Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৪. ঘুম ভাঙার পর

    ঘুম ভাঙার পর জাহিদ অনেকক্ষণ বুঝতে পারল না কোথায় আছে, কেন আছে বা কীভাবে আছে। তারপর হঠাৎ করে সব মনে পড়ে গেল আর সাথে সাথে লাফিয়ে উঠে বসল। হালকা আলো জ্বলছে আসবাবহীন ন্যাড়া একটা ধাতব ঘরে, মহাকাশযানে। যেরকম হয়। ফোবোস নামের সেই অদ্ভুত মহাকাশযানটি—পৃথিবীর লোকেরা যেটাকে ফ্লাইং সসার হিসেবে ভুল করেছে, সেটি রাত্রে এখানে এসে পৌঁছে দিয়েছে। প্লুটোনিক নামের এই অতিকায় মহাকাশ স্টেশনটি দেখেই চিনতে পারল জাহিদ। সব কয়টি দেশ মিলে যে-মহাকাশ ল্যাবরেটরি তৈরি করেছিল, যেটি দু বছর আগে খোয়া গিয়েছিল হারুন হাকশী সেটাকে প্লুটোনিক নাম দিয়ে তার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। মৃত্যুদেবতার নাম প্লুটো থেকে প্লুটোনিক। জাহিদের মনে হল নামটি ভালোই বেছে নিয়েছে। কিন্তু এই প্লুটোনিক পৃথিবী থেকে খুব বেশি একটা দূরে রয়েছে বলে মনে হল না; তবু পৃথিবীর যাবতীয় রাডারের সামনে এটি অদৃশ্য কেন সে বুঝতে পারল। নিশ্চয়ই এমন একটা কিছু করেছে, যার জন্যে রাডারের তরঙ্গ প্রতিফলিত হয় না।

    খুট করে একটা শব্দ হল। দরজা খুলে সন্তর্পণে কামাল এসে ঢোকে।

    কি ব্যাপার, মরণ ঘুম দিয়েছিলি মনে হচ্ছে।

    হুঁ। ভীষণ ঘুমালাম—খিদে লেগে গিয়েছে, খাবার দেবে কখন?

    কে জানে বাপু! খেতে দেবে না খেয়েই ফেলবে কে জানে!

    পাশের বাথরুমে জাহিদ হাত-মুখ ধুয়ে এসে দেখে, জেসমিনও এসে হাজির—কামালের পাশে বিষণ্ণ মুখে বসে আছে। ভাগ্যচক্রে কোথায় এসে পড়েছে ভেবে ভেবে শীর্ণ হয়ে উঠেছে। জাহিদ জেসমিনকে চাঙ্গা করে তোলার চেষ্টা করে, কি ব্যাপার প্রাণিবিদ? খাঁচায় আটক প্রাণীগুলি নিয়ে গবেষণা শুরু করে দাও।

    দিয়েছি।

    কি দেখলে?

    মহিলা প্রাণীটি এক সপ্তাহে পাগল হয়ে যাবে।

    জাহিদ হা-হা করে হাসল, তারপর বলল, এত ঘাবড়ে যাচ্ছ কেন। একটা কিছু করে ফেলব। হাসান স্যারকে দেখ নি, কী রকম ভয়ানক পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রেখে কী ভয়ানক সব কাজ করে ফেলেন–

    হাসান স্যার হচ্ছেন হাসান স্যার।

    কামাল বলল, আমরাও চেষ্টা করে দেখি। জাহিদ, তোর কি মনে হয় কিছু করা যাবে? একটা প্লানিং করলে হয় না?

    এই সময় খুট করে দরজা খুলে গেল। একজন ইউরোপীয় মেয়ে হাতে নাস্তার ট্রে নিয়ে এসে ঢুকল, যন্ত্রের মতো খাবার সাজিয়ে আবার যন্ত্রের মতো বেরিয়ে গেল।

    মহাকাশের বিশেষ ধরনের চৌকোণা খাবারের ব্লক।

    খুঁটে খুঁটে খেতে খেতে জাহিদ বলল, ডিটেকটিভ বইতে পড়েছি বন্দিদের ঘরে লুকানো মাইক্রোফোন থাকে। এখানে নেই তো?

    খুঁজে দেখলেই হয়।

    কে কষ্ট করে খুজবে?

    জাহিদ কামালের দিকে তাকিয়ে চোখ মটকাল, তারপর বলল, আমার মনে হয় এসব এখানে নেই। জাহিদ কী করতে চায় বুঝতে না পেরে কামাল অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকাল। জাহিদ চোখ মটকে বলল, তোের শার্টের একটা বোতামে যে এক্সপ্লোসিভটা লাগিয়ে রেখেছিলি, সেটা আছে তো?

    কিছু না বুঝেই কামাল মিথ্যা কথাটি মেনে বলল, আছে।

    বেশ। ওটা চালু কর, পাঁচ মিনিটের ভেতর সবাইকে নিয়ে প্লুটোনিক ধ্বংস হয়ে যাবে।

    কামাল দাঁত বের করে হাসল, বুঝতে পেরেছে জাহিদ কী করতে চাইছে। যদি ঘরে মাইক্রোফোন থেকে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই এক্সপ্লোসিভটা উদ্ধার করার জন্যে পাঁচ মিনিটের ভিতর কেউ-না-কেউ ছুটে আসবে।

    ওরা চুপচাপ বসে রইল, ঠিক পাঁচ মিনিটের সময় দরজা খুলে গেল। সেই ইউরোপীয়ান মেয়েটি আবার যন্ত্রের মতো ঢুকে নাস্তার প্লেট নিয়ে যন্ত্রের মতো বেরিয়ে গেল।

    জাহিদ হেসে বলল, নিশ্চিন্তে প্লানিং করতে পারিস, ঘরে মাইক্রোফোন নেই।

    ওরা বসে বসে পরিকল্পনা করার চেষ্টা করে, কিন্তু যেহেতু প্লটোনিক সম্পর্কে, এখানকার লোকজন, কাজকর্ম সম্পর্কে কোনো ধারণাই এখনো নেই, তাদের পরিকল্পনার কিছুই অগ্রসর হয় না।

    ঘন্টা দুয়েক পরে একজন লোক এসে ওদের ডেকে নিয়ে গেল, হারুন হাকশী তাদের জন্যে নাকি অপেক্ষা করছে।

    এই প্রথম ও প্লুটোনিক ঘুরে দেখার সুযোগ পেল। ঘর থেকে বেরিয়েই দেখে, লম্বা করিডোর, দুপাশে ছোট ছোট ঘর, প্লটোনিকের আবাসিক এলাকা। করিডোরের অন্য মাথায় ছোট একটা হলঘরের মতো, পাশেই লিফট। লিফটের পাশে একটা ছোট সুইচ-বক্সের সামনে একজন টেকনিশিয়ান কাজ করছে, আশপাশে ভ্রু-ড্রাইভার, নাট-বল্ট আর রেঞ্জ ছড়াননা।

    জাহিদ, কামাল আর জেসমিনকে মোটেই পাহারা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল না, যে-লোকটি পথ দেখিয়ে আনছে সে সামনে সামনে হাঁটছে, পিছন পিছন কেউ আসছে কি না সে বিষয়েও কোনো কৌতূহল নেই। কামাল টেকনিশিয়ানের কাছে এসে এদিক সেদিক তাকাল, তারপর আলগোছে একটা বড়সড় ভ্রু-ড্রাইভার তুলে নিল—সে এক বছর জুডো ট্রেনিং নিয়েছিল, খালিহাতেই কীভাবে মানুষ মারতে হয় জানে, তবে এ ধরনের ভ্রু-ড্রাইভার সাথে থাকলে ব্যাপার সহজ হয়। হারুন হাকশীর কাছাকাছি যেতে পারলে একবার চেষ্টা করে দেখবে, এই লোকটি শেষ হয়ে গেলে পুরো পূটোনিকই শেষ হয়ে যাবে।

    হারুন হাকশীর ঘরটা আগোছাল, যন্ত্রপাতিতে ঠাসা। বিভিন্ন মিটার আর স্ক্রীনগুলি সে চিনতে পারল, যে-কোনো মহাকাশযানেই থাকে। তবে অচেনা যন্ত্রপাতির মাঝে রয়েছে একটা চৌকোণা একমানুষ উচু ইউনিট, যেটিকে দেখে কম্পিউটার মনে হচ্ছিল, যদিও পরিচিত কম্পিউটারের সাথে এর কোনো মিল নেই। ওরা ঢুকতেই হারুন হাকশী ওদের দিকে না তাকিয়ে বলল, বস। কামাল বসল একপাশে, হারুন হাকশীর নাগালের ভিতর।

    হারুন হাকশী একটা ফিতের মতো কাগজে কী যেন মন দিয়ে পড়ছিল—পড়া শেষ হলে কাগজটি রেখে দিয়ে ওদের দিকে তাকাল। তারপর কামালের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, স্ক্রু-ড্রাইভারটি দিয়ে দাও।

    কামাল চমকে উঠে হতভম্বের মত পকেট থেকে ক্রু-ড্রাইভারটি বের করে। ঝাঁপিয়ে পড়ে শেষ করে দেবে কি না ভাবছিল, কিন্তু তার আগেই লক্ষ করল হারুন হাকশীর হাতে ছোট একটা রিভলবার। স্কু-ড্রাইভারটি এগিয়ে দিয়ে কামাল হতাশ হয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল।

    হারুন হাকশী রিভলবারটি ড্রয়ারে রেখে একটা সিগারেট ধরিয়ে নেয়। খানিকক্ষণ একমনে সিগারেট টেনে বলল, তোমাদের ফ্রিপসির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়নি—এই হচ্ছে ফ্রিপসি হারুন হাকশী চৌকোণা ইউনিটের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।

    কি জিনিস এটা?

    কম্পিউটার।

    ও। কোন জেনারেশন?

    হারুন হাকশী হাত ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, এটা তোমাদের ওসব চতুর্থ শ্রেণীর কম্পিউটার না—যে, জেনারেশন হিসেব করবে। এটি হচ্ছে আমার নিজের হাতে তৈরি কম্পিউটার।

    জাহিদ নির্দোষ মুখে বলল, কি করে এটা? গান গায়?

    হাকশী চটে উঠে বলল, কি করে, শুনবে? সে ফিতের মতো কাগজটি তুলে নেয়, বলে, শোন আমি পড়ছি, কামাল সম্পর্কে কী লিখেছে শোন। কামাল হচ্ছে অস্থিরমতি—আপাতত হারুন হাকশীকে কীভাবে হত্যা করা যায় তাই ভাবছে। করিডোরে আসার সময় খুঁটিনাটি লক্ষ করতে করতে আসবে। সুইচ-বক্সের সামনে এসে হঠাৎ করে এদিক-সেদিক তাকিয়ে একটা ক্রু-ড্রাইভার তুলে নেবে। প্রথম সুযোগ পাওয়ামাত্র এটা দিয়ে হাকশীকে হত্যার চেষ্টা করবে। হারুন হাকশী বসতে বলার পর সে পাশে বসবে। বসার তিন মিনিট পর সে লাফিয়ে উঠে ঝাঁপিয়ে পড়বে হারুন হাকশীর উপর–

    শুনতে শুনতে কামালের চোয়াল ঝুলে পড়ল। জাহিদের বিস্ফারিত চোখের দিকে তাকিয়ে হাকশী বলল, ফ্রিপসি তোমার সম্পর্কে কী বলেছে শুনবে? এই শোন—সে পড়তে থাকে, সকাল আটটা পয়ত্রিশঃ জাহিদ ঘরে গোপন মাইক্রোফোন রয়েছে কি না পরীক্ষা করে দেখার জন্যে হঠাৎ করে কামালকে বলবে—তার শার্টের বোতামে যেএক্সপ্লোসিভটা ছিল সেটা আছে কি না। তারপর সে কামালকে এটা চালু করতে বলবে। কেউ এক্সপ্লোসিভটা নিতে আসবে না দেখে জাহিদ ভাববে, ঘরে কোনো মাইক্রোফোন নেই… এখন বুঝতে পারলে ফ্রিপসি কী করে?

    তার মানে এটা মানুষের মনের কথা বলে দেয়?

    ঠিক মনের কথা বলা নয়—এটা ভবিষ্যৎ বলে দেয়। ভবিষ্যৎ?

    হ্যাঁ, যে-কোনো মানুষ ভবিষ্যতে কখন কী করবে, কখন কী বলবে, সব নিখুঁতভাবে বলে দেয়।

    অসম্ভব।

    হাকশী হাসিমুখে বলল, বিজ্ঞানী হয়েও এরকম অবৈজ্ঞানিক কথা বলছ! এইমাত্র নিজের চোখে দেখলে নিজের কানে শুনলে!

    কিন্তু এটা কী করে সম্ভব? কামাল হাত ঝাঁকিয়ে বলল—ভবিষ্যতে কে কী করবে না-করবে সেটা বলা যায় নাকি?

    কেন যাবে না। যেমন মনে কর তোমার কথা। আমি যদি তোমার মানসিকতা, তোমার বুদ্ধিমত্তা, তোমার পার্সোনালিটি, তোমার পছন্দ-অপছন্দ সব কিছু নির্ভুল জানতে পারি, তা হলে কখন কী পরিবেশে তুমি কী রকম ব্যবহার করবে আমি মোটামুটি বলতে পারব না?

    কামাল খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, মোটামুটি হয়তো বলতে পারবে।

    আর যদি একটি অসাধারণ কম্পিউটারকে একজন মানুষের চরিত্রের যাবতীয় খবর দেয়া হয়, সে কি নিখুঁতভাবে বলতে পারবে না, কী পরিবেশে তার কী রকম ব্যবহার করা উচিত?

    কিন্তু আমার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য সে কেমন করে জানবে?

    তোমার কণ্ঠস্বরের একটিমাত্র শব্দ যদি ফ্রিপসি শুনতে পায়, সে নিখুত বলে দেবে তোমার চরিত্র কেমন!

    সে কেমন করে সম্ভব?

    তোমার চরিত্রের উপর নির্ভর করবে তোমার কণ্ঠস্বর, শব্দের বিভিন্ন অংশে তোমার দেয়া গুরুত্ব, উচ্চারণভঙ্গি। তোমার আমার কানে সেগুলি ধরা পড়বে না কিন্তু পিসি সেটা মুহুর্তে ধরে ফেলতে পারে। যেখানে ফ্রিপসির একটিমাত্র শব্দ শুনলেই চলে, সেখানে আমি প্লুটোনিকে এমন ব্যবস্থা করেছি যেন সে প্রতিমুহূর্তে প্লুটোনিকের প্রত্যেকটি মানুষের প্রত্যেকটা কথা শুনতে পায়, প্রত্যেকটা ভাবভঙ্গি দেখতে পায়।

    মানে?

    মানে এই প্লুটোনিকের প্রতি সেন্টিমিটার ফ্রিপসি প্রতিমুহূর্তে দেখতে পায়–প্রত্যেকটা নিশ্বাসের শব্দ সে শুনতে পায়! টেলিভিশন, ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন দিয়ে পুরো প্লুটোনিক ঘিরে রাখা হয়েছে।

    জাহিদ কামালের দিকে তাকাল—কামাল বিরস মুখে হেসে বলল,—কি জন্যে এত সাবধানতা?

    হাকশী একটু গম্ভীর হয়ে বলল, আমি যে পরিকল্পনামাফিক কাজ করছি, সেখানে সাবধান না হলে চলে না।

    কি তোমার পরিকল্পনা?

    সময় হলেই জানবে। আমার পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে হলে শ দুয়েক প্রথম শ্রেণীর বিজ্ঞানী, শ’ তিনেক প্রথম শ্রেণীর ইঞ্জিনিয়ার আর টেকনিশিয়ান দরকার। কিন্তু সবাই যে আমার পরিকল্পনাকে ভালো চোখে দেখবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কাজেই অনেককে আমার জোর করে ধরে আনতে হয়েছে।

    জেসমিন চমকে উঠে বলল, বছরখানেক আগে হঠাৎ করে যেসব বিজ্ঞানী অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল তাদের তুমি ধরে এনেছ?

    হাকশী হাসিমুখে বলল, হ্যাঁ। যাদের আমি এখানে নিয়ে এসেছি তাদের সাথে আমার চুক্তি হচ্ছে দু বছরের। ঠিক দু বছর তারা এখানে কাজ করবে, তারপর আমি তাদের পৃথিবীতে ফেরত পাঠাব।

    জেসমিন জিজ্ঞেস করল, আমাদেরও কি দু’ বছর থাকতে হবে?

    হাকশী খানিকক্ষণ কি ভেবে বলল, আসলে তোমাদের ধরে আনার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু লেসার দিয়ে আমার ফোববাসে ফুটো করার সময় আমার অনেকগুলি লোক মারা পড়েছে বিশ্বস্ত সব লোক! বুঝতেই পারছ, আমি যখন অপারেশনে যাই সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোকগুলি নিয়ে যাই। কাজেই আমার কয়েকজন লোক কম পড়ে গেছে—বাধ্য হয়ে হাতের কাছে যাদের পেয়েছি ধরে এনেছি।

    জেসমিন আবার জিজ্ঞেস করল, আমাদের কি দু বছর পর ছেড়ে দেবে?

    হাকশী বাকা করে হেসে বলল, তোমাদের সাথে আমার কোনো চুক্তি নেই—দু বছর পর ছেড়ে দেব একথা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।

    জেসমিন কাতর হয়ে বলল, হাকশী। আমাদের সাথে অন্য রকম ব্যবহার করে তোমার লাভ?

    হাকশী হেসে বলল, কেন তোমরা আমাকে ধ্বংস করে যাবে?

    জেসমিন চুপ করে রইল। ফ্রিপসির মতো একটি কম্পিউটার যেখানে সবার উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে, পৃথিবীর সেরা সেরা সব প্রতিভাবান ব্যক্তিরা যেখানে অসহায়ভাবে বন্দি হয়ে রয়েছে সেখানে তারা কতটুকু কি করতে পারবে?

    হাকশী ধূর্ত চোখে হাসতে হাসতে বলল, এখন বুঝতে পারছ, আমি কেন এত সাবধান হয়ে থাকি?

    শ’ চারেক প্রতিভাবান বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান আমার হয়ে কাজ করছে—যদিও তাদের একজনও আমাকে দু চোখে দেখতে পারে না। পৃথিবীর অন্য যেকোনো ব্যক্তি হলে অনেক আগেই এদের হাতে মারা পড়ত—আমি বলে টিকে আছি। শুধু টিকে আছি বললে ভুল হবে—এদের কাছ থেকে আমার কাজও আদায় করে নিচ্ছি। কিন্তু কেউ আমার বিরুদ্ধে টু শব্দ করে নি।

    জাহিদ দাঁতে দাঁত ঘষে বলল, যেদিন সুযোগ আসবে—

    আসবে না। যদি কখনো আসে, সে-সুযোগ গ্রহণ করার অনুমতি আমি আগেই দিয়েছি। তবে হ্যাঁ—

    কি?

    খুব ধীরে ধীরে হাকশীর মুখ শক্ত হয়ে গেল। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, দু’বারের বেশি কেউ সুযোগ পাবে না। প্রথম দু’বার আমি ক্ষমা করে দিই—কিন্তু যেই মুহুর্তে কেউ তৃতীয়বার আমাকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে—আমি নিজ হাতে তাকে শাস্তি দিই।

    কি রকম শাস্তি?

    শুনবে? তা হলে শোন। একজন জার্মান ছোকরাকে খালিগায়ে মহাকাশে ছেড়ে দিয়েছিলাম। এক সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ সময়ে সে বেলুনের মতো ফেটে গিয়েছিল!

    জেসমিন শিউরে উঠে বলল, কী করেছিল ছেলেটা?

    কামালের মতো আমাকে মারতে চেষ্টা করেছিল। প্রথমবার ইলেকট্রিকে শর্ট সার্কিট করে, দ্বিতীয়বার দম বন্ধ করে, তৃতীয়বার হাতুড়ির আঘাত দিয়ে। কোনোবারই কিছু করতে পারে নি। পরিকল্পনা করার সাথে সাথেই ফ্রিপসি আমাকে জানিয়ে দিয়েছিল—

    মানে? শুধু পরিকল্পনা করেছিল, আর অমনি তুমি ওকে মেরে ফেললে?

    হাকশী জাহিদের দিকে তাকিয়ে হাসল। বলল, তুমি কি ভাবছ এখানে কোনো পরিকল্পনা করে সেটা কাজে লাগানোর মতো সুযোগ কাউকে দেয়া হয়?

    কামাল অধৈর্য হয়ে বলল, তা হলে যে-কেউ একবার একবার করে তিনবার পরিকল্পনা করলেই তুমি তাকে শাস্তি দেবে? কিছু না করলেও?

    না—পরিকল্পনা করার স্বাধীনতা রয়েছে কিন্তু তুমি যদি সেটা বাস্তবায়ন করার জন্যে সময় ঠিক কর, তাহলেই আমি একবার ওয়ার্নিং দেব। দ্বিতীয়বার আবার যদি কবে কোথায় কি করবে ঠিক কর, তা হলে শেষ ওয়ার্নিং। তৃতীয়বার–

    হাকশী কথা বন্ধ করে গলার উপর ছুরি চালানোর ভান করল।

    জাহিদ হাকশীর প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ধীরে ধীরে ধরাল, তারপর আপন মনে বলল, তার মানে তোমায় কীভাবে কোথায় শেষ করব ভাবতে কোনো বাধা নেই, কিন্তু যেই মুহূর্তে সময় ঠিক করব অমনি তুমি একবার সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে ধরে নেবে!

    হ্যাঁ।

    যদি তুমি বা তোমার ফ্রিপসি কিছু জানতে না পার, আর তার আগেই তোমায়। শেষ করি?

    হাকশী হো-হো করে হেসে বলল, চেষ্টা করে দেখতে পার। তোমার পুরো স্বাধীনতা রয়েছে।

    ঘড়িতে একটা শব্দ হল। অমনি হাকশী উঠে দাঁড়াল, বলল, আমার সময় হয়েছে–তোমাদের কার কি কাজ করতে হবে, সব এই ফাইলটায় লেখা রয়েছে। আজ বিকেল থেকেই কাজ শুরু করে দাও।

    হাকশী একটা ফাইল ওদের দিকে এগিয়ে দেয়। জাহিদ বিরস মুখে ফাইলের পৃষ্ঠা ওল্টাতে থাকে—খুটিনাটি বিষয় সবকিছু লেখা রয়েছে—কখন কবে কি কাজ করতে হবে তার নিখুঁত বিবরণ।

    হাকশী চলে যাচ্ছিল—জেসমিন ডেকে ফেরাল, হাকশী—আমাদের কতদিন থাকতে হবে বললে না?

    হাকশী হেসে বলল, কেন? আমায় ধ্বংস করে নিজেরা মুক্ত হয়ে যাবে না?

    জাহিদ হেসে বলল, এক শ বার যাব। তাহলে আমায় জিজ্ঞেস করছ কেন?

    জেসমিন জাহিদের কথায় ভরসা পায় না—ও বুঝতে পেরেছে হাকশীর বিরুদ্ধে যাওয়া অসম্ভব। হাকশী ইচ্ছে করলেই শুধুমাত্র এখান থেকে বের হওয়া যেতে পারে। কাজেই হাকশীকে না চটিয়ে সে সময়টুকু জেনে নিতে চাচ্ছিল। আবার জিজ্ঞেস করল আমাদের কতদিন থাকতে হবে বললে না।

    হাকশী ধূর্তমুখে হেসে বলল, বেশ, তোমরাও তা হলে দু বছর পর মুক্তি পাবে।

    দু-ব-ছ-র।

    হাকশী চলে গেলে জেসমিন আঙুলে গুনে গুনে দেখতে থাকে দু’ বছর মানে কতদিন। কিছুক্ষণেই সে হতাশ হয়ে পড়ে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }