Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র ৫ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প1035 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৬. এই অস্ত্রটার নাম মেগাট্রন

    এই অস্ত্রটার নাম মেগাট্রন। কমবয়সী মানুষটা ভারী অস্ত্রটা হাত বদল করে বলল, কে এর নাম মেগাট্রন রেখেছে জানি না, কিন্তু খুব স্বার্থক নামকরণ। এটি আসলেই একটা মেগা অস্ত্র। প্রতি সেকেন্ডে দশটা গুলি করতে পারে, লেজার লক অটোমেটিক। অত্যন্ত চমৎকার অস্ত্র–শুধু একটা সমস্যা। অস্ত্রটা ভারী। সব মানুষ সহজে এটা নাড়াচাড়া করতে পারে না।

    রুহান এক দৃষ্টে কমবয়সী মানুষটার দিকে তাকিয়ে থেকে কথাগুলো শুনছে, কিন্তু ঠিক মনোযোগ দিতে পারছে না। তার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ তাকে অস্ত্রের উপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

    অস্ত্র বিশেষজ্ঞ মানুষটি বিশাল মেগাট্রনটি টেবিলের উপর রেখে তুলনামূলকভাবে ছোট একটা অস্ত্র হাতে নিয়ে বলল, এটার নাম ক্রিকি। ক্রিকি প্রায় মেগাট্রনের মতোই তবে এর গুলির ভর একটু কম। অস্ত্রটা ক্রোমিয়াম এলয় দিয়ে তৈরি, তাই এর ওজন হালকা। অপরাধজগতে খুব জনপ্রিয়। গত খেলায় খেলোয়াড়দের কেউ কেউ এটা ব্যবহার করেছে। মানুষটা অস্ত্রটা টেবিলে রেখে এবারে তৃতীয় একটা অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। কুচকুচে কালো এবং হালকা, গুলির লম্বা ম্যাগাজিন বাঁকা হয়ে বের হয়েছে। অস্ত্র বিশেষজ্ঞ মানুষটা মুখে সন্তুষ্টির একটা শব্দ করে বলল, তবে এটা হচ্ছে খেলোয়াড়দের সবচেয়ে প্রিয় অস্ত্র। ব্ল্যাক মার্কেটে এর দাম এখন তেতাল্লিশ হাজার ইউনিট। এত হালকা যে হাতে নিলে মনে হয় বুঝি খেলনা, কিন্তু এটা খেলনা নয়, এটা একেবারে খাঁটি অস্ত্র। প্রতি সেকেন্ডে গুলি করে পাঁচটা—তবে সেই পাঁচটার ট্রাজেক্টরী নিখুঁত। খেলোয়াড়রা তো যুদ্ধ করে না যে তাদের প্রতি সেকেন্ডে দশটা গুলি দরকার—খেলোয়াড়রা হিসেব করে গুলি করে। এর আগের টুর্নামেন্টের শেষ খেলায় মাত্র একটা গুলি খরচ হয়েছিল। বিশ্বাস হয়?

    রুহান এক ধরনের ক্লান্তি নিয়ে মানুষটার দিকে তাকিয়ে থাকে। পৃথিবীতে এত ধরনের অস্ত্র আছে কে জানত। শুধুমাত্র মানুষকে হত্যা করার জন্যে মানুষেরাই এই অস্ত্রগুলো আবিষ্কার করেছে রুহানের সেটা বিশ্বাস হতে চায় না।

    কম বয়সী অস্ত্র বিশেষজ্ঞ রুহানের দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কোনটা নিতে চাও?

    রুহান বলল, আমি কোনোটাই নিতে চাই না।

    রুহান খুব একটা মজার কথা বলেছে এরকম ভান করে কম বয়সী অস্ত্র বিশেষজ্ঞ হা হা করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে বলল, একজন খেলোয়াড় খালি হাতে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে দৃশ্যটা কল্পনা করতেও কষ্ট।

    খেলোয়াড়ের হাতে অস্ত্র থাকতেই হবে?

    হ্যাঁ। খেলাটি হচ্ছে তোমার প্রতিপক্ষকে হত্যা করা। তুমি যদি হত্যাই করতে না পার তাহলে কে তোমার খেলা দেখবে?

    রুহান বিষণ্ণ দৃষ্টিতে অস্ত্রগুলোর দিকে তাকায়। একটা একটা করে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়, নেড়েচেড়ে দেখে। অস্ত্র বিশেষজ্ঞ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুহানের দিকে তাকিয়ে থেকে তার অঙ্গভঙ্গি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে।

    শেষ পর্যন্ত রুহানকে তার শরীরের কাঠামোর সাথে মিলে যায় এরকম কয়েকটা অস্ত্র বেছে দেয়া হলো। একজন খেলোয়াড় যতগুলি খুশি অস্ত্র নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু যেহেতু পুরো খেলাটিই হচ্ছে এক ধরনের ক্ষীপ্রতার খেলা তাই কেউ বেশি অস্ত্র নিয়ে যায় না, দুটি কিংবা খুব বেশি হলে তিনটি ভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে যায়। অস্ত্রগুলো কোমর থেকে ঝুলিয়ে দেয়া হয় কিংবা উরুতে

    বেঁধে নেয়া হয়। কেউ কেউ একটা পিঠে ঝুলিয়ে রাখতে পছন্দ করে। গুলির বাড়তি ম্যাগাজিনগুলো বেল্টের মতো করে বুকে কিংবা পায়ের সাথে বেঁধে নেয়া হয়। প্রথম দিন রুহানকে তার অস্ত্রগুলোর সাথে পরিচিত করানো হলো। দূরে টার্গেট তাকে দিয়ে লক্ষ্যভেদ করানো হলো। যে মানুষ জীবনে কখনো অস্ত্র হাতে স্পর্শ করে নি সেই হিসেবে তার নিশানা অসাধারণ। রুহানের ভেতরে এক ধরনের সহজাত ক্ষীপ্রতা আছে যেটা সচরাচর মানুষের ভেতর চোখে পড়ে না। রুহান নিজেও সেটা জানত না।

    সারাদিন প্রশিক্ষণ নিয়ে রুহান সন্ধ্যেবেলা পরিশ্রান্ত ঘর্মাক্ত আর ক্লান্ত হয়ে নিজের ঘরে ফিরে এলো। কিছুক্ষণ নিজের বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে তারপর বাথরুমে টগবগে গরম পানিতে রগড়ে রগড়ে গোছল করে বের হয়ে আসে। টেবিলে তার খাবার ঢাকা দেয়া ছিল, রুহান ঢাকনা খুলে খেতে বসে। ফলের রস, যবের রুটি, ভেড়ার মাংসের স্টু, গরম স্যুপ আর কাচা সবজি। বহুদিন সে একরম খাবার খাওয়া দূরে থাকুক চোখেই দেখে নি। খেতে বসে তার হঠাৎ করে মায়ের কথা মনে পড়ল, তার ছোট দুটি বোনের কথা মনে পড়ল। খাবার টেবিলে শুকনো রুটি আর পাতলা পানির মতো স্যুপ খেতে গিয়ে ছোট বোন দুটি কী আপত্তিই না করত। ক্ষুধার্ত রুহানের হঠাৎ করে খিদেটা যেন উবে যায়। সে দীর্ঘসময় খাবারগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর খানিকটা রুটি আর এক বাটি স্যুপ খেয়ে উঠে যায়।

    রুহান তার নিজের ঘর থেকে বের হয়ে হলঘরের দিকে এগিয়ে যায়, তার খুব সৌভাগ্য যে তাকে ছোট একটা ঘরের ভেতর তালাবদ্ধ করে রাখে নি। তাকে তার ঘর থেকে বের হতে দিয়েছে অন্যদের সাথে মেলামেশা করতে দিয়েছে। মাথায় ইলেকট্রড বসানো ছেলে-মেয়েগুলোর সাথে কথাবার্তা বলার খুব একটা সুযোগ নেই, কিন্তু বৃদ্ধ কিহি খুব চমৎকার একজন সঙ্গী। রুহান বড় হলঘরে গিয়ে কিহিকে খুঁজে বের করল। সে একটা নরম চেয়ারে গা ড়ুবিয়ে বসে। আছে, চোখের দৃষ্টি বহুদূরে। রুহানকে দেখে কিহি সোজা হয়ে বসে বলল, কী খবর রুহান। খেলোয়াড় হবার প্রথম দিনটি তোমার কেমন গেছে?

    রুহান কিহির পাশে বসে বলল, আমি ঠিক যেরকম ভেবেছিলাম, সেরকম।

    তুমি কী রকম ভেবেছিলে?

    অর্থহীন শারীরিক ব্যাপার। সহজাত ব্যাপার। রুহান একটু থেমে কিহির কে তাকিয়ে বলল, তুমি বলতে পারবে কিহি, পৃথিবীটা এরকম কেন হয়ে গেল? পৃথিবীর মানুষ কী এর চাইতে ভালো একটা পৃথিবী পেতে পারে না?

    অবশ্যই পারে। কিহি রুহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, এবং তুমি নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ পৃথিবীর মানুষ সেই পৃথিবী পাবে।

    কখন পাবে? কীভাবে পাবে?

    সেটা আমি জানি না। কিহি মাথা নেড়ে বলল, আমি ইতিহাস ঘেটে ..দখেছি মানুষের সভ্যতা মাঝে মাঝেই এরকম অন্ধ কানাগলিতে ঘুরপাক খায় 1•• শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে বের হয়ে আসে।

    কীভাবে বের হয়ে আসে?

    কিহি দুর্বলভাবে হেসে বলল, সেটাও আমি জানি না। মানুষের একেবারে ভেতরে মনে হয় মনুষ্যত্ব বলে একটা জিনিস থাকে। যত দুঃসময়ই হোক সেই মনুষত্ব বুকের ভিতরে ধিকিধিকি করে জ্বলতে থাকে। যখন সবকিছু অন্ধকারে ঢেকে যায় তখন সেই মনুষ্যত্বের ছোট আগুনটা হঠাৎ দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে।

    রুহান কিহির দিকে তাকিয়ে রইল। এই বৃদ্ধ মানুষটি কথা বলে খুব সুন্দর করে। তার কথা রুহানের খুব বিশ্বাস করার ইচ্ছে করে, কিন্তু সে যেটা বলছে সেটা কী আসলেই সত্যি?

    রুহান কিহির দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি বলছ এক সময় আবার মানুষের সভ্যতা মাথা তুলে দাঁড়াবে?

    হ্যাঁ। মাথা তুলে দাঁড়াবে।

    রুহান নিজেকে দেখিয়ে বলল, এই যে, আমাকে দেখ।

    কিহি হাসিমুখে রুহানের দিকে তাকিয়ে বলল, দেখছি।

    তোমার কী মনে হয় আমি একজন রক্তপিপাসু খুনি?

    না। মোটেও মনে হয় না রুহান। তোমাকে দেখে মনে হয় তুমি একজন খুব হৃদয়বান তরুণ।

    কিন্তু আমাকে কেমন করে মানুষ খুন করতে হয় তার ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। কত দ্রুত কতগুলো অস্ত্র দিয়ে আমি কতগুলো মানুষকে খুন করতে পারি সেটাই হবে আমার কাজ। আর আমি যদি সেটা না করি, তাহলে কী হবে জান?

    কিহি বিষণ্ণ মুখে মাথা নেড়ে বলল, জানি।

    তাহলে আমাকে অন্যেরা মেরে ফেলবে। এখন তুমিই বল কিহি, আমি কী বেঁচে থাকব না মরে যাব?।

    কিহি তার হাত দিয়ে রুহানের হাত স্পর্শ করে বলল, তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে রুহান। মানুষের মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে।

    একজন খুনির কী মানুষের মর্যাদা আছে?

    কিহি মাথা নেড়ে বলল, না। নেই।

    তাহলে?

    কিহি বিষণ্ণ মুখে মাথা নেড়ে বলল, আমি তোমার এই প্রশ্নের উত্তর জানি রুহান।

    রুহান আর কিহি দুজন চুপচাপ বসে থাকে। সামনে অপ্রকৃতস্থ তরুণ তরুণীরা তাদের শিশুর মতো ভঙ্গিতে নিজেদের সাথে কথা বলছে, তর্ক করছে, কেউ কেউ ঝগড়া করছে। অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে তাদের দেখতে দেখতে রুহান একসময় বলল, কিহি, তুমি বিশ্বাস করো একসময় মানুষ আবার তাদের সভ্যতা ফিরে পাবে।

    হ্যাঁ। আমি বিশ্বাস করি।

    সভ্যতার জন্যে দরকার জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা ও গবেষণা।

    হ্যাঁ।

    রুহান তার গলায় ঝোলানো ক্রিস্টাল রিডারটা দেখিয়ে বলল, তার জন্যে দরকার আমাদের ক্রিস্টাল রিডার। যেটা আমার জন্যে তথ্য বাঁচিয়ে রাখবে, তথ্য দেয়া-নেয়া করবে।

    হ্যাঁ। কিহি আবার মাথা নাড়ল।

    কিন্তু আমি শুনেছি গত পঞ্চাশ বছরে পৃথিবীতে একটা ক্রিস্টাল রিডার তৈরি হয়নি। তাহলে আমরা নতুন কিছু শিখব কেমন করে?

    কিহির মুখে সূক্ষ্ম এক ধরনের হাসি ফুটে ওঠে। সে রুহানের হাতটা নিজের কাছে টেনে এনে যেখানে কিছু বিদঘুটে চিহ্ন এঁকে দেয়া হয়েছে সেটা দেখিয়ে বলল, এটা কী তুমি জান?

    না। এটা কী?

    এখানে একটা সংখ্যা লেখা আছে।

    রুহান অবাক হয়ে বলল, সংখ্যা লেখা আছে?

    হ্যাঁ। আমি যদি ভুল না করে থাকি তাহলে সংখ্যাটি হচ্ছে ছয় শূন্য তিন তিন নয় চার দুই।

    রুহান অবাক হয়ে বলল, তুমি এটা কেমন করে বললে?

    আমি এটা পড়েছি। যখন ক্রিস্টাল রিডার ছিল না তখন মানুষ লিখত এবং সেই লেখা পড়ত। প্রত্যেক কথা লেখা হতো বর্ণমালা দিয়ে। ক্রিস্টাল রিডার আসার পর ভাষার এই লিখিত রূপটা উঠে গেছে। এখন আমরা সরাসরি ক্রিস্টাল রিডারে বলি, ক্রিস্টাল রিডার থেকে শুনি। সেটাতে সবকিছু বাঁচিয়ে রাখি।

    রুহান মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, আমি বর্ণমালার কথা শুনেছি। আমাদের গ্রামে একজন বুড়ো মানুষ ছিল, কুরু। সে আমাকে বলেছিল।

    কিহি বলল, যদি সত্যি সত্যি ক্রিস্টাল রিডার পৃথিবী থেকে উঠে যায় তাহলে আমাদের এক ধাপ পিছিয়ে যেতে হবে। আমাদের আবার বর্ণমালা শিখতে হবে। আমাদের আবার পড়তে শিখতে হবে, লিখতে শিখতে হবে।

    রুহান কিহির মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি লিখতে পড়তে জানো?

    হ্যাঁ। আমি একটু একটু শিখেছি। আমি বুড়ো মানুষ, আমার অনেক অবসর। আমি আমার অবসরে এ ধরনের অর্থহীন কাজ করি।

    রুহান হঠাৎ সোজা হয়ে বসে বলল, তুমি আমাকে লিখতে পড়তে শেখাবে কিহি।

    কেন শেখাব না! অবশ্যই শেখাব। বর্ণমালাগুলো তোমার ক্রিস্টাল রিডারে ঢুকিয়ে নাও, দেখবে দেখতে দেখতে শিখে যাবে।

    আমি কোথায় বর্ণমালাগুলো পাব?

    আমার কাছে আছে। আমি তোমাকে দেব।

    ধন্যবাদ কিহি। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।

    কিহি তার আরামদায়ক চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল, পৃথিবীর পুরো জ্ঞানভাণ্ডারই এরকম বর্ণমালা দিয়ে লেখা আছে।

    রুহান মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, আমিও এটা শুনেছি।

    আরো প্রাচীন কালে সেগুলো রাখা হতো কাগজে লিখে, সেগুলোর নাম ছিল বই।

    বই?

    হ্যাঁ। এখনো পৃথিবীর অনেক জায়গায় বড় বড় লাইব্রেরীতে বই সাজানো আছে। কেউ আর সেগুলো পড়তে পারে না। কিন্তু তবু সাজিয়ে রাখা আছে। কিহি হঠাৎ ঘুরে রুহানের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কখনো বই দেখেছ?

    না।

    আমার কাছে একটা বই আছে। তুমি দেখতে চাও?

    হ্যাঁ। দেখতে চাই। রুহান উত্তেজিত হয়ে বলল, দেখাবে আমাকে?

    কিহি হেসে বলল, কেন দেখাব না? অবশ্যই দেখাব। এসো আমার সাথে।

    রুহান কিহির পিছনে পিছনে লম্বা করিডোর ধরে হেঁটে তার ছোট ঘরটিতে হাজির হলো। একটা শক্ত বিছানার পাশে একটা টেবিল, সেখানে কিছু দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্র। সেখান থেকে চতুষ্কোণ একটা জিনিস হাতে তুলে নিয়ে কিহি রুহানের হাতে দিল। রুহান সেটা হাতে নিয়ে খুলে, ভেতরে সারি সারি সাদা পৃষ্ঠা, সেই পৃষ্ঠাগুলোতে বিচিত্র নক্সার মতো চিহ্ন সাজানো। এগুলো নিশ্চয়ই বর্ণমালা দিয়ে লেখা। রুহান কিছুক্ষণ বিস্ময় নিয়ে বইটির দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর সেটি কিহির হাতে দিয়ে বলল, তুমি এটা পড়তে পারবে?

    কিহি হেসে বলল, হ্যাঁ। পারব।

    আমাকে একটু পড়ে শোনাও না।

    কিহি বইটি তার চোখের সামনে খুলে ধরে বলল, এটা একটা কবিতার বই। কোনো একজন প্রাচীন কবির লেখা কবিতা। এই যে দেখ, এখানে লেখা–

    ধান কাটা হয়ে গেছে কবে যেন খেতে মাঠে পড়ে আছে খড়
    পাতা কুটো ভাঙা ডিম–সাপের খোলস নীড় শীত
    এইসব উত্রায়ে ওইখানে মাঠের ভিতর
    ঘুমাতেছে কয়েকটি পরিচিত লোক আজ–কেমন নিবিড়।

    রুহান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, কী সুন্দর কথাগুলো।

    কিহি মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ। কথাগুলো খুব সুন্দর। যখন শুরু করেই দিয়েছি, তাহলে তোমাকে বর্ণমালার কয়েকটা অক্ষর দেখিয়ে দিই।

    রুহান বলল, হ্যাঁ, দেখাও। সে বইয়ের একটা পৃষ্ঠা খুলে তার উপর ঝুঁকে পড়ল।

     

    সারাটি দিন রুহানকে অস্ত্রের ব্যবহার আর শারীরিক দক্ষতার উপর ট্রেনিং দেয়া হয়। ক্লান্ত ঘর্মাক্ত হয়ে ফিরে এসে সে গোসল করে খেয়ে বর্ণমালাগুলো নিয়ে বসে। দেখতে দেখতে সে পড়তে শিখে গেল। তার এখনো বিশ্বাস হয় না পৃথিবীর সব মানুষ একসময় পড়তে পারত। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যে ক্রিস্টাল রিডারে অভ্যস্ত বলে তার কাছে বর্ণমালা ব্যবহার করে পড়ার এই পুরো প্রক্রিয়াটাকে মনে হচ্ছে আদিম একটা পদ্ধতি। কিন্তু সত্যি সত্যি যদি পৃথিবী থেকে একদিন ক্রিস্টাল রিডার উঠে যায় তখন তো জ্ঞান-বিজ্ঞানকে ধরে রাখার জন্যে এই বর্ণমালার কাছেই ফিরে আসতে হবে। প্রথম প্রথম পড়তে এবং পড়ে কিছু একটা বুঝতে তার যেরকম কষ্ট হতো এখন আর সেটা হয় না। কিহির কাছ থেকে যে কবিতার বইটি এনেছে সেটা সে পড়তে পারে, পড়ে বুঝতে পারে শুধু যে বুঝতে পারে তা নয়, অনুভবও করতে পারে।

    দেখতে দেখতে রুহানের জীবনটি মোটামুটি একটা ছকের ভেতর চলে। এলো। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠার পরই তাকে বেশ কিছুক্ষণ ছোটাছুটি করতে হয়। তারপর তাকে কিছু একটা খেতে হয়–স্বাস্থ্যকর এবং বলকারক খাবার। তারপর তাকে কিছুক্ষণ খেলোয়াড়দের নানা ধরনের খেলার ভিডিও দেখতে হয়, সেটা তার জন্যে নানাভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। কোন খেলোয়াড়ের কী বিশেষত্ব সেটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকে বোঝানো হয়। কে কোন খেলায় কেন জিতেছে সেটা ব্যাখ্যা করা হয়। দেখতে দেখতে রুহান এক ধরনের ক্লান্তি অনুভব করে। তার মাঝে মাঝে মনে হয় সে যদি একজন খেলোয়াড় না হয়ে একজন সক্রেটিস হয়ে যেত তাহলেই কী ভালো হতো? মানুষকে কত সহজে কত দ্রুত খুন করা যায় এই বিদ্যাটা তাহলে অন্তত তাকে নিশ্চয়ই হয়তো শিখতে হতো না।

    খানিকক্ষণ বিশ্রাম নেবার পর রুহানকে অস্ত্র হাতে ট্রেনিং শুরু করতে হয়। শরীরের নানা জায়গায় অস্ত্রগুলো বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। সেগুলো তাকে চোখের পলকে টেনে বের করে গুলি করতে হয়। নানা ধরনের টার্গেট থাকে সেখানে লক্ষ্যভেদ করতে হয়। রুহান নিজেই বুঝতে পারে, সে সাধারণ একজন মানুষ থেকে দেখতে দেখতে বিচিত্র বোধশক্তিহীন একজন পেশাদার হত্যাকারীতে পাল্টে যাচ্ছে। মানুষকে কত দ্রুত কোথায় আঘাত করতে হবে সেটি বুঝি তার থেকে ভালো করে আর কেউ জানে না। সে কী এটাই চেয়েছিল?

    রুহান বুঝতে পারছিল পাহাড়ের কাছাকাছি এই ট্রেনিং সেন্টার থেকে তার বিদায় নেবার সময় চলে আসছে। একজন মানুষকে যতটুকু শেখানো সম্ভব মোটামুটি সবই তাকে শেখানো হয়েছে। এখন তাকে কোনো একটি সত্যিকার খেলায় নামিয়ে দিতে হবে। যেখানে সে মুখোমুখি দাঁড়াবে একজন সত্যিকার মানুষের সামনে, যে মানুষটি হবে ঠিক তার মতো একজন খেলোয়াড়। ঠিক তার মতোই ক্ষীপ্র, তার মতোই মানুষকে হত্যা করার জন্যে প্রস্তুত।

    তাই একদিন ভোরবেলা যখন ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করল তার ঘরের ভেতর চারজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারল সে যে সময়ের জন্যে অপেক্ষা করছে সেই সময়টুকু চলে এসেছে।

    কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা একজন বলল,  রুহান, তোমার এখন আমাদের সাথে যেতে হবে।

    কোথায় শব্দটি উচ্চারণ করতে গিয়ে রুহান থেমে গেল। জিজ্ঞেস করে কী হবে? রুহান শান্ত গলায় বলল, এখানে আমার সাথে অনেকের পরিচয় হয়েছে। আমি কী তাদের কাছ থেকে বিদায় নিতে পারি?

    না। মানুষটি শীতল গলায় বলল, তোমাকে আমরা খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি করেছি। বিদায় নেয়ার মতো ছেলেমানুষী মানবিক বিষয়গুলো তোমার ভেতরে থাকার কথা নয়। তোমাকে বুঝতে হবে, তুমি হবে বোধশক্তি ভালোবাসাহীন একটা ক্ষীপ্র যন্ত্র।

    রুহান মাথা নেড়ে বলল, ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেবার জন্যে তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।

    মানুষটি হাসিমুখে মাথা নাড়ল, রুহানের বিদ্রুপটুকু ধরতে পারল না।

    এবারে একজন একটা কালো কাপড় নিয়ে এলো। বলল, তোমার চোখ দুটো বেঁধে নিতে হবে রুহান।

    রুহান একবার ভাবল সে জিজ্ঞেস করবে, কেন আমার চোখ বেঁধে নিতে হবে? কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করল না। কী হবে জিজ্ঞেস করে?

    চোখ বাঁধা অবস্থায় রুহানকে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন সে কিছু দেখতে না পেয়েও বুঝতে পারছিল হল ঘরে অপ্রকৃতস্থ কিছু তরুণ-তরুণী নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কিছু বলছে না কিন্তু তারপরেও সে অনুভব করল তারা বুঝি ফিসফিস করে বলছে, বিদায়। বিদায়। রুহান রুহান।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভূত সমগ্র – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article নাট বল্টু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }