Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র ৫ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প1035 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৩.২ গভীর রাতে ইঞ্জিনের একটা চাপা শব্দ

    গভীর রাতে ইঞ্জিনের একটা চাপা শব্দে বুলবুলের ঘুম ভেঙে গেল। মাঝে মাঝে এ রকম হয়, কোনো একটা ট্রলার, কোনো একটা স্পিডবোট কাছাকাছি কোনো একটা নদী দিয়ে যায়, সে তার ঘরে বসে তার শব্দ শুনতে পায়। বিশাল একটা গাছের একেবারে উপরে তার ঘর। তাই অনেক দূর থেকে শব্দ ভেসে আসে। শব্দগুলো বাড়ে-কমে, তারপর একসময় ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ হতে হতে দূরে মিলিয়ে যায়।

    কিন্তু ইঞ্জিনের এই শব্দটা ক্ষীণ হতে হতে মিলিয়ে গেল না। শব্দটা বাড়তে থাকে, কমতে থাকে এবং ধীরে ধীরে কাছাকাছি এগিয়ে আসতে থাকে। বুলবুলের একবার মনে হলো সে উড়ে গিয়ে দেখে আসে কীসের শব্দ, কোথায় আসছে কিন্তু শেষপর্যন্ত রাতের অন্ধকারে তার আর বের হওয়ার ইচ্ছে করল না।

    যে ইঞ্জিনের শব্দ শুনে বুলবুলের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল সেটি আসছিল একটা মাঝারি আকারের লঞ্চ থেকে। লঞ্চটি ভাড়া করেছে পাখি-বিশেষজ্ঞ ডক্টর আশরাফ। সুন্দরবনের পাখি বৈচিত্র্যের একটা পরিসংখ্যান নেয়ার জন্যে সে তার ছোট একটা দল নিয়ে এসেছে। দলের মাঝে বেমানান সদস্যটি হচ্ছে ডক্টর আশরাফের চৌদ্দ বছরের মেয়ে মিথিলা।

    গভীর রাতে বুলবুল যখন একটা ইঞ্জিনের মৃদু শব্দ শুনতে পাচ্ছিল তখন এই লঞ্চের বড় কেবিনটাতে একটা ছোট নাটক অভিনীত হচ্ছিল, নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রী ডক্টর আশরাফ আর মিথিলা, বাবা আর মেয়ে।

    ডক্টর আশরাফ ক্রুদ্ধ চোখে তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলছিল, তোর হয়েছেটা কী? সারাক্ষণ মুখটা ভোঁতা করে বসে থাকিস?।

    মিথিলা বাবার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে বলল, আই অ্যাম সরি যে খোদা আমাকে এমন ভেঁত মুখ দিয়ে জন্ম দিয়েছে।

    মানুষ ভোঁতা মুখ নিয়ে জন্ম নেয় না। মানুষ মুখ ভোঁতা করে রাখে।

    আব্বু, আমি এখানে আসতে চাইনি, তুমি আমাকে জোর করে। এনেছ। এখন তুমি বলছ আমাকে জোর করে আনন্দ পেতে হবে?

    ডক্টর আশরাফ চোখ কপালে তুলে বলল, জোর করে? জোর করে কেন হবে? সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। পৃথিবীর মানুষ এটাকে এক নজর দেখার সুযোগ পেলে কৃতার্থ হয়ে যায়

    আব্বু! তুমি অনেক বড় বৈজ্ঞানিক হতে পার কিন্তু তুমি খুব সোজা সোজা কিছু জিনিস জান না।

    কী জিনিস জানি না?

    একা একা কেউ কোনো কিছু উপভোগ করতে পারে না। আমি এখানে একা। একেবারে একা।

    একী? লঞ্চভর্তি মানুষ। আমার স্টুডেন্ট রিসার্চার—

    হ্যাঁ, লঞ্চভর্তি মানুষ—তোমার স্টুডেন্ট রিসার্চার সবাই তোমার কথায় উঠে বসে। তুমি তাদের বেতন দাও, তারা তোমার চাকরি করে। তোমার রেফারেন্স পেলে তারা বড় ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডমিশন পায়। সারাক্ষণ তারা তোমার তোয়াজ করে, তোমাকে খুশি করার জন্যে আমাকেও তোয়াজ করে। এই রকম মানুষদের নিয়ে তুমি খুশি আছ, খুব ভালো কথা। আমাকে খুশি হতে বলো না।

    ডক্টর আশরাফ কঠিন মুখে বলল, তোদের সমস্যা কি জানিস? তোরা বেশি বুঝিস।

    আই অ্যাম সরি আব্বু—কিন্তু আমরা বেশি বুঝি না। আমাদের যেটুকু বোঝার কথা ঠিক ততটুকু বুঝি। কিন্তু তোমাদের সমস্যা কি জানো? তোমরা আমাদের কিছুই বোঝ না। তোমাদের ধারণা তোমরা যেটা বোঝ সেটাই ঠিক আর আমাদের সবাইকেই সেটা বুঝতে হবে।

    কখন আমি সেটা করেছি?

    এই যে তুমি ধরেই নিয়েছ, এই লঞ্চে করে এক গাদা মানুষের সাথে এই জঙ্গলে এলে আমার খুব আনন্দ পেতে হবে! আই অ্যাম সরি আব্বু, আমি আনন্দ পাচ্ছি না। কিন্তু তুমি যদি চাও এখন থেকে আমি মুখে আনন্দ আনন্দ একটা ভাব করে রাখব। কথা শেষ করে মিথিলা তার মুখে একটা কৃত্রিম হাসির ভান করল।

    ডক্টর আশরাফের ইচ্ছে করল মেয়ের গালে একটা চড় দিয়ে তার মুখের এই টিটকারির হাসিটি মুছে দেয়। কিন্তু সে অনেক কষ্ট করে নিজেকে শান্ত রাখল। মিথিলার মা মারা যাওয়ার পর সে তার মেয়েটিকে ঠিক করে মানুষ করতে পারেনি। মেয়েটি উদ্ধৃত দুর্বীনিত হয়ে বড় হচ্ছে। শুধু যে উদ্ধত আর দুর্বীনিত তা নয়, মিথিলা অসম্ভব আবেগপ্রবণ। অত্যন্ত সহজ সাধারণ কথায় সে রেগে ওঠে, বিচলিত হয়ে যায়। চোখ থেকে পানি বের হয়ে আসে। নিজের জগতের বাইরে যে একটা জগৎ থাকতে পারে সেটা সে জানে না, জানার কোনো আগ্রহও নেই। ডক্টর আশরাফ মাঝে মাঝে তার স্ত্রী সুলতানার ওপর এক ধরনের ক্ষোভ অনুভব করে, কেন এত অল্প বয়সে এ রকম একটি মেয়েকে রেখে মরে গেল? ডক্টর আশরাফ নিজের কাজকর্ম গবেষণা নিয়ে নিজে ব্যস্ত থেকেছে, মেয়েটি কেমন করে বড় হচ্ছে সেটি লক্ষ করেনি। যখন লক্ষ করেছে তখন দেরি হয়ে গেছে। এখন এই মেয়েটিকে কোনো দিন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে মনে হয় না।

    রাত্রি বেলা লঞ্চের কেবিনে নিজের ঘরে মিথিলা বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেল। চৌদ্দ বছরের একটি মেয়ের জগৎটি খুব বিচিত্র, খুব নিঃসঙ্গ এবং একাকী।

     

    পরের দিনটি বুলবুল শুরু করল খুব সতর্কভাবে। আকাশে না উড়ে সে বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে গেল এবং গাছের আড়ালে লুকিয়ে থেকে দেখল নদীর মাঝামাঝি একটা লঞ্চ দাঁড়িয়ে আছে। বুলবুল বহুদিন লঞ্চ নৌকা কিছু দেখেনি—সে এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে। লঞ্চের ভেতর মানুষগুলো ব্যস্ত হয়ে হাঁটাহাঁটি করছে, বুলবুল একসময় দেখল মানুষগুলো একটা নৌকায় করে ভীরের দিকে আসছে। নৌকাটা তীরে পৌঁছানোর আগেই বুলবুল বনের আরো গভীরে সরে যাচ্ছিল, তখন সে দেখতে পেল প্রায় তার বয়সী একটা মেয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এত দূর থেকে ভালো করে চেহারা দেখা যায় না কিন্তু তার দাঁড়ানোর। ভঙ্গিটির মাঝে এক ধরনের দুঃখী দুঃখী ভাব রয়েছে। বুলবুল এক ধরনের। বিস্ময় নিয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে।

    ডক্টর আশরাফের দলটি নদীর তীর ঘেঁষে হেঁটে হেঁটে সারাটি দিন বনের ভেতর ঘুরে বেড়াল। তারা পাখির ছবি তুলল, ভিডিও করল, কাগজে নোট নিল। বাইনোকুলারে তারা দূর থেকে পাখিগুলোকে লক্ষ করল, তাদের সংখ্যা গুনল, পাখির বাসা খুঁজে বের করার চেষ্টা করল, তাদের খাবার পরীক্ষা করে দেখল। মাঝে মাঝেই তারা দাঁড়িয়ে গেল এবং নিজেদের ভেতর উত্তপ্ত আলোচনা করতে লাগল। দলটার সাথে দুজন মানুষ ছিল রাইফেল নিয়ে, তারা চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছিল, নদীর তীরে বাঘের পায়ের ছাপ দেখেছে, কখন কী ঘটে যায় কেউ বলতে পারে না।

    দলটির কেউ অবশ্যি টের পেল না, দূর থেকে আরো অনেক সতর্ক হয়ে তাদের ওপর চোখ রাখছিল বুলবুল। ডক্টর আশরাফ কিংবা তার দলের অন্য কেউ যদি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারত যে এখানে সতেরো বছরের একটি কিশোর থাকে, দুই পাখা মেলে সে আকাশে উড়ে যেতে পারে তাহলে নিশ্চিতভাবেই তারা তাদের ক্যামেরা নোটবই বাইনোকুলার সব কিছু ছুড়ে ফেলে শুধু তাকে এক নজর দেখার জন্যে ছুটে আসত।

    বুলবুলের আজকের দিনটি হলো খাপছাড়া, একদিকে দূর থেকে এই দলটির ওপর চোখ রাখছে, আবার সুযোগ পেলে নদীর তীরে গিয়ে লঞ্চের পাশে দাঁড়াচ্ছে, ঠিক কী কারণ জানা নেই লঞ্চের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকা উদাসী মেয়েটিকে আরো এক নজর দেখার জন্যে তার এক ধরনের কৌতূহল হচ্ছিল। কত দিন সে কোনো মানুষ দেখে না, কত দিন সে কোনো মানুষের সাথে কথা বলে না!

     

    সূর্য ড়ুবে যাওয়ার অনেক আগেই পাখি পর্যবেক্ষকরা লঞ্চে ফিরে গেল। বুলবুল তখন কিছু একটা খেয়ে নেয়-সারা দিনের উত্তেজনায় তার খাওয়ার কথাই মনে ছিল না। সূর্য ড়ুবে যাওয়ার পর সে নদীর তীরে একটা উঁচু গাছে উঠে বসে, লঞ্চটাকে এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায়, অস্পষ্টভাবে মানুষের কথাবার্তা, হাসাহাসি শোনা যায়।

    রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে লঞ্চের মানুষগুলোর কথাবার্তা কমতে থাকে এবং শেষপর্যন্ত এক সময় নীরব হয়ে আসে। বুলবুল কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল তারপর খুব সাবধানে ডানা ঝাঁপটিয়ে সে উড়তে থাকে, প্রথমে অনেক দূর দিয়ে বৃত্তাকারে ঘুরে আসে, তারপর বৃত্তটা ছোট করে, খুব সাবধানে উড়ে উড়ে সে লঞ্চের ছাদে নামল। কয়েক মুহূর্ত সে চুপচাপ বসে থাকে, যখন নিশ্চিত হলো যে কেউ তাকে দেখে ফেলেনি তখন সে খুব সাবধানে ছাদ থেকে তার মাথার্টি নিচে দিয়ে দেখার চেষ্টা করে। ঠিক কী দেখার চেষ্টা করবে নিজেই বুঝতে পারছিল না, তখন সে উত্তেজিত গলার স্বর শুনতে পেল। বুলবুল সরে গিয়ে যে কেবিন থেকে উত্তেজিত স্বর ভেসে আসছে সেখানে উঁকি দিয়ে ডক্টর আশরাফকে দেখতে পেল। ডক্টর আশরাফ হাত নেড়ে বলছে, আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, একজন মানুষ কিছু

    করে বিছানায় শুয়ে কেমন করে দিন কাটাতে পারে।

    বুলবুল শুনতে পেল কেবিনের অন্য পাশ থেকে মিথিলা বলছে, আমাকে আমার মতো থাকতে দাও আব্বু।

    মিথিলার গলার স্বরে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ। বুলবুল একটু সরে গিয়ে মেয়েটিকে দেখার চেষ্টা করল। আজ ভোরে সে এই মেয়েটিকে লঞ্চের রেলিং ধরে বিষণ্ণ মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। ডক্টর আশরাফ কঠিন গলায় বলল, আমি তো তোকে তোর মতোই থাকতে দিচ্ছি।

    না আব্বু। তুমি আমাকে আমার মতো থাকতে দিচ্ছ না। তুমি। আমাকে বিরক্ত করছ।

    মিথিলার কথা শুনে ডক্টর আশরাফ কেমন যেন ক্ষেপে গেল, চিৎকার করে বলল, আমি বিরক্ত করছি? যদি শুনতে পাই আমার মহারানী মেয়ে সারা দিন না খেয়ে বিছানায় শুয়ে ছিল, আমি যদি সেই খবর নিতে আসি, তাহলে সেটা বিরক্ত করা হয়?

    হ্যাঁ আব্বু হয়। তোমার এটা আগে চিন্তা করা উচিত ছিল, আমার যখন খেতে ইচ্ছে করে না, আমি তখন খাই না। বাসায় তুমি সেটা জান না—কারণ তুমি বাসায় থাকো না।

    ডক্টর আশরাফ কী উত্তর দেবে বুঝতে পারল না, তারপর থমথমে মুখে বলল, আমি কোনো টং দেখতে চাই না। খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর।

    আমার খিদে নেই।

    একজন মানুষ সারা দিন না খেয়ে থাকলে তার খিদে থাকে না কেমন করে?

    আমি সেটা জানি না। কিন্তু আমার খিদে নেই।

    আমাকে রাগাবি না, মিথিলা। আমি অনেক সহ্য করেছি।

    কেন আব্বু? তুমি কী করবে? তুমি কি আমাকে মারবে নাকি?

    দিন রাত মুখটাকে এমন ভেঁতা করে রাখবি—তোকে তো মারাই উচিত। কখনো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারাটাকে একবার দেখেছিস?

    মিথিলা ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, আই অ্যাম সরি আব্বু, আমার চেহারাটা খারাপ। আম্মু তো মরে গেছে—তোমার আর ঝামেলা নাই। তোমার সুন্দরী একজন কলিগকে বিয়ে করো, তোমার বাচ্চাগুলোর চেহারা যেন ভালো হয়।,

    কী বললি? কী বললি তুই? বলে ডক্টর আশিরাফ এগিয়ে গিয়ে তার মেয়ের গালে প্রচণ্ড জোরে একটা চড় মেরে বলল, তোর এত বড় সাহস? তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলিস?

    মিথিলা প্রস্তুত ছিল না, সে প্রায় হুঁমড়ি খেয়ে পড়ে গেল, কোনোমতে সে উঠে দাঁড়িয়ে এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে তার বাবার দিকে তাকায়। সে যতটুকু রাগ হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি অবাক হয়েছে। যতটুকু অবাক হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি দুঃখ পেয়েছে। তাকে দেখে মনে হয় সে যেন এখনো ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছে না। মিথিলা বিচিত্র একটা দৃষ্টিতে তার বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর ফিসফিস করে বলল, তুমি আমাকে মারতে পারলে আব্বু?

    ডক্টর আশরাফ কোনো কথা না বলে হিংস্র চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। মিথিলা এবার ফিসফিস করে বলল, ঠিক আছে আব্বু। গুড বাই।

    ডক্টর অশিরাফ তখনো রাগে কাঁপছিল, সে কেবিন থেকে বের হয়ে নিজের কেবিনে গিয়ে ঢুকে সশব্দে তার দরজা বন্ধ করে দিল।

    বুলবুল নিজের ভেতরে এক ধরনের অপরাধবোধ অনুভব করে, তার মনে হতে থাকে এভাবে লুকিয়ে বাবা আর মেয়ের এ রকম ব্যক্তিগত একটা ঘটনা তার দেখা উচিত হয়নি। কত দিন সে কোনো মানুষ দেখে না, লুকিয়ে সে তাদের দেখতে এসেছিল। কিন্তু তাই বলে মানুষের এ রকম ব্যবহার? বাবার সাথে মেয়ের? মেয়ের সাথে বাবার?

    বুলবুলের মনটা খারাপ হয়ে যায়, সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, ঠিক যখন সে উড়ে যাবে তখন হঠাৎ করে নিচে দরজা খোলার শব্দ হলো, বুলবুল তখন মাথা নিচু করে তাকালো। দেখতে পেল মিথিলা তার কেবিন থেকে বের হয়ে এসেছে, ওপর থেকে তার মুখটা দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু তার হাঁটার ভঙ্গিটুকু স্বাভাবিক নয়। অনেকটা অপ্রকৃতিস্থর মতো সামনে হেঁটে যায়। কয়েক মুহূর্ত রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর হঠাৎ সে রেলিংয়ের ওপর উঠে দাঁড়ায়, তারপর কিছু বোঝার আগেই সে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

    বুলবুল কিছু চিন্তা করার সময় পেল না, সে ঠিক একই গতিতে ছাদ। থেকে লাফিয়ে পড়ল এবং মির্থিলা নদীর পানি স্পর্শ করার আগের মুহূর্তে তাকে খপ করে ধরে ফেলল। তারপর তার বিশাল ডানা ঝাঁপটে সে উড়ে আসে, বৃত্তাকারে ঘুরে সে লঞ্চের ছাদে ফিরে এসে সাবধানে তাকে ছাদে নামিয়ে দিল।

    মিথিলার কিছুক্ষণ লাগল বুঝতে এবং শেষ পর্যন্ত সে বুঝতে পারে যে আসলে সে পানিতে ড়ুবে যায়নি, একেবারে শেষ মুহূর্তে তাকে কেউ ধরে ফেলেছে, তাকে নিরাপদে ছাদে নামিয়ে দিয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব মিথিলা কোনোভাবেই বুঝতে পারছিল না, সে হকচকিত হয়ে তখনো তাকিয়ে ছিল। জোছনার আলোতে সে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে, সামনে বিস্ময়কর একটি মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে, মানুষের মতো কিন্তু মানুষ নয়—কারণ সে জোছনার আলোতে স্পষ্ট দেখতে পারছে তার বিশাল দুটি পাখা। মিথিলা কয়েকবার চেষ্টা করে বলল, তুমি কে?

    বুলবুল কোনো উত্তর দিল না। সে কী উত্তর দেবে? সে কী বলবে, আমার নাম বুলবুল? আমি একই সাথে মানুষ এবং পাখি। আমি এই বনে একা একা উড়ে বেড়াই? সে কেমন করে এই মেয়েটিকে বলবে সে কে?

    মিথিলা আবার জিজ্ঞেস করল, তুমি কে? তুমি কেন আমাকে বাঁচিয়েছ?

    বুলবুল তখনো নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে। মিথিলা আরেকটু এগিয়ে এসে বুলবুলকে আরেকটু কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করে। তারপর ফিসফিস করে বলে, তুমি কি মানুষ?

    বুলবুল এবার একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি জানি না।

    তুমি জান না?

    বুলবুল মাথা নাড়ে। না।

    মিথিলা তার হাতটা সামনে এগিয়ে দিয়ে বুলবুলকে স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করল, তুমি কেন আমাকে বাঁচিয়েছ?

    আমার মা একদিন তোমার মতো পানিতে লাফ দিয়েছিল। তখন একজন তাকে বাঁচিয়েছিল, সেই জন্যে আমি এখনো আছি। বুলবুল নিচু গলায় বলল, একদিন তুমিও কারো মা হবে। বেঁচে না থাকলে কেমন করে হবে?

    মিথিলা অবাক হয়ে এই বিস্ময়কর ছায়ামূর্তিটির দিকে তাকিয়ে থাকে। গলার স্বর একজন কম বয়সী কিশোরের মতো। কিছুক্ষণ চেষ্টা করে বলল, আমাকে বাঁচানোর জন্যে তোমাকে ধন্যবাদ।

    বুলবুল কোনো কথা না বলে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে। মিথিলা নিচু গলায় বলে, এর পরের বার কি তুমি আমাকে বাঁচাবে?

    বুলবুল হাসির মতো শব্দ করল, বলল, এরপরের বার তুমি কখনো এটা করবে না। কখনো না।

    কেন না?

    তাহলে আমি খুব কষ্ট পাব।

    কেন তুমি কষ্ট পাবে? তুমি আগে আমাকে কখনো দেখো নাই।

    বড় হওয়ার পর আমি কোনো মানুষ দেখি নাই। তুমি প্রথম। তুমি আমাকে কষ্ট দিয়ো না। তুমি যখন চলে যাবে তখন আমি তোমার কথা মনে রাখব।

    ঠিক এ রকম সময় ডক্টর আশরাফ তার কেবিন থেকে বের হয়ে এল, মেয়ের গায়ে হাত তোলার আগের মুহূর্তে তার ভেতর ছিল ভয়ঙ্কর ক্রোধ। এখন ক্রোধের বদলে সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে তীব্র অপরাধবোধ। অভিমানী মেয়ে রাগে-দুঃখে কিছু একটা করে ফেললে কী হবে? সে মেয়ের কেবিনের সামনে গিয়ে ডাকল, মথিলা

    কেবিনের দরজা হাট করে খোলা, ভেতরে কেউ নেই, হঠাৎ করে তার বুকটা ধ্বক করে ওঠে, সে পাগলের মতো বের হয়ে আসে, এদিক-সেদিক তাকিয়ে চিৎকার করে ডাকে, মিথিলা! মিথিলা-মা।

    লঞ্চের ছাদে বুলবুল হঠাৎ চঞ্চল হয়ে ওঠে, মিথিলাকে ফিসফিস করে বলল, আমি যাই! তুমি আমার কথা কাউকে বলো না!

    তারপর তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার বিশাল দুটি ডানা মেলে সে আকাশে উড়ে গেল। মিথিলা অবাক হয়ে দেখল বিশাল একটা পাখির মতো ডানা মেলে একজন আকাশে উড়ে যাচ্ছে, চাদের আলোতে তাকে কী বিচিত্ৰই না দেখাচ্ছে।

    নিচে থেকে সে আবার তার বাবার ব্যাকুল গলার আওয়াজ শুনতে পেল, মিথিলা–মিথিলা–

    মিথিলা লঞ্চের ছাদ থেকে বলল, বাবা! এই যে আমি।

    কোথায়?

    লঞ্চের ছাদে।

    ডক্টর আশরাফ সিড়ি বেয়ে দ্রুত উপরে উঠে আসে, দেখে জোছনার আলোতে তার মেয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলল, মিথিলা মা, তুই এখানে?

    হ্যাঁ আব্বু।

    হঠাৎ করে মনে হলো তুই তুই—তুই বুঝি—

    আমি কী?

    না কিছু না। ডক্টর আশরাফ মেয়েকে নিজের কাছে টেনে এনে বলল, আই অ্যাম সরি মা, আমি তোর গায়ে হাত তুলেছি। তুই আমাকে মাপ করে দে।

    মিথিলা বলল, ছিঃ! আব্বু! তুমি কী বলছ?

    ডক্টর আশরাফ নরম গলায় বলল, আর কখনো হবে না মা। তোকে আমি কথা দিচ্ছি—

    মিথিলা নিচু গলায় বলল, আমিও কথা দিচ্ছি।

    কী কথা দিচ্ছিস?

    আমি আর কখনো রাগ করব না। মন খারাপ করব না—

    সত্যি?

    হ্যাঁ সত্যি।

    আমি খুব বোকা একটা মেয়ে আব্বু। আমি আর বোকা থাকব না আব্বু।

    ডক্টর আশরাফ অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকাল, বলল, কী হয়েছে তোর মিথিলা?

    জানি না আব্ব আমার কী হয়েছে। কিন্তু তুমি ঠিকই বলেছ আমার কিছু একটা হয়েছে। আমার কী মনে হচ্ছে জান?

    কী মনে হচ্ছে?

    মনে হচ্ছে আমি আর ছোট মেয়ে না। মনে হচ্ছে আমি বড় হয়ে গেছি। অনেক বড় হয়ে গেছি।

    ডক্টর আশরাফ অবাক হয়ে তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভূত সমগ্র – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article নাট বল্টু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }