Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশন সমগ্র ৫ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প1035 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৮. ক্রিনিটি জিজ্ঞেস করল

    ক্রিনিটি জিজ্ঞেস করল, মেয়েটি তোমাকে কী জিজ্ঞেস করেছে?

    আমি তাকে বিয়ে করব কী না।

    তুমি কী বলেছ?

    আমি রাজি হয়েছি।

    ক্রিনিটি তার কপোট্রনে একধরনের চাপ অনুভব করে। সে চাপটি কমে। যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল, তারপর বলল, তুমি মেয়েটির নাম জান না, কিন্তু তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছ?

    সারা পৃথিবীতে যদি শুধু আমরা দুজন থাকি তাহলে আমাদের দুজনকে বিয়ে করতে হবে না?

    সম্ভবত তোমার কথা সত্যি।

    তাহলে তুমি আমার কথা শুনে এতো অবাক হচ্ছ কেন?

    আমি মোটেও অবাক হচ্ছি না। আমি তৃতীয় মাত্রার রোবট, আমার অবাক হবার ক্ষমতা নেই। আমি শুধু নিশ্চিতভাবে তোমাদের ভেতরে কী কথাবার্তা হয়েছে সেটি জানতে চেয়েছি।

    আমি সেটি তোমাকে বলেছি।

    হ্যাঁ বলেছ।

    নিকি গম্ভীরমুখে বলল, তাহলে কি তুমি এখন আমাকে বলবে বিয়ে মানে কী?

    পৃথিবীতে যখন মানুষেরা বেঁচে ছিল তখন একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা একসাথে থাকার পরিকল্পনা করত। তাদের দুজনের একসাথে থাকার শুরু করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াটার নাম বিয়ে।

    নিকি বিষয়টা ঠিক পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারল না, তারপরেও সে এটি বুঝে ফেলার ভান করে বলল, তাহলে আমার মা কী বিয়ে করেছিল?

    হ্যাঁ করেছিল। তোমার বাবার সাথে তোমার মায়ের বিয়ে হয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে তোমার বাবা তোমার মা-কে ছেড়ে চলে যায়। তোমার মা তখন উষ্ণ অঞ্চলের এই ছোট দ্বীপটিতে চলে যায়। গৃহস্থালি কাজে সাহায্যের জন্যে আমাকে নিয়ে আসে।

    নিকি ব্যাপারটা বুঝতে পারছিল না, বলল, আমার বাবা কেন আমার মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল? এটি অত্যন্ত বিচিত্র ব্যাপার।

    ক্রিনিটি বলল, মানুষ অত্যন্ত বিচিত্র একটি প্রাণী, আমি সেটি ব্যাখ্যা। করতে পারব না। আমি কখনও তাদের চরিত্র ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি না।

    কিন্তু কেন আমার বাবা আমার মা-কে ছেড়ে চলে গেল?

    আমি তোমাকে বলেছি সেটি ব্যাখ্যা করতে পারব না। মানুষের মস্তিষ্ক অত্যন্ত জটিল, সেটি কিভাবে কাজ করে আমাদের মতো তৃতীয় মাত্রার রোবট সেটি অনুমান পর্যন্ত করতে পারি না। দুজন মানুষ যখন পাশাপাশি থাকে তখন। তাদের পরস্পরের পছন্দ অপছন্দ অত্যন্ত সূক্ষ্ম একটি পর্যায়ে চলে যায়। সেটি অত্যন্ত ভঙ্গুর, অত্যন্ত নাজুক অত্যন্ত সংবেদনশীল।

    নিকি ক্রিনিটির কথাগুলো বুঝতে পারল না। খানিকক্ষণ কিছু একটি ভেবে বলল, আমি আর ওই মেয়েটা যদি বিয়ে করি তাহলে আমি কী কখনো তাকে ছেড়ে চলে যাব?

    সেটি এই মুহূর্তে বলা খুব কঠিন। আমি তোমাকে বলেছি মানুষ অত্যন্ত জটিল একটি প্রাণী।।

    নিকি কিছুক্ষণ ক্রিনিটির দিকে তাকিয়ে বলল, ক্রিনিটি।

    বল।

    তুমি তো মানুষ নও। তুমি হচ্ছ রোবট।

    হ্যাঁ, আমি রোবট।

    তার মানে তুমি মানুষের মতো জটিল নও?

    না, আমি মানুষের মতো জটিল না।

    নিকি এবারে ক্লিনিটিকে জড়িয়ে ধরে বলল, তাহলে তুমি কোনোদিন আমাকে ছেড়ে চলে যেও না।

    ক্রিনিটি কপোট্রনে একটি প্রবল চাপ অনুভব করে। এই শিশুটির মা যেরকম অযৌক্তিক কথা বলত এই শিশুটিও সেরকম অযৌক্তিক কথা বলতে শুরু করেছে। ক্রিনিটি কী বলবে বুঝতে পারল না। নিকি ক্রিনিটিকে আরও জোরে চেপে ধরে বলল, বল। বল তুমি আর কোনোদিন আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না।

    ক্রিনিটি বলল, আমি তোমাকে কোনোদিন ছেড়ে চলে যাবো না।

     

    অন্ধকার নেমে আসার পর নিকি বাইভার্বালের এক কোণায় গুটিশুটি মেরে বসে একটি ছোট কৌটা থেকে খাবার খেতে খেতে বলল, এই কৌটার খাবারগুলো খেতে একেবারেই ভালো না।

    ক্রিনিটি বলল, আমি খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারি না। কিন্তু আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি। কৌটার খাবার সম্ভবত তোমাদের ভাষায় বিস্বাদ। কিন্তু তবুও তুমি জোর করে খেয়ে ফেল। তুমি তোমার শরীরের প্রয়োজনীয়

    প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট আর ভিটামিন এখান থেকে পেয়ে যাবে।

    মনে আছে আমরা কী সুন্দর বাইরে আগুন জ্বালিয়ে সেখানে খাবারগুলো ঝলসে ঝলসে গরম করে খেতাম?

    ক্রিনিটি বলল, হ্যাঁ। মনে আছে। কিন্তু এখানে আমরা বাইরে আগুন জ্বালাতে চাই না। আমাদেরকে কেউ দেখে ফেললে আমরা বিপদে পড়ে যাব।

    আমরা যখন আমাদের জায়গায় ফিরে যাব তখন আমরা আবার আগুন জ্বালিয়ে খেতে পারব। তাই না?

    হ্যাঁ।

    আমাদের সাথে তখন ঐ মেয়েটিও থাকবে?

    হ্যাঁ।

    সে যদি আমাদের সাথে যেতে না চায়?

    তাকে রাজী করাতে হবে।

    সে যদি রাজী না হতে চায়?

    তাকে বোঝাতে হবে।

    সে যদি বুঝতে না চায়?

    তাহলে কী করতে হবে আমি এখনো জানি না।

    নিকি একটি নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি যখনই তোমাকে কিছু একটি জিজ্ঞেস করি তখনই তুমি বল যে তুমি কিছু জান না।

    আমি দুঃখিত নিকি। আমি তৃতীয় মাত্রার একটি রোবট। আমার কপোট্রনের ক্ষমতা খুবই সীমিত। আমি সব সমস্যার সমাধান করতে পারি না।

    নিকি ক্রিনিটিকে স্পর্শ করে বলল, তুমি সেটি নিয়ে মন খারাপ করো

    তোমার কপোট্রনের ক্ষমতা কম হলে কী হবে, তুমি আসলে সেটি দিয়েই সবকিছু করতে পার।

    আমাকে সবকিছু করার জন্যে তৈরি করা হয় নি, আমাকে তৈরি করা হয়েছে শুধু তোমাকে সাহায্য করার জন্যে। বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করার জন্যে।

    তুমি সবসময় আমাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করে এসেছ। মনে নেই যখন রোবনগরীতে দুটি রোবট আমাকে ধরে ফেলেছিল তখন তুমি আমাকে রক্ষা করেছিলে?

    হ্যাঁ মনে আছে। কিন্তু কাজটি আমার জন্যে আস্তে আস্তে কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

    কেন ক্রিনিটি?

    কারণ তুমি নিজে নিজে অনেক সময় অনেকগুলো কাজ কর যেটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যেটি খুবই বিপজ্জনক। তুমি হয়তো না বুঝে করে ফেল, কিংবা হয়তো মানুষ সবসময় এরকম করে। তখন আমার কিছু করার থাকে না।

    ক্রিনিটি, আমি কখন সেটি করেছি?

    তুমি যখন হদে ড়ুব দিয়ে দেয়ালের গর্ত দিয়ে অন্যপাশে চলে যাবার চেষ্টা করেছিলে, সেটি ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক কাজ। গর্তের মাঝে তুমি আটকে গিয়েছিলে। যদি সেখান থেকে ছুটে আসতে তোমার আর একটুও দেরি হতো তা হলেই তোমাকে কেউ রক্ষা করতে পারতো না।

    নিকি কোনো কথা না বলে একটু অপরাধীর মতো মুখ করে ক্রিনিটির দিকে তাকিয়ে রইল। ক্রিনিটি বলল, আমি তোমাকে বলেছি সতর্ক থাকার জন্যে কিন্তু আমার ধারণা তুমি আবার বিচিত্র কিছু করে ফেলবে। কাজেই তোমাকে কিছু ব্যাপার শিখিয়ে দিই।

    নিকির চোখ আগ্রহে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, সে জিজ্ঞেস করল, কী শিখিয়ে দেবে?

    ক্রিনিটি ছোট একটা ব্যাগ টেনে নিয়ে বলল, এই যে ব্যাগটা দেখছ এর মাঝে বেঁচে থাকার কিছু সরঞ্জাম আছে। হাত দিয়ে ভেতর থেকে প্রথমে যেটি বের করল সেটি হচ্ছে একটি চাকু। সেটি দেখিয়ে বলল, এটি হচ্ছে একটি চাকু, এর আটটা ব্লেড। প্রত্যেকটা ব্লেড দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করা যায় কিন্তু সেটি ব্যবহার করা জানতে হয়। আমি তোমাকে এখন এটা দেখাচ্ছি, কিন্তু আশা করছি ব্যবহার করতে শেখার আগে তুমি এটিতে হাত দেবে না।

    নিকি বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়ল। ক্রিনিটি আবার ব্যাগের ভেতর হাত দিয়ে ছোট একটি টিউব বের করে বলল, এই ব্যাগের ভেতর এটি হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ংকর একটি জিনিস।

    নিকি জানতে চাইল, কি জিনিস?

    এটি একটি ইনফ্রারেড লেজার। মানুষ খালি চোখে এর আলো দেখতে পায় না, আমরা পারি। এই লেজারের ঠিক মাথায় ইনফ্রারেড আলোটা ফোকাস হয়। সেটি এতো তীব্র যে এটি দিয়ে দুই ইঞ্চি পুরু ইস্পাতের প্লেট কেটে ফেলা যায়। তবে ছোট নিউক্লিয়ার ব্যাটারি চার্জ চলে গেলেই এটির কাজ শেষ। ক্রিনিটি তার সামনে লেজারটিকে রেখে বলল, আশা করছি তুমি এখনও এটি ব্যবহার করার চেষ্টা করবে না। একটু ভুলভাবে ব্যবহার করলেই ভয়ঙ্কর বিপদ ঘটতে পারে।

    ক্রিনিটি আবার ব্যাগের ভেতর হাত ঢোকালো এবারে ছোট এ্যালুমিনিয়ামের একটি ট্রিপ বের করে, তার মাঝে ছোট ছোট অনেকগুলো হলুদ রঙের ট্যাবলেট লাগানো। ক্রিনিটি স্ট্রিপটি দেখিয়ে বলল, এর প্রত্যেকটা ট্যাবলেট এক পেট পরিচ্ছন্ন খাওয়া। তোমার যদি কখনো খেতে হয় পুরোটা খাবে না। অর্ধেকটা খাবে। কারণ পুরোটা একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের খাবার তোমার জন্যে অনেক বেশি। বুঝেছ?

    নিকি মাথা নেড়ে জানাল যে সে বুঝেছে। ক্রিনিটি আবার তার ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে ছোট বোতামের মতো একটি যন্ত্র বের করে আনল, নিকিকে দেখিয়ে বলল, এটি হচ্ছে একটি কীপার। কেউ হারিয়ে গেলে এর সুইচটা অন করে দেয় তখন এর ভেতর থেকে নির্দিষ্ট সময় পরপর একটি শক্তিশালী সিগন্যাল বের হয়। তবে এখন আমরা গোপনে কাজ করছি এখন আমাদের এটার প্রয়োজন নেই। ভুলেও এর সুইচটা অন করবে না তাহলে সবাই বুঝে যাবে আমরা কোথায় আছি।

    নিকি বলল, ঠিক আছে।

    ক্রিনিটি আবার তার ব্যাগে হাত দিয়ে একটি ছোট সিলিন্ডারের মতো টিউব বের করল। বলল, এর ভেতরে রয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটার কার্বন ফাইবার। অসম্ভব শক্ত ফাইবার দুই থেকে তিনশো কেজি কিছু একটি ঝোলালেও এটি ছিড়বে না। এক মাথায় রয়েছে ইলেকট্রোম্যাগনেট, স্টিল যা লোহার সাথে আটকে দেওয়া যায়। আমি তোমাকে দেখাচ্ছি কিন্তু তুমি এখনও এটি ব্যবহার করার জন্যে প্রস্তুত হও নি। বুঝেছ?

    নিকি বলল, বুঝেছি।

    ক্রিনিটি আবার তার ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে ছোট একটি প্যাকেট বের করল, নিকিকে দেখিয়ে বলল, এটি কী তুমি কী বলতে পারবে?

    নিকি ব্যাগটা পরীক্ষা করে বলল, এর ভেতরে খুব ছোট ছোট অনেকগুলো বল। মনে হয় একটি বল খেলে পেট ভরে পানি খাওয়া হয়ে যাবে।

    কাছাকাছি বলেছ। এর মাঝে আসলে বাতাস ভরা আছে। মুখে দিয়ে দাতে কামড় দিয়ে এটি ভাঙলে ভেতর থেকে নিঃশ্বাস নেবার মতো বাতাস বের হয়ে আসে। আটাত্তর ভাগ নাইট্রোজেন বাইশ ভাগ অক্সিজেন। পানিতে ড়ুবে থাকতে হলে এটি কাজে লাগে। এটিও ব্যবহার করার আগে একটু শিখতে হয়। পানির নীচে নিঃশ্বাস নিতে হলে নাকটা বন্ধ রাখতে হয়।

    নিকির হাত থেকে ছোট প্যাকেটটা নিয়ে সামনে সাজিয়ে রেখে ক্রিনিটি আবার তার ব্যাগে হাত ঢোকাল, এবার তার হাতে উঠে এলো লাল রঙের চতুষ্কোণ একটি ছোট যন্ত্র। তার একপাশে একটি ডায়াল। ক্রিনিটি চতুষ্কোণ বাক্সটা হাত দিয়ে ধরে বলল, এটি তোমাকে কখনোই স্পর্শ করতে দেওয়া হবে না। কাজেই এটি আমি আগেই সরিয়ে রাখি।

    নিকি বলল, ঠিক আছে। কিন্তু তুমি আমাকে আগে বল এটি কী?

    ক্রিনিটি বলল, এটি হচ্ছে ভয়ঙ্কর একটি বিস্ফোরক। সাথে একটি টাইমার লাগানো আছে। কেউ ইচ্ছে করলে টাইমারটি একটি সময়ের জন্যে সেট করে এই বিস্ফোরকটি কোনো জায়গায় রেখে আসতে পারে। নির্দিষ্ট সময় পরে বিস্ফোরকটিতে বিস্ফোরণ ঘটবে। ক্রিনিটি বিস্ফোরকটি সাবধানে সামনে রেখে বলল, এটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর একটি বিস্ফোরক, তুমি কখনোই এটিতে হাত দেবে না।

    ক্রিনিটি কিছু একটি বের করার জন্যে আবার ব্যাগে হাত দিল, তখন নিকি বলল, ক্রিনিটি তুমি জীবন রক্ষা করার এই ব্যাগটা থেকে অনেক কিছু বের করে আমাকে দেখিয়েছ কিন্তু আমাকে বলছ কোনোটাই আমি ব্যবহার করতে পারব না।

    হ্যাঁ। বেশিরভাগ।

    তাহলে কেন আমাকে দেখাচ্ছ?

    তোমার যেন একটি ধারণা থাকে সে জন্যে। মানুষ অসম্ভব বুদ্ধিমান। তারা কখন কোনো তথ্য কিভাবে কাজে লাগাবে সেটি আগে থেকে আমি অনুমান করতে পারি না।

    ক্রিনিটি আবার ব্যাগের ভেতর থেকে একটি ছোট কৌটা বের করে কথা। বলতে শুরু করে। নিকি অবাক হয়ে আবিষ্কার করল, ছোট একটি ব্যাগ যেটি কোমরে বেঁধে রাখা যায় সেখানে নানাধরনের ওষুধ রয়েছে, যোগাযোগ করার যন্ত্র আছে, আগুন জ্বালানোর রাসায়নিক আছে, উজ্জ্বল আলো জ্বালানোর টর্চ লাইট আছে, প্রচণ্ড শীতে শরীর গরম রাখার পাতলা ফিনফিনে কম্বল আছে, আগুনের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাবার আগে শরীরে লাগানোর তাপ নিরোধক মলম আছে দূরে দেখার জন্যে শক্তিশালী বাইনোকুলার আছে, অন্ধকারে দেখার জন্যে গগলস আছে, নিজের অবস্থান জানার জন্যে রিসিভার আছে, নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হবার জন্যে যোগাযোগ মডিউল আছে—এককথায় বেঁচে থাকার জন্যে যা যা প্রয়োজন তার সবই এখানে আছে।

    সবকিছু দেখিয়ে ক্রিনিটি যখন আবার সবকিছু ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে রাখছিল তখন নিকি বলল, ক্রিনিটি।

    বল।

    আমি কখন এই ব্যাগটি ব্যবহার করতে পারব?

    এই ব্যাগের নির্দেশিকাতে লেখা আছে আঠারো বছর বয়সের আগে এটি ব্যবহার করার অনুমতি নেই।

    কিন্তু আমার বয়স মাত্র সাত।

    কিন্তু তুমি যেহেতু একা একা আছ, তোমাকে অনেক কিছু নিজে নিজে করতে হয়। তুমি অনেক কিছু জান যেটি তোমার বয়সী পৃথিবীর বাচ্চা জানত না। তোমার মানসিক বয়স আসলে সাত থেকে অনেক বেশি।

    নিকি বড় বড় চোখ করে বলল, তাহলে আমি কি এই ব্যাগটা ব্যবহার করতে পারব?

    ক্রিনিটি বলল, আমি জেনে শুনে তোমাকে এটি ব্যবহার করতে দিতে পারি না। কারণ এর মাঝে এমন সব জিনিসপত্র আছে যেটি ব্যবহার করতে গিয়ে একটি ভুল করে ফেললে তুমি এবং তোমার আশপাশে অনেক কিছু ভস্মীভূত হয়ে যাবে।

    কিন্তু তুমি যদি না জান?

    তখন আমার কিছু করার নেই।

     

    কাজেই পরের দিন নিকি ক্রিনিটিকে না জানিয়ে জীবনরক্ষাকারী ব্যাগটি নিয়ে হ্রদের তীরে হাজির হলো। হ্রদের পানিতে ড়ুব দিয়ে সে দেয়ালের ফুটো দিয়ে অন্যপাশে হাজির হয়। গতকাল যেখানে মেয়েটির সাথে দেখা হয়েছিল ঠিক সেখানে বসে সে অপেক্ষা করতে থাকে। মেয়েটি নিশ্চয়ই দেখা করতে আসবে।

    কিন্তু মেয়েটি দেখা করতে এলো না। প্রথমে নিকির সেটি নিয়ে একধরনের ছেলেমানুষী রাগ হলো, তারপর হলো অভিমান। যখন আস্তে আস্তে অন্ধকার নেমে আসতে থাকে তখন তার ভেতরে একধরনের দুশ্চিন্তা দানা বাঁধে। নিকি তখন তার ব্যাগ থেকে বাইনোকুলারটা বের করে দূরের বিল্ডিংটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে, সে মোটেও ভাবে নি এতো বড় একটি বিল্ডিংএর ভেতর মেয়েটিকে দেখতে পাবে কিন্তু সে চার তলার একটি জানালায় মেয়েটিকে দেখতে পেল। মেয়েটি জানালার শিক ধরে এদিকে তাকিয়ে আছে। নিকি জানে এতা দূর থেকে মেয়েটি দেখতে পাচ্ছে না কিন্তু তবুও তার মনে হলো মেয়েটি বুঝি সোজাসুজি তার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির মুখে এমন একটি বিষাদের ছায়া যে সেটি দেখে নিকি গভীর একধরনের দুঃখ অনুভব করল। তার চোখে পানি চলে আসে, সে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছে ফিসফিস করে বলল, তুমি মন খারাপ করো না, আমি এসে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাব।

    বাইনোকুলারে মানুষটিকে অনেক কাছে দেখায় কিন্তু সত্যিকার মানুষটি কথা শোনার জন্যে কাছে চলে আসে না, তারপরেও নিকির কেন যেন মনে হলো, মেয়েটি তার কথা শুনতে পেয়েছে এবং একধরনের আশা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

    নিকি বাইনোকুলারটা নামিয়ে কিভাবে মেয়েটির কাছে যাবে সেটি নিয়ে চিন্তা করার চেষ্টা করল, কিন্তু সে খুব ভালোভাবে কোনো পরিকল্পনা করতে পারল না। তাই সে সবসময় যা করে এবারেও সেটিই করল, কোনো কিছু পরিকল্পনা না করেই সাবধানে বিল্ডিং-এর দিকে এগুতে থাকল। তাকে যদি কেউ দেখে ফেলে তখন কী হবে সেটি নিয়ে সে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করল না। খুব বড় ধরনের বিপদ হয়ে গেলে ক্রিনিটি এসে তাকে উদ্ধার করে ফেলবে এই ধরনের একটি ভাবনা সব সময় তার মাথায় খেলা করে।

    মেয়েটাকে যেখানে দেখেছিল তার নীচে এসে দাঁড়িয়ে নিকি বিল্ডিংটি পরীক্ষা করে। অন্ধকারে ভালো দেখা যাচ্ছে না তাই সে তা চোখে নাইট গগলসটা পরে নেয়। সাথে সাথে চারদিক প্রায় দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেল কিন্তু তারপরেও দৃশ্যটি কেমন যেন অবাস্তব দেখায়। খালি চোখে যে সব জিনিষ অস্পষ্ট এই গগলসে সেগুলো অনেক সময় স্পষ্ট। নিকি কিছুক্ষণ চোখে গগলস পরে এদিক-সেদিক তাকায় এবং ধীরে ধীরে একটু অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।

    বিল্ডিংটিতে অনেক ধরনের কারুকাজ এবং সে কারণে নানাধরনের ছোট বড় খাঁজ। নিকি ইচ্ছে করলে চোখ বন্ধ করে এই খাজগুলো ধরে ধরে উপরে উঠে যেতে পারবে। মিক্কুর সাথে প্রতিযোগিতা করে সে কতোবার মোটা মোটা গাছের প্রায় মসৃণ কাণ্ড ধরে গাছের উপরে উঠে গেছে। নিকি তাই দেরি করল না, সুদৃশ্য বিল্ডিংটির দেয়াল ধরে প্রায় খামচে খামচে উপরে উঠে গেল। যে জানালাটির শিক ধরে মেয়েটি দাঁড়িয়ে ছিল তার কার্নিশে দাঁড়িয়ে সে ভেতরে। উঁকি দেয়। ঘরের মাঝে একটি বিছানা সেই বিছানায় মেয়েটি উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। মেয়েটি ঘুমিয়ে নেই, কারণ মাঝে মাঝেই মেয়েটির শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিকি বুঝতে পারল মেয়েটি আসলে ফুলে ফুলে কাঁদছে।

    নিকি কী করবে ঠিক বুঝতে পারল না, খানিকক্ষণ নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থেকে সে জানালার কাছে টোকা দেয়। মেয়েটি শুনতে পেল বলে মনে হলো না তখন নিকি দ্বিতীয়বার টোকা দিলো, আগের থেকে একটু জোরে। এবারে মেয়েটি শুনতে পেয়ে উঠে বসে এদিক-সেদিক তাকাল। নিকি তখন আবার জানালায় টোকা দিলো। এবার মেয়েটি জানালার দিকে তাকাল এবং নিকিকে দেখতে পেল এবং মনে হলো সে বুঝি সাথে সাথে পাথরের মতো জমে গেছে। তার নিচের ঠোঁট দুটি কয়েকবার নড়ে ওঠে কিন্তু গলা থেকে কোনো শব্দ বের হয় না।

    নিকি চোখ থেকে তার বিদঘুটে গগলসটা খুলে নিয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল, কেউ তার কথা শুনে ফেলতে পারে তাই সে মুখে কোনো শব্দ করল না। মেয়েটির কিছুক্ষণ লাগল বুঝতে যে নিকি সত্যি সত্যি জানালার বাইরে কার্নিশে দাঁড়িয়ে আছে, যখন শেষ পর্যন্ত সে বুঝতে পারল তখন সে প্রায় ছুটে জানালার কাছে এসে হাজির হয় জানালার শিকগুলোর ভেতর থেকে হাত বের করে তাকে ধরার চেষ্টা করে। উত্তেজিত গলায় ফিসফিস করে বলল, তুমি? তুমি কিভাবে এখানে এসেছ? তুমি পড়ে যাবে এখান থেকে। সর্বনাশ!

    নিকি বলল, আমি পড়ব না।

    মেয়েটি বলল, কেমন করে উঠেছ এখানে?

    দেয়াল বেয়ে বেয়ে।

    দেয়াল বেয়ে বেয়ে কেমন করে উঠেছ? এটি হতে পারে না।

    পারে। আমি পারি।

    মেয়েটি কিছুক্ষন বিস্ফোরিত চোখে নিকির দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর ফিস্ফিস করে বলল, তুমি কেন এসেছ?

    আমি ভেবেছিলাম তুমি হ্রদের পারে যাবে। আমি তোমার জন্যে করছিলাম।

    আমি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমাকে বের হতে দেয় নি। আমাকে ঘরে আটকে রেখেছে।

    ঘরে আটকে রেখেছে?

    হ্যাঁ।

    কেন?

    মেয়েটি নিচের দিকে তাকিয়ে একটি নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি তোমার কথা বলিনি সেজন্যে।

    নিকি অবাক হয়ে বলল, আমার কথা?

    হ্যাঁ।

    আমার কী কথা?

    প্রত্যেকদিন ওরা আমার সাথে কথা বলে। সারাদিন কী হয়েছে জানতে চয়ি। কালকে আমার সাথে যখন কথা বলেছে তখন আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আমি কী করেছি। তোমার সাথে দেখা হয়েছে আমি সেটি বলতে চাইনি-আমি চুপ থেকেছি।

    তারপর।

    তখন তারা সন্দেহ করেছে। আরো বেশি করে জানতে চেয়েছে। আমি তখন রেগে গিয়ে বলেছি আমি বলব না। তখন তারাও রেগে গিয়েছে।

    নিকি অবাক হয়ে বলল, রেগে গিয়েছে? ক্রিনিটি কখনো রেগে যায় না। রোবটরা রাগতে পারেনা।

    মেয়েটি মাথা নাড়ল, বলল, পারে। আমি যাদের কথা বলছি তারা রেগে যেতে পারে। তারা যখন রেগে যায় তখন তারা আমাকে–আমাকে–মেয়েটি কথা বন্ধ করে হঠাৎ থেমে গেল।

    তোমাকে কী?

    মেয়েটি মাথা নিচু করে বলল, আমি সেটি বলতে চাই না।

    নিকি জিজ্ঞেস করতে চাইল, কেন তুমি বলতে চাও না? কিন্তু কী ভেবে সে শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করল না। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তুমি আমার সাথে যাবে?

    আমি?

    হ্যাঁ।

    কেমন করে?

    তুমি বল যাবে কী না—তাহলে আমি তোমাকে নিয়ে যাব।

    মেয়েটি জানালার বাইরে কার্নিশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট এই শিশুটির দিকে তাকিয়ে রইল, তার সাথে এই ছেলেটির খুব বড় একটি পার্থক্য রয়েছে। সে কেমন যেন দুর্বল, তার মাঝে ভয়, অনিশ্চয়তা, সে একটি ছেলেমানুষের মতো, আর এই ছেলেটার মাঝে কী আশ্চর্য আত্মবিশ্বাস, কোনোকিছুতেই তার ভয় নেই, যেন সে একটা বড় মানুষ। মেয়েটি আস্তে আস্তে বলল, হ্যাঁ, যেতে তো চাই। কিন্তু–

    কিন্তু কী?

    কেমন করে যাব? যদি যেতে না পারি, যদি ধরে ফেলে—

    সেটি নিয়ে তুমি কোনো চিন্তা করো না। চিন্তা করো না।

    কেন? সবসময় সবকিছু নিয়ে চিন্তা করতে হয়। ভাবতে হয়। একটি সিদ্ধান্ত নেবার আগে তার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিগুলো বিবেচনা করতে হয়।

    না। নিকি মাথা নেড়ে বলল, করতে হয় না। যেটি করার দরকার সেটি করে ফেলতে হয়। যদি খুব বেশি চিন্তা কর তাহলে তুমি কিছুই করতে পারবে না।

    আর যদি বিপদ হয়?

    নিকি মুখ শক্ত করে বলল, হবে না।

    যদি হয়?

    যদি হয় তাহলে ক্রিনিটি আমাদের উদ্ধার করবে।

    ক্রিনিটি?

    হ্যাঁ, ক্রিনিটি। ক্রিনিটি আমাকে খুব ভালোবাসে। সে যেভাবে সম্ভব সেভাবে আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে।

    মেয়েটি কিছুক্ষণ নিকির দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, রোবটরা ভালোবাসতে পারে না।

    কিন্তু ক্রিনিটি পারে।

    কেমন করে পারে?

    আমি ক্রিনিটিকে ভালোবাসি তাই ক্রিনিটিও আমাকে ভালোবাসে।

    মেয়েটি একটু অবাক হয়ে নিকির দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর জিজ্ঞেস করল, আমাকে তুমি কোনদিন নিয়ে যাবে?

    নিকি অবাক হয়ে বলল,  কোনদিন মানে? তোমাকে এক্ষুণি নিয়ে যাব।

    মেয়েটা আরো বেশি অবাক হলো, বলল, এক্ষুণি?

    হ্যাঁ।

    কেমন করে? আমি কেমন করে বের হব? দরজায় রোবট পাহারা দিচ্ছে, সিঁড়িতে ইলেকট্রনিক সিকিউরিটি। গেটে বড় বড় তালা—

    নিকি হাসল, বলল, কে বলেছে তুমি দরজা দিয়ে বের হবে?

    তাহলে কোনদিক দিয়ে বের হব?

    এই জানালা দিয়ে।

    জানালা দিয়ে? এই জানালায় এই মোটা লোহার শিক—

    আমি এক্ষুণি কেটে ফেলব। আমার কাছে ইনফ্রারেড লেজার আছে। নিকি কথা বলতে বলতে তার ব্যাগ থেকে ইনফ্রারেড লেজারটা বের করে বলল, এর মাঝে নিউক্লিয়ার ব্যাটারি। যতক্ষণ ব্যাটারির চার্জ থাকে ততক্ষণ পুরু ইস্পাত কেটে ফেলা যায়।

    মেয়েটি জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকাল, তারপর শুকনো মুখে বলল, আমি নিচে নামব কেমন করে? আমি তো তোমার মতো দেয়াল বেয়ে উঠতে পারি না।

    নিকি বলল, সেটি নিয়ে তুমি চিন্তা কর না। তোমাকে আমার মতো দেয়াল বেয়ে নামতে হবে না। আমার কাছে কার্বন ফাইবার আছে!

    সেটি কী?

    আমি তোমাকে দেখাব। এখন তুমি সামনে থেকে সরে যাও। আমি আগে কখনো এই ইনফ্রারেড লেজার ব্যবহার করি নি, উল্টাপাল্টা কিছু না হয়ে যায়।

    মেয়েটি সামনে থেকে সরে গেল, নিকি তখন জানালার শিকটাকে স্পর্শ। করে লেজারের বোতামে চাপ দিল। সে একটি সূক্ষ্ম কম্পন অনুভব করে আর জানালার শিকটা দেখতে দেখতে কেটে যায়। যেখানে কাটা হয়েছে সেই অংশটা প্রচণ্ড উত্তাপে টকটকে লাল হয়ে রইল কিছুক্ষণ।

    নিকি বলল, এখন উপরে কেটে ফেলব তাহলেই তুমি বের হয়ে আসতে পারবে।

    নিকি এক হাতে লোহার রডটা ধরে রেখে অন্য হাতে উপরের অংশটা কেটে ফেলে, তারপর ভারি রড়টা কার্নিশে নামিয়ে রেখে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল। মেয়েটি একটু বিস্ময় নিয়ে নিকির দিকে তাকিয়েছিল, আস্তে আস্তে বলল, সাত বছরের বাচ্চা হিসেবে তুমি অনেক কিছু করতে পার।

    নিকি বলল, ক্রিনিটি বলেছে আমার মানসিক বয়স নাকি অনেক বেশি।

    মেয়েটি বলল, আমার বয়স এগারো কিন্তু আমি কিছুই পারি না।

    তুমি যখন আমাদের সাথে যাবে তখন তুমিও সবকিছু শিখে যাবে।

    মেয়েটি জানালার কাটা অংশটি দিয়ে নিচে তাকাল, বলল, আমি কিছুতেই এদিক দিয়ে নামতে পারব না।

    নিকি বলল, তোমাকে পারতে হবে না, তুমি চুপচাপ বসে থাকবে। আমি তোমাকে নামিয়ে দেব।

    আমার ভয় করে। মেয়েটি ফ্যাকাশে মুখে বলল, আমার খুব ভয়। করে।

    নিকি বলল, তোমার কোনো ভয় নেই।

    আছে। আমার খুব ভয় করে, আমি বের হতে পারব না। কিছুতেই পারব।

    নিকি একটু অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর নিচু গলায় বলল, তুমি একটি জিনিস জান?

    কী?

    আমি এখনও তোমার নাম জানি না।

    নাম? আমার?

    হ্যাঁ।

    রোবটেরা আমাকে মানবশিশু ডাকে।

    কিন্তু মানবশিশু তো কারো নাম হতে পারে না। তোমার সত্যি নামী কী?

    তথ্যকেন্দ্রে দেখেছি আমার নাম ত্রিপি। কিন্তু কেউ কখনো আমাকে এই নামে ডাকে নি।

    আমি ডাকব। নিকি ডাকল, ত্রিপি।

    ত্রিপি একটু অবাক হয়ে নিকির দিকে তাকিয়ে রইল। নিকি তখন আবার ডাকল, ত্রিপি।

    ত্রিপি এবারও কিছু বলল না, নিকির দিকে তাকিয়ে রইল।

    নিকি হেসে বলল, ত্রিপি, কেউ ডাকলে উত্তর দিতে হয়। তুমি উত্তর দাও।

    ত্রিপি থতমত খেয়ে বলল, ও আচ্ছা। হ্যাঁ।

    নিকি বলল, ত্রিপি, তুমি বলছ তোমার ভয় করছে। কিন্তু আমি বলছি তোমার কোনো ভয় নেই।

    ত্রিপি নিকির দিকে তাকিয়ে রইল। নিকি তার ব্যাগ থেকে কার্বন ফাইবারের রিলটা বের করে। একটি স্ট্র্যাপ দিয়ে সেটা ত্রিপির শরীরের সাথে বেঁধে নেয়, তারপর কার্বন ফাইবারের হুঁকটা স্ট্র্যাপের সাথে লাগিয়ে ত্রিপিকে বলল, এখন তুমি নাম।

    নামব? আমি?

    হ্যাঁ। আমি উপর থেকে তোমাকে আস্তে আস্তে নামাব।

    সর্বনাশ! আমার ভয় করে।

    ভয়ের কিছু নেই। আর যদি ভয় করে তাহলে তুমি চোখ বন্ধ করে থাক। যখন তোমার পায়ের নীচে তুমি মাটি পাবে তখন চোখ খুলবে! ঠিক আছে?

    ত্রিপি রাজি হলো। নিকি কার্বন ফাইবারটা একটি রড়ে কয়েকবার পেঁচিয়ে নেয় তারপর আস্তে আস্তে ত্রিপিকে নীচে নামিয়ে আনে। যখন ত্রিপি শক্ত মাটিতে সোজা হয়ে দাঁড়াল, তখন সে কার্বন ফাইবারের রিলটা গুটিয়ে নেয়। তারপর এদিক-সেদিক তাকিয়ে সাবধানে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। ত্রিপি নিঃশ্বাস বন্ধ করে উপরের দিকে তাকিয়েছিল তার চারপাশে যা ঘটছে সে এখনো সেটি বিশ্বাস করতে পারছে না।

    নিকি নীচে নেমে এসে ত্রিপির হাত ধরে বলল, চল যাই।

    ত্রিপি বলল, চল।

    দুজন ছুটতে ছুটতে হ্রদের তীরে হাজির হয়। ছোটাছুটি করা ত্রিপির অভ্যেস নেই, সে বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে, নিচে নেমে বলল, এখন কী করব?

    এই হ্রদে ড়ুব দিতে হবে।হদের নিচে একটি গর্ত আছে সেটি দিয়ে বের হতে হবে।

    আমি–আমি পারব না।

    পারবে। তোমার কিছুই করতে হবে না—আমি তোমাকে নিয়ে যাব। নিকি তার ব্যাগ থেকে অনেকগুলো ছোট ছোট স্বচ্ছ গোলক বের করে ত্রিপির হাতে দিয়ে বলল, এগুলো তোমার মুখে রাখ। যখনই নিঃশ্বাস নিতে হবে দাঁত দিয়ে একটি ভেঙে নেবে। সাথে সাথে নিঃশ্বাস নেবার বাতাস পেয়ে যাবে।

    সত্যি?

    হ্যাঁ সত্যি। শুধু নিঃশ্বাস নেবার সময় হাত দিয়ে নাকটা বন্ধ করে রাখবে।

    ঠিক আছে।

    হ্রদের পানিটা মনে হবে খুব ঠাণ্ডা কিন্তু দেখবে একটু পরেই অভ্যাস হয়ে যাবে।

    ঠিক আছে।

    গর্তটি একটু ছোট, কষ্ট করে বের হতে হবে। তুমি ভয় পেয়ো না আমি তোমাকে ঠেলে বের করে দেব।

    ঠিক আছে।

    হ্রদের নীচে দেয়ালের ছোট গর্তের ভেতর থেকে বের হওয়া নিয়ে নিকির একটু দুশ্চিন্তা ছিল, কিন্তু দেখা গেল দুজনে সহজেই বের হয়ে এলো। দুজন যখন পানির উপরে বের হয়ে এল ঠিক তখন শক্ত হাতে কেউ তাদের ধরে ফেলে, কিন্তু বোঝার আগেই তাদেরকে একটি বাইভার্বালে তুলে ফেলে এবং মৃদু গর্জন করে বাইভার্বালটা উড়ে যেতে শুরু করে।

    ত্রিপি আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল, বলল, ছেড়ে দাও। ছেড়ে দাও আমাকে।

    ত্রিপি শুনতে পেল রোবটটি তার ধাতব কণ্ঠস্বরে বলল, তোমার কোনো ভয় নেই মেয়ে, আমি ক্রিনিটি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভূত সমগ্র – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article নাট বল্টু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }