Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১১. ছিনতাই

    ১১. ছিনতাই

    আজকেও আমি বল্টুর স্কুলে নেমে হেঁটে হেঁটে আসছিলাম। ক্লাসে আজকে কী মজা। হবে চিন্তা করে আমার মুখের হাসি বন্ধ হচ্ছিল না। ক্লাস শুরু হওয়ার পরই আমি হাত তুলে বলব, স্যার, একটা কথা বলতে পারি?

    স্যার বলবেন, কি কথা?

    আমি বলব, খুব জরুরী কথা।

    স্যার বলবেন, বল।

    ঠিক তখন টুকুনজিল আমাকে বেঞ্চের উপর দিয়ে শূন্যে ভাসিয়ে নিয়ে আসবে, স্যারের সামনে এনে মেঝে থেকে এক হাত উপরে ঝুলিয়ে রাখবে। স্যার নিশ্চয়ই এত অবাক হবেন যে কথা পর্যন্ত বলতে পারবেন না! আমি তখন বলব, স্যার, আপনার সাথে আমার বন্ধু টুকুনজিলের পরিচয় করিয়ে দিই।

    স্যার বলবেন, টুকুনজিল?

    আমি তখন বলব, জ্বি স্যার, মহাকাশের প্রাণী টুকুনজিল। তাকে দেখা খুব শক্ত, ম্যাগনিফাইং গ্লাস ছাড়া দেখা যায় না–

    ঠিক এরকম সময়ে কে যেন আমার ঘাড়ে টোকা দিল। আমি চমকে পিছনে তাকালাম। খুব ভালো কাপড় পরা একজন মানুষ। সামনে চুল একটু পাতলা হয়ে এসেছে, চোখে চশমা। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এই যে, খোকা, শোন–

    আমাকে বলছেন?

    হ্যাঁ, তুমি একটু এদিকে আসবে?

    এখন তো আমার স্কুলে যাবার সময়।

    এক মিনিট–

    আমি হঠাৎ টের পেলাম, আমার দুই পাশে আরো দুইজন মানুষ আমার দুই হাত শক্ত করে ধরেছে। মানুষগুলো ভালো কাপড় পরা, মুখ কেমন যেন হাসি হাসি, কেউ দেখলে ভাববে আমার পরিচিত কোনো মানুষ কিছু-একটা মজার কথা বলবে আমার সাথে। কিন্তু আমার বুঝতে বাকি থাকে না, এর মাঝে মজার কিছু নেই। লোক দু’জন আমাকে প্রায় শূন্যে ঝুলিয়ে নিয়ে যায়। কাছেই সেই মাইক্রোবাসটা দাঁড়িয়ে আছে, কাছাকাছি আসতেই দরজাটা খুলে গেল আর দুই জোড়া শক্ত হাত আমাকে ভিতরে টেনে নিল। পুরো ব্যাপারটা ঘটল চোখের পলকে, আমি কিছু বোঝার আগে।

    মাইক্রোবাসের জানালা টেনে তুলে রাখা, বাইরে থেকে দেখার উপায় নেই। ভিতরে সব কয়জন বিদেশি, লাল রঙের চেহারা দেখলেই পিলে চমকে যায়। একজন হলুদ দাঁত বের করে হাসার ভঙ্গি করে বলল, কুকা, টোমাড় কুনু বয় নায়–যার অর্থ নিশ্চয়ই খোকা, তোমার কোনো ভয় নেই।

    আমি গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার দিতে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখন হাতের কনুইয়ের কাছে একটা খোঁচা লাগল, হাতটা সরানোর চেষ্টা করতেই দেখলাম কেউ-একজন শক্ত করে ধরে রেখেছে। মাথা ঘোরাতেই দেখলাম, একটা সিরিঞ্জে করে কী-একটা ইনজেকশান দিচ্ছে আমাকে।

    প্রচণ্ড ভয়ে আমি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলাম, কিন্তু তার আগেই হলুদ-দাঁতের লোকটা আমার মুখ চেপে ধরে বলল, কুকা, কুনু বয় নায়।

    আমার গলা দিয়ে বিশেষ শব্দ বের হল না, যেটুকু বের হল, মাইক্রোবাসের ইঞ্জিনের শব্দে চাপা পড়ে গেল তার বেশির ভাগ। আরেকটা চিৎকার দিতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু শরীরে জোর পাই না আমি, হঠাৎ করে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসতে থাকে। নিশ্চয়ই আমাকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছে। চোখ বন্ধ করার আগে দেখতে পেলাম, হলুদ-দাঁতের লালমুখো বিদেশিটা আমার উপর ঝুকে মুখে হাসির ভঙ্গি করে রেখেছে। তারপর আর কিছু মনে নেই।

     

    ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমি অনেক রকম স্বপ্ন দেখলাম। ছাড়া-ছাড়া আজগুবি সব স্বপ্ন। এক সময় স্বপ্নে দেখলাম আমি বাড়ি ফিরে গেছি, বাবা একটা গাছের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখে এমন একটা ভঙ্গি করলেন, যেন আমাকে দেখতেই পান নি। আমি ডাকলাম, বাবা।

    বাবা অবাক হয়ে বললেন, কে কথা বলে?

    আমি বললাম, আমি।

    আমি কে?

    আমি বিলু।

    বিলু?

    হ্যাঁ।

    বাবা আকুল হয়ে বললেন, তুই কোথায় বাবা বিলু?

    আমি বললাম, এই তো, বাবা।

    বাবা মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালেন কিন্তু তবু আমাকে দেখতে পেলেন না। বললেন, কোথায় তুই? কোথায়? তোকে দেখতে পাই না কেন?

    আমি বললাম, এই তো বাবা,আমি এখানে।

    কোথায়?

    এই তো! বাবা, বাবা—

    বিলু বিলু বিলু—

     

    আমার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, কেউ-একজন সত্যি আমাকে ডাকছে। আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম, উজ্জ্বল আলো ঘরে, তার মাঝে একজন আমার মুখের উপর ঝুঁকে আছে! আগে কোথায় জানি দেখেছি লোকটাকে, কিন্তু মনে করতে পারলাম না।

    আমার হঠাৎ করে সব মনে পড়ে গেল। স্কুলে যাচ্ছিলাম আমি, তখন রাস্তা থেকে ধরে এনেছে আমাকে, আমি উঠে বসার যে করলাম। মাখার কোথায় জানি প্রচণ্ড যন্ত্রণা করে উঠল হঠাৎ। মনে হচ্ছে ভিতরে একটা শিরা ছিঁড়ে গেছে বা অন্য কিছু। আমার সামনে দাঁড়ানো লোকটা অন্তরঙ্গ সুরে বলল, কেমন লাগছে বিলু তোমার?

    কথা শুনে মনে হল যেন আমার কতদিনের পরিচিত। আমি জিব দিয়ে আমার শুকনো ঠেটি ভিজিয়ে বললাম, খারাপ। খুব খারাপ।

    এই তো এক্ষুণি ভালো লাগবে তোমার।

    আপনি কে? আমি কোথায়?

    এক্ষুণি জানবে তুমি, আমি কে। নাও, এই ওষুধটা খেয়ে নাও।

    ছোট একটা গ্লাসে করে লাল রঙের একটা ওষুধ আমার মুখের কাছে ধরল মানুষটা। আমি মাথা নাড়লাম, কি-না-কি খাইয়ে দিচ্ছে কে জানে।

    খেয়ে নওি, খেয়ে নাও, ভালো লাগবে বলে প্রায় জোর করে ওষুধটা আমার মুখের মাঝে ঢেলে দিল। ওষুধটা মিষ্টি এবং চমৎকার একটা সুগন্ধ, তবু আমি খেলাম না, মুখে রেখে দিলাম। লোকটা আবার কাছে আসতেই আমি পিচকারির মতো তার মুখে ওষুধটা কুলি করে দিলাম মানুষটাকে চিনতে পেরেছি, আজ সকালে সে আমাকে ধরে এনেছে।

    লাল ওষুধটা তার চশমা বেয়ে সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ে। দেখতে দেখতে তার চমৎকার কাপড়ে লাল লাল ছোপ হয়ে যায়।

    ঠা ঠা করে কে যেন হেসে উঠল হঠাৎ আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম লালমখৈর আরেকজন বিদেশি মানুষ। আগে একে দেখেছি বলে মনে পড়ল না। কে জানে, হয়তো দেখেছি, এদের সবগুলোকে একই রকম দেখায়।

    ভালো কাপড়-পরা মানুষটি তার লাল লাল ছোপ কাপড় নিয়ে আমার দিকে হিংস্র চোখে তাকাল। আমি একেবারে লিখে দিতে পারি, ঘরে আর কেউ না থাকলে আমাকে মেরে বসত। কিন্তু আমি জানি আমার গায়ে কেউ হাত দেবে না। সারা পৃথিবীতে শুধু আমিই টুকুনজিলের খোঁজ জানি, এই লোকগুলো সে জনোই আমাকে ধরে এনেছে।

    বিদেশি লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে হড়বড় করে কী যেন বলল, আমি তার একটা অক্ষরও বুঝতে পারলাম না। নিশ্চয়ই ইংরেজিই হবে, কিন্তু এটা কী রকম ইংরেজি।

    একটা রুমাল দিয়ে মুখ কপাল এবং ঘাড় মুছতে মুছতে ভালো কাপড় পরা মানুষটি বলল, এই সাহেব বলছেন যে তোমার অনেক বড় বিপদ ছিল, সেটা কি তুমি জানতে?

    কি বিপদ।

    একটা প্রাণী তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, অনেক কষ্ট করে তোমাকে রক্ষা করা হয়েছে।

    কোন প্রাণী?

    মহাকাশের প্রাণী।

    আমাকে ধরে নিতে এসেছিল?

    হ্যাঁ।

    রাগে আমার পিত্তি জ্বলে গেল, বললাম, মিথ্যুক আপনার লজ্জা করে না এরকম মিথ্যা কথা বলতে? আমাকে মহাকাশের প্রাণী ধরে আনে নি, আপনারা ধরে এনেছেন। বিদেশি দালাল।

    বিদেশি লোকটা তখন ভালো কাপড়-পরা মানুষটির সাথে খানিকক্ষণ কথা বলল। আমি ইংরেজি একটু একটু বুঝতে পারি, কিন্তু বিদেশিদের উচ্চারণ বড় খটমটে। দু’জনে কী কথা হল আমি পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও এটুকু বুঝতে পারলাম, বিদেশি লোকটি এই মানুষটিকে চলে গিয়ে অন্য একজনকে আসতে চলছে। এই বিদেশি মানুষটি নিশ্চয়ই কোনো বড় মানুষ, কারণ সে যখনই কথা বলে, ভালো কাপড়-পরা মানুষটি মাথা নেড়ে নেড়ে বলে, জ্বি স্যার, জ্বি স্যার, অবশ্যি স্যার-–

    মানুষটি বের হওয়ার পর ঘরে শুধু আমি আর বিদেশি মানুষটা। সে আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার মতো ভঙ্গি করল, আমার ইচ্ছে করল জিব বের করে একটা ভেংচি কেটে দিই। কিন্তু দিলাম না, হাজার হলেও একজন বিদেশি মানুষ। আমি মনে মনে বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কোন দেশের মানুষ?

    বেশ কয়েকবার বলার পর বিদেশিটা বুঝতে পারল আমি কী জিজ্ঞেস করছি। উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন?

    আমি আবার মনে মনে ইংরেজিতে অনুবাদ করে বললাম, দেখতে চাই কোন দেশের মানুষ এত বদমাইশ।

    এই কথাটা কিন্তু সে একবারেই বুঝে গেল, আর আমার মনে হল কথাটা শুনে তার কেমন যেন একটু মন-খারাপ হয়ে গেল। লোকটা কেমন জানি সরু চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ।

     

    দরজা খুলে এবার শাড়ি পরা একজন মেয়ে এসে ঢুকল ঘরে। খুব সুন্দর চেহারা মেয়েটির, একেবারে সিনেমার নায়িকাদের মতো। মেয়েটি প্রথমে খানিকক্ষণ বিদেশি লোকটার সাথে কথা বলে আমার দিকে এগিয়ে এল, আমার গায়ে হাত দিয়ে বলল, আমার নাম শায়লা। তোমার নাম নিশ্চয়ই বিলু?

    আমি মাথা নাড়লাম।

    তুমি নাকি ঠিক করে কথা বলতে চাই না।

    আপনারা ছেলেধরার দল, আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আগে পুলিশের সাথে কথা বলব।

    ছেলেধরা? শায়লা নামের মেয়েটা কেমন যেন থতমত খেয়ে গেল হঠাৎ। একটু ইতস্তুত করে বলল, তুমি তো সব কিছু জান না, তাই তোমার এরকম মনে হচ্ছে।

    আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কী চান?

    আমরা চাই, তুমি যেন আমাদের সাহায্য কর।

    কী সাহায্য?

    আমরা যেন মহাকাশের প্রাণীটাকে আটকে ফেলতে পারি, তাহলে তোমার আর কোনো বিপদ থাকবে না। তুমি চলে যেতে পারবে।

    আমি মেয়েটার মুখের দিকে তাকালাম, এত সুন্দর চেহারা মেয়েটার, কিন্তু কী রকম মিথ্যা কথা বলছে। জিজ্ঞেস করলাম, আটকে ফেলে কী করবেন?

    তার উপর গবেষণা করা হবে।

    তার কি কোনো ক্ষতি হবে? ক্ষতি?

    ক্ষতি—না, মানে—ঠিক ক্ষতি হবে না মনে হয়।

    কতদিন লাগবে গবেষণা করতে?

    অনেকদিন, এক বছর, দুই বছর, দশ বছর।

    ততদিন তাকে আটকে রাখবেন?

    অনেক যত্ন করে রাখা হবে, কোনো অসুবিধে হবে না তার।

    আমি কোনো কথা বললাম না, টুকুনজিল আমাকে বলেছে তিনদিনের মাঝে তাকে চলে যেতে হবে, যদি যেতে না পারে তাহলে আটকে পড়ে যাবে পৃথিবীতে। আর এরা তাকে জোর করে আটকে রাখতে চাইছে দশ বছর! আমি তো কিছুতেই সেটা হতে দিতে পারি না।

    শায়লা নামের মেয়েটা বলল, কি হল, কথা বলছ না কেন?

    আমি চোর, গুণ্ডা, বদমাইশ, বিদেশি দালাল আর ছেলেধরার দলের সাথে কথা বলব না।

    শায়লার মুখটা একটু লাল হয়ে গেল, বলল, তুমি কাকে চোর-গুণ্ডা বলছ? এই যে ইনি—এঁর নাম বব কার্লোস। উক্টর বব কার্লোস। মহাকাশের প্রাণীদের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন সারা জীবন। পৃথিবীর সবাই তাকে এক ডাকে চেনে।

    এই জনো তাঁর সাত খুন মাফ? আমাকে আগে ছেড়ে দিন, তারপর আমি কথা বলব।

    কিন্তু ছেড়ে দিলে তোমার অনেক বিপদ—

    মিথ্যুক।

    তুমি যদি সাহায্য কর, তোমাকে অনেক বড় পুরস্কার–

    মিথ্যুক। মিথ্যুক!

    বিলু, তুমি অবুঝ হয়ো না। আমার কথা শোন—

    আমি মিথ্যুকদের সাথে কথা বলি না।

    শায়লা হাল ছেড়ে দিয়ে বব কার্লোস নামের বিদেশি লোকটার দিকে তাকাল। বব কার্লোস কিছু-একটা জিজ্ঞেস করল শায়লাকে, উত্তরে শায়লাও কিছু-একটা বলল। দু’জনে কথা হল বেশ খানিকক্ষণ। বৰ কার্লোসকে কেমন যেন ক্লান্ত দেখায়। হেঁটে হেঁটে একটা চেয়ারে গিয়ে বসে। শায়লা আবার এগিয়ে আসে আমার দিকে, তার মুখে আগে যেরকম একটা হাসি-খুশির ভাব ছিল, এখন আর সেটা নেই। কেমন যেন কঠিন মুখ করে রেখেছে—দেখে একটু ভয়ই লাগে। শায়লা বলল, ডক্টর কার্লোস তোমাকে কয়েকটা কথা বলবেন, তুমি খুব মন দিয়ে শোন।

    বব কার্লোস কথা বলতে শুরু করল। গলার স্বরটা গমগমে, একটা কথা বলে থেমে যায়, শায়লা তখন সেটা আমাকে বাংলায় অনুবাদ করে দেয়। বব কার্লোস বলল:

    ছেলে, তুমি মন দিয়ে শোন আমি কি বলি। মহাকাশের এই প্রাণী আসছে আমরা দুই বছর থেকে জানি। আমাদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে, আমরা তাকে পৃথিবীতে আসতে সাহায্য করেছি। সে পৃথিবীতে এসে ড়ুব মেরেছে, আমাদের সাথে আর যোগাযোগ করছে না। কার সাথে যোগাযোগ করেছে? তোমার সাথে। কেন? ঘটনাক্রমে।

    কিন্তু শুনে রাখ, পৃথিবীর সবগুলো উন্নত দেশ মিলে এক শ’ এগারো বিলিওন ডলার খরচ করেছে এই প্রজেক্টে। এক শ’ এগারো বিলিওন ডলার কত টাকা তুমি জান? জান না। তোমার দেশকে বেচলেও এত টাকা হবে না। কেন আমরা এই টাকা খরচ করেছি জান? কারণ, এই প্রাণী এমন অনেক টেকনোলজি জানে যেটা আমরা জানি না। সেই টেকনোলজি শিখতে আমাদের এক শ’ বছরে এক শ’ ট্রিলিওন ডলার লেগে যাবে। হয়তো আরো বেশি। তাই শুনে রাখ, এটা খুব জরুরি। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার জন্যে এই প্রজেক্ট শুরু করা হয় নি। এই প্রজেক্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তোমার জীবন, তোমার বন্ধুত্ব এসবের কোনো মূল্য নেই এই প্রজেক্টের সামনে। কোনো মূল্য নেই।

    আমরা সব জানি। আমরা জানি এই প্রাণী তোমার কাছে ঘুরঘুর করে। আমরা তার কথাবার্তা খবরাখবর সবকিছু ধরতে পারি কিন্তু তাকে ধরতে পারি না। অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছুতেই তাকে ধরতে পারি নি। কিছুতেই তাকে দেখতে পারি নি।

    শেষ পর্যন্ত আমরা বুঝেছি কেন তাকে ধরতে পারি না। তোমার ডাক্তারের কাছ থেকে তোমার ফাইলটা আনা হয়েছে, সেখানে আমরা দেখেছি তুমি মহাকাশের প্রাণীর কথা বলেছ। আমরা প্রথমবার বুঝতে পেরেছি কেন আমরা তাকে কখনো দেখতে পারি নি, কারণ সে ছোট, খুবই ছোট। আমাদের জন্যে সেটা ছিল অত্যন্ত বিস্ময়কর আবিষ্কার। আমাদের সব যন্ত্রপাতি নূতন করে তৈরি করতে হয়েছে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হয়ে গেছে আমাদের। এখন আমরা আবার তাকে ধরার জন্যে প্রস্তুত হয়েছি।

    তোমাকে এখন আমাদের দরকার। তুমি যদি নিজে থেকে আমাদের সাহায্য কর, তাহলে ভালো। খুবই ভালো। যদি না কর, কোনো ক্ষতি নেই, আমরা তোমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেব। শুনে রাখ ছেলে, তুমি বেচে থাক কি মরে যাও তাতে কিছু আসে যায় না–কিছু আসে যায় না। আমরা এই প্রজেক্টে এক শ’ এগারো বিলিওন ডলার খরচ করেছি। এই টাকা আমরা পানিতে ফেলে দেব না। এই প্রাণীটা আমাদের দরকার। অনেক দরকার।

    আমরা তাকে একটা নাম দিয়েছিলাম। এন্ড্রোসিলিকান। এন্ড্রোমিডা থেকে এসেছে, তাই এক্সো, শরীরটা কার্বনভিত্তিক না হয়ে সিলিকনভিত্তিক বলে সিলিকান। দুই মিলে এন্ড্রোসিলিকান। আর এই প্রাণী নিজেকে কী বলে ডাকে? টুকুনজিল। টুকুনজিল একটা নাম হল! নাম হল? দুই বেলা নিজের জগতে খবর পাঠাচ্ছে, আমার নাম টুকুনজিল আমার নাম টুকুনজিল। কী প্রচণ্ড ছেলেমানুষি। কী প্রচও নির্বুদ্ধিতা। কিন্তু কেন এটা করছে। কারণ তুমি তাকে এই নাম দিয়েছ। তুমি।

    কী করছে এই হতভাগা প্রাণী? দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা তোমার পিছনে পিছনে ঘুরঘুর করছে। তোমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে সে সত্যি। বোঝার চেষ্টা করছে তুমি কেমন করে হাস! তুমি কেমন করে কথা বল। কেমন করে রাগ হও। হতভাগা টুকুনজিল! এক শ’ এগারো বিলিওন ডলার খরচ করা হয়েছে এর পিছনে, আর এই প্রাণী ঘুরে বেড়াচ্ছে তোমার মতো একজন নির্বোধ ছেলের পিছনে। তুমি ভাবছ আমরা এটা মেনে নেব?

    না। তুমি সাহায্য কর ভালো। যদি না কর কিছু আসে যায় না। তোমাকে আমরা ধরে এনেছি, সেটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। এখন তোমাকে ব্যবহার করব। তার কারণে তোমার যদি কোনো ক্ষতি হয়, কিছু করার নেই। তুমি যদি মরে যাও, কেউ যদি আর তোমাকে খুঁজে না পায়, কিছু করার নেই। এতে পৃথিবীর কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না। পৃথিবীতে তোমার জন্যে কেউ ব্যস্ত নয়, তোমার পাগল বাবা কিছু করতে পারবে না। কেউ তার কথা শুনবে না।

    বব কার্লোস কথা বন্ধ করে আমার চোখের দিকে তাকাল। মনে হল কেমন যেন বিষণ্ণ চোখের দৃষ্টি। মানুষের চোখের রং যদি নীল হয় তাকে দেখতে কেমন জানি অদ্ভুত দেখায়, মনে হয় যেন মানুষ নয়, যেন অশরীরী কোনো প্রাণী। খুব আস্তে আস্তে আমাকে জিজ্ঞেস করল, মহাকাশের প্রাণীকে ধরতে তুমি আমাদের সাহায্য করবে?

    টুকুনজিলকে এরা আটকে ফেলবে? ফিরে যেতে দেবে না তার দেশে? কেটে ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করবে? আমি কেমন করে সেটা করতে দিই তাদের? আমি মাথা নেড়ে আস্তে আস্তে বললাম, তুমি আর তোমার চৌদ্দ গুষ্টি জাহান্নামে যাও। আমি টুকুনজিলকে ধরিয়ে দেব না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }