Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প1195 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৯. কফিতে ক্রিম

    তোমার কফিতে ক্রিম দেব?

    আমি চমকে ফিরে তাকালাম। নিকি দাঁড়িয়ে আছে। সেই পরিচিত নিকি। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। রান্নাঘরে কাজকর্ম করার সময় যে এপ্রোন সে গায়ে দেয়, সেই নীল রঙের এখোন গায়ে দিয়েছে। হাতে কফির মগ। আমি বললাম, দাও, খানিকটা ক্রিম দাও।

    নিকি রান্নাঘরে ফিরে যাচ্ছে। পা কেমন যেন ক্লান্ত ভঙ্গিতে ফেলছে। বিজবিজ শব্দ হচ্ছে কফি-মেকারে। টাটকা কফির সুঘ্ৰাণ ঘরময় ভেসে বেড়াচ্ছে। চমৎকার দৃশ্য। অভিভূত করে দেবার মতো। আমি অবশ্যি অভিভূত হলাম না। এই নিকির প্রতি আমি পুরনো আকর্ষণ বোধ করছি না। সেই তীব্র তীক্ষ্ণ আনন্দ আমার মধ্যে নেই। নিকিকে মনে হচ্ছে পুতুলের মতো, যদিও জানি সে পুতুল নয়।

    আধ চামচ চিনি দিয়েছি।

    ভালো করেছ।

    নিকি আমার পাশে এসে বসল। নিজের মনেই বলল, এটা বোধ হয় স্বপ্ন, তাই না? তোমার সঙ্গে তো আমার দেখা হবার কোনো কারণ নেই।

    আমি উত্তর না দিয়ে কফির কাপে চুমুক দিতে লাগলাম। সমস্ত ব্যাপারটা নিকিকে গুছিয়ে বলতে হবে। বলার পরেও সে বুঝতে পারবে কিনা কে জানে।

    নিকি তুমি কফি খাচ্ছ না?

    ইচ্ছা করছে না। স্বপ্নের মধ্যে আমার কিছু খেতে ইচ্ছা করে না, ভালো লাগে না। তোমার পাশে বসে থাকতে ভালো লাগছে।

    নিকি খুব স্বাভাবিকভাবে তার বাঁ হাত আমার কোলে রাখল। মাথা আঁকিয়ে হাসল। আবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই খানিকটা বিষন্ন হয়ে পড়ল। আমি বললাম, তুমি যা দেখছ, তার কিছুই কিন্তু স্বপ্ন নয়। এবং এটা যে স্বপ্ন নয়, তা আমি চট করে প্রমাণ করতে পারি।

    প্রমাণ কর।

    তার জন্যে তোমাকে এক চুমুক কফি খেতে হবে। নাও আমার মগ থেকে খাও।

    নিকি কফির মগে ছোট্ট একটা চুমুক দিল। আমি বললাম, কফিটা কেমন লাগছে? ভালো।

    মিষ্টি ছিল না? কিছুটা।

    স্বপ্নদৃশ্যে আমরা অনেক ধরনের খাবার-দাবার খাই। তার কোনোেটারই কিন্তু কোনো স্বাদ নেই।

    কে বলল তোমাকে?

    আমি জানি।

    তুমি মাস্টারদের মতো কথা বলছ। এভাবে কথা তুমি বল না। এখন বলছ, কাজেই এটা স্বপ্ন। স্বপ্ন না হলে তোমার দেখা পাব কী করে?

    নিকি, এটা স্বপ্ন নয়।

    আচ্ছা ঠিক আছে, যাও এটা স্বপ্ন না। কিছু সময়ের জন্যে তোমাকে পাওয়া গেছে, আর তুমি শুরু করেছ তর্ক!

    এটা যে স্বপ্ন না, এও তার একটা বড় প্রমাণ। স্বপ্নে কথা বলাবলির ব্যাপারটা কম থাকে।

    আচ্ছা, ঠিক আছে বাবা, চুপ কর।

    আমি চুপ করলাম। নিকি হালকা গলায় বলল, কফি শেষ হয়েছে?

    হ্যাঁ।

    তাহলে কফির মগ রান্নাঘরে রেখে এসে আমাকে একটু আদর কর।

    আমি হেসে ফেললাম। অবাক হয়ে লক্ষ করলাম পুরনো আবেগ, পুরনো ভালোবাসা ফিরে আসতে শুরু করেছে। নিকিকে এখন আর পুতুল বলে মনে হচ্ছে না। কী সুন্দরই না তাকে লাগছে। পৃথিবীর জীবনে তাকে কি এত সুন্দর লাগত? নিশ্চয়ই লাগত হয়তো। তখন এত ভালো করে লক্ষ করি নি। কিংবা কে জানে এরা হয়তো তাকে আরো সুন্দর করে বানিয়েছে।

     

    নিকিকে সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম। সে বুঝতে পারল কিনা জানি না, তবে চুপ করে বসে রইল। প্রতিবাদ করল না। প্রতিবাদ করলে ভালো হত, আমি আমার যুক্তিগুলি আরো গুছিয়ে তাকে বলতে পারতাম।

    নিকি।

    বল।

    আমার কথা বিশ্বাস করতে পারছ?

    জানি না। বিশ্বাস করি বা না করি তাতে কিছু যায় আসে না। তুমি পাশে আছ, এই যথেষ্ট।

    তুমি মনে হচ্ছে বেশ সুখী।

    হ্যাঁ সুখী। কেন সুখী হব না বল? এক জন মানুষের সুখী হতে খুব বেশি কিছু কি লাগে?

    না, তা অবশ্যি লাগে না।

    নিকি ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল, তোমার মাস্টারি ধরনের কথা শুনে কান ঝাঁঝাঁ করছে। অন্য কিছু বল।

    কী ধরনের কথা বলব?

    ভালোবাসার কথা বল। তুমি যে আমাকে ভালোবাস এই কথাটা বল।

    এটা তো তুমি জানই। নতুন করে বলার প্রয়োজন কি?

    প্ৰয়োজন আছে।

    আমি তোমাকে ভালোবাসি।

    আবার বল।

    আমি তোমাকে ভালোবাসি।

    থামবে না, বলতেই থাক।

    নিকির চোখে জল টলমল করছে। আমি মৃদুস্বরে বারবার বলছি, আমি তোমাকে ভালোবাসি, আর সে চোখ মুছছে। আমার নিজের চোখ ভিজে উঠতে শুরু করেছে। অশ্রু খুবই সংক্রামক ব্যাপার। নিকি বলল, আর কখনো তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না।

    আমি কিছু বললাম না, একটা হাত রাখলাম তার হাতে। স্পৰ্শ দিয়েও অনেক কিছুই বলা যায়। আমি নিকিকে কাছে টানলাম-ঠিক তখন ওদের সঙ্গে যোগাযোেগ হল। ওরা স্পষ্ট স্বরে বলল, তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

    আমি চাই না।

    আমরা অত্যন্ত কৌতূহল বোধ করছি। দয়া করে আমাদের প্রশ্নের জবাব দাও।

    আমি কোনো কৌতূহল বোধ করছি না। আমাকে আমার বান্ধবীর সঙ্গে থাকতে দিন।

    তোমার বান্ধবী দীর্ঘকাল তোমার পাশে থাকবে, আমরা থাকব না। আমরা পরিব্রাজক। আমরা বেশি সময় এক জায়গায় থাকতে পারি না। আমাদের যাত্রা শুরু করতে হবে।

    কখন যাত্রা শুরু হবে?

    খুব শিগগিরই।

    আমাদের কী হবে? তোমাদের জন্যে কোনো একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হবে।

    সে ব্যবস্থাটা কী, জানতে চাই।

    সময় হলেই জানবে, এখনো সময় হয় নি। এখন দয়া করে আমার প্রশ্নের জবাব দাও।

    আমার প্রশ্নের জবাব না দিলে আমি আপনাদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেব না।

    তুমি এত রেগে যাচ্ছ কেন?

    আমি রেগে যাচ্ছি না। আমি শুধু বলছি, আমার প্রশ্নের জবাব না দিলে আমি আপনাদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেব না।

    ঠিক আছে জবাব দিও না।

    কথাবার্তা থেমে গেল। মাথায় ভোঁতা ধরনের যন্ত্রণা নিয়ে আমি কালাম নিকির দিকে। নিকি বলল, কী হয়েছে?

    ওরা কথা বলছিল। ওরা মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে কথা বলে। যত বারই কথা বলি, তত বারই রেগে যাই।

    ওরা কি আজেবাজে কিছু বলে?

    না, আজেবাজে কিছুই বলে না। তবু প্রচণ্ড রাগ লাগে। কেন তাও জানি না।

    রেগে যাওয়ার স্বভাব কিন্তু তোমার ছিল না। তুমি মনে হয় খানিকটা বদলে গেছ।

    খানিকটা না, অনেকখানি বদলেছি। ওরা বদলে দিয়েছে।

    থাক এদের কথা, যা হবার হবে। অন্য কিছু বল।

    অন্য কিছু বলব? বলার তো আর কিছু নেই।

    রান্নাঘরে খুটপুট শব্দ হচ্ছে। কফি পার্কোলেটরে শব্দ হচ্ছিল, কে যেন সেটা বন্ধ করল। কাপ দেয়ার মতো শব্দ হচ্ছে। চামচ নড়ছে। কেউ এক জন কফি বানাচ্ছে রান্নাঘরে। আমি এবং নিকি মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। তৃতীয় ব্যক্তি কে হতে পারে? কে কফি বানাতে বসেছে? নিকি উঠে গেল, রান্নাঘরে ঢুকল না। দরজা পর্যন্ত গিয়ে থমকে দাঁড়াল। আমি দেখলাম সে মূর্তির মতো জমে গেছে। যেন তার নিঃশ্বাস পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। মুখে বিন্দু-বিন্দু ঘাম। আমি বললাম, কী হয়েছে নিকি?

    সে জবাব দিল না। নিঃশব্দে ফিরে এসে কপালের ঘাম মুছল। বসল আমার পাশে। আমি লক্ষ করলাম সে থরধর করে কাঁপছে।

    কী হয়েছে নিকি?

    বুঝতে পারছি না।

    কী দেখলে?

    নিকি জবাব দিল না। বড় বড় করে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল। তার মুখ রক্তশূন্য। আমি আবার বললাম, রান্নাঘরে কে?

    তুমি যাও। তুমি দেখে এস। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমি খুব সম্ভব পাগল হয়ে গেছি। আমার মাথা ঠিক নেই। সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

    আমি উঠে দাঁড়ালাম। এগিয়ে গেলাম দরজা পর্যন্ত। হ্যাঁ, আমি দেখতে পাচ্ছি। নিকির বিস্ময় ও হতাশার কারণ বুঝতে পারছি। রান্নাঘরে আমি নিজেই আছি। দ্বিতীয় আমি। ওরা আরেক জন আমাকে তৈরি করেছে। নিজের সঙ্গে নিজের দেখা হওয়ার ঘটনাটা কেমন? খুবই আনন্দের কোনো ব্যাপার কি? না, আনন্দের কোনো ব্যাপার নয়। আমি তীব্র ঘৃণা নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। সেও তাকাল আমার দিকে। তার মুখে হাসি। কিন্তু বুঝতে পারছি, তার চোখেও তীব্র ঘৃণা। আমি কর্কশ গলায় বললাম, তুমি কে?

    সে কফির মগ নামিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলল, তুমি ভালো করেই জান আমি কে। অর্থহীন কথাবার্তা বলার প্রয়োজন দেখি না। ওরা তোমার দ্বিতীয় কপিটি তৈরি করেছে।

    নকল কপি?

    আসল-নকলের কোনো ব্যাপার নয়। ওরা যে জীন থেকে তোমাকে তৈরি করেছে, সেই একই জীন থেকে আমাকেও তৈরি করেছে। আসল হলে দুটোই আসল, নকল হলে দুটোই নকল।

    ওরা কপি তৈরি করল কেন?

    আমাকে এই প্রশ্ন করা কি অর্থহীন নয়? তোমার মনে যে প্রশ্ন আসছে, আমার মনেও সেই একই প্রশ্ন আসছে। শারীরিক এবং মানসিক এই দুই দিক দিয়েই তোমার সঙ্গে আমার কোনো প্ৰভেদ নেই। এই মুহূর্তেই তুমি কী ভাবছ তা আমি জানি, কারণ আমিও একই জিনিস ভাবছি।

    কী ভাবছ? আমি ভাবছি নিকির কথা। নিকি কী করবে? কার কাছে যাবে? তোমার কাছে না আমার কাছে?

    আমার গা ঝিমঝিম করতে লাগল। আসলেই আমি তাই ভাবছি। আমরা দুজন পাশাপাশি দাঁড়ান মাত্র নিকি সব গুলিয়ে ফেলবে। কার কাছে সে যাবে? আমার কাছে নাজার কাছে? তার কাছে যাওয়া মানেই তো আমার কাছে যাওয়া। কিন্তু সত্যি কি তাই? নিকি আমার সামনে ঐ লোকটিকে চুমু খাবে, এই দৃশ্য আমার পক্ষে সহ্য কার কি সম্ভব? না, সম্ভব নয়। আমি দ্বিতীয় বার বললাম, ওরা এমন করল কেন?

    তুমি যা জান না, আমিও তা জানি না। তবে আমার মনে হয় নিকি আমাদের দুজনকে পেয়ে কী করে এবং আমরা কী করি, তাই তারা দেখতে চাচ্ছে। তোমারও নিশ্চয়ই সে রকমই মনে হচ্ছে, তাই না?

    হ্যাঁ, তা-ই।

    মানব-মানবীর সম্পর্কের ব্যাপারটায় তারা কৌতূহলী হয়েছে। এই জিনিসটা তারা পরীক্ষা করে দেখতে চায়। তোমারও নিশ্চয়ই সে রকমই মনে হচ্ছে।

    হ্যাঁ, হচ্ছে।

    আমার তো মনে হয়, এদের সঙ্গে এখন আমাদের কথা বলা দরকার। ওরা কী চায় জানা দরকার। এই ভয়াবহ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে ওদের সাহায্য ছাড়া উপায় নেই।

    যোগাযোগটা করব কীভাবে? আমরা চেষ্টা করলে তো হবে না, এরা যখন যোগাযোগ করতে চাইবে তখনই হবে।

    তা ঠিক। আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ দেখছি না। অপেক্ষা করা যাক।

    আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম। ক্লান্তিকর দীর্ঘ প্রতীক্ষা। কোনো লাভ হল না। কেউ যোগাযোগ করল না। আমরা তিন জন অপেক্ষা করছি। তিন জন বলা কি ঠিক হচ্ছে? না, ঠিক হচ্ছে না। আমরা আসলে দুজন। আমি এবং নিকি। আমি ব্যাপারটা একটু গোলমেলে হয়ে গেছে। এখানে দুজন আমি উপস্থিত।

    নিকি যে কী প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েছে তা বুঝতে পারছি। কারো দিকেই সে চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। আমি তার দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাসে ভাবে হাসলাম, সে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। আমি লক্ষ করলাম অন্য আমিও তার দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাসে ভাবে হাসছে। নিকি তার কাছ থেকেও দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। তার ভাব দেখে মনে হল সে এখন কাঁদবে। যদি সত্যি সত্যি কাঁদে, আমি তাকে সান্ত্বনার দু-একটা কথা নিশ্চয়ই বলব। তখন অন্য আমিটি কী করবে? সেও কি সান্ত্বনার কথা বলবে? বাই তো উচিত। আমরা দুজন তো আলাদা নই।

    আমি খাটের ওপর বসেছিলামৃউঠে দাঁড়ালাম। ক্লান্ত গলায় বললাম, রান্নাঘরে যাচ্ছি। তোমরা দুজম কথাবার্তা বল। এতে ব্যাপারটা সহজ হবে।

    নিকি ভারি গলায় বলল, সহজ হবার কোনো দরকার নেই। তোমারও অন্য ঘরে যাবার প্রয়োজন নেই।

    নিকি কাঁদতে শুরু করল। ফুঁপিয়ে খুঁপিয়ে কান্না। আমি আগে কখনো নিকিকে কাঁদতে দেখি নি। সে শক্ত ধরনের মেয়ে, সহজে ভেঙে পড়ার মতো নয়। কিন্তু সে ভেঙে পড়েছে। আমি রান্নাঘরে চলে এলাম। নিকির কান্নার ছবি সহ্য করতে পারছি না।

    সময় কি মাঝে মাঝে থেমে যায়? মহাবীর থর নাকি কয়েক মুহূর্তের জন্য সময় থামিয়ে দিয়েছিলেন। ওরা কি তাই করেছে? সময় কি থেমে আছে? রান্নাঘরে আমি একা একা দাঁড়িয়ে আছি। মনে হচ্ছে অযুত নিযুত লক্ষ কোটি বৎসর পার হয়ে যাচ্ছে, আমি দাঁড়িয়েই আছি। মাঝে মাঝে নিকির কান্নার শব্দ পাচ্ছি। সে কিছুক্ষণ পর পর ফুঁপিয়ে উঠছে।

    আমার মধ্যে অদ্ভুত একটা চিন্তা এই সময় এল। মনে হল, যারা একই রকম দুজন মানুষ তৈরি করতে পারে, তারা তো একই রকম দুলক্ষ মানুষ তৈরি করতে পারবে, কিংবা তার চেয়েও বেশি–দু কোটি। একটি গ্রহ এক ধরনের মানুষ দিয়ে ভর্তি করে ফেলতে পারবে। অবস্থাটা তখন কী হবে? গ্রহের সবাই এক ধরনের চিন্তা করছে এবং একই ভাবে করছে, একই জিনিস নিয়ে ভাবছে। তাদের সবার ভেতর চমক্কার হৃদয়ের বন্ধন থাকবে, কারণ তারা আলাদা কেউ নয়। একই সঙ্গে একা এবং অনেকে।

    আমি একটা চমক বোধ করলাম। একই সঙ্গে একা এবং অনেকে। কথাটা আমি আগে শুনেছি। ওরা আমাকে বলেছে। যেসব মহাজ্ঞানী আমাদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে তারাই নিজেদের সম্পর্কে বলেছে আমরা একই সঙ্গে একা এবং অনেকে। তাহলে তারা কি–?

    আমার মাথায় ভোঁতা যন্ত্রণা হতে লাগল। ওদের সঙ্গে যোগাযোগের এটা হচ্ছে পূর্বাবস্থা। যোগাযোগ হল।

    তুমি ঠিক লাইনেই চিন্তা-ভাবনা করছ।

    আমি ঠিক লাইনে চিন্তা-ভাবনা করছি কি না তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আপনি আমাকে বলুন, আপনাদের নতুন খেলার অর্থ কী?

    কোনটাকে তোমরা নতুন খেলা বলছ?

    আমাকে দ্বিতীয় বার তৈরি করেছেন, যার কোনো প্রয়োজন ছিল না।

    অপ্রয়োজনীয় কিছু করার মতো সময় আমাদের নেই। যা করা হয়েছে, প্রয়োজনেই করা হয়েছে। মানব সম্প্রদায়ের প্রধান ত্ৰুটি কী, তা ধরতে চেষ্টা করছি। তুমি চাইলে তোমাকে ব্যাখ্যা করতে পারি।

    আমি চাই না।

    না চাইলেও শোন, তোমাদের প্রধান ত্রুটি হচ্ছে পুরুষ এবং রমণীর ব্যাপারটি। মানুষকে অসম্পূর্ণ ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এক জন পুরুষ মানুষ হিসেবে যেমন সম্পূর্ণ নয়, তেমনি এক জন রমণীও নয়। দুজনকে একত্রিত করে একটি সম্পূর্ণ মানুষ তৈরি করা যেতে পারে। বংশবৃদ্ধির পদ্ধতিটি তাতে বদলাবে, নতুন ধরনের মানুষ তৈরি হবে। তাকে তুমি মুক্তমানুষ বলতে পার।

    মুক্ত-মানুষ?

    হ্যাঁ মুক্ত-মানুষ। সম্পূর্ণ মুক্তির জন্যে অবশ্যি তোমাদের শারীরিক প্রক্রিয়াও বদলে দিতে হবে। বিশেষ করে খাদ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া। খাদ্য থেকে তোমরা শক্তি সংগ্রহ কর, অতি নিম্নস্তরের প্রাণী যা করে। তোমাদের সমস্ত চিন্তা-চেতনা খাদ্য সংগ্রহকে ঘিরে। মেধার কী অপচয়! শক্তি সংগ্রহের প্রক্রিয়াটাকে সহজেই বদলে দেয়া যায়। এমন করে দেয়া যায়, যাতে প্রয়োজনীয় শক্তি তোমরা সূর্য থেকে সংগ্রহ করতে পার।

    গাছের মতো?

    অনেকটা তাই।

    মানুষ হয়ে জন্মেছি, গাছ হবার ইচ্ছা নেই।

    সব কিছুই তোমার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।

    সব কিছু আপনাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাতেই হবে, এ রকম মনে করারও কোনো কারণ নেই।

    মানুষের দ্বিতীয় ত্রুটিটি হচ্ছে আবেগ নির্ভর যুক্তি প্রয়োগ। যুক্তি এবং আবেগ দুটি ভিন্ন জিনিস। তোমরা দুটিকে মিশিয়ে অদ্ভুত একটা কিছু তৈরি কর, যা যুক্তিও নয়, আবেগও নয়।

    আপনারাও তো তাই করেছেন, পুরুষ এবং রমণী দুটি ভিন্ন জিনিস। দুটিকে মিশিয়ে অদ্ভুত কিছু তৈরি করতে চেষ্টা করেছেন যা পুরুষও হবে না, রমণীও হচ্ছে

    তুমি আবার একটি আবেগ নির্ভর যুক্তি প্রয়োগ করলে। তোমাদের তৃতীয় ক্ৰটি হচ্ছে…

    ত্রুটির কথা শুনতে শুনতে কান ব্যাপালা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সম্পর্কে ভালো কিছু বলার থাকলে বলুন?

    সত্যি শুনতে চাও?

    হ্যাঁ চাই।

    বিস্ময়কর ক্ষমতা দিয়ে তোমাদের পাঠানো হয়েছে কিংবা বলা যেতে পারে বিবর্তন-প্রক্রিয়ায় অদ্ভুত ক্ষমতাসম্পন্ন এক শ্রেণীর প্রাণের উদ্ভব হয়েছে, যারা তাদের সত্যিকার ক্ষমতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। দুটি জগৎ আছে একটি বস্তুজগৎ, অন্যটা পরা-বস্তুজগৎ। মানুষের ক্ষমতা পরাবস্তুজগতে। অথচ তা সে জানে না। সে মেতেছে বস্তুজগৎ নিয়ে। বাধ্য হয়ে মানুষদের তা করতে হচ্ছে, কারণ শারীরিক প্রক্রিয়ার কারণে মানুষ বস্তুজগতের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। যে জন্যে পরী-বস্তুজগতের বিপুল সম্ভাবনার কিছুই মানুষ জানে না।

    পরা-বস্তুজগৎ ব্যাপারটা কী?

    বস্তুজগতের বাইরের জগৎ। শক্তিজগৎ?

    না। বস্তু এবং শক্তি আলাদা কিছু নয়। পরা-বস্তুজগড়ৎ হচ্ছে মাত্রাশূন্য জগৎ।

    কিছু বুঝতে পারছি না।

    বুঝতে পারার কথা নয়। তোমরা বাস করছ তিন মাত্রার জগতে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা—এই মাত্রা যেই জগতে বিলুপ্ত তাকে পরা-বস্তুজগৎ বলতে পার।

    বুঝতে পারছি না। আরো সহজ করে বলুন।

    এর চেয়ে সহজ করে বলতে পারছি না। বরং তোমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে একটি উদাহরণ দিই। তোমরা একটি অভিযাত্রী দল নিয়ে রওনা হয়েছ। তোমাদের যাত্রা অনন্ত নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে। যার জন্যে তোমরা একটা মহাকাশযান তৈরি করেছ। অথচ যার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তোমরা ঘরে বসেই যা জানার জানতে পারতে, কারণ তোমরা মাত্ৰা ভাঙতে পার। এই জিনিসটা তোমাদের অজানা।

    আমাদের শিখিয়ে দিন।

    শেখানো সম্ভব নয়। আমাদের সেই ক্ষমতা নেই। আমরা চতুর্মাত্রিক জীব। ত্রিমাত্রিক জগতের অর্থে আমাদের ক্ষমতা তোমাদের চেয়ে অনেক বেশি, কিন্তু পরাজগতে আমাদের কোনো আধিপত্য নেই। যে কারণে তোমাদের দেখে আমরা একই সঙ্গে বির্ষিত ও ব্যথিত হয়েছি। অকল্পনীয় ক্ষমতা তোমাদের হাতের মুঠোয়, অথচ তোমরা কত অসহায়। সামান্য একটি ব্ল্যাকহোলের খপ্পরে তোমাদের মহাকাশযান পড়ল, তোমরা সেই ব্ল্যাকহোলের কবল থেকে বেরুতে পিরছ না। অথচ ইচ্ছা করলেই নিমিষের মধ্যে তোমরা নতুন একটি পৃথিবী তৈরি করতে পার, একটি নক্ষত্রপুঞ্জ তৈরি বা ধ্বংস করতে পার।

    আপনি এসব কী বলছেন।

    যা সত্যি তাই বলছি। আমরা পরিব্রাজক, আমাদের এক মুহূর্তের জন্যে থেমে থাকার কথা নয়। আমরা থেমে আছি তোমাদের জন্যেই। তোমাদের বিস্ময়কর ক্ষমতা আমাদের অভিভূত করেছে। এই সঙ্গে বিষাদগ্ৰস্তও হচ্ছি। মেধার কী বিপুল অপচয়!

    কেন জানি আপনার কথা ঠিক বিশ্বাস্য মনে হচ্ছে না।

    মনে না হবার কোনো কারণ নেই। তোমাদের সঙ্গে এক জীববিজ্ঞানী আছে, যার নাম ইনো। সে নিজেই তার পছন্দমতো একটি জগৎ তৈরি করেছে। অথচ তার ধারণা আমরা তা তৈরি করেছি। আমরা করি নি। আমরা শুধু পরাবস্তু-ক্ষমতার প্রয়োগর জন্যে পরিবেশ তৈরি করেছি। মেয়েটিকে সীমাহীন নিঃসঙ্গতায় ঠেলে দিয়েছি। যে কারণে সে নিঃসঙ্গতা থেকে বাঁচার জন্যে নিজেই নিজের একটি জগৎ তৈরি করেছে। তোমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলাম। তুমি দেখেছ।

    সেই জগৎ কি মায়া না সত্যি?

    সত্যি তো বটেই। এখন কি তুমি বুঝতে পারছ কী পরিমাণ ক্ষমতা তোমাদের আছে?

    বুঝতে চেষ্টা করছি।

    তুমি বারবার তোমার পৃথিবীতে ফিরে যাবার কথা বলছ। আমাদের বলার তো কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি তো নিজে ইচ্ছে করলেই ফিরে যেতে পার। কিংবা অবিকল সেই পৃথিবীর মতো পৃথিবী তৈরি করতে পার তোমার চারপাশে।

    আমার অন্য সঙ্গীরা কী করছে? তারা কি এসব জানে?

    না, তারা জানে না। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তারা তাদের মিশন সম্পূর্ণ করতে চায়। আমরা তাদের তা করতে দেব। মহাকাশযানটি তৈরি করা প্রায় শেষ। শিগগিরই হয়তো ওরা যাত্রা শুরু করবে।

    আমাকে নিয়ে আপনাদের কী পরিকল্পনা?

    পরিকল্পনার কথা তোমাকে আগেই বলেছি। মানবজাতির ক্রুটিগুলি আমরা দূর করতে চাই। তুমি এবং তোমার বান্ধবী সম্পূর্ণ নতুন একটি ত্রুটিমুক্ত মানব সমাজ তৈরি করতে পার, যা হবে অসামান্য ক্ষমতার অধিকারী। যারা তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকবে। বস্তুর ওপর প্রয়োগ করবে তার সীমাহীন ক্ষমতা।

    তা কি ভালো হবে?

    কেন হবে না?

    আপনারা যে সমস্ত জিনিসকে ত্রুটি বলছেন, হয়তো সেগুলি ত্রুটি নয়। পরাবস্তু ক্ষমতার প্রয়োগের সময় এখনো আসে নি বলেই হয়তো তা সুপ্ত অবস্থায় আছে। একদিন বিকশিত হবে।

    কিংবা কোনো দিনও হবে না। আমরা তা হওয়াতে চাই বলেই প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে চাই।

    আপনারা দয়া করে আমাদেরকে আমাদের মতো থাকতে দিন। আমাকে আমার জায়গায় ফিরে যেতে দিন।

    কী হবে ওখানে গিয়ে, এ জীবনে যা চেয়েছ সবই তো পাচ্ছ। জীবন শুরু করবে চমৎকার একটি গ্রহে। পাশে থাকবে তোমার বান্ধবী।

    দয়া করে আপনারা আমাকে ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা করুন।

    তোমাকে ফেরত পাঠান কঠিন কিছুই নয়। কিন্তু তার ফলাফল তোমার জন্যে ভয়াবহ হবে।

    কেন?

    ঠাণ্ডা মাথায় বুঝতে চেষ্টা কর। যে পৃথিবী ছেড়ে তুমি মহাকাশযানে করে চলে এসেছ সেই পৃথিবীতেই তুমি হঠাৎ করে উপস্থিত হবে। তোমাকে পাঠাতে হবে চতুৰ্মাত্রার মাধ্যমে তাতে সময় সংকোচন হবে। সেই সময় সংকোচনের ফলে তুমি উপস্থিত হবে এমন এক সময়ে যখন তুমি পৃথিবী ছেড়ে রওনা হও নি।

    আমি বুঝতে পারছি না।

    সময় সংকোচনের ব্যাপারটা তো জান?

    না, জানি না। সময় সম্প্রসারণের ব্যাপারটা জানি। আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলোটভিটিতে আছে। মহাশূন্যে সময় শ্লথ হয়ে যায়। সেই তুলনায় পৃথিবীর বয়স দ্রুত বাড়ে। এক জন মহাকাশচারী তিন মাস নক্ষত্রপুঞ্জে কাটিয়ে ফিরে এলে দেখতে পায় পুঁথিবীতে তিন বছর পরে হয়ে গেছে।

    সময় সংকোচন হচ্ছে ঠিক তার উল্টো। তোমাকে এখন পাঠান হলে তুমি অতীতে চলে যাবে।

    কী রকম অতীতে?

    খুব বেশি নয়। তুমি পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু করেছিলে ৩০ জুন। তোমাকে পৃথিবীতে পাঠালে তুমি উপস্থিত হবে এপ্রিল মাসে। যাত্রা শুরুর দুমাস আগে। এর একটা ভয়াবহ দিক আছে। তা নিয়ে কি ভেবেছ? ভয়াবহ দিকটা বুঝতে পারছ?

    পারছি। যেহেতু আমি পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু হবার আগেই পৃথিবীতে পৌছাচ্ছি, সেই হেতু পৃথিবীতে পৌছে আমি আমাকেই দেখতে পাব। আবার আমরা হব দু জন।

    না। তা হবে না। প্রকৃতি অনিয়ম সহ্য করে না। কাজেই তুমি তোমাকে পাবে না। প্রকৃতি তা হতে দেবে না। তোমার অতীতে ফিরে যাবার ব্যাপারটা প্রকৃতির নিয়মে গ্রহণযোগ্য হবার জন্যে যে পৃথিবী থেকে তুমি এসেছিলে অবিকল সেই পৃথিবীতে তুমি ফিরে যাবে না। পৃথিবী হবে একটু অন্যরকম। মাত্রা যাবে বদলে।

    তার মানে?

    আমরা বলতে পারছি না। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অসীম রহস্যের অতি অল্পই আমরা জানি। সেই অল্প জ্ঞান নিয়ে সব ব্যাখ্যা করা যায় না। তবে তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি, মাত্ৰা ভাঙার ফল সাধারণত ভয়াবহ হয়ে থাকে। তুমি একটা ভয়াবহ চক্ৰে পড়ে যেতে পার। তার পরেও যদি যেতে চাও তাহলে ভিন্ন কথা।

    যেতে চাই।

    ভালো করে ভেবে বল।

    ভেবেই বলছি।

    বেশ, ব্যবস্থা হবে। মাত্রা ভেঙে তোমাকে ফেরত পাঠানো হবে।

    ধন্যবাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ। সেই বিশেষ ক্ষণটি কখন?

    অস্থির হয়ো না। হবে, শিগগিরই হবে। পৃথিবীতে ফিরে যাবার আগে তুমি কি একবার দেখতে চাও না, আমরা এখানে তোমার এবং তোমার বান্ধবীর জন্যে কী ব্যবস্থা করে রেখেছি। হয়তো এটা দেখলে তুমি মত বদলাবে।

    আমি কিছুই দেখতে চাই না।

    জন বরগ তার মিশন নিয়ে যাত্রা শুরু করবে। তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে কত না বিস্ময়। ঐ দলের সঙ্গেও তুমি যোগ দিতে চাও না?

    না।

    বিদায় সম্ভাষণ জানানো?

    না।

    বেশ, তুমি যা চাও তাই হবে। আর কিছু কি তোমার বলার আছে।

    আপনি যে আমার মতো আরেক জন তৈরি করেছেন তার কী হবে? সেও যদি আমার মতো পৃথিবীতে উপস্থিত হয়, তাহলে তো ভয়াবহ ব্যাপার হবে। আমরা হব তিন জন।

    সে এখানেই থাকবে। যে গ্রহটি তোমাদের জন্যে নির্ধারিত করা ছিল, সেই গ্রহে সে চলে যাবে। তোমার বন্ধবী নিকি যাবে তার সঙ্গে। নতুন বসতি শুরু হবে। নতুন মানব সম্প্রদায়ের শুরু করবে তারা।

    অসম্ভব। নিকি কেন যাবে?

    যাবে, কারণ তুমি পৃথিবীতে তোমার নিকিকে পাবে। একে তোমার প্রয়োজন নেই। তুমি এক জন নিকিকে সঙ্গে করে নিশ্চয়ই পৃথিবীতে উপস্থিত হতে চাও না।

    আমি চুপ করে রইলাম। আমার অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে। কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। এর থেকে উদ্ধার পাওয়ার কি কোনো পথ নেই? ওরা আবার কথা বলল, ওদের নতুন জীবন শুরুর দৃশ্যটি আমরা তোমাকে দেখাতে চাই।

    আমি দেখতে চাই না।

    না চাইলেও দেখতে হবে।

    আমি দেখতে চাই না, কারণ নিকি অন্যের হাত ধরে হাঁটছে, এই দৃশ্য সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

    অন্যের হাত ধরে তো হাঁটবে না। তোমার হাত ধরেই হাঁটবে। আমরা এই দৃশ্যটি দেখাতে চাই, যাতে তোমার মত বদলায়, তুমি পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল কর। পৃথিবীতে ফিরে যাওয়া তোমার জন্যে ভয়াবহ ব্যাপার হবে।

    হলে হবে।

    যোগাযোগ কেটে গেল। আমি চোখ মেলে তাকালাম। আমার পাশে নিকি নেই। অন্য আমিও নেই। ওরা নিশ্চয়ই নতুন জীবন শুরু করেছে। করুক। আমি ফিরে যাব আমার চেনা পৃথিবীতে। ওদের জীবন শুরুর দৃশ্য দেখার আমার কোনো ইচ্ছা নেই।

    তবু দেখতে হল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীল অপরাজিতা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }