Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. নূতন স্কুল

    ০৩. নূতন স্কুল

    বল্টুর স্কুলে সিট পাওয়া গেল না বলে আমাকে অন্য একটা স্কুলে ভর্তি করা হল, স্কুলটা বাসা থেকে বেশ দূরে। নূতন স্কুলে আমাদের ক্লাস-টিচারের বেশ বয়স। চোখে চশমা, মুখে গোঁফ এবং কেমন জানি একটু রাগী রাগী চেহারা। প্রথম দিন আমাকে উপর থেকে নিচে পর্যন্ত একনজর দেখে হুঙ্কার দিয়ে বললেন, নাম কি?

    বিলু বলতে গিয়ে সামলে নিয়ে ভালো নামটি বললাম, নাজমুল করিম।

    বাসায় কী ডাকে? নাজমুল, না করিম?

    বাসায় ডাকে বিলু।

    বিলু? স্যার হাত নেড়ে বললেন, মাথায় কি আছে ঘিলু?

    ক্লাসের সবাই হো হো করে হেসে উঠল, তখন আমিও একটু সহজ হলাম। স্যারের চেহারাটা রাগী রাগী, কিন্তু মানুষটা মনে হয় খুব ভালো। স্যার জিজ্ঞেস করলেন, কোন স্কুল থেকে এসেছিস?

    নীলাঞ্জনা হাই স্কুল।

    নীলাঞ্জনা? বাহ্, কী সুন্দর নাম। কোথায় স্কুলটা?

    আমাদের গ্রামে। রতনপুর স্টেশন থেকে চার মাইল পুব দিকে।

    রতনপুর? সেটা কোথায়?

    আমার খানিকক্ষণ লাগল স্যারকে বোঝাতে জায়গাটা কোথায়। ভেবেছিলাম চিনবেন না, কিন্তু অবাক ব্যাপার, স্যার ঠিকই চিনলেন। মাথা নেড়ে বললেন, তুই তো তাহলে একেবারে একটা গ্রামের স্কুল থেকে এসেছিস! ভেরি ইন্টারেস্টিং। কী রকম পড়াশোনা হয় আজকাল বল দেখি?

    ভালোই হয়।

    ছাত্র কয়জন?

    আমি মাথা চুলকালাম, স্কুলে ছাত্র কয়জন কখনো তো বের করার চেষ্টা করি নি। অ্যাসেমব্লির সময় মাঠের আধাআধি প্রায় ভরে যায় কিন্তু সেটা তো উত্তর হতে পারে না। ইতস্তত করে বললাম, অনেক।

    অনেক? এটা আবার কী রকম উত্তর হল? একটা নাম্বার বল।

    জানি না সার।

    তোর ক্লাসে কয়জন ছাত্র?

    এখন তিরিশ জন। বর্ষার সময় কমে যায়, যাতায়াতের অসুবিধে, তাই।

    কী রকম অসুবিধে?

    পানি উঠে যায়। রাস্তাঘাট ড়ুবে যায়। অনেক ঘুরে বড় সড়ক দিয়ে যেতে হয়। কাদাপানিতে হাঁটা খুব শক্ত।

    ক্লাসের একজন ছাত্র জিজ্ঞেস করল, তখন কি তোমরা বুট পরে যাও?

    স্যার হো হো করে হেসে উঠলেন, বললেন, ধুর বোকা। গ্রামের ছেলেদের বুটফুট লাগে না, তারা খালি পায়েই হেঁটে যেতে পারে।

    স্যার ঠিকই বলেছেন, জুতা আমি বলতে গেলে কখনই পরি নি। এখন পরে আছি, কিন্তু সেটা তো স্কুলের পোশাক, সাদা শার্ট, নীল প্যান্ট আর কালো জুতা।

    স্যার জিজ্ঞেস করলেন, গ্রাম থেকে হঠাৎ চলে এলি যে?

    আমার ছোট খালার বাসায় থেকে পড়াশোনা করতে এসেছি, স্যার।

    ও। তাহলে তোর আব্বা-আম্মা কোথায় আছেন?

    বাড়িতে।

    ও ও। স্যার মাথা নেড়ে চুপ করে গেলেন। একটু পরে বললেন, যা গিয়ে বস৷ নূতন নূতন তোর একটু অসুবিধে হতে পারে, আমাকে বলিস।

    আমি পিছনের দিকে গিয়ে একটা খালি সিটে বসলাম, একজন একটু সরে আমাকে জায়গা করে দিল। আমাকে খুব ভালো করে লক্ষ করল ছেলেটা। ক্লাসে নূতন ছেলে এলে মনে হয় এভাবে লক্ষ করতে হয়।

    ঘন্টা পড়ার পর স্যার চলে যেতেই দু’জন ছেলে আমার দিকে এগিয়ে এল। একজন ফর্সা মতো শুকননা, অন্যজন বেশ গাট্টাগোট্টা। ফর্সা মতন ছেলেটা জিজ্ঞেস করল, বর্ষাকালে তুমি কি লুঙ্গি পরে স্কুলে যেতে?

    ছেলেটা কেন এটা জিজ্ঞেস করছে বুঝতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করার ধরনটা বেশি ভালো না, কিন্তু তবু আমি উত্তর দিলাম। বললাম, হ্যাঁ। লুঙ্গি না পরে যাওয়া কঠিন। কখনো হাঁটু পানি, কখনো আরো বেশি

    ফর্সা ছেলেটা তার সঙ্গীর পেটে একটা খোঁচা দিয়ে বলল, দ্যাখ–আমি বলেছি না?

    গাট্টাগোট্টা সঙ্গীটি বলল, বাতাসে যখন তোমার লুঙ্গি উড়ে পাছা বের হয়ে যায় তখন তুমি কী কর?

    আমি টের পেলাম, আমার মাথার ভিতরে আগুন ধরে গেছে। বাবা পাগল বলে সারা জীবন শুধু লোকজনের টিটকারি শুনে এসেছি, এটা আমার কাছে নূতন কিছু না। টিটকারি কেমন করে শুনতে হয় আমার থেকে ভালো করে কেউ জানে না। টিটকারি শুনে কী করতে হয়, সেটাও আমার থেকে ভালো করে কেউ জানে না।

    আমি খপ করে ছেলেটার শার্টের কলারটা ধরে বললাম, আমি তোমার মশকরার মানুষ না। আমার সাথে মশকরা কোরো না, দাঁত ভেঙে ফেলে দেব।

    ছেলেটা আর যাই করুক, আমার কাছে এই রকম ব্যবহার আশা করে নি–একেবারে থতমত খেয়ে গেল। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, ঠিক তখন স্যার এসে গেলেন, কিছু বলতে পারল না। নিজের জায়গায় বসে একটু পরে পরে আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতে লাগল। কে জানে ব্যাপারটি ভালো হল কি না কিন্তু আমি দেখেছি ফিলে বদমাইশগুলোকে এই ওষুধ দিয়ে খুব সহজে সিধে করে দেয়া যায়।

    আমার পাশে যে বসেছিল, সে গলা নামিয়ে বলল, লিটন হচ্ছে জুনিয়ার ব্লক বেল্ট।

    লিটন কে?

    তুমি যার কলার ধরেছ।

    সে কি?

    ব্ল্যাক বেল্ট। নেপালে গিয়েছিল কম্পিটিশানে। সিলভার মেডেল পেয়েছিল।

    স্যার হুঙ্কার দিলেন, কে কথা বলে রে?

    পাশের ছেলেটি চুপ করে গেল, আমি তাই জানতে পারলাম না ব্ল্যাক বেল্ট মানে কি।

     

    ব্ল্যাক বেল্ট মানে কি জানতে পারলাম টিফিনের ছুটিতে। স্যার বের হয়ে যেতেই গাট্টাগোট্টা লিটন আর ফর্সা মতন চশমা-পরা ছেলেটা আমার কাছে এগিয়ে এল। ক্লাসের বেশির ভাগ ছেলেরা কী ভাবে জানি বুঝে গেছে কী-একটা হবে, সবাই ক্লাসের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে।

    লিটন আমার খুব কাছে এসে দাঁড়াল, এরকম সময় তাই করার নিয়ম, তারপর বুকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল, তোকে আজ কিমা বানাব।

    আমার একটুও ভয় লাগল না, জীবনে অনেক মারপিট করেছি, কাজেই জানি এটা এমন কিছু কঠিন জিনিস না। যারা মারপিট করে না, তারা মনে করে ব্যাপারটা সাঘাতিক কিছু-একটা, খুব ভয় পায়। আমি লিটনের বুকের ধাক্কাটা ফেরত দিয়ে বললাম, আমাকে জ্বালিও না।

    লিটন আবার আমার বুকে ধাক্কা দিল, এবারে আরেকটু জোরে, তারপর বলল, একেবারে কিমা বানিয়ে দেব।

    মনে হচ্ছে সত্যি মারপিট করতে চায়, অনেক সময় এগুলো ভয় দেখানোর জন্যে করা হয়, কিন্তু মনে হচ্ছে এটা শুধু ভয় দেখানোর জন্যে নয়। মারপিট করার আগে অবস্থাটা একটু বুঝে দেখতে হয়, আমি আশেপাশে তাকালাম। ক্লাসের প্রায় সবাই মজা। দেখার জন্যে দাঁড়িয়ে আছে। মারপিট দেখার মতো মজার ব্যাপার কী হতে পারে? আমিও খুব শখ করে দেখি। শুরু হওয়ার পর কেউ কারো পক্ষ নেবে কি না সেটা হচ্ছে বড় কথা। মনে হয় নেবে না, সাধারণত নেয় না। চশমা-পরা ফর্সা ছেলেটা দেখে মনে হয় না সে মারপিট করার মতো ছেলে, একটা কোঁৎকা খেলে সিধে হয়ে যাবে।

    লিটন আবার বুকে ধাক্কা দিয়ে বলল, শালা।

    আমি লিটনের বুকে ধাক্কাটা ফেরত দিয়ে বললাম, গালিগালাজ করবে না।

    রলে কী করবি?

    তুই তুই করে কথা বলবে না।

    এক শ’বার বলব। তুই তুই তুই—

    মারপিট করতে চাও?

    কান ধরে দশবার ওঠবোস কর, তা হলে ছেড়ে দেব।

    তার মানে আসলেই মারপিট করতে চায়। নূতন স্কুলে নূতন ক্লাসে প্রথম দিনে এসেই মারপিট করাটা ঠিক হচ্ছে না, কিন্তু সবই কপাল। আমি বললাম, আয় তাহলে।

    লিটন একটু পিছনে সরে গিয়ে দুই হাত উপরে তুলে দাঁড়াল, তারপর কেমন একটু বিচিত্রভাবে আস্তে আস্তে শরীরটাকে নাড়াতে শুরু করল। দেখে মনে হল মারপিট করার ব্যাপারটা খুব ভালো জানে, এই লাইনে নুতন আমদানি না। বলল, আয় শালার বাটা।

    আমি বললাম, তুই আয়।

    লিটন বলল, সাহস থাকলে তুই আয়।

    আমার সাহসের অভাব নেই, কিন্তু প্রথমে আমি তার গায়ে হাত তুলতে চাই না, সেটা ঠিক না। ব্যাপারটা যখন বড়দের সামনে যাবে, তখন কে শুরু করেছে সেটা নিয়ে খুব হৈ চৈ হবে। আমি বললাম, আয় দেখি তোর কত সাহস।

    লিটনও এগিয়ে এল না, মারপিটের নিয়মকানুন সেও জানে। বলল, আয় দেখি শালার ব্যাটা। সাহস না থাকলে তোর বাপকে নিয়ে আয়।

    আমাকে রাগানোর চেষ্টা করছে। আমাকে রাগানো এত সোজা নয়, কিন্তু বাবাকে টেনে কথা বললে ভিন্ন কথা। আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেল, চিৎকার করে বললাম, খবরদার, বাবাকে নিয়ে কথা বলবি না।

    আমি লিটনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। তারপর যেটা হল আমি সেটার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম না। লিটন ম্যাজিকের মতো সরে গেল, শুধু তাই না, শুন্যে উঠে এক পাক ঘুরে গেল, তারপর কিছু বোঝার আগে পা ঘুরিয়ে আমার মুখের উপর প্রচণ্ড জোরে একটা লাথি মেরে বসল। আমি চোখে অন্ধকার দেখলাম, মাথা ঘুরে উল্টে পড়ে যাচ্ছিলাম, নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম, পারলাম না। একটা বেঞ্চের মাঝে মাথা ঠুকে গেল, তারপর প্রচণ্ড শব্দ করে মেঝের উপর আছড়ে পড়লাম।

    দাঁত দিয়ে জিব কেটে গেছে। মুখের রক্তের নোনা স্বাদ পাচ্ছি।

    কোনোমতে উঠে দাঁড়াতেই লিটন আবার শূন্যে ঘুরে গিয়ে পা দিয়ে আমার মুখে লাথি মারার চেষ্টা করল, সতর্ক ছিলাম বলে কোনোমতে মাথাটা কাটালাম, কিন্তু লাথিটা এসে লাগল বুকে। আমি একেবারে কাটা কলাগাছের মতো মেঝেতে আছড়ে পড়লাম।

    নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না, মনে হল বুঝি মরেই যাব। কিন্তু আমি মরলাম না–অপমান সহ্য করার জন্যে মানুষকে মনে হয় বেঁচে থাকতে হয়।

    লিটন আমার উপর ঝুকে পড়ে আমার মুখের উপর থুতু দিয়ে বলল, এবারে ছেড়ে দিলাম। পরের বার জান শেষ করে দেব। জান না শালা তুমি কার সাথে লাগতে এসেছ?

    আমি কোনোমতে ওঠার চেষ্টা করলাম, পারলাম না। লিটন আমার সামনে দাঁড়িয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল, তোরা সাক্ষী। কে আগে শুরু করেছে?

    কেউ কিছু বলল না।

    কে শুরু করেছে?

    তবু কেউ কোনো কথা বলল না। ফর্সা মতন চশমা-পরা ছেলেটা আমাকে দেখিয়ে বলল, এই বুদ্ধ।

    লিটন একগাল হেসে বলল, হ্যাঁ, এই বুদ্ধ। যেরকম বুদ্ধি সেরকম শাস্তি।

    তারপর অনেকটা সেনাপতির মতন ভাব করে ক্লাসঘর থেকে বের হয়ে গেল। সাথে আরো কয়েকজন।

     

    ক্লাসে আমার পাশে যে ছেলেটি বসেছিল, সে আমাকে টেনে তুলে বলল, তোমাকে বলেছিলাম না লিটন ব্ল্যাক বেল্ট। এখন বুঝেছ?

    আমি খানিকটা বুঝতে পারলাম। বইপত্রে জুজুৎসুর যে গল্প পড়েছি, সেরকম কিছু-একটা। গল্প পড়েছিলাম, সত্যি যে হতে পারে সেটা কখনো চিন্তা করি নি।

    ছেলেটা বলল, তোমার কপালে আজ অনেক দুঃখ আছে।

    আমি কিছু বললাম না, ছেলেটা আবার বলল, লিটন আমাদের ফার্স্ট বয়। তোমার কত বড় সাহস যে লিটনের সাথে মারপিট করতে গেছ?

    ফার্স্ট বয়? আমি অবাক হলাম। এরকম আগে কখনো দেখি নি, গুণ্ডাধরনের ছেলেদের সাধারণত পাস করা নিয়েই সমসা হয়।

    হ্যাঁ। তোমার কপালে অনেক দুঃখ আছে।

    আমার মাথাটা তখনো হালকা হালকা লাগছে। কপালে দুঃখ আছে কি নেই সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো অবস্থা নেই। মেঝেতে রক্ত-মেশানো খানিক থুতু ফেলে

    বললাম, তোমরা সবাই লিটনের মতো?

    ছেলেটা আমার দিকে অপরাধীর মতো তাকাল, তারপর আস্তে আস্তে বলল, না, আমরা সবাই লিটনের মতো না। কেন?

    না, এমনি জানতে চাইলাম। লিটন হচ্ছে ডেঞ্জামাইস।

    কি?

    ডেঞ্জামাইস। ডেঞ্জারাস এবং বদমাইশ। লিটনকে একদিন টাইট করবে ব্ল্যাক মার্ডার দল।

    কে?

    ব্ল্যাক মার্ডার। আমাদের একটা টপ সিক্রেট দল। ভেরি টপ সিক্রেট। এই জন্যে তোমাকে বলা যাবে না।

    ও। আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সাবধানে দু’এক পা হাঁটলাম। বাথরুমে গিয়ে মুখ ধুতে হবে, মুখে লিটনের থুতু। গা ঘিনঘিন করছে।

    ব্ল্যাক মার্ডারের সদস্য ছেলেটি আমার সাথে হাঁটতে থাকে, আমাকে বাথরুমটি দেখিয়ে দেবে। ছেলেটির মনটি বড় নরম, ব্ল্যাক মার্ডারের মতো একটা দলের সদস্য কেমন করে হল কে জানে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নাম কি?

    আমার নাম? তারিকুল ইসলাম। তারিক ডাকে সবাই।

    ক্লাসের প্রথম ছেলেটির সাথে আমার বন্ধুত্ব শুরু হল।

     

    ক্লাসের ঘন্টা পড়ে গেছে। আমি আমার নিজের জায়গায় বসেছি। মুখটা খারাপভাবে ফুলে গেছে, ভিতরে কোথায় জানি কেটে গেছে। প্রচণ্ড ব্যথা করছে, কিন্তু সে জন্যে আমার যন্ত্রণা হচ্ছে না। আমার যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ভিতরে। রাগে দুঃখে অপমানে ভিতরটা একেবারে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে আমার। তারিক আমাকে একনজর দেখে বলল,

    তোমার কপালে দুঃখ আছে আজকে।

    এই নিয়ে কথাটি সে মনে হয় দুই শ’ বার বলে ফেলেছে। আমি কোনো উত্তর দিলাম না।

    তারিক আবার বলল, এখন ভূগোল ক্লাস। ভূগোল স্যারের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ইচ্ছে লিটন।

    আমি কিছু বললাম না। তারিক আবার বলল, ভূগোল স্যারের সবচেয়ে প্রিয় খেলা কারাটে।

    আমি তখনো কিছু বললাম না। তারিক ফিসফিস করে বলল ভুগোল সার যখন আসবে তখন লিটন স্যারকে বলবে যে তুমি তার সাথে মারপিট করতে গেছ। সার তখন ব্রেগে আগুন হয়ে যাবে। ভুগোল স্যার একবার রাগলে একেবারে সর্বনাশ।

    আমি তখনো কিছু বললাম না। তারিক বলল, লিটন হচ্ছে ভূগোল স্যারের দিলের টুকরা। স্যার তখন তোমাকে হেড স্যারের কাছে পাঠাবেন। তারপর তোমার বাসায় চিঠি যাবে। তোমার এখন ডেপ। ডেঞ্জারাস বিপদ। বাসায় এখন চিঠি যাবে।

    আমি বললাম, গেলে যাবে। আমি সব ছেড়েছুড়ে বাড়ি চলে যাব। থাকব না এখানে।

    আমার চোখে পানি এসে গেল হঠাৎ। তারিককে না দেখিয়ে চোখ মোছার চেষ্টা করলাম, তারিক তবু দেখে ফেলল। জিব দিয়ে চুকচুক করে শব্দ করে আস্তে আস্তে বলল, কী ডেজুপদ! তোমার কপালে অনেক দুঃখ আজ।

     

    কিন্তু দেখা গেল সেদিন আমার কপালে আর নুতন কোনো দুঃখ ছিল না। ভূগোল স্যার আসেন নি বলে ক্লাস নিতে এলেন আমাদের সকালের ক্লাস টিচার। ক্লাসে ঢুকে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বললেন, পৃথিবীটা যদি চ্যাপ্টা হত তাহলে কী হত, বল্ দেখি?

    লিটন বলল, কেমন করে হবে, স্যার? মাধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্য–

    স্যার লিটনকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, পৃথিবীটা গোল, সে জন্যে আমরা পড়ি ভূগোল। পৃথিবীটা যদি চ্যাপ্টা হত তাহলে আমরা পড়তাম ভূ-চ্যাপ্টা।

    সারা ক্লাস হো হো করে হেসে উঠল আর ঠিক তখন স্যার আমাকে দেখতে পেলেন। সাথে সাথে স্যার উঠে দাঁড়ালেন, তারপর লম্বা পা ফেলে আমার কাছে হেঁটে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে তোর? কী হয়েছে?

    আমি লজ্জায় মাথা নিচু করলাম।

    স্যার শক্ত হাতে আমার মুখ ঘুরিয়ে, আমাকে দেখলেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে, তারপর ক্লাসের দিকে তাকিয়ে থমথমে গলায় বললেন, একে কে মেরেছে এভাবে?

    কেউ কোনো কথা বলল না। স্যার হঠাৎ এত জোরে চিৎকার করে উঠলেন যে মনে হল ক্লাসের ছাদ বুঝি ভেঙে উড়ে যাবে, কে মেরেছে?

    পুরো ক্লাস কেঁপে উঠল। লিটন ফ্যাকাসে মুখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমাকে মারতে এসেছিল, স্যার। আপনি জিজ্ঞেস করে দেখেন

    সার লিটনের কোনো কথা শুনতে পেলেন বলে মনে হল না। পায়ে পায়ে লিটনের দিকে এগিয়ে গেলেন, চুলের মুঠি ধরে মুখটা ঘুরিয়ে নিলেন নিজের দিকে, তারপর স্থির চোখে তাকালেন তার দিকে।

    লিটন কেমন জানি কুঁকড়ে গেল সেই ভয়ংকর দৃষ্টির সামনে, চোখ সরানোর সাহস নেই, ভয়ংকর আতঙ্কে সে তাকিয়ে রইল স্যারের দিকে।

    ক্লাসে কোনো পড়াশোনা হল না। স্যার একটি কথা না বলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন। ক্লাসের ছেলেরা একটা টু শব্দ করার সাহস পেল না, চুপচাপ নিঃশ্বাস বন্ধ করে বসে রইল নিজের জায়গায়।

    ঘণ্টা পড়ার পর বের হয়ে যেতে যেতে থেমে গিয়ে স্যার বললেন, বড় দুঃখ পেলাম রে আমি আজ। মূতন একটা ছেলে তোদের ক্লাসে প্রথম দিনেই এত কষ্ট পেল, তোরা কেউ কিছু করলি না।

    আমার চোখে পানি এসে গেল হঠাৎ। এরকম একজন মানুষ যদি থাকে তাহলে আমার দুঃখ কি? ছেড়েছুড়ে যাব না আমি, থাকব এখানে। লিটনের মতো দানব আছে সত্যি, কিন্তু তারিকের মতো বন্ধুও তো আছে, স্যারের মতো মানুষও তো আছে, যার হৃদয়টা ঠিক আমার বাবার মতো।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }