Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প1195 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. এঁটেল মাটির রাস্তা

    এঁটেল মাটির রাস্তা। বৃষ্টি পড়তেই কাদা হয়ে গেছে। জুতা কাদায় আটকে যাচ্ছে। বাতাস দিতে শুরু করেছে। মনসুর সাহেব ঠিক করলেন ছোটবাজারে ফিরে যাবেন। ঝড়-বৃষ্টির ভেতর এতটা পথ যাওয়া বড় ধরনের বোকামি হবে। শিলাবৃষ্টি শুরু হলে মাথা বাঁচানোর উপায় নেই। বৃষ্টির ফোঁটা হিমশীতল। এর মানে হল অনেক উঁচুতে বৃষ্টি তৈরি হচ্ছে যেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি। চশমার কাচে পানি জমছে। কিছু দেখা যাচ্ছে না।

    ছোটবাজারে ফিরে যাবার ব্যাপারে পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নেবার পরেও মনসুর সাহেব এগুচ্ছেন তাঁর বাসার দিকে। এবং পা বেশ দ্রুত ফেলছেন। ঘোর অন্ধকার। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বলে পথ চলতে অসুবিধা। বিদ্যুৎচমকে কি ফিবোনাক্কি রাশিমালা কাজ করে? প্রথম একবার, তারপর আবার একবার, তারপর পরপর তিনবার।

    তিনি মারা নদীর বাঁধের উপর উঠে এলেন। এই রাস্তাটা মোটামুটি ভালো। কাদা নেই। বাঁধের নিচে নৌকা বাঁধা থাকে। আজ কোনো নৌকাও নেই। বাঁধের উপর উঠে ঝড়ের ঝাপ্টা অনুভব করা যাচ্ছে। তিনি কুঁজো হয়ে হাঁটছেন এবং প্রতিমুহূর্তেই তাঁর মনে হচ্ছে এই বুঝি ধাক্কা দিয়ে বাতাস তাকে নদীতে ফেলে দিল।

    প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ল। খুব কাজেই পড়ল। এত কাছে যে বিদ্যুতের নীল শিখার পাশে পাশে তিনি কমলা শিখাও দেখতে পেলেন। এটা একটা আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। ঝড়ের মধ্যে বের না হলে তিন হাত সামনে বজ্ৰপাত দেখতে পেতেন না। ঘটনাটা বিপজ্জনক তো বটেই। বজ্র উঁচু জায়গায় আঘাত করে। বাঁধে কোনো গাছপালা নেই। উঁচু জায়গা বলতে তিনি। বজ্রটার উচিত ছিল তাঁর উপর পড়া। পড়ল না কেন? প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। সে কাউকে করুণা করে না। তাঁকে এই করুণা করার মানে কি?

    প্রকৃতির এই আচরণে মনসুর সাহেব খানিকটা বিরক্তই হলেন আর তখন দ্বিতীয় বজ্ৰপাত হল—তিনি ছিটকে বাঁধের নিচে পড়ে গেলেন। যখন তাঁর জ্ঞান হল তখননা অঝাের ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। কাদায়-পানিতে তিনি মাখামাখি। শীতে কিংবা অন্য কোনো কারণে তাঁর হাত-পা শক্ত। তিনি কি মারা গেছেন না জীবিত আছেন—এই বোধ স্পষ্ট হচ্ছে না। মারা যাবার সম্ভাবনাই বেশি। শরীরের ভেতর দিয়ে কয়েক লক্ষ ভোল্ট ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে। শরীর ভস্ম হয়ে যাবার কথা। তিনি মারা গেছেন এটাও মনে হচ্ছে না। মৃত মানুষের শীত লাগার কথা না। কিন্তু তাঁর শীত লাগছে। ঠকঠক করে শরীর কাঁপছে। মুখের উপর কেউ একজন মনে হয় ঝুঁকে আছে। মানুষ না অন্য কিছু অন্ধকারে বোঝা যাচ্ছে না। তিনি বললেন—এখানে কে?

    প্রশ্নের জবাব পাবেন মনসুর সাহেব সেই আশা করেননি। কিন্তু জবাব পেলেন। মিষ্টি এবং সহজ গলায় কেউ একজন বলল

    –আপনি আমার হাত ধরুন। হাত ধরে উঠে দাঁড়ান।

    কে কথা বলছে?

    আমি।

    আমিটা কে?।

    কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি আমার পরিচয় দেব। তার আগে আপনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া দরকার।

    আমি কি বেঁচে আছি-না-কি?

    অবশ্যই বেঁচে আছেন। বাঁধের উপর থেকে নিচে পড়ে ব্যথা পেয়েছেন?

    বিদ্যুৎ চমকাল। বিদ্যুতের আলোয় মনসুর সাহেব মানুষটাকে দেখলেন। একুশ-বাইশ বছরের একজন যুবক। শার্ট-প্যান্ট পরে আছে। প্যান্ট খানিকটা গুটানো। কাপড়-চোপড় ভিজে শরীরের সঙ্গে লেপ্টে আছে।

    যুবকই তাঁকে টেনে তুলল।

    স্যার, আপনি কি হাঁটতে পারবেন?

    মনসুর সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন, হাঁটতে না পারলে তুমি কি করবে? আমাকে কোলে করে নিয়ে যাবে?

    যুবক হেসে ফেলল। মনসুর সাহেব বললেন—এখন কটা বাজে জান?

    জ্বি না। আমার সঙ্গে ঘড়ি নেই। স্যার চলুন, আমরা আস্তে আস্তে হাঁটি। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভেজার কোনো অর্থ নেই। আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে পা ফেলুন।

    হাত ধরতে হবে না। আমি হাঁটতে পারব। তোমার নাম কি?

    যুবক জবাব দিল না। তুমি করে বলায় সে কি রাগ করল না-কি? নেত্রকোনা অঞ্চলের মানুষ তুমি করে বললে ফট করে রেগে যায়। দীর্ঘদিন মাস্টারির কুফল হল—মুখে তুমি আগে চলে আসে। মৃত্যুর সময় আজরাইলকে ঘরে ঢুকতে দেখলে পুরানো স্কুল মাস্টাররা বলে বসবেও তুমি? জান কবজ করতে এসেছ? আজরাইল তাতে রাগ করলেও এই যুবকের রাগ করার কিছু নেই। তিনি বৃদ্ধ একজন মানুষ। সামনের মাসেই তাঁর রিটায়ার করার কথা। কুড়ি-একুশ বছরের একজন যুবককে তুমি বলার অধিকার তো তার থাকাই উচিত।

    তুমি বলায় রাগ করেছ না-কি?

    জ্বি না স্যার, রাগ করিনি।

    রাগ করনি, তাহলে প্রশ্নের জবাব দিচ্ছ না কেন?

    কোন্ প্রশ্ন?

    একটু আগে যে জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি?

    আমার নাম নেই।

    নাম নেই মানে? নাম থাকবে না কেন?

    আপনি একটা নাম দিয়ে দিন।

    তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। নাম নেই বলতে তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছ? তোমার বাবা-মা তোমার কোনো নাম দেননি?

    জ্বি না।

    বৃষ্টি কমে এসেছে। বাতাস এখনো আছে। এত ঠাণ্ডা বাতাস সারাজীবনে মনসুর সাহেবের গায়ে লাগেনি। পৌষ মাসের বাতাসও এত ঠাণ্ডা থাকে না। এটা হল চৈত্র মাস।

    তুমি বলতে চাচ্ছ তোমার বাবা-মা তোমার কোনো নাম রাখেননি?

    আমার বাবা-মা নেই।

    তাঁরা অল্প বয়সে মারা গেছেন?

    স্যার, ব্যাপারটা ঠিক তাও না। বাবা-মার যে ধারণা পৃথিবীর মানুষদের আছে—সেই ধারণা আমাদের জন্যে প্রযোজ্য নয়। আমি এই পৃথিবীর কেউ না।

    তুমি এই পৃথিবীর কেউ না?

    জ্বি না।

    মনসুর মোটেই চমকালেন না। অতিরিক্ত ঠাণ্ডায়—বজ্ৰপাতের মানসিক চাপে তার মাথা কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। এক যুবক ছেলে তাকে বলবে সে এই পৃথিবীর কেউ না আর তিনি তা বিশ্বাস করে ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠবেন, তা হয় না।

    তুমি আমাকে পেলে কোথায়?

    আমি আপনার খোঁজেই এসেছি।

    ও আচ্ছা। তুমি কর কি?

    স্যার, আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না।

    জটিল কথা তো কিছু বলছি না। জানতে চাচ্ছি তুমি কি কর। চাকরি বাকরি কর না এখনো ছাত্র?

    আমি একজন ছাত্র।

    কোন্ ক্লাসের ছাত্র? কলেজ শেষ করেছ?

    স্যার, আপনাদের যেমন পড়াশোনার নানান স্তর আছে—আমার সে রকম নয়…ব্যাখ্যা করতে সময় লাগবে। চলুন আগে বাসায় যাই।

    যুবকটি মনসুর সাহেবের হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মনসুর সাহেব কিছুটা বিভ্রান্তি বোধ করছেন। মাথা ঝিম ঝিম করছে। বাঁধের উপর থেকে নিচে পড়ে যাবার সময় মাথায় ব্যথা পেয়েছেন। যা ঘটছে তা কি মাথায় ব্যথা পাওয়ার জন্যেই হচ্ছে? ফিবোনাক্কি রাশিমালার কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে চিন্তা করলে অবশ্য বোঝা যাবে চিন্তাশক্তি ঠিক আছে না তাতে কোনো সমস্যা আছে।

    ফিবোনাক্কি রাশিমালার প্রথম বৈশিষ্ট্য কি? প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই রাশিমালার পরপর যে কোনো চারটি সংখ্যা নেয়া হলে প্রথম এবং চতুর্থ সংখ্যার যোগফল, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংখ্যার যোগফলের চেয়ে এক কম। যেমন–

    ১, ১, ২, ৩

    প্রথম এবং চতুর্থ সংখ্যার যোগফল ৪।

    দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংখ্যার যোগফল ৩।

    না মাথাটা তো ঠিকই আছে। মাথায় তেমন সমস্যা হয়নি। মজার ব্যাপার হচ্ছে চোখও সেরে গেছে। চোখ থেকে পানি পড়া বন্ধ হয়েছে। যুবকটি হঠাৎ বলে বসল,

    ফিবোনাক্কি রাশিমালার বড় বৈশিষ্ট্য হল আপনি যে নিয়মের কথা বলছেন সে নিয়মের কিছু কিছু ব্যতিক্রম আছে। এই ব্যতিক্রমগুলিই হল রাশিমালার বৈশিষ্ট্য…

    তুমি ফিবোনাক্কি রাশিমালা জান?

    হ্যাঁ জানি, তবে এই রাশিমালা নিয়ে আমি তেমন উৎসাহী নই। আমার উৎসাহ অন্য জায়গায়।

    কোথায়?

    আপনি নিজে যে রাশিমালা তৈরি করেছেন সেই রাশিমালায়…

    আমি তো কোনো রাশিমালা তৈরি করিনি…

    করতে যাচ্ছেন। আপনার রাশিমালার প্রথম সংখ্যাটি শূন্য। দ্বিতীয়টি শূন্য শূন্য…

    মনসুর সাহেব রাগী গলায় বললেন আমি কোনো রাশিমালা তৈরি করিনি। আমি করছি ফিবোনাক্কি নিয়ে…

    ফিবোনাক্কিকে আপনি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছেন। আপনার মূল চিন্তা নতুন রাশিমালা এবং এই রাশিমালার নিয়ম-কানুন…

    মনসুর সাহেব অসম্ভব বিরক্ত হয়ে বললেন—তুমি নিতান্তই মূখের মতো কথা বলছ। প্রথমত শূন্য কোনো রাশিমালার সংখ্যা হতে পারে না। শূন্য হচ্ছে একটা প্রতীক, যে প্ৰতীক আমরা ব্যবহার করি কোনো সংখ্যার অবস্থান নির্দেশের জন্যে। যেমন ৮ একটি সংখ্যা। এর অবস্থান এককের ঘরে। এই আটকে আমরা দশকের ঘরে নিয়ে যেতে চাই। আটের ডানে একটি শূন্য বসাই। আট হয়ে গেল আশি। তার অবস্থানের পরিবর্তন হল।

    আপনার কথা মেনে নিচ্ছি—তারপরেও শুনুন, শূন্য যদি শুধু কোনো প্রতীকই হয় তাহলে কোনো সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে গুণ করলে আপনি গুণফল শূন্য লিখতে পারেন না। আপনি লিখতে পারেন না–

    ৩ x ০ = ০ বা

    ৪ X ০ = ০

    একই সঙ্গে আপনি বলছেন শূন্য একটি প্রতীক, আবার সঙ্গে সঙ্গে শূন্যকে গাণিতিক প্রক্রিয়ায় কাজে লাগাচ্ছেন, তা কি করে হয়?

    মনসুর সাহেব চুপ করে গেলেন, অকাট্য যুক্তি। এবং ভালো যুক্তি। যুবকটি শব্দ করে হাসল।

    মনসুর সাহেব বললেন, তোমার যুক্তি মেনে নিলাম। ধরলাম, শূন্য একটি সংখ্যা হতে পারে। কিন্তু শূন্য/শূন্য তো সংখ্যা হতে পারে না।

    কেন পারবে না? হতে পারে। এই পৃথিবীর একজন মহান আঙ্কিক শূন্য/শূন্য অনেকবার ব্যবহার করেছেন। একে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া ব্যবহার করেছেন।

    কার কথা বলছ?

    স্যার আইজাক নিউটন। তিনি ক্যালকুলাস বের করেন।

    সেখানে শূন্য/শূন্য কোথায়?

    আছে। তো dy/dx শূন্য / শূন্য ছাড়া আর কিছুই না। dy হচ্ছে y-এর অতিক্ষুদ্র অংশ। প্রায় শূন্য। তেমনি dy হল x-এর অতি ক্ষুদ্র অংশ, প্রায় শূন্য। অর্থাৎ তিনি কাজ করেছেন প্রায় শূন্য/প্রায় শূন্য নিয়ে। আপনি কাজ করছেন শূন্য/শূন্য নিয়ে। এই একটি কারণেই আমার আপনার কাছে আসা।

    তুমি কে? আমার কোনো নাম নেই এবং আমি আমার অবস্থান আপনাকে এই মুহূর্তে ব্যাখ্যাও করতে পারছি না…

    কোত্থেকে এসেছ? আমি এসেছি শূন্য থেকে।

    শূন্য থেকে?

    জ্বি স্যার, শূন্য থেকে। শূন্য সংক্রান্ত রাশিমালার প্রতি এ কারণেই আমার এত আগ্রহ।

    তোমার নাম কি?

    আপনি বারবার নামের মধ্যে ফিরে যাচ্ছেন। যে এসেছে শূন্য থেকে তার নাম থাকতে পারে না। তারপরেও কথাবার্তা চালানোর সুবিধার জন্যে আপনার যদি একান্তই নামের প্রয়োজন হয় আপনি আমাকে একটা নাম দিতে পারেন। আপনার পছন্দসই কোনো নাম…আপনি আমাকে ফিবোনাক্কি ডাকতে পারেন।

    ফিবোনাক্কি?

    জি। তবে যদি এই নামটা কঠিন মনে হয় তাহলে আরো সহজ কোনো নামে ডাকতে পারেন স্যার, নিউটন নামটা কি আপনার কাছে সহজ মনে হয়?

    নিউটন?

    হ্যাঁ নিউটন। বিদেশী নাম যদিও তারপরেও নামটার এক ধরনের সহজ ভাব আছে। আপনি দেশী নামও রাখতে পারেন–রহিম, করিম, যদু, মধু…স্যার, আমরা এসে পড়েছি।

    মনসুর সাহেব পাঞ্জাবির পকেটে গেটের চাবির জন্য হাত ঢুকালেন। চাবি নেই। বাঁধ থেকে যখন তিনি ছিটকে নিচে পড়ে গেছেন। তখন চাবিও নিশ্চয়ই পড়ে গেছে। গুদামঘরের গেটে যে বিশাল তালা ঝুলছে সেই তালা খোলা তাঁর কর্ম নয়।

    স্যার কি চাবি খুঁজছেন?

    হুঁ।

    এই নিন চাবি।

    মনসুর সাহেব যন্ত্রের মতো চাবি হাতে নিলেন। গেটের তালা খুলতে খুলতে বললেন, চাবি কোথায় পেলে?

    আপনি যখন বাঁধের নিচে পড়ে গেলেন তখন পকেটের চাবিও ছিটকে পড়ে গেল। কাজে লাগবে বলে চাবি তুলে এনেছি।

    তোমাকে ধন্যবাদ।

    এক বোতল প্যালিকেন কালি ছিল, তা আনতে পারিনি। কালির বোতলটা ভেঙে গেছে।

    ও।

    আপনার সঙ্গে কাগজের যে প্যাকেট ছিল তাও আনতে পারিনি। ইচ্ছা করলে আনতে পারতাম কিন্তু কাদায়-পানিতে মাখামাখি হয়ে কাগজের যে অবস্থা—আনাটা অর্থহীন হত।

    ও।

    গেটের তালা খোলা হয়েছে ঠিকই কিন্তু গেট সরানো যাচ্ছে না। জাম হয়ে আছে। ছেলেটি তাঁকে সাহায্য করল। দুজনে ঠেলে ঠেলে গেট সরালেন। ভালো পরিশ্রম হয়েছে। তিনি হাঁপাচ্ছেন। ছেলেটাও হাঁপাচ্ছে।

    স্যার চলুন, ঘরে যাই। বাইরে দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা লাগাবেন। আপনার ঘরে কি বাড়তি কাপড় আছে? আমার কাপড় বদলাতে হবে।

    তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। তুমি মন দিয়ে আমার কথা শোন।

    আপনি বরং আমাকে একটা নাম দিয়ে দিন। নাম দিলে আপনার সুবিধা হবে। ফিবোনাক্কি ডাকেন। এই নাম আমার পছন্দ।

    শোন ফিবোনাক্কি, তোমাকে আমি একটা গল্প বলব। গল্পটা তুমি খুব মন। দিয়ে শুনবে।

    এখানে দাঁড়িয়ে গল্প শোনার প্রয়োজন কি? চলুন যাই। শুকনো কাপড় পরি। চা খেতে খেতে আপনার গল্প শুনি।

    না, তুমি এখানে দাঁড়িয়েই গল্প শুনবে।

    আপনার ঠাণ্ডা লেগে যাবে। ইতিমধ্যে লেগে গেছে বলে আমার ধারণা।

    ঠাণ্ডা লাগুক আর না লাগুক—এখানে দাঁড়িয়ে তুমি গল্প শুনবে।

    স্যার বলুন।

    আমার শৈশবের একটা ঘটনা। আমার দূর সম্পর্কের এক খালাতো ভাই ছিল। রমিজ নাম। বার-তের বছর বয়স। এক বর্ষাকালে সে জাম পাড়ার জন্যে জাম গাছে উঠল। বর্ষাকালে জাম গাছ থাকে পিছল…

    স্যার, কিছু মনে করবেন না। আপনি নিজেও কিন্তু আপনার দারোয়ান হরমুজ মিয়ার মতো বেশি কথা বলছেন—মূল ব্যাপারটা বলতে দেরি করছেন।

    রমিজ গাছে উঠল…পিছলে পড়ে গিয়ে মাথায় ব্যথা পেল। ঘণ্টাখানিক অজ্ঞান হয়ে রইল মাথায় পানি-টানি ঢেলে তার জ্ঞান ফেরানো হল। জ্ঞান আসার পরই সে তার মার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে শুরু করল। কথা বলে, হাসে। কিন্তু তার মা বেঁচে নেই। অনেক আগেই মারা গেছেন। অথচ সে এরকম ভাব করছে যেন মা বেঁচেই আছেন। তার সঙ্গে কথা বলছেন। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। ডাক্তার ওষুধপত্র দিলেন। সে সেরে গেল।

    রমিজ সাহেব কি এখনো জীবিত আছেন?

    হ্যাঁ আছে। ঢাকা কাস্টমস-এ কাজ করে। প্রচুর পয়সা করেছে মালিবাগে তার দোতলা বাড়ি। বাড়ির নাম কেয়া ভবন। কেয়া হল তার প্রথম স্ত্রীর নাম। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর সে আবার বিয়ে করেছে। সেই বৌয়ের নাম মিতা। এখন শুনছি বাড়ির নাম পালটে মিতা ভবন…

    স্যার, আপনি যে বেশি কথা বলছেন সেটা বুঝতে পারছেন?

    পারছি।

    মূল গল্পে কি ফিরে যাবেন, না যা বলার বলে ফেলেছেন?

    না, আসল ব্যাপারটা বলা হয়নি–রমিজ মাথায় ব্যথা পেয়ে তার মৃতা মাকে দেখতে পেয়েছিল। সেটা ছিল তার মনের কল্পনা। ব্যাপারটা ঘটেছে মাথায় ব্যথা পাওয়ার কারণে। আমার বেলাতেও তাই হয়েছে—আমি মাথায় ব্যথা পেয়েছি। ব্যথা পাওয়ার কারণে তোমাকে দেখছি। তুমি হচ্ছ আমার মনের কল্পনা। এর বেশি কিছু না।

    যুবক হাসল। মনসুর সাহেব তাঁর হাসি দেখলেন না তবে তার হাসির শব্দ শুনলেন।

    শোন যুবক। যুবক না—বলুন, শোন ফিবোনাক্কি।

    শোন ফিবোনাক্কি—তুমি আমার কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। তুমি এই মুহূর্তে বিদেয় হবে।

    জ্বি আচ্ছা স্যার। শুধু…

    শুধু কি?

    ঠাণ্ডায় কাহিত হয়েছি। আপনার ঘরে বসে এক কাপ চা খেতে পারলে…

    বিদেয় হও বলছি।

    জি আচ্ছা স্যার। গেটটা তো বন্ধ করা দরকার। আপনি একা পারবেন না। আপনি ভেতর থেকে ঠেলা দিন। আমি বাইরে থেকে টানি।

    মনসুর সাহেব আপত্তি করলেন না। একা তাঁর পক্ষে গেট সরানো আসলেই কষ্টকর।

    গেট বন্ধ করে মনসুর সাহেব ভেতর থেকে তালা দিলেন। ছেলেটি গেটের বাইরে থেকে বলল, স্যার, আমি দেয়ালের বাইরেই থাকব। যদি প্রয়োজন মনে করেন।

    মনসুর সাহেব কোনো জবাব দিলেন না। নিজের ঘরের দিকে রওনা হলেন।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীল অপরাজিতা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }