Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৮. ডাক্তার

    ০৮. ডাক্তার

    সকালে ছো খালু জামাকাপড় পরে আমার ঘরে এসে বললেন, বিলু, আজকে তোমার স্কুলে যেতে হবে না।

    স্কুলে যাব না?

    না।

    কেন খালু?

    আমার সাথে একটু বাইরে যাবে।

    বা-বাইরে? কোথায়?

    একজনের সাথে দেখা করতে।

    ছোট খালু বেশি কথা বলেন না, আমার তাই কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হল না। কাল রাতের ব্যাপার নিয়ে কি কিছু হয়েছে?

    কি ব্যাপার একটু পরেই বল্টুর কাছে জানতে পারলাম। সে আমার ঘরে উঁকি দিয়ে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। বল্টুর পিছনে মিলি। বল্টু মিলির দিকে তাকিয়ে বলল, কাছে যাস না, কামড়ে দেবে।

    আমি অবাক হয়ে বললাম, কে কামড়ে দেবে?

    তুমি।

    আমি? কেন?

    তোমার বাবার মতো তুমিও পাগল হয়ে যাচ্ছ। মা বলেছে।

    আমি? আমি পা–পা–

    মিলি বণ্টকে ধমক দিয়ে বলল, ভাইয়া, মা বলতে না করেছে না?

    চুপ।

    আমি উঠে দাঁড়াতেই বল্টু ছুটে বের হয়ে গেল, তার পিছনে পিছনে মিলি। দু’জনেই ভয় পেয়েছে আমাকে দেখে। আমার এমন মন-খারাপ হল যে বলার নয়।

     

    গাড়িতে ছোট খালু বেশি কথা বললেন না। একবার শুধু জিজ্ঞেস করলেন, রাতে ভালো ঘুম হয়েছে, বিলু?

    জ্বি, হয়েছে।

    কখনো ঘুমাতে অসুবিধে হয় তোমার?

    না, খালু।

    বেশ, বেশ।

    সারা রাস্তা আর কোনো কথা হল না। আমি গাড়িতে বসে এদিকে-সেদিকে দেখছিলাম, তখন দেখলাম একটা মাইক্রোবাস আমাদের গাড়ির পিছনে পিছনে আসছে। আমার মনে হল এই মাইক্রোবাসটাকে কয়দিন থেকে বাসার সামনে দেখছি। একটু পরে অবশ্যি মাইক্রোবাসটার কথা ভুলে গেলাম, এখানে তো কত মাইক্রোবাসই আছে।

     

    মতিঝিলের কাছে একটা উঁচু দালানে লিফট দিয়ে আমাকে নিয়ে উঠে গেলেন ছোট খালু। একটা সরু করিডোর ধরে হেঁটে একটা বন্ধ দরজায় টোকা দিলেন। দরজায় সোনালি অক্ষরে লেখা ডঃ কামরুল ইসলাম, নিচে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ।

    ডাক্তার ছোট খালুর খুব বন্ধুমানুষ হবেন। দেখলাম একঞ্জন আরেকজনকে দেখে বাচ্চাদের মতো পেটে খোঁচা দিয়ে কথা বলছেন। আর একটু পরপর হো হো করে হাসছেন। আমি এর আগে ছোট খালুকে কখনো জোরে হাসতে দেখি নি। একটু পর দু’জনেই সরে গিয়ে নিচু গলায় কথা বলতে শুরু করলেন। আমি বুঝতে পারলাম, আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে, কারণ দু’জনেই খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন, আর “প্রেশার কালচার” ডিজওর্ডার” “ব্রাইট” এরকম কঠিন কঠিন কয়েকটা শব্দ শুনতে পেলাম আমি। একটু পর ছোট খালু আমার কাছে এসে বললেন, বিলু, এ হচ্ছে ডক্টর কামরুল, তোমার ডাক্তার চাচা। তোমার সাথে খানিকক্ষণ কথা বলবেন। তোমাকে যেটা জিজ্ঞেস করবেন তুমি তার ঠিক উত্তর দেবে। ঠিক আছে?

    খালু। আমার কিছু হয় নি, খালু। আমি ভালো আছি।

    হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি অবশ্যি ভালো আছ।

    তাহলে কেন–

    ভালো থাকলেও ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। চেক-আপের জন্য যেতে হয়। সবাই যায়।

    ডাক্তার চাচা খুব ভালোমানুষের মতো আমার হাত ধরে নিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে বললেন, তোমার খালু আর আমি যখন ছোট ছিলাম একসাথে অনেক মারপিট করেছি।

    আমি আবার তাকালাম তাঁদের দিকে। তাঁরা একসময় ছোট ছিলেন এবং মারপিট করেছেন ব্যাপারটা বিশ্বাসই হতে চায় না। ডাক্তার চাচা মুখে হাসি টেনে বললেন, তোমার খালু আমাকে বলেছেন যে তুমি নাকি অসম্ভব ব্রাইট ছেলে। গ্রামের একটা স্কুল থেকে স্কলারশিপে পুরো ডিস্ট্রিক্টের মাঝে প্রথম হয়েছ।

    আমি কিছু বললাম না, একটু মাথা নাড়লাম।

    ডাক্তার চাচা বললেন, তোমার বাবার নাকি একটু মানসিক ব্যালেন্সের সমস্যা আছে। বোঝই তো, কারো বেশি হয় কারো কম। আমি তাই তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই, কারণ, দেখা গেছে অনেক সময় এগুলো জিনেটিক হয়। জিনেটিক মানে বোঝ তো? বংশগত। বাবার থেকে ছেলে, ছেলে থেকে তার ছেলে। তোমার মতো এরকম একজন ব্রাইট ছেলে, তার নিজের উপর কন্ট্রোল থাকা খুব দরকার। ঠিক আছে?

    জ্বি।

    এবারে বল, তুমি কি কখনো কিছু দেখতে পাও, যেটা অন্যেরা দেখতে পায় না।

    না।

    কখনো কিছু শুনতে পাও যেটা অন্যেরা শুনতে পায় না?

    ইয়ে-আগে কখনো হয় নি। কিন্তু সেদিন—

    সেদিন কি?

    সেদিন মহাকাশের আগন্তুকের সাথে দেখা হল, সে যখন কথা বলে তখন অন্যেরা মনে হয় বুঝতে পারে না।

    বুঝতে পারে না?

    না। তারা শুধু ঝিঁঝি পোকার মতো শব্দ শোনে।

    কে শুনেছে সেটা?

    ছোট খালা।

    ও। একটু থেমে ডাক্তার চাচা আবার জিজ্ঞেস করলেন, ঝিঁঝি পোকা?

    জ্বি।

    তুমি কি অন্য কোনো পোকার কথা শুনতে পার? কিংবা অন্য কোনো প্রাণী? কুকুর, বেড়াল, পাখি? কাক? দাঁড়কাক?

    হঠাৎ করে কেন জানি আমার রাগ উঠতে থাকে। বড়দের সাথে রাগ করে কথা বলতে হয় না, তাই আমি অনেক কষ্ট করে নিজেকে শান্ত করে বললাম, না।

    শুধু ঝিঁঝি পোকার শব্দ?

    আমি কখনো বলি নি যে আমি ঝিঁঝি পোকার শব্দ শুনতে পারি। আমি বলেছি—

    কী বলেছ?

    আমি বলেছি মহাকাশের যে-আগন্তুক এসেছে তার কথা অন্যেরা শশানে ঝিঁঝি পোকার শব্দের মধ্যে।

    কেন সেটা হয় বলতে পার?

    আমি এই নিয়ে দ্বিতীয়বার মহাকাশের আগন্তুকের কথা বললাম, কিন্তু ডাক্তার চাচা সেটা নিয়ে কোনো কৌতূহল প্রকাশ করলেন না। কথাটা শুনে অবাকও হলেন না। পুরো ব্যাপারটাতে কোনো গুরুত্ব দিলেন না, সেটা দেখে আমার আরো রাগ উঠতে লাগল, তবুও অনেক কষ্ট করে নিজেকে শান্ত করে রাখলাম। ডাক্তার চাচা জিজ্ঞেস করলেন, কেন অন্যেরা শুনতে পায় না তুমি জান?

    একটু একটু জানি।

    কেন?

    আমার মনে হয় সে আমাদের মতো কথা বলে না। একটা তরঙ্গ পাঠায়, সেটা সোজাসুজি আমাদের মাথার মাঝে, মগজের মাঝে কম্পন তৈরি করে। সেটার থেকে আমরা বুঝি সে কী কথা বলছে। একেকজনের মগজ একেক রকম, তাই একেকজনের জনে একেক রকম কম্পন প্রকার। মহাকাশের আগন্তুক আমার কম্পনটা ধরতে পেরেছে, সে ঠিক তরঙ্গটা পাঠায় তাই আমি তার কথা বুঝতে পারি। অন্যেরা বোঝে না। যখন অন্যদের জন্যে পাঠাবে তখন আমি বুঝব না। শুধু একটা শব্দ শুনব ঝিঁঝি পোকার শব্দের মতো।

    ডাক্তার চাচা মনে হল আমার কথা শুনে খুব অবাক হলেন। একবার খালুর দিকে তাকালেন, তারপর আমার দিকে তাকালেন, তারপর কাগজে ঘসঘস করে কী-একটা লিখলেন। একটু পরে জিজ্ঞেস করলেন, এই প্রাণীটা কোন গ্রহ থেকে এসেছে? মঙ্গল গ্রহ?

    মঙ্গল গ্রহে কোনো প্রাণী নেই। আমাদের সৌরজগতে পৃথিবী ছাড়া আর কোনো গ্রহে প্রাণ নেই।

    তাহলে কোথা থেকে এসেছে?

    এন্ড্রোমিডা থেকে।

    সেটা কোথায়?

    আমাদের নেবুলার নাম হচ্ছে ছায়াপথ। ইংরেজিতে বলে মি২িওয়ে। আমাদের পরেরটা হচ্ছে এন্ড্রোমিড়া। সেখানকার কোনো নক্ষত্রের কোনো-একটা গ্রহ থেকে।

    সেটা নিশ্চয়ই অনেক দূর। সেখান থেকে কেমন করে এল?

    আমাকে বলেছে, আমি বুঝি নি। স্পেস টাইমের কী-একটা ব্যাপার আছে। একরকম সংকোচন হয়, তখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ডাইভ দিয়ে চলে যায়। সময়ের ক্ষেত্র ব্যবহার করে স্থানের ক্ষেত্রে শর্টকাট দেয়ার মতো।

    ডাক্তার চাচা ঢোক গিলে বললেন, সেই প্রাণীটা তোমাকে বলেছে এটা?

    এভাবে বলে নি, আমি এভাবে বললাম। সোজাসুজি মগজের মাঝে কথা বলে, তাই তার সব কথা বুঝতে না পারলেও কী বলতে চায় বুঝতে পারি।

    ডাক্তার চাচা ঘসঘস করে খানিকক্ষণ লিখে জিজ্ঞেস করলেন, এখন কোথায় আছে সেই প্রাণী?

    জানি না। রাতে আমার ঘরে ছিল।

    তুমি আর কাউকে এটা বলেছ?

    না, এখনো বলি নি।

    সেটা দেখতে কী রকম?

    অনেক ছোট, তাই ভালো করে দেখতে পারি নি।

    ছোট? ডাক্তার চাচা মনে হল খুব অবাক হলেন।

    হ্যাঁ। অনেক ছোট। ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে খুব কষ্ট করে একটু দেখা যায়।

    এত ছোট?

    হ্যাঁ।

    তুমি কি জানতে এটা ছোট হবে?

    আমি কেমন করে জানব? তুমি এখনো কাউকে এটা বল নি?

    না।

    কাউকে বলবে ঠিক করেছ?

    হ্যাঁ। আজকে স্কুলে গেলে স্যারকে বলতাম।

    তোমার স্যার?

    হ্যাঁ। আমাদের ক্লাস টিচার। স্যারের খুব উৎসাহ।

    ও ডাক্তার চাচা আবার ঘসঘস করে অনেক কিছু লিখে ফেললেন কাগজে। তারপর স্যারের কথা জিজ্ঞেস করতে শুরু করলেন। স্যার কি করেন, ক্লাসে কাকে বেশি পছন্দ করেন, কাকে বেশি অপছন্দ করেন। আমি সব প্রশ্নের উত্তর দিলাম। তারপর বাবার কথা জিজ্ঞেস করলেন, অনেক খুঁটিনাটি জিনিস জানতে চাইলেন। বাবার পর আমার নিজের সম্পর্কে জানতে চাইলেন, কী করতে ভালবাসি, কী খেতে ভালবাসি, কোন রং আমার পছন্দ ইত্যাদি ইত্যাদি। সবার শেষে আমাকে অনেকগুলো ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কী মনে করি। একটা বিচিত্র ধরনের পরীক্ষা নিলেন আমার, নানারকম নকশা দেখে ঠিক উত্তরটা বেছে নেবার একটা পরীক্ষা। তারপর আবার কাগজে ঘসঘস করে কী যেন লিখলেন। তারপর অনেকক্ষণ বসে ছাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। শেষ পর্যন্ত খালুর দিকে তাকিয়ে বললেন, তোর ভাগ্নে খুব ব্রাইট। অসম্ভব হাই আই কিউ। আমার মনে হয় তাকে সোজাসুজি বলে দেয়া ভালো। তোর আপত্তি আছে?

    খালু মাথা নাড়লেন, না, নেই।

    ডাক্তার চাচা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি তোমার বাবাকে খুব ভালবাস, খুব কম বাচ্চা তার বাবাকে এত ভালবাসে।

    আমি মাথা নাড়লাম।

    কিন্তু তোমার বাবা পুরোপুরি স্বাভাবিক নন, তাই তাঁর সাথে তোমার কখনো সত্যিকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে নি। তোমার বুকের ভিতরে সেটা নিয়ে বুভুক্ষের মতো একটা ক্ষুধা আছে।

    আমি আবার মাথা নাড়লাম।

    এখানে এসে স্কুলে তোমার যে-স্যারের সাথে পরিচয় হয়েছে, সেই স্যারের সাথে তোমার বাবার একটু মিল রয়েছে। তুমি তোমার নিজের বাবার কাছে যেটা পাও নি, সেটা তোমার স্যারের মাঝে তুমি খোঁজা শুরু করেছ। তোমার স্যার খুব ভালো মানুষ, ছাত্রদের নিজের সন্তানের মতো করে দেখেন তুমিও গোপনে তাঁকে তোমার বাবার মতো করে দেখা শুরু করেছ। তোমার স্যার যেটাই বলেন তুমি সেটা গভীরভাবে বিশ্বাস করা তাঁকে খুশি করার জন্যে তোমার অবচেতন মন নানাভাবে চেষ্টা করতে থাকে। তাই যখন তোমার স্যার মহাকাশের প্রাণীর কথা বলেছেন, সেটাও তুমি এমনভাবে বিশ্বাস করেছ, যে—

    ডাক্তার চাচা একটু থেমে খালুর দিকে তাকালেন, তারপর আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি সত্যিই বিশ্বাস করা শুরু করেছ যে সত্যি সত্যি মহাকাশের একটা আগন্তুক তোমার কাছে এসে গেছে। এরকম হয়—একজন মানুষ যখন আরেকজন মানুষকে খুব ভালবাসে বা শ্রদ্ধা করে, তখন এরকম হয়। এর একটা ডাক্তারি নামও আছে।

    আমি ঢোক গিলে বললাম, তার মানে আপনি বলছেন টুকুনজিল আসলে নেই?

    টুকুনজিল?

    হ্যাঁ। মহাকাশের আগন্তুককে আমি টুকুনজিল নাম দিয়েছি।

    ও।

    আপনি বলছেন টুকুনজিল আসলে নেই?

    না। আসলে সব তোমার কল্পনা। মানুষ একটা জিনিস যদি খুব বেশি চায়, সেটা নিয়ে যদি তার ভিতরে একটা বড় ধরনের দুঃখ কিংবা ক্ষোভ থাকে, সেটা যদি সে তার প্রকৃত জীবনে না পায়, তখন সে সেটা কল্পনায় পেতে চেষ্টা করে। সেটা কোনো দোষের ব্যাপার নয়, সবার জীবনেই নানারকম ফ্যান্টাসি থাকে। খানিকটা ফ্যান্টাসি। থাকা ভালো। কিন্তু কখনো যদি কেউ কল্পনা এবং সত্যিকার জীবনে গোলমাল করে ফেলে, বুঝতে না পারে কোনটা কল্পনা এবং কোনটা সত্যি, তখন অসুবিধে। আমরা তাদের বলি মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ। তোমার বাবা সেরকম একজন মানুষ। কল্পনা এবং বাস্তব জীবনের মাঝে পার্থক্যটা ধরতে পারেন না। তোমার ভিতরেও তার লক্ষণ আছে—

    আমার ভিতরে?

    হ্যাঁ। তুমি খুব বুদ্ধিমান ছেলে, তাই তোমাকে সোজাসুজি বললাম। যদি তুমি নিজে একটু সতর্ক থাক, তাহলে নিজেই বুঝবে কোনটা সত্যি, কোনটা কল্পনা। যখন বুঝতে পারবে তুমি কল্পনাকে সত্যি মনে করছ, তখন নিজেকে জোর করে কল্পনার জগৎ থেকে সরিয়ে আনবে। কল্পনা করতে কোনো দোষ নেই, কিন্তু কল্পনাকে কখনো সত্যি বলে ভুল করতে হয় না। বুঝেছ?

    বুঝেছি। আমার গলা শুকিয়ে গেল। তার মানে আমিও বাবার মতো পাগল।

    তোমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি তোমার ভিতরে অসম্ভব মনের জোরের চিহ্ন পেয়েছি। তুমি এর ভিতর থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। আমি জানি। তোমার বাবার যেটা হয়েছে তোমার সেটা হবে না। কখনো হবে না। ঠিক আছে?

    আমি মাথা নাড়লাম।

     

    বাসায় এসে বালিশে মাথা রেখে আমি খানিকক্ষণ কাঁদলাম। আমি ভেবেছিলাম মহাকাশের রহস্যময় এক প্রাণীর সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছে। আসলে সব আমার পাগল-মাথার কল্পনা। সবাই এখন জেলে যাবে যে আমি পাগল। ছোট খালু বলবেন ছোট খালাকে ছোট খালা থেকে জানবে বল্টু আর মিলি। তাদের থেকে জানবে তাদের অন্য বন্ধুরা। সেখান থেকে একসময় জানরে আমার ক্লাসের ছেলেরা। সবাই তখন আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। কী লজ্জার কথা। একবার মনে হল ছাদ থেকে। লাফিয়ে পড়ে জীবন শেষ করে দিই। আরেকবার মনে হল সব ছেড়েছুড়ে আমি এখনই বাড়ি চলে যাই, সেখানে বাবার হাত ধরে আমরা দুইজন পাগল মানুষ নীল গাঙের তীরে বসে থাকি।

    অনেকক্ষণ বসে বসে আমি ভাবলাম, তারপর নিজেকে সাহস দিলাম। ডাক্তার চাচা বলেছেল আমার মনের জোর আছে, আমি ভালো হয়ে যেতে পারব। আমি নিশ্চয়ই তার চেষ্টা করব। নিশ্চয়ই চেষ্টা করব। মন-খারাপ করে থেকে লাভ কি?

    আমি সোজা হয়ে বিছানায় বসেছি আর সাথে সাথে ঝিঁঝি পোকার মতো একটা শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর শুনলাম পরিষ্কার গুলায় কে যেন বলল, তোমার মস্তিষ্কের দুই পাশে অন্ত তরঙ্গ। অসামঞ্জস্য এবং ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম।

    আমি চমকে উঠলাম। কী সর্বনাশ! আবার আমি টুকুনজিলের কথা শুনছি। আমি দুই হাতে কান চেপে ধরলাম, টুকুনজিলের কথা শুনতে চাই না আমি পাগল হয়ে যেতে চাই না। মনে মনে বললাম, চলে যাও চলে যাও তুমি।

    আমি যাব না।

    তুমি যাও। তুমি কল্পনা। তুমি মিথ্যা। আমি মনে মনে উচ্চারণ কতে থাকি, তুমি কল্পনা, তুমি কল্পনা, তুমি কল্পনা।

    আমি কল্পনা না না না না। আমি টুকুনজিল।

    আমার গলা শুকিয়ে গেল, আমি মুখে কোনো কথা উচ্চারণও করি নি, কিন্তু টুকুনজিল আমার কথার উত্তর দিচ্ছে। ডাক্তার চাচা তাহলে কি সত্যি কথাই বলেছেন? আসলেই সব কল্পনা? আমি অনেক কষ্ট করে নিজেকে শান্ত করলাম। আমি ভালো হয়ে যাব, এইসব উল্টোপাল্টা ব্যাপারকে কোনো পাত্তা দেব না। চোখ বন্ধ করে নিজেকে বললাম, সব কল্পনা। সব কল্পনা।

    না। কল্পনা না।

    তুমি চলে যাও। আমার মন থেকে চলে যাও।

    যাব না। যাব না। সাহায্য চাই।

    কচু সাহায্য। তুমি দূর হয়ে যাও।

    যাব না। স্বর্ণ চাই। প্রাটিনাম চাই।

    নিজে জোগাড় করে নাও।

    পারছি না। আমার গতিবেগ রুদ্ধ। আমি গতিহীন। শক্তিহীন। চোখ খোল। চোখ খুলে আমাকে দেখ।

    আমি আবার চোখ খুলে তাকালাম। সত্যি সত্যি আমার চোখের সামনে ছোট একটা কালো বিন্দুর মতো কী-একটা ঝুলছে। টুকুনজিলের মহাকাশযান, নাকি আমার কল্পনা? আমি আবার চোখ বন্ধ করলাম। বললাম, চলে যাও তুমি।

    যাব না। যাব না। যাব না।

    কেন যাবে না?

    যেতে পারব না। সাহায্য চাই। আমাকে খুঁজছে। আমাকে ধরতে আসছে। আমার বিপদ।

    তোমার বিপদ, তুমি কচুপোড়া খাও।

    আমি কচুপোড়া খাই না। আমাকে সাহায্য কর তুমি।

    কিন্তু তুমি তো নেই, তুমি কল্পনা।

    আমি কল্পনা না। আমি প্রমাণ করব। তমি হাত বাড়াও।

    আমি আস্তে আস্তে হাত বাড়ালাম, দেখলাম বিন্দুটি আমার হাতের উল্টোপৃষ্ঠায় নেমে এল, হঠাৎ একঝলক আলো জ্বলে উঠল, আর আমি চিৎকার করে হাত টেনে নিলাম। অবাক হয়ে দেখলাম গোল হয়ে পুড়ে গেছে হাতের চামড়া, মুহূর্তে ফোস্কা পড়ে গেছে হাতে। প্রচণ্ড জ্বালা করছে হাত, কিন্তু আমি যন্ত্রণার কথা ভুলে গেলাম। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম হাতের দিকে। তাহলে কি সত্যিই টুকুনজিল আছে?

    তোমার অন্য হাত দাও।

    কেন?

    আরেকটা বৃত্তাকার উত্তপ্ত চিহ্ন করে দেখাই।

    না, আর দেখাতে হবে না।

    এখন তুমি বিশ্বাস কর আমি সত্যি?

    প্রচণ্ড জ্বালা করছে হাত। কিন্তু এটাও কি কল্পনা হতে পারে? কাউকে দেখাতে হবে আমার। আমি ঘর থেকে বের হয়ে এলাম, বাসার কাজের ছেলেটিকে খুঁজে পেলাম না, তাকে দেখাতাম। বল্টু হেঁটে যাচ্ছিল, তাকেই ডাকলাম আমি, বল্টু, দেখ তো একটা জিনিস।

    কি?

    আমার হাতের উপর কি তুমি কিছু দেখতে পাও?

    দেখি বল্টু হাতটা একনজর দেখেই চিৎকার করে উঠল, সিগারেটের ছ্যাকা! ইয়া আল্লাহ, তুমি সিগারেট খাও?

    তারপর সে গরুর মতো চেঁচাতে শুরু করল, আম্মা, আম্মা দেখে যাও। বিলু সিগারেট খায়। সিগারেটের ছ্যাক

    ছোট খালা দৌড়ে এলেন, কি হয়েছে? কি?

    দেখ, বিলু সিগারেট খেতে গিয়ে হাতে ছ্যাঁকা খেয়েছে। দেখ, গোল ছ্যাঁকা।

    ছোট খালা হাতের পোড়া দাগটা খুব ভালো করে দেখলেন, তারপর আমার দিকে ভুরু কুচকে তাকালেন, আমার শরীরে সিগারেটের গন্ধ শোঁকার চেষ্টা করলেন কয়েকবার, তারপর জিজ্ঞেস করলেন, কেমন করে পুড়েছে?

    আমি আমতা আমতা করে বললাম, না মানে—ইয়ে–।

    টুকুনজিলের কথা শুনতে পাই আমি, দেখেছ? আমি সত্যি। আমি কল্পনা না।

    আমি ভয়ে ভয়ে তাকালাম। ছোট খালা বা বল্টু টুকুনজিলের কথা শুনতে পায় নি, শুধু আমি শুনেছি।

    ছোট খালা বললেন, কথা বলছিস না কেন? কেমন করে পুড়েছে?

    বল্টু চিৎকার করে বলল, সিগারেট। সিগারেট!

    টুকুনজিল বলল, অকাট্য প্রমাণ আমি সত্যি। অকাট্য প্রমাণ।

    আমি চোখ বন্ধ করলাম, মহা ঝামেলায় ফেঁসে গেছি আমি, কিন্তু একটা কথা তো সত্যি।

    আমি পাগল না।

    মহাকাশের রহস্যময় প্রাণী সত্যি আছে।

    সত্যি আছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }