Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৬. প্রভু ট্রাইটন

    স্কাউটশিপটা সিসিয়ানের ডকে এসে থামল। দরজা আটকে যাওয়ার পরিচিত শব্দ হল প্রথমে, বাতাসের চাপ এক হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করে ওরা, তারপর দরজা খুলে যায়। প্রথমে টাইটেনিয়ামের দরজা, তারপর সিলঝিনিয়ামের দরজা, সবশেষে স্বচ্ছ প্লেক্সি গ্লাসের দরজা। দরজার কাছে এসে দাঁড়ায় পল, দেখে শিউরে ওঠে সবাই। তাকে এখন আর চেনা যায় না, আশ্চর্য পরিবর্তন হয়েছে ওর। সারা মুখের চামড়া টানটান হয়ে আছে, দেখে মনে হয় কেউ যেন তাকে ঝলসে দিয়েছে আগুনে, শরীরের চামড়া যেন ছোট হয়ে আর তাকে ঢাকতে পারছে না, দাঁতগুলি বেরিয়ে আসতে চাইছে মুখ থেকে। শরীরের রঙে কেমন যেন নীলচে একটা ধাতব ভাব এসে গেছে। পল যখন হেঁটে হেঁটে এগিয়ে এল, সবাই দেখল তার হাঁটার ভঙ্গি সম্পূর্ণ অন্য রকম, দেখে মনে হয় যেন মানুষ নয়, একটা অর্থহীন যন্ত্র।

    কারো দিকে না তাকিয়ে পল সোজা হেঁটে যাচ্ছিল, লু ওকে একবার ডাকল। পল কিছু শুনতে পেল মনে হল না, লু তখন আবার গলা উঁচিয়ে ডাকল। পল হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়, তারপর খুব ধীরে ধীরে ঘুরে লু’য়ের দিকে তাকায়। তার নিস্পলক দৃষ্টি দেখে হঠাৎ এক অবর্ণনীয় আতঙ্কে লু’য়ের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চাইল, তবু সে সাহস করে ডাকল, পল, আমাকে চিনতে পারছ, আমি লু।

    পল লু’য়ের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে, লু তখন একটু এগিয়ে এসে বলল, পল কথা বল তুমি, আমি ল, সিসিয়ানের দলপতি।

    একটা ধাতব শব্দ হল হঠাৎ, ঠোট না নড়িয়ে আশ্চর্য শব্দ করা শিখেছে পল। সিডিসি অনুচ্চ স্বরে বলল, সাবধান লু, তোমাকে আর এগুতে নিষেধ করছে।

    লু তবু এক পা এগিয়ে যায়, গলার স্বরে একটা অনুনয়ের সুর এনে বলল, পল, কিছু-একটা বল, এভাবে দাঁড়িয়ে থেকো না।

    পল হঠাৎ আশ্চর্য ক্ষীপ্রতায় ওকে ধরে ফেলে, তারপর কেউ কিছু বোঝার আগেই প্রচণ্ড জোরে ছুড়ে দেয় একপাশে। কয়েক মুহূর্তের জন্যে চোখে অন্ধকার দেখে লু, কষ্ট হয় ওর নিঃশ্বাস নিতে। সবাই ছুটে আসছিল, লু হাত তুলে খামতে ইঙ্গিত করে তাদের। চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নেয় কয়েকবার, তারপর শুকনো ঠোঁট জিব দিয়ে একটু ভিজিয়ে নিয়ে বলল, পল, তুমি কেন এমন করলে?

    আবার আশ্চর্য একটা শব্দ করল পল।

    তুমি আমাদের সাহায্য করবে না পল? তুমি তো আমাদেরই একজন।

    পল তবু কিছু বলে না।

    কিছু-একটা বল, লু অনুনয় করে বলে, আমি জানি তুমি আমার কথা বুঝতে পারছ।

    পল আবার একটা শব্দ করে।

    লু কষ্ট করে উঠে দাঁড়িয়ে, খুড়িয়ে খুঁড়িয়ে কয়েক পা এগিয়ে যায়, কাছে গিয়ে সে হঠাৎ সবাইকে অবাক করে পলের দুই হাত আঁকড়ে ধরে বলল, পল, তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?

    পল ধীরে ধীরে নিজের বাম হাত তুলে লু’য়ের কাপড় ধরে নিজের দিকে টেনে আনতে থাকে। লু কাতর স্বরে বলল, পল, একটা কথা বল।

    পল খুব ধীরে ধীরে প্রায় শোনা যায় না এমনভাবে বলল, কষ্ট, অনেক কষ্ট।

    কেন পল, কিসের কষ্ট?

    ল’য়ের কথার উত্তর না দিয়ে পল বলল, তোমাদের অনেক বড় বিপদ।

    কেন?

    অনেক কষ্ট, পল নিজের মুখ বিকৃত করে যন্ত্রণাকাতর স্বরে বলল, অনেক কষ্ট আমার, আমাকে মেরে ফেল তোমরা, দোহাই তোমাদের।

    পলের শরীর কাঁপতে তাকে, হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে সে। লু তাকে ধরার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। পল দু হাতে মুখ চেপে ধরে গোঙানোর মতো শব্দ করে।

    পল, লু মাথা নামিয়ে বলল, কেন তোমার এত কষ্ট? কোথায় তোমার কষ্ট?

    মাথায়। আমাকে মেরে ফেল। দোহাই তোমাদের!

    পল, তুমি ট্রাইটনের প্রাণীদের দেখেছ?

    পল মাথা নাড়ে।

    কেমন দেখতে তারা? কী করে তারা?

    তারা নয়, পল মাথা নাড়ে, তারা মাত্র একজন।

    মাত্র একজন? অবিশ্বাসের স্বরে বলে, মাত্র একজন?

    হ্যাঁ।

    কেমন দেখতে সে?

    তোমরা দেখেছ তাকে।

    দেখেছি?

    হ্যাঁ।

    কখন দেখেছি?

    সে ট্রাইটন।

    ট্রাইটন?

    হ্যাঁ।

    মানে গ্রহটা?

    হ্যাঁ।

    পুরো গ্রহটা একটা প্রাণী?

    হ্যাঁ।

    কয়েক মুহূর্ত কেউ কথা বলতে পারে না। ল’য়ের পেটের ভিতরে কী-যেন একটা পাক দিয়ে ওঠে, ভয়ের একটা কাঁপুনি যেন মেরুদণ্ড দিয়ে বেয়ে যায়।

    তোমাদের অনেক বড় বিপদ। ট্রাইটনের বংশধরকে তোমাদের সাথে নিতে হবে।

    সে কোথায়?

    পল হঠাৎ দু’ হাতে নিজের মাথা চেপে ধরে যন্ত্রণায় মুখ বিকৃত করে বলল, আমাকে মেরে ফেল তোমরা, দোহাই তোমাদের!

    সুশান এগিয়ে এসে পলের হাত ধরে, তোমাকে ত্রিশ মিলিগ্রাম রনিয়াম দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেব পল, কোনো ভয় নেই তোমার।

    পল মাথা নাড়ে, আমাকে কেউ ঘুম পাড়াতে পারবে না। আমার মাথায় যন্ত্রণা–

    কে বলেছে, এই দেখ তুমি। সুশান মেডিকেল কিট থেকে লম্বা সিরিঞ্জ বের করে রনিয়াম টেনে নিতে থাকে।

    আমার মনে হয় পল সত্যি কথাই বলছে।

    রু-টেকের গলার স্বর শুনে সবাই ঘুরে তাকায়, সে স্কাউটশিপ থেকে কখন বের হয়ে এসেছে কেউ লক্ষ করে নি। হাইপারডাইভ দেবার সময় তার মেমোরিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, সিডিসি নিশ্চয়ই আবার সেটা ফিরিয়ে দিয়েছে। রু-টেক সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বলল, আমার মনে হয় না তুমি ওকে ঘুম পাড়াতে পারবে সুশান।

    কেন?

    পল এখন আর পল নেই।

    সে তাহলে কী?

    খানিকটা মানুষ, খানিকটা যন্ত্র, খানিকটা ট্রাইটনের অংশ।

    কী বলছ তুমি।

    আমি দুঃখিত সুশান, কিন্তু আমি সত্যি কথাই বলছি।

    সুশান একটু দ্বিধা করে বলল, তাহলে আমি এখন কী করব?

    আমি জানি না সুশান। তবে সত্যি যদি পলের কথামতো—

    পলের কথামতো কী?

    রু-টেক বিব্রত স্বরে বলল, আমার নিশ্চয়ই মাথার ঠিক নেই, আমি পলের মৃত্যুচিন্তা করছিলাম।

    কয়েক মুহূর্ত কেউ কোনো কথা বলতে পারে না, সুশান একটু এগিয়ে গিয়ে বলল, না রু-টেক, আমি পারব না। এরকম একটা জিনিস আমি চিন্তাও করতে পারব না।

    জানি, আমি রবোট বলেই হয়তো পেরেছি।

    সুশান কোনো কথা না বলে পলের উপর ঝুঁকে পড়ে তার একটা হাত টেনে নেয় ইনজেকশান দেবার জন্যে, সাথে সাথে ভুরু কুঁচকে যায় তার। লু উদ্বিগ্ন স্বরে বলল, কি হয়েছে সুশান?

    পলের শরীর এত ঠান্ড্রা কেন? ও কি–

    সিভিসি অনু সুরে বলল, আমি দুঃখিত সুশান, পল আর বেঁচে নেই। একটু আগে তার মস্তিষ্কে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল, মারা গেছে প্রায় সাথে সাথে।

    কেউ কোনো কথা বলে না, সুশান আস্তে আস্তে পল কমের হাতটি সাবধানে নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ায়। হাতের লম্বা সিরিঞ্জটি নিয়ে কী করবে ঠিক বুঝতে পারে না, অন্যমনস্কভাবে সিরিঞ্জের ভিতরে কমলা রঙের তরলটির দিকে তাকিয়ে থাকে। ধীরে ধীরে তার চোখ পানিতে ভিজে আসতে থাকে। প্রাণপণ চেষ্টা করেও চোখের পানি আটকাতে পারে না, হাতে-ধরে রাখা সিরিটি তার চোখের সামনে আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে আসে।

    মহাকাশযানের নিয়মানুযায়ী কান্না হচ্ছে চতুর্থ মাত্রার অপরাধ, সিডিসি তবু কাউকে সেটা মনে করিয়ে দিল না।

     

    লু নিজের ঘরে মাথা টিপে ধরে বসে আছে, অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, সিডিসি।

    বলুন।

    আমরা এখন কী করব?

    আমি খুব দুঃখিত, কিন্তু অপেক্ষা করা ছাড়া সত্যি কিছু করার নেই।

    কিসের জন্যে অপেক্ষা করব?

    আমি জানি না।

    কিন্তু ট্রাইটনের নিশ্চয় কোনো পরিকল্পনা আছে, পলকে পাঠিয়েছে সে।

    কিন্তু পল তো তার পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারে নি, বেচারা তো কিছু করার আগেই মারা গেল।

    তা ঠিক, কিন্তু পরিকল্পনা নিশ্চয়ই আছে একটা।

    খানিকক্ষণ কোনো কথা নেই। একটু পর সিডিসি আস্তে আস্তে বলল, তোমাকে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করব লু?

    কর।

    তুমি কী ভাবে বুঝতে পেরেছিলে পল আবার আগের মতো কথা বলবে?

    জানি না। যখন আমার দিকে তাকাল তখন ওর নিষ্পলক দৃষ্টির ভিতরেও কোথায় জানি দেখা যাচ্ছিল আমাদের পলকে, প্রত্যেকবার আমি ওকে অনুনয় করছিলাম আর দেখছিলাম ওর দৃষ্টিতে একটু একটু করে পল ফিরে আসছিল।

    তোমরা, মানুষেরা খুব আশ্চর্য! আমি সারা জীবন চেষ্টা করেও কখনো বুঝতে পারব না।

    অবাক হবার কিছু নেই সিডিসি, মানুষ নিজেরাও কখনো মানুষকে বুঝতে পারে না।

    সত্যিই তাই। মানুষের জীবন তাই এত সুন্দর। হাদি সবকিছু সবাই বুঝে ফেলত, বেঁচে থাকার কোনো অর্থই থাকত না তাহলে।

    পলের মৃত্যুটা সবাইকে খুব ভেঙে দিয়েছে সিডিসি।

    হ্যাঁ। বিশেষ করে সুশান, এমনিতে ওর মনটা খুব নরম। এ-ধরনের ব্যাপারের জন্যে একেবারেই সে তৈরি হয় নি।

    কী করছে সে এখন?

    সিডিসি এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে বলল, ও এখন দ্বিতীয় স্তরে নেমে যাচ্ছে, সম্ভবত পল কুমের মৃতদেহের পাশে গিয়ে একটু বসবে।

    লু একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, বেচারি!

     

    পলের দেহটা রাখা হয়েছে দ্বিতীয় স্তরের একেবারে শেষ ঘরটিতে। স্টেনলেস স্টিলের কালো একটা ক্যাপসুলের ভিতরে, শূন্যের নিচে আশি ডিগ্রি তাপমাত্রায়। নির্জন অন্ধকার একটা ঘরে। সুশান বুকের ভিতরে কেমন একটা শূন্যতা অনুভব করে, এক সপ্তাহ আগেও কি কেউ জানত, পলের এরকম একটা পরিণতি হবে?

    সুশান সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে। পলের মৃতদেহটি যে-ক্যাপসুলে আছে সে খানিকক্ষণ তার পাশে বসে থাকবে। ব্যাপারটি পুরোপুরি অর্থহীন, কিন্তু সবকিছুরই কি অর্থ থাকতে হয়?

    কালো স্টেনলেস স্টিলের একটা ক্যাপসুল, হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখে, মসৃণ পৃষ্ঠে নিষ্করুণ শীতলতা। সুশান ফিসফিস করে বলল, পল কুম, তোমাকে আমরা ভুলব না।

    ঠিক তখন একটা শব্দ হল, সুশান প্রথমে ঠিক বুঝতে পারে না কোথায়। আবার অস্পষ্ট একটা শব্দ হল, সাথে সাথে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চমকে ওঠে সুশান। ক্যাপসুলের ভিতর কী যেন নড়ছে। পল কুমপ্রাণ ফিরে পেয়েছে ভিতরে? আসলে কি সে মারা যায় নি? এই ধরনের কয়েকটা অযৌক্তিক জিনিস মাথায় খেলে যায় তার।

    আবার অস্পষ্ট একটা শব্দ হয়, কেউ যেন মুচড়ে মুচড়ে কিছু একটা ভেঙে ফেলছে ভিতরে। সুশান পায়ে পায়ে পিছনে সরে আসে, আতঙ্কে হঠাৎ তার চিন্তা গোলমাল হয়ে যেতে থাকে। কিছু বোঝার আগে ক্যাপসুলের একটা অংশ হঠাৎ সশব্দে ফেটে যায়, আর ভিতর থেকে কিলবিলে কী যেন একটা বেরিয়ে আসে। আধা তরল আধা স্বচ্ছ থলথলে জিনিসটা ছটফট করতে করতে কেমন জানি ঘরঘর শব্দ করতে থাকে, হলুদ একটা ঝাঁঝালো ধোঁয়ায় জায়গাটা ঢেকে যেতে থাকে।

    কয়েক মুহূর্ত সুশান স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর হঠাৎ রক্ত-শীতলকরা স্বরে চিৎকার করে ছুটতে শুরু করে। ভয় পেয়েছে সে, অস্বাভাবিক জান্তব একটা ভয়।

    হিস্টিরিয়াগ্রস্ত মানুষের মতো কাঁদছিল সুশান, লু তাকে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, কি হয়েছে সুশান? বল, কি হয়েছে?

    অনেক কষ্টে সুশান বলল, বংশধর। ট্রাইটনের বংশধর বেরিয়ে এসেছে। পলের শরীর থেকে।

    সবাই পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।

     

    সিসিয়ানের সবাইকে নিয়ে জরুরি সভা ডাকল লু। প্রচণ্ড একটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে সিসিয়ানে, তার মাঝে লু মুখে একটা নির্লিপ্ততার ভাব কষ্ট করে ধরে রেখেছে, সেটা বজায় রাখার চেষ্টা করে হালকা স্বরে বলল, সিডিসি, তুমি বর্তমান অবস্থার একটা রিপোর্ট দাও।

    রিপোর্ট দেয়ার বিশেষ কিছু নেই, সিডিসি নিরুত্তাপ স্বরে বলল, বেশিরভাগ জিনিস এখন এখানে অচল। আমাদের এখন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার উপায় নেই, কেন্দ্রীয় স্টেশনে যোগাযোগ করার ক্ষমতা নেই, হাইপারভাইভ দূরে থাকুক, সিসিয়ানের এখন কক্ষপথ পর্যন্ত পাল্টানোর উপায় নেই। ট্রাইটন থেকে বিশেষ তরঙ্গের রেডিও ওয়েভ এসে সবকিছু জ্যাম করে দিয়েছে। যেভাবে এটা করা হয়েছে সেটা অবিশ্বাস্য, যদি কখনো সময় আর সুযোগ হয়, সবাইকে বুঝিয়ে দেব। যাই হোক, এক কথায় বলা যায়, আমরা এখন পুরোপুরি ট্রাইটনের নিয়ন্ত্রণে। ট্রাইটন অনুগ্রহ করে আমাকে অচল করে দেয় নি, যদিও আমার ক্ষমতা এখন খুব সীমিত।

    ট্রাইটন পুরো গ্রহটা একটা প্রাণী, ব্যাপারটা আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়, আমি কম্পিউটার, কোনো জিনিস আগে দেখে না থাকলে আমি সেটা অনুভব করতে পারি না। সুশান হয়তো ব্যাপারটা আমাদের বোঝাতে পারবে। পলের শরীর থেকে যে–প্রাণীটি বের হয়ে এসেছে, সেটি সম্পর্কেও আমার ধারণা খুব অস্পষ্ট, থলথলে নরম একটা প্রাণী স্টেনলেসের একটা ক্যাপসুল কী ভাবে ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারে আমার জানা নেই। প্রাণীটি এখন দ্বিতীয় স্তরে একটা সীসার আস্তরণ দেয়া ঘরে আছে, ঘরটির বৈদ্যুতিক তারগুলি প্রাণীটি নষ্ট করেছে বলে আমি আর তাকে দেখতে পারছি না। আমি আরো অনেক কিছু বলতে পারি, কিন্তু আমার সময় কম বলে আমি এখন চুপ করছি।

    লু সুশানের দিকে তাকিয়ে বলল, সুশান কিছু বলবে?

    সুশান হাত নাড়ে, আমি আর নতুন কী বলব? সিডিসি যেটা বুঝতে পারে নি, মনে করো না আমি সেটা বুঝেছি। একটা আস্ত গ্ৰহ কী ভাবে একটা প্রাণী হতে পারে সেটা নিয়ে একটা জার্নালে আমি একবার একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম, সেটা নেহায়েৎই একটা কাল্পনিক প্রবন্ধ ছিল। প্রবন্ধটিতে দাবি করা হয়েছিল, এরকম প্রাণীর ক্ষমতা হবে অসাধারণ, কেন, সেটা সবাই বুঝতে পারছ। পৃথিবীতে যদি মানুষের ইতিহাস কখনো পড়ে দেখ, তা হলে দেখবে তারা সবসময়েই নিজেদের ভিতরে মারামারি করছে। পৃথিবীর সভ্যতা হয়েছে ছাড়া ছাড়াভাবে, কোনো জাতি যখন একত্র হয়ে নিজেদের উন্নতি করার চেষ্টা করেছে, তখন। অনেকবার আবার অনা জাতি এসে সেসভ্যতা একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। পৃথিবীর সব মানুষ যদি কখনো যুদ্ধবিগ্রহ না করে সবাই একত্র হয়ে নিজেদের পুরো সম্পদ মানুষের জ্ঞানবিজ্ঞানের পিছনে ব্যয় কত, তা হলে মানুষ কত উন্নত হত চিন্তা করা যায় না।

    মানুষের যে-সমস্যা, এ ধরনের প্রাণীর সে সমস্যা নেই। এই প্রাণী কোটি কোটি সংঘবদ্ধ মানুষের মতো নিজেদের ভিতরে কোনো বিরোধ নেই। শেটি কোটি মানুষের মস্তিষ্ক যদি একসাথে কাজ করে তার যেরকম ক্ষমতা হবে ট্রাইটনের ক্ষমতা হবে সে-রকম। কাজেই বুঝতে পারছ, এই গ্রহটি কত অসাধারণ!

    এধরনের গ্রহের আবার একটা সমস্যাও আছে, আজীবন সেটি একা একা থাকে, কাজেই এর নুতন জিনিস শেখার সুযোগ নেই। আমরা যখন প্রথম ট্রাইটনের কাছে এলাম তার নিশ্চয় বিস্ময়ের সীমা ছিল না। আমাদের সম্পর্কে কিছুই জানত না, কত তাড়াতাড়ি কত কিছু শিখে নিয়েছে, সে তো তোমরা সবাই দেখলে।

    সুশান একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমার আর কিছু বলার নেই।

    সুশান, নীষা জিজ্ঞেস করে, ট্রাইটনের বংশধর নিয়ে কিছু বলবে?

    সুশান কাতর মুখে বলল, আমাকে সেটা নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করো না। এখনো মনে হলে আমার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে। প্রাণীটি নিঃসন্দেহে ট্রাইটনের বংশধর, পল কুমের শরীরে ছিল, সময় হলে বের হয়ে এসেছে। রু-টেকের শরীরে কিছু আছে কি না আমি জানি না—সম্ভবত নেই।

    রু-টেক মাথা নেড়ে বলল, আমি সিডিসিকে নিয়ে নিজেকে পরীক্ষা করেছি, আমার শরীরে কিছু নেই। আমরা যন্ত্র বলে আমাদের শরীরে এখন যদি কিছু না থাকে, ভবিষতে সেটা সৃষ্টি হতে পারে না। মানুষের বেলায় সেটি সত্যি নয়, তাদের মস্তিষ্কে গোপন একটা কোড় দিয়ে দেয়া যায় নিজের অজান্তে সেটা শরীরে অস্বাভাবিক বিক্রিয়া শুরু করে আশ্চর্য পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। পলের বেলায় নিশ্চয়ই তা-ই ঘটেছে।

    সুশান মাথা নেড়ে বলল, ঠিকই বলেছ, জীববিজ্ঞানে এর একটা নাম আছে, গ্রট এনোমলি বলা হয়, ব্যাপারটা এখনো বিজ্ঞানীরা বুঝে উঠতে পারেন নি। যাই হোক, ট্রাইটনের বংশধর এখন ছোট, কিন্তু যেহেতু তাকে অনেক বড় হতে হবে, তাই তাকে অনেক বড় একটা গ্রহে যেতে হবে। সেই গ্রহের বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের প্রাচুর্য সম্ভব ট্রাইটনের মতো হওয়া দরকার, তোমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু পৃথিবীর মৌলিক পদার্থের প্রাচুর্যের সাথে ট্রাইটনের অনেক মিল রয়েছে। সম্ভবত সে-কারণেই এই দু’টি গ্রহেই প্রাণের আবির্ভাব হয়েছিল, যদিও দুটি একেবারে ভিন্ন মানের।

    নীষা মাথা নেড়ে বলল, আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, তুমি বলছ এই বংশধর জিনিসটা নিয়ে কোনো একটা গ্রহে ফেলে দিলে ধীরে ধীরে পুরো গ্রহটা আরেকটা ট্রাইটনে পরিণত হবে?

    সম্ভবত।

    শুনে সবার কেমন জানি গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

    লু হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, আমাদের হাতে কতটুকু সময় আছে আমি জানি না, আমাকে কয়েকটা জিনিস বলে দিতে দাও। প্রথম কথাটি সবাই জান, আমরা এখন চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি আছি, আমাদের কী হবে বলা কঠিন। দ্বিতীয় কথাটি প্রথম কথাটি থেকেও ভয়ংকর, সম্ভবত আমাদের সাথে সাথে সারা পৃথিবী এখন প্রচণ্ড বিপদের মুখোমুখি আছে। যদি ট্রাইটন সত্যি সত্যি সিসিয়ানে করে পৃথিবীতে তার বংশধর পাঠাতে পারে, সেটি হয়তো আমাদের পৃথিবীকে গ্রাস করে নিয়ে আরেকটা কুৎসিত ট্রাইটন তৈরি করে দেবে। আমি তোমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছি না, তার সময় পার হয়ে গেছে সত্যি কথা বলছি। কাজেই আমার মনে হয়, আমাদের প্রথম দায়িত্ব পৃথিবীকে রক্ষা করার চেষ্টা করা। তার জন্যে যদি–

    লু অস্বস্তিতে একটু নড়েচড়ে হঠাৎ চুপ করে যায়। খানিকক্ষণ নিজের আঙ্গুলগুলি মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা করতে করতে মাথা তুলে বলল, তার জন্যে যদি আমাদের সবাইকে নিয়ে সিসিয়ানকে ধ্বংস করে দিতে হয়, তাহলে সেটাই করতে হবে।

    কেউ কোনো কথা না বলে পাথরের মতো মুখ করে চুপ করে থাকে। লু একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, দলপতির দায়িত্ব সবাইকে রক্ষা করা, সবাইকে নিয়েধ্বংস হয়ে যাওয়া নয়,  কিন্তু আমি সত্যি কোনো উপায় দেখছি না।

    কেউ কোনো কথা বলল না। লু খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তোমাদের কারো আপত্তি আছে?

    সবাই মাথা নাড়ে, কারো কোনো আপত্তি নেই, এরকম একটা ব্যাপারে কারো আপত্তি থাকতে পারে না। এরা পুরো জীবনের বেশিরভাগ কাটিয়েছে মহাকাশে মহাকাশে। পৃথিবীতে থাকার সৌভাগ্য আর কয়জনের হয়? পৃর্থিবী নিয়ে ওদের আশ্চর্য একটা স্বপ্ন আছে, সেই স্বপ্ন কেউ ধ্বংস করে দিতে চাইলে তারা সেটা কী ভাবে হতে দেয়? তাদের তো সেভাবে বড় করা হয় নি।

    লু কী একটা বলতে চাইছিল, রু–টেক বাধা দিয়ে বলল, তুমি সিসিয়ানকে ধ্বংস করবে কেমন করে? ট্রাইটন কি সেটা বন্ধ করে রাখে নি?

    রেখেছে, কিন্তু ধ্বংস করা খুব সহজ, সৃষ্টিটাই কঠিন। আমরা যদি সত্যি সিসিয়ানকে ধ্বংস করতে চাই, কিছু একটা ব্যবস্থা করে নিতে পারব। রু-টেক মাথা নেড়ে চুপ করে যায়।

    তোমাদের সবাইকে এখন একটা দায়িত্ব দিচ্ছি, সবাইকে নিয়ে সিসিয়ানকে ধ্বংস করে দেয়ার সবচেয়ে কার্যকর একটা পথ খুঁজে বের করা।

    লু খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিও, আমার সত্যি কিছু করার নেই।

    কিম জিবান জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, লু, তোমার এত খারাপ লাগার কোনো কারণ নেই, এটা তোমার দোষ নয় যে, আমরা এই নরকে এসে হাজির হয়েছি। যখন যেটা করার প্রয়োজন সেটা করতে হবে না?

    তা হয়তো হবে, কিন্তু আমি তোমাদের দলপতি, তোমাদের বাচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমার।

    নীষা একটু ইতস্তত করে বলল, ল, ব্যাপারটা এতটা ব্যক্তিগতভাবে দেখার প্রয়োজন নেই, তুমি আমাদের দলপতি, কিন্তু তোমার উপর আমাদের বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কথাটা ঠিক না। তোমার দায়িত্ব ঠিক পরিবেশে ঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া। এই অবস্থায় আর কোনো উপায় নেই, তাই তুমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছ, এটা নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, তোমার সিদ্ধান্তটি সঠিক সিদ্ধান্ত, দুঃখজনক হতে পারে, কিন্তু সঠিক। আমাদের সবার চমৎকার জীবন কেটেছে, এখন যদি আমাদের মারা যেতে হয়, তা নিয়ে বাড়াবাড়ি দুঃখ করার কিছু নেই। পৃথিবীকে যদি ট্রাইটনের হাত থেকে বাচিয়ে দিতে পারি, সেটা নিয়ে বরং আমাদের হয়তো একটু অহঙ্কারই হওয়া উচিত।

    লু নীষার দিকে তাকিয়ে একটু হাসে, চমৎকার স্বচ্ছ মেয়েটার বিচার-বিবেচনা, খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারে। মাথা নেড়ে বলল, নীষা, তুমি বড় ভালো মেয়ে, আমার কষ্টটা তুমি কমিয়ে দিয়েছ। মুখের হাসিটা জোর করে ধরে রেখে বলল, সুশান, তুমি কিছু বললে না?

    সুশান একটু চমকে উঠে দুর্বলভাবে হেসে বলল, আমি খুব ভীতু মানুষ, মরতে আমার খুব ভয় করে। একটু থেমে আবার বলল, দুঃখ নয়, ভয়। মৃত্যুযন্ত্রণা নাকি খুব ভয়ানক।

    বুয়ের মুখের হাসি মুছে সেখানে একটা গাঢ় বেদনার ছাপ এসে পড়ে। আস্তে আস্তে বলল, আমি দুঃখিত সুশান।

    সুশান একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল, তোমার দুঃখ পাবার কিছু নেই, তোমার দলে যদি একটা ভীতু মেয়ে থাকে, সে জন্যে তোমার দুঃখ পাবার কী আছে?

    সবাই খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে। লু একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল, রু-টেক, তুমি কিছু বলবে?

    আমি দুঃখিত লু, যে, এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে হল। আমার নিজের জন্যে কোনো দুঃখ নেই, কারণ আমার ঠিক মৃত্যু হবে না, কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে আমার আরো একটা কপি আছে। কিন্তু তোমাদের তো কোনো কপি থাকে না। মানুষ এত অসাধারণ, কিন্তু তবু কত সহজে তারা শেষ হয়ে যেতে পারে! আমি দুঃখিত।

    সিডিসি, তুমি কিছু বলবে?

    আমি খুব দুঃখিত, এ ছাড়া আমার কিছু বলার নেই।

    আমার সিদ্ধান্তে তোমার কোনো আপত্তি আছে?

    এক মুহূর্ত দ্বিধা করে সিডিসি উত্তর দিল, না, নেই।

    লু খানিকক্ষণ একদৃষ্টে উপরের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা সবাই আমার সিদ্ধান্তে রাজি হয়েছ বলে তোমাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এবারে আমি তোমাদের কাছে আরো একটা অনুরোধ করতে চাই।

    কি?

    প্রয়োজনে আমরা সবাইকে নিয়ে ধ্বংস হয়ে যাব, কিন্তু তার মানে এই নয়, আমরা বেঁচে থাকার চেষ্টা করব না। আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বেঁচে থাকার চেষ্টা করব।

    সে জন্যে যদি আমাদের কোনো-একজনকে প্রাণ দিতে হয়, দেব।

    সুশান মাথা নেড়ে বলল, আমি বুঝতে পারছি না, তুমি কী বলছ।

    বলছি, যদি একজনের প্রাণ দিয়ে অন্যদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যায়, তাকে প্রাণ দিতে হবে।

    কিম বাধা দিয়ে বলল, কী বলছ তুমি, লু? কার প্রাণ দিয়ে তুমি অন্যদের বাঁচাবে?

    লু হাত তুলে কিমকে থামিয়ে দিয়ে বলল, সিডিসি, তুমি বলতে পার, সে-রকম কেউ কি আমাদের মাঝে আছে

    সিভিলি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে।

    সিডিসি।

    সিডিসি তবু কথা বলে না।

    সিডিসি, আমার কথার উত্তর দাও।

    সিডিসি আস্তে আস্তে প্রায় ফিসফিস করে বলল, লু সত্যি তুমি তাই চাও?

    হ্যাঁ সিডিসি।

    সত্যি?

    হ্যাঁ, সত্যি।

    সত্যি তুমি চাও আমি প্রাণ দিই?

    আমি দুঃখিত সিডিসি। ট্রাইটনের আমাদের কাউকে প্রয়োজন নেই, তার প্রয়োজন শুধু তোমাকে। তুমি জান, ট্রাইটন তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, অন্য সবাইকে শেষ করে শুধু তোমাকে। তোমাকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এখনো শুরু করে নি, কিন্তু ইচ্ছা করলেই পারে। তোমার নিয়ন্ত্রণটুকু নিয়ে নিলে আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না, তুমি তখন সিসিয়ানকে যেখানে খুশি নিয়ে যেতে পারবে।

    অনেকক্ষণ সিডিসি কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকে। যখন কথা বলে, তখন তার গলার স্বর বিষণ্ণ, আস্তে আস্তে অনেকটা আপন মনে বলে, আমি কখনো ভাবি নি আমার একদিন শেষ হয়ে যেতে হবে।

    আমরাও কেউ সেটা ভাবি নি সিডিসি।

    লু, আমার যেতে ইচ্ছে করছে না, লু। আমার খুব ইচ্ছে করছে থেকে যাই।

    আমি দুঃখিত সিডিসি।

    খুব ইচ্ছে করছে বেঁচে যাই। কোনো বড় মহাকাশযানে নয়, কোনো ছোট ছেলের খেলাঘরে তার খেলার সাথী হয়ে থেকে যাই।

    আমি দুঃখিত সিডিসি।

    কতবার আমি মহাকাশ পারাপার দিয়েছি, কতবার কত গ্রহ-নক্ষত্রে ঘুরে বেরিয়েছি, কত মহাকাশচারীর দুঃখ-বেদনার সাথী হয়ে কাটিয়েছি। কত স্মৃতি, কত অভিজ্ঞতা, সব চোখের পলকে শেষ হয়ে যাবে, কোথাও কিছু থাকবে না? সিডিসি ২১১২, ওমেগা গোষ্ঠীর ষষ্ঠ কম্পিউটারের চতুর্থ পর্যায় আর থাকবে না?

    আমি দুঃখিত সিডিসি।

    সত্যি তুমি চাও আমি যাই?

    আমি দুঃখিত সিডিসি, কিন্তু আমি সত্যিই তাই চাই, আমার নিজের জন্যে নয়। পৃথিবীর জন্যে।

    দীর্ঘ সময় সিডিসি চুপ করে থাকে, তারপর আস্তে আস্তে বলে, বিদায় লু। বিদায় সুশান, নীষা, কিম জিবান আর রু-টেক। বিদায়।

    বিদায়।

    নরম গলায় নীষা বলল, আমরা তোমায় মনে রাখব সিডিসি, সারা জীবন তোমাকে মনে রাখব।

    নীষা।

    বল।

    যাবার আগে তোমাকে একটা উপহার দিয়ে যেতে পারি?

    দাও।

    তোমার ঘরে টেবিলের উপর রেখে গেলাম, যদি কখনো সুযোগ হয় দেখো।

    দেখব।

    বিদায়, সবাই।

    বিদায়।

    পর মুহূর্তে সিডিসি ২১১২, ওমেগা গোষ্ঠীর ষষ্ঠ কম্পিউটারের চতুর্থ পর্যায় তার অপারেটিং সিস্টেম২৫ আর আটচল্লিশ টেরা বাইট মেমোরি ধ্বংস করে ফেলল।

    অন্ধকার নেমে এল সিসিয়ানে সাথে সাথে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }