Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র ৫ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প1035 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১.৩ গভীর রাতে জহুরের ঘুম ভাঙল

    গভীর রাতে জহুরের ঘুম ভাঙল মেশিনগানের গুলির শব্দে। শুধু মেশিনগানের গুলির শব্দ নয়, তার সাথে অনেকগুলো হেলিকপ্টারের শব্দ। সে অনেক মানুষের গলার আওয়াজ এবং মানুষের ছোটাছুটির শব্দও শুনতে পেল। জহুর কখনো কোনো যুদ্ধ দেখেনি কিন্তু তার মনে হলো এই দ্বীপটা হঠাৎ একটা যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে গেছে এবং এটাকে সৈন্যরা আক্রমণ করেছে।

    জহুর ডর্মিটরিতে যে ঘরটিতে ঘুমুচ্ছিল সেখানে তার বিছানা ছাড়াও আরো তিনটি বিছানা ছিল। সেই বিছানাগুলোতে তার মতোই আরো কয়েকজন মানুষ ঘুমিয়েছিল এবং হেলিকপ্টার আর মেশিনগানের শব্দ শুনে তারাও লাফিয়ে উঠে বসে এবং আতঙ্কে ছোটোছুটি শুরু করে দেয়। তাদের ছোটাছুটি দেখে জহুরের কেমন যেন হাসি পেয়ে যায়, সে নিচু গলায়। তাদেরকে বলল, আপনারা শুধু শুধু ছুটোছুটি করবেন না-মেঝেতে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকেন।

    একজন কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, যদি কিছু হয়?

    হবে না। এখানে ডাকাত পড়েনি, পুলিশ মিলিটারি এসেছে।

    মানুষগুলো মেঝেতে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়তে পড়তে বলল, আপনি কেমন করে জানেন?

    আমি জানি। এই দেশের কোনো ডাকাতের দলের হেলিকপ্টার নাই।

    জহুর তার শার্ট প্যান্ট পরল, জুতো পরল। একজন সেটা দেখে জিজ্ঞেস করল, আপনি কী করেন?।

    বাইরে যাই। দেখে আসি কী হচ্ছে।

    সর্বনাশ! যদি কিছু হয়?।

    কিছু হবে না। আমি চোরও না, ডাকাতও না। আমার কিছু হবে কেন?

    জহুর ভূমিটরির দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে এলো। দ্বীপের মাঝামাঝি হাসপাতালের গেটের সামনে বেশ কিছু মানুষের ভিড়, অন্ধকারে ভালো দেখা যায় না, তবে মনে হয় অস্ত্র হাতে অনেক পুলিশ আর মিলিটারি। তারা। কোনো খবর পেয়ে এখানে এসেছে। ঠিক কেন এসেছে, কাকে ধরতে এসেছে জহুর কিছুই জানে না কিন্তু সে অনুমান করতে পারল নিশ্চিতভাবেই তারা প্রথমেই ডক্টর কাদেরকে ধরবে। জহুর হঠাৎ করে বুঝতে পারল ডক্টর কাদের সম্ভবত তার গোপন সুরঙ্গ দিয়ে এখন হাসপাতালের ভেতর থেকে সরাসরি দ্বীপের কিনারায় এসে স্পিডবোটে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।

    জহুরের মনে হলো পুলিশ মিলিটারির দলটাকে সেটা জানানো উচিত। কিন্তু তার মতো চেহারার এত সাধারণ একজন মানুষের কথাকে পুলিশ মিলিটারি কোনোভাবেই গুরুত্ব দেবে না, উল্টো সে নিজে অন্য ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে। তার থেকে বুদ্ধিমানের কাজ হবে সোজাসুজি সেই গোপন সুরঙ্গের আশেপাশে থেকে দ্রক্টর কাদেরকে ধরে ফেলা। জুহুর তাই আর দেরি করল না, আবছা অন্ধকারে খোয়া ঢাকা পথে পা চালিয়ে সমুদ্রের তীরের দিকে ছুটে চলল।

    অন্ধকারে জায়গাটা চিনতে একটু সমস্যা হচ্ছিল কিন্তু মোটামুটি অনুমান করে জহুর শেষ পর্যন্ত ঠিক জায়গায় এসে উপস্থিত হলো। স্পিডবোটের কাছাকাছি একটা গাছের আড়ালে সে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে। হাতে কোনো ধরনের একটা অস্ত্র থাকলে ভালো হতো কিন্তু সে রকম কিছু না পেয়ে জহুর একটা শুকনো ভাল কুড়িয়ে নেয়। তার ধারণা সত্যি হলে কোনো একটা গোপন দরজা খুলে ডক্টর কাদের বের হয়ে এখন এদিকে এগিয়ে আসবে।

    জহুর দ্বীপের মাঝখানে হাসপাতালের ভেতর অনেক মানুষের কথাবার্তা শুনতে পায়। পুলিশের হুঁইসেল বুটের শব্দ এবং হঠাৎ হঠাৎ গুলির আওয়াজ। গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে থেকে জহুর যখন আশা প্রায় ছেড়ে দিচ্ছিল তখন হঠাৎ করে বালুতে ঢেকে থাকা একটা দরজা সরিয়ে সেখান দিয়ে একটা ছায়ামূর্তি বের হয়ে আসে। অন্ধকারে ভালো দেখা না গেলেও মানুষটি যে ডক্টর কাদের সেটা বুঝতে জহুরের একটুও দেরি হলো না। সে গাছের নিচে ঘাপটি মেরে বসে থেকে বোঝার চেষ্টা করে কী ঘটছে।

    ডক্টর কাদের কয়েকটা ব্যাগ আর কাগজপত্রের প্যাকেট নিয়ে মাথা নিচু করে স্পিডবোটের কাছে এগিয়ে আসে। সেগুলো স্পিডবোটে তুলে যখন সে দ্বিতীয়বার আরো কিছু জিনিস আনতে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন জহুর পেছন থেকে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। জহুরের ধাক্কায় ডক্টর কাদের মুখ থুবড়ে বালুর ওপর পড়ে যায়, জহুর এতটুকু দেরি না করে তার পিঠে চেপে বসে একটা হাত পেছনে টেনে আনে। ডক্টর কাদের যখন যন্ত্রণার একটা শব্দ করল তখন জহুর থেমে গিয়ে বলল, আমার ধারণা আপনি এখন আর নড়াচড়া করবেন না। করে লাভ নেই।

    ডক্টর কাদের গোঙানোর মতো একটা শব্দ করল। জহুর ডক্টর কাদেরের কোমরে হাত দিয়ে উৎফুলু গলায় বলল, চমৎকার। বেল্ট পরে এসেছেন। আপনার হাত বাঁধার জন্যে কিছু একটা খুঁজছিলাম।

    ডক্টর কাদের একটু ছটফট করার চেষ্টা করল, কিন্তু জহুর তাকে কোনো সুযোগ দিল না, শক্ত করে বালুর মাঝে চেপে রাখল। কোমর থেকে বেল্টটা খুলে সে তার হাত দুটো পেছনে নিয়ে বেঁধে ফেলে সন্তুষ্টির গলায় বলল, হাতগুলো ব্যবহার করতে না পারলে দৌড়াদৌড়ি করা যায় না। আমার ধারণা এখন আপনি আর পালানোর চেষ্টা করবেন না।

    ডক্টর কাদের বালু থেকে মুখ সরিয়ে বলল, আপনি কে?

    জহুর বলল, আপনি আজ দুপুরে আমার ইন্টারভিউ নিলেন—চাকরি দিতে চাইলেন—

    আমি জানি। আসলে আপনি কে?

    আমি আসলে কেউ না। খুবই সাধারণ একজন মানুষ!

    ডক্টর কাদের মুখ থেকে বালু বের করার চেষ্টা করতে করতে বলল, আপনি যদি আমাকে ছেড়ে দেন, চলে যেতে দেন তাহলে যত টাকা চান তত টাকা দেব। আপনার সাথে আমি একটা ডিল করতে চাই

    জহুর তার পকেট থেকে ময়লা একটা রুমাল বের করে ডক্টর কাদেরের চোখ দুটো বেঁধে ফেলে বলল, এখন চোখ দুটোও বেঁধে ফেলেছি—হঠাৎ করে দৌড় দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও সেটা করতে পারবেন নী। রুমালটা একটু ময়লা সে জন্যে কিছু মনে করবেন না—

    ডক্টর কাদের কাতর গলায় বলল, আমার কথা একটু মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ, কেউ আমাকে শেষ পর্যন্ত কিছু করতে পারবে না—শুধু শুধু একটু ঝামেলা হবে। আপনি যদি আমাকে একটু সহযোগিতা করেন আপনারও লাভ, আমারও লাভ। আমি পেমেন্ট করব ডলারে। ক্যাশ! এক্ষুনি।

    জহুর ডক্টর কাদেরকে টেনে নিজের পায়ের উপর দাঁড় করিয়ে বলল, আমি চাষাভূষো মানুষ। টাকা-পয়সা সে রকম নাই। কোনোদিন নিজের চোখে ডলারও দেখি নাই। সব সময় জানার ইচ্ছে ছিল একজন হারামির বাচ্চা আরেকজন হারামির বাচ্চাকে ঘুষ দেয়ার সময় কীভাবে সেটা দেয়। কীভাবে কথা বলে। আপনার কথা থেকে সেটা এখন বুঝতে পারলাম—কথাবার্তা হয় সোজাসুজি—

    ডক্টর কাদের বলল, আপনি ঠিক বুঝতে পারছেন না।

    জহুর পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে বলল, সেটা সত্যি কথা। মনে হয় বুঝতে পারছি না। আপনি বোঝান–দেখি বুঝি কি না। তবে হাঁটতে হাঁটতে বোঝান। যারা আপনাকে ধরতে এসেছে আপনাকে তাদের হাতে না দেয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না। বলেন কী বলবেন—

    ডক্টর কাদের কোনো কথা বলল না, হঠাৎ করে সে বুঝতে পেরেছে তার কথা বলার কিছু নেই। তার চোখ রুমাল দিয়ে বাঁধা তাই সে কিছু দেখতে পাচ্ছে না—দেখতে পেলেও কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হতো না, তার ভবিষ্যটুকু এ রকম অন্ধকারই দেখা যেত।

     

    ডক্টর কাদেরের অফিসে ডক্টর কাদেরের আরামদায়ক নরম চেয়ারেই ডক্টর কাদেরকে বসানো হয়েছে—শুধু একটা পার্থক্য, তার দুই হাতে এখন হ্যান্ডকাফ লাগানো। চোখ থেকে রুমালের বাঁধন খুলে দেয়া হয়েছে, তার ঝকমকে চোখগুলো এখন নিষ্প্রভ। চোখের নিচে কালি, মাথার চুল এলোমেলো, চেহারায় একটা মলিন বিধ্বস্ত ভাব।

    তার সামনে একটা চেয়ারে একজন তরুণ মিলিটারি অফিসার বসে আছে। সে একটু ঝুঁকে পড়ে বলল, আমি শুধু ডক্টর ম্যাঙ্গেলার নাম শুনেছিলাম, এখন নিজের চোখে ডক্টর কাদেরকে দেখতে পেলাম। কথা বলার সময় সে ডক্টর শব্দটাতে অনাবশ্যক এক ধরনের জোর দিল।

    জহুর ঘরের এক কোনায় পঁড়িয়েছিল, ডক্টর কাদেরকে ধরে এনে দেয়ার জন্যে তাকে পুলিশ মিলিটারি অনেকটা নিজেদের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করছে, ঘরের ভেতর থাকতে দিয়েছে। জহুরের খুব কৌতূহল হচ্ছিল ডক্টর ম্যাঙ্গেলা কে আর ডক্টর কাদেরের সাথে তার কী সম্পর্ক থাকতে পারে সেটা জানার জন্যে, কিন্তু জিজ্ঞেস করতে সংকোচ হচ্ছিল। জহুরের অবশ্যি জিজ্ঞেস করতে হলো না, তরুণ অফিসার নিজেই তার ব্যাখ্যা দিয়ে দিল, বলল, নাৎসি জার্মানিতে ডক্টর ম্যাঙ্গেলা জীবন্ত মানুষকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করত আর আপনি মানুষের জন্ম নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেন। এই হচ্ছে পার্থক্য।

    ডক্টর কাদের কোনো কথা বলল না, পাথরের মতো মুখ করে বসে রইল। ডক্টর কাদেরের ডেস্কের সামনে একটা চেয়ারে বসে থাকা গুরুত্বপূর্ণ চেহারার সাধারণ পোশাকের মাঝবয়সী একজন মানুষ বলল, আপনি কতজন মেয়ের ওপর এই এক্সপেরিমেন্ট করেছেন?

    ডক্টর কাদের এবারেও কোনো কথা বলল না। মাঝবয়সী মানুষটি আবার জিজ্ঞেস করল, কতজন মেয়ের ওপর এই এক্সপেরিমেন্ট করেছেন?

    ডক্টর কাদের বিড়বিড় করে বলল, আমি আমার এটর্নির সাথে কথা বলে আপনাদের কথার কোনো উত্তর দেব না।

    তরুণ অফিসারটি এবারে শান্ত ভঙ্গিতে চেয়ার থেকে উঠে ডক্টর কাদেরের কাছে এগিয়ে গেল, তারপর খপ করে তার চুলের কুঁটি ধরে টেনে এনে ফিসফিস করে বলল, তোমাকে আমি মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি না কাদের ডাক্তার। তোমাকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে আমার এক মিনিটও লাগবে না। তোমাকে যে প্রশ্ন করা হচ্ছে তার উত্তর দাও, তা না হলে এই টেবিলে আমি তোমার নাক-মুখ থেঁতলে ফেলব।

    মাঝবয়সী মানুষটি জিজ্ঞেস করল, ডক্টর কাদের, আপনি কতজন মেয়ের ওপর এক্সপেরিমেন্ট করেছেন?

    ডক্টর কাদের উত্তর না দিয়ে আবার বিড়বিড় করে অস্পষ্ট স্বরে কিছু একটা বলল, শুধু এটর্নি শব্দটা একটু বোঝা গেল। কথা শেষ হওয়ার আগেই তরুণ মিলিটারি অফিসার ডক্টর কাদেরের চুলের খুঁটি ধরে সশব্দে তার মুখটাকে টেবিলে আঘাত করল। যখন চুলের ঝুঁটি ধরে তাকে তুলে আনল তখন দেখা গেল নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। মিলিটারি অফিসার আবার ফিসফিস করে বলল, কাদের ডাক্তার, তুমি ঠিক বুঝতে পারছ না। তোমাকে বিচার করে ফাসিতে ঝুলিয়ে আমার কোনো আনন্দ নেই। কিন্তু এই টেবিলে তোমার মুখটাকে থেঁতলে দিয়ে মাথার ঘিলু বের করে দিলে আমার আনন্দ আছে! মানুষ মারতে হয় না—কি দানবকে মারতে কোনো সমস্যা নাই। কথার উত্তর দাও।

    মাঝবয়সী মানুষটি জিজ্ঞেস করল, আপনি কতজন মেয়ের ওপর এক্সপেরিমেন্ট করেছেন?

    তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ।

    কতজন মারা গেছে।

    অর্ধেকের বেশি।

    কতজন মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে?

    বাকি অর্ধেক।

    মেয়েগুলোকে কোথা থেকে এনেছেন?

    পথঘাট থেকে। গরিবের মেয়ে।

    আপনার এই প্রজেক্টে কে টাকা দিয়েছে?

    আমেরিকার একটা জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি।

    প্রজেক্টের উদ্দেশ্য কী?

    নূতন ধরনের মানুষের জন্ম দেয়া। মানুষের জিনে পশু পাখির জিন মিশিয়ে দিয়ে নূতন ধরনের মানুষ তৈরি করা।

    মাঝবয়সী মানুষ নিঃশ্বাস আটকে রেখে জিজ্ঞেস করল, এখন পর্যন্ত তৈরি হয়েছে কোনো নতুন ধরনের মানুষ?

    পুরোপুরি হয়নি। বেশির ভাগ মেয়েই বিকলাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। জন্ম দিতে গিয়ে বেশির ভাগ মারা গেছে।

    কী রকম বিকলাঙ্গ?

    ডক্টর কাদের কোনো কথা বলল না। মিলিটারি অফিসার ধমক দিয়ে বলল, কী রকম বিকলাঙ্গ?

    নাক চোখ মুখ নেই। হাত-পায়ের জায়গায় শুড়। তিন-চারটা চোখ। দুইটা মাথা। শরীরে আঁশ, এই রকম—

    ক্রুদ্ধ তরুণ অফিসারটি ডক্টর কাদেরের মাথাটি আবার সশব্দে টেবিলে এনে আঘাত করার চেষ্টা করছিল কিন্তু মধ্যবয়স্ক মানুষটি তাকে শেষ মুহূর্তে থামিয়ে দিল। তরুণ অফিসারটি দাঁত কিড়মিড় করে বলল, খুন করে ফেলব। আমি এই বাস্টার্ডকে খুন করে ফেলব।

    মধ্যবয়সী মানুষটি বলল, ঠিক আছে, আপনি খুন করবেন—কিন্তু আগে কয়েকটা কথা শুনে নিই। তারপর আবার ডক্টর কাদেরের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি কেন এগুলো করেছেন?

    শুধু আমি না, সারা পৃথিবীতে সব বৈজ্ঞানিকই এটা করে। এগুলো এক্সপেরিমেন্ট। এক্সপেরিমেন্ট করে করে বৈজ্ঞানিকরা নূতন নূতন জিনিস জানে। আমার এই ল্যাবরেটরি থেকে অনেক নূতন জিনিস আমি জেনেছি।

    যে জিনিস জেনেছেন সেগুলো কোনো জার্নালে ছাপা হয়েছে?

    ডক্টর কাদের কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল। মধ্যবয়স্ক মানুষটি বলল, আমি জানি ছাপা হয় নাই। এগুলো জিনিস ছাপা হয় না। যে জ্ঞান দশজনের কাজে লাগে না সেটা বিজ্ঞান না। বিজ্ঞান মানুষকে নিয়ে এই রকম এক্সপেরিমেন্ট করে না। ডক্টর কাদের—আর যাই করেন আপনি মুখে বিজ্ঞানের কথা বলবেন না। বিজ্ঞানকে অপমান করবেন না।

    ডক্টর কাদের কিছু একটা কলতে গিয়ে থেমে গেল, তার নাক দিয়ে রক্ত বের হয়ে সারা মুখ মাখামাখি হয়ে গেছে। টেবিলে তার মাথাটা ঠুকে দেয়ার পর মনে হয় একটা দাও নড়ে গেছে, মুখের ভেতর রক্ত, সব মিলিয়ে তাকে অত্যন্ত কদাকার দেখাচ্ছে। মধ্যবয়স্ক মানুষটি একটা নিঃশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করল, এখন এই হাসপাতালে যে মেয়েগুলো আছে তাদের কী অবস্থা?

    সবাই প্রেগনেন্ট। টেস্টটিউব বেবি।

    সবার ফেটাসই জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং দিয়ে তৈরি?

    হ্যাঁ।

    কী রকম ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়েছে?

    নানারকম। সরীসৃপের জিনস দেয়া আছে। বানর, কুকুর, ডলফিন। পাখি।

    মধ্যবয়স্ক মানুষটা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তার মানে সবগুলো মেয়ের অ্যাবোরশন করাতে হবে?

    ডক্টর কাদের নিচু গলায় বলল, সবাইকে পারা যাবে না। কেউ কেউ এত অ্যাডভান্সড স্টেজে যে এখন অ্যাবোরশন করানো সম্ভব না।

    তাদের বাচ্চাগুলো হবে পশু আর মানুষের মিশ্রণ?

    হ্যাঁ।

    বাচ্চাগুলো বেঁচে থাকবে?

    কেউ কম কেউ একটু বেশি।

    তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়?

    ডক্টর কাদের মাথা নাড়ল, বলল, নাহ্।

    মেয়েগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়?

    ডক্টর কাদের আবার মাথা নাড়ল, বলল, বিকলাঙ্গ আধা পশু আধা মানুষের বাচ্চা পেটে ধরে বেশির ভাগই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায়। বেঁচে থাকাই তাদের জন্যে এক ধরনের কষ্ট। তাই বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি না।

    তরুণ মিলিটারি অফিসার আবার এগিয়ে এসে কেউ বাধা দেয়ার আগেই ডক্টর কাদেরের মাখার চুল ধরে তার মাথাটি সশব্দে টেবিলে এনে আঘাত করে। ডক্টর কাদের গোঙানোর মতো একটা শব্দ করল। যখন তার মাথাটি উঁচু করা হলো তখন দেখা গেল তার নাকটা হেঁতলে গেছে, সম্ভবত নাকের হাড়টা ভেঙে গেছে। ডক্টর কাদের থুথু ফেলার চেষ্টা করে এবং সেই থুথুর সাথে একটা ভাঙ্গা দাঁত বের হয়ে আসে। ভাঙা দাঁতটির দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ডক্টর কাদের বিড়বিড় করে বলল, আপনারা ঠিক বুঝতে পারছেন না। আমি একজন খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আমার গায়ে হাত দেয়া যায় না। কেউ আমার গায়ে হাত দিতে পারে না।

    কেউ কিছু বলার আগেই তরুণ অফিসারটি ডক্টর কাদেৱের চুলের ঝুঁটি ধরে টেনে তুলে তাকে একটা লাথি দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। এগিয়ে গিয়ে তাকে আরেকটা লাথি মারার আগে অন্যেরা তাকে থামিয়ে দিল। ডক্টর কাদেরের মুখ থেকে এক ঝলক রক্ত বের হয়ে আসে, সে ঠিক এই অবস্থায় ঘোলা চোখে হাসার চেষ্টা করে বলল, তুমি আমার কিছু করতে পারবে না। আমি হচ্ছি বিধাতার মতো। দ্বিতীয় বিধাতা। সারা পৃথিবীতে শুধু আমি নূতন। ধরনের মানুষের জন্ম দিয়েছি। শুধু আমি।

    জহুর এগিয়ে গেল, ডক্টর কাদেরের মুখের কাছে ঝুঁকে পড়ে বলল, তিনশ তেত্রিশ নম্বর কেবিনের মেয়েটির পেটেও কি এ রকম কোনো বাচ্চা আছে?

    আছে।

    কী রকম বাচ্চা?

    পাখি আর মানুষের বাচ্চা।

    পাখি আর মানুষ?

    হ্যাঁ। পাখি আর মানুষ।

    জহুর আরো একটু ঝুঁকে জিজ্ঞেস করল, মেয়েটা কি বাঁচবে?

    জানি না।

    বাচ্চাটা?

    ডক্টর কাদের তাঁর খ্যাতলানো মুখ, ভাঙা নাক এবং রক্তাক্ত মুখে হাসার চেষ্টা করে বলল, জানি না। যদি বাঁচে সে হবে প্রথম ইকারাস।

    জহুর ঠিক বুঝতে পারল না, জিজ্ঞেস করল, কী বললেন?

    বলেছি ইকারাস।

    ইকারাস কী?

    ডক্টর কাদের তার রক্তাক্ত মুখে অসুস্থ মানুষের মতো হাসার চেষ্টা করল, কোনো উত্তর দিল না।

    মধ্যবয়স্ক মানুষটি বলল, ইকারাস হচ্ছে গ্রিক মাইখোলজির একটা চরিত্র। পাখির পালক লাগিয়ে সূর্যের কাছাকাছি উড়ে গিয়েছিল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভূত সমগ্র – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article নাট বল্টু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }