Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প1195 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৮. দীপা দু দিন ধরে

    দীপা দু দিন ধরে ব্যাপারটা লক্ষ করছেন। বই নিয়ে ঘরের এক কোণে আলো বসে থাকে। পাতা ওল্টায়। এমন নিবিষ্ট তার ভাবভঙ্গি যে মনে হয় সে সত্যি সত্যি পড়তে পারছে। দীপা জানেন এটা এক ধরনের খেলা। মেয়েটা একা একা এই অদ্ভুত খেলা খেলে। তাঁর কষ্ট হয়। কিন্তু করার কী আছে?

    এই মেয়েটির মধ্যে বড়ো কোনো পরিবর্তন এসেছে। রাতে এখন আর মোটই বিরক্ত করে না। একা একা ঘুমুতে চায়। মাকে বলে বাবার ঘরে গিয়ে ঘুমুতে। বলার সঙ্গে মাথাটা এমন ভাবে নিচু করে ফেলে যাতে মনে হয় বাবা-মার একসঙ্গে ঘুমানোর রহস্যের অজানা অংশটি এখন সে জানে।

    দীপা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে রান্নাঘরের দিকে রওনা হলেন। দারোয়ান এসে খবর দিল–নিশানাথ বাবুর অবস্থা বেশি ভালো নয়, একটু পরপর বমি করছেন।

    ডাক্তারকে খবর দেয়া হয়েছে না?

    জ্বি।

    খোঁজ নাও এখনো আসছে না কেন।

    দারোয়ান মুখ নিচু করে বলল, মাস্টার সাব বাঁচতো না, আম্মা।

    দীপা বলেন, কীভাবে বুঝলে মারা যাচ্ছেন?

    বোঝা যায় আম্মা, শইলে পানি আসছে। পিঠে চাকা ঢাকা কী যেন হইছে। মাথারও ঠিক নাই, আম্মা।

    মাথার ঠিক থাকবে না কেন?

    বিড়বিড় কইরা সারা দিন কী যেন কয়। নিজের মনে হাসে।

    দীপার বেশ মন খারাপ হল। তিনি হাতের কাজ ফেলে নিশানাথ বাবুকে দেখতে গেলেন। দূর থেকে দেখলেন নিশানাথ বাবু ঘরের বারান্দায় ইজিচেয়ারে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। তার পাশে আলো। দূর থেকে মনে হচ্ছে তিনি আলোর সঙ্গে কথা বলছেন। এই দৃশ্যটিও অদ্ভুত। আলো অধিকাংশ সময় নিশানাথ বাবুর আশেপাশে থাকে। কেন থাকে কে জানে?

    দীপা বারান্দায় পা দেবার সঙ্গে সঙ্গেই চলে গেল। দীপা বললেন, চাচা, কেমন আছেন।

    নিশানাথ বললেন, বেশি ভালো না, মা। তুমি একটু বস আমার সামনে। তোমার সঙ্গে আমার খুব জরুরি কথা আছে।

    দীপা বসলেন। কোমল গলায় বললেন, বলুন কী কথা।

    শুনতে তোমার কেমন লাগবে জানি না। আমার এখন কিছু অদ্ভুত ক্ষমতা হয়েছে। আমি মানুষের মনের কথা বুঝতে পারি। ইচ্ছা করলেই মানুষের মাথার ভেতরও ঢুকে যেতে পারি।

    দীপা মনে মনে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন দারোয়ান মিথ্যা কথা বলে নি–মাথা খারাপেরই লক্ষণ।

    দীপা!

    জি।

    শুধু যে মানুষের কথা বুঝতে পারি তাই না–পশুপাখি, জীবজন্তু সবার মনেই কী হচ্ছে বুঝতে পারি।

    ও আচ্ছা।

    নিম্নশ্রেণীর জীবজন্তু মানুষদের মতো গুছিয়ে কিছু ভাবে না। ওদের চিন্তাভাবনার সবটাই খাদ্য নিয়ে। অবশ্যি এদের মধ্যে অদ্ভুত কিছু ব্যাপারও আছে। এরা কী মনে করে জান। প্রত্যেকেই ভাবে তারাই জীবজগতের প্রধান। পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে তাদের জন্যে, তাদের সুখ সুবিধার জন্যে।

    দীপা মৃদু গলায় বললেন, আমরা মানুষরাও তো তাই মনে করি। করি না?

    হ্যাঁ করি। কারণ মানুষও তো জন্তুই। জন্তু ছাড়া সে আর কী?

    হ্যাঁ, তাও ঠিক।

    নিম্নশ্রেণীর পশুপাখিরা মানুষদের কী ভাবে, জান? তারা মানুষদের খুবই বোকা এক শ্রেণীর প্রাণী বলে মনে করে। ওরা আমাদের বোকামি নিয়ে সব সময় হাসাহাসি করে।

    তাই নাকি?

    হ্যাঁ তাই। ঘরের কোণায় জাল বানিয়ে যে মাকড়সা বসে থাকে সেও মানুষের চরম মুখতা দেখে খিকখিক করে হাসে।

    দীপা কিছু বললেন না। খুব সাবধানে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললেন। নিশানাথ বললেন, তুমি বোধ হয় আমার কথা বিশ্বাস করলে না?

    দীপা হা-না কিছু বললেন না। দুঃখিত চোখে তাকিয়ে রইলেন।

    নিশানাথ বললেন, তোমার মনের ভেতর কী হচ্ছে আমি বলে দিই? তাহলে তুমি হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করবে।

    দীপা বলল, বলুন।

    মাথার ভেতর ঢুকতে ইচ্ছা করে না। কেন করে না জান? করে না, কারণ এটা অন্যায়। এটা ঠিক নয়। কিছু না জানিয়ে হুট করে একটা মানুষের ঘরে ঢুকে পড়ার মতো। তাই না, মা?

    দীপা পুরোপুরি নিশ্চিত হল মানুষটির মস্তিষ্কবিকৃতির কিছু বাকি নেই। বেচারার সমস্ত শরীর কী কুৎসিত ভাবেই না ফুলে উঠেছে। দেরি না করে তাকে কোনো বড়ো হাসপাতালে কিংবা ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া উচিত।

    দীপা!

    জ্বি।

    আমার এই ক্ষমতা মানুষে কাজে লাগানো যায়। কীভাবে যায়, জান?

    কী ভাবে?

    মানুষের ভেতর মন্দ যে সব ব্যাপার আছে সেগুলি দূর করার জন্যে আমি কাজ করতে পারি।

    মানুষ তো একজন দু জন নয়–লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষ।

    তাও ঠিক। তবে সব মন্দ মানুষকে ভালো বানানোর দরকার তো নেই। এমন সব মানুষদের ভালো করতে হবে যাদের উপর হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষের ভাগ্য নির্ভর করে। যেমন ধর রাষ্ট্রপ্রধান, দেশের বড় বড় নেতা।

    আপনি ঘুমান, চাচা। আমার মনে হয় আপনার ঘুম দরকার।

    নিশানাথ বাবু দীপাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলে চললেন–যত দিন যাচ্ছে ততই অদ্ভুত সব জিনিস আমি জানতে পারছি। আমাদের এই মস্তিষ্ক অদ্ভুত একটা জিনিস। সব রকম স্মৃতি এর মধ্যে আছে। মানুষ যখন হ্যামিবা ছিল সেই স্মৃতিও আছে। আদি প্ৰাণ দীর্ঘকাল কাটাল পানিতে, সেই পানির জগতের স্মৃতিও আছে মানুষের মাথায়। এক সময় এ্যামিবার বিকাশ হল সরীসৃপ হিসেবে। হিংস্র সরীসৃপ, মানুষের আদি পিতা। সেই সরীসৃপের স্মৃতিও সঞ্চিত রইল, মস্তিষ্ক কিছুই হারায় না–।

    চাচা, আপনি ঘুমুবার চেষ্টা করুন।

    আমি তো বেশি দিন বাঁচব না। যা আমি জেনেছি সব তোমাকে বলে যেতে চাই। বুঝলে দীপা, আমাদের মাথায় আছে লক্ষ লক্ষ বছরের স্মৃতি। আমাদের মস্তিষ্কের একটা অংশ সরীসৃপের মতো চিন্তা করে, একটা অংশ জলজ জীবের মতো চিন্তা করে, একটা অংশ–

    চাচা, আপনি ঘুমুতে চেষ্টা করেন–প্লিজ চাচা–

    আচ্ছা মা, আচ্ছা। তুমি যা বলবে তাই হবে। তুমি যা বলবে তাই হবে। তুমি যা বলবে তাই হবে। তুমি যা–

    নিশানাথ বাবু থামলেন। তীব্র ভয় তাঁকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। নিশ্চয় তাঁর মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তিনি যা বলছেন সবই ভুল। সবই ভুল। উত্তপ্ত মস্তিষ্কের কল্পনা। কিন্তু কল্পনা বলে তো মনে হয় না।

    না না না–কল্পনা নয়–সত্যি। যা ঘটছে সবই সত্যি। একটু পরপর মাথায় বিচিত্র সব ছবি আসছে। অদ্ভুত সব ছবি। তিনি বুঝতে পারছেন। ছবিগুলি কল্পনা নয়, স্বপ্ন নয়, বিভ্রম নয়-সবই স্মৃতি। অতি প্রাচীন স্মৃতি। হাজার বছর, লক্ষ বছর কিংবা আরো আগের কোনো স্মৃতি। কোনো কিছুই হারায় না–জীবজগৎ তার মস্তিষ্কে সমস্ত স্মৃতি ধরে রাখে।

    কখন প্রাণের বিকাশ হয়েছিল। তিনি জানেন না। তাঁর পড়াশোনা সীমিত, জ্ঞান সীমিত, বুদ্ধি সীমিত, কিন্তু এখন তিনি অনেক কিছু বুঝতে পারছেন। কেউ যেন তাঁকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। এক সময় এই জগৎ ছিল প্রাণহীন। প্রাণহীন জগতে প্রাণের আবির্ভাব হল। একটি যৌগিক অণু–প্রোটিন। সামান্য ক্ষুদ্র একটি এমিনো এসিড, অথচ কী বিপুল তার সম্ভাবনা একটি স্মৃতিধর অণু। কী রহস্য, কী অপার রহস্য!

    নিশানাথ বাবু ছটফট করতে লাগলেন। সহ্য হচ্ছে না, তার আর সহ্য হচ্ছে না। তিনি ঘুমুতে চান। ঘুম–শান্তির ঘুম। যেন কত কাল তার ঘুম হয় নি। কত অনন্ত কাল ধরে তিনি জেগে আছেন। তিনি ব্যাকুল স্বরে বললেন, দীপা মা, আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দাও।

     

    ডাক্তার এসে পড়েছেন।

    দীপা ভয়-পাওয়া গলায় বললেন, দেখুন তো ডাক্তার সাহেব, অনেকক্ষণ ধরে ছটফট করছেন।

    ডাক্তার রুগীর কপালে হাত রেখে চমকে উঠলেন–জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। শরীরের এই অস্বাভাবিক উত্তাপ দ্রুত কমানো প্রয়োজন। বরফজলে গা ড়ুবিয়ে রাখতে হবে—এ ছাড়া অন্য কিছু তিনি এই মুহূর্তে ভাবতে পারছেন না।

    নিশানাথ চোখ মেললেন, ঘোলাটে চোখ। মনে হচ্ছে চারপাশের জগৎ তিনি চিনতে পারছেন না। ডাক্তার সাহেব বললেন, কেমন লাগছে?

    নিশানাথ ফিসফিস করে বললেন, ভালো লাগছে না।, খুব খারাপ লাগছে, মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে।

    খুব বেশি যন্ত্রণা?

    হ্যাঁ, খুব বেশি। মাঝে মাঝে আবার চোখে দেখতে পাই না। সব ঝাপসা লাগে।

    ডাক্তার সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, চোখে দেখতে পান না?

    জ্বি না। সব সময় না। মাঝে মাঝে এরকম হয়।

    এখন কি দেখতে পাচ্ছেন?

    হ্যাঁ, পাচ্ছি। ডাক্তার সাহেব, খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। দয়া করে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিন।

    ডাক্তার সাহেব একটা পেথিড্রিন ইনজেকশন দিলেন। প্রচুর বরফের ব্যবস্থা করতে বললেন। রুগীকেবরফ-পানিতে ড়ুবিয়ে রাখতে হবে। এমন হাই ফিভার তিনি তাঁর ডাক্তার জীবনে কখনো দেখেন নি। অবিশ্বাস্য ব্যাপার।

    বরফ চলে এল। ডাক্তার সাহেবকে সেই বরফ ব্যবহার করতে হল না। তার আগেই রুগীর জ্বর কমে গেল। এটাও একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার।

    ডাক্তার সাহেব বললেন, রুগীকে এখানে রাখা ঠিক হবে না। হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিন।

    দীপা বললেন, এঁর কী হয়েছে?

    আমি ধরতে পারছি না। হাসপাতালে বড় বড় ডাক্তার আছেন। তাঁরা হয়তো বুঝতে পারবেন।

    দীপা কী করবেন বুঝতে পারলেন না। নিশানাথ বাবুকে হাসপাতালে পাঠাতে তার মন সরছে না। হাসপাতালে তাঁকে কে দেখবে? শরীরের এই অবস্থায় যতটুকু সেবা-যত্ন দরকার হাসপাতাল তার কতটা করবে? তাঁর পক্ষে বেশি সময় দেওয়া সম্ভব নয়, তাছাড়া তিনি হাসপাতাল সহ্য করতে পারেন না। হাসপাতালে পা দিলেই বমি-বমি ভাব হয়। বাসায় ফিরেও তা কাটতে চায় না। মহসিনের সঙ্গে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ করা দরকার। তাকে ইদানীং পাওয়াই যাচ্ছে না। কী নিয়ে যেন খুব ব্যস্ত। মাঝে মাঝে এমনও হয় বাড়ি ফিরতে পারে না। কোনো একটা সমস্যা নিশ্চয়ই হয়েছে। মহসিনের চিন্তিত মুখ দেখেই তা বোঝা যায়। ব্যবসাসংক্রান্ত কোনো জটিলতা হবে। দীপা প্রায়ই ভাবেন জিজ্ঞেস করবেন জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠে না। মহসিনের ব্যবসার ব্যাপারে কোনো কৌতূহল দেখাতে তাঁর ভালো লাগে না।

    আজ মহসিন সাহেব সন্ধ্যার আগেই ফিরলেন। তার মুখ শুকনো–তাঁকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। দীপা দায়ের কাপ নিয়ে যেতেই বললেন, আজ আমাকে সকাল সকাল ভাত দিতে পারবে?

    দীপা বললেন, কেন পারব না। কটার সময় ভাত চাও?

    এই ধর–সাতটা সাড়ে-সাতটা।

    কোথাও যাবে?

    হুঁ।

    দীপা পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন। অথচ মহসিন তাঁকে ঠিক লক্ষ করছেন বলে মনে হচ্ছে না। কেমন যেন অন্যমনস্ক।

    দীপা।

    বল।

    আমি আজ বাসায় না ফিরতে পারি। যদি দেখ এগারোটার মধ্যে ফিরছি না, তাহলে দারোয়ানকে গেট বন্ধ করে দিতে বলবে।

    আচ্ছা।

    মহসিন চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হালকা গলায় বললেন, তোমার ডাক্তার বোন এ-বাড়িতে অনেক দিন আসে না। ব্যাপার কি বল তো?

    ব্যাপার আবার কি? নিশ্চয়ই কাজ নিয়ে ব্যস্ত।

    কোনো কিছু নিয়ে রাগটাগ করে নি তো?

    দীপা বিস্মিত হয়ে বললেন, রাগ করবে কেন? তৃণা রাগ করার মতো মেয়ে না। তার মধ্যে এই সব দ্রুতা নেই। হঠাৎ তৃণার কথা উঠল কেন?

    এমি। অনেক দিন ওকে দেখি না।

    আচ্ছা, ওকে আসতে বলব। নিশানাথ চাচার শরীরের অবস্থা নিয়েও ওর সঙ্গে কথা বলা দরকার।

    ওঁর শরীর কি আবার খারাপ হয়েছে?

    হুঁ। আজ তো খুব ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তার সাহেব বললেন, হাসপাতালে নিয়ে যেতে–

    ডাক্তার বললে তাই কর। তবে এই সব করে কিছু হবে বলে মনে হয় না। তাঁর যা হয়েছে তার নাম মৃত্যু রোগ। ভালো হবে আবার খারাপ হবে আবার একটু ভালো হবে, চলতেই থাকবে–আনটিল দ্য ফাইনাল সল্যুশন…

    দীপা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন। কেউ এত সহজ ভঙ্গিতে মৃত্যুর কথা বললে তার ভালো লাগে না। মৃত্যু একটি ভয়াবহ ব্যাপার। সেই মৃত্যু নিয়ে এমনভাবে কথা বলা উচিত নয়।

    মহসিন চলে যাবার পরপরই দীপা তৃণাকে টেলিফোন করলেন। তৃণার স্বভাব হচ্ছে টেলিফোন ধরেই হড়হড় করে একগাদা কথা বলা। অন্য কে কী বলছে তা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। তুফান মেইলে নিজের সব কথা বলে শেষ করে এক সময় নিঃশ্বাস ফেলে বলবে তারপর আপা, কেমন আছ? সেই প্রশ্নের উত্তরও সে ভালোমতো না শুনেই বলবে, আপা এখন রাখি, কেমন? কারো অসুখবিসুখ নেই তো? খোদা হাফেজ।

    আজও তৃণা টেলিফোন তুলেই হড়হড় করে কথা বলে যাচ্ছে, আপা আমি জানি তুমি আমার উপর খুব রাগ করেছ। গত পনেরো দিনে এক বারও তোমাদের খোঁজখবর জিই নি। যা ব্যস্ত ছিলাম বলার না। দুটা সেমিনার হয়েছে। একটা এপিলেন্সির উপর, অন্যটা সাইকেডেলিক ড্রাগ। দুটাই খুব ইন্টারেস্টিং সেমিনার। এত ইন্টারেস্টিং হবে জানলে তোমাকে জোর করে নিয়ে যেতাম। এক আমেরিকান প্রফেসর এসেছিলেন–প্রায় সত্তুরের মতো বয়স–প্রফেসর বার্ন। আমাকে কী বললেন জান? খুব গম্ভীর গলায় বললেন–মিস তৃণা, আমি কি তোমার সঙ্গে অল্প কিছুক্ষণের জন্যে হলেও প্রেম প্রেম গলায় কথা বলতে পারি? এরা কেমন রসিক, দেখলে আপা?

    দীপা কোনো রকমে তাকে থামিয়ে বলল, তুই কি আমার এখানে আসতে পারবি?

    অবশ্যই পারব। কখন আসব–এখন?

    কাল সকালে এলেও হবে। নিশানাথ চাচার ব্যাপারে তোর সঙ্গে পরামর্শ করব।

    ওঁর অসুখ কি আরো বেড়েছে?

    হুঁ। কি সব আজেবাজে কথা বলে মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে, জীবজন্তুর কথা বুঝতে পারে–

    ব্রেইন সেলের ডিজেনারেশন হচ্ছে আর কিছু না। আমি সকাল বেলায় চলে আসব। তবে আমাকে দিয়ে তো কিছু হবে না আপা। আমি হচ্ছি ছোট ডাক্তার

    হাতের কাছের ডাক্তার সব সময়ই ছোট। যে ডাক্তার অনেক দূরে, তাকেই মনে হয় অনেক বড়।

    মাঝে মাঝে তুমি ফিলসফির টিচারের মতো কথা বল, আপা।

    ফিলসফির টিচাররা এমন করে কথা বলে, তা তো জানতাম না।

    আমি তাহলে রাখি আপা খোদা হাফেজ।–দুলাভাই ভালো আছেন তো?

    হ্যাঁ, ও ভালোই আছে,–ও তোর কথা আজ বলছিল—

    কি বলছিলেন?

    অনেক দিন তোর সঙ্গে দেখা হয় না–তুই রাগ করেছি কিনা এই সব।

    তৃণা বিস্মিত গলায় বলল, গতকালই তো দুলাভাইয়ের সঙ্গে দেখা হল। রোববারেও দেখা হয়েছে।

    তাই নাকি! তা হলে হয়তো ভুলে গেছে।

    দুলাভাইকে একটু দাও তো কথা বলি।

    ও বাসায় নেই।

    কখন ফিরবেন?

    রাত এগারোটার দিকে ফিরতে পারে। আবার নাও ফিরতে পারে।

    নাও ফিরতে পারে মানে? রাতে কোথায় থাকবেন?

    তা তো জানি না। ব্যবসাট্যাবসা নিয়ে কী সব সমস্যা যাচ্ছে।

    তৃণা গম্ভীর গলায় বলল, দুলাভাই যদি এগারোটার মধ্যে ফেরেন তাহলে বলবে আমাকে টেলিফোন করতে।

    আচ্ছা।

    কাল তোমার সঙ্গে দেখা হবে আপা। খোদা হাফেজ।

     

    মহসিন রাত এগারোটার মধ্যে ফিরলেন না। দারোয়ানকে গেটে তালা লাগিয়ে দিতে বলে দীপা শেষবারের মতো নিশানাথ বাবুর খোঁজ নিতে গেলেন।

    নিশানাথ চাদর গায়ে দিব্যি ভালেমানুষের মতো বসে আছেন। হাতে স্যুপের বাটি। চামচ দিয়ে স্যুপ তুলে মুখে দিচ্ছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব আনন্দে আছেন।

    চাচা, শরীরটা কি এখন ভালো লাগছে?

    হ্যাঁ মা। তবে ঘুম-ঘুম ভাব এখনো আছে। স্যুপ খেয়ে আবার শুয়ে পড়ব।

    সলিড কিছু খাবেন? ভাত-মাছ? খুব ভালো পাঙ্গাশ মাছ ছিল।

    না মা। দাঁত নেই তো তরল খাবার ছাড়া অন্য কিছু খেতে পারি না। গলায় আটকে যায়।

    স্যুপটা কি খেতে ভালো হয়েছে?

    খুবই ভালো হয়েছে। অতি উত্তম হয়েছে।

    কাল তৃণা আসবে। ওর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করব আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি করব কি করব না। ডাক্তার সাহেব হাসপাতালে নেবার কথা বলছিলেন।

    বলুক। আমি এখানেই থাকব। বেশি দিন বাঁচব না, মা। খুব বেশি হলে এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহ নিজের ঘরটায় থাকি। পরিচিত জায়গায় মরার একটা আলাদা আনন্দ আছে, মা।

    দীপা কিছু বললেন না। কিয়ে রইলেন। কী কুৎসিত দেখাচ্ছে মানুষটাকে, দাঁত নেই, চুললেই, সমস্ত গা ফুলে কী হয়েছে। অথচ এই মানুষের ভেতরটা যে কত সুন্দর তা তাঁর মতো ভালো কেউ জানে না।

    দীপা।

    জ্বি চাচা।

    তোমার কাছে আমার অনেক ঋণ। ঋণ নিয়ে মরতে ভালো লাগে না। তবে তোমার ঋণের জন্যে আমার খারাপ লাগছে না। দেবী অংশে তোমার জন্ম। দেবীদের কাছে ঋণী থাকা দোষের না।

    কথা ঘোরাবার জন্যে দীপা বললেন, খাওয়ার পর কি আমি আপনার জন্যে এক কাপ গরম কফি আনব?

    আন।

    কফি এনে দীপা দেখলেন চাদর মুড়ি দিয়ে নিশানাথ বাবু ঘুমিয়ে পড়েছেন। দীপা তাঁকে জাগালেন না। অসুস্থ বৃদ্ধ মানুষটির জন্যে তাঁর চোখ ভিজে উঠল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীল অপরাজিতা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }