Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প1195 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০২. বরগ মিশন

    আমাদের এই মিশনটির একটি নাম আছে–বরগ মিশন। মহাকাশযানের অধিনায়ক জন বরগের নাম অনুসারে মিশনের নাম।

    আমি ভেবেছিলাম জন বরগ লোকটি অসাধারণ কেউ হবেন। হয়তো তিনি অসাধারণ। কিন্তু আমার কাছে প্রথম দর্শনে তাঁকে খুব অসাধারণ মনে হল না। রোগা লম্বা একজন মানুষ। বেশিক্ষণ চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারেন না কিংবা কথা বলেন না। চোখ নামিয়ে নেন। মেয়েদের মতো পাতলা ঠোঁট। ঠোঁট টিপে হাসার অভ্যাস আছে। খুব জরুরি ধরনের কথাবার্তার মাঝখানে হঠাৎ তার দিকে তাকালে দেখা যাবে তিনি মাথা নিচু করে ঠোঁট টিপে হাসছেন। যেন কথাবার্তা কিছু শুনছেন না, অন্য কিছু ভাবছেন।

    সাত জন ক্রু মেম্বারদের মধ্যে অধিনায়ক জন বরগকেই আমার কাছে মনে হল সবচেয়ে সাধারণ। প্রথম দর্শনে মানুষের ওপর প্রভাব ফেলার কোনো ক্ষমতা এই মানুষটির নেই।

    তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হবার কথা বলি। মহাকাশযান পৃথিবীর মহাকর্ষণ অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে। শেষ বারের মতো পৃথিবী দেখার জন্যে সবাই ভিড় করেছে অবজারভেশন প্যানেলে। আমি শুধু নেই। ফেলে আসা পৃথিবীর জন্যে আমি কোনো রকম আকর্ষণ বোধ করছি না। নিজের ঘরে চুপচাপ বসে আছি। হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ল। আমি বললাম, কে? নরম গলায় উত্তর এল, আমার নাম জন বরগ।

    আমি দরজা খুললাম। জন বরগ হাসিমুখে বললেন, সবাই শেষ বারের মতো পৃথিবী দেখছে। আপনি দেখছেন না?

    ইচ্ছা করছে না।

    চমৎকার! আমারো ইচ্ছা করছে না। এবং আমার কী মনে হচ্ছে জানেন? আমার মনে হচ্ছে আমরা আবার এই পৃথিবীতে ফিরে আসব।

    আমার এরকম কিছু মনে হচ্ছে না।

    আপনার কী রকম মনে হচ্ছে?

    কোনো রকমই মনে হচ্ছে না।

    জন বরগ হাসিমুখে বললেন, আপনার কথা শুনে ভরসা পাচ্ছি। আমি ভেবেছিলাম বলে বসবেন, আমরা আর পৃথিবীতে ফিরে আসব না।

    আমি এ রকম বললে অসুবিধা কী?

    আপনি হচ্ছেন একজন ইএসপি ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আপনি না সূচক কিছু বললে একটু খটকা তো লাগবেই, তবে–

    আমি জন বরগের দিকে তাকালাম। তিনি নিচু অথচ স্পষ্ট স্বরে বললেন, ইএসপি ক্ষমতামতা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। যে জিনিস আমি বুঝতে পারি না, সে জিনিসের প্রতি আমার আগ্রহ নেই। কাজেই আপনার এই ক্ষমতা আমি কখনো ব্যবহার করব না। আপনি হয়তো জানেন না মহাকাশযানের অধিনায়ক হচ্ছেন দ্বিতীয় ঈশ্বর। সব কিছুই চলে তাঁর হুকুমে।

    আমি সহজ গলায় বললাম, মহাকাশযানের অধিনায়ক যদি দ্বিতীয় ঈশ্বর হন, তাহলে প্রথম ঈশ্বর কে?

    প্রথম ঈশ্বর বলে কেউ নেই। ওটা হচ্ছে কথার কথা।

    এই বলেই জন বরগ মৃদু হাসলেন। উঠে দাঁড়িয়ে আবার ঠোঁট টিপে মৃদু গলায় বললেন, যাই, কেমন?

    আমি কিছু বললাম না। জন বরগ লোকটিকে যতটা সাধারণ মনে হয়েছিল, ততটা সাধারণ সে নয়। আমার ঘরে তার আসার একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিল আমাকে জানিয়ে দেয়া যে, সে আমার ক্ষমতার ধার ধারে না। এটা সে জানিয়েছে চমৎকার ভঙ্গিতে।

    বরগ মিশনের বাকি দুজন কর্মীর সঙ্গে প্রথম বাহাত্তর ঘন্টায় আমার কোনো রকম কথাবার্তা হল না। আমি নিজের ঘর থেকে বেরুলাম না। বেরুবার মতো তেমন কোনো কারণও ঘটল না। খাবার আসে ঘরে। তিশ-২ নামের একজন রোবট খাবার দিয়ে যায়, নিয়ে যায়।

    আমি প্রায় সারাক্ষণই শুয়ে থাকি। মহাকাশযানের উড়ে চলার ধাতব শব্দ শুনি। লক্ষ কোটি ঝিঝি পোকার শব্দ ব্রঙস শব্দ বাড়ে এবং কমে। আমি কিছুই করি না। শুয়ে থাকি।

    আমাকে বলা হয়েছে এই মহাকাশযানে সময় কাটানোর চমৎকার সব ব্যবস্থা আছে। এদের লাইব্রেরি পৃথিবীর যে কোনো বড় লাইব্রেরির মতোই। দুর্লভ সব সংগ্রহ এখানে আছে। ভিডিও সংগ্রহশালাটিও নাকি অসাধারণ। বিশেষ করে মানুষের মহাকাশ-যাত্রার ইতিহাস বিভাগ। প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ে ফিল্মও এখানে আছে। প্রজেকশন রুমে বসলেই হল। এখানে আছে সব রকম খেলাধুলার ব্যবস্থা। এমনকি সাঁতারের জন্যে ছোট একটি সুইমিংপুলের মতও নাকি আছে, যার পানিতে ইলেকট্ৰিকেল চার্জ থাকায় সাঁতারের ব্যাপারটি হয় স্বৰ্গীয় আনন্দের মতো। আয়নিত জলকণা শরীরে ধাক্কা দেয়। প্রচণ্ড শারীরিক সুখের একটা অনুভূতি হয়।

    আমাকে এসব আকর্ষণ করে না। আমার মনে হয় আমি তো ভালোই আছি। সুখেই আছি, খুব যখন নিঃসঙ্গ বোধ হয় তখন তিশ-২-এর সঙ্গে কথা বলি। খুবই সাধারণ কথাবার্তা। যেমন এক দিন বললাম, কেমন আছ তিশ?

    কোন অর্থে জিজ্ঞেস করছ? যান্ত্রিক অর্থে আমি ভালো আছি।

    যান্ত্রিক অর্থ ছাড়া অন্য কোনো অর্থ আছে কি?

    নিশ্চয়ই আছে। আবেগ অৰ্থেও এই প্রশ্ন করা যায়। আমি রিবো-ত্রি সার্কিটসম্পন্ন রোবট, আমার কিছু পরিমাণ আবেগ আছেযদিও তা মানুষের মতো তীব্র নয়।

    আবেগ অৰ্থে তুমি কেমন আছ?

    আবেগ অর্থে খুব ভালো নেই।

    কেন?

    অন্য একটি গ্যালাক্সিতে যাচ্ছি, এটা চিন্তা করেই বেশ কাহিল বোধ করছি। কে জানে কী অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে।

    অবিকল মানুষের মতো কথা। যন্ত্রের মুখে মানুষের মতো কথা শুনতে ভালো লাগে না। যন্ত্র কথা বলবে যন্ত্রের মতো। মানুষ কথা বলবে মানুষের মতো। তিশ-২-এর সঙ্গে আমার কথাবার্তা এই কারণেই বেশি দূর এগোয় না। খানিকক্ষণ কথা বলার পরই আমি হাই তুলে বলি, ঠিক আছে, তুমি এখন যেতে পার।

    তিশ-২-এর স্বভাব-চরিত্রও অনেকটা মানুষের মতো। তুমি যেতে পার বলার পরও সে যায় না। দাঁড়িয়ে থাকে চুপ কর বললে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার কথা শুরু করার চেষ্ট্রা করে। খুবই যন্ত্রণার ব্যাপার। আমি যা জানতে চাই না তাও সে আমাকে বলতে থাকে। যেমন এই মহাকাশযান কী জ্বালানি ব্যবহারে তা জানার আমার কোনো রকম আগ্রহ নেই, কিন্তু সে ঘ্যানঘ্যান করে বলবেই।

    এই রোবটের কারণে, আগ্রহ নেই এমন সব বিষয়ও আমাকে জানতে হচ্ছে। আমি এখন জানি এই মহাকাশযান চার স্তরবিশিষ্ট। প্রথম স্তর হচ্ছে জ্বালানি স্তর। একটি থ্রাস্টার এবং একটি কনভার্টার (যা হিলিয়াম অণুকে হিলিয়াম আয়নে পরিণত করে) ছাড়াও আছে অসম্ভব শক্তিশালী চারটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড জেনারেটর। একটি যেটন এমিটার, যাদের প্রয়োজন পড়ে শুধুমাত্র হাইপার স্পেস ডাইভের সময়। দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেইনটেনেন্স বিভাগ। তৃতীয় স্তরে ক্ৰদের থাকবার ব্যবস্থা, খেলাধুলো এবং আমোদ প্রমোদের স্থান। চতুর্থ স্তরে আছে ল্যাবোরেটরি এবং অবজারভেশন প্যানেল। কমুনিকেশন বা যোগাযোগের যাবতীয় যন্ত্রপাতিও আছে এই স্তরে। কোনো নতুন গ্রহে অনুসন্ধানী স্কাউটশিপও এই চতুর্থ স্তর থেকেই পাঠান হয়। মহাকাশযানের মস্তিষ্ক হচ্ছে কম্পিউটার। তাও চতুর্থ স্তরে। হাইপার স্পেস ডাইভ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিটি মহাকাশযানেই সিডিসি-১০ জাতীয় কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। এই কম্পিউটারগুলির কার্যপদ্ধতি মানুষ এখনো পুরোপুরি জানে না। কারণ এই কম্পিউটারের উদ্ভাবক মানুষ নয়। হাইপার স্পেস ডাইভ এবং সিডিসি-১০ কম্পিউটার দুটিই মানুষ পেয়েছে মিডিওয়ে গ্যালাক্সির সিরান নক্ষত্রপুঞ্জের মহাবুদ্ধিমান প্রাণী ইয়েসীদের কাছ থেকে। মাকড়সা শ্রেণীর এইসব প্রাণীরা তাদের উচ্চতর প্রযুক্তির বিনিময়ে পৃথিবী থেকে নিয়ে যায় অতি সাধারণ কিছু উদ্ভিদ। তারা এই সব উদ্ভিদ দিয়ে কী করে, কেনইবা তারা অতি সাধারণ কিছু উদ্ভিদের জন্যে এত মূল্য দিতে প্রস্তুত, সেই সম্পর্কে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা কিছুই জানেন না।

    কারণ ইয়েসীরা এই বাণিজ্য সরাসরি করে না, করে কিছু রোবটের মাধ্যমে। এই সব রোবট কোনো প্রশ্নের জবাব দেয় না।

    তাদের অনেক বার বলা হয়েছে, এই সামান্য লতা জাতীয় গাছগুলি দিয়ে তোমরা কী করবে?

    রোবটরা উত্তর দিয়েছে, আমরা কী করব সেটা আমাদের ব্যাপার। হাইপার স্পেস ডাইভ সংক্রান্ত টেকনলজির বিনিময়ে তোমরা যদি উদ্ভিদ দাও দেবে, যদি না দিতে চাও দেবে না। এর বাইরের যাবতীয় কথাবার্তাই আমরা বাহুল্য মনে করি। এবং আমরা বাণিজ্য-সম্পর্কহীন প্রশ্নের কোনো জবাব দেব না।

    এইসব খবরের সবই আমি ধেয়েছি তিশ-২ রোবটের কাছ থেকে। সে ক্ৰমাগতই কিছু না কিছু তথ্র আঁমাকে দিতে চেষ্টা করছে। এবং আমার ধারণা এটা সে করছে মহাকাশের ব্যাপারে আমার আগ্রহ বাড়ানোর জন্যে।

    সে আমার ভেতর কৌতূহল জাগিয়ে তুলতে চাচ্ছে। কৌতুহল হচ্ছে জীবনদায়িনী শক্তির মতো, যা আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। আমার মধ্যে কৌতূহলের কিছুই অবশিষ্ট নেই। জীবন আমার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এক জন রোবটের সঙ্গে আমি আমার কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি না। এই অবস্থাতেই মানুষ আত্মহননের কথা চিন্তা করে। আমিও করছিলাম।

    তিশ তা বুঝতে পেরেছে। সে এই কারণেই প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে আমার মধ্যে কৌতূহল নামক সেই জীবনদায়িনী ব্যাপারটি জাগিয়ে তুলতে। তার কিছু কিছু চেষ্টা আমার খুব ছেলেমানুষি বলে মনে হয়। যদিও জানি ছেলেমানুষি কোনো ব্যাপার তিশ-২-এর মতো উন্নত রোবট কখনো করবে না। তিশ যা করছে খুব ভেবেচিন্তেই করছে। সে ব্যবহার করছে। রোবটদের লজিক, আবেগবৰ্জিত বিশুদ্ধ লজিক। এর ভেতর কোনো ফাঁকি নেই। এক দিন—এই যা, দিন শব্দটা ব্যবহার করলাম। দিন এবং রাত বলে মহাকাশযানে কিছু নেই। এখানে যা আছে তার নাম অনন্ত সময়। যে কথা বলছিলাম, এক দিন তিশ এসে বলল, মহাকাশযানে এক জন জীব বিজ্ঞানী আছে তা কি তুমি জান?

    আমি বললাম, জানি।

    তুমি তার সঙ্গে আলাপ কর না কেন? তার সঙ্গে কথা বললে তোমার খুব ভালো লাগবে।

    কারো সঙ্গেই কথা বলতে আমার ভালো লাগে না।

    যে জীববিজ্ঞানীর কথা বলছি তার বয়স কম এবং সে এক জন অত্যন্ত রূপবতী তরুণী।

    তাতে কি?

    হাসিখুশি ধরনের মেয়ে। সবাই তাকে পছন্দ করে।

    খুবই ভালো কথা।

    এই তরুণীর গলার স্বর খুব মিষ্টি। শুধু শুনতে ইচ্ছা করে।

    বেশ তো, শুনতে ইচ্ছা করলে শুনবে।

    আমি প্রায়ই শুনি। রোবট হওয়া সত্ত্বেও আমি এই মেয়েটির প্রতি এক ধরনের আবেগ অনুভব করি।

    অত্যন্ত আনন্দের কথা।

    এই তরুণীর নাম ইনো। নামটিও কি মধুর নয়?

    খুবই মধুর। এখন তুমি বিদেয় হও।

    বিদেয় হচ্ছি। আমি ক্ষুদ্র একটা অন্যায় করেছি, এটা বলেই বিদায় নেব। অন্যায়টা হচ্ছে আমি ইনোকে বলেছি যে তুমি তার সঙ্গে কথা বলবার জন্যে বেশ আগ্রহী। সাহস সঞ্চয় করতে পারছ না বলে কথা বলতে পারছ না।

    এ রকম বলার মানে কী?

    যোগাযোগ করিয়ে দেয়া। মেয়েটা খুবই ভালো। কথা বললে তোমার চমৎকার লাগবে। ও আবার চমৎকার হাসির গল্পও জানে।

    তুমি বিদেয় হও।

    হচ্ছি। আমার সঙ্গে এত উঁচু গলায় কথা বলার কিন্তু কোনো দরকার নেই। একজন রোবটের সঙ্গে উঁচু গলায় কথা বলাও যা, নিচু গলায় কথা বলাও তা। আমি তো আর তোমাদের মতো মানুষ না যে উঁচু গলায় কথা বললে আমার মন খারাপ হবে।

    প্ৰচণ্ড ধমক দিয়ে তিশকে বিদায় করলাম। এবং বলে দিলাম এক্ষুণি যেন ইনো নামের মেয়েটিকে সত্যি কথাটা বলে। পৃথিবীর সবচেয়ে রূপবতী তরুণীর সঙ্গেও আমি কথা বলতে আগ্রহী নই।

    তিশ আমার সব কথা শশানে না। অনেক কাজ সে তার নিজের লজিক খাটিয়ে করে। কাজেই সে ইনোকে কিছুই বলল না। এবং ইনো নামের অত্যন্ত রূপবতী বালিকা বালিকা চেহারার মেয়েটি এক সময় আমার ঘরের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে বলল, আসব?

    এই জাতীয় একটি মেয়ের মুখের ওপর না বলা খুব মুশকিল। আমি হা-না কিছুই বললাম না।

    তিশ আমাকে বলল, আপনি আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। সাহসের অভাবে বলতে পারছেন না।

    তিশ সত্যি কথা বলে নি। বানিয়ে বানিয়ে বলেছে। আপনার সঙ্গেই শুধু নয়, কারো সঙ্গেই আমার কথা বলতে ইচ্ছে করে না।

    কেন করে না?

    জানি না কেন। মানুষের সঙ্গ আমার কাছে অসহ্য বলে মনে হয়।

    আমার সঙ্গও অসহ্য বোধ হচ্ছে?

    হ্যাঁ, হচ্ছে।

    সত্যি বলছেন?

    হ্যাঁ, সত্যি বলছি। আপনিলে গেলেই আমি খুশি হব।

    মেয়েটি চলে গেল না। ঘরে ঢুকল। চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল, আপনি আমাকে তাড়াবার জন্য এইসব বলছেন। কিন্তু আমি এত সহজে যাচ্ছি না। আমার বয়স একত্রিশ। গত পঁচিশ বছরের কথা আমার মনে আছে। এই পঁচিশ বছরে কেউ আমাকে বলে নি যে আমার সঙ্গ তার পছন্দ নয়। যদিও আমি অনেকের সঙ্গ পছন্দ করি না। তবে পছন্দ না করলেও কাউকে মুখের ওপর সে কথা বলতে পারি না। এত সাহস আমার নেই। আমি বোধ হয় একটু বেশি কথা বলছি, তাই না?

    হ্যাঁ। তাই।

    বিশ্বাস করুন আমি এত কথা বলি না। কিন্তু মহাকাশযানে উঠবার পর থেকে কেন জানি ক্ৰমাগত কথা বলছি। এটা বোধ হয়, হচ্ছে ভয় পাওয়ার কারণে। ভীত মানুষ দুধরনের কাণ্ড করে হয় আমার মতো বেশি কথা বলে, নয় আপনার মতো কথা বলা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। আপনিও নিশ্চয়ই আমার মতো, তাই না?

    না।

    বলেন কী! হাইপার স্পেস ডাইভ দিতে যাচ্ছেন, এটা ভেবেও কি আপনার ভয় বা রোমাঞ্চ বোধ হচ্ছে না?

    না, আমি কিছু ভাবি না।

    সে কি! কেন?

    ভাবতে ইচ্ছা করে না।

    ইএসপি ক্ষমতাধর সব মানুষই কি আপনার মতো হয়?

    তাও আমি জানি না। এরকম কারো সঙ্গে আমার এখনো দেখা হয় নি।

    ইনো খানিকক্ষণ ইতস্তত করে বলল, এখানে আসার পেছনে আমার অন্য একটা উদ্দেশ্যও আছে। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে উদ্দেশ্যটা বলব।

    ইনো আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তরল চোখ। কিছু কিছু চোখ আছে তাকালে মনে হয় জলভরা চোখ। যেন চোখের ভেতরের টলটল জল দেখা যাচ্ছে।

    আমি কিছুই বললাম না। ইনো বলক, আমি এসেছি আপনার ইএসপি ক্ষমতা কী রকম তা পরীক্ষা করে দেখতে।

    আমার কোনো ক্ষমতা নেই।

    আপনি অস্বীকার করলে তো হবে না। আমাদের বলা হয়েছে আপনার ক্ষমতা অসাধারণ। প্রতিটি জেনার টেস্টে আপনি এক শ করে পেয়েছেন। কেউ তা পায় না।

    জেনার টেস্টের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।

    বেশ, না জানলে ক্ষতি নেই। এখন মন দিয়ে শুনুন আমি কি বলছি। আমার জ্যাকেটের পকেটে এক খণ্ড কাগজে আমি তিন লাইনের একটা কবিতা লিখে এনেছি। কী লিখেছি আপনি কি বলতে পারবেন?

    কাগজটা না দেখে কী করে বলব? কী লেখা আছে তা জানতে হলে লেখাগুলি আমাকে পড়তে হবে।

    লেখা পড়ে তো যে কেউ বলতে পারবে। তাহলে আপনার বিশেষত্ব কোথায়?

    বিশেষত্ব কিছুই নেই। এখন আপনি যদি দয়া করে উঠে যান এবং আমাকে একা থাকতে দেন তাহলে খুব খুশি হব।

    ইনো উঠে দাঁড়াল। অপমানে মেয়েটির মুখ কালো হয়ে গেছে। তার অপমানিত মুখ দেখতে আমার একটু যেন খারাপই লাগছে। সে আমাকে কী একটা বলতে গিয়েও বলল না। মুখ নামিয়ে নিল। আর ঠিক তখন বিদ্যুৎ চমকের মতো তার জ্যাকেটের পকেটে রাখা কাগজটির লেখাগুলি আমি পড়তে পারলাম। ব্যাপারটা কী করে হল আমি নিজেও জানি না। প্রতিটি লাইন জ্বলজ্বল করছে।

    রাত্রি কখনো সূর্যকে পায় না।
    তাতে ক্ষতি নেই।
    কারণ সে পেয়েছে অনন্ত নক্ষত্রবীথি।

    এক বার ইচ্ছা হল, কাগজটায় কী লেখা ইনোকে বলি। তারপরই ভাবলাম কী দরকার? কী হবে বলে?

    ইনো নরম গলায় বলল, আপনি যে সত্যি সত্যি বিরক্ত হচ্ছিলেন তা বুঝতে পারি নি। বুঝতে পারলে আমি এতক্ষণ বসে থাকতাম না। আমি খুবই লজ্জিত, আমাকে ক্ষমা করবেন।

    সে মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছে। পা ফেলছে এলোমেলো ভাবে। প্রচুর মদ্যপানের পর মানুষ ঠিক এই ভঙ্গিতেই হাঁটে। আমি এত কঠিন না হলেও পারতাম না।

    তিশ যখন খাবার নিয়ে এল তখন তাকে বললাম, তিশ, তুমি জীববিজ্ঞানী ইনোকে একটা কৰ্থা বলে আসতে পারবে।

    তিশ উৎফুল্ল গলায় বলল, অবশ্যই পারব। কী কথা?

    কবিতার তিনটি লাইন–রাত্রি কখনো সূর্যকে পায় না।/তাতে ক্ষতি নেই।/কারণ সে পেয়েছে অনন্ত নক্ষত্ৰবীথি।

    তিশ অবাক হয়ে বলল, এর মানে তো কিছু বুঝতে পারছি না। সূর্য যা, নক্ষত্রও তো তাই। নাম ভিন্ন কিন্তু জিনিস তো একই।

    তোমার বোঝার দরকার নেই। ইনোকে বললেই তিনি বুঝবেন।

    আর যদি বুঝতে না পারে? যদি আমাকে বুঝিয়ে দিতে বলে, তা হলে তো মুশকিলে পড়ব।

    তোমাকে যা করতে বলছি তাই কর।

    বেশ, করব। আমাকে শুধু একটা কথা বল–এটা কি কোনো প্রেমবিষয়ক কবিতা?

    জানি না।

    ঠিক আছে আমি যাচ্ছি। প্রেম বিষয়ক কবিতা বলেই তো মনে হচ্ছে।

    তিশকে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি সে অত্যন্ত আগ্ৰহ বোধ করছে। যন্ত্র মানুষের মতো আগ্রহ বোধ করছে, খুবই অবাক হবার মতো ব্যাপার। আর আমি মানুষ হয়ে যন্ত্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছি। গলা উঁচিয়ে ডাকলাম, তিশ শুনে যাও।

    তিশ থমকে দাঁড়াল। আমি বললাম, ইনোর কাছে তোমাকে যেতে হবে না।

    কেন?

    প্রশ্ন করবে না। তোমাকে যেতে নিষেধ করছি, তুমি যাবে না।

    তিন লাইনের কবিতাটা তাকে শোনাব না?

    আমি দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। বাতি নিভিয়ে দিলাম। ঘর পুরোপুরি অন্ধকার নয়। হালকা আলো আছে। এই রকম আলোয় মন বিষন্ন হয়। হাজার হাজার মাইল দূরে ফেলে আসা একটি গ্রহের কথা মনে হয়। সেই গ্রহের এক জন মানবীর কথা মনে পড়ে, যার সঙ্গে এই জীবনে আর দেখা হবে না।

    হাত বাড়িয়ে মাথার বাঁ পাশের নীলঙ্কটা সুইচ টিপলাম। হালকা সংগীত বাজতে শুরু করল। মাঝে মাঝে এই সংগীত আমি শুনি। এর জন্ম পৃথিবীতে নয়। অজানা এক গ্ৰহে অজানা গ্রহের অচেনা উন্নত কোনো প্রাণী এই সুর সৃষ্টি করেছে। গভীর বিষাদময় সুর।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীল অপরাজিতা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }