Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৭. আমি রিবাক

    আমি রিবাক

    বাসায় ফিরে এসে দেখি দরজার সামনে কফিনের মতো বড় একটা বাক্স পড়ে আছে। ভিতরে কী আছে আন্দাজ করতে আমার অসুবিধে হল না। সপ্তাহ দুয়েক আগে স্থানীয় একটা রবোট কোম্পানি থেকে আমাকে ফোন করেছিল। তারা তাদের তৈরি রবোটের একটা বিশেষ মডেল আমাকে পাঠাতে চায়। আমি তাদের স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি যে রবোটে আমার কোনো উৎসাহ নেই, বিশেষ করে বাসার মাঝে আমি কখনই রবোটকে জায়গা দিই না। সেটা শুনেও তারা নিরুৎসাহিত হয় নি, জোর করে বলেছে। যে, তবুও তারা আমার কাছে একটা রবোট পাঠাতে চায়। আমি বলেছি যে, আমার নিষেধ না শুনে আগেও বিভিন্ন রবোট কোম্পানি আমাকে নানারকম রবোট পাঠিয়েছে এবং প্রত্যেকবারই আমি সোজাসুজি সেগুলো জঞ্জালের মাঝে ফেলে দিয়েছি। শুনে তারা খানিকটা দমে গেল, কিন্তু হাল ছাড়ল না, বলল, আমি ইচ্ছে করলে তাদের রবোটকে জঞ্জালের মাঝে ফেলে দিতে পারি, তারা কিছু মনে করবে না। কিন্তু তাদের বিশ্বাস আমি যদি রবোটটা একনজর দেখি, সেটাকে জঞ্জালে ফেলার আগে কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করব। আমি হয়তো রবোটের সম্পর্কে তখন তাদের আমার মন্তব্য জানাব, তারা এর বেশি কিছু আশা করে না।

    যৌবনে রবোটের কপোট্রনের ভূমিকার উপর আমি কিছু কাজ করেছিলাম, যেটা আমাকে সাময়িকভাবে বিখ্যাত করে তুলেছিল। কপোট্রনে যে-সার্কিটটি রবোটের অনুভূতির সাথে যুক্ত, সেটাকে এখনো আমার নামানুসারে বিবাক সার্কিট বলা হয়ে থাকে। আমি বহুকাল আগেই রবোট এবং কপোট্রনের উপর থেকে আগ্রহ হারিয়েছি, কিন্তু রবোট-শিল্পের কর্মকর্তাদের মস্তিষ্কে এখনো সেটা কোনোভাবে ঢোকানো যায় নি।

    আমার বাসাটি ছোট, একা থাকি, কাজেই বড় বাসার কোনো প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করি নি। বসার ঘরে রবোটের এই অতিকায় বাক্সটি অনেকটুকু জায়গা নিয়ে নিচ্ছে। কাজেই প্রথমেই এটাকে জঞ্জালে ফেলার আমি একটা চমৎকার পদ্ধতি বের করেছি। বাক্স থেকে বের করে বলি, তুমি তোমার বাক্সটি নিয়ে জঞ্জালের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়।

    কোন মডেলের রবোট, তার উপর নির্ভর করে কখনো কখনো আরো কিছু কথাবার্তা হয়। শেষ রবোটটি বলেছিল, আপনি কি সত্যিই চান আমি এটা করি?

    হ্যাঁ, আমি চাই।

    কিন্তু এটা কি অত্যন্ত অযৌক্তিক একটি আদেশ নয়?

    সম্ভবত, কিন্তু তবু তুমি জঞ্জালের বাক্সে ঝাঁপ দাও।

    রবোটটি এগারতলা থেকে জঞ্জালের বাক্সে ঝাঁপ দিয়ে ধ্বংস হয়ে যাবার আগে আমাকে আরো একবার জিজ্ঞেস করেছিল, মহামান্য রিবাক, আপনি কি সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা করে আমাকে এই আদেশটি দিচ্ছেন?

    হ্যাঁ, আমি সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা করে তোমাকে এই আদেশ দিচ্ছি।

    রবোটটি আমার সম্পর্কে একটা অত্যন্ত অসম্মানজনক উক্তি করে এগারতলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল।

    এবারেও তাই করার জন্যে আমি বাক্স খুলে রবোটটিকে বের করে তার কানের নিচে স্পর্শ করে সুইচটা অন করে দিলাম। রবোটের কপোট্রনের ভিতর থেকে খুব হালকা একটা গুঞ্জনের শব্দ শোনা গেল এবং কয়েক সেকেন্ডের ভিতরেই তার ফটোসেলের চোখে রবোটসুলভ চাঞ্চল্য দেখা গেল। রবোটটি উঠে দাঁড়ানোর কোনো চেষ্টা করল না, বাক্সের মাঝে শুয়ে থেকে জ্বলজ্বল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আগে কখনো এ ধরনের ব্যাপার ঘটে নি।

    আমি বললাম, উঠে দাঁড়াও।

    রবোটটি বাক্সের মাঝে শুয়ে থেকেই আমার দিকে তাকিয়ে রইল, উঠে দাঁড়ানোর না।

    অবাধ্য রবোট তৈরি করা কি রবোট শিল্পের নতুন ধারা? আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, আবার বললাম, ওঠ।

    রবোটটি ফিসফিস করে বলল, ওঠ।

    আমি বললাম, উঠে বস।

    রবোটটি ফিসফিস করে বলল, উঠে বস।

    আমি একটু অবাক হলাম, যে-কোম্পানি আমাকে রবোটটা পাঠিয়েছে বলা যেতে পারে তারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ রবোট-নির্মাতাদের একটি। আমার সাথে কোনোরকম রসিকতা করার চেষ্টা করবে না, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। রবোটটা অন্য দশটা রবোটের মতো নয় বলাই বাহুল্য, আকারে মানুষের সমান, বেমানান বড় মাথা, বড় বড় সবুজ রঙের চোখ, কথা বলার জন্যে সংবেদনশীল স্পীকার, থামের মতো একজোড়া পা এবং অত্যন্ত সাধারণ সিলিন্ডারের মতো শরীর। তবে এর আচার-আচরণ অন্য দশটা রবোট থেকে ভিন্ন, এবং নিশ্চিতভাবেই এর কোনো এক ধরনের বৈশিষ্ট্য আছে, কিন্তু সেটা ঠিক কি, আমি বুঝতে পারলাম না। আমি রাতের খাবার শেষ করে আবার রবোটটাকে নিয়ে বসব ঠিক করে খাবার ঘরে চলে এলাম।

    ভালো খেতে খুব যে বেশি পরিশ্রম করতে হয় সেটি সত্যি নয়। কিন্তু যেটুকু করতে হয়, আমি সেটাও করতে রাজি নই। তাই প্রায় প্রতিরাতেই আমি একই ধরনের বিস্বাদ কিন্তু মোেটামুটি পুষ্টিকর খাবার খেয়ে থাকি। খাবার সময় আমি সাধারণত একটা ভালো বই নিয়ে বসি, পড়ার মাঝে ডুবে গেলে খাওয়া ব্যাপারটি আর সেরকম যন্ত্রণাদায়ক মনে হয় না। বিংশ শতাব্দীর পটভূমিকায় লেখা একটা রগরগে খুন জখমের বই শুরু করেছি। আমি সেটা হাতে নিয়ে খাবার টেবিলে এলাম।

    খাবারের শেষ পর্যায়ে এবং বইয়ের মাঝামাঝি অংশে হঠাৎ একটা শব্দ শুনে আমি মুখ তুলে তাকালাম। দেখি রবোটটা তার বাক্স থেকে বের হয়ে এসেছে। আগে লক্ষ করি নি, প্রচলিত রবোটের মতো এটি পদক্ষেপ করতে পারে না। পায়ের নিচে ঘোট ঘোট চাকা রয়েছে, সেগুলো ঘুরিয়ে এটি সামনে-পিছে যায়। রবোটটা প্রায় নিঃশব্দে আমার ঘরে এসে ঢুকেছে, আমাকে মুখ তুলে তাকাতে দেখে সেটা সন্তর্পণে আমার দিকে এগিয়ে এল। কাছাকাছি এসে সেটি তার হাত তুলে খুব সাবধানে আমার হাতকে স্পর্শ করল। আমি হঠাৎ করে লক্ষ করলাম রবোটটার হাত দুটি অত্যন্ত যত্ন করে তৈরি করা হয়েছে, অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু এর দুটি হাত প্রায় মানুষের হাতের মতো। শুধু তাই নয়, হাতের স্পর্শটি ধাতব এবং শীতল নয়, জীবন্ত প্রাণীর মতো উষ্ণ এবং কোমল। আমি বললাম, এখান থেকে যাও।

    রবোটটি আমার কথা বুঝতে পারল বলে মনে হল না। ফিসফিস করে বলল, যাও।

    খানিকক্ষণ আমার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ সেটি ঘরের কোনার দিকে হেঁটে গেল। সেখানে প্রাচীন মায়া সভ্যতা থেকে উদ্ধার করা একটি সূর্যদেবতার মূর্তি সাজানো আছে। রবোটটি মূর্তিটার সামনে দাঁড়িয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে সেটি লক্ষ করতে থাকে। ধীরে ধীরে সে হাত বাড়িয়ে মূর্তিটিকে স্পর্শ করে। তারপর ঘুরে আমার দিকে তাকায়। আবার মূর্তিটার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে, ওঠ।

    রবোটটির আচার-আচরণে একটা শিশুসুলভ ভাব রয়েছে। আমি খানিকক্ষণ সেটা লক্ষ করে আবার আমার রগরগে খুন-জখমের বইয়ে ডুবে গেলাম।

    রাতে ঘুমানোর আগে বোটটির ব্যাপারে কিছু-একটা নিষ্পত্তি করার কথা ভাবছিলাম। যদি আজ রাতে জঞ্জালের বাক্সে নাও ফেলি, অন্তত সুইচ অফ করে সেটাকে বিকল করে রাখা দরকার। আমি রবোটটাকে আমার লাইব্রেরি-ঘরে আবিষ্কার করলাম, সেটি টেবিলের উপর রাখা ফুলের তোড়াটি গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করছে। একবার একটু কাছে থেকে দেখে তারপর আবার আরেকটু দূর থেকে দেখে। একবার মাথাটি ডানদিকে কাত করে দেখে, তারপর আবার বাম দিকে কাত করে দেখে। মাঝে মাঝে খুব সাবধানে ফুলটাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করে। রবোটের এরকম একাগ্রতা আমি আগে কখনো দেখি নি। আমার পায়ের শব্দ শুনে সেটি আমার দিকে ঘুরে তাকাল এবং হাত দিয়ে ফুলটিকে দেখিয়ে একটা অবোধ্য শব্দ করল, ঘোট শিশুরা যেরকম অর্থহীন অবোধ্য শব্দ করে অনেকটা সেরকম। রববাটের ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে কোনো অসুবিধা হল না যে, সে আগে কখনো ফুল দেখে নি। আমি ফুলটা দেখিয়ে বললাম, ফুল।

    রবোটটা আমার সাথে ফিসফিস করে বলল, ফুল।

    আমি কেন জানি সুইচ অফ করে রবোটটাকে বিকল করে দিতে পারলাম না। এটি একটি সাবধানী, নিরীহ এবং অত্যন্ত কৌতূহলী রবোট, এর আচার-আচরণ শিশুদের মতো। দেখে আমার কোনো সন্দেহ রইল না যে, একে বিকল করে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। রবোটটিকে ঘুরঘুর করে ঘুরতে দিয়ে আমি আমার রগরগে বইটি নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।

    সকালে উঠে প্রথমে রবোটটিকে খুঁজে পেলাম না, ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ। কাজেই সে বাইরে যায় নি, ভিতরই কোথাও আছে। খুঁজে খুঁজে শেষ পর্যন্ত আমি তাকে বসার ঘরে তার বাক্সের মাঝে আবিষ্কার করলাম। সেখানে সেটি চোখ বন্ধ করে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। আমি এর আগে কোনো রবোটকে ঘুমাতে দেখি নি।

    আমার পায়ের শব্দ শুনে রবোটটা চোখ খুলে আমার দিকে তাকাল, তারপর ফিসফিস করে বলল, ফুল।

    আমার পক্ষে হাসি আটকে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াল, আমাকে এর আগে কেউ ফুল বলে সম্বােধন করেছে বলে মনে পড়ে না। রবোটটা সম্পর্কে কয়েকটা জিনিস এতক্ষণে বেশ স্পষ্ট হয়েছে, তার একটা হচ্ছে, আমি তার সাথে যে-কয়টা কথা ব্যবহার করেছি, এটি শুধুমাত্র সেই কথাগুলোই শিখেছে। কথাবার্তায় ঘুরেফিরে শুধু সেই কথাগুলোই ব্যবহার করেছে। তা ছাড়া এটাকে দেখে মনে হচ্ছে, এর কপোট্রনে। আগে থেকে কোনোরকম বিশেষ জ্ঞান দেয়া হয় নি। সম্ভবত অত্যন্ত ক্ষমতাশালী একটা কপোট্রন এবং নূতন কিছু দেখে সেটা শেখার একটা ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। মানবশিশুরা যেরকম দেখে দেখে শেখে, এটাও সেরকম। আমি স্বীকার না করে পারলাম না এ ধরনের রবোটের কোনোরকম ব্যবহারিক গুরুত্ব সম্ভবত নেই, কিন্তু এর বুদ্ধিমত্তা কী ভাবে বিকাশ করে সেটি লক্ষ করা খুব চমৎকার একটি ব্যাপার হতে পারে।

    রবোটটিকে জঞ্জালের বাক্সে ফেলে দিয়ে ধ্বংস করার পরিকল্পনাটি আপাতত কিছুদিনের মাঝে আমি রবোটটা সম্পর্কে আরো কিছু আশ্চর্য জিনিস আবিষ্কার করলাম। তার একটি বেশ বিচিত্র, রবোটটার সাথে কোনোরকম কথোপকথন করা যায় না। তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই সে প্রশ্নটি গভীরভাবে চিন্তা করতে শুরু করে, কিন্তু তার উত্তর দেয়ার কোনো চেষ্টা করে না। আমাকে সে খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করে, আমার প্রতিটি কথা, আচার-আচরণ, ভাবভঙ্গি সে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করার চেষ্টা করে। একসময় লক্ষ করলাম, তার কণ্ঠস্বর অবিকল আমার মতো হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, তার উচ্চারণেও ঠিক আমার মতো মধ্যদেশীয় আঞ্চলিকতার একটা সূক্ষ্ম টান। আমি যে-বই পড়ি বা যে-সঙ্গীত শুনি, রবোটটাও সেই বই পড়ে এবং সেই সঙ্গীত শোনে। আমি যেরকম মাঝে মাঝে লেখালেখি করার চেষ্টা করি, সেও সেরকম লেখালেখি করে। সবচেয়ে বিচিত্র ব্যাপার হচ্ছে, তার টানা হাতের লেখা অবিকল আমার হাতের লেখার মতো। একটামাত্র জিনিস সে করতে পারে না, সেটা হচ্ছে খাওয়া, কিন্তু আমি যখন কিছু খাই সে গভীর মনোযোগ দিয়ে আমাকে লক্ষ করে।

    আমি এর আগে কোনো রবোটকে আমার কাছাকাছি দীর্ঘসময় রাখতে পারি নি, কিন্তু এর বেলায় আমার কোনো অসুবিধে হল না। যেহেতু তার সাথে কোনো কথোপকথন হয় না, সে কখনো আমাকে কোনো প্রশ্ন করে না, আমাকে কোনো কাজে সাহায্য করতে চায় না, কখনোই কোনো ব্যাপারে মত প্রকাশ করে না, কাজেই তার অস্তিত্ব আমি মোটামুটিভাবে সবসময় ভুলে থাকি। প্রথম দিকে রবোটটিকে আমি একটা নাম দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কোনো লাভ হল না। রবোটটির আমার থেকে আলাদা কোনো পরিচিত নেবার ক্ষমতা নেই। এর কপোট্রনটি সম্ভবত সেভাবেই প্রোগ্রাম করা হয়েছে যাকে অনুকরণ করবে তাকে অন্ধভাবে অনুকরণ করবে। আমি অত্যন্ত চমৎকৃত হয়ে লক্ষ করলাম যে সে অনুকরণের অংশটি অত্যন্ত সুচারুভাবে করে আসছে।

    ভালো কিছু পড়লে সবসময় আমার ভালো কিছু একটা লেখার ইচ্ছা করে। আমি অনেকবারই লেখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কখনোই বেশিদূর অগ্রসর হতে পারি নি, পৃষ্ঠাখানেক লেখার পর আমার লেখা আর অগ্রসর হতে চায় না। যেটুকু হয় সেটা যে খুব খারাপ হয় তা নয়। ভাষার উপর আমার মোটামুটি একটা দখল আছে এবং কোনো একটা জিনিস প্রকাশ করার আমার নিজস্ব একটা ভঙ্গি রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে প্রতিবারই প্রথম পৃষ্ঠার পর আমার লেখা বন্ধ হয়ে এসেছে। সাহিত্যজগতে অসংখ্য লেখার প্রথম পৃষ্ঠা নিয়ে কেউ বেশিদূর অগ্রসর হয়েছে বলে জানা নেই, কিন্তু তবু আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। কে জানে হয়তো কখনো সত্যি বড় কিছু-একটা লিখে ফেলতে পারব।

    প্রাচীনকালের পটভূমিকায় লেখা একটা অত্যন্ত শক্তিশালী উপন্যাস শেষ করে আমি অভ্যাসবশত আমার কম্পিউটারের সামনে বসে সম্ভবত একবিংশবারের মতো একটি উপন্যাস লেখা শুরু করেছি। উপন্যাসটি শুরু হয়েছে এভাবে :

    তাকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না, কিন্তু রিকির মন অত্যন্ত বিক্ষিপ্ত। অন্ধকার রাত্রিতে খোলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে রিকি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল, তখন কারো পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না, কিন্তু সেটি তার জীবনকে পুরোপুরিভাবে পাল্টে দিল…।

    উপন্যাসটি বেশ এগুতে শুরু করল। পাঠকদের মনোেযোগ আকর্ষণ করার পর রিকি নামক চরিত্রটিকে উপস্থাপন করা হল। জটিল একটা চরিত্র তীব্র আবেগবান ক্ষ্যাপা গোছের একজন তরুণ। চরিত্রটির জীবনে নীষা নামের একটি মেয়ের উপস্থিতি এবং সেটা নিয়ে আরো বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হতে শুরু করল। আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে লিখতে থাকি, আমার ঘাড়ের উপর দিয়ে রবোটটি স্থির দৃষ্টিতে মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে সবসময় আমাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে, তার উপস্থিতির কথা আজকাল আমার মনে পর্যন্ত থাকে না।

    রাতে যখন ঘুমাতে গেলাম তখন অবাক হয়ে দেখলাম, আমি অসাধ্য সাধন করেছি। এক পৃষ্ঠা নয়, পুরো একটি অধ্যায় লিখে ফেলেছি। নিজের উপর বিশ্বাস বেড়ে গেল হঠাৎ করে।

    পরদিন রাতে আমি আবার লিখতে বসেছি, লেখা শুরু করার আগে যেটুকু লেখা হয়েছে সেটা আরেকবার পড়ে দেখলাম। নিজের লেখা পড়ে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম আমি। চমৎকার ভাষা, সুন্দর উপস্থাপনা, কাহিনীর গাঁথুনি শক্তিশালী লেখকদের মতো। শুধু তাই নয়, আমি যেটুকু লিখেছি ভেবেছিলাম, দেখলাম তার থেকে অনেক বেশি লিখে রেখেছি। আমি প্রবল উৎসাহে আবার লেখা শুরু করে দিলাম। কাহিনী দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে, রিকি নামের ক্ষ্যাপা গোছের মূল চরিত্রটি নীষা নামের সেই মেয়েটির সাথে জটিল একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আমি তৃতীয় একটা চরিত্র সৃষ্টি করলাম, কুশাক নামের। লেখা এগুতে থাকে আমার। আমি তাকিয়ে দেখি নি, কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই যে, রবোট কাছাকাছি কোথাও দাঁড়িয়ে আমার লেখাঁটি পড়ছে।

    সে-রাতে ঘুমানোর সময় আমি কাহিনীর পরবর্তী অংশ ভাবতে থাকি। একটা হত্যাকাণ্ড ঘটাতে হবে এখন, ভয়ংকর নৃশংস একটা হত্যাকাণ্ড। বড় ধরনের সাহিত্যে সবসময় একটা হত্যাকাণ্ড থাকে।

    পরের রাতে আমি লিখতে বসে অবাক হয়ে দেখলাম, কাহিনীর জন্যে ভেবে রাখা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি আমি আসলে ইতোমধ্যে লিখে রেখেছি। কখন লিখলাম মনে করতে পারলাম না, কী লিখব ভেবে রেখেছিলাম, কিন্তু দেখা যাচ্ছে শুধু ভেবে রাখি নি, আসলে লিখে রেখেছি। কিন্তু সেটা কি সম্ভব? আমি বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম, এটা কেমন করে হতে পারে যে আমি এত বড় একটা অংশ লিখে রেখেছি, অথচ আমার মনে পর্যন্ত নেই। আমি খানিকক্ষণ ইতস্তত করে আবার লিখতে শুরু করি, আমার ঠিক পিছনে রবোটটা দাঁড়িয়ে আছে।

    কয়েক লাইন লিখেছি, হঠাৎ অবাক হয়ে লক্ষ করি রবোটটা ফিসফিস করে কী যেন বলছে। খেয়াল করে শুনি, সে বলে দিচ্ছে কী লিখতে হবে। আমি নিজে যেটা লিখব বলে ঠিক করেছি ঠিক সেটাই সে বলছে। আমি ভীষণ চমকে পিছনে তাকালাম, বললাম, কী বললে? কী বললে তুমি?

    নীষার চোখে বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ খেলা করতে থাকে।

    নীষার চোখে—

    নীষার চোখে বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ খেলা করতে থাকে। প্রচণ্ড আক্রোশে তার চিন্তা—

    তুমি কেমন করে জানলে আমি এটা লিখব? কেমন করে জানলে?

    রবোটটা প্রশ্নের উত্তর দিল না, কখনো দেয় না। আবার ফিসফিস করে বলল, নীষার চোখে–

    আমি হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি কেমন করে আমার অজান্তে লেখা হয়ে গেছে। বিস্ময়ের আকস্মিকতায় আমার নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিতে মনে থাকে না। কোনোমতে বললাম, তুমি এখানে লিখেছ? এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি লিখেছ? আমার লেখার মাঝখানে।–

    আমার লেখার মাঝখানে। রবোটটি মাথা নাড়ে, আমার লেখার মাঝখানে।

    আমি স্তম্ভিত হয়ে বসে থাকি। হুবহু আমার ভাষায় আমার ভঙ্গিমায় আমার তৈরি করে রাখা কাহিনী লিখে রেখেছে এই রবোট। কেমন করে জানল আমার মনের কথা।

    আমি একা লিখলে উপন্যাসটি শেষ হত কিনা সন্দেহ, কিন্তু রবোটের সাহায্যে সেটা শেষ হয়ে গেল। আমি গোটা কয়েক কপি করে বিভিন্ন প্রকাশককে পাঠিয়ে দিলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে কেউ-না-কেউ সেটা প্রকাশ করতে রাজি হবে, কিন্তু সবগুলি ফেরত এল। না পড়ে ফেরত দিয়েছে দাবি করব না, কারণ সাথের চিঠিতে হা বিতং করে লেখা উপন্যাসটি কেন তারা ছাপকিউপযুক্ত মনে করে নি। ভদ্র ভাষায় লিখেছে, কিন্তু পরিষ্কার বলে দিয়েছে, অবাস্তব কাহিনী, অপরিপক্ক বাচনভঙ্গি এবং দুর্বল ভাষা।

    ব্যাপারটি নিয়ে বেশি বিচলিত হবার সময় পাওয়া গেল না, কারণ রবোটটি নিয়ে আরো নানারকম জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আমার হয়ে নানারকম বইপত্র অর্ডার দেয়া এবং সে জন্যে আমার চেকে হুবহু আমার মতো নাম সই করা, এ ধরনের ব্যাপার সহ্য করা সম্ভব। কিন্তু সে আমার মায়ের সাথে যে জিনিসটি করল, সেটা কিছুতেই সহজভাবে নেয়া সম্ভব নয়।

    আমার মা, যিনি বাবার মৃত্যুর পর দক্ষিণের উষ্ণ সমুদ্রোপকূলে দীর্ঘদিন থেকে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছেন, আমাকে সুদীর্ঘ একটা চিঠি লিখলেন। চিঠির মূল বক্তব্য হচ্ছে যে, তিনি আমার হাতের লেখা সুদীর্ঘ চিঠিটি পেয়ে অভিভূত হয়েছেন। আমি শৈশবের যেসব ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছি, সেসব ঘটনা তাঁর জীবনেরও মূল্যবান স্মৃতি। চিঠির শেষে তাঁর সাথে এত বিলম্বিত যোগাযোগের জন্যে মৃদু তিরস্কারও আছে। আমি তাঁকে গত কিছুদিন থেকে একটা লম্বা চিঠি লিখব বলে তাবছিলাম, কিন্তু সময়ের অভাবে সেই চিঠিটা লেখা হয়ে ওঠেনি। রবোটটির সময় নিয়ে সমস্যা নেই, সে আমার হয়ে আমার হাতের লেখায় আমার মাকে এই চিঠিটা লিখে দিয়েছে।

    আমি বেশ বিচলিত হয়ে উঠলাম। রবোটটির আমাকে অন্ধভাবে অনুকরণ করার ব্যাপারটি এতদিন খানিকটা কৌতুকের মতো ছিল, এখন হঠাৎ করে কৌতুকটা উবে গিয়ে সেটাকে প্রতারণার মতো দেখাতে লাগল। আমার মা যে-চিঠিটি পেয়ে এত অভিভূত হয়েছেন, সেটি অনুভূতিহীন একটি রবোটের যান্ত্রিক কৌশলে লেখা জানতে পারলে আমার মা কী ধরনের আঘাত পাবেন চিন্তা করে আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠি।

    ব্যাপারটি আরো বেশিদূর অগ্রসর হবার আগে আমি মায়ের সাথে কথা বলে। ব্যাপারটির নিত্তি করব বলে ঠিক করে নিলাম।

    আমার মা টেলিফোন পেয়ে খুশি হওয়ার থেকে বেশি অবাক হলেন বলে মনে হল, বললেন, কী ব্যাপার রিবাক? কালকেও একবার ফোন করলে, আজ আবার? কিছু কি হয়েছে?

    না, কিছু হয় নি। আমি কষ্ট করে নিজেকে সামলে নিলাম, গতকাল আমি মাকে ফোন করি নি।

    তোমার কী খবর? শরীরের যত্ন নিচ্ছ তো?

    হ্যাঁ, নিচ্ছি।

    একা একা আর কতদিন থাকবে?

    মা, একটা কথা।

    কী কথা?

    তুমি আমার লেখা একটা চিঠি পেয়েছ মনে আছে?

    হ্যাঁ। কী হয়েছে? কালকেও—

    কালকে কী?

    কালকেও এই চিঠি নিয়ে ফোন করলে–

    আমি থতমত খেয়ে থেমে গেলাম। মা বললেন, কী বলবে বল চিঠি নিয়ে। নাকি আজকেও বলবে না?

    আমি ইতস্তত করে বললাম, না, আজ আক। তোমার সাথে পরে কথা বলব।

    ফোনটা রেখে দিতেই রবোটটা ঘুর করে আমার সামনে দিয়ে হেঁটে গেল। শুনলাম বিড়বিড় করে বলছে, ঠিক হল না। মাকে এভাবে চিন্তার মাঝে ফেলে দেয়া একেবারেই ঠিক হল না।

    আমি থ হয়ে বসে রইলাম, কারণ আমি ঠিক এই জিনিসটাই ভাবছিলাম।

    রাত বারটার সময় আমার এক দার্শনিক বন্ধু ফোন করল, আমি নিজে কয়দিন থেকে তাকে ফোন করব বলে ভাবছিলাম। বন্ধুটি বলল, তুমি ঠিকই বলেছ রিবাক।

    কী ঠিক বলেছি? বন্ধুটির কথাবার্তা সবসময় হেঁয়ালিপূর্ণ হয়, তার কথায় আমি বেশি অবাক হলাম না।

    দ্বৈত অস্তিত্ব।

    মানে?

    মানুষের দ্বৈত অস্তিত্ব। বন্ধুটি একটু বিরক্ত হয়ে বলল, আমি বলছি যে আমি তোমার সাথে একমত। একজন মানুষের যদি হঠাৎ করে দুটি ভিন্ন ভিন্ন অস্তিত্বের সৃষ্টি হয় তা হলে একটির ধ্বংস হয়ে যেতে হবে। দুটি অস্তিত্ব একসাথে থাকতে পারবে  না।

    কেন?

    কারণ মানুষের মূল প্রকৃতি হচ্ছে আত্মসচেতনতা। নিজের সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আরেক নাম অস্তিত্ব। কাজেই আত্মসচেতনতা বিলুপ্ত করে মানুষের প্রকৃতি বেঁচে থাকতে পারে না। আত্মসচেতনতার জন্যে সবচেয়ে প্রথম দরকার কী? ব্যক্তিস্বাতন্ত্র, স্বতন্ত্র অস্তিত্ব।

    বন্ধুটি একনাগাড়ে কথা বলে যেতে থাকে। আমি হঠাৎ করে তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি আমাকে কেন এসব কথা বলছ?

    তুমি জানতে চাইলে, তাই।

    আমি কখন জানতে চাইলাম?

    কেন, কাল রাতে? কাল রাতে আমার সাথে এত তর্ক করলে। তখন মনে হচ্ছিল তুমি ভুল বলছ। কিন্তু আমি পরে চিন্তা করে দেখেছি যে, না, তুমি ঠিকই বলেছ। সত্যি কথা বলতে কি এর উপর দার্শনিক লীফার একটা সূত্র আছে

    বন্ধুটি একটানা কথা বলে যেতে থাকে, সে কী বলছে, আমি ঠিক খেয়াল করে শুনছিলাম না, কারণ রবোটটি আবার ঘুরঘুর করে ঘরে হাজির হয়েছে। আমি কাল এই বন্ধুটিকে ফোন করি নি, এই রবোটটি করেছে। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রবোটটিকে দেখি। ভাবলেশহীন যন্ত্রের মুখে কোনো অনুভূতির চিহ্ন নেই, জ্বলজ্বলে চোখে কপোট্রনিক উল্য থাকতে পারে, কিন্তু প্রাণের ছোঁয়া নেই। কিন্তু এই যন্ত্রটির সাথে আমার কোনো পার্থক্য নেই। আমি যেভাবে ভাবি, যেভাবে চিন্তা করি, এই যন্ত্রটিও ঠিক সেরকম করে ভাবে, সেরকম করে চিন্তা করে। আমার অনুভূতি যে-সুরে বাঁধা, এর অনুভূতিও ঠিক সেই সুরে বাঁধা। আর সবচেয়ে বড় কথা, এই যন্ত্রটি মনে করে সে-ই হচ্ছে আমি রিবাক। হঠাৎ করে আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

    আমি হঠাৎ করে বুঝতে পারি রবোটটাকেশষ করে দেবার সময় হয়েছে।

    দার্শনিক বন্ধু যে-জিনিসটি বলেছে, সেটা হয়তো সত্যি। যদি কখনো একজন মানুষের দুটি অস্তিত্ব হয়ে যায়, তা হলে একজনকে ধ্বংস হয়ে যেতে হবে। দুটি অস্তিত্ব পাশাপাশি থাকতে পারে না। দু জন ঠিক একই জিনিস ভাববে, একই জিনিস করবে, তার থেকে জটিল ব্যাপার আর কী হতে পারে? সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার অন্য জায়গায়, যদি কখনো দুটি অস্তিত্বের সৃষ্টি হয় একই সাথে, দুটি অস্তিত্বই একজন আরেকজনকে ধ্বংস করার কথা ভাববে।

    আমি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে ঘরের মাঝে ছটফট করতে থাকি। এরকম একটা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে যে আমি পড়ব, কখনো কল্পনা করি নি। এই মুহূর্তে পাশের ঘরে বসে নিশ্চয়ই আমার অন্য অস্তিত্বটি আমাকে কী ভাবে ধ্বংস করবে সেটা চিন্তা করছে। কী ভয়ানক ব্যাপার, আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় শিউরে ওঠে। কিন্তু সেটা তো কিছুতেই ঘটতে দেয়া যায় না, আমার নিজেকে রক্ষা করতেই হবে, যে-কোনো মূল্যে। আমাকে আঘাত করার আগে তাকে আঘাত করতে হবে।

    আমি আমার সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে চিন্তা করতে থাকি। কিছু-একটা ভেবে বের করতে হবে। কপোট্রনের সাইকেল এখনো গেগা হার্টজে আছে, আমি সেটাকে দ্বিগুণ করে দিলাম। চিন্তা করার জন্যে বড় প্রসেসর আলাদা করা থাকে, আমি সেগুলোকে মূল মেমোরির সাথে জুড়ে দিলাম। চোখের দৃষ্টি এখন আর সাধারণ রাখা যাবে না, কপোট্রনে সিগনাল পাঠাতেই আমার দৃষ্টি ইনফ্রারেড আলোতে সচেতন হয়ে গেল, আমি এখন অন্ধকারেও দেখতে পাব। শ্রবণশক্তিকে আরো তীক্ষ্ণ করে দেয়া যাক, এক শ ডেসিবেলের বেশি বাড়ানো গেল না, ঘরের কোনায় মাকড়সার পদশব্দও এখন আমি শুনতে পাচ্ছি।

    আমি চারদিকে ঘুরে তাকালাম একবার। আমার অন্য অস্তিত্ব এখন হঠাৎ করে আমার উপর ঝাঁপাতে পারবে না। আমি আমার যান্ত্রিক হাত দুটির একটি উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকি। বাড়তি বিদ্যুৎপ্রবাহ পাঠিয়ে সেটাকে আরো শক্তিশালী করে দেব কি? আমি গভীরভাবে চিন্তা করতে থাকি।

    অনেকক্ষণ থেকে টেলিফোন বাজছে। টেলিফোন জিনিসটা আমার মোটে পছন্দ নয়, আজকাল টেলিফোনে কত রকম কারুকাজ করা যায়, ত্রিমাত্রিক ছবি থেকে শুরু করে স্পর্শানুভূতি—কী নেই। আমি নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করি, আমার টেলিফোনে ভাই শুধু কথা বলা যায়, আর কিছু করা যায় না। কিন্তু এখন কথা বলারও ইচ্ছা করছে না। যদি টেলিফোনটা না তুলি, হয়তো একসময় বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু বন্ধ হল না। টেলিফোনটা বেজেই চলল।

    আমি শেষ পর্যন্ত টেলিফোনটা ধরলাম। মা ফোন করেছেন। জিজ্ঞেস করলেন, কে? কে কথা বলছ?

    আমি ক্লান্ত স্বরে বললাম, আমি।

    আমি কে?

    আমি রিবাক।

    কী আশ্চর্য, বলতে গিয়ে আমার গলার সুরকটু কেঁপে গেল হঠাৎ করে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }