     

    এই মেয়ে।

    ইরিনা চমকে উঠল। নিজেকে খুব সহজেই সামলে নিল। পা গুটিয়ে মীর বসে আছে। আর মুখভর্তি হাসি। মীর বলল, তোমাকেও এখানে এনে ফেলে দিয়েছে নাকি? তুমিও এলে?

    দেখতেই তো পাচ্ছেন, আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন?

    আরো আস্তে কথা বল। শব্দ করে বললে বিকট প্ৰতিধ্বনি হয়। যা বলার কানের কাছে মুখ এনে বল।

    আমার কিছু বলার নেই।

    আরো কি মুশকিল। আমার ওপর রাগ করছ, কেন? আমি তো তোমাকে গুহায় এনে ফেলি নি।

    আপনি এখানে বসে বসে কী করছেন?

    তোমার জন্যে অপেক্ষা করছি। যে জায়গায় বসে আছি সেটা হচ্ছে কেন্দ্ৰবিন্দু। তোমাকে এখানে আসতেই হবে।

    আমি যে এখানে আছি, কী করে বুঝলেন? আপনাকে ওরা বলেছে?

    আরে না। কিছুই বলে নি। নিজের ঘরে ঘুমুচ্ছিলাম, হঠাৎ জেগে উঠে দেখি এখানে শুয়ে আছি। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে বুঝলাম এটা একটা গোলকধাঁধা। বেশ মজা লাগল। ঘণ্টাখানেক আগে তোমার গলা শুনলাম, তারপর থেকেই তোমার জন্যে অপেক্ষা করছি।

    ইরিনা বলল, আপনি তো একবার বলেছিলেন যে আপনি খুব বুদ্ধিমান। এখান থেকে বেরুতে পারবেন?

    আরে এই মেয়ে কি বলে? পারব না কেন? ব্যাপারটা খুব সোজা। তোমাকে যে কোনো একদিকে বাক নিতে হবে। হয় ডানে যাবে না বা দিকে যাবে। তাহলেই হল। তবে এমনিতে ডান-বাম ঠিক রাখা মুশকিল, কাজেই সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হচ্ছে ডান হাতে ডান দিকের দেয়াল ছুঁয়ে যাওয়া।

    আপনি গিয়েছিলেন?

    নিশ্চয়ই। গোলকধাঁধার রহস্য পাঁচ মিনিটের মধ্যে বের করেছি।

    সত্যি কি করেছেন?

    আরো কী মুশকিল! আমি তোমার সঙ্গে মিথ্যে কথা বলব কেন? বস এখানে। গল্প করি।

    গল্প করবেন? আচ্ছা, আপনি কি পাগল?

    মীর অত্যন্ত অবাক হল। এই মেয়েটির রাগের কোনো কারণ তার মাথায় ঢুকছে না। রাগ হলেও হওয়া উচিত, যারা মেয়েটিকে এখানে এনেছে তাদের ওপর। সে তো তাকে এখানে আনে নি। মীর দ্বিতীয়বার বলল, বস ইরিনা। কেন শুধু শুধু রাগ করছ?

    ইরিনা তাকে অবাক করে দিয়ে সত্যি সত্যি বসল। হালকা গলায় বলল, মনে হচ্ছে আপনি খুব সুখে আছেন?

    সুখেই তো আছি।

    কেন সুখে আছেন জানতে পারি?

    সুখে আছি, কারণ এই প্রথম নিজের মতো করে থাকতে পারছি। যেসব প্রশ্ন করামাত্র প্রথম শহরে লোকদের শাস্তি হয়ে যায়। সেই সব প্রশ্ন করতে পারছি এবং জবাবও পাচ্ছি।

    আর এই যে একটা ছোট্ট ঘরে আপনাকে দিনের পর দিন বন্ধ করে রাখা হয়েছে, তার জন্যে খারাপ লাগে না?

    না তো। চিন্তা করবার মতো কত কি পাচ্ছি। চিন্তা করে করে কত রহস্যের সমাধান করে ফেললাম।

    তাই বুঝি।

    মীর আহত গলায় বলল, আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না? কয়েক দিন আগে একটা রহস্য ভেদ করলাম। সেই কথা শুনলে তুমি অবাক হবে। যেমন ধর, অমর মানুষদের সংখ্যা এখন নয়জন। এক সময় ছিল চল্লিশ জন। তাদের মধ্যে পুরুষও ছিলেন এবং রমণীও ছিলেন। তবু সংখ্যা বাড়ল না। এর মানে কি? এর মানে হচ্ছে অমর মানুষদের ছেলেপুলে হয় না।

    এইটাই আপনার বিশাল আবিষ্কার?

    আবিষ্কারটা খুব ক্ষুদ্র, এ-রকম মনে করারও কারণ নেই। ভালোমত ভেবে দেখ, অমর মানুষরা বংশ বৃদ্ধি করতে পারেন না, এবং তাদের সংখ্যা কমছে। অর্থাৎ তারা অমর নন।

    ইরিনা তাকিয়ে আছে। মীর উজ্জ্বল চোখে হড়বড় করে কথা বলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে তার আনন্দের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। ইরিনার মনে হল, এই লোকটি কী নির্বোধ! একমাত্র নির্বোধরাই এমন অবস্থায় এত হাসিখুশি থাকতে পারে।

    মীর হাত নেড়ে বলল, নিষিদ্ধ নগর জায়গাটা কোথায় বল তো?

    ইরিনা তাকিয়ে রইল, উত্তর দিল না। মীর বলল, জায়গাটা মাটির ওপরে না নিচে, এইটা বল।

    মাটির নিচে হবে কেন? এই ব্যাপারটাই আমাকে খটকায় ফেলে দিয়েছে। মাটির নিচে কেন? কারণটা আমি বের করেছি।–

    কারণ পরে শুনব, আগে বলুন জায়গাটা মাটির নিচে বলে ভাবছেন কেন?

    জায়গাটা মাটির নিচে বলে ভাবছি, কারণ এখানে বাতাস বইতে লক্ষ করি নি। সারাক্ষণই বাতি জুলছে এবং এখানকার তাপমাত্রা সব সময় সমান থাকে। কোনো হ্রাস-বৃদ্ধি নেই।

    মাটির ওপরেও তো এরকম একটা ঘর থাকতে পারে। বিশাল একটি ঘরের ভেতর দিয়ে ঘরাও তো এরকম হতে পারে। পারে না?

    হ্যাঁ তা অবশ্যি পারে, তুমি ঠিকই বলেছ। আমারও এরকম সন্দেহ হয়েছিল, কাজেই আমি খুব বুদ্ধিমানের মতো একটি প্রশ্ন করে এনারোবিক রোবটের কাছ থেকে উত্তরটা বের করে ফেললাম।

    কি প্রশ্ন?

    আমি জিজ্ঞেস করলাম, জায়গাটা মাটির নিচে না ওপরে? সে বলল, नि5। श श श।

    ইরিনা হাসবে না। কাঁদবে বুঝতে পারল না। কি বিচিত্ৰ মানুষ! ইরিনা বিরক্ত হয়ে বলল, শুধু শুধু এত হাসছেন কেন?

    হাসছি, কারণ এত চিন্তা-ভাবনা করে এই জিনিসটা বের করার দরকার ছিল না রোবটকে জিজ্ঞেস করলেই হত। হা হা হা।

    হাসবেন না। আপনার হাসি শুনতে ভালো লাগছে না।

    প্রথম দুদিন এরা নিষিদ্ধ নগর নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলে উত্তর দিত না। এখন যা জানতে চাই বলে দেয়। এর মানেটা কি বল তো?

    জানি না।

    এর মানে হচ্ছে ওরা আমাদের মেরে ফেলবে। মরবার আগে একটু ভালো ব্যবহার করছে। হা হা হা।

    আমাদের মেরে ফেলবে, এটা কি খুব আনন্দের ব্যাপার? এ রকম করে হাসছেন কেন?

    কী করতে বল আমাকে? পা ছড়িয়ে বসে বসে কাঁদব?

    ইরিনা চুপ করে আছে। মীর শান্ত গলায় বলল, আমাদের কিছুই করার নেই। শুধু চিন্তা করে লাভ কি? এর চেয়ে আনন্দে থাকাটাই কি ভালো না? কি, কথা বলছ না কেন?

    ইচ্ছে করছে না। তাই বলছি না, আপনিও দয়া করে বলবেন না।

    আমি আবার কথা না বলে থাকতে পারি না। কাউকে পছন্দ হলে আমার শুধু কথা বলতে ইচ্ছা করে। তোমাকে কিছুটা পছন্দ হয়েছে।

    ইরিনা উঠে দাঁড়াল, কয়েক মুহুর্ত অপেক্ষা করেই হাঁটতে শুরু করল।

    এই, তুমি যাচ্ছ কোথায়? তা দিয়ে আপনার কোনো দরকার নেই। খবরদার, আপনি আমার পেছনে পেছনে আসবেন না।

    মীর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ইরিনা একবারও পেছনে না ফিরে প্রথম বঁাকেই ডান দিকে ফিরল। ডান হাতে ডান দিকের দেয়াল স্পর্শ করে সে দ্রুত এগোচ্ছে। তার দেখার ইচ্ছা সত্যি সত্যি বের হওয়া যায়। কিনা। সে ভেবেছিল পেছনে পেছনে মীর আসবে। তাও আসছে না। দ্বিতীয় বাকের কাছে এসে সে বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করল, যদি মীর ফিরে আসে। না, সে আসছে না। লোকটি এমন কেন? তার কি উচিত ছিল না পেছনে পেছনে আসা? ইরিনার এখন ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে। সেটাও লজার ব্যাপার। ফিরে গিয়ে সে কী বলবে?

    ইরিনা ফিরল না। ডান হাতে দেয়াল স্পর্শ করে এগোতে লাগল। আশ্চর্য কাণ্ড, পনের মিনিটের মাথায় সে গোলকধাঁধার প্রবেশ পথে চলে এল। মীর তাকে ভুল বলে নি। লোকটি বুদ্ধিমান।

    এনারোবিক রোবট দাঁড়িয়ে আছে প্ৰবেশ পথে। রোবটের চোখ দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই, কিন্তু ইরিনার মনে হল রোবটটি খুব অবাক হয়েছে।

    তুমি খুব অল্প সময়েই বেরিয়ে এলে।

    হ্যাঁ, এলাম।

    তোমার সঙ্গী মীর বোধ হয় তোমার মতো বিশ্লেষণী ক্ষমতার অধিকারী নয়। সে এখনো ঘুরছে।

    ইরিনা ঠাণ্ডা গলায় বলল, সে কি করছে না করছে তা তোমরা খুব ভালো করেই জােন। আমি কিভাবে বের হলাম তাও জান, আবার জিজ্ঞেস করছ, কেন? পেয়েছ কী তুমি?

    রোবটটি কিছু বলল না। তবে তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হল সে কিছু জানে না, কারণ কিছু সময় পর আবার বলল, ওখান থেকে কেউ বেরুতে পারে না। তুমি কি ভাবে বের হলে?

    জানি না কিভাবে বের হয়েছি। হয়তো আমি কোনো মন্ত্র জানি।

    কী জান? মন্ত্র? সেটা কি?

    মন্ত্র হচ্ছে কিছু কিছু অদ্ভুত শব্দ। একের পর এক বলতে হয়।

    তাতে লাভ কী?

    তাতেই কাজ হয়। অসাধ্য সাধন করা যায়।

    রোবটটি মনে হয় খুব অবাক হয়েছে। এরা অবাক হলে টের পাওয়া যায়। এদের মারকারি চোখের ঔজ্জ্বলতায় দ্রুতহাস-বৃদ্ধি ঘটে। এখানেও তাই হচ্ছে। ইরিনার এখন কেন জানি বেশ মজা লাগছে। সে হালকা গলায় বলল, একটা মন্ত্র তোমাকে শোনাব? শুনতে চাও?

    হ্যাঁ। তোমার যদি কষ্ট না হয়। ইরিনা হাত নাড়িয়ে মাথা দুলিয়ে বানিয়ে বানিয়ে একটা অদ্ভুত ছড়া বলল,

    ইরকু ফিরকু চাচেন চাচেন
    আপনি ভাই
    কেমন আছেন?
    কুরকুর কুর মুরমুর মুর
    ভয় দ্বিধা সব হয়ে যাক দূর।
    এরকা ফেরকা হিমাটিম
    সকাল বেলায়
    খাবেন ডিম।

    রোবট বলল, এটা একটা মন্ত্র?

    হ্যাঁ মন্ত্র।

    এখন কী হবে?

    এখন আমি আবার ঐ গোলকধাঁধায় অদৃশ্য হয়ে যাব। আর আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

    বলেই সে দাঁড়াল না। রোবটটি কিছু বোঝার বা বলার আগেই দ্রুত টানেলের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল। রোবটটির যা আকৃতি, তাতে টানেলের ভেতর তার ঢোকার উপায় নেই। সে পেছনে পেছনে আসবে না। তবু কে জানে হয়তো কোনো না কোনোভাবে এসেও যেতে পারে। ইরিনা দ্রুত যাচ্ছে। এবার যাচ্ছে বাঁ হাতের বা দিকের দেয়াল ছয়ে ছয়ে। সে নিশ্চিত জানে, এভাবে কিছুদূর গেলেই মীরকে পাওয়া যাবে। সে নিশ্চয়ই এখনো ঠিক আগের জায়গাতেই আছে।

    মীর সেখানেই ছিল। ইরিনাকে আসতে দেখে সে বিন্দুমাত্র অবাক হল না। যেন এটাই সে আশা করছিল কিংবা এটা যে ঘটবে তা সে জানে। ছুটে আসার জন্যে ইরিনা হাঁপাচ্ছিল। দম ফিরে পেতে তার সময় লাগছে। মীর তাকিয়ে আছে। ইরিনা বলল, এখনো এই একই জায়গায় বসে আছেন?

    হ্যাঁ।

    নতুন কোনো রহস্য নিয়ে ভাবছিলেন বুঝি?

    হ্যাঁ।

    কী রহস্য?

    তুমি কেন আমাকে দেখলেই রেগে যাও, এ রহস্য নিয়ে ভাবছিলাম।

    রহস্যের সমাধান হয়েছে?

    হ্যাঁ হয়েছে। তুমি আমাকে দেখলেই রেগে যাচ্ছ, কারণ তুমি যে কোনো কারণেই হোক আমার প্রেমে পড়ে গেছি।

    তই নাকি?

    হ্যাঁ তাই। তুমি আমার প্রতি যে আগ্রহ দেখাচ্ছ, সেই আগ্ৰহ আমি তোমার প্ৰতি দেখাচ্ছি না- এই জিনিসটাই তোমাকে রাগিয়ে দিচ্ছে।

    আপনি তো বিরাট আবিষ্কার করে ফেলেছেন।

    হ্যাঁ, তা করেছি এবং ঠিক করেছি এখন থেকে তোমার প্রতি আগ্ৰহ দেখাব। কিছুটা হলেও দেখাব।

    আপনার অসীম দয়া।

    কাছে এস ইরিনা। আমি এখন তোমাকে একটি চুমু খাব।

    ইরিনা কাছে এগিয়ে এল এবং মীর কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার গালে প্রচণ্ড একটা চড় বসিয়ে দিল। মীর হতভম্ব। সে তার গালে হাত বোলাচ্ছে এবং অদ্ভুত চোখে ইরিনাকে দেখছে। মীর দুঃখিত গলায় বলল, এরকম করলে কেন? আমি কিন্তু ভুল বলি নি। সত্যি কথাই বলেছি। এবং তুমিও জান এটা সত্যি। জান না?

    ইরিনা তাকিয়ে আছে। তার বড় বড় চোখ মমতায় আৰ্দ্ধ। তার খুব খারাপ লাগছে। এরকম একটা কাণ্ড সে কেন করল? সে ক্ষীণ স্বরে বলল, আপনি কিছু মনে করবেন না। আমি খুব লজ্জিত।

    আমি কিছু মনে করি নি। শুধু একটু অবাক হয়েছি। আমার চুমু খাবার তেমন কোনো ইচ্ছে ছিল না। আমার মনে হচ্ছিল, চুমু খেলে তুমি খুশি হবে। আমি তোমাকেই খুশি করতে চাচ্ছিলাম। চুমু খাওয়া আমার কাছে খুব আনন্দের কিছু মনে হয় নি।

    ঐ প্রসঙ্গটা বাদ থাক। অন্য কিছু বলুন।

    আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি কি আমার সঙ্গে অঙ্কের খেলা খেলবে? বেশ মজার খেলা। আচ্ছা, বল তো কোন দুটি সংখ্যার যোগফল গুণফলের চেয়েও বেশি।

    কী বললেন, যোগফল, গুণফলের চেয়েও বেশি? তা কেমন করে হবে?

    হবে, যেমন ১ এবং ১ এদের যোগফল দুই কিন্তু গুণফল ১–হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ।

    ইরিনা তাকিয়ে আছে। মীর গম্ভীর হয়ে বলল, এবার আরেকটু কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি।

    আমার এসব অঙ্ক ভালো লাগছে না। বিরক্তি লাগছে।

    আচ্ছা, তাহলে অঙ্কের অন্য ধাঁধা দিই, খুব মজার। খুবই মজার।

    বিশ্বাস করুন, আমার এতটুকুও মজা লাগছে না।

    লাগতেই হবে। এক থেকে ৯-এর মধ্যে একটা সংখ্যা মনে মনে চিন্তা কর। সংখ্যাটাকে তিন দিয়ে গুণ দাও। এর সঙ্গে ২ যোগ দাও। যোগফলকে আবার তিন দিয়ে গুণ দাও। যে সংখ্যাটি মনে মনে ভেবেছিলে সেই সংখ্যাটি এর সঙ্গে যোগ দাও। দুই সংখ্যার যে অঙ্কটি পেয়েছ, তার থেকে প্রথম সংখ্যাটি বাদ দাও। এর সঙ্গে ২ যোগ দাও। একে চার দিয়ে ভাগ দাও। এর সঙ্গে ১৯ যোগ দাও। দিয়েছ?

    হ্যাঁ।

    উত্তর হচ্ছে একুশ। ঠিক আছে না?

    হ্যাঁ ঠিক আছে।

    মীর হাসছে। কী সুন্দর সহজ সরল হাসি। তাকে দেখে মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে সে পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী মানুষ। হয়তো আসলেই তাই। কিছু কিছু মানুষ সুখী হবার আশ্চর্য ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। ইরিনার মনে হল, এই কদাকার লোকটি এখন যদি তাকে চুমু খেতে চায়, তার বোধ হয় খুব খারাপ লাগবে না। কিন্তু লোকটি অঙ্কে ড়ুবে গেছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীল অপরাজিতা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }