Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র ৫ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প1035 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২.৩ জহুরদের নৌকাটা

    জহুরদের নৌকাটা চারদিন পর সুন্দরবনের ভেতরে পৌঁছাল। জোয়ারের সময় এটাকে নোঙর করে রেখে শুধু ভাটির সময় দক্ষিণে বেয়ে নেয়া হতো। সুন্দরবনের গহিনে নিবিড় অরণ্য, রাত্রি বেলা ঘুমানোর সময় রীতিমতো ভয় করে। বন বিভাগ থেকে একজন আনসার দেয়া হয়েছে, সে একটা পুরানো বন্দুক নিয়ে পাহারা দেয়। এই বন্দুকটি দিয়ে শেষবার কবে গুলি ছোড়া হয়েছে সেটা কেউ জানে না, বিপদের সময় এটা থেকে গুলি বের হবে কি না সেটা নিয়েও সবার মাঝেই সন্দেহ আছে।

    গমের বোঝা নামিয়ে জহুর আর মাঝি মাল্লারা নৌকা নিয়ে আরো গভীরে ঢুকে যায়, বন বিভাগের কিছু গাছের গুঁড়ি তাদের নিয়ে যেতে হবে। জহুর আগে কখনো এত গভীরে আসেনি, এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে সে এই নির্জন অরণ্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। নদীর তীরে হরিণের দল পানি খেতে আসে, সতর্ক দৃষ্টিতে এদিক সেদিক দেখে চুকচুক করে একটু পানি খেয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ছন্দ তুলে লাফিয়ে লাফিয়ে গহিন বনে অদৃশ্য হয়ে যায়। গাছের ডালে বানর-শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বানর-মায়েরা বসে থাকে। গাছের পাতা ছিঁড়ে ছিড়ে খেতে খেতে অকারণেই তারা তারস্বরে চিৎকার করতে থাকে। নদীর তীরে কাদায় কুমির মুখ হাঁ করে রোদ পোহায়। দেখে মনে হয় বুঝি ঢিলেঢালা প্রাণী কিন্তু মানুষের সাড়া পেলেই বিদ্যুৎগতিতে নদীর পানিতে অদৃশ্য হয়ে যায়। গাছে হাজার হাজার পাখি কিচিরমিচির করে ডাকছে। জহুর সবকিছু এক ধরনের মুগ্ধ বিস্ময় নিয়ে দেখে।

    নৌকায় যখন গাছের গুঁড়ি তোলা হচ্ছে তখন জহুর আনসার সদস্যটির সাথে বনের ভেতর হুঁটিতে বের হলো। মানুষটি কথা বলতে ভালোবাসে, জহুর কথা বলে কম কিন্তু ধৈর্য ধরে শুনতে পারে, তাই দুজনের জুটিটি হলো চমৎকার। আনসারের সদস্যটা বন্দুকটা হাতে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল, এই যে আমরা হাঁটছি, আপনি ভাবছেন আমাদের কেউ দেখছে না। আসলে এইটা সত্যি না। আমাদের কিন্তু দেখছে।

    কে দেখছে?

    কে আবার? মামা।

    জহুর এত দিনে জেনে গেছে সুন্দরবনে বাঘকে সম্মান করে মামা বলা হয়-বাঘকে নাম ধরে ডাকা নিয়ে একটা কুসংস্কার আছে।

    সে মাথা নেড়ে বলল, অ।

    সব সময় আমাদের চোখে চোখে রাখে। নিঃশব্দে আমাদের পেছনে পেছনে হাঁটে।

    এখনো হাঁটছে?

    নিশ্চয়ই হাঁটছে। যাওয়ার সময় দেখবেন পায়ের ছাপ। আমাদের পেছনে পেছনে হেঁটে যাচ্ছে।

    জহুর জিজ্ঞেস করল, আমাদের খেয়ে ফেলবে না তো?

    নাহ্! বাঘ মানুষকে খায় না। জঙ্গলে এত মজার মজার খাবার আছে মানুষকে খাবে কেন? মানুষের শরীরে গোশত আর কতটুকু, সবই তো হাড়িভ।

    জহুর এভাবে কখনো চিন্তা করে দেখেনি—সে কোনো কথা বলল না। আনসার কমান্ডার বলল, জঙ্গলে হাঁটার একটা নিয়ম আছে, সেই নিয়ম মানতে হয় তাহলে মামা সমস্যা করে না।

    কী নিয়ম?

    বাতাস। বাতাসের উল্টা দিকে হাঁটতে হয়। মামা তো অনেক দূর থেকে ঘ্রাণ পায় তাই মামা ভাবে আমরাও পাই। তাই বাতাসের উল্টা দিকে থাকে, যেন আমরা তাদের ঘ্রাণ না পাই!

    জহুর বলল, অ।

    আনসার কমার তার বন্দুক হাতবদল করে বলল, যারাই সুন্দরবনে আসে তারাই খালি মামা মামা করে। এই জঙ্গলে মামা ছাড়াও অনেক কিছু আছে। নানা রকম প্রাণী আছে। তাদেরকে কেউ দেখতে পায় না।

    তাই নাকি?

    হ্যাঁ। একরকম গুইসাপ আছে এক মানুষ লম্বা। সাপ আছে হাজারো কিসিমের। নদীতে কুমির কামট আর মাছ। গাছে বানর আর পাখি।

    জহুর বলল, অ।

    সমস্যা একটা। তাই মানুষ সুন্দরবনে থাকে না।

    কী সমস্যা?

    পানি। খাবার পানি নাই। লোনা পানি।

    জঙ্গলে পুকুর কাটলেই পারে।

    সেই পুকুরে কি আর মিষ্টি পানি পাওয়া যায়? সেই পানিও লোনা।

    জহুর বলল, অ।

    তবে জঙ্গলে মানুষ থাকে না সেই কথা পুরোপুরি ঠিক না।

    থাকে নাকি?

    আনসার কমান্ডার বলল, জঙ্গলের ভেতর যাদের নাম নিতে নাই তারা তো থাকেই।

    তারা কারা? ভূত?

    আনসার কমান্ডার বিরক্ত হয়ে বলল, আহ হা! নাম কেন নিলেন?

    ঠিক আছে আর নিব না।

    শহরে তো হইচই গোলমাল, সেখানে তো আর তেনারা থাকতে পারেন না, সব জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্ধকার হলেই শুরু হয় তেনাদের খেলা।

    জহুর হাসি গোপন করে বলে, অ।

    আনসার কমান্ডার বলল, তয় আসল মানুষও দেখেছিলাম একজন। বিডিআর কমান্ডার ছিল। দুইটা মার্ডার করে জঙ্গলে চলে এসেছিল। পুলিশ যখন ধরেছে তখন এই লম্বা দাড়ি, দেখে মনে হয় জিন!

    জহুর বলল, অ।

    চোখ লাল, শরীরে চামড়া কয়লার মতো কালো।

    লোনা পানি খেয়ে থাকত?

    নাহ্। কমান্ডারের মাথায় বিশাল বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি। পানির উপরে একটা প্লাস্টিক বিছিয়ে রাখত, সেইখানে যে পানি জমা হতো সেইটায় লবণ নাই।

    আর খাবার খাদ্য?

    আনসার কমান্ডার হা হা করে হেসে বলল, সুন্দরবনে কি খাবার খাদ্যের অভাব আছে নাকি? গাছে কত ফলমুল কত মধু। বনমোরগ, হরিণ, মাছ!

    সেই বিডিআর কমান্ডার কি কাঁচা খেত?

    নাহ্! বিশাল বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি! ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে আগুন ধরাত।

    সেইটা আবার কী?

    চশমার কাচের মতোন, ছোট জিনিস বড় দেখা যায়।

    সেইটা দিয়ে আগুন ধরানো যায়?

    হ্যাঁ। সূর্যের আলোতে ধরলেই আগুন জ্বলে।

    সূর্যের আলোতে ম্যাগনিফাইং গ্লাস ধরা হলে কেন আগুন ধরে সেটা জানার জন্যে জহুরের একটু কৌতূহল ছিল কিন্তু সে আর জিজ্ঞেস করল না।

    ঠিক তখন গাছে একটু খচমচ করে শব্দ ইলো এবং জহুর দেখল বড় ঝাঁপড়া একটা গাছের ওপর থেকে বিশাল একটা পাখি হঠাৎ ডানা মেলে উড়ে যেতে শুরু করেছে।

    আনসার কমান্ডার বলল, কী আচানক ব্যাপার।

    জহুর জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?

    কত বড় পাখি দেখেছেন?

    হ্যাঁ। জহুর এক ধরনের কৌতূহল নিয়ে পাখিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ আনসার কমান্ডার তার বন্দুকটা তুলে পাখির দিকে তাক করল। জহুর অবাক হয়ে বলল, কী করেন?

    আনসার কমান্ডার কোনো কথা না বলে উড়ন্ত পাখিটার দিকে তার। নিশানা ঠিক করতে থাকে। জহুর আবার জিজ্ঞেস করল, কী করেন?

    ঠিক যখন ট্রিগার টান দেবে তখন জহুর খপ করে বন্দুকটা ধরে একটা হেঁচকা টান দিল। প্রচণ্ড গুলির শব্দে জঙ্গলটা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

    আনসার কমান্ডার যেটুকু অবাক হলো তার থেকে রাগ হলো অনেক বেশি। চিৎকার করে বলল, কী করলেন আপনি? কী করলেন?

    পাখিটারে খামোখা গুলি করতে যাচ্ছিলেন—

    আমার ইচ্ছা। আমি দরকার হলে পাখিরে গুলি করব, দরকার হলে পাখির বাবারে গুলি করব। আপনি কেন আমার হাতিয়ারে হাত দিবেন?

    জহুর মুখ শক্ত করে বলল, কারণ কিছু নাই, খামোখা কেন আপনি পাখিটাকে মারবেন?

    আনসার কমান্ডার বুকে থাবা দিয়ে বলল, আমার ইচ্ছা।

    জহুর শীতল গলায় বলল, কমান্ডার সাহেব, আপনি যখন একা থাকবেন, তখন আপনার ইচ্ছে হলে পাখি কেন হাতিকেও মারতে পারেন।

    কিন্তু আমি যদি পাশে থাকি তাহলে খামোখা একটা পাখিকে মারতে দিব না।

    কেন?

    জহুর উপরের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কারণটা ঠিক জানি না।

    আনসার কমান্ডার অবাক হয়ে জহুরের দিকে তাকিয়ে রইল। জহুরের মনে হলো সত্যিই কি সে কারণটা জানে না?

     

    বুলবুল বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে থাকে। কিছুতেই তার চোখে ঘুম আসে না। সারা শরীরে কেমন যেন এক ধরনের অস্থির ভাব, সে কিছুতেই অস্থিরতার কারণটা বুঝতে পারছে না। যখন জহুর ছিল তখন সে প্রতিরাতে চরে গিয়ে আকাশে উড়েছে, জহুর চলে যাওয়ার পর সে উড়তে পারছে না, কিন্তু তার সারা শরীর উড়ার জন্যে আকুলিবিকুলি করছে। তার শুধু ইচ্ছে করছে পাখা দুটি দুই পাশে মেলে দিয়ে ঝাঁপটাতে থাকে কিন্তু সে ঘরের ভেতরে এটা করতে পারছে না।

    বুলবুল খানিকক্ষণ জোর করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকার চেষ্টা করল, কিন্তু লাভ হলো না। খানিকক্ষণ ছটফট করে সে শেষ পর্যন্ত উঠে বসল, তারপর সাবধানে বিছানা থেকে নেমে এল, পা টিপে টিপে দরজার কাছে গিয়ে ছিটকানি খোলার চেষ্টা করল।

    আনোয়ারা পাশের খাটেই শুয়ে ছিল, তার ঘুম খুব পাতলা, ছিটকানি খোলার শব্দ শুনেই সে জেগে উঠে জিজ্ঞেস করল, কে?

    আমি খালা।

    আনোয়ারা উঠে বসে জিজ্ঞেস করল, তুই? এত রাতে ছিটকানি খুলে কোথায় যাস।

    বুলবুল বলল, একটু বাইরে যাব খালা।

    কেন? পেশাব করবি?

    না খালা।

    তাহলে?

    ঘরের ভেতরে থাকতে পারছি না। একটু বাইরে গিয়ে পাখা ঝাপটাতে হবে খালা।

    আনোয়ারা কী বলবে বুঝতে পারল না। তার পাখা নেই, একজন মানুষের পাখা থাকলে তার কেমন লাগে, তাকে কী করতে হয়, সেটা সে জানে না। সেটা শুধু যে সে জানে না তা নয়, মনে হয় পৃথিবীর কেউই জানে না। তাই বুলবুল যে মাঝরাতে ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে গিয়ে পাখা ঝাঁপটাতে চাইছে সেটার পেছনে কোনো যুক্তি আছে কি নেই সেটা আনোয়ারা বুঝতে পারে না।

    আনোয়ারা বলল, বাবা বুলবুল, এত রাতে বাইরে বের হবি পাখা ঝাপটানোর জন্যে? যদি কেউ দেখে ফেলে?

    দেখবে না খালা— বুলবুল অনুনয় করে বলল, সবাই এখন ঘুমাচ্ছে। তা ছাড়া বাইরে কুচকুচে অন্ধকার, কেউ দেখতে পাবে না।

    আনোয়ারা মাথা নাড়ল, বলল, উহু! জহুর একশবার করে না করে। গেছে সে না আসা পর্যন্ত তোকে যেন উড়তে না দিই।

    আমি উড়ব না খালা! আমি শুধু পাখা ঝাপটাব!

    একই কথা। খালা আমাকে একটু বের হতে দাও। এই একটুখানি—

    আনোয়ারা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ঠিক আছে। কিন্তু তোকে আমি একা বের হতে দিব না। আমি আগে যাব, দেখব কেউ আছে কি না।

    বুলবুল খুব খুশি হয়ে রাজি হলো, বলল, ঠিক আছে।

    তখন সেই নিশুতি রাতে বুলবুলের হাত ধরে আনোয়ারা বের হলো। উঠোনে উঁকি দিয়ে দেখল যখন কেউ নেই তখন বুলবুল দুই পাখা ছড়িয়ে দিয়ে সেগুলো ঝাঁপটাতে থাকে। আনোয়ারা এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে—সে কি কখনো ভেবেছিল একজন মানুষের পাখির মতো পাখা হবে? সেই মানুষটিকে সে বুকে ধরে বড় করবে?

    বার দুয়েক ডানা ঝাঁপটিয়ে বুলবুল থেমে যায়—আনোয়ারা বলল, হয়েছে? এখন ভেতরে আয়।

    বুলবুল বলল, হয়নি খালা। উঠোনটা কত ছোট দেখেছ? পাখাটা ভালো করে ছাড়াতেই পারছি না। সামনের মাঠটাতে একটু যাই?

    আনোয়ারা আঁতকে উঠে বলল, না, বুলবুল না! সর্বনাশ!

    একটুখানি! এই একটুখানি?

    সর্বনাশ! কেউ দেখে ফেলবে।

    কেউ দেখবে না খালা! দেখছ না কেউ নাই? সবাই ঘুমিয়ে আছে।

    হঠাৎ করে কেউ চলে আসবে!

    আসবে না খালা! আমি একবার যাব আর আসব।

    আনোয়ারা কিছু বলার আগেই বুলবুল দুই পা ছড়িয়ে উঠোন থেকে বের হয়ে সামনের মাঠে ছুটে যেতে থাকে। আনোয়ারা কাঠ হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে বুলবুলের ফিরে আসার জন্যে।

    অন্ধকারের মাঝে বুলবুলকে আবছা আবছাভাবে দেখা যায়। সে খোলা মাঠের উপর দিয়ে ডানা মেলে ছুটে যাচ্ছে—হঠাৎ হঠাৎ করে সে ডানা ঝাঁপটিয়ে একটু উপরে উঠে যাচ্ছে, আবার নেমে আসছে। দেখতে দেখতে বুলবুল মাঠের অন্যপাশে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। আনোয়ারা নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে থাকে এবং একসময় দেখতে পায় বুলবুল ডানা ঝাঁপটাতে ঝাঁপটাতে আবার ফিরে আসছে। আনোয়ারার বুকের ভেতর পানি ফিরে আসে। বুলবুল কাছে আসতেই সে ফিসফিস করে ডেকে বলল, আয় এখন! ভেতরে আয়। এক্ষুনি আয়।

    আর একবার ছোট খালা। মাত্র একবার!

    না।

    মাত্র একবার। এই শেষ খালা— বলে বুলবুল পাখা ঝাঁপটাতে ঝাঁপটাতে মাঠের অন্যপাশে ছুটে যেতে থাকে।

    আনোয়ারা আবার নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে। অন্ধকারে সে আবছা আবছা দেখতে পায় বুলবুল পাখা ঝাঁপটাতে ঝাঁপটাতে দূরে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে।

    ঠিক এই সময় আনোয়ারা টর্চলাইটের আলোর একটা ঝলকানি এবং দুজন মানুষের গলার আওয়াজ শুনতে পেল, সাথে সাথে আতঙ্কে তার হৃৎস্পন্দন থেমে গেল।

    আনোয়ারা তার উঠানের আড়ালে সরে যায়—এখন বুলবুলকে দেখতে না পেলেই হলো। সে বিড়বিড় করে বলল, হে খোদা! হে দয়াময়—বুলবুলকে যেন এই মানুষগুলো দেখতে না পায়। বুলবুল ফিরে। আসতে আসতে মানুষগুলো যেন চলে যায়। হে খোদা! হে পরওয়ারদিগার। হে রাহমানুর রাহিম।

    কিন্তু খোদা আনোয়ারার দোয়া শুনল না, কারণ হঠাৎ করে সে মানুষ দুজনের ভয়ার্ত গলার স্বর শুনতে পায়। একজন চমকে উঠে ভয় পাওয়া গলায় বলল, এইটা কী?

    দ্বিতীয়জন চাপা গলায় বলল, হায় খোদা। সর্বনাশ।

    আনোয়ারা দেখল বুলবুল নিশ্চিন্ত মনে ছুটে আসছে। সে জানেও না সামনে সুন্ধকারে দুজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে—তাদের হাতে একটা টর্চলাইট। মানুষগুলো ভীত এবং আতঙ্কিত। এই পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাণী হচ্ছে ভীত এবং আতঙ্কিত মানুষ—তারা বুঝে হোক না বুঝে হোক ভয়ঙ্কর সব ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে। মানুষগুলো কী করবে আনোয়ারা জানে না। সে এখন চিন্তাও করতে পারছে না।

    আনোয়ারা নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে এবং দেখতে পায় বুলবুল। ছুটতে ছুটতে কাছাকাছি এসে হঠাৎ করে মানুষ দুজনকে দেখতে পায়। সাথে সাথে সে দাঁড়িয়ে গেল—অন্ধকারে ভালো করে দেখা যাচ্ছে না, মানুষগুলো বোঝার চেষ্টা করছে। ঠিক তখন মানুষগুলোর একজন টর্চলাইটটা জ্বালিয়ে দিল, তীব্র আলোতে বুলবুলের চোখ ধাধিয়ে যায়, সাথে সাথে সে দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলল! মানুষগুলো হতবাক হয়ে দেখল একজন শিশু পাখা মেলে দাঁড়িয়ে আছে।

    ইয়া মাবুদ! জিনের বাচ্চা! বলে একজন মানুষ চিৎকার করে ওঠে।

    ধর! ধর জিনের বাচ্চাকে— বলে হঠাৎ মানুষগুলো বুলবুলকে ধরার জন্যে ছুটে যেতে থাকে।

    বুলবুল হঠাৎ করে যেন বিপদটা টের পেল, সাথে সাথে ঘুরে সে উল্টোদিকে ছুটতে শুরু করে। দুই পাখা সে দুই পাশে মেলে দেয়। বিশাল ডানা ছড়িয়ে সে ছুটতে থাকে, মানুষগুলো ঠিক যখন তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছিল তখন সে পাখা ঝাঁপটিয়ে উপরে উঠে গেল।

    মানুষ দুজন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে পায় বুলবুল পাখা ঝাঁপটিয়ে আকাশে উঠে যাচ্ছে। তারা টর্চলাইটের আলোতে দেখতে চেষ্টা করে কিন্তু ভালো করে কিছু দেখতে পেল না, দেখতে দেখতে বুলবুল টর্চলাইটের আলোর সীমানার বাইরে চলে গেল।

    আনোয়ারা হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, দেখতে পায় মানুষ দুজনের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে আরো মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে হাজির হচ্ছে। লোকজনের চিৎকার চেঁচামেচি হইচই, দেখতে দেখতে সেখানে বিশাল একটা জটলা শুরু হয়ে গেল। তারা সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করতে থাকে। আনোয়ারা বুঝতে পারে তার শরীর থরথর করে কাঁপছে।

     

    ভোর রাতে আনোয়ারা দেখল বুলবুল খুব সাবধানে বাসার পেছন দিয়ে এসে ঘরে ঢুকল। তার চোখে-মুখে আতঙ্ক। আনোয়ারা ছুটে গিয়ে বুলবুলকে জাপটে ধরে বলল, তুই কোন দিক দিয়ে এসেছিস?

    পিছনের বড় গাছটার ওপর নেমে লুকিয়ে ছিলাম।

    কেউ দেখে নাই তো?

    না খালা।

    তাড়াতাড়ি ঘরের ভেতরে আয়।

    বুলবুল আনোয়ারার হাত ধরে ঘরে ঢুকল। আনোয়ারা শুকনো গামছা দিয়ে শরীরটা মুছতে মুছতে বলল, কী সর্বনাশ হয়েছে দেখেছিস? তোকে দেখে ফেলেছে। এখন কী হবে?

    মনে হয় চিনে নাই খালা, আমি তো মুখ ঢেকে রেখেছিলাম।

    তুই কেমন করে জানিস চিনে নাই?

    চিনলে এতক্ষণে সবাই বাড়িতে চলে আসত না?

    আনোয়ার মাথা নাড়ল, বলল, সেটা ঠিক। কেউ বাড়িতে আসে নাই।

    তারা চিনে নাই। খালি বলছিল জিনের বাচ্চা! জিনের বাচ্চা কেন বলছিল খালা?

    তোর পাখা দেখে। মানুষের পিঠে কি পাখা থাকে?

    খালা।

    উঁ।

    আমি কি আসলেই জিনের বাচ্চা?

    ধুর বোকা, তুই কেন জিনের বাচ্চা হবি?

    তাহলে আমার পাখা কেন আছে?

    আমি এত কিছু বুঝি না, তুই ঘুমা। আনোয়ারা একটু ভেবে বলল, আর শোন।

    কী খালা।

    সকাল বেলা ঘর থেকে বের হবি না। যদি দেখি লোকজন আসছে আমি তাদের আটকে রাখব, তুই পিছন দরজা দিয়ে বের হয়ে পালিয়ে যাবি।

    ঠিক আছে খালা।

    আনোয়ারা হতাশার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল, জহুর যখন আসবে, শুনে কী রাগ করবে!

     

    জহুর শুনে রাগ করল না, শুনে সে খুব ভয় পেল। ঘটনাটার কথা অবশ্যি সে আনোয়ারার মুখে শোনেনি। ঘাটে নৌকা থেকে নেমে সে যখন মাত্র তীরে উঠেছে তখনই একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ জহুরকে বলল, জহুর শুনেছ ঘটনা?

    কী ঘটনা।

    সদর থেকে আক্কাস আর জালাল আসছিল। রাত্রি বেলা। তোমার। বাড়ির সামনে যে মাঠ সেই মাঠে জিন দেখেছে।

    জিন?

    হ্যাঁ। এই বড় বড় দাত, চোখের মাঝে আগুন। সাপের মতো লেজ।

    জহুর হাসি গোপন করে বলল, তাই নাকি?

    হ্যাঁ। সেই মাঝরাত্রে কী হইচই, লাঠিসোটা নিয়ে আমরা সবাই বের হয়েছিলাম।

    জহুর বলল, জিনটাকে ধরেছ?

    নাহ্ ধরা যায়নি।

    কেন ধরা গেল না?

    আকাশে উড়ে গেছে।

    হঠাৎ করে জহুর ভেতরে ভেতরে চমকে উঠল, কিন্তু বাইরে সে সেটা প্রকাশ হতে দিল না। শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল, উড়ে গেছে?

    হ্যাঁ।

    কেমন করে উড়ে গেল?

    আমি তো নিজের চোখে দেখি নাই। আক্কাস আর জালাল দেখেছে। পাখা বের করে উড়ে চলে গেছে।

    জহুর নিঃশ্বাস বন্ধ করে জিজ্ঞেস করল, পাখা?

    হ্যাঁ। পাখা আছে। বড় বড় পাখির মতোন পাখা।

    জহুর কিছু বলল না, কিন্তু তার বুকের মাঝে হৃৎপিণ্ড ধ্বক ধ্বক করতে লাগল। মধ্যবয়স্ক মানুষটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমার কী মনে হয় জান জহুর?

    কী?

    নবীগঞ্জের পীর সাহেবরে এনে এই চরে একটা খতম পড়ানো দরকার।

    জহুর মাথা নাড়ল, বলল, হুঁ।

    খানিকটা সামনে এসে দেখল একটা ছোট জটলা, জহুর দাঁড়িয়ে যায় এবং শুনতে পায় সেখানেও জিনের বাচ্চাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এখানে জিনের বাচ্চার বর্ণনা এত ভয়ঙ্কর নয়, গায়ের রং ধবধবে সাদা, শরীরে একটা সুতাও নেই, মাথায় ছোট ছোট দুইটা শিং। জহুর আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার পর আরো একজনের সাথে দেখা হলো, সেও জহুরকে জিনের বাচ্চার গল্প শোনাল, তার ভাষ্য অনুযায়ী জিনের বাচ্চা চিকন গলায় একটা গান গাইছিল। আরবি ভাষার গান।

    বাড়ি আসতে আসতে জহুর অনেকগুলো বর্ণনা শুনে এল, প্রত্যেকটা বর্ণনা ভিন্ন ভিন্ন, তবে সবার মাঝে একটা বিষয়ে মিল আছে। যে মূর্তিটি দেখা গেছে তার পাখির মতো বড় বড় দুটি পাখা আছে এবং সে পাখা দুটি ঝাঁপটিয়ে আকাশে উড়ে গেছে।

    বাড়ি এসে জহুর সোজাসুজি আনোয়ারার সাথে দেখা করল। আনোয়ারা ফিসফিস করে বলল, খবর শুনেছ জহুর?

    জহুর নিঃশ্বাস ফেলে বলল, হ্যাঁ। শুনেছি।

    আনোয়ারা গলা নামিয়ে বলল, কপাল ভালো কেউ চিনতে পারে নাই। চিনতে পারলে যে কী বিপদ হতো!

    জহুর এদিক-সেদিক তাকিয়ে বলল, চিনতে না পারলে কী হবে আনোয়ারা বুবু। বিপদ যেটা হবার সেটা কিন্তু হয়েছে।

    আনোয়ারা শুকনো মুখে বলল, কী বিপদ?

    চারিদিকে খবর ছড়িয়ে গেছে যে এইখানে কোনো একজন আকাশে উড়ে। সেই খবর আস্তে আস্তে আরো দূরে যাবে। গ্রামের মানুষ ভাবছে এইটা জিনের বাচ্চা। কিন্তু যারা বুলবুলকে এত দিন ধরে খুঁজছে তারা ঠিকই বুঝবে এইটা জিনের বাচ্চা না। তারা তখন বুলবুলকে ধরে নিতে আসবে।

    সর্বনাশ!

    হ্যাঁ। সর্বনাশ।

    এখন কী হবে?

    জানি না। সাবধান থাকতে হবে। খুব সাবধান। এই চরে বাইরের মানুষকে দেখলেই কিন্তু সাবধান।

    আনোয়ারা ভয়ার্ত মুখে দাওয়ায় বসে বলল, জহুর।

    বল আনোয়ারা বুবু।

    তুমি বুলবুলকে একটু বুঝিয়ে বল কী হলে কী করতে হবে, একটু সাবধান করে দিও।

    দিব।

    আহারে। সোনা বাচ্চাটা আমার। আনোয়ারা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, এত বড় পৃথিবী, কিন্তু তার শান্তিতে থাকার কোনো জায়গা নাই।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভূত সমগ্র – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article নাট বল্টু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }