Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৭. মহাকাশের প্রাণী

    ০৭. মহাকাশের প্রাণী

    ক্লাসে ঢুকেই স্যার পকেট থেকে একটা খবরের কাগজ বের করে বললেন, কে কে আজ খবরের কাগজ পড়েছে?

    দেখা গেল কেউ পড়ে নি। লিটন বলল, কাগজে শুধু রাজনীতির খবর থাকে, স্যার, তাই পড়তে ইচ্ছা করে না।

    স্যার বললেন, যে-খবরই থাকুক, খবরের কাগজ পড়তে হয়। স্যার জোরে জোরে পড়লেন, মহাকাশের আগন্তক।

    আমি লাফিয়ে উঠে বললাম, রেডিওতে শুনেছি স্যার এটা আমি! এটা কি সত্যি?

    স্যার মাথা নেড়ে বললেন, মনে তো হচ্ছে সত্যি!

    অন্য সব ছেলেরা তখন কৌতূহলী হয়ে উঠেছে, স্যার তাই পুরো খবরটা পড়ে শশানালেন। আমি রেডিওতে যেটা শুনেছি মোটামুটি সেই খবরটাই, তবে খুঁটিনাটি আরো কিছু বর্ণনা আছে। আমেরিকার এক মানমন্দিরের ডিরেক্টরের কথা আছে, অস্ট্রেলিয়ার একজন মহাকাশবিজ্ঞানীর কথা আছে। সবাই বলেছে যে তারা মোটামুটি নিঃসন্দেহ যে সত্যি একটি রহস্যময় মহাকাশযান পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরছিল। তার সাথে নাকি যোগাযোগও করা হয়েছিল। মহাকাশযানটি দেখার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে, বেশ কয়েকটি কত্রিম উপগ্রহ থেকে চেষ্টা করা হয়েছে রাডার দিয়ে চেষ্টা করা। হয়েছে, পৃথিবীর সব টেলিস্কোপ দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু কোনো লাভ হয় নি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মহাকাশযানটি পৃথিবীতে নামার চেষ্টা করেছিল, হয়তো ঠিকমতো নামতে পারে নি, হতে পারে কোনোভাবে বিধ্বস্ত হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে পড়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা যে–এলাকায় সেটা বিধ্বস্ত হয়েছে বলে মনে করছেন, তার মাঝে বাংলাদেশ, বার্মা, ভিয়েতনাম, প্রশান্ত মহাসাগর, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল রয়েছে। পুরো এলাকায় খুব খোঁজাখুজি হচ্ছে। আশ্চর্যজনক কিছু দেখলে সাথে সাথে কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা বলা হয়েছে।

    সারা ক্লাস খুব উত্তেজিত হয়ে গেল। স্যার পায়চারি করতে করতে বললেন, চিন্তা করতে পারিস, যদি সত্যি সত্যি অন্য একটা গ্রহ থেকে একটা প্রাণী এসে হাজির হয় তাহলে কী মজাটাই হবে? দেখতে কেমন হবে বলে মনে হয় তোদের?

    লিটন বলল, আমি সেদিন একটা সিনেমা দেখেছিলাম, স্যার। সেখানে দেখিয়েছিল, দেখতে খুব ভয়ঙ্কর।

    স্যার বললেন, সিনেমা তো গাঁজাখুরি, আসলে কেমন হবে?

    আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, আমি একটা বইয়ে পড়েছিলাম, বুদ্ধিমান প্রাণীরা দেখতে নাকি মানুষের মতনই হওয়ার কথা। বড় একটা মগজ থাকবে তার কাছাকাছি থাকবে চোখ, দূরত্ব বোঝার জন্যে সবসময় হতে হবে দুটো চোখ–

    হাত?

    আমি মাথা চুলকে বললাম, সেটা কিছু বলে নি। কিন্তু কিছু ধরার জন্য আঙুল না হয় গুড় থাকতে হবে।

    স্যার মাথা নাড়লেন, ঠিকই বলেছিস। কোন গ্রহ থেকে আসছে তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করবে। সেই গ্রহ কত বড়, মাধ্যাকর্ষণ বল কত বেশি, বাতাস আছে কি নেই, থাকলে কি কি গ্যাস আছে, এইসব। কী মনে হয় তোদের? প্রাণীটা কি হাসিখুশি হবে, নাকি বদরাগী?

    লিটন বলল, বদরাগী হবে, স্যার। মহাকাশের প্রাণী সবসময় খুব ডেঞ্জারাস হয়। সবকিছু ধ্বংস করে ফেলে। টিভিতে একটা সিনেমা দেখিয়েছিল—

    স্যার বললেন, ধুর। সিনেমা সবসময় গাঁজাখুরি হয়। আমার মনে হয় প্রাণীটা হবে খুব মিশুক। কদুর থেকে পন্ধিবীতে বেড়াতে এসেছে ভেবে দেখ। সে যদি মিশুক না হয় তাহলে কে মিশুক হবে?

    পুরো ক্লাস স্যারের সাথে একমত হল। স্যার খানিকক্ষণ হেঁটে আবার বললেন, তারপর চিন্তা করে দেখ, পৃথিবীটা কত সুন্দর, সেই মহাকাশের প্রাণী দেখে একেবারে মুগ্ধ হয়ে যাবে। পৃথিবীর মানুষের সাথে যখন তার পরিচয় হবে তখন মনে হয় সে পৃথিবী ছেড়ে যেতেই চাইবে না। কী বলিস তোরা?

    আমরা সবাই জোরে জোরে মাথা নাড়লাম। স্যার বাচ্চা মানুষের মতো ছটফট করতে করতে বললেন, কিন্তু মহাকাশযানটাকে দেখা যাচ্ছে না কেন? বিজ্ঞানীরা সেটাকে দেখতে পেল না কেন?

    লিটন বলল, আমি একটা বইয়ে পড়েছি, বোমা ফেলার জন্যে প্লেন তৈরি করেছে যেটা নাকি রাডারে দেখা যায় না। সেরকম কিছু–

    স্যার চিন্তিতভাবে মাথা নাড়লেন, কিন্তু সেটা তো যুদ্ধ করার প্লেন। মহাকাশের একটা প্রাণী কি যুদ্ধ করতে আসবে?

    লিটন বলল, আমি যে সিনেমাটা দেখেছি—

    তারিক বাধা দিয়ে বলল, কিন্তু টেলিস্কোপ দিয়েও তো দেখতে পারে নাই।

    স্যার মাথা নাড়লেন, তা ঠিক। তা ঠিক।

    মাহবুব বলল, অদৃশ্য কোনো জিনিস দিয়ে হয়তো তৈরি।

    অদৃশ্য জিনিস তো কিছু নেই, স্যার মাথা নাড়লেন, যেখান থেকেই আসুক সেটা তৈরি হতে হবে একই জিনিস দিয়ে, যে-এক শ’ চারটা মৌলিক পদার্থ আছে, তার বাইরে তো কিছু থাকতে পারে না।

    ক্লাসে সবচেয়ে যে কম কথা বলে, সুব্রত, আস্তে আস্তে বলল, এমন কি হতে পারে যে মহাকাশের প্রাণী সাইজে অনেক ছোট হয়, পিঁপড়ার মতো, কিংবা আরো ছোট, যে খালিচোখে দেখা যায় না?

    সারা ক্লাস হো হো করে হেসে উঠল। স্যার নিজেও হাসতে হাসতে ধমক দিলেন সবাইকে, হাসছিস কেন তোরা বোকার মতো? হাসছিস কেন? ছোট তো হতেই পারে—

    হাসতে হাসতে হঠাৎ আমি ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো করে চমকে উঠলাম। আমার সেই বিচিত্র পোকাটার কথা মনে পড়ল আর হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম সুব্রত ঠিকই বলেছে, বিজ্ঞানীরা সেটাকে দেখতে পায় নি, কারণ সেটা অনেক ছোট, আমি সেটাকে পেয়েছি, পেয়ে হোমিওপ্যাথিক শিশির মাঝে আটকে রেখেছি।

    চিৎকার করে আমি প্রায় লাফিয়ে উঠছিলাম, অনেক কষ্ট করে নিজেকে শান্ত করলাম। স্যার একটু অবাক হয়ে বললেন, কি রে বিলু, কিছু বলবি?

    না না না, স্যার। আমি আমতা আমতা করে বললাম, ইয়ে, মানে—বলছিলাম, মহাকাশের প্রাণী তো ছোট হতে পারে। পারে না, স্যার?

    পারবে না কেন? অবশ্যি পারে। সব প্রাণীরই যে আমাদের মতো সাইজ হতে হবে কে বলেছে? ডাইনোলোর কত বড় ছিল, জীবাণু কত ছোট। কাজেই একটা প্রাণীকে কত বড় হতে হবে তার তো কোনো নিয়ম নেই।

    স্যার আরো কি কি বললেন, কিন্তু আমি কিছু শুনছিলাম না। আমার বুকের মাঝে হৃৎপিণ্ডে ঢাকের মতো শব্দ করছে, উত্তেজনায় নিঃশ্বাস নিতে পারছি না, হাত অল্প অল্প কাঁপছে। আমি সত্যিই কি মহাকাশের সেই প্রাণীটাকে ধরেছি?

     

    বাসায় গিয়ে সেই প্রাণীটাকে আবার দেখতে হবে, কিন্তু স্কুল ছুটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারছিলাম না, তাই অঙ্ক ক্লাসে পেট চেপে কোঁ কোঁ করে স্যারকে বললাম, খুব পেটব্যথা করছে সার, বাসায় যেতে হবে এক্ষুণি।

    অঙ্ক-স্যার যে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করেন জানতাম না। সকালে কি খেয়েছি, রাতে কি খেয়েছি, দাস্ত হয়েছে কি না, বাহ্যি হয়েছে কি না এইসব একগাদা প্রশ্ন করে দুই দানা আন্টিমনি সিক্স হানড্রেড খাইয়ে বেঞ্চে শুইয়ে রাখলেন। স্যার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করেন আর পকেটে নানারকম ওষুধ নিয়ে ঘুরে বেড়ান জানলে কখনোই সারকে পেটব্যথার কথা বলতাম না! শক্ত বেঞ্চে শুয়ে থাকা আরামের কিছু ব্যাপার নয়, তাই একটু পরে বললাম যে আমার পেটব্যথা কমে গেছে। শুনে অজ্ঞ স্যারের মুখে কী হাসি।

     

    বিকেলে বাসায় এসে আমি দৌড়ে আমার ঘরে গেলাম। বালিশের নিচে হোমিওপ্যাথিক শিশিতে সেই পোকাটি রেখেছিলাম যেটা হয়তো আসলে মহাকাশের সেই রহস্যময় প্রাণী। আমি সাবধানে সেই শিশিটা হাতে নিলাম, এক কোনায় কালো বিন্দুর মতো সেই জিনিসটি। আমি আস্তে আস্তে শিশিতে একটা টোকা দিলাম, সাথে সাথে ঝিঁঝি পোকার মতো একটা শব্দ হল, তারপর ভিতর থেকে কে যেন ক্ষীণ স্বরে বলল, সাবধান।

    উত্তেজনায় আমার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা হল। ম্যাগনিফাইং গ্লাসটা বের করে ভালো করে সেটাকে দেখার চেষ্টা করলাম, অবিশ্বাস্য রকম জটিল একটা যন্ত্র। তার ভিতর থেকে একটা ফুটো দিয়ে মাথা বের করে একটি অত্যন্ত ছোট। প্রাণী আমার দিকে তাকিয়ে আছে, সত্যি সত্যি একটা বড় মাথা আর দুটি চোখ। বুদ্ধিমান প্রাণীর যে-রকম থাকার কথা। আমি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কে?

    প্রাণীটি খানিকক্ষণ ঝিঁঝি পোকার মতো শব্দ করল, তারপর বলল তুমি কে?

    আমি বিলু।

    বিলু। বিলু দায়িত্বহীন হোমাস্যাপিয়েন।

    হোমোস্যাপিয়েন মানে মানুষ, প্রাণীটি আমাকে দায়িত্বহীন মানুষ বলছে, আমি নিশ্চয়ই কিছু-একটা কাজ খুব ভুল করেছি। ঢোক গিলে বললাম, আমি আসলে তোমার কোনো ক্ষতি করতে চাই নি, আমি তোমাকে সাহাযা করতে চাই

    ঠিক তখন ছোট খালা ঘরে উঁকি দিলেন, আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কার সাথে কথা বলছিস রে, বিলু?

    আমি চট করে শিশিটা বালিশের নিচে লুকিয়ে ফেললাম, কিন্তু কোনো লাভ হল না, প্রাণীটা তারস্বরে চেঁচাতে লাগল, দায়িত্বহীন হোমোস্যাপিয়েন। দায়িত্বহীন হোমোস্যাপিয়েন!!

    ছোট খালা প্রাণীটির কথা শুনতে পেলেন বলে মনে হল না, আমাকে আবার জিজ্ঞেস করলেন, কার সাথে কথা বলছিলি?

    আমি আমতা আমতা করে বললাম, কারো সাথে না, ছোট খালা।

    প্রাণীটা তখনও চিৎকার করছে, দায়িত্বহীন হোমাস্যাপিয়েন।

    ছোট খালা মনে হল কিছু-একটা শুনলেন, ঘরে মাথা ঢুকিয়ে বললেন, ঘরে ঝিঁঝি পোকা ডাকছে?

    আমি ঢোক গিলে বললাম, হ্যাঁ।

    ছোট খালা খানিকক্ষণ ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনে আমার দিকে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে চলে গেলেন। আমি তখন আর শিশিটা বের করার সাহস পেলাম না। পুরো ব্যাপারটা নিয়ে খুব সাবধানে অগ্রসর হতে হবে। খুব সাবধানে।

     

    রাতে খাবার টেবিলে আমি ছোট খালুকে জিজ্ঞেস করলাম, খালু, কেউ যদি মহাকাশের সেই প্রাণীকে দেখতে পায় তাহলে তার কী করা উচিত?

    খালু অবাক হয়ে বললেন, মহাকাশের কী প্রাণী?

    আমি বললাম, খবরের কাগজে যে উঠেছে।

    কী উঠেছে?

    আমি খবরটা বললাম, ছোট খালু খবরটাকে মোটেও গুরুত্ব দিলেন না। হাত নেড়ে বললেন, ধুর, সব লোকঠকানোর ফন্দি। খবরের কাগজ বিক্রি করার জন্যে যত সব গাঁজাখুরি গল্প।

    কিন্তু যদি সত্যি হয় তাহলে কার সাথে যোগাযোগ করবে?

    সত্যি হবে না। যদি হয়?

    ছোট খালু একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন, তারপর ইতস্তত করে বললেন, পুলিশকে নিশ্চয়ই।

     

    সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর আমি বালিশের নিচে থেকে ছোট শিশিটা বের করলাম, ভিতর থেকে একটা হালকা নীল আলো বের হচ্ছে। কাছে মুখ নিয়ে বললাম, হে মহাকাশের আগন্তুক।

    ঝিঁঝি পোকার মতো একটা শব্দ হল, তারপর শুনলাম সেটি বলল, বিলু। দায়িত্বহীন হোমোস্যাপিয়েন।

    প্রাণীটা আবার আমাকে গালি দিচ্ছে, আমার এত খারাপ লাগল যে বলার নয়। ধতমত খেয়ে বললাম, আমি আসলে বুঝতে পারি নি, একেবারেই বুঝতে পারি নি–

    ঝিঁঝি পোকার মতো একটা শব্দ হল, তারপর একটা কাতর শব্দ করল প্রাণীটা, বলল, বিপদ, মহাবিপদ, আটানব্বই দশমিক তিন চার বিপদ–

    কার বিপদ?

    আমার।

    কী বিপদ?

    প্রাণীটা কোনো কথা না বলে বিবি পোকার মতো শব্দ করতে স্বাক। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, কী বিপদ? কী হয়েছে?

    প্রাণীটা কোনো উত্তর দিল না, ঝিঁঝি পোকার মতো শব্দ করতে থাকল। আমার মনে হল শব্দটা আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে আসছে। প্রাণীটা যদি মরে যায় তখন কী হবে?

    আমার তখন এই প্রাণীটার জন্যে এত মন-খারাপ হয়ে গেল, বলার নয়। আহা বেচারা, না-জানি কোন দূর-দূরান্তের এক গ্রহ থেকে এসে এখানে কী বিপদে পড়েছে। কি বিপদ বলতেও পারছে না। বাংলা যে বলতে পারে সেটাও একটা আশ্চর্য ব্যাপার। মানুষের মতো কথা বলে না, অন্যরকমভাবে বলে, তাই সবাই শুনে বুঝতে পারে না। ছোট খালা যেরকম বোঝেন নি। এখন এত দুর্বল হয়ে গেছে যে আর কথাও বলতে পারছে না। কী করা যায় আমি চিন্তা করে পেলাম না। ছোট খালুকে কি ডেকে তুলে বলব? কিন্তু কী বলব? মহাকাশের প্রাণী একটা হোমিওপ্যাথিক শিশিতে অসুস্থ হয়ে আছে? একজন ডাক্তার ডাকা দরকার? হোট খালু তো বিশ্বাসই করবেন না। স্যারকে বলতে পারলে হত, কিন্তু এই মাঝরাতে স্যারকে আমি কোথায় পাব?

    আমি অনেকক্ষণ বসে বসে চিন্তা করলাম। প্রাণীটাকে যখন পেয়েছি তখন সেটাকে ঘির ছিল অসংখ্য পিঁপড়া। পিঁপড়াগুলো মনে হচ্ছিল প্রাণীটাকে কোনোভাবে সাহায্য করছিল। প্রাণীটা যদি আমার সাথে কথা বলতে পারে, নিশ্চয়ই তাহলে পিঁপড়াদের সাথেও কোননারকম কথা বলতে পারে। মানুষের মতো পিঁপড়াদের এত বুদ্ধি নেই, তাদের সাথে কথা বলা হয়তো আরো সহজ। আমি আবার যদি প্রাণীটাকে পিঁপড়াদের মাঝে ছেড়ে দিই, তাহলে কি কোনো লাভ হবে?

    কোনো ক্ষতি তো আর হতে পারে না।

    আমি খুঁজে খুঁজে কয়েকটা পিঁপড়া বের করে শিশিটার কাছে এনে ছেড়ে দিলাম। পিঁপড়াগুলো সাথে সাথে শিশিটাকে ঘিরে ঘুরতে শুরু করল, আর কী অবাক কাণ্ড, কিছুক্ষণের মাঝে দেখি পিঁপড়ার একটা সারি শিশিটার দিকে এগিয়ে আসছে। শিশিটাকে গোল হয়ে ঘিরে পিঁপড়াগুলো দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপ।

    ভিতর থেকে আবার ঝিঁঝি পোকার মতো শব্দ হতে থাকে, শব্দটি আগের থেকে অনেক দুর্বল। আমি সাবধানে শিশিটার মুখ খুলে দিলাম, সাথে সাথে একটা পিঁপড়া ভিতরে ঢুকে গেল। সেটা বের হয়ে এল একটু পরে, তখন আরেকটা পিঁপড়া ভিতরে গিয়ে ঢুকল। সেটা বের হয়ে এলে আরেকটা। পিঁপড়াদের মাঝে একটা উত্তেজনা, ছুটে যাচ্ছে ছুটে আসছে, মুখে করে কিছু-একটা আনছে, কিছু-একটা নিয়ে যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি।

     

    আমি নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ চমকে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। ঝিঁঝি পোকার মতো শব্দটা অনেক বেড়েছে। আমি শিশিটার ভিতরে তাকালাম, সেখানে কিছু নেই। শব্দটা কোথা থেকে আসছে দেখার জন্যে আমি এদিকে-সেদিকে তাকালাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা নীল আলো ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ করে সেটা আমার দিকে এগিয়ে এসে ঠিক নাকের কাছাকাছি থেমে গেল, শুনলাম সেটা বলল, মস্তিষ্কের কম্পন স্তিমিত, শারীরিক নিয়ন্ত্রণ লুপ্ত–।

    আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম?

    হ্যাঁ।

    সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় সময়ের অপচয়। সময়ের অপচয়—

    জিনিসটা ঘুরপাক খেয়ে উপরে উঠে গিয়ে আবার নিচে নেমে এল। বলল, বুদ্ধিমত্তার হার শতকরা চুয়াল্লিশ দশমিক তিন।

    কার?

    তোমার।

    সেটা ভালো না খারাপ?

    ভালো? খারাপ? ভালো খারাপ জিনিসটা উত্তর না দিয়ে আবার ঘুরপাক খেতে থাকে। মনে হচ্ছে এর সাথে কথাবার্তা চালানো খুব সহজ নয়। কিন্তু যে-বিপদের কথা বলছিল সেটা মনে হয় কেটে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার মহাবিপদ হয়েছিল বলেছিলে, সেটা কেটেছে?

    চল্লিশ দশমিক চার।

    সেটা কম না বেশি?

    কম? বেশি? কম বেশি? জিনিসটা উপরে-নিচে করতে থাকে।

    আমি হাল ছাড়লাম না, জিজ্ঞেস করলাম, পিঁপড়াগুলো কি তোমাকে সাহায্য করতে পেরেছে?

    লৌহ তাম্ৰ কোবাল্ট এবং অ্যান্টিমনি।

    এগুলো এনে দিয়েছে?

    বাস্তবিক। স্বর্ণ কিংবা প্রাটিনাম চাই। স্বর্ণ। স্বর্ণ।

    সোনা দরকার তোমার?

    বাস্তবিক।

    সোনা না হলে কী হবে?

    গতিবেগ রুদ্ধ।

    কার গতিবেগ রুদ্ধ?

    মহাকাশযানের।

    কতটুকু দরকার?

    ছয় দশমিক তিন মিলিগ্রাম। সেটা কতটুকু?

    ছয় দশমিক তিন—ছয় দশমিক তিন—বলে জিনিসটা আবার ঘুরপাক খেতে থাকে। ছয় দশমিক তিন মিলিগ্রাম সোনা খুব বেশি নয়, কিন্তু যত কমই হোক, সোনা। আমি কোথায় পাব? আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কোথা থেকে এসেছ?

    এন্ড্রোমিড। এন্ড্রোমিডা!

    আমি অবাক হয়ে বললাম, এন্ড্রোমিডা নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে? সত্যি?

    সত্যি? সত্যি? সত্যি?

    সে তো অনেক দূরে। কেমন করে এলে?

    স্পেস টাইম সংকোচনের অস্থিতিশীল অবস্থায় মূল কম্পনের চতুর্থ পর্যায়ের সর্বশেষ বিফোরণের ফলে যে সময় পরিভ্রমণের ক্রান্তিধারা হয় তার দ্বিতীয় পর্যায়ে……

    আমি হাত তুলে থামালাম, তুমি একা এসেছ?

    একা? একা? একা?

    কতদিন থাকবে তুমি?

    স্বর্ণ স্বৰ্ণ স্বর্ণ চাই। ছয় দশমিক তিন মিলিগ্রাম স্বর্ণ চাই। আমার গতিবেগ রুদ্ধ।

    ঠিক এই সময়ে দরজা খুলে ছোট খালা মাথা ঢোকালেন। বললেন, বিলু–

    আমি ভীষণ চমকে উঠলাম, ছোট খালা?

    এত রাতে জেগে একা একা কথা বলছিস কেন?

    আমি মানে ইয়ে মানে আমি থতমত খেয়ে থেমে গেলাম। ছোট খালা ভুরু কুঁচকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে, তারপর বললেন, অনেক রাত হয়েছে, ঘুমা।

    আমি তাড়াতাড়ি মশারি ফেলে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ছোট খালা বাতি নিভিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেলেন। সাথে সাথে ঘরের কোনা থেকে জিনিসটি বের হয়ে এল, বলল, বিভ্রাম্ভ হোমোস্যাপিয়েন।

    আমি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নাম কি?

    নাম? নাম? নাম?

    হ্যাঁ, নাম।

    সাত তিন আট দশমিক চার চার দুই মাত্রা সাত নয় উল্টো মাত্র ছয় ছয় পাঁচ–

    এটা তো নাম হতে পারে না। নাম হতে হবে ছোট।

    ছোট?

    হ্যাঁ, ছোট।

    জিনিসটা এবার অদ্ভুত একটা শব্দ করল। হাঁচি আটকে রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে হঠাৎ হাঁচি বের হয়ে গেলে নাক এবং মুখ দিয়ে যেরকম অদ্ভুত একটা শব্দ বের হয়, শব্দটা অনেকটা সেরকম। আমি দু’বার সেটা অনুকরণ করার চেষ্টা করলাম, কোনো লাভ হল না। বললাম, তোমাকে অন্য একটা নাম দিই, যেটা ডাকা যায়?

    অনা নাম? নূতন নাম?

    হ্যাঁ। তুমি যখন ছোট, তাই ছোট একটা নাম। ছোটন কিংবা টুকুন।

    টুকুন? টুকুন? জিনিসটি ঝিঁঝি পোকার মতো শব্দ করতে শুরু করল।

    হ্যাঁ, তুমি যদি চাও তাহলে টুকুন ঝিঁঝি হতে পারে। কিংবা টুকুনজিল–

    টুকুনজিল টুকুনজিল টুকুনজিল জিনিসটা আমার মশারির চারদিকে ঘুরতে থাকে। আমার মনে হয় নামটা তার পছন্দ হয়েছে।

    ঠিক আছে, তা হলে তোমার নাম হোক টুকুনজিল।

    টুকুনজিল হঠাৎ থেমে গিয়ে বলল, বিভ্রান্ত হোমোস্যাপিয়েন।

    বিভ্রান্ত কে?

    বিভ্রান্ত এবং আতঙ্কিত হোমোস্যাপিয়েন।

    আতঙ্কিত কে?

    বিভ্রান্ত এবং আতঙ্কিত এবং স্তম্ভিত হোমোস্যাপিয়েন।

    আমি হঠাৎ করে ছোট খালার পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম। আমার দরজার কাছ কেদূত হেঁটে নিজের ঘরে যাচ্ছেন। এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে আমার কথা শুনছিলেন। কী সর্বনাশ।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }