Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প1195 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৭. রূপার বড় ভাই রফিক

    রূপার বড় ভাই রফিক খুব আমুদে মানুষ। হৈ চৈ করতে পছন্দ করে। লোকজন জড়ো করে আড্ডা দেয়ায় তার খুব আগ্ৰহ। সে আসার পর থেকে রূপাদের বাড়িতে প্রচুর লোকজন। আসছে, যাচ্ছে, চা খাচ্ছে। বড় চায়ের কেতলি চুলায় আছেই।

    বাড়ি-ভর্তি মানুষ, কিন্তু রূপার অস্থিরতা কমছে না। সে খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে, পারছে না। মনে হচ্ছে এ জীবনে আর কোনোদিনও সে স্বাভাবিক হতে পারবে না। রফিকের এক গল্প শুনে সে খুব শব্দ করে হাসল। রফিক বিস্মিত হয়ে বলল, হাসছিস কেন?

    রূপা ক্ষীণ গলায় বলল, হাসির গল্প তাই হাসলাম।

    আমি তো মোটেই হাসির গল্প বলি নি। আমাদের এক কলিগের স্ত্রী কীভাবে এ্যাক্সিডেন্ট করে পঙ্গু হয়ে গেছে, সেই গল্প করলাম। এর মধ্যে হাসির তো কিছু নেই।

    রূপা চুপ করে রইল। ভাইয়ার দিকে চোখ তুলে তাকাতেও এখন তার ভয় ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে ভাইয়ার দিকে তাকালেই সে সব কিছু বুঝে ফেলবে।

    রূপা!

    জি।

    তোর কী হয়েছে বল তো?

    কিছু হয় নি।

    আমার তো মনে হয় কিছু-একটা হয়েছে। তুই কারো কথাই মন দিয়ে শুনছিস না। তোর মধ্যে একটা ছটফটানি ভাব চলে এসেছে। আগে তো তুই এমন ছিলি না।

    মানুষ তো বদলায় ভাইয়া।

    অবশ্যই–বদলায়–এমনভাবে বদলায় না। তুই মাকে ডেকে আন তো, মাকে জিজ্ঞেস করি।

    তাকে জিজ্ঞেস করার কী আছে?

    ডেকে আনতে বলছি, ডেকে আন।

    রূপা মাকে ডেকে নিয়ে এলো। নিজে সামনে থাকল না। থাকতে ইচ্ছা করল না। সে লক্ষ করেছে তাকে নিয়ে বাড়িতে ঘনঘন বৈঠক হচ্ছে। বৈঠকে এমন কিছু আলোচনা হচ্ছে যেখানে তার উপস্থিতি কাম্য নয়। সবাই নিচু গলায় কথা বলছে–সে কাছে এলেই থেমে যাচ্ছে। এর মানে কী?

    রূপা বাগানে নেমে গেল। সাত দু বাজতে বেশি বাকি নেই। রূপা নিশ্চিত আজ স্যার আসবেনই। আজ ছতারিখ। ছতারিখ তার জন্যে খুব লাকি। ক্লাস এইটো বৃত্তি পাবার খবর সে পেয়েছিল ছতারিখে। মবিনুর রহমান স্যার প্রথম এ বাড়িতে এসেছিলেনও ছতারিখে। রূপা লক্ষ করল ভাইয়া মার সঙ্গে কথা বলছে এবং আড়চোখে তাকে দেখছে। রূপা এমন ভাব করল যেন সে বাগানের গাছগুলি দেখছে। যদিও গাছপালার প্রতি তার তেমন মমতা নেই।

    বারান্দায় জেবা এসে দাঁড়িয়েছে। সে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রূপার দিকে। এই মেয়েটির চোখের দৃষ্টিতে এমন কিছু আছে যে অস্বস্তি বোধ হয়। মনে হয় এই মেয়েটার দুটা চোখের ভেতরও কয়েকটা চোখ আছে। এক সঙ্গে অনেকগুলি চোখ যেন তাকে দেখে। রূপা জেবার দিকে তাকিয়ে বলল, বাগান দেখবে জেবা?

    জেবা হ্যাঁ-না কিছু বলল না, তবে বাগানে নেমে এলো।

    রূপা বলল, এই বাগানের নাম কী জানো? জংলি বাগান। কোনো যত্ন নেই–গাছপালায় জঙ্গল হয়ে আছে। তাই জংলি বাগান।

    জেবা কিছু বলল না। এই মেয়েটা একেবারেই কথা বলে না।

    আমাদের এই জংলি বাগান তোমার কাছে কেমন লাগছে জেবা?

    জেবা নিশ্চুপ। যেন সে পণ করেছে কোনো কথা বলবে না। রূপা হাসতে হাসতে বলল, তুমি কি কারো সঙ্গেই কথা বলো না?

    জেবা হাসল। ঠিক হাসিও না। তার ঠোঁট বাকাল না, তবে চোখে হাসি ঝিলিক খেলে গেল। সে এবার স্পষ্ট গলায় বলল–তুমি কার জন্য অপেক্ষা করছি ফুপু?

    রূপা চমকে উঠে বলল, কারো জন্যে অপেক্ষা করছি না তো! আমি কারো জন্যে অপেক্ষা করছি এটা তোমার মনে হলো কেন?

    জেবা এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বাগান থেকে উঠে বারান্দায় চলে গেল। রফিক হাসিমুখে বলল, কী মা বাগান ভালো লাগল না? জেবা জবাব দিল না। রফিক আবার বলল, আমাদের এই বাড়ি তোমার পছন্দ হয়েছে তো মা? জেবা এ প্রশ্নের উত্তরেও কিছু বলল না। তাকে আরো প্রশ্ন করা হতে পারে এই ভয়েই হয়তোবা বাড়ির ভেতরে চলে গেল।

    রফিকের মা বললেন, তোর এই মেয়ে বোধহয় আমাদের কাউকে পছন্দ করছে না। কারো কোনো কথার জবাব দেয় না। রফিক বলল, ও এ রকমই মা। কথা বলার ইচ্ছা! হলেই কথা বলবে। ইচ্ছা না হলে বলবে না। খুব সমস্যা করছে। ঢাকায় নিয়ে ডাক্তাব দেখাব।

    ডাক্তার কী করবে? সাইকিয়াট্রিষ্ট, ওরা এইসব ব্যাপার জানে। বাচ্চারা থাকবে বাচ্চাদের মতো। ওকে দেখ কেমন বড়দের মতো ভঙ্গি করে ঘুরে। ওর কথা বাদ দাও মা। এখন রূপার ব্যাপারটা বলে। ওর হয়েছে কী?

    কিছু হয় নি তো!

    আগেও তো বললে কিছু হয় নি। ভালো কবে ভেবে বলো ও কারো প্ৰেমে-ট্রেমে পড়ে নি তো?

    কী বলিস তুই।

    আজগুবি কোনো কথা বলছি না মা, রূপার ভাবভঙ্গি আমার ভালো লাগছে না বলেই বলছি। শেষটায় বিয়ে ঠিকঠাক হবার পর দেখা যাবে সে বেঁকে বসেছে।

    এরকম কিছু নাই।

    জানো তো ভালোমতো?

    জানি।

    কিন্তু আমার ভালো লাগছে না। রূপাকে দেখ কেমন মূর্তির মতো দেখাচ্ছে। আগে তো। এ রকম ছিল না।

    রফিক ঘরের ভেতরে চলে গেল। ছোট মেয়ে রুবাবা তারস্বরে চিৎকার করছে। সে ছাড়া এই মেয়েকে কেউ সামলাতে পারে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এত চিৎকারেও রূপার কোনো ভাবান্তর নেই। যেন সে কিছু শুনছে না। এক ধরনের ঘোরের মধ্যে আছে।

    রূপা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বাগানে বসে রইল। বাঁধানো বকুল গাছের নিচে বসার ব্যবস্থা আছে।

    রফিক বাইরে বেরোতে গিয়ে এই দৃশ্য দেখে বিবক্ত। গলায় বলল, এখনো বাগানে বসে আছিস কেন?

    মাথা ধরেছে ভাইয়া। ফ্রেশ বাতাস নিচ্ছি।

    বর্ষার সময়, সাপখোপ বেরোবে। উঠে আয়।

    রূপা উঠে এলো। রফিক বিস্মিত হয়ে বলল, তুই কি কাঁদছিলি না-কি?

    কাঁদব কেন শুধু শুধু?

    তোর গাল ভেজা, এই জন্যেই জিজ্ঞেস করছি।

    কাঁপা শাড়ির আঁচলে গাল মুছতে মুছতে বলল, হ্যাঁ কাঁদছিলাম। মাথার যন্ত্রণায় কাঁদছিলাম। মাঝে মাঝে এমন যন্ত্রণা হয়। মাথাটা কেটে ফেলে দিতে ইচ্ছা করে।

    সে কী যন্ত্রণা খুব বেশি?

    হুঁ।

    ডাক্তাব দেখিয়েছিস?

    না।

    তোদের নিয়ে বড় যন্ত্রণা। অসুখ-বিসুখ হবে, ডাক্তাব দেখাবি না? দেশে ডাক্তার আছে কী জন্যে? আচ্ছা। আমি বিধুবাবুকে নিয়ে আসব।

    কাউকে আনতে হবে না।।

    যা ঘরে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাক। বাতে তোর সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।

    এখন বলো।

    না এখন না। রাতে বলব। এখন একটা কাজে যাচ্ছি। আর শোন, তোর যদি বিশেষ কোনো কথা বলার থাকে যা আমাকে বা মাকে বলতে লজ্জা পাচ্ছিস তাহলে তোর ভাবিকে বলবি।

    আমার আবার বিশেষ কী কথা…

    থাকতেও তো পারে। এই জন্যই বলছি।

    রূপা নিজের ঘরে এসে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে রইল। তার এখন সত্যি সত্যি মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। অসম্ভব কষ্টও হচ্ছে। আজ ছ তারিখ, কিন্তু স্যার এলেন না। উনার কি কোনো অসুখ-বিসুখ করেছে? মোতালেবকে কি পাঠাবে খোঁজ নিতে? যদি পাঠায় কেউ কি তা অন্য চোখে দেখবে? অন্য চোখে দেখার তো কিছু নেই। একটা লোকের অসুখ-বিসুখ হলে খোঁজ নিতে হবে না!

    হারিকেন হাতে মিনু ঘরে ঢুকল। কোমল গলায় বলল, তোমার নাকি প্ৰচণ্ড মাথাব্যথা?

    হ্যাঁ, ভাবি।

    মাথায় হাত বুলিয়ে দেব?

    না, তুমি এখন যাও। আমার একা থাকতে ইচ্ছা করছে। কিছুক্ষণ একা থাকলে মাথা ধরাটা কমবে।

    এরকম কি তোমার প্রায় হয়?

    হুঁ।

    মশারি খাটিয়ে শোও। মশা কামড়াচ্ছে তো।

    মশা কামড়াচ্ছে না ভাবি, তুমি যাও, হারিকেন নিয়ে যাও–আলো চোখে লাগছে।

    মিনু হারিকেন নিয়ে চলে যেতে যেতে বলল, তোমার স্যার এসেছিলেন। উনাকে বলেছি আজ পড়তে পারবে না। তোমার মাথাব্যথা। তাকে চলে যেতে বলেছি।

    রূপা উঠে বসল। তার বুক ধকধক করছে। মনে হচ্ছে, সে নিজেকে সামলাতে পারবে না। সে কাঁপা গলায় বলল, ভাবি উনি কি চলে গেছেন?

    জানি না। বলেছিলাম তো চ খেয়ে তারপর যেতে। বসেছেন কি-না জানি না।

    ভাবি প্লিজ, উনাকে একটু বসতে বলো।

    তোমার মাথাব্যথা?

    এখন কমেছে। অনেকখানি কমেছে, জরুরি কিছু পড়া আছে দেখে নিই।

    কাল আসতে বলি?

    না ভাবি না।

    মিনু হারিকেন হাতে চলে গেল। রূপার অস্বাভাবিক আগ্রহ তার চোখ এড়াল না। অবশ্যি সে এটাকে তেমন গুরুত্ব দিল না। এই বয়েসী মেয়েদের আচার-আচরণ কোনো ধরাবাধা পথে চলে না। তাদের আগ্রহ ও অনাগ্রহ কোনোটারই সাধারণত কোনো ব্যাখ্যা থাকে না। এরা চলে সম্পূর্ণ নিজের খেয়ালে।

    মবিন সাহেবের হাতে দুদিনের পুরনো একটা খববের কাগজ। তিনি গভীব মনোযোগে খবরের কাগজ পড়ছেন। যে অংশটি পড়ছেন সে অংশ কেউ মন দিয়ে পড়বে না। সংবাদ শিরোনাম সিরাজগঞ্জের ধানচামীদের কীটনাশকের জন্যে আবেদন। ধানে পামরী পোকা ধরেছে। সেই পোকা বিনষ্ট করা আশু প্রয়োজন … ..ইত্যাদি, ইত্যাদি। খবরটা দুবার পড়বাব পর তিনি এখন তৃতীয় বারেব মতো পড়ছেন। তবে ভুরু কুঁচকে আছে। তিনি অপেক্ষা করছেন চায়েব জন্য। অপরিচিত একজন মহিলা তাকে বলে গেছেন, বসুন চা খেয়ে যান। তিনি বসে আছেন। চা এখনো আসছে না। রূপার মাথাব্যথা। সে আজ পড়বে না। শুনে তিনি খানিকটা স্বস্তি বোধ করছেন। কারণ তাঁর মন ভালো না, পড়াতে ইচ্ছা করছে না। শুধু মন না-শরীরটাও খারাপ। পরপর তিন রাত ঘুম হয় নি। দিনের বেলা ঘুমোতে চেষ্টা করেন, লাভ হয় না। খানিকটা ঝিমুনির মতো আসে খুঁটিখাট শব্দে ঝিমুনি কেটে যায়। বাজারে এসেছিলেন ঘুমের ওষুধ কিনতে, ফেরার পথে ভাবলেন রূপার পড়াশোনার খোঁজ নিয়ে যাবেন। একজন শিক্ষক সব সময় যে পড়া দেখিয়ে দেবেন তা তো না। মাঝে মাঝে তার উপস্থিতিই যথেষ্ট।

    মবিন সাহেব খবরের এই অংশ তৃতীয়বার পড়া শেষ করে দরজার দিকে তাকালেন। দশ-এগারো বছরের এক বালিকা পর্দা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সে চেষ্টা করছে যেন তাকে দেখা না যায়। দেখা যাচ্ছেও না, তবে পর্দার ফাঁক দিয়ে তার উজ্জ্বল চোখ দেখা যাচ্ছে।

    মবিন সাহেব বললেন, তুমি কে? মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে বলল, আমি কেউ না।

    এ উত্তর মবিন সাহেবের পছন্দ হলো। মেয়েটা ভালোই বলেছে সে কেউ না। হুঁ আর ইউ? আই অ্যাম নো বডি। বাহ ভালো তো!

    তোমার নাম কী?

    জেবা।

    জবা? বাহ্‌ সুন্দর নাম!

    জবা না জেবা।

    ও আচ্ছা, জেবা। পর্দার আড়ালে কেন? কাছে আসি গল্প করি।

    মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে চলে গেল।

    মবিন সাহেব খুশিই হলেন। মেয়েটি গল্প করার জন্যে এগিয়ে এলে সমস্যা হতো। তিনি একেবারেই গল্প করতে পারেন না। তাছাড়া এই বয়েসী মেয়েরা কোন ধরনের গল্প শুনতে চায়। তাও জানেন না। তিনি চতুর্থ বারের মতো ধান গাছের পোকা বিষয়ে খবর পড়তে শুরু করলেন; কিছুতেই এটা মাথা থেকে সরাতে পারছেন না।

    চা নিয়ে রূপা ঢুকল! শুধু চা না–এক বাটি মুড়ি। মুড়ির উপর তিনটা ভাজা শুকনা মরিচ।

    স্যার কেমন আছেন?

    ভালো।

    এতদিন আসেন নি কেন?

    মবিন সাহেব জবাব দিলেন না। এতদিন কেন আসেন নি এটা বলতে হলে এক গাদা কথা বলতে হবে। কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। রূপা চেষ্টা করছে খুব স্বাভাবিক থাকতে। তার আচার-আচরণে কিছুতেই যেন ধরা না পড়ে–যে সে এই মুহুর্তে এক ধরনের ঘোবের মধ্যে আছে। বিশ্বাস পর্যন্ত হচ্ছে না যে স্যার তার সামনে বসে আছেন। মানুষটাব চেহারা এত সাধারণ কিন্তু এই সাধারণ চেহারা তার কাছে এত অসাধারণ লাগছে। মনে হচ্ছে তার একটা জীবন সে এই লোকটির দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দিতে পারবে। এক পালকের জন্যেও সে চোখে ঐ পাতা ফেলবে না।

    স্যার, আজ কিন্তু আমি পড়ব না।

    আচ্ছা।

    কাল থেকে সিরিয়াসলি পড়া শুরু করব।

    আচ্ছা।

    কাল আসবেন তো?

    হুঁ।

    চা খান স্যার। চা ঠাণ্ডা হচ্ছে।

    তিনি চায়ে চুমুক দিলেন। রূপা বলল, খুলনা থেকে আমার বড় ভাই এসেছেন। উনার দুই মেয়ে জেবা এবং রুবাবা। রুবাবা খুব অদ্ভুত নাম না স্যার?

    হুঁ।

    এই নাম আগে শুনেছেন?

    না।

    আমার মেজো ভাই থাকেন চিটাগাং। উনিও বোধ হয় আসবেন। তাকেও খবর দেয়া হয়েছে। সবাই মিলে একটা হৈচৈ-এর ব্যবস্থা হচ্ছে।

    মবিন সাহেব ডান হাতে মাথার চুল আঁচড়াবার মতো ভঙ্গি করছেন। এই ভঙ্গি রূপার চেনা। এর অর্থ তিনি এখন অন্যমনস্ক। অন্য কিছু ভাবছেন।

    স্যার, স্যার!

    হুঁ।

    কী ভাবছেন স্যার?

    না মানে তেমন কিছু না–খবরের কাগজে একটা খবর পড়ার পব থেকে খারাপ লাগছে। মন থেকে বিষয়টা তাড়াতে পারছি না। ধান ক্ষেতে পোকা লেগেছে। চাষী বা পোকা মারার জন্য কীটনাশক চাচ্ছে। আমার খুব খারাপ লাগছে।

    রূপা বিস্মিত হয়ে বলল, খারাপ লাগার কী আছে?

    মবিনুর রহমান চেয়ারে পা তুলে বসলেন। এই ভঙ্গিটাও রূপার চেনা। এখন তিনি কঠিন গলায় কিছু কথা বলবেন। তিনি কথা বলা শুরু করলেন।

    শোন রূপা, এই পৃথিবীতে অসংখ্য প্রজাতির জন্ম হয়েছে। মানুষ যেমন একটি প্ৰজাতি, কীট-পতঙ্গও প্রজাতি। এদের সবার বেঁচে থাকার অধিকার আছে। এদের সঙ্গে সহাবস্থানেব পদ্ধতি বের করা যেতে পারে, এদের হত্যা করা যাবে না। এদের হত্যা করার আমাদের কোনো অধিকার নেই। আমরা সীমা লঙ্ঘন করছি।

    রূপার খুব ইচ্ছে করল বলে–ওদের হত্যা না করলে তো এরা ধান খেয়ে ফেলবে। তখন আমরা মারা পড়ব। কিন্তু সে কিছু বলল না। তাকিয়ে রইল। তার কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। কথা শুনতে ইচ্ছা করছে। তার চেয়েও যা ভয়ংকিব তার ইচ্ছা করছে এই মানুষটাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে।

    যাই রূপা।

    স্যার একটু বসুন। একটু।

    মবিন সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, কেন?

    আরেক কাপ চা খান, আমি বানিয়ে নিয়ে আসি।

    চা তো একবার খেলাম!

    ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। আমি ভালো করে এক কাপ বানিয়ে নিয়ে আসি।

    না।

    তিনি উঠে পড়লেন। রূপার খুব কষ্ট হচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে। হাত ধরে জোর করে তাকে স্বসিয়ে দিয়ে কঠিন গলায় বলে আপনাকে বসতেই হবে। আপনি যেতে পারবেন। না। আপনি সারারাত এই চেয়ারে বসে থাকবেন। সারারাত আমার সঙ্গে গল্প করবেন।

    তা বলা হলো না। কল্পনা এক জিনিস। বাস্তব অন্য। বাস্তবে রূপা তার স্যারকে এগিয়ে দিল গোট পর্যন্ত। স্যার চলে যাবার পরেও গোট ধরে দাঁড়িয়ে রইল। আকাশ পরিষ্কার, চাঁদ উঠেছে। চাদের আলোয় চারদিক ঝলমল করছে। এত সুন্দর! পৃথিবী এত সুন্দর।

    বাতের খাবাব শেষ হবার পর রফিক বলল, রূপা আয়, ছাদে বসে কিছুক্ষণ গল্পগুজব কবি। ছাদ পরিষ্কার?

    হুঁ। পাটি দিতে বলব? না চেয়ার?

    পাটি দিতে বল। আর কয়েকটা বালিশ। তোর ভাবিকেও আসতে বল। ছাদে বসে চা খেতে খেতে জোছনা দেখি। অসম্ভব সুন্দর জোছনা হয়েছে। অনেকদিন এমন জোছনা দেখি নি।

    তোমাদের খুলনায় জ্যোৎস্না হয় না?

    হয়। দেখা হয় না। পানের বাটা সঙ্গে নিয়ে আসিস, পান খাব। কাঁচা সুপারি দিয়ে পান।

    ভাইয়া তাকে কী বলবে তা কাঁপা আঁচ করতে পাবছে। বিয়ের কথা বলবে। এটা বলাব জন্যে এত ভনিতা কেন কে জানে। বলে ফেললেই হয়। অনেকক্ষণ ধরেই তারা ছাদে বসে আছে। রফিক নানান কথা বলছে। মূল প্রসঙ্গে আসছে না। এক সময় রূপার ধারণা হলো হয়তো মূল প্রসঙ্গই নেই। হালকা গল্পগুজব কিবাবা জন্যেই তাকে ডাকা হয়েছে। মিনু বালিশে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে পড়েছে কি-না বোঝা যাচ্ছে না।

    রফিক বলল মিনু ঘুমিয়ে পড়েছ নকি?

    মিনু সাড়া-শব্দ করল না। রফিক হালকা গলায় বলল, রূপা তোর ভাবির কাণ্ড দেখেছিস? ঘুম দিচ্ছে। এমন চমৎকার জোছনায় ঘুমিয়ে যাওয়া তো রীতিমতো ক্রাইম। শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

    রূপা বলল, আমার নিজেরও ঘুম পাচ্ছে ভাইয়া। কয়েকবার হাই তুলেছি। রফিক বলল, সবাই যদি ঘুমে কাতর হয়ে থাকে তাহলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেই হয়। চল যাই, ফেয়ারওয়েল টু দা মুন।

    তুমি কী যেন বলবে বলছিলে?

    তেমন জরুরি কিছু না। ইট কেন ওয়েট। তোর বিয়ের ব্যাপাবে কথা বলব বলে ভাবছিলাম।

    ও।

    খুব ভালো ছেলে পাওয়া গেছে। সবদিক মিলিয়ে ছেলে জোগাড় করা তো এখন ভয়াবহ সমস্যা। ছেলে দেখতে সুন্দর হলে স্বভাব-চরিত্র হয় মন্দ। টাকা-পয়সা থাকলে বিদ্যা-বুদ্ধি থাকে না। ভালো ছেলে হলে দেখা যায় বোকা ছেলে, মন্দ হবার মতো বুদ্ধি নেই বলে ভালো ছেলে হয়ে দিন পার করছে। তাছাড়া ভালো ছেলের কনসেপ্টও পাল্টে গেছে।

    যাকে পেয়েছ সে-কি সব দিকে পারফেক্ট?

    এখন পর্যন্ত তো তাই মনে হচ্ছে। তুই নিজে দেখ।

    আমি নিজে কীভাবে দেখব?

    ছেলেটাকে এখানে আসতে বলেছি। জহির চিটাগাং থেকে আসার সময় তাকে নিয়ে আসবে।

    ও!

    মনে হচ্ছে খুব উৎসাহ বোধ করছিস না। রূপা কিছু বলল না। রফিক সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, ছেলেটাকে আমি দেখেছি। কথা বলেছি। আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। চমৎকার ছেলে।

    চমৎকার একটা ছেলে আমার মতো একটা গ্রামের মেয়েকে বিয়ে করবে। কেন? বিয়ে করবে। কারণ তুইও চমৎকার একটা মেয়ে। ছেলেটা এখানে আসছে। তোর লজ্জায় লজ্জাবতী হয়ে থাকার কোনো কারণ নেই। তোরা কথাবার্তা বলবি। গল্প করবি। ছেলেটাকে গ্রাম দেখাবি এতে দোষের কিছু নেই। বুঝতে পারছিস আমার কথা?

    পারছি।

    কিছু বলবি?

    ভাইয়া, ধর আমার ছেলেটাকে পছন্দ হলো। ছেলেটার আমাকে পছন্দ হলো না। তখন?

    তখন বিয়ে হবে না।

    তখন কি আমার খারাপ লাগবে না?

    রফিক কিছু বলার আগেই মিনু বলল, মোটেই খারাপ লাগবে না। কারণ তোমাকে যেই দেখবে সেই পছন্দ করবে। তুমি যে কী সুন্দর হয়েছ তা তুমি নিজেও জানো না।

    রূপা বলল, তুমি জেগে ছিলে?

    হ্যাঁ, জেগে ছিলাম। ঘুমের ভান করে দেখতে চাচ্ছিলাম তোমরা ভাইবোনরা কীভাবে কথা বলো।

    কীভাবে বলি?

    স্মাটলি বলো। সহজ স্বাভাবিক। লজ্জা-টজার কোনো বালাই নেই। শুনতে ভালোই লাগল। কে বলবে তুমি জীবন কাটিয়েছ গ্রামে।

    রফিক বলল, চল উঠা যাক। আমারো ঘুম পাচ্ছে।

    মিনু বলল, না তুমি আরো খানিকক্ষণ বস। রূপা চলে যাক। আমরা দুজন খানিকক্ষণ গল্প করি। আর রূপা শোন, জেবা বলছিল সে আজ রাতে তোমার সঙ্গে ঘুমোবে। সে হয়তো তোমার বিছানায় গম্ভীর মুখে বসে আছে। ও তোমার সঙ্গে ঘুমোলে অসুবিধা হবে না তো?

    অসুবিধা কী।

    মিনু দুঃখিত গলায় বলল, মাঝে মাঝে জেবা দুঃস্বপ্ন দেখে বিকট চিৎকার করে। ওর এই ব্যাপারটার সঙ্গে তুমি পরিচিত না। ভয় পেতে পোর।

    আমি এত সহজে ভয় পাই না ভাবি।

    রফিক ইতস্তত করে বলল, জেবার মধ্যে কিছু কিছু পাগলামি ভাব আছে। রূপা, তুই ওর কোনো কথায় বেশি গুরুত্ব দিবি না। যা বলে মেনে নিবি। ওকে নিয়ে আমরা একটু সমস্যায় আছি। ঢাকায় নিয়ে ডাক্তার দেখাব।

    রূপা বলল, তোমরা শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করছি। জেবা চমৎকার মেয়ে। দেখো অল্পদিনেই আমি ওকে ঠিকঠাক করে দেব।

    জেবা এখনো ঘুমোয় নি।

    একটা বালিশ কোলে নিয়ে পা তুলে বিছানায় বসে আছে। মানুষ না, যেন সুন্দর পাথরের একটা মূর্তি। রূপা বলল, কী-রে এখনো জেগে আছিস? শুয়ে পড়।

    জেবা যেমন বসে ছিল তেমনি বসে রইল। শীতল গলায় বলল, ফুপু আমাকে তুমি করে বলবেন। কেউ আমাকে তুই করে বললে ভালো লাগে না।

    কণা হাসতে হাসতে বলল, আদর করে তুই বলছিলাম। আর বলব না। জেবা, তুই ছাড়া আর কোন কোন জিনিস তোমার ভালো লাগে না বলে ফেল তো, জেনে রাখি!

    কেউ মিথ্যা কথা বললে আমার ভালো লাগে না।

    আচ্ছা। ভুলেও আমি তোমার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলব না। খুব সাবধানে থাকব।

    কেউ গায়ে হাত দিয়ে আদর করলেও আমার ভালো লাগে না।

    কখনো তোমার গায়ে হাত দিয়ে আদর করব না। তোমার কাছ থেকে সব সময় এক হাত দূরে থাকব। রাতে ঘুমোবার সময় যদি গায়ের সঙ্গে গা লেগে যায়। তাতে অসুবিধা নেই তো?

    অসুবিধা আছে।

    শোবার সময় রূপা একটা কোল বালিশ এনে দুজনের মাঝখানে রাখতে রাখতে বলল, এই কোল বালি, টা হচ্ছে আমাদের সীমানা। একপাশে থাকবে তুমি একপাশে আমি। এবাব ঠিক আছে। জেবা?

    হ্যাঁ, ঠিক আছে।

    এখন আরাম করে ঘুমোও।

    জেবা বলল, আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে ফুপু।

    রূপা হাই তুলতে তুলতে বলল, তোমাকেও আমার পছন্দ হয়েছে। তুমি একটু অদ্ভুত! তাতে কী! অদ্ভুত মানুষই আমার ভালো লাগে। আমার একজন স্যার আছেন, তিনিও অদ্ভুত। আমি তাঁকেও খুব পছন্দ করি।

    আমি জানি।

    কীভাবে জানো?

    জেবা অস্পষ্টভাবে হাসল, কিছু বলল না। রূপা বলল, তুমি তো আমার প্রশ্নের জবাব দিলে না।

    আমি সব প্রশ্নের জবাব দিই না।

    প্রশ্নের জবাব না দেয়াটা তো অভদ্রতা।

    প্রশ্ন করাও তো অভদ্রতা।

    তা ঠিক। প্রশ্ন করার মধ্যেও এক ধরনের অভদ্রতা আছে।

    জেবা বলল, ফুপু আপনি ইচ্ছা করলে আমার গায়ে হাত দিয়ে আদর করতে পারেন। আমি রাগ করব না।

    আচ্ছা, জানা রইল। এখন ঘুমাও।

    আর আমি সব সময় আপনার দলে থাকব।

    আমার দল মানে?

    জেবা শান্ত গলায় বলল, এ বাড়িতে দুটো দল হবে। আপনার একাব একটা দল। আর বাকি সবাব একটা দল। অন্য দলটি চাইবে একটা ছেলের সঙ্গে আপনার বিয়ে দিতে। আপনি চাইবেন না…।

    এই সব তুমি কী বলছ? এমন সব অদ্ভুত কথা তোমার মাথায় ঢুকল কীভাবে?

    বলব না।

    জেবা পাশ ফিরল এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ল। রূপার ঘুম এলো না। এগারো বছরের এই বাচ্চা মেয়ে কী বলছে, কোথেকে বলছে? নিশ্চয়ই বড়দের কথা শুনে শুনে নিজের মনে একটা-কিছু দাঁড়া কবিয়েছে। শিশুদের মনেব জগৎ খুব সহজ নয়। নামান জটিল কর্মকাণ্ড সেই জগতে হয়। শিশুবা তার খবর কখনো বড়দেব বালে না।

    প্রতি মাসের তিন তা বিখ নীলগঞ্জ হাইস্কুলের দপ্তরি কালিপদ বাড়ি ভাড়া বাবদ মবিনুর রহমানের কাছ থেকে একশটা টাকা পায়। টাকাটা নিতে কালিপদের খুবই লজ্জা লাগে। যি বাড়িতে তার মতো দরিদ্র ব্যক্তি নিজে থাকতে পারে না সেই বাড়ি ভাড়া বাবদ একশ টাকা নেয়া কি অন্যায় না? বাড়িটি মানুষ বাসের যোগ্য না। একটা মাত্র ঘর কোনো রকমে টিকে আছে। তারও কড়িবারগা ঝুলে আছে। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পাবে। যদি ঘটে। সে কী জবাব দেবে? লোকে তো তাকেই ধরবে? হেড স্যার তাকে জিজ্ঞেস করবেন, কালিপদ তুমি জেনেশুনে এই বাড়ি কী করে ভাড়া দিলে? থানার বড় দারোগা সাহেবও তাকে থানায় ধরে নিয়ে যেতে পারেন।

    ঘর যদি ভেঙে না-ও পড়ে, সাপেব কামড়েও তো মানুষটা, মরতে পারে। চারদিকে সাপ কিলবিল করছে। তার ছোট মেয়েটা মরুল সাপের কামড়ে।

    কালিপদ অবশ্যি সাপের কথা মবিন স্যারকে বলেছে। তিনি উদাস গলায় বলেছেন, সাপ আছে থাক না। অসুবিধা কী? সাপদের ও তো বাঁচাব অধিকার আছে। ওরাও একটা প্রজাতি।

    সারের কথাবার্তার ঠিক নেই। সাপ আর মানুষ এক হলো! সাপ কি স্কুলে পড়াশোনা করে? বিএ, এমএ পাস করে?

    ত এই সব কথা স্যারকে কে বলবে? কালিপদের বলার ইচ্ছা করে। সাহসে কুলায় না। সার হচ্ছেন জ্ঞানী মানুষ। জ্ঞানী মানুষের সঙ্গে সে মহামুর্থ দপ্তরি কী কথা বলবে? তবে একটা ভালো ব্যাপার হচ্ছে মবিন স্যারের সঙ্গে সব কথা বলা যায়। তিনি চুপ করে শোনেন। এমনভাবে শোনেন যেন খুব জ্ঞানী একজন মানুষের কথা শুনছেন। হেড স্যারের মতো কথার মাঝখানে ধমক দেন না। কথার মাঝখানে বলেন না–চুপ কর গাধা।

    আজ মাসের সাত তারিখ। এ মাসের বাড়ি ভাড়া বাবদ একশ টাকা কালিপদ এখনো পায় নি। মবিন স্যার স্কুলে আসছেন না। অথচ টাকাটা তার বিশেষ প্রয়োজন। সে ঠিক করুল মবিন স্যারের সঙ্গে দেখা করতে যাবে। টিফিন টাইমে হেড স্যারকে বলে ছুটি নেবে। তার ধারণা ছুটি চাইলে হেড স্যার না বলবেন না। কারণ তাঁর অনেক কাজ সে করে দেয়। গত মাসে হেড স্যার একটা দুধেল গাই কিনেছেন। সেই গাইয়ের জন্য ঘাস কেটে আনাব সব দায়িত্ব তার। এই দাযিত্ব সে নিঃশব্দে পালন করে। এমনভাবে করে যে তাকে দেখলে মনে হতে পারে এই দায়িত্ব পালন করতে পেরে সে বিমলানন্দ উপভোগ করছে। অবশ্যি কারো জন্যে কিছু করতে কালিপদের খারাপ লাগে না। ভালোই লাগে। মবিনুর রহমান স্যারের জন্যেও তার সব সময় কিছু করতে ইচ্ছা করে। এখন পর্যন্ত তেমন কিছু করার সুযোগ পায় নি।

    টিফিন পিরিয়ডে কালিপদ হেড স্যাবের ঘরে ঢুকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। একজন জ্ঞানী মানুষকে নিজ থেকে কিছু বলা মুশকিল। হেড স্যার বললেন, কী ব্যাপার কালিপদ?

    কালিপদ মাথা চুলকাতে লাগল।

    কিছু বলবো?

    একটা কাজ ছিল স্যার।

    তোমার আবার কী কাজ? তোমার কাজ তো একটাই। স্কুলের বাবান্দায় হাঁটাহাটি করা।

    কালিপদের মন খারাপ হয়ে গেল। স্কুলের শতেক কাজ সে করে, তারপরেও কেউ যদি বলে তার কাজ শুধু হাঁটাহাঁটি কবা তাহলে মনে লাগারই কথা।

    ছুটি চাও না-কি?

    জি। টিফিন টাইমে চলে যাব।

    টিফিন চাইমে চলে যাব? মামার বাড়ির আব্দার? স্কুলটা কী তোমার মামার বাংলা ঘর? যাও যাও বিরক্ত করবে না।

    কালিপদ হতভম্ব হয়ে বের হয়ে এলো। আজ সকালেও সে হেড স্যারের একগাদা কাজ করেছে। হেড স্যারের গাইয়ের জন্যে ঘাস কেটে দিয়ে এসেছে। পুঁই গাছের জন্যে মাচা বেঁধেছে।

    কালিপদ লক্ষ করল তার অসম্ভব রাগ হচ্ছে। রাগ হলেই তার হাত-পা কাঁপতে থাকে। এখনো তার হাত-পা কাঁপছে সে রাগ কমানোর জন্য বড় একটা বালতি নিয়ে পানি আনতে রওনা হলো। কাজকর্মে ব্যস্ত থাকলে রাগ কমে যায়। হেড স্যার হচ্ছেন জ্ঞানী মানুষ, স্কুলের প্রধান। তার উপর রাগ করা উচিত না।

    স্কুলের টিউব ওয়েলটা নষ্ট। অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়। টিউবওয়েলটা ঠিক করা উচিত। কেউ ঠিক করছে না। সামান্য একটা ওয়াসারের জন্য টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কালিপদ ঠিক করে ফেলল। ময়মনসিংহ যাওয়া হলে সে নিজেই একটা ওয়াসার কিনে আনবে। এতে একটা ভালো কাজ করা হবে। সে তার জীবনে ভালো কাজ কিছুই করে নি। কখন ডাক এসে যাবে কে জানে। চিত্রগুপ্ত খাতা খুলে বসে আছেন। ডাক এলেই হাজিরা দিতে হবে। যমরাজ বলবেন, ওহে কালিপদ, তুমি মর্ত্যধামে ভালো কর্ম কী কী করিয়াছ? সে তখন বলতে পারবে, স্যার স্কুলের টিউবওয়েলের জন্য একটা ওয়াসার কিনেছি।

    ইহা ছাড়া অন্য কোনো সৎকর্ম কি আছে?

    জি-না।

    খারাপ কর্ম কী কী করিয়াছ?

    খারাপ কাজ কিছু করি নাই স্যার।

    এইটাই কালিপদের একমাত্র ভরসা।

    সে খারাপ কিছু করে নি। করবেও না।

    কালিপদ পানির ভারি বালতি স্কুলের বারান্দায় রাখতে রাখতে লক্ষ করল যে, তার রাগ কমে গেছে। সে স্বস্তি বোধ করল। রাগ বেশিক্ষণ পুষে রাখা ঠিক না। তাছাড়া হেড স্যার অনায্য কিছু বলেন নি। সত্যি তো স্কুল কি আর তার মামার বাড়ির বাংলা ঘর?

    কালিপদ পানির বালতি রেখে মুড়ি কিনতে গেল। স্যারদের জন্যে টিফিন তৈরি হবে। এক সের মুড়ি, তিন ছটাক বাদাম। মুড়ি বাদাম, পেঁয়াজ, কাচামরিচ দিয়ে মাখানো হবে। খুব ঝাল হতে হবে। শিক্ষকরা টিফিন টাইমে তা খাবেন। তেল মরিচ দিয়ে মুড়ি মাখানো কোনো জটিল কাজ না। বাদামের খোসা ছড়ানোর কাজটা জটিল। কালিপদের আঙুলে তেমন জোর নেই। ভারী কাজ করতে কষ্ট হয় না। কিন্তু বাদামেব খোসা ছাড়ানোর মতো ছোট কাজ করতে কষ্ট হয়।

    কালিদেব মন এখন একটু বিষন্ন, কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে একগাদা কঠিন কথা শুনতে হবে। স্যাররা যখন ঝালমুড়ি খান তখন কালিপদকে অনেক কথা শুনতে হয়।

    যেমন–

    লবণ দিয়ে তো বিষ বানিয়ে ফেলেছ। এতদিনেও মুড়ি বানানো শিখলে না।

    বালি কিচকিচ করছে, ব্যাপারটা কী? এর মধ্যে খুব কম হলেও এক পোয়া বালি আছে।

    নাতাচ্যাত মুড়ি কোথেকে কিনলে? মুড়িও চেন না?

    এইসব কথার কোনো জবাব কালিপদ দেয় না। মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। মনে মনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। শুধু দুজন লোক কখনো তাকে কিছু বলেন না। একজন মবিনুর রহমান, অন্যজন জালালুদ্দিন স্যার। মুড়ির বাটি জালাল স্যারের সামনে রাখা মাত্র তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ পাক তোমার ভালো করুন কালিপদ।

    আজও তাই বললেন।

    কালিপদ বলল, স্যারের শরীর ভালো?

    হ্যাঁ, শরীর ভালো। মনটা ভালো না। শোন কালিপদ, তোমরা জন্য একটা চিঠি আছে।

    কালিপদ বিস্মিত হয়ে বলল, চিঠি?

    হুঁ। চিঠি। গতকাল মবিনের কাছে গিয়েছিলাম। সে তোমাকে চিঠি দিয়েছে। চিঠি পড়তে পোর?

    জি স্যার, পারি। উনার শরীর কেমন?

    বেশি ভালো না।

    মুখ বন্ধ খাম নিয়ে কালিপদ আড়ালে সরে গেল। চিঠি পড়তে পারে কি-না এটা জিজ্ঞেস করায় সে মনে কষ্ট পেযেছে। স্কুলে চাকরি করে আর সে একটা চিঠি পড়তে পারবে না? ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছে। বাবা মরে যাওয়ায় আর পড়াশোনা হলো না। জালাল স্যার পুরনো লোক। উনি কেমন কবে এই ভুল করেন?

    কালিপদ টিউবওয়েলের পাশে বসে পরপর চারবার চিঠিটা পড়ল।

    কালিপদ,

    অমি খুব লজ্জিত যে যথাসময়ে তোমাকে বাড়ি ভাড়া বাবদ একশ টাকা দিতে পারি নি। আমার মনে ছিল তবু দেয়া হয় নি। শরীর বিশেষ ভালো না বলে স্কুলে যাচ্ছি না। তোমার সঙ্গে দেখাও হচ্ছে না। তোমার অসুবিধা সৃষ্টি করায় আমি ক্ষমাপ্রার্থী। এখন টাকাটা পাঠালাম।

    ইতি

    মবিনুর রহমান

    কালিপদের চোখে পানি এসে গেল। মবিন স্যারের মতো একজন জ্ঞানী লোক বলছেন ক্ষমাপ্রার্থী। সে কে? সে কেউ না। সে একজন অধম দপ্তরি।

    কালিপদ ঠিক কবে ফেলল। আজ সন্ধ্যায় স্যারকে দেখতে যাবে। খালি হাতে যাবে না। কিছু-একটা নিয়ে যাবে। পাকা পেঁপে, কলা। শরীব বেশি খারাপ দেখলে বাতে থেকে যাবে। যদিও ঐ মাডিতে থাকতে তার ভয় লাগে। সাপের ভয়। যত ভয়ই লাণ্ডক সে যাবে। হেড স্যারের গাইকে ঘাস এনে দিয়েই রওনা হবে।

    সন্ধ্যাব পরপর কালিপদের যা য়া হলো না। কারণ হেড স্যার হঠাৎ সদরে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। তাঁর সুটকেস স্টেশন পর্যন্ত দিয়ে আসতে হবে। স্টেশন এখান থেকে পাঁচ মাইলের মতো দূরে।

    কালিপদ বিনা বাক্যব্যয়ে স্টেশনের দিকে রওনা হলো।

    সদরে যাচ্ছি কেন জানিস না-কি কালিপদ?

    জে না।

    ডিইও সাহেব খবর পাঠিয়েছেন। মবিন সাহেবের গম চুরির ব্যাপারে কথা বলতে চান। ঘটনা শুনে উনি খুবই ক্ষিপ্ত। আমাকে বললেন–শুধু চাকরি থেকে ডিসমিস করলে এতবড় অপরাধের শাস্তি হয় না। অপরাধীকে জেলে ঢুকাতে হবে। আমি অবশ্যি বলেছি মানী লোক একটা ভুল করেছে। বাদ দেন। ডিইও সাহেব শুনতে চান না।

    কালিপদ কিছু বলল না। গম চুরির কথা সে শুনেছে। একশ বস্তা গম স্কুলে দেয়া হয়েছিল। মবিন স্যার দস্তখত করে এনেছেন। কিন্তু একশ বস্তা না, এনেছেন মাত্র দশ বস্তা। এই নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হচ্ছে। স্বয়ং ভগবান যদি স্বৰ্গ থেকে নেমে এসে কালিপদকে বলেন–মবিনুর রহমান গম চুরি করেছে–কালিপদ বিশ্বাস করবে না। তবে তার বিশ্বাস-অবিশ্বাসে কী যায় আসে? সে হলো মুর্থ দপ্তরি। স্কুলে ঘণ্টা দেয়া ছাড়া সে কিছুই জানে না।

    কালিপদ!

    জি স্যার।

    মানুষের চেহারা দেখে বুঝা মুশকিল। তার ভেতরটা কেমন। মবিনকে দেখ কে বলবে–ভেতরে ভেতরে সে এত বড় শয়তান।

    কালিপদ চুপ করে রইল। কথা বলার কোনো অর্থ হয় না।

    ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। এইটাই নিয়ম। নিয়তি কঠিন জিনিস। নিয়তির হাত এড়ানো মুশকিল। লখিন্দরের নিয়তি ছিল সাপের হাতে মরা। মরাল কি-না বল। লোহার ঘর বানিয়ে লাভ হয়েছিল?

    ট্রেন এলো রাত দশটায়। আটটায় আসার কথা–দুঘণ্টা লেট। এই দুঘণ্টা কালিপদ স্টেশনে বসে রইল। হেড স্যারকে রেখে চলে আসা যায় না। মালপত্র তুলে দিতে হবে।

    বাড়ি ফিরতে ফিরতে এগারোটা বেজে গেল। এত রাতে মবিন স্যাবের কাছে যাওয়া ঠিক না। স্যার হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন। অসুস্থ মানুষ সকাল সকাল ঘুমোতে যাদ্ধার কথা।

    তবু কালিপদ ভাবল, একবার যখন ঠিক করেছে যাবে–যাওয়াই উচিত।

    স্যার ঘুমিয়ে থাকলে চলে আসবে। অসুবিধা তো কিছুই নেই।

    মবিনুর রহমান ঘুমান নি। তিনি তাঁর দুরবিন ফিট করেছেন। দুরবিন তাক করা হয়েছে অনুরাধা নক্ষত্রেব দিকে। প্রাচীন ভারতে অনুরাধা একটি বিশেষ নক্ষত্র। তখন নিয়ম ছিল বিয়ের পর স্ত্রীকে সন্ধ্যাবেলা অনুরাধা নক্ষত্ৰ দেখিয়ে বলতে হবেঅনুরাধার মতো দৃঢ়চিত্ত ও পূত চরিত্রের হও। তারপরই শুধু স্ত্রীকে ঘরে নেয়া যাবে।

    আগে নয়।

    কালিপদ বলল, স্যার কী করেন?

    মবিন সাহেব দুরবিন থেকে চোখ না। সরিয়েই বললেন, অনুরাধা নক্ষত্ৰ দেখি। খুব উজ্জ্বল নক্ষত্র। আলো স্থির হয়ে থাকে।

    তিনি এমনভাবে কথা বলছেন যেন কালিপদের জন্য অপেক্ষা কবছিলেন। রাতদুপুরে তার উপস্থিতি হওয়ায় মোটেই বিস্মিত হন নি।

    কালিপদ!

    জি স্যার।

    দেখবে না-কি?

    কী দেখব স্যার?

    অনুরাধা নক্ষত্র। দেখ, এইখানে চোখ লাগাও। বাঁ চোখ বন্ধ করা।

    কালিপদ দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থেকেও কিছুই দেখতে পেল না। মবিন সাহেব যখন বললেন, দেখা যাচ্ছে? কালিপদ শুধুমাত্র তাকে খুশি করার জন্য বলল, জি স্যার। বড়ই সৌন্দৰ্য।

    হ্যাঁ, সুন্দর তো বটেই। বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের পুরোটাই সুন্দর। প্রকৃতি অসুন্দর কিছু তাঁর জগতে স্থান দেন নি।

    কালিপদ প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলল, আপনার খাওয়া-দাওয়া হয়েছে স্যার?

    না। রান্না কবি নি এখনো।

    আপনি স্যার কাজ করেন, আমি রান্না করে ফেলি।

    আচ্ছা।

    ঘরে তেল মসলা আছে তো স্যার?

    সব আছে। গতকাল বাজার কবেছি।

    আপনার শরীর শুনেছিলাম খারাপ।

    না। শরদি ঠিক আছে। মাঝে মাঝে শুযঙ্কর সব স্বপ্ন দেখি, তখন সব উলট-পালট হয়ে যায়।

    কী দেখেন?

    দেখি কয়েকটা বুড়ো মানুষ। এদের শরীর দেখা যায় না, শুধু মুখ দেখা যায়। এরা এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।

    দেখতে কেমন স্যার?

    লম্বা মুখ। সামান্য দাড়ি আছে…

    বলতে বলতে মবিনুর রহমান অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন। ক্লান্ত গলায় বললেন, কালিপদ।

    জি স্যার।

    রূপাকে আজ পড়াতে যাওয়ার কথা ছিল, যেতে পারি নি। শবীরটা ভালো লাগছে। না। কয়েকদিন যাব না; আমি একটি চিঠি লিখে রেখেছি, তুমি মেয়েটাকে দিয়ে এসো। কাল ভোর বেলা দিলেই হবে।

    জি আচ্ছা স্যার।

    চিঠি খুব সাদামাটা–

    রূপা, আমি কয়েকদিন আসতে পারব না। তুমি নিজে নিজে পড়। মন নানান কারণে অস্থির হয়ে আছে। একটু স্থির হলেই আসব।

    চিঠি সাদামাটা হলেও কিন্তু সাদা নাটা নয়। চিঠির উল্টো পিঠে তিনি অসংখ্যাবার লিখেছেন–রূপা, রূপা। এর পেছনেও একটা লজিক আছে। বল পয়েন্টের কলমে কালি আটকে যাচ্ছিল, তিনি কলম ঠিক করার জন্যেই রূপা রূপা লিখেছেন। অন্য কিছুও লিখতে পারতেন। লিখেন নি কারণ চিঠিই যেহেতু রূপাকে লিখবেন সেহেতু তার নামই মনে এসেছে। আবার এও সত্যি যে, এই নামটাই তিনি অসংখ্যবার লিখতে চেয়েছেন। অজুহাত হিসেবে ভাবছেন কলমে কালি আটকে যাচ্ছে বলে অসংখ্যবার রূপার নাম লিখতে হয়েছে। কোনটা সত্যি কে জানে, হয়তো সবটাই সত্যি।

     

    এই বিশেষ চিঠিটি রূপার হাতে আসার আধঘণ্টা আগে মজার একটা ব্যাপার হলো। জেবা এসে বলল, ফুপু, কিছুক্ষণের মধ্যে তুমি এমন একটা কিছু পাবে যে আনন্দে তোমার মরে যেতে ইচ্ছা করবে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা হবে।

    কী পাব?

    কী পাবে তা জানি না, তবে কিছু-একটা পাবে।

    রূপা বিরক্ত হয়ে বলল, কী যে অদ্ভুত কথা তুমি বলে।

    তার কিছুক্ষণ পর কালিপদ চিঠিটা দিল। রূপার আনন্দে মরে যেতে ইচ্ছা করল। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করল। ইচ্ছা করল পৃথিবীর সব মানুষকে ডেকে বলে— দেখ, তোমরা দেখ, স্যার কতবার আমার নাম লিখেছেন।

    রূপার চোখে পানি এসে গেছে। জেবা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার মুখ ভাবলেশহীন। তবে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীল অপরাজিতা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }