Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৫. যোগাযোগ : দ্বিতীয় পর্ব

    ০৫. যোগাযোগ : দ্বিতীয় পর্ব

    পল, আমি লু, আমাকে দেখতে পাচ্ছ তুমি?

    পাচ্ছি।

    তোমার কথা বলতে কষ্ট হলে কিছু বলার প্রয়োজন নেই, শুধু শুনে যাও।

    একটু কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু সেটা এমন কিছু নয়।

    রু-টেক বলেছে তোমাকে যে তোমার পাঁজরের দুটো হাড় ভেঙে গিয়েছিল, ডান হাতে কম্পাউন্ড ফ্র্যাকচার?

    বলেছে।

    তোমার ফুসফুস অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে ক্ষতিগ্রস্ত, বড় দুটো ধমনী ফেটে গেছে, সেটা বলেছে?

    হ্যাঁ।

    সৌভাগ্যক্রমে তোমার মস্তিষ্কে বিশেষ ক্ষতি হয় নি।

    জানি।

    রু-টেক এখন চমৎকার ডাক্তার, তোমাকে প্রায় দাঁড় করিয়ে এনেছে দেখতেই পাচ্ছ। তোমার কোনো ভয় নেই জান তো?

    জানি।

    বেশ, কাজের কথায় এসে পড়া যাক। লু একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করল, গত আটাশ ঘন্টায় কী হয়েছিল, তোমার কি কিছু মনে আছে?

    না।

    স্কাউটশিপটা অ্যাটমিক ক্লাস্টার দিয়ে ভাঙার পর কী হয়েছিল মনে আছে?

    না। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে আমি ছিটকে গেলাম, এরপরে কী হয়েছে আমার কিছু মনে নেই।

    কিছু মনে নেই? চেষ্টা করে দেখা

    পল খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, না, কিছু মনে নেই।

    কিচ্ছু নেই। খুব ভালো করে ভাব। রু-টেক তোমার মস্তিস্কের নিউরোন পরীক্ষা করে দেখেছে, গত আটাশ ঘন্টায় তোমার মস্তিষ্কে কোনো এক ধরনের খবর দেয়া হয়েছে।

    পল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, সত্যি?

    হ্যাঁ। ট্রাইটনের অধিবাসীরা সম্ভবত তোমাকে দিয়ে আমাদের কাছে কোনো একটা খবর পাঠিয়েছে, খবরটা আমাদের জানা দরকার।

    পল কিছু না বলে চুপ করে থাকে। লু খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে ডাকল, পল।

    বল।

    তোমার কিছু মনে নেই। কোনো ঘটনা যদি না হয়, তা হলে কোনো সংখ্যা, কোনো চিহ্ন, কোনো শব্দ, কোনো রং—

    লাল।

    লু চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল, লাল কি?

    লাল রং।

    কোথায় লাল রং? কিসের লাল রং?

    জানি না, কিন্তু মনে হচ্ছে লাল রঙের—পল অনিশ্চিতের মতো থেমে যায়।

    লাল রঙের কি?

    পল হাল ছেড়ে দিয়ে বলল, জানি না।

    লু কষ্ট করে নিজেকে শান্ত রেখে বলল, পল, তুমি চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখ, চেষ্টা কর কিছু একটা মনে করতে, যাই মনে হয় আমাদের বল, যাই মনে হয়।

    পল কুম চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করে, কিছুই তার মনে আসছে না, সে আরো গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবার চেষ্টা করে, কিন্তু কোনো লাভ হয় না।

    চেষ্টা কর পুল, নিজের অবচেতন মনের কথা বের করার চেষ্টা কর, তুমি পারবে পল।

    লাল বৃত্ত।

    লাল বৃত্ত কি?

    লাল বৃত্ত বড় হচ্ছে।

    কেন বড় হচ্ছে? কোথায় বড় হচ্ছে? কী ভাবে বড় হচ্ছে?

    জানি না।

    কয়টা বৃত্ত পল?

    কয়েক মুহূর্ত পর দ্বিধান্বিত স্বরে বলল, তিনটা। বৃত্তগুলি বড় হয়ে একটা আরেকটাকে ঢেকে ফেলল, এখন একটা বড় বৃত্ত।

    বড় বৃত্ত কী করছে?

    এখন ছোট হচ্ছে। লাল বৃত্তটা ছোট হচ্ছে।

    বলে যাও, পল তুমি থেম না।

    বৃত্তটা ছোট হতে হতে প্রায় মিলিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু থেমে গেল, তারপর বড় হতে শুরু করল, বড় হতে থাকল, বড় হতে থাকল, আরো বড়, আরো বড়, আরো বড়—

    তারপর?

    থেমে গেল, এখন ছোট হতে শুরু করেছে, ছোট হচ্ছে, ছোট হচ্ছে, আরো ছোট হচ্ছে—পল কুমের নিঃশ্বাস দ্রুততর হতে থাকে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠে ওর।

    লু একটু ভয় পেয়ে ডাকল, পল—

    আরো ছোট হচ্ছে, আরো ছোট—

    পল, লু আবার ডাকল, পল কী হয়েছে তোমার?

    এখন বড় হচ্ছে, আরো বড়, আরো বড়—পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকে পল, আরো বড়, আরো বড়, আরো বড়–

    হঠাৎ করে মনিটরে পলের ছবি অদৃশ্য হয়ে যায়, তার গলার স্বর শোনা যাচ্ছিল, সেটাও হঠাৎ থেমে গেল, কয়েক মুহূর্ত অস্বস্তিকর নীরবতা, কি হচ্ছে দেখাও যাচ্ছে না। হুটোপুটি করে কিছু একটা নড়াচড়া করছিল, ক্যামেরাটা একপাশে সরিয়ে নিতেই দেখা গেল, রু-টেক পল কুমকে মেঝেতে চেপে ধরে রেখে একটা ইনজেকশান দিচ্ছে, পল নিস্তেজ হয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসতেই রু-টেক উঠে দাঁড়ায়। লু কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছিল রু-টেক?

    জানি না, হঠাৎ করে মনে হল নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল। তিরিশ মিলিগ্রাম রনিয়াম দিয়ে রেখেছি, চৰ্বিশ ঘন্টা এখন ঘুমিয়ে থাকবে। রু-টেক খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, লু।

    বল।

    পলের মস্তিষ্কে কি আছে জানি না, কিন্তু যেটাই থাকুক, সেটা আমাদের বের করা উচিত না, আমার মনে হয় আমরা ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণের মাঝে রাখতে পারব না।

    কেন বলছ এটা রু-টেক, কিছু-একটা কি হয়েছে?

    হ্যাঁ।

    কি?

    যে কয়েক মুহূর্ত ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল, তখন ওর শরীরে একটা অস্বাভাবিক মেটামরফিজম শুরু হয়েছিল।

    মানে?

    অস্বাভাবিক কয়েকটা হরমোন বের হতে শুরু করেছিল, যেটা মানুষের শরীরে থাকার কথা নয়। আমার কাছে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার মতো ঠিক যন্ত্রপাতি নেই, কিন্তু যেটুকু দেখেছি মনে হচ্ছে সত্যিই তাই হয়েছে।

    সত্যি?

    হ্যাঁ। তোমার ঠিক কী পরিকল্পনা জানি না, কিন্তু আমার মনে হয় পলকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিলি কে তাপমাত্রায় নিয়ে ওর সবরকম শারীরিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

    ঠিকই বলেছ তুমি রু-টেক। আমি ব্যবস্থা করছি।

    যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

    হ্যাঁ, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। পলকে তো তুমি ঘুম পাড়িয়ে রেখেছ, ঘুম ভাঙার তো কোনো সম্ভাবনা নেই, নাকি আছে?

    থাকার কথা নয়, রু-টেক একটু ইতস্তত করে বলল, কিন্তু এখানে কী হতে পারে আর কী না হতে পারে তার আর কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই।

    তা ঠিক। ঠিক আছে, আমি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পাঠিয়ে দিচ্ছি।

    দাও।

     

    জরুরি সভা বসেছে। গত চবিশ ঘন্টায় অনেক কিছু ঘটেছে, ঘটনাগুলির আকস্মিকতায় সবাই কমবেশি বিভ্রান্ত, ঠিক কী করা উচিত বোঝা সহজ নয়। লু এ অবস্থাতেও মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করছে, ও নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যখন জটিল কোনো সমস্যা হয়, তখন সেটার সমাধান একা একা বের করার চেষ্টা করা বড় ধরনের বোকামি। যদি কয়েকজন তীক্ষ্ণবুদ্ধির মানুষ পাওয়া যায়; তাদের সাথে সমস্যাটা আলোচনা করলে অনেক সময় খুব ভালো সমাধান বেরিয়ে পড়ে। লু মোটামুটি ঠিক করেছে কী করবে, সেটি এখন সবার সাথে আলোচনা করে ঠিক করে নিতে চায়। আজকের সভায় কোনোরকম ভনিতা না করে লু সোজাসুজি কাজের কথায় চলে এল, বলল, তোমরা সবাই জান এখানে কি হচ্ছে, আমি কি করতে চাইছি হয়তো জান বা আন্দাজ করতে পারছ। তবু একবার বলে নিই, কারো কোনো আপত্তি বা মতামত থাকলে জানাতে পার। পলের মস্তিষ্কে করে ট্রাইটনের অধিবাসীরা যে-কোডটা পাঠিয়েছে, পল সেটা জানে না, ওর অবচেতন মনে জানতে পারে, কিন্তু সজ্ঞানে সে জানে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কোডটা জানা তার জন্যে ভালো নয়, সেজন্যে সেটা জানা আমাদের জন্যেও ভালো নয়। আমি ট্রাইটনের অধিবাসীদের পাঠানো কোডটা না জেনেই ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করতে চাই। পলকে সাথে নিয়ে যাওয়ার একটামাত্র উপায়, সেটা হচ্ছে তার শরীরের তাপমাত্রা মিলি কে ডিগ্রিতে নামিয়ে নেয়া। যেহেতু আমরা জানি না পলকে দিয়ে পাঠানো কোডটা ঠিক কী ধরনের, আমি কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। তোমাদের কারো কারো কাছে বাড়াবাড়ি মনে হলেও আমি তাপমাত্রা মিলি কে-তে নিয়ে যেতে চাই।

    কিম জিবান হাত তুলে বলল, তুমি জান মানুষের শরীরকে মিলি কে তাপমাত্রায় নিতে এবং রাখতে কত শক্তি খরচ হয়?

    খানিকটা জানি।

    সিসিয়ানে কি এত জ্বালানি আছে?

    সিডিসি উত্তর দিল, যদি একটার বেশি হাইপারভাইভ দেয়া না হয়, আর ট্রাইটনের অধিবাসীদের সাথে সরাসরি দীর্ঘকালব্যাপী যুদ্ধে নামা না হয়, আমরা পলকে সম্ভবত এক সপ্তাহের মতো মিলি কে তাপমাত্রায় রাখতে পারব।

    লু বলল, হাইপারডাইভ একটার বেশি দেবার প্রয়োজন হবে না, আর ট্রাইটনের সাথে যুদ্ধে নামার আমার কোনো ইচ্ছা নেই।

    কিন্তু যদি নামতে হয়, কিম জিন মুখ শক্ত করে বলল, যদি আমাদের কোনো উপায় না থাকে?

    তা হলে নামব, কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না, আমি তোমাকে লিখে দিতে পারি। সমান ক্ষমতায় যুদ্ধ হয়, অসমান ক্ষমতার যুদ্ধ খুব ক্ষণস্থায়ী। আমি সে-যুদ্ধে নামতে চাই না। কারো কিছু বলার আছে?

    কেউ কিছু বলল না, লু মুখ ফুটে ট্রাইটনের অধিবাসীদের অচিন্তনীয় ক্ষমতার কথা উল্লেখ করে সবার মনকে দুর্বল করে দিয়েছে, হঠাৎ করে সবাই অনুভব করে তারা কত অসহায়।

    সিডিসি পল কুমের শরীরকে মিলি কে তাপমাত্রায় নিয়ে নেয়ার দায়িত্ব নিয়ে নেয়, বিশেষ ধরনের হিলিয়াম কমপ্রেশার, তাপ নিরোধক ক্যাপসুল ইত্যাদি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে থাকে। পলকে মিলি কে তাপমাত্রায় নিয়ে বিশেষ ক্যাপসুলে করে সিসিয়ানে ফিরিয়ে আনা হবে। কিম জিবান সিডিসিকে সাহায্য করতে থাকে। রটেককে আনার প্রয়োজন নেই, তার মেমোরিকে সিসিয়ানে পাঠিয়ে সেটা একটা নূতন কপোট্রনে করে নূতন একটা রবোটের শরীরে জুড়ে দেয়া হবে। কাজটি সহজ, নীষা নিজে থেকে সে-দায়িত্ব নিয়ে নিল।

    লু নিজের ঘরে ফিরে এসে দেখে নীষা তার ঘরে অপেক্ষা করছে। লু একটু অবাক হয়ে বলল, কী ব্যাপার নীষা, তুমি কি আমাকে কিছু বলবে?

    হ্যাঁ। জিনিসটা হয়তো খুবই হাস্যকর, তবু না বলে পারছি না।

    নীষা, এখানে সবকিছু এত অবাস্তব যে কোনো কিছুই আর হাস্যকর নয়। কি বলবে?

    পল বলেছিল লাল গোলাকার বৃত্তের কথা। তুমি দেখেছ ট্রাইটনের উপর গোলাকার বৃত্ত আছে, সেগুলির রং বেশ লালচে।

    হ্যাঁ, কিন্তু—

    এমন কি হতে পারে না যে, পল এই বৃত্তগুলির কথা বলেছে?

    কিছুই অসম্ভব নয়, খুবই সম্ভব সেটা। তবে পল তিনটি বৃত্তের কথা বলেছিল, ট্রাইটনের উপর বৃত্ত রয়েছে দু’টি, যে জন্যে এটাকে দেখতে একজোড়া চোখের মতো মনে হয়।

    তা ঠিক, নীষা মাথা নাড়ে, পল তিনটি বৃত্তের কথা বলেছিল, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। পল বলেছিল লাল বৃত্ত, এগুলি লালচে কিন্তু ঠিক লাল বলা যায় না। কেমন পচা ঘায়ের মতো রং।

    লু একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, যাও নীষা, গিয়ে একটু বিশ্রাম নাও, যতদূর সম্ভব শক্তি বাচিয়ে রাখ।

    হ্যাঁ, যাই।

    নীষা বিদায় নেয়ার পর লু একটু বিশ্রাম নেবে বলে ঠিক করল। শোয়ার আগে সে রু-টেকের সাথে একবার কথা বলে নিল। সিডিসি হিলিয়াম কমপ্রেশার পাঠিয়ে দিয়েছে। পলের শরীর কালো একটা স্টেনলেস স্টিলের ক্যাপসুলের ভিতর রাখা হয়েছে। খুব ধীরে ধীরে এখন তাপমাত্রা কমিয়ে আনা হচ্ছে। তাপমাত্রা খুব তাড়াতাড়িও কমানো যায়, জরুরি অবস্থায় মাইক্রো সেকেন্ডে কমানোর নজির আছে, তবে তাতে বিপদের ঝুঁকি অনেক বেশি, নেহায়েৎ বাড়াবাড়ি প্রয়োজন না হলে সেটা করা হয় না। পলের শরীরের তাপমাত্রা এখন শূন্যের নিচে চার ডিগ্রি, মিনিটে এক ডিগ্রি করে নেমে আসছে। আর ঘন্টাখানেকে পুরোপুরি নেমে যাবে, লু এই এক ঘন্টা বিশ্রাম নিয়ে নেবে বলে ঠিক করল।

    শুয়ে থাকতে থাকতে একসময়ে লু ঘুমিয়ে পড়েছিল, ওর ঘুম ভাঙল জরুরি বিপদ সংকেতের শব্দে, লাফিয়ে উঠে বসে সে, কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, সিডিসি, কি হয়েছে?, ট্রাইটনে কিছুক্ষণ হল তৃতীয় একটা বৃত্ত দেখা দিয়েছে এবং বৃত্তগুলির রং ধীরে ধীরে গাঢ় লাল হয়ে উঠছে। এখন খালি চোখে আপনারা বুঝতে পারবেন না, কিন্তু বৃত্তগুলি আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে।

    নীষা তা হলে ঠিকই আন্দাজ করেছিল।

    জ্বি।

    সিডিসি, এটার মানে কী জান?

    ঠিক জানি না, তবে আন্দাজ করতে পারছি। পল কুমকে ট্রাইটনের অধিবাসীরা যেকোডটা দিয়েছে, সেটা এখন পলের কার্যকর করার কথা। পল সম্ভবত এই সংকেতের জন্যে অপেক্ষা করছিল।

    লু ঘড়ি দেখে বলল, পলের তাপমাত্রা এতক্ষণে মিলি কের খুব কাছাকাছি চলে গেছে, তাকে দিয়ে ট্রাইটনের অধিবাসীরা এখন কিছুই করতে পারবে না। সিডিসি, তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখানে নিয়ে এস, হাইপারডাইভ দিতে হবে।

    সিডিসি কিছু বলল না, লু একটু অধৈর্য হয়ে বলল, কি হল, তুমি কোনো কথা বলছ না কেন?

    আমি দুঃখিত লু, রু-টেক এইমাত্র আমাকে জানাল, পলের শরীরের তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছে, তাকে আর শীতল করা যাচ্ছে না।

     

    কন্ট্রোলরুমে সবাই এসে হাজির হয়েছে, বড় মনিটরটিতে স্কাউটশিপের ভিতরটক দেখা যাচ্ছিল। র-টেকাকে সেখানে দেখা যাচ্ছে, সে উবু হয়ে একটা মিটারকে লক্ষ করছে, মুখ চিন্তাক্লিষ্ট। লু আসতেই সবাই একটু সরে তাকে জায়গা করে দেয়। লু কিম জিবানের দিকে তাকিয়ে বলল, কিম, তুমি হাইপারড়াইত দেবার জন্যে প্রস্তুত হও।

    এখনি?

    হ্যাঁ এক সেকেন্ডের কম সময়ের নোটিশে তোমাকে হাইপারডাইভ দিতে হতে পারে।

    বেশ।

    কিম জিবান হেটে কন্ট্রোলরুমের অন্য পাশে গিয়ে হাইপারভাইভের কন্ট্রোলটি খুলে বসে। লু মনিটরটি থেকে চোখ না সরিয়ে অন্যদের উদ্দেশ করে বলল, তোমরা মনিটরের আশেপাশে থাকতে চাইলে থাকতে পার, কিন্তু এক সেকেণ্ডের নোটিশে আমাদের হাইপারডাইভ দিতে হতে পারে, কাজেই আগে নিজেদের জায়গা ঠিক করে এস, শেষ মুহূর্তে যেন দেরি না হয়ে যায়।

    হাইপারভাইভ দেয়ার সময়ে, স্থির সময়ের ক্ষেত্রে প্রবেশ করার ঠিক আগের মুহূর্তে ভরবেগের সাম্যতা রক্ষার জন্যে প্রচণ্ড শক্তিক্ষয় হয়, তাতে যে-কম্পনের সৃষ্টি হয়, সেটি ভয়ংকর। এই সিসিয়ানেই একবার একজন অসতর্ক বিজ্ঞানীর মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছিল। সেজন্যে হাইপারডাইভ দেয়ার আগে সবসময়েই বিশেষ আসনে নিজেদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নিতে হয়। লু মনিটরের সামনের চেয়ারটিতে নিজেকে শক্ত করে আটকে নেয়, অন্যেরাও নিজেদের আসনে সবকিছুর ব্যবস্থা করে মনিটরটিকে ঘিরে দাঁড়ায়। লু কয়েক মুহূর্ত রু– টেককে লক্ষ করে বলল, রু-টেক, আমি লু বলছি।

    কথা শুনে রু-টেক ঘুরে দাঁড়ায়, ওর মুখে ক্লান্তির ছাপ, চোখে বোবা আতঙ্ক।

    কি হয়েছে রু-টেক?

    পলের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, কিছুতেই কমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। হিলিয়াম কম্প্রেশারটির বারটা বেজে যাচ্ছে, আর কতক্ষণ টিকে থাকবে, জানি না। তুমি যদি বল চেষ্টা করে যেতে পারি, কিন্তু কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না।

    আমার কেন জানি মনে হচ্ছে চেষ্টা করে লাভ নেই। তুমি নিশ্চয়ই দেখেছ ট্রাইটনে এখন তিনটা লাল বৃত্ত দেখা দিয়েছে, ঠিক যেরকম পল বলেছিল।

    দেখেছি।

    পলের মস্তিষ্কে যে কোডটা পাঠানো হয়েছে, এখন সম্ভবত আমরা সেটা জানতে পারব।

    সম্ভবত।

    মনে হচ্ছে কোডটা কী, দেখা ছাড়া আমাদের আর অন্য কোনো উপায় নেই। পল মনে হয় জ্ঞান ফিরে পাবেই, তাকে শীতল রাখার কোনো রাস্তা দেখছি না।

    না।

    কাজেই সে চেষ্টা না করে তাকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নিয়ে এস, দেখা যাক কি হয়।

    বেশ।

    আর শোন রু-টেক, অবস্থা আমাদের আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে চাইলে আমরা সম্ভবত হাইপারভাইভ দেব, তুমি প্রস্তুত থেকো। এক মিনিটের নোটিশে তোমাকে তোমার পুরো মেমোরি সিডিসির কাছে পাঠাতে হতে পারে।

    আমার মিলি সেকেন্ডের বেশি সময় লাগবে না।

    চমৎকার! আর শোন, ভয়ের কিছু নেই, তুমি ঘাবড়ে যেও না। এখন ইচ্ছে করলে তুমি তোমার ভয়ের সুইচটা বন্ধ করে দিতে পার, কি বল?

    হ্যাঁ, আমিও তাই ভাবছিলাম।

    রু-টেক মাথার পিছনে কোথায় হাত দিয়ে কী-একটা সুইচ বন্ধ করে দিতেই তার ভিতর থেকে ভয়ের ভাবটা সরে যায়। হালকা স্বরে বলে, পলের তাপমাত্রা কেমন বেড়ে উঠছে দেখেছ? আর মিনিট দশেকে জ্ঞান ফিরে পাবে মনে হচ্ছে। ক্যাপসুল থেকে বের করে ফেলি, কি বল? জ্ঞান ফিরে যদি দেখে অন্ধকার কবরে শুয়ে আছে, খামোক ভয় পাবে। এমনিতে ভীত মানুষ, ভয় পেয়ে কী না কী করে ফেলবে কে জানে। রু-টেক দুলে দুলে হাসতে শুরু করে।

    লুয়ের একটু হিংসা হয়, সেও যদি রু-টেকের মতো তার ভয়ের সুইচটা বন্ধ করে দিতে পারত।

    পলকে কালো সিলিন্ডারের ভিতর থেকে বের করে আনা হয়েছে। তার শরীরের নানা জায়গায় নানা ধরনের সেন্সর লাগানো, মাথার কাছে নীল মনিটরে এখনো জীবনের কোনো স্পন্দন দেখা যাচ্ছে না। সবাই রুদ্ধশ্বাসে বসে আছে। কন্ট্রোলরুমে একটা লাল বাতি সেকেন্ডে একবার জ্বলে উঠে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছে সিসিয়ান হাইপারডাইভ দেবার জন্যে প্রস্তুত।

    ট্রাইটনে তিনটি লাল বৃত্ত বড় হয়ে একটা লাল বৃত্ত হয়ে যেতেই পলের ভিতরে পরিবর্তনের চিহ্ন দেখা যায়, তার হৃৎস্পন্দন শুরু হয়ে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বাড়তে থাকে। রক্তচাপ বাড়তে বাড়তে একসময়ে স্থির হয়ে আসে।

    সবাই চুপচাপ বসে ছিল। রু-টেক নীরবতা ভেঙে বলল, পলের শরীরে আশ্চর্য কিছু পরিবর্তন হচ্ছে।

    কি রকম পরিবর্তন?

    তার ফুসফুসে একটা জখম ছিল, আমি অস্ত্রোপচার করে মোটামুটি ঠিক করে দিয়েছিলাম, সারতে মাসখানেক সময় নিত। জখমটা এখন সেরে যাচ্ছে।

    মানে! লু অবাক হয়ে বলল, সেরে যাচ্ছে মানে?

    রু-টেক হেসে বলল, সেরে যাচ্ছে মানে বোঝ না? যেটা ভালো হতে একমাস সময় নেবার কথা সেটা কয়েক মিনিটে ভালো হয়ে যাচ্ছে। আরো শুনবে? ওর পাঁজরের যে হাড়টা ভেঙে গিয়েছিল সেটা জোড়া লেগে গেছে। শুধু তাই না, ওর মাংসপেশীতেও কিছু-একটা হচ্ছে, যার জন্যে সেটার ভিতরে এখন প্রচণ্ড শক্তি থাকার কথা। রক্তে লোহিত কণিকা বেড়ে গেছে অনেক, সব মিলিয়ে বলা যায় ওর শরীরে যেন একটা চমৎকার ওভারলিং হল। তোমরাও কেউ যাবে নাকি ট্রাইটনে, নবযৌবন ফিরে পাওয়া যায় মনে হচ্ছে!

    রু-টেক শব্দ করে হাসে, কিন্তু তার রসিকতাটুকু কেউ উপভোগ করতে পারল বলে মনে হল না। লু গম্ভীর মুখে বলল, পল জ্ঞান ফিরে পেলে জানিও।

    ট্রাইটনের বড় বৃত্তটি যখন ছোট হতে শুরু করে ঠিক তখন পল কুমের জ্ঞান ফিরে আসে। চোখ খুলে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে সে, রু-টেক তার উপর ঝুকে পড়ে বলল, কেমন আছ পল?

    পল তার কথার উত্তর দেয় না, শুনতে পেয়েছে সেরকম মনে হল না।

    পল, রু-টেক আবার ডাকে, পল, শুনতে পাচ্ছ আমার কথা?

    পল খুব ধীরে ধীরে মাথা নাড়ে।

    কেমন লাগছে এখন তোমার?

    পল নির্লিপ্তর মতো বলল, ভালো।

    ওর গলার স্বর শুনে সবাই কেমন জানি শিউরে ওঠে, প্রাণহীন ধাতব আশ্চর্য একটা স্বর।

    রু-টেক হালকা গলায় বলল, তুমি জান, তোমার শরীরে যেসব জখম ছিল সব ভালো হয়ে যাচ্ছে?

    পল আবার মাথা নাড়ে।

    তুমি জান, সেটা কেমন করে হয়েছে?

    পল খুব ধীরে ধীরে রু-টেকের দিকে তাকায়, খানিকক্ষণ তার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, জানি।

    আবার সেই শুস্ক ধাতব গলার স্বর।

    লু তখন কথা বলে, কেমন করে হয়েছে পল?

    পল তার উত্তর না দিয়ে আশ্চর্য একটা অশরীরী শব্দ করে। লু অবাক হয়ে বলল, তুমি কী বললে পল?

    পল তার কথার উত্তর না দিয়ে শূন্যদৃষ্টিতে উপরের দিকে গকিয়ে থাকে। লু চিন্তিত মুখে সিডিসিকে জিজ্ঞেস করল, সিডিসি, তুমি বুঝতে পারলে পল কী বলেছে?

    পেরেছি, ওটা ভিন্ন ভিন্ন শব্দতরঙ্গের পারস্পরিক উপস্থাপন, সেটাকে বিশ্লেষণ করলে তার মানেটা হয় অনেকটা এরকম, পৃথিবীর মানুষ, আমাকে নিয়ে যাও।

    মানে?

    ট্রাইটনের কোনো অধিবাসী সম্ভবত আমাদের সাথে পৃথিবীতে যেতে চাইছে। লু মুখ শক্ত করে বলল, না, আমরা এখন কাউকে নিতে পারব না।

    পল হঠাৎ করে উঠে বসে, তারপর ঘুরে লু’য়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি এখন সিসিয়ানে আসব।

    না।

    পল লু’য়ের কথা শুনতে পেল বলে মনে হল না, আপন মনে বিড়বিড় করে বলল, সময় হয়েছে, আমাকে এক্ষুণি আসতে হবে।

    না, লু শান্ত সুরে বলল, তুমি এভাবে আসতে পারবে না, তোমাকে মিলি কে তাপমাত্রায় না নামিয়ে আমি এখানে আসতে দেব না।

    পল ল’য়ের দিকে তাকিয়ে আবার আশ্চর্য একটা শব্দ করে। সিভিসি মৃদু স্বরে সেটা অনুবাদ করে দিল, নির্বোধ মানুষ, আমাকে তোমার নিতে হবে।

    লু আস্তে আস্তে বলল, সবাই নিজের জায়গায় যাও, আমরা এখন হাইপারডাইত দেব।

    মনিটরে পলের চেহারা দেখা যাচ্ছিল, সেখানে খুব সূক্ষ্ম একটা পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তনটা ঠিক কী, বলা যাচ্ছে না, কিন্তু দেখে কেমন জানি অস্বস্তি হয়। লু একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, পল, আমার কথার উত্তর দাও, তুমি কেন সিসিয়ানে আসতে চাও?

    পল ধাতব একটা শব্দ করে, সিডিসি অনুবাদ করে দেবার আগেই লু বলল, পল, তোমাকে উত্তর দিতে হবে, তুমি কেন এখানে আসতে চাও?

    আমার প্রভু বলেছে।

    কে তোমার প্রভু?

    পল কথার উত্তর না দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, ল’য়ের কথা শুনতে পেয়েছে বলে মনে হল না। লু আবার জিজ্ঞেস করে, তোমার প্রভু কে পল, কী চায় সে?

    পল আবার একটা ধাতব শব্দ করে, এদ্ধ জল্লুর আস্ফালনের মতো শোনাল শব্দটা। লু সিডিসিকে জিজ্ঞেস করে, কী বলল সিডিসি?

    বলেছে, তার প্রভুর বংশধরকে নিয়ে যেতে হবে।

    বংশধর?

    হ্যাঁ।

    লু একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি দুঃখিত পল, তোমাকে আমরা রেখে যাচ্ছি, আবার তোমাকে নিতে আসব। সিডিসি, তুমি হাইপারডাইভ দেবার জন্যে প্রস্তুত?

    প্রস্তুত।

    কিম জিবান?

    প্রস্তুত।

    রু-টেক, তোমার মেমোরি পাঠিয়ে দাও।

    দিচ্ছি।

    মুহূর্তে রু-টেকের মেমোরি চলে আসে সিডিসির মেমোরি ব্যাংকে, সাথে সাথে ব্লু-টেকের ধাতব শরীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আছড়ে পড়ে স্কাউটশিপের ভিতরে।

    লু শান্ত গলায় বলল, কিম, হাইপারডাইভ দাও।

    সিসিয়ানের প্রচণ্ড শক্তিশালী ইঞ্জিন গুঞ্জন করে ওঠে, নীলাভ আলো ছড়িয়ে পড়ে ভিতরে। কিছুক্ষণেই ওরা চলে যাবে স্থির সময়ের ক্ষেত্রে, নিঃশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করে সবাই। কিম জিবান সাবধানে একটা একটা করে সুইচ নিজের দিকে টেনে আন। শেষ সুইচটা চেপে ধরে সে বড় স্টিয়ারিংটা ঘুরিয়ে দেয়, সাথে সাথে শরীর টানটান করে সবাই অপেক্ষা করতে থাকে প্রচণ্ড ঝাঁকুনির জন্যে। সিসিয়ান একবার দলে উঠে হঠাৎ স্থির হয়ে যায়। লু সাবধানে মাথা ঘুরিয়ে তাকায় কিম জিবানের দিকে, হঠাৎ বিদ্যুৎ ঝলকের মতো প্রচণ্ড আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে যায় ওর। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কিম জিবানের সামনে হাইপারডাইরে পুরো কন্ট্রোল প্যানেল ছিটকে উঠেছে। কালো ধোঁয়ায় ভরে যায় সিসিয়ান। কিম জিবান ছিটকে পড়েছে একপাশে, পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু যেটুকু দেখা যাচ্ছে, সেটুকু রক্তে অতবিক্ষত।

    নিজেকে চেয়ার থেকে মুক্ত করতে করতে সিডিসির গলা শুনতে পেল, হল না। হাইপারডাইভ দেয়া হল না। ট্রাইটনের অধিবাসীরা আটকে দিয়েছে আমাদের, জ্যাম করে দিয়েছে ফিডব্যাক।

    লুয়ের সাথে সাথে সবাই ছুটে আসে কিম জিবানের দিকে। লু সাবধানে তাকে ধরে বসানোর চেষ্টা করে। সুশান মেডিক্যাল কিট খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করল, কিম, কেমন আছ কিম?

    অনেক কষ্টে কিম লল, এখনো মরি নি।

    সুশান জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে আনে, তা হলে আর মরবে না। দেখি তোমাকে একর।

    দক্ষ হতে পরীক্ষা করে সুশান বলল, বড় ধরনের আঘাত পেয়েছ তুমি, কেটেছড়ে গেছে, হয়তো নড়তে চড়তে কষ্ট হবে কয়দিন, কিন্তু কিছু হয় নি তোমার, ভালো হয়ে যাবে।

    কিম একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, কী দুঃখের কথা! মরে গেলেই মনে হয় ভালো ছিল।

    কয়েক মুহূর্ত কেউ কোনো কথা বলে না। লু একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, সিডিসি, এদিককার খবর কি?

    খবর বেশি ভালো নয়। ট্রাইটনের অধিবাসীরা এমনভাবে ফিডব্যাকটা জ্যাম করেছে যে সিসিয়ানের ভালো রকম ক্ষতি হয়েছে। সিসিয়ানকে ঠিক না করা পর্যন্ত আর হাইপারভাইভ দেয়া যাবে না।

    পলের কী খবর?

    সে স্কাউটশিপে রওনা দিয়েছে, কিছুক্ষণেই পৌঁছে যাবে এখানে।

    লু’য়ের সাথে সাথে সবাই মনিটরটির দিকে তাকায়। পলকে দেখা যাচ্ছে, অনেকটা অনামন ভঙ্গিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিটা খুব অদ্ভুত, অনেকটা দ্বিধাগ্রস্ত মানুষের মতো, যেন বুঝতে পারছে না কী করবে। কিন্তু একই সাথে ওর সারা শরীর কী একটা অজানা আশঙ্কায় যেন টানটান হয়ে আছে। পুরো দৃশ্যটাতে একটা অমঙ্গলের ছায়া, দেখে বুক কেঁপে ওঠে।

    লু সিডিসিকে উদ্দেশ করে বলল, সিডিসি, মহাকাশকেন্দ্রে একটা খবর পাঠানো যাবে? জরুরি অবস্থার জন্যে যে চ্যানেলটা থাকে সেটা দিয়ে—

    আমি দুঃখিত লু, সিডিসি বাধা দিয়ে বলল, আমরা এখন কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারব না। ট্রাইটনের অধিবাসীরা সবগুলি চ্যানেল জ্যাম করে রেখেছে।

    লু খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, সিডিসি, তোমাকে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করি?

    আমি বুঝতে পারছি ভূমি কী জিজ্ঞেস করতে চাইছ, সিডিসি আস্তে আস্তে বলল, আমি দুঃখিত লু, কিন্তু সেটাও আর করা সম্ভব নয়।

    সত্যি?

    সত্যি।

    নীষা একটু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, কী জানতে চাইছ লু?

    লু একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, খুব কাপুরুষের একটা কাজ। জানতে চাইছিলাম সিসিয়ানকে উড়িয়ে দেয়া যায় কি না, সব মহাকাশযানেই খুব সহজে পুরোটা ধ্বংস করার একটা ব্যবস্থা থাকে জান তো?

    আমাদেরটা নিশ্চয়ই ট্রাইটনের অধিবাসীরা জাম করে দিয়েছে।

    নীষ কিছু না বলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, ট্রাইটনের অতিকায় লাল বৃত্তটা এখন দুত ছোট হচ্ছে, ছোট হয়ে আবার বড় হবে, তারপর আবার ছোট হবে, ঠিক যেরকম পল বলেছিল।

    পল আসছে। এসে সে কী করবে?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }