Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৭. দ্বিতীয় জীবন

    ৭. দ্বিতীয় জীবন

    জ্ঞান হবার পর আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটা উচু আসনের উপর। আমি শুয়ে আছি এবং আমাকে ঘিরে অনেক ক’জন সাদা পোশাকের ডাক্তার ব্যস্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছে। আমি নীষাকেও একপাশে দেখলাম, জটিল একটা যন্ত্রের সামনে গম্ভীর মুখে বসে আছে, আমার চোখে চোখ পড়তেই মুহূর্তের জন্যে তার মুখে একটু হাসি ফুটে ওঠে। আমি মাথা ঘুরিয়ে অন্য পাশে তাকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম আমার মাথায় অসংখ্য মনিটর লাগানো। কয়েকটা সম্ভবত কপালের চামড়া ফুটো করে ঢোকানো হয়েছে, বেশ জ্বালা করছে সেগুলো।

    আমি দীর্ঘ সময় চুপচাপ শুয়ে রইলাম, কেউ আমার সাথে কোনো কথা বলছে, আমি নিজেও কোনো কথা বলার চেষ্টা করলাম না। আমি এরকম অবস্থায় চুপচাপ শুয়ে থাকার পাত্র নই, কিন্তু কোনো-একটা কারণে আমি এখন কোনোকিছুতেই উৎসাহ পাচ্ছিলাম না। সম্ভবত আমাকে কোনো ওষুধ দিয়ে এরকম নির্জীব করে রাখা হয়েছে। আমি শুয়ে শুয়ে মস্তিষ্ক স্ক্যানিং-এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। ব্যাপারটি সহজ নয়, ঠিক কীভাবে করা হয় আমার জানা নেই। মস্তিষ্কের নিউরোন সেল থেকে স্মৃতিকে সরিয়ে ম্যাগনেটিক ডিস্কে ডিজিটাল সিগনাল হিসেবে জমা করা হয়। পদ্ধতিটা সুচারুভাবে করার জন্যে যে পদ্ধতিটা ব্যবহার করা হয় সেটি মস্তিষ্কের স্মৃতিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই আমার সমস্ত স্মৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে চিন্তা করে যতটুকু দুঃখ পাওয়া উচিত, কোনো কারণে আমার ঠিক সেরকম দুঃখ হচ্ছিল না। সেটি ওষুধের প্রভাবে, না, নীষার উপর আমার প্রবল বিশ্বাসের জন্য আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।

    মস্তিষ্ক স্ক্যানিং-এর ব্যাপারটা শুরু হওয়ার আগে আমি বুঝতে পারি, হঠাৎ করে কথা শোনা যেতে লাগল। আশ্চর্য ব্যাপার যে কথাগুলো কোনো শব্দ থেকে আসছিল না, সরাসরি আমার মস্তিষ্কে উচ্চারিত হচ্ছিল। অনেকটা চিন্তা করার মতো, কিন্তু অনুভূতিটা চিন্তা করার মতো মৃদু নয়, অনেক প্রবল।

    হঠাৎ করে কেউ-একজন যান্ত্রিক স্বরে আমাকে উদ্দেশ করে কথা বলে ওঠে। কোনো শব্দ নেই, কিন্তু তবু আমাকে কিছু-একটা বলা হচ্ছে; অনুভূতিটা আশ্চর্য, আমার অকারণেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে! আমাকে বলা হল, কিম জুরান, আপনার মস্তিষ্ক স্ক্যানিং শুরু হচ্ছে। পদ্ধতিটা যন্ত্রণাবিহীন কিন্তু একটু সময়সাপেক্ষ। পুরোপুরি শেষ হতে প্রায় দুই ঘন্টা সময় নেবে। মস্তিষ্ক স্ক্যানিং শেষ হওয়ার পর আপনি একজন নুতন মানুষে পরিণত হবেন। আপনাকে একটি নতুন পরিচয় দেয়া হবে, আপনার মধ্যে একটি নতুন ব্যক্তিত্বের জন্ম হবে। এখন চোখ বন্ধ করে আপনি আপনার সমস্ত অনুভূতি শিথিল করে শুয়ে থাকুন। ধন্যবাদ।

    আমি অসহায়ভাবে শরীর শিথিল করে শুয়ে থাকি। কতক্ষণ কেটেছে জানি না, হঠাৎ আমি চমকে উঠি, আমার শৈশবের একটা স্মৃতি ভেসে আসছে, আমার মা, যাঁর চেহারা আমি ভুলে গিয়েছিলাম, তাঁকে আমি দেখতে পাই। তিনি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন, আমি তাঁর কোলে। বাইরে ঝমঝম শব্দে বৃষ্টি হচ্ছে, আমার মা আশ্চর্য একটা বিষণ্ণ সুরে গান গাইছেন আমাকে ঘুম পাড়ানোর জন্যে। হঠাৎ করে আমার মা, বৃষ্টির শব্দ, গানের সুর—সবকিছু মিলিয়ে গেল, কিছুক্ষণ আমার স্মৃতিতে কিছু নেই। খানিকক্ষণ পর সেখানে নূতন একটা দৃশ্য ফুটে ওঠে। আমি দেখতে পেলাম সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে আমি ছোট ছোট পা ফেলে ছুটে যাচ্ছি। আমার হাতে একটা লাল রুমাল, আমি চিৎকার করে বলছি, লাল ঘোড়া ঠকাঠক, লাল ঘোড়া ঠকাঠক, লাল ঘোড়া ঠকাঠক—দেখতে দেখতে এই পুরো দৃশ্যটাও অদৃশ্য হয়ে গেল।

    কতক্ষণ এভাবে কেটেছে জানি না, এক মিনিটও হতে পারে, আবার এক ঘন্টাও হতে পারে। আমি আচ্ছন্নের মতো শুয়ে শুয়ে আমার শৈশবের ভুলে যাওয়া দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে এক ধরনের ব্যথা অনুভব করতে থাকি। দৃশ্যগুলো একবার মিলিয়ে যাবার পর আর কিছুতেই সেগুলো মনে করতে পারছিলাম না, আমার মস্তিষ্ক থেকে সরে গিয়ে সেগুলো কোন–একটি ম্যাগনেটিক ডিস্কে স্থান নিয়েছে। ব্যাপারটি চিন্তা করে আমার কেমন জানি দুঃখবোধ জেগে ওঠে। ঠিক তখনই একটা আশ্চর্য ব্যাপার ঘটল, আমার মস্তিষ্কের ভেতর নীযা কথা বলে উঠল। কোনো শব্দ হল না, কিন্তু আমি শুনতে পেলাম নীষা বলল, কিম জুরান, আপনি যেভাবে শুয়ে আছেন ঠিক সেভাবে শুয়ে থাকুন, মুখের মাংসপেশী পর্যন্ত নাড়াবেন না, কেউ যেন বুঝতে না পারে আপনি আমার কথা শুনছেন। আপনার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে, সেটাকে স্বাভাবিক করতে হবে, এ ছাড়া ডাক্তারদের সন্দেহ হতে পারে।

    আমি প্রাণপণ চেষ্টা করে নিজের উত্তেজনাকে দমিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করতে থাকি। নীষা খানিকক্ষণ সময় দিয়ে আবার কথা বলতে শুরু করে, বুঝতেই পারছেন আমি আপনার মস্তিষ্ক স্ক্যানিং বন্ধ করে দিয়েছি, কাজটি খুব গোপনে করতে হয়েছে। ভয়ংকর বিপজ্জনক কাজ এটি, ধরা পড়লে আমার এবং আপনার দু’জনেরই আবার রুকুন গ্ৰহপুঞ্জে যেতে হতে পারে! যাই হোক আমি দুঃখিত, ঠিক সময়মতো বন্ধ করতে পারলাম না, নিরাপত্তার যেসব নৃতন ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলোর জন্য একটু দেরি হল। আপনার শৈশবের কিছু স্মৃতি হারিয়েছেন আপনি, আমি সেজন্যে দুঃখিত। এখন আপনাকে অভিনয় করতে হবে। প্রথম অংশটুকু সোজা, পরবর্তী এক ঘন্টা চুপচাপ শুয়ে থাকবেন চোখ বন্ধ করে। এর পরের অংশটুকু কঠিন, আপনাকে দেখাতে হবে যে আপনার কোনো স্মৃতি নেই। জিনিসটা সহজ নয়, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এরকম অবস্থায় একেকজন মানুষ একেক রকমভাবে ব্যবহার করে। কাজেই আপনার নিজের ইচ্ছেমতো কোনো-একটা কিছু করার স্বাধীনতা আছে। চেষ্টা করবেন একটা উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি দিয়ে তাকাতে, অল্পতেই চমকে উঠবেন এবং খুব সহজে ভয় পেয়ে যাবেন। কোনো অবস্থাতেই দু’টি জিনিস করবেন না, একটি হচ্ছে কথা বলা, আরেকটি হচ্ছে কারো কথা শুনে বুঝতে পারা! একটিমাত্র জিনিস আপনি উপভোগ করতে পারেন, সেটা হচ্ছে সংগীত।

    নীষা হঠাৎ গলা নামিয়ে বলল, আমি এখন আর কথা বলতে পারব না, এখন সবকিছু আপনার উপর নির্ভর করছে।

    হঠাৎ করে সবকিছু নীরব হয়ে যায়। আমি চুপচাপ শুয়ে থাকি। চোখ বন্ধ করে এক ঘন্টা শুয়ে থাকা সহজ ব্যাপার নয়, আমার মনে হল প্রায় এক যুগ থেকে শুয়ে আছি! একসময় এদিকে-সেদিকে কয়েকটা বাতি জ্বলে ওঠে। এতক্ষণ যে মৃদু গুঞ্জন হচ্ছিল সেটা থেমে যায় এবং কয়েকজন ডাক্তার নিঃশব্দে আমাকে ঘিরে দাঁড়ায়। আমি চোখ খুলে তাকাতেই ডাক্তারেরা সহৃদয়ভাবে হাসার চেষ্টা করল। আমি ভয় পেয়ে যাবার একটা ভঙ্গি করলাম। নিশ্চয়ই অতি অভিনয় হয়ে গিয়েছিল, কারণ ডাক্তারেরা ছিটকে পেছনে সরে এসে খানিকক্ষণ ফিসফিস করে নিজেদের ভেতর কথা বলে বাতিগুলো নিভিয়ে একটা কোমল সংগীত বাজানোর ব্যবস্থা করে চলে গেল।

    আমি একা একা আবছা অন্ধকারে শুয়ে থাকি। গোপন কোনো জায়গা থেকে আমাকে লক্ষ করা হচ্ছে কী না আমি জানি না, তাই আমি অস্বাভাবিক কিছু করার সাহস পেলাম না, এক ভঙ্গিতে ছাদের দিকে তাকিয়ে শুয়ে রইলাম। কতক্ষণ শুয়ে ছিলাম জানি না, একসময় হঠাৎ নীষার গলার আওয়াজ পেলাম, কিম জুরান।

    আমি ঘুরে তাকাই, নীষা কখন নিঃশব্দে আমার মাথার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। তার হাতে একটা সাদা পোশাক, আমার হাতে দিয়ে ফিসফিস করে বলল, এটা পরে নিন।

    আমি পোশাকের ভাঁজ খুলতে খুলতে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলাম, এখন কী হবে?

    আপনার দুই মিনিট সময় আছে এখান থেকে পালাবার।

    দুই মিনিট? আমি থতমত খেয়ে বললাম, কীভাবে পালাব আমি? কিছুই তো চিনি না।

    বলছি, মন দিয়ে শুনুন। প্রথমে সোজা হেঁটে যাবেন করিডোর ধরে, শান্তভাবে, কোনোরকম উত্তেজনা দেখাবেন না। কারো সাথে দেখা হলে কিংবা কেউ কোনো কথা বলতে চাইলে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করবেন। করিভোরের শেষ মাথায় দরজাটা খোলামাত্র জরুরি বিপদ সংকেত জানিয়ে সব ক’টা দরজা নিজে নিজে বন্ধ হয়ে যাবার কথা। আমি ব্যবস্থা করেছি যেন কয়েকটা খোলা থাকে, কোনো জটিল কিছু নয়, দরজার ফাঁকে ফাঁকে একটা করে দিয়াশলাইয়ের কাঠি রেখে এসেছি। যাই হোক, ঠিক ঠিক। দরজাগুলো দিয়ে বিল্ডিংয়ের বাইরে এসে বাম দিকে দৌড়াবেন। হাঁটা নয়, দৌড়। আমি জানি আপনার যে অবস্থা তাতে দৌড়ানো খুব সহজ ব্যাপার নয়, কিন্তু তবু বলছি দৌড়াবেন। যদি এক সেকেন্ড সময়ও বাঁচাতে পারেন আপনার পালানোর সম্ভাবনা দশ গুণ বেড়ে যাবে। আর সবচেয়ে যেটা ভয়ের কথা সেটা হচ্ছে, যদি দেরি হয়ে যায় তাহলে কন্ট্রোল টাওয়ারে গার্ডেরা পৌছে যাবে, সেখান থেকে গুলি করার চেষ্টা করতে পারে। যাই হোক, দেয়াল ঘেঁষে থাকবেন, শেষ মাথায় একটা গাড়ি থাকবে, হেড লাইট নিভিয়ে, কিন্তু দরজা খোলা রেখে, লাফিয়ে উঠে পড়বেন গাড়িতে, তাহলেই আপনার দায়িত্ব শেষ।

    আমি সাদা পোশাকটার বোতাম লাগাতে লাগাতে বললাম, দরজাগুলো কোথায় বলে দাও।

    শুনুন মন দিয়ে, একটা ভুল দরজা খোলার চেষ্টা করলে অন্তত দশ সেকেন্ড সময় নষ্ট, কাজেই সাবধান।

    কিছুক্ষণের মাঝেই নীষা আমাকে রওনা করিয়ে দিল। পরবর্তী দুই মিনিট সময়কে আমি আমার জীবনের দীর্ঘতম সময় বলে বিবেচনা করব। কর্কশ অ্যালার্মের শব্দের মাঝে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ঠিক ঠিক দরজাগুলো খুলে খুলে যাওয়া খুব সহজ ব্যাপার নয়, বিশেষ করে আমি যখন উত্তেজনার মাঝে কিছুতেই মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারি না। শেষ অংশটুকু, যেখানে আমার দেয়ালের পাশ দিয়ে দৌঁড়ে যাবার কথা, সেখানে আমি কিছুতেই দৌড়াতে পারছিলাম না। পায়ের মাংসপেশীর তখনো দৌড়ানোর মতো ক্ষমতা হয় নি। এই সময়ে বারকয়েক হাততালির মতো শব্দ শোনা গেল, পরে বুঝেছিলাম সেগুলো শক্তিশালী রাইফেলের গুলি।

    দেয়ালের শেষ মাথায় সত্যি সত্যি একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল, হেড লাইট নেভানো কিন্তু দরজা খোলা, ইঞ্জিন ধকধক করে শব্দ করছে। আমি লাফিয়ে ওঠামাত্র দরজা বন্ধ হয়ে গেল এবং মুহূর্তে সেটি ঘুরে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে যেতে শুরু করে।

    ড্রাইভার-সীটে যে বসে আছে তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না, কমবয়স্ক একজন। তরুণ, স্টিয়ারিংয়ের উপর ঝুঁকে পড়ে রাস্তা থেকে চোখ না সরিয়ে বলল, আপনার নূতন জীবন শুরু হল কিম জুরান।

    লুকাস!

    লুকাস হাসিমুখে আমার দিকে ঘুরে বলল, বাম হাতে গুলি লেগেছে, শক্ত করে চেপে ধরে রাখুন।

    গুলি? কার? বলে আমি তাকিয়ে দেখি সত্যি আমার বাম হাত চুইয়ে রক্ত পড়ছে, তাড়াতাড়ি ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে ভয়ার্ত গলায় বললাম, সর্বনাশ! কখন গুলি লাগল?

    মাঝামাঝি যখন ছিলেন। কিছু হয় নি, ভয় পাবেন না। উত্তেজনার মাঝে টের পান নি, চামড়া ছড়ে গেছে একটু, আমি দেখেছি। লুকাস আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, আপনার কোনো ভয় নেই। যে-মানুষ রুকুন গহপুঞ্জে গিয়ে ঠিক ঠিক ফিরে আসতে পারে, তাকে স্বয়ং বিধাতা নিজের হাতে রক্ষা করবে।

    বাঁচিয়েছিলে তো তুমি। আমি একটা রুমাল দিয়ে হাত বাঁধতে বাঁধতে বললাম, ধন্যবাদ দেবার সুযোগ হয় নি।

    আমি বাঁচিয়েছিলাম! কী আশ্চর্য!

    কেন? এতে আশ্চর্যের কী আছে!

    আমি জানি না, তাই অবাক লাগছে!

    আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, তুমি জান না মানে?

    আমার স্মৃতির একটা অংশ পাঠানো হয়েছিল, সে কখনো ফিরে আসে নি।

    রে আসে নি?

    না, মহাকাশযানের মূল কম্পিউটারকে ধ্বংস করার সময় নিজেও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আপনাকে একদিন বলতে হবে কী হয়েছিল।

    আমি কী-একটা বলতে যাচ্ছিলাম, লুকাস হাত তুলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে, একটা চৌকা মতন বাক্সে নিচু স্বরে কার সাথে জানি কী-একটা কথা বলে, তারপর একটা সুইচ টিপে দিতেই প্রচণ্ড একটা বিস্ফোরণের আওয়াজ পেলাম। খুব কাছেই আগুনের একটা গোলা সশব্দে উপরে উঠে ফেটে যায়, তার মাঝে দিয়ে লুকাস গাড়িটাকে বের করে এনে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল, হা, কী জানি বলছিলেন?

    আমি শুকনো গলায় বললাম, কিসের বিস্ফোরণ ওটা?

    একটা গাড়ি ধ্বংস হয়ে গেল।

    কার গাড়ি?

    লুকাস মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলল, এখন বলব না, কাল ভোরে খবরের কাগজে দেখবেন।

    আমি কিছু না বুঝে খানিকক্ষণ লুকাসের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। লুকাস সহজ স্বরে বলল, বেল্ট দিয়ে শক্ত করে বাঁধা আছেন তো?

    আছি।

    বেশ! একটু সতর্ক থাকবেন কথা বলতে বলতে লুকাস হঠাৎ মাঝপথে গাড়িটা ঘুরিয়ে নেয়, আমি প্রায় ছিটকে উড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম, তার মাঝে হঠাৎ দেখি গাড়িটা মাথা উপরে তুলে মাটি থেকে দশ-বার ফুট উপর দিয়ে উড়তে শুরু করেছে।

    বাই ভার্বাল! আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, বাই ভার্বাল গাড়ি বেআইনি না?

    আমরা নিজেরাই তো বেআইনি, লুকাস গাড়িটাকে উড়িয়ে নিতে নিতে বলল, আমাদের গাড়ি বেআইনি না হলে কি মানায়?

    আমি নিচে তাকিয়ে দেখি গাড়িটা রাস্তা ছেড়ে মাঠ-ঘাট-বন-বাদাড় পার হয়ে কিছুক্ষণের মাঝেই আবার লোকালয়ে ফিরে আসে। নির্জন একটা রাস্তাতে গাড়িটা আবার নিচে নামিয়ে লুকাস যেন একজন ভদ্রলোকের মতো গাড়ি চালিয়ে একটা পুরান বিল্ডিংয়ের সামনে এসে দাঁড়াল।

    গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে লুকাস বলল, আপনি একটু দাঁড়ান, অনেক কিছু ঘটেছে আজ, গাড়ির লগটা দেখে আসি, সবকিছু ঠিকঠিক করে হয়েছে কী না। পেছনে পুলিস লেগে থাকলে বিপদ হতে পারে। গাড়ির কম্পিউটারে কী-একটা দেখে সে ভারি খুশি হয়ে উঠে বলল, চমৎকার। একেবারে পেশাদারের কাজ!

    বিল্ডিংটা বাইরে থেকে পুরান মনে হলেও ভেতরে একেবারে অন্যরকম। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আমাদের দিকে একজন এগিয়ে আসে। দেখেই বোঝা যায় সে একজন রবোট্রন। শুধু যে কপালের উপর কয়েকটা স্কু রয়েছে তাই নয়, কানের নিচে থেকে কয়েকটা তারও বের হয়ে আছে। লুকাসকে মানুষের মতো দেখানোর জন্যে যেটুক পরিশ্রম করা হয়েছে, এর জন্যে তা করা হয় নি। লুকাস এই রবোটটির দিকে তাকিয়ে কী-একটা বলল, শুনে রবোটটি মাথা নেড়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসে।

    লুকাস আমাকে বলল, আপনি ভিকির সাথে যান। ও আপনার দেখাশোনা করবে।

    তুমি?

    আমি একটু কন্ট্রোলরুমে যাই। নীষার কোনো সাহায্য লাগবে কি না দেখি।

    নীষা? ওর কি কোনো বিপদ হতে পারে?

    হতে তো পারেই, যেসব কাজকর্ম করে, বিপদ হওয়া আর বিচিত্র কি! কিন্তু হবে না, আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন।

    আমি যেতে যেতে আবার ঘুরে দাঁড়ালাম, নীষা কি রবোট্রন?

    লুকাস আমার চোখের দিকে তাকাল, আমি মহাকাশযানে ওকে এই প্রশ্নটি করেছিলাম, ও জানে না। ওর দৃষ্টির সামনে আমি কেন জানি লজ্জা পেয়ে যাই। লুকাস সেটা গ্রাহ্য না করে বলল, নীষা রবোর্টুন হলে আপনার মন-খারাপ হয়ে যাবে?

    মন-খারাপ হবে কেন?

    হবে হবে, আমি জানি হবে। লুকাস চোখ নাচিয়ে বলল, আমি বলব না, দেখি আপনি বের করতে পারেন কিনা।

    আমি একটা নিঃশ্বাস ফেললাম, আগেও সে একই উত্তর দিয়েছিল।

    ভিকি নামের রবোটটি আমাকে পেছন থেকে ঠেলে দিয়ে কাঠ কাঠ স্বরে বলল, চলুন, আপনার রক্তপাত বন্ধ করা দরকার।

    লুকাস ভিকিকে একটা ধমক দিয়ে বলল, তোমাকে কতবার বলেছি কনুইয়ের কাছে শর্ট সার্কিটটা সেরে ফেল, যখনই দেয়ালের কাছে আসছ কেমন স্পার্ক বের হচ্ছে দেখেছ?

    ভিকি সরল মুখে বলল, কী আছে, মাত্র তো আঠার হাজার ভোল্ট।

    আঠার হাজার ভোল্ট তোমার কাছে মাত্র হতে পারে, কিন্তু কিম জুরানের জন্যে মাত্র নয়। ইনি একজন মানুষ, তোমার মতন রবোট নয়। তোমার থেকে একটা স্পার্ক খেলে কিম জুরানকে আর দেখতে হবে না!

    ও, আচ্ছা। ভিকিকে খুব বেশি বিচলিত মনে হল না, আমাকে আবার পেছন থেকে ঠেলে দিয়ে বলল, চলুন, আপনার রক্তপাত বন্ধ করা দরকার।

    আমি তার সাথে পাশের একটা ঘরে হাজির হলাম। সাদা একটা বিছানায় আমাকে শুইয়ে দিয়ে সে আমার উপর ঝুঁকে পড়ে। তার বিপজ্জনক কনুই থেকে যতদূর সম্ভব নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে আমি আলাপ জমানোর চেষ্টা করি, অনেকদিন থেকে আছ বুঝি?

    তা বলতে পারেন, আপনাদের হিসেবে তো অনেক দিনই।

    কত দিন?

    এক শ’ তিরিশ বছর। কপোট্রনের এনালাইজিং ইউনিটটা অবশ্যি নতুন, গত বছর ঢোকানো হয়েছে। কিন্তু পুরান জিনিস গছিয়ে দিয়েছে।

    কানের কাছে ঐ তারগুলো কিসের?

    ভিকি বিরক্ত হয়ে বলল, আর বলবেন না, লুকাসের কাণ্ড। মাঝে মাঝে দাবা খেলার জন্য আমার ভেতরে গ্রান্ড মাস্টারের মেমোরি লোড করে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে করতে নাকি দেরি হয়, তাই এই তারগুলো বের করে রেখেছে, সোজা প্লগ ইন করে দেয়।

    ও, আচ্ছা। আমি একটু সমবেদনা প্রকাশ না করে পারলাম না, একটু ঢেকেঢুকে রাখলেই পার।

    আর ঢেকেঢুকে কী হবে? কতদিন থেকে বলছি আমার বাইরের চেহারাটা ঠিক করে দাও, দিচ্ছি দিচ্ছি করে কত দেরি করল দেখেছেন? লুকাসের মতো আলসে মানুষ আছে নাকি?

    ব্যস্ত মানুষ, আমি লুকাসের পক্ষ টেনে কথা বলার চেষ্টা করি, কত কিছু করতে হয়।

    ভিকি বাম হাতটা যত্ন করে ব্যান্ডেজ করে দিতে দিতে বলল, আপনাকে বেশ শ্রদ্ধা-ভক্তি করে বলে মনে হল, বলে দেখবেন তো আমার চেহারাটা ঠিক করে দিতে।

    বলব।

    হ্যাঁ, বলবেন। কতদিন ঘরের বাইরে যেতে পারি না এই চেহারার জন্যে। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে ভিকি বলল, লুকাস ছেলেটা আসলে খারাপ নয়, তবে ভারি ফাঁকিবাজ।

    আমি একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি নীষাকে চেন?

    হ্যাঁ, চিনি।

    ও কি মানুষ, নাকি রবোট্রন?

    ভিকির চেহারাতে অনুভূতির কোনো ছাপ পড়ে না, তাই ঠিক বুঝতে পারলাম না ও কী ভাবছে। খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, জানি না। দেখে মনে হয় মানুষ। কিন্তু নূতন রবোটন গুলোর সাথে মানুষের কোনো পার্থক্য বোঝা যায় না। নীষা কথাও বলে চমৎকার, রবোট্রনের মতো, মানুষের ন্যাকামোর কোনো চিহ্ন নেই। আপনি কিছু মনে করলেন না তো?

    আমি কথাটা হজম করে বললাম, মানুষ হলেই ন্যাকামো করে?

    করবে না? ওদের মস্তিস্কেই কিছু-একটা গণ্ডগোল আছে।

    আমিও করেছি?

    করলেন না? জিজ্ঞেস করলেন নীষা মানুষ, না রবোট্রন! এটা ন্যাকামো হল না? একজন রবোট কখনো এসব প্রশ্ন করবে না। ভিকি খানিকক্ষণ চিন্তা করে মাথা নেড়ে বলল, আমার কী মনে হয় জানেন?

    কী?

    নীষার জন্যে আপনার প্রেম হচ্ছে।

    আমার কানের গোড়া পর্যন্ত লাল হয়ে উঠল। একটু কেশে বললাম, তোমার তাই মনে হয়?

    হুঁ। আমি অবশ্যি এসব বুঝি না, আমাদের সময় ওসব ছিল না। আজকাল নাকি রবোটে প্রেম-ভালবাসা এসব দেয়া হচ্ছে। শুধু শুধু সময় নষ্ট।

    ভিকির মুখে অনুভূতির ছাপ পড়ে না, তা না হলে এখন নিশ্চয়ই তার ভুরু বিরক্তিতে কুঁচকে উঠত।

    আপনি এখন ঘুমান, আপনার বিশ্রাম দরকার।

    ভিকি আমার চারপাশে কম্বল গুজে দিয়ে, বাতি নিভিয়ে বলল, কিছু দরকার হলে বলবেন, আমি আশেপাশেই আছি।

    আমি সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লাম, গভীর নিরুদ্বেগ ঘুম, বহুকাল এভাবে ঘুমাই নি। মাঝে কয়েক মুহূর্তের জন্যে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল, খানিকক্ষণ সময় লাগল বোঝার জন্যে কোথায় আছি। যখন মনে পড়ল আর আমার মৃত্যুদণ্ডের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে না, গভীর শান্তিতে আমি পাশ ফিরে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }