Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৯. ওমিক্রনিক রূপান্তর

    ওমিক্রনিক রূপান্তর

    ইলেনের ঘুম ভাঙল তার সবচেয়ে প্রিয় সুরটি শুনে, কিনস্কীর নবম সিম্ফোনি। বার বছর আগে শীতল–ঘরে ঘুমিয়ে যাবার আগে মহাকাশযানের কম্পিউটার ক্রিকিকে সে এই সঙ্গীতটির কথা বলে দিয়েছিল। শীতল-ঘরে ঘুমন্ত কাউকে জাগিয়ে তোলার সময় চেষ্টা করা হয় তার প্রিয় সুরটি বাজাতে, সেরকমই নিয়ম। ইলেন খুব ধীরে ধীরে চোখ খুলল, ক্যাপসুলের ভিতর খুব হালকা একটা মায়াবী আলো। এর মাঝে চার বছর পার হয়ে গেছে? ইলেনের মনে হল মাত্র সেদিন সে ক্যাপসুলে উপাসনার ভঙ্গিতে দুই হাত বুকের উপর রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল। এখনও দুই হাত বুকের উপর রাখা। হাত দুটি নিজে থেকে নাড়াবে কি না বুঝতে পারছিল না, ঠিক তখন কম্পিউটার ক্রিকির কণ্ঠস্বর শুনতে পেল, শুভ জাগরণ, মহামান্য ইলেন।

    শুভ জাগরণ? ইলেন এই অভিনব সম্ভাষণ শুনে একটু হকচকিয়ে গেল। কে জানে, কেউ যদি চার বছর পর ঘুম থেকে জেগে ওঠে তাকে সত্যিই হয়তো এভাবে সম্ভাষণ জানানো যায়।

    মহামান্য ইলেন, আপনি কী রকম অনুভব করছেন?

    ভালো।

    চমৎকার। আপনি নিজে থেকে শরীরের কোনো অংশ নাড়াবেন না। দীর্ঘদিনের অব্যবহারে আপনি শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাময়িকভাবে দুর্বল অনুভব করতে পারেন। আমি আগে একটু পরীক্ষা করে নিতে চাই।

    বেশ।

    গত চার বছর আমি আপনার শরীরের যত্ন নিয়েছি, কাজেই কোনো ধরনের সমস্যা হবার কথা নয়। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আমি পরীক্ষা করে নিশ্চিত না হচ্ছি, আপনি শুয়ে থাকেন।

    বেশ।

    শরীরের নানা অংশে লাগানো নানা প্রোব দিয়ে ক্রিকি নানা ধরনের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ পাঠাতে থাকে। ইলেন ধৈর্য ধরে শুয়ে রইল, দুই পায়ে প্রথমে ঝিঝি ধরার মতো একটা অনুভূতি হয়, দুই হাতে খানিকটা মৃদু কম্পন, কানের মাঝে একবার খানিকটা ভোঁতা শব্দ হল, তারপর একসময় সবকিছু থেমে গেল। ক্রিকির কণ্ঠস্বর আবার শুনতে পেল। ইলেন, চমৎকার মহামান্য ইলেন। সবকিছু ঠিক আছে।

    শুনে খুশি হলাম। এখন কি উঠতে পারি?

    পারেন। তবে হঠাৎ করে উঠবেন না। খুব ধীরে ধীরে। প্রথমে বাম হাত উপরে তুলুন। তারপর ডান হাত—

    ইলেন ঘণ্টাখানেক পর মহাকাশযানের বিশেষ টিলেঢালা একটা কাপড় পরে জানালার কাছে এসে বসে। সুদীর্ঘ অভিযান শেষ করে এই মহাকাশযানটি এখন পৃথিবীর দিকে ফিরে যাচ্ছে, ইলেনকে ঘুম থেকে তোলা হয়েছে সেজন্যে। বাইরে নিকষ কালো অন্ধকারে অসংখ্য নক্ষত্র স্থির হয়ে জ্বলছে। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে কেমন জানি মন-খারাপ হয়ে যায়। একটা বলকারক পানীয় খেতে খেতে ইলেন মহাকাশযানের লগ পরীক্ষা করছিল। গত চার বছরে কী কী ঘটেছে সব এই লগে তুলে রাখা হয়েছে। বেশির ভাগই বৈজ্ঞানিক তথ্য, একনজর দেখে চট করে বোঝার মতো কিছু নয়। পৃথিবীতে পৌছে সেখানকার বড় কম্পিউটারে দীর্ঘ সময় এগুলো খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। তিন বছরের মাথায় একটা বড় গোছের গ্রহ-কণিকার সাথে প্রায় সামনা-সামনি ধাক্কা লেগে যাবার আশঙ্কা হয়েছিল, সেটি ছাড়া পুরো সময়টাকে বলা যেতে পারে বৈচিত্র্যহীন। মহাকাশ অভিযানের প্রথম দুই বছর ইলেন শীতল-কক্ষের বাইরে ছিল। সেই সময়টুকুর স্মৃতি তার কাছে খুব সুখকর নয়। দীর্ঘ সময়ের প্রস্তুতির পরেও মহাকাশযানের একাকীত্ব তার কাছে একেবারে অসহনীয় মনে হয়েছিল। এত দীর্ঘ যাত্রায় সাধারণতঃ সঙ্গী দেয়া হয় না, অতীতে দেখা গিয়েছে সেটি জটিলতা আরো বাড়িয়ে দেয়।

    ইলেন মনিটরটি বন্ধ করে মহাকাশযানের কম্পিউটার ক্রিকিকে ডাকল, ক্রিকি।

    বলুন মহামান্য ইলেন।

    পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ হয়েছে?

    এইমাত্র হল। আমি নিশ্চিত হবার জন্যে আরেক বার খবর পাঠিয়েছি।

    চমৎকার। পৃথিবীটা তাহলে এখনো বেঁচে রয়েছে।

    ইলেন কথাটি ঠিক ঠাট্টা করে বলে নি। পৃথিবীর অস্তিত্ব নিয়ে একটা আশঙ্কা সব সময় তার বুকে দানা বেঁধে আছে। সে এই মহাকাশযানে করে যখন পৃথিবী ছেড়ে এসেছিল, তখন পৃথিবীর অবস্থা ছিল খুব করুণ। শিল্প বিপ্লবের পর সারা পৃথিবীতে অসংখ্য কলকারখানা গড়ে উঠেছিল, তাদের পরিত্যক্ত রাসায়নিক জঞ্জালে সারা পৃথিবী এত কলুষিত হয়েছিল যে, মানুষের পক্ষে সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকা একরকম অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং পারমাণবিক শক্তিচালিত অসংখ্য কলকারখানা থেকে যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা পৃথিবীর বাতাসে স্থান লাভ করেছে তার পরিমাণ ভয়াবহ। কাজেই পৃথিবী এখনো বেঁচে আছে এবং মহাকাশযানের সাথে যোগাযোগ হয়েছে, সেটা নিঃসন্দেহে ইলেনের একটা বড় স্বস্তির কারণ। সে ক্রিকিকে বলল, যোগাযোগটা আরেকটু ভালো করে থোক, তখন চেষ্টা কর একজন মানুষের সাথে কথা বলতে। যদি মানুষ পাওয়া যায়, আমাকে কথা বলতে দিও।

    ঠিক আছে মহামান্য ইলেন।

    খুব ইচ্ছে করছে একজন সত্যিকার মানুষের সাথে কথা বলতে।

    বিচিত্র কিছু নয়, আপনি প্রায় ছয় বৎসর কোনো মানুষের সাথে কথা বলেন নি।

    হ্যাঁ, তার মাঝে অবশ্যি চার বৎসর ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিয়েছি।

    মহাজাগতিক রশি ব্যবহার করে মহাকাশযানটির গতিবেগ অবশ্যি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কাজেই পৃথিবীতে এর মাঝে অনেক দিন পার হয়ে গেছে।

    সেটা সত্যি। আমি যাদের পৃথিবীতে ছেড়ে এসেছি, তাদের কেউ বেঁচে নেই।

    যারা শীতল-ঘরে আছে, তারা ছাড়া।

    শীতল-ঘরে আর কয়জনই-বা যায়। ইলেন খানিকক্ষণ মনে মনে হিসেব করে বলল, পৃথিবীতে এর মাঝে এক শ দশ বছর পার হয়ে গেছে। তাই না?

    একশ দশ বছর চার মাস তের দিন। আরো যদি নিঁখুত হিসেব চান, তা হলে তের দিন চার ঘণ্টা উনিশ মিনিট একুশ সেকেণ্ড।

    দীর্ঘ সময়। কি বল?

    হ্যাঁ মহামান্য ইলেন। দীর্ঘ সময়।

    ইলেন খানিকক্ষণ আনমনা হয়ে বসে থাকে। একটু পর আস্তে আস্তে বলে, বুঝলে ক্রিকি, আমার স্ত্রী যখন অ্যাকসিডেন্টে মারা গেল, মনে হল বেঁচে থেকে কী হবে। এই অভিযানটিতে তখন নিজে থেকে নাম লিখিয়েছিলাম। নাহয় কি কেউ এরকম একটা অভিযানে যায়? পৃথিবীতে এক শতাব্দীর বেশি সময় পর ফিরে যাওয়া অনেকটা নূতন একটা জীবনে ফিরে যাওয়ার মতো। এতদিনে পৃথিবীর নিশ্চয়ই অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কী বল?

    নিশ্চয়ই।

    খুব কৌতূহল হচ্ছে দেখার জন্যে।

    খুবই স্বাভাবিক।

    ইলেন তার প্রাত্যহিক কাজে ফিরে যাবার আগে বলল, চেষ্টা করতে থাক একজন সত্যিকার রক্তমাংসের মানুষ খুঁজে বের করতে। খুব ইচ্ছে করছে একজন মানুষের সাথে কথা বলতে।

    চেষ্টা করছি মহামান্য ইলেন।

    সপ্তাহ দুয়েক পর ক্রিকি পৃথিবীর একজন সত্যিকার মানুষের সাথে ইলেনের যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারল। আন্তঃগ্রহ যোগাযোগ বিভাগের একজন বিজ্ঞানী। মধ্যবয়সী একজন হাসিখুশি মানুষ। ইলেন প্রাথমিক সম্ভাষণ বিনিময় শেষ করে বলল, পৃথিবীতে এখন কোন ঋতু চলছে?

    বসন্ত। ভারি বাজে সময়।

    কেন, বাজে সময় হবে কেন? বসন্ত ফুল ফোঁটার সময়।

    সেটাই তো বাজে। ফুলের পরাগরেণুতে বাতাস ভারি হয়ে আছে। দেশসুদ্ধ মানুষের অ্যালার্জি। হাঁচি দিতে দিতে একেকজনের কী অবস্থা।

    ইলেন শব্দ করে হাসে, কী বলছেন আপনি! মহাকাশযানের একেবারে পরিশুদ্ধ বাতাসে আমি ছয় বছর থেকে আছি। এই ছয় বছরে একটিবারও হাঁচি দিই নি। আমি তো ফুলের পরাগ শুকে কিছু হাঁচি দিতে আপত্তি করব না।

    বিজ্ঞানী ভদ্রলোক বিরস মুখে বললেন, দূর থেকে ওরকমই মনে হয়। অ্যালার্জি জিনিসটা খুব খারাপ। সবাই বলছি, আইন করে ফুলের পরাগ বন্ধ করে দেয়া হোক।

    ইলেন হো হো করে হেসে উঠে, ভালোই বলেছেন, আইন করে ফুলের পরাগ বন্ধ করে দেয়া হবে। কয়দিন পরে শুনব যা কিছু খারাপ, আইন করে বন্ধ করে দেয়া হবে। রোগ শোক দুঃখ কষ্ট জিরা ব্যাধি, পাপ গ্লানি সব বেআইনি–

    বিজ্ঞানী ভদ্রলোক গম্ভীর মুখে বললেন, কেন, আপনি এত হাসছেন কেন? আমি তো কিছু দোষ দেখি না আইন করে কিছু খারাপ জিনিস বন্ধ করে দেয়ায়। কলকারখানা বাতাসে কী পরিমাণ বিষাক্ত গ্যাস ছড়াত মনে আছে? আইন করে সেসব বন্ধ করে দেয়া হল না? এখন বাতাস কত পরিষ্কার। মাঠে ঘাস জন্মেছে, আকাশে পাখি উড়ছে, নদীতে মাছ।

    ইলেন উজ্জ্বল চোখে বলল, সত্যি? আমি যখন পৃথিবী ছেড়েছি, কী ভয়াবহ অবস্থা পৃথিবীতে। নিঃশাস নেয়ার অবস্থা ছিল না।

    সব পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে। এলে চিনতে পারবেন না। কলকারখানার জঞ্জাল, তেজস্ক্রিয় বিষাক্ত গ্যাস, কিছু নেই। ঝকঝকে একটা পৃথিবী। সত্যি কথা বলতে কি একটু বেশি ঝকঝকে। গাছপালা ফুল ফল একটু কম হলেই মনে হয় ভালো ছিল।

    ইলেন বিজ্ঞানী ভদ্রলোকের সাথে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে খানিকক্ষণ কথা বলে জিজ্ঞেস করে, গত এক শ বছরে বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি কি বলতে পারেন?

    গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার? বিজ্ঞানী ভদ্রলোককে একটু বিভ্রান্ত মনে হল। মাথা চুলকে বললেন, গত এক শ বছরে সত্যি কথা বলতে কি সেরকম বড় কোনো আবিষ্কার হয় নি। অন্তত আমার তো মনে পড়ে না। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে কিছু নূতন জন্তু জানোয়ার তৈরি হয়েছে, কিন্তু সেটা তো বড় আবিষ্কার হল না, কি বলেন?

    পদার্থবিজ্ঞানে? রসায়ন? ইঞ্জিনিয়ারিং?

    পদার্থবিজ্ঞানে ব্ল্যাক হোল নিয়ে বড় একটা আবিষ্কার হয়েছে, ল্যাবরেটরিতে ব্ল্যাক হোেল তৈরি করা জাতীয় ব্যাপার। আমি ঠিক বুঝি না সেসব। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনেক কিছু হয়েছে, কোনটা বলি আপনাকে? কম্পিউটারের নূতন মডেলগুলো অসাধারণ, আপনার মহাকাশযানের কম্পিউটার এখন হাতের রিস্টওয়াচে এঁটে যায়।

    এরকম কোনো আবিষ্কার নেই, যেটা অন্য দশটা আবিষ্কার থেকে আলাদা করে বলা যায়?

    নিশ্চয়ই আছে, এক সেকেন্ড অপেক্ষা করেন, আমি ডাটা বেস থেকে বের করে আনি। বিজ্ঞানী ভদ্রলোক খানিকক্ষণ কী-একটা দেখে মাথা চুলকে বললেন, ভারি আশ্চর্য ব্যাপার।

    কী হয়েছে?

    এখানে লেখা রয়েছে, গত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ওমিক্রনিক রূপান্তর। এই আবিষ্কার নাকি পৃথিবী এবং মানুষ জাতিকে নূতন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছে।

    সেটা কী?

    বিজ্ঞানী ভদ্রলোক অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে একটু হেসে বললেন, মজার ব্যাপার শুনবেন? আমি কখনো এর নাম পর্যন্ত শুনি নি। এই প্রথম শুনলাম, ওমিক্রনিক রূপান্তর। কী আশ্চর্য একটা নাম। যে-আবিষ্কার মানবজাতির জন্যে নূতন দিগন্ত খুলে দিয়েছে, সেটার নাম পর্যন্ত আমি শুনি নি—কী লজ্জার ব্যাপার বলেন দেখি।

    লজ্জার কী আছে? আবিষ্কারটি নিশ্চয়ই আপনার বিষয়ে নয়–

    নিশ্চয়ই নয়। নিশ্চয়ই জীববিজ্ঞান বা ডাক্তারি শাস্ত্রের কিছু হবে। আপনি অপেক্ষা করল, আমি বের করে আনি ব্যাপারটা কি, এই ডাটা বেসেই আছে।

    ইলেন বলল, আপনাকে বের করতে হবে না, আমি পরে বের করে নেব। আমার সময় পার হয়ে গেছে, যোগাযোগ কেটে দিচ্ছে এক্ষুণি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

    আপনার পৃথিবীতে ফিরে আসা অনেক আনন্দের হোক।

    সত্যিকার একজন মানুষের সাথে কথা বলে ইলেনের বেশ লাগল। বড় কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ হলে প্রয়োজনীয় সব তথ্য নিঁখুতভাবে পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে অপ্রয়োজনীয় তুচ্ছ একটা খবরের জন্যে মনটা বুভুক্ষু হয়ে থাকে। সেরকম একটা খবর দিতে পারে শুধু মানুষ। যেমন পৃথিবীতে এখন বসন্তকাল, অসংখ্য ফুল ফুটেছে, ফুলের পরাগরেণু বাতাসে ভাসছে এবং সেই রেণু মানুষের অ্যালার্জির শুরু করেছে। এই নেহায়েত অপ্রয়োজনীয় এবং প্রায় অর্থহীন তথ্যটি ইলেনকে হঠাৎ করে একেবারে মাটির পৃথিবীর কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। বড় ভালো লেগেছে শুনে যে বড় বড় কলকারখানার আবর্জনা এবং জঞ্জাল পৃথিবীকে পুরোপুরি কলুষিত করে ফেলবে সেরকম যে-ভয়টা ছিল সেটা এড়ানো গেছে। পৃথিবী আবার বাসযোগ্য হয়েছে, ফুলে ফলে ভরে উঠেছে শুনে ইলেনের হঠাৎ করে আবার মানবজাতির উপর বিশ্বাস ফিরে এসেছে।

     

    প্রাত্যহিক কাজকর্ম শেষ করে ইলেন মহাকাশযানের কম্পিউটার ক্রিকিকে বলল, পৃথিবীর কেন্দ্রীয় তথ্যকেন্দ্র থেকে ওমিক্রনিক রূপান্তরসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বের করে আনতে। ক্রিকি প্রায় বার টেরাবাইট তথ্য বের করে আনল। ইলেন তখন বলল, তার মাঝখান থেকে মূল জিনিসগুলো বের করে আনতে। ক্রিকি সেগুলি বের করে আনার পর ইলেন পড়তে বসে।

    যেটা পড়ল সেটা খুব বিচিত্র।

    বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে প্রথম শ্রেণীর কম্পিউটারে কিছু প্রোগ্রাম লেখা হয়েছিল, যেটা প্রায় একজন সত্যিকার মানুষের মতো চিন্তা-ভাবনা করতে পারত। ধীরে ধীরে সেটা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে এরকম একটা প্রোগ্রামের সাথে যোগাযোগ করে কোনোভাবে বলা সম্ভব হত না সেটি কি মানুষ, না, একটি কম্পিউটার। প্রোগ্রামটি এমনভাবে লেখা হত যেন সেটি একজন নির্দিষ্ট মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে। দীর্ঘদিন গবেষণার পর ব্যাপারটি এত নিখুঁত রূপ নিয়ে নিল যে, আক্ষরিক অর্থেই একজন মানুষের মস্তিষ্ককে তার পুরো ক্ষমতাসহ একটি কম্পিউটারের মেমোরিতে বসিয়ে দেয়া যেত। একজন জৈবিক মানুষকে, কম্পিউটারের ভিতরে এই ধরনের যান্ত্রিক রূপ দেয়ার নাম ওমিক্রনিক রূপান্তর।

    ওমিক্রনিক রূপান্তর ব্যবহার করে মানুষের মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করার নানা ধরনের ব্যবহারিক গুরুত্ব থাকার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে সেটি একেবারেই কোনো কাজে এল না। কেন এল না তার কারণটি খুব সহজ। ওমিক্রনিক রূপান্তর করে তৈরি করা কম্পিউটার প্রোগ্রামটি এবং সত্যিকার মস্তিষ্কের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। মানুষের প্রকৃত মস্তিষ্ককে কখনো শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হয় না, বাইরের জগৎকে সবসময়েই পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করতে পারে। কিন্তু ওমিক্রনিক রূপান্তরে তৈরী মানুষের মস্তিষ্কের অনুলিপির সে-ক্ষমতা নেই। শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কোনো-একটি কম্পিউটারের মেমোরিতে বেঁচে থাকা তাদের কাছে ভয়াবহ অমানুষিক অত্যাচারের মতো, যেন কোনো মানুষকে হঠাৎ করে আলোহীন শব্দহীন এক অতল গহ্বরে ফেলে দেয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে তারা বাইরের কোনো কিছুর সাথে কোনোদিন যোগাযোগ করতে পারছে না। সেই অনুভূতি এত ভয়ানক যে ওমিক্রনিক রূপান্তর করে তৈরি করা মস্তিষ্কের প্রতিটি অনুলিপি প্রথম সুযোগ পাওয়ামাত্র নিজেদের ধ্বংস করে ফেলেছিল।

    প্রথমে সবাই ভেবেছিল ওমিক্রনিক রূপান্তর করে তৈরি মস্তিষ্কের অনুলিপিগুলোকে দেখার, শোনার এবং কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হলেই হয়তো এই সমস্যার সমাধান হবে। দেখা গেল সেটা সত্যি নয়। এই ধরনের মস্তিষ্কের অনুলিপি সবসময়েই অনুভব করেছে তারা পুরো জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন, তাদের দেহ নেই বলে তাদের অস্তিত্ব নেই। কৃত্রিম উপায়ে তারা যা দেখে বা যা শোনে, তার সাথে বাস্তব জগতের কোনো মিল নেই। সে কারণে সবসময়েই তারা ভয়াবহ বিষণ্ণতায় ডুবে রয়েছে।

    ওমিক্রনিক রূপান্তর করে তৈরি মস্তিষ্কের অনুলিপিগুলোকে বিষণ্ণতা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল বিচিত্রভাবে, অনেকগুলো মস্তিষ্কের অনুলিপিকে এক কম্পিউটারে নিজেদের মাঝে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেয়ার পর। দেখা গেল হঠাৎ করে কম্পিউটারের ভিতর একটা ছোট সমাজ গড়ে উঠেছে। মস্তিষ্কের অনুলিপিগুলোর মাঝে প্রথমে পরিচয় হল, তারপর বন্ধুত্ব হল এবং সবশেষে একে অন্যকে অসহনীয় বিষণ্ণতা থেকে টেনে তুলতে শুরু করল।

    তখন হঠাৎ করে ওমিক্রনিক রূপান্তরের সবচেয়ে বড় সাফল্যটি আবিষ্কৃত হল। কম্পিউটারের মাঝে বেঁচে থাকা মস্তিষ্কের অনুলিপিদের বাইরের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই, তাদের জন্যে প্রয়োজন কম্পিউটারের ভিতরে একটা জগৎ। পৃথিবীর কম্পিউটার প্রোগ্রামাররা তখন কম্পিউটারের মাঝে একটা জগৎ তৈরি করার কাজে লেগে গেলেন। বিচিত্র সব প্রোগ্রাম লেখা হল। মস্তিষ্কের অনুলিপিগুলোর জন্যে তৈরি হল দেহ, কম্পিউটার প্রোগ্রামে। পুরুষের জন্যে পুরুষের দেহ, নারীর জন্য নারীর। সেইসব দেহ কম্পিউটারের ভিতরে এক কাল্পনিক জগতে ঘুরে বেড়াতে শুরু করল। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, গাছপালা তৈরি হল কম্পিউটার প্রোগ্রামে। আকাশ তৈরি হল, বাতাস তৈরি হল, দিন, রাত, ঋতু তৈরি হল। সত্যিকার মানুষের মস্তিষ্কের নিখুঁত অনুলিপি একটা শরীর নিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকল। সেই জগতে তারা ভুলে গেল তাদের দেহ, তাদের চারপাশের জগৎ কোনো-এক প্রোগ্রামের সৃষ্টি। তাদের মনে হল তারা সত্যিকারের মানুষ, তাদের চারপাশের জগৎ সত্যিকারের জগৎ। সেইসব মানুষের মাঝে দুঃখ-বেদনা হাসি-কান্না খেলা করতে থাকে। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরের সেই জগতে নিজেদের জন্যে নূতন একটা জগৎ তৈরি করে নেয়। সত্যিকার জগতের সাথে তার আর কোনো পার্থক্য নেই।

     

    ইলেন রূদ্ধশ্বাসে ওমিক্রনিক রূপান্তর নামের সেই বিচিত্র গবেষণার কথা পড়তে থাকে। পৃথিবীর দিকে ছুটে যাওয়া এই মহাকাশযানের নিঃসঙ্গ যাত্রীটি সময়ের কথা ভুলে যায়।

     

    পৃথিবীর খুব কাছাকাছি এসে ইলেন আবার পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণকক্ষের সাথে যোগাযোগ করল। এবারে তার কথা হল একজন কমবয়সী মেয়ের সঙ্গে। মেয়েটি কোনো কারণে খুব বিচলিত।

    বলল, আপনি খুব ভালো আছেন, মহাকাশে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেন খামোকা পৃথিবীতে ফিরে আসছেন?

    কেন? কী হয়েছে?

    আজকের সন্ধের খবর। লেজারকমে চাকরি করে একজন মানুষ, কাজকর্ম করে না বলে চাকরি গেছে। সেই মানুষ ক্ষেপে গিয়ে এগারটা মানুষ খুন করে ফেলল। চিন্তা করতে পারেন?

    ইলেন জিব দিয়ে চুকচুক শব্দ করে বলল, কী দুঃখের ব্যাপার।

    হ্যাঁ। এদের সহ্য করা হয় বলেই তো এই অবস্থা।

    সহ্য করা না-করা তো প্রশ্ন নয়। এরকম একজন দুজন মানুষ তো সবসময়েই থাকবে। এদের মনে হয় পুরো মানসিক ভারসাম্য নেই। হঠাৎ হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এরকম এক-আধটা অঘটন ঘটায়।

    কিন্তু কেন ঘটতে দেয়া হবে?

    কিছু তো করার নেই। এদের বিরুদ্ধে তো কিছু করার নেই।

    কেন থাকবে না? অবশ্যি আছে।

    আছে? ইলেন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কী করার আছে?

    আইন করে দেয়া হবে যে এরকম মানুষ আর কখনো জন্মাতে পারবে না।

    আইন করে–ইলেন থতমত খেয়ে যায়, মেয়েটা কী বলছে? আইন করে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের জন্ম বন্ধ করে দেয়া হবে?

    আমি দুঃখিত, আপনি এতদিন পর পৃথিবীতে ফিরে আসছেন, অথচ এরকম মন-খারাপ করে দেয়া কথা বলছি। আমি দুঃখিত।

    দুঃখিত হবার কী আছে। এসব হচ্ছে বেঁচে থাকার মাসুল–

    সেটাই তো কথা। কেন দুঃখকষ্ট জীবনের মাসুল হবে? আইন করে কেন জীবন থেকে সব দুঃখকষ্ট সরিয়ে দেয়া হবে না?

    ইলেন চুপ করে থাকে। কেন মেয়েটা এরকমু কথা বলছে? জীবন থেকে সব দুঃখকষ্ট আইন করে সরিয়ে দেবে মানে? এর আগেও মধ্যবয়স্ক সেই বিজ্ঞানী একই কথা বলছিল—তখন ভেবেছিল ঠাট্টা করে বলছে। তাহলে কি সত্যি বলেছিল?

    হঠাৎ ইলেনের বুকের ভিতর কেমন জানি একটা অশুভ অনুভূতির জন্ম হয়।

     

    মহাকাশযানটি নিরাপদে মহাকাশ কেন্দ্রে অবতরণ করল। ইলেন খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে। এরকম দীর্ঘ অভিযানের পর সাধারণত মহাকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা দরজা খুলে অভ্যর্থনা করে, আজ কেউ এল না। ইলেন নিজেই দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে আতঙ্কে শিউরে ওঠে–

    সামনে বিস্তীর্ণ ধূসর প্রাণহীন পৃথিবী। ক্লেদাক্ত আকাশ, দূষিত পূতিগন্ধময় বাতাস আগুনের হলকার মতো বইছে। চারদিকে যতদূর দৃষ্টি যায় কোথাও কোনো প্রাণের চিহ্ন নেই। বিষাক্ত বাতাসে ইলেনের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, চোখ জ্বালা করতে থাকে, কোনোমতে দু হাতে মুখ ঢেকে সে মহাকাশযানের ভিতরে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। কোথায় এসেছে সে? কাঁপা গলায় ডাকল, ক্রিকি–

    বলুন মহামান্য ইলেন।

    বাইরে দেখেছ?

    দেখেছি। অত্যন্ত ভয়ংকর পরিবেশ। বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ খুব কম, প্রচুর কার্বন ডাই-অক্সাইড। সাথে নাইট্রাস অক্সাইড এবং সালফার ডাই–অক্সাইড। চারপাশে ভয়ানক তেজস্ক্রিয়তা, সিজিয়াম ১৩৭-এর পরিমাণ দেখে মনে হয় পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটেছে। এখানে সূর্যের আলোতে আলট্রা ভায়োলেট রে-এর পরিমাণ অত্যন্ত বেশি, মনে হয় বায়ুমণ্ডলের ওজোনের স্তর পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। মহামান্য ইলেন, এই গ্রহ মানুষের বাসের পক্ষে পুরোপুরি অনুপযুক্ত। এখানে আমি যতদূর দেখেছি কোনো প্রাণের চিহ্ন নেই।

    কী বলছ তুমি!

    আমি দুঃখিত মহামান্য ইলেন, কিন্তু আমি সত্যি কথা বলছি।

    কিন্তু আমি মাত্র সেদিন পৃথিবীর সাথে কথা বলেছি—

    আমি এখনো তাদের সাথে কথা বলছি মহামান্য ইলেন। আপনি বলবেন?

    বলব। ভয়ার্ত গলায় ইলেন বলল, বলব।

    সাথে সাথে মনিটরে হাসিখুশি একজন মানুষকে দেখা গেল। মানুষটি বলল, আমি কিম রিগার। পৃথিবীর পক্ষ থেকে আপনাকে আমি সাদর অভ্যর্থনা জানাচ্ছি সম্মানিত ইলেন।

    কিম।

    বলুন।

    তোমরা কোথায়?

    মানে?

    আমি কাউকে দেখছি না কেন? পৃথিবী এরকম ভয়ংকর প্রাণহীন কেন? বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস–

    কিমকে এক মুহূর্তের জন্যে বিভ্রান্ত দেখায়। সামনে সুইচ বোর্ডে দ্রুত কিছু সুইচ স্পর্শ করে নিজেকে সামলে নেয়। মুখে জোর করে একটা হাসি টেনে এনে বলল, আমাদের ছোট একটা ভুল হয়ে গেছে।

    ভুল?

    হ্যাঁ অনেক দিন করা হয় নি, তাই। ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটা ভুল।

    কী ভুল?

    আপনার ওমিক্রনিক রূপান্তর করা হয় নি। তা হলে আপনি আমাদের পৃথিবীতে অবতরণ করতে পারতেন। আপনি ভুল পৃথিবীতে অবতরণ করেছেন, সেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেছে বহুকাল আগে। শিল্পবিপ্লবের অভিশাপে সেই পৃথিবী এখন প্রাণহীন। আপনি সেই ভুল পৃথিবীতে পা দিয়েছেন, বাইরে বের হলে আপনি দশ মিনিটের মাঝে প্রাণ হারাবেন, বিষাক্ত ফসজিল গ্যাসের নূতন একটা আস্তরণ তৈরি হচ্ছে এই মুহূর্তে।

    ভূল পৃথিবী?

    হ্যাঁ। আমরা এখন নূতন পৃথিবী তৈরি করেছি।

    নূতন পৃথিবী?

    হ্যাঁ। বিশাল টেটরা কম্পিউটার তৈরি হয়েছে মাটির গহ্বরে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সেটা বড় করা হচ্ছে ধীরে ধীরে। সেই মহা কম্পিউটারে গত শতাব্দীতে সব মানুষের ওমিক্রনিক রূপান্তর করা হয়েছে।

    সব মানুষের?

    হ্যাঁ, সব মানুষের। বাসের অনুপযুক্ত হয়ে গিয়েছিল পুরানো পৃথিবী। নূতন পৃথিবীতে কোনো বিষাক্ত গ্যাস নেই, ভয়াবহ আলট্রা ভায়োলেট রে নেই, তেজস্ক্রিয় জঞ্জাল নেই। এখানে আছে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ, নীল হ্রদ, গহীন অরণ্য, বিশাল অতলান্ত সমুদ্র, মহাসমুদ্র। আগের পৃথিবীতে যেসব ভুল করা হয়েছিল, সব শুধরে নেয়া হয়েছে এখানে। আশ্চর্য একটা শান্তি বিরাজ করছে এই পৃথিবীতে–

    তোমরা তা হলে মানুষ নও? তোমরা আসলে কম্পিউটার প্রোগ্রাম? তোমাদের পৃথিবীও কম্পিউটার প্রোগ্রাম?

    হ্যাঁ, কিন্তু নিখুঁত প্রোগ্রাম। আমরা নিখুঁত মানুষ। আমাদের এই পৃথিবী নিখুঁত পৃথিবী।

    নিঁখুত পৃথিবী?

    হ্যাঁ। আপনি আসেন, নিজের চোখে দেখবেন। আশ্চর্য একটা শান্তি এই পৃথিবীতে। যা কিছু খারাপ, যা কিছু অশুভআইন করে সরিয়ে দেবার কথা হচ্ছে এই পৃথিবী থেকে। তখন স্বর্গের মতো হয়ে যাবে এই পৃথিবী।

    স্বর্গের মতো?

    হ্যাঁ। আপনি আসুন, দেখবেন। আপনাকে অভ্যর্থনা করার জন্যে আমরা প্রস্তুত হয়ে আছি এখানে। ওমিক্রনিক রূপান্তরের জন্যে প্রস্তুত আছেন আপনি?

    ইলেন তার কথার উত্তর দিল না, বিড়বিড় করে বলল, পৃথিবী নেই? মানুষ নেই? মানুষের দুঃখ কষ্ট ভালবাসা কিছু নেই? কিছু নেই?

    সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহের একমাত্র জীবিত মানুষ ইলেন দুমাস মহাকাশযানের দরজা খুলে বের হয়ে এল। বাইরে আগুনের হলকার মতো ভয়ংকর বিষাক্ত বাতাস হু হু করে বইছে, তার মাঝে সে মাথা উঁচু করে হাঁটতে থাকে, শৈশবে যে-ভালবাসার পৃথিবীতে সে বড় হয়েছে, তাকে যেন খুঁজছে ব্যাকুল হয়ে

    আর কিছুক্ষণের মাঝেই সে হাঁটু ভেঙে পড়ে যাবে নিচে। বিষাক্ত বাতাস তার বক্ষ বিদীর্ণ করে চূর্ণ করে দেবে ক্ষতবিক্ষতফুসফুসকে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠবে তাঁর আশ্চর্য কোমল দেহ। সেই দেহ পড়ে থাকবে ভয়ংকর এক পৃথিবীর বুকে।

    যে-পৃথিবীকে তার নির্বোধ বাসিন্দারা ধ্বংস করেছে নিজের হাতে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }